অনুভূতিরা শীর্ষে 💗দ্বিতীয়ধাপ,পর্ব-১৪,১৫

অনুভূতিরা শীর্ষে 💗দ্বিতীয়ধাপ,পর্ব-১৪,১৫
লেখনিতে_সুমাইয়া ইসলাম মিম
পর্ব-১৪
.
.
.
“হ্যাল্লো গায়েজ! বাড়ির কোনায় কানায় যারা আছো, সববাই চলে আসো! রীতি ইজ হিয়ার!”…

.
ঘরে বসে কাপড় ভাজ করছিলো সুবাহ। এমন চিৎকার শুনে লাফিয়ে সাদাদের গায়ের উপর পড়লো। এমনিতেই সে ভীতু প্রকৃতির মানুষ। সাদাদ সুবাহকে আগলে নিলো। দুজনেই ঘর থেকে বেরিয়ে ড্রয়িংরুমে আসে। এর মধ্যেই ড্রয়িংরুমে সকলেই জড়ো হয়েছে। সাদাদকে দেখে রীতি দৌড়ে আসে। এসেই সাদাদের গাল ধরে টেনে দিয়ে বলে,
– এইতো আমার ক্রাশবয়! কোথায় ছিলে এতোক্ষণ? হু? তোমার তো উচিত ছিলো আমাকে এয়ারপোর্টে রিসিভ করতে যাওয়া!

সাদাদ কিছু না বলে হালকা হাসলো। রীতির পিছন পিছন মিস্টার আসলাম মানিক হাজির হয়েছে।

-আরে এসেই শুরু হয়ে গেলো? ছেলেটাকে একটু রেহাই দেও! এখন থেকে তো প্রতিদিনই জ্বালাবে।

-অবশ্যই জ্বালাবো! তা আবার বলতে!

সুবাহ অবুঝভাবে বললো,
–কেন জ্বালাবে?

রীতি তার হাসি প্রশস্ত করে বললো,
-আমার ক্রাশবরকে জ্বালাবো না?

সুবাহ চোখ ছোট ছোট করে সাদাদের দিকে তাকালো,
–ক্রাশবর মানে?

সাদাদ কিছু বলার আগে রীতি বললো,
-ওমা! তুমি জানো না? সাদাদ তো আমি বলতে পাগল! এই সাদাদ! এই মেয়েটাকে কেন আমাদের সম্পর্কে বলোনি হা?

সাদাদকে কিছু বলার সুযোগই দিচ্ছে না কেউ! সুবাহ রেগেমেগে শেষ! এমনিতেই সে প্রেগন্যান্ট হওয়ার পর থেকে খুব এগ্রেসিভ আচরণ করে, রাগ যেন নাকের ডগায় থাকে! ভীতু, শান্ত সুবাহর চিৎকারে পুরো পরিবেশ ঠান্ডা হয়ে গেছে তৎক্ষণাৎ।
–এসব কি সাদাদ? কি বলছে এই মেয়ে? আমার রাগ লাগছে প্রচুর!

সুবাহ অস্থির হয়ে পড়েছে, যার প্রমান তার জোরে জোরে শ্বাস নেওয়া। সাদাদ তাড়াতাড়ি সুবাহকে ধরে বললো,
–রিলেক্স সুবাহ! এমন কিছুই না। রীতি তোমার সাথে মজা করছে!

–কিন্তু ওভাবে….

সুবাহ সাদাদের গায়ের হেলে পড়লো। সাদাদ তাড়াতাড়ি করে সুবাহকে ধরে সোফায় শুয়ে দিলো। রুবাইয়া পানি এনে দিতেই তা সুবাহর নাকমুখে ছিটিয়ে দিলো। মিস্টার আসলাম আর রীতি উভয়ই হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তারা বুঝতে পারছে না আসলে কি হয়েছে, হঠাৎ সুবাহই কেন এমন হয়ে পড়লো?

-কি রে সাদাদ? তোমার বউ এমন অজ্ঞান হয়ে গেলো কেন?

সাদাদ সুবাহর হাতের তালু ঘষতে ঘষতে বললো,
–প্রেগন্যান্ট হওয়ার পর থেকে সে অনেক এগ্রেসিভ হয়ে পড়েছে, তবে এটা স্বাভাবিক! ওর মর্নিং সিকনেস কম হয় কিন্তু সে খুব সহজেই প্যানিক হয়ে যায়!

সাদাদ একটা শ্বাস ছাড়লো। ছোটকু আর রীতি দুজনেই বেশ চিন্তায় পড়ে গেলো। রীতি অপরাধী সুরে বললো,

-আই এম সরি সাদাদ! আমার জন্য সুবাহর এই অবস্থা!

–না না ঠিক আছে, সামনে থেকে একটু সাবধানে থেকো। আর যাই হোক সুবাহর বিষয় আমি কখনো কোন রিস্ক নিতে রাজি নই!

-হ্যাঁ হ্যাঁ আমি খেয়াল করবো!

–হুম!

.
সাদিয়াকে জানানো হয়েছে যে তাদের ছোটকু এসেছে। রীতি তাকে আসতে বললে সে সরাসরি বলে, রুবায়েতকে ছাড়া সে একা ওইবাড়ি যেতে রাজি নয়। ফোন রেখে সে রুমেই আস্তে আস্তে পায়চারী করছিলো, পাঁচমাসেই তার মোটামুটি ভরা পেট। সাদিয়ার ধারণা এখানে দুজন আছে হয়তো! তিনজনও থাকতে পারে তবে সে শিওর না। ভাবতে ভাবতেই হাসলো সে। হঠাৎ মনে হলো কেউ তাকে ফলো করছে। সে আস্তে করে পিছনে ফিরলো কিন্তু কাউকে পেলো না। মনের ভুল মনে করে সে আবার হাটতে লাগলো পেটে হাত দিয়ে, কিন্তু নাহ! আবার তাকে কেউ ফলো করছে! এবার সে না থেমে সরাসরি পিছনে ঘুরে গেলো। পিছনে রুবায়েতকে দেখে সে মৃদু চিৎকার দিলো। রুবায়েত তাড়াতাড়ি সাদিয়া হালকা করে ঝাপটে ধরলো।
-তুমি এতো তাড়াতাড়ি? তোমার তো আরো দশ দিন পর আসার কথা!

-হ্যাঁ। আসার কথা ছিলো! কিন্তু তাড়াতাড়ি কাজটা শেষ করে চলে এলাম! বউ বাচ্চা ছাড়া মন বসছে না কাজে!

-ইশ! কি ঢং! দেখি ছাড়ো!

-উঁহু! কোন ছাড়াছাড়ি নেই! শুধু ভালোবাসা বাসি!

সাদিয়া আহ্লাদী হয়ে উঠলো স্বামীর আদরে!
-জানো আমি তোমাকে কতমিস করেছি?

-হুম জানি!

-উঁহু। জানো না। তুমি কিচ্ছু জানো না। জানো আমাদের সুবাহ বাবুটার বাবু হবে!

রুবায়েত চমকে বললো,
-কিহ? সত্যি? আমি ডাবল মামা হবো!

-হুম! মামা, বাবা একসাথে হচ্ছেন! সুবাহর এক মাস রানিং চলছে।

-এই তোমরা প্ল্যানিং করে এসব করেছো?

সাদিয়া ভ্রুকুটি করে বললো,
-কি প্ল্যান?

-এই যে তোমার পাঁচমাস, রুবার তিন মাস, আর সুবাহর এক মাস! সবার সাথে দুই মাসের পার্থক্য!

সাদিয়া লজ্জা পেয়ে বললো,
-ধ্যাত! প্ল্যানিং করতে যাবো কেন? আল্লাহ দিয়েছেন, খুশি থাকো!

-আলহামদুলিল্লাহ। আমি তো অবশ্যই খুশি!

-কালকে আমাদের বাড়ি যাবো। আমার ছোটকু এসেছে!

-আচ্ছা আমার মহারানী!

.
সুবাহর জ্ঞান ফিরতেই সে অনেক দুর্বল বোধ করলো। রুবাইয়া তাকে দুধ খেতে দিতেই সে নাক শিটকে পিছনে যায়! রুবাইয়া ভ্রুকুটি করে বলে,
-দেখ বাবু! একদম নাক শিটকাবি না। আগে দুধ খেতে চাইতি না মানতাম। এবার একদম মানবো না।

সাদাদ ভ্রু কুঁচকে বলে,
–ওয়েট রুবাইয়া! দুধ খায় না মানে? তাহলে রোজ রাতে যে গ্লাসে দুধ দেই ওকে খেতে সেটা কে খায়?

সাদাদ দেখলো সুবাহ মিনমিন করছে। রুবাইয়া ভাবলেশহীন ভাবে দাঁড়িয়ে আছে। আরফান হাসি দিয়ে বললো,
-কই আবার জানালা দিয়ে বাইরে!

সুবাহ চোখ বড় করে তাকিয়ে রইলো। হঠাৎ আরফানকে সে বলে,
–এই দোকানদার! আপনি জানলেন কি করে?

আরফান কিছু বলার আগে সাদাদ বললো,
–তারমানে ঘটনা সত্যি?

সুবাহ এবার চুপ মেরে গেলো। আরফান অসহায় ভাবে বললো,
-কিভাবে আর জানবো? সেদিন বাগানের দিকে রুবাইয়া কে নিয়ে একটু ঘুরতে গিয়েছিলাম, কিন্তু আপনার বোন তো ঠিক ছিলো খালি আমি দুধে গোসল হয়েছিলাম!

উপস্থিত সবাই হেসে দিলো আরফানের কথা বলার সুর দেখে। খালি দুইজন বাদে। একজনের দিকে ছিলো গম্ভীরতা আর অন্যজনের ভয়ের তীব্রতা!

হঠাৎ কথার টপিক বদলে গেলে সুবাহ রীতির দিকে তাকিয়ে আবার রাগান্বিত স্বরে বলে,
–এই আপনি এখানে কেনো? আপনি যেই হোন না কেন, এক্ষুনি এই বাড়ি থেকে বের হোন। আমি সতিন নিয়ে ঘর করতে পারবো না। বের হোন!

সুবাহ খেয়াল করলো সবাই ওর দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে! সে চারদিকে একবার চোখ বুলিয়ে বললো,
–সবাই আমার দিকে এভাবে তাকিয়ে আছো কেন?

-চাচী শাশুড়িকে এভাবে ঘর থেকে বের করে দিচ্ছো? এ কেমন বউমা রে বাবা? এই সাদাদ? কি মেয়ে বিয়ে করেছো বলো তো?

–চাচী শাশুড়ি?

–জ্বী চাচী শাশুড়ি! কিন্তু ছোটকু যেমন আমাদের সাথে একদম ফ্রি! তেমনি রীতিও আমাদের বন্ধুর মতো। সে সবসময়ই আমাদের তার নাম ধরে ডাকতে শিখিয়েছে।

সুবাহ অবাক হয়ে বললো,
–ওনাকে দেখে তো বয়স্ক মনে হয় না!

সুবাহর কথার উত্তরে ছোটকু বলে উঠলো,
-কেন? আমাকে বুড়ো লাগে?

–এমা! না না! তা বলতে চাই নি। আসলে উনি তো একটু বেশিই ইয়াং!

সাদাদ হালকা হেসে বললো,
–হ্যাঁ! রীতি ছোটকুর চেয়ে ১৫ বছরের ছোট! লাভ মেরেজ তাদের!

–ওহ! ইশ! সরি কাকীমনি! আমি ভুলে তোমাকে অনেক কথা শুনিয়ে ফেলছি!

রীতি মেকি রাগ দেখিয়ে বললো,
-কে কাকীমনি? রীতি ডাকবে! পাগল মেয়ে!

সুবাহ হা করে তাকিয়ে রইলো।

.
শুক্রবার দিন কাজী, উকিল সমেত স্বপরিবারে তিথির বাসায় হাজির হলো শিশির! তার এক কথা সে আজই তিথিকে নিজের করে নিজের সাথে নিয়ে যাবে। তিথি যতই ভালোবাসুক শিশিরকে, সে আপাতত লজ্জায় নতজানু। মনে মনে সেও চায় যত তাড়াতাড়ি হোক শিশিরের হতে!

ঘরোয়া ভাবেই অনুষ্ঠিত হয় শিশির-তিথির বিয়ে। দুজনেই আজ থেকে এক পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ! শুরু হলো এক নতুন পথচলা! এই সূচনাই সাহায্য করবে অতীতের অনুভূতি ভুলতে।

(চলবে)…

অনুভূতিরা শীর্ষে 💗
দ্বিতীয়ধাপ
লেখনিতে_সুমাইয়া ইসলাম মিম
পর্ব-১৫
.
.
.
শিশির তিথির বিয়ের প্রায় ছয়মাস অতিবাহিত হয়েছে! যেই তিথি চেয়েও শিশিরের থেকে কোন মনযোগ পেতো না, সেই শিশির এখন তিথি বলতে পাগল! তিথি প্রতিনিয়ত অবাক হয় শিশিরের ভালোবাসা দেখে। এতো সুখও যে তার কপালে লেখা ছিলো ভাবতেই সে উপরওয়ালার কাছে হাজার শুকরিয়া আদায় করে। এই যে তিথির পায়ে খুব ভালোবেসে আলতা পড়িয়ে দিচ্ছে এতে যেন তিথি এক স্বর্গীয় সুখ পাচ্ছে। এক তৃপ্তদৃষ্টি ফেলছে শিশিরের উপর। শিশির নিজেও যেন তার স্ত্রীর পায়ে আলতা লাগিয়ে এক নিজস্ব অধিকার আদায় করে নিচ্ছে। হঠাৎ করে তিথি শিশিরকে বললো,

-শিশির!

-হুম।

-আমাদের ঘরে একটা বেবি আনলে কেমন হয়?

তিথির কথা শুনে অবাক হয়ে তাকালো শিশির। তিথি মুচকি হেসে চোখ নামালো। তার লজ্জা লাগছে, গালের ওই লালিমা প্রকাশ করছে তার লজ্জা। শিশির তার দিকেই তাকিয়ে রইলো। তা বুঝতে পেরে তিথি ইতস্তত করে বললো,

-ওভাবে তাকাবে না। লজ্জা করছে।

শিশির হালকা হেসে মাথা নামিয়ে আলতা দিতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। হাসিমুখেই বলে,

-হঠাৎ বেবির কথা কিভাবে?

তিথি আহ্লাদীসুরে বললো,
-ওই যে সাদাদ ভাইয়ের বোন সাদিয়া আপুকে ওইদিন দেখতে গেলাম না! বাচ্চাদুটো মাশাল্লাহ কি কিউট দেখতে হয়েছে। ওদের কোলে নিতেই না বুকের ভেতর কেমন একটা করে উঠেছিল।
এই শিশির! দাও না একটা বেবি! যে আমাকে মা বলে ডাকবে, তোমাকে পাপা বলে ডাকবে। আমাদের এই সুখের ঘরে আলো ছড়াবে।

শিশির অবাক হয়ে তিথির কথা শুনলো। পায়ে আলতা দেওয়া শেষ করে তিথির কপালে আলতো করে নিজের ঠোঁট ছুঁইয়ে বললো,
-খুব শীঘ্রই নিয়ে আসবো ইনশাআল্লাহ।

তিথি খুশি হয়ে জড়িয়ে ধরলো শিশিরকে।

.
খাটের উপর চকলেট, বিস্কুট, কেক, ফুচকা, চিলি চিকেন, পিজ্জা, বড় বক্সে আইসক্রিম, ঝাল করে তৈরি শিক কাবাব, হালিমসহ বিভিন্ন রকমের খাবার রাখা। যার দিকে সুবাহ লোভনীয় দৃষ্টি নিক্ষেপ করছে আর সাদাদ অসহায় দৃষ্টি নিক্ষেপ করছে। সাদাদের জানা মতে মেয়েরা প্রেগন্যান্ট হলে কিচ্ছু খেতে পারে না। তার বোন এবং ভাইয়ের বউয়ের ক্ষেত্রেও তাই দেখেছে। কিন্তু তার বউ এমন উলটো হলো কি করে সেটাই ভাবছে সে। এই যে এতো খাবার রুমে এনে রেখেছে এর একটুও নষ্ট হবে না। সব সুবাহ গোগ্রাসে গিলবে। সে দেখতেও ছোট মতো হাতিতে রুপান্তর হয়েছে। সাদাদ অসহায় দৃষ্টি দিয়ে বললো,

–সুবাহ! আজও এতো আনহেলদি খাবার সবটা খাবে?

সুবাহ ভ্রু কুঁচকে বললো,

–আমার ক্ষুধা লেগেছে সাদাদ!

–আরে, আমি খেতে তো বারণ করি নি। তাই বলে এতো!

সুবাহ রাগী চেহারায় সাদাদের দিকে তাকিয়ে বললো,

–তুমি কি আমাকে খাওয়ার খোটা দিচ্ছো?

–এমা! খোটা দিবো কেন? সব তো তোমারই! তাই বলে তোমার এতো ক্ষিধে পেয়েছে, কিছুক্ষণ আগে না স্যুপ খেলে!

সুবাহ বেশ রাগ নিয়েই পেটে হাত বুলিয়ে বললো,

-কি করবো? পেটে তো আর নরমাল মানুষের বাচ্চা নিয়ে ঘুরি না, নেতার বাচ্চা নিয়ে ঘুরি এর জন্যই তো আমার বেশি ক্ষিধে পায়!

সাদাদ সুবাহর এমন ধরনের কথা শুনে হো হো করে হেসে দিলো। তার এই সাতমাসের ভরা পেটে আলতো করে চুমু দেয় সাদাদ! বউটা তার দিন দিন আরো বেশি কিউট হচ্ছে। কিভাবে বললো, নেতার বাচ্চা পেটে নিয়ে ঘুরে! হাহা!

.
ছেলেকে কোলে নিয়ে সারারুম পায়চারি করছে আরফান। এতোক্ষণ ধরে সে রুবাইয়াকে ডাকছে কিন্তু রুবাইয়া কোন পাত্তাই দিলো না তাকে। সে তার মতো কাজে ব্যস্ত। সাদিয়া পরিবার সমেত এবাড়িতে এসেছে। রান্নাবান্নারও একটা ব্যাপার আছে তাই রুবাইয়া আরইয়াকে আরফানের কোলে দিয়ে রান্নাঘরে ব্যস্ত। পায়চারির মাঝেই রুমে রুবায়েত আসে, তার কোলে তার দুই কন্যা! একজন থামছে তো অন্যজন ভ্যা করে কেঁদে দিচ্ছে। রুবায়েত দিশেহারা হয়ে এখানেই চলে আসে, আরফান জানতে পারে তার বউয়ের সাথে তার বোনও রান্নার কাজে হাত লাগিয়েছে, তাই এই দুই পুরুষের এই দশা। দুজনেই একে অন্যের দিকে অসহায় চাহনি দিয়ে পায়চারি করতে লেগে পড়লো। এদিকে বাচ্চাদের কান্না থামার কোন নাম নেই, যেই শব্দ সুবাহ পর্যন্ত চলে যায়৷ তাই সুবাহ আরফানকে ফোন করে,

-হ্যালো সুবাহ, কিছু লাগবে?

–ভাইয়া বাচ্চাদের আমার কাছে দিয়ে যান।

-এমা! দরকার নেই। তুমি রেস্ট নাও আমরা সামলে নেব।

–কি সামলাচ্ছেন দেখতেই পারছি। এক্ষুনি নিয়ে আসুন ওদের, আমি অপেক্ষা করছি।

না চাইতেও রুবায়েত আর আরফান সুবাহর ঘরে গেলো। সুবাহ হাত বাড়িয়ে বাচ্চাদের নিতেই একেকটা চুপ হয়ে গেলো। আরফান আর রুবায়েত দুজনেই অবাকে শীর্ষে। তারা এতো চেষ্টা করেও থামাতে পারলো না সেখানে সুবাহ কোলে নিতেই চুপ?

সুবাহ হালকা হেসে বললো,

–এখনি ঘুমিয়ে যাবে। ওভাবে তোমাদের কোলে যাতাযাতি করে ঘুমানোর অভ্যাস আছে নাকি ওদের? থাক আমার কাছে। তোমরা তোমাদের কাজে যাও!

আরফান অসহায় ভাবে বললো,

-আর কোন কাজ নেই গো শালিকা!

সুবাহ দুষ্টু হেসে চোখ টিপে দিয়ে বললো,

–কাজ নেই তো দুজনে গিয়ে নিজেদের বউকে জ্বালাও!

রুবায়েত বোনের কান টেনে দিয়ে হাসলো। দুজনেই চলে গেলো রুম থেকে। উদ্দেশ্য বউদের জ্বালানো।

.
“স্যার! ছয়মাস হয়ে গেলো, প্ল্যানটা তো এখনো প্রকাশ করলেন না। কি উদ্দেশ্য আপনার স্যার?”

সামনে থাকা ব্যক্তির গায়ে একটা কাঁচের বোতল ছুড়ে মেরে নিক্ষেপকারী লোকটি বললো,

-আগে বাচ্চা আসুক! পরে একে একে বাচ্চা, বাচ্চার মা সব খতম করে দেবো। সেই শোকে সাদাদ বাবু পাগল হয়ে যাবে! হাহা!

পাশে থেকে এক লোক বলে উঠলো,

-কিন্তু স্যার সে আপনার……

কথাটা বলার আগেই লোকটি হিংস্রভাবে বললো,

-নাহ! ও আমার কেউ না! ওর জন্য আমি দেশ ছাড়া হয়েছি৷ এখনো ভয়ে ভয়ে থাকি। কিছুতেই ওকে আমি ছাড়বো না। আমি রাজত্ব, আর রাণী দুটোই চাই!

-স্যার! রাজত্ব ঠিক আছে? কিন্তু রাণী?

-সেটাই তো আসল খেলা! হাহাহাহাহা…

.
সাদাদ অফিস যাওয়ার জন্য বের হবে সেই মুহূর্তে রীতি তার সামনে আসে। চোখেমুখে এক অদ্ভুত সম্মোহন। যা দেখে সাদাদ প্রচন্ড বিরক্ত! রীতি দু কদম এগিয়ে আসে সাদাদের দিকে, যা দেখে সাদাদ তার থেকে দূরত্ব বজায় রেখে দু কদম পিছিয়ে যায়। যা দেখে রীতি বলে,

-প্লিজ সাদাদ। এভাবে পিছিয়ে যেও না। একটাবার এগিয়ে দেখো। আমি এখনো সেই খানেই আছি!

–জাস্ট শাট আপ রীতি! ডোন্ট ক্রস ইয়োর লিমিট। তোমাকে নতুন করে আমার কিছুই বলার নেই। শুধু এতটুকুই বলবো আমার পিছন ছেড়ে দাও।

“তোমার পিছন ছাড়বে মানে?”

সুবাহর কথায় চমকে ওঠে সাদাদ রীতি দুজনেই। সুবাহকে এসময়ে নিচে আসতে দেখে সাদাদ রেগে গেলো।

–তুমি এই শরীর নিয়ে একা একা নিচে নেমেছো কেন?

–আগে কে কার পিছু ছাড়বে?

রীতি মুচকি হেসে বললো,

-আরে সুবাহ! আমি সাদাদকে চেতাচ্ছিলাম। তাই সেও রেগে টেগে ফায়ার! তাই বলেছে আমি যেন ওর পিছু ছেড়ে দি।

সুবাহ ভ্রু কুঁচকে তাকালো রীতির দিকে। কথাটা যে তার বিশ্বাস হয় নি বেশ বুঝা যাচ্ছে। সাদাদ সুবাহর দিকে এগিয়ে বললো,

–চলো রুমে চলো। অফিস যাবো না।

–কেন যাবে না? আর..এতো ভালো লাগে নাকি রুমে থাকতে? বোর হয়ে গেছে। আম্মুকে বাচ্চাদের কাছে রেখে আমি একটু হাঁটতে বেরিয়েছি, আর তুমি আমাকে বকছো!

–বকছি না তো রে বাবা! তোমার জন্য টেনশন হয় আমার!

–হুম!

হঠাৎ করেই সুবাহর পেটে চিনচিন করে ব্যথা করে উঠলো৷ সে আর্তনাদ করতেই সাদাদ চিন্তিতভাবে তাকে ধরে জিজ্ঞাসা করলো,

–এই সুবাহ! ঠিক আছো?

সুবাহ নিজেকে একটু সামলে নিয়ে বললো,

–হ্যাঁ! বাবু পেটে লাথি দিয়েছে মনে হয়!

–এই দিকে এসে বসো তো তাড়াতাড়ি।

রীতি সুবাহকে উদ্দেশ্য করে বললো,

-এটা নরমাল সাদাদ! এতো উত্তেজিত হওয়ার কিছুই নেই।

সাদাদ রীতির দিকে তাকাতেই রীতি আস্তে করে চলে গেলো সেখান থেকে।

(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here