অজান্তে_আগমন,পর্বঃ- ০৬,০৭

অজান্তে_আগমন,পর্বঃ- ০৬,০৭
সাদিয়া_সৃষ্টি
পর্বঃ- ০৬

সেই দিনের পর এক মাস পার হয়ে গিয়েছে। বৈশাখ পেরিয়ে জ্যৈষ্ঠ এসেছে। ইংরেজি দিনপঞ্জিকাও বদলানো হয়ে দিন সতেরো আগেই। এর মধ্যে রেখার মধ্যে কিছুটা পরিবর্তন হয়েছে। আচরণে নয়, অভ্যাসে। সেরাতে দ্রোহ প্রশ্ন করার পর ওই পর্যন্তই থেমে ছিল। এর বেশি কথা ওদের মধ্যে হয়নি। দ্রোহকে ঠিক করে দেখলেই বোঝা যেত প্রশ্নটা করতে না চেয়েও করে বসেছে। তাই তার মধ্যে নার্ভাসনেস কাজ করছিল প্রচুর পরিমাণে। “আজ আসি” বলেই সেদিন রাতে চলে গিয়েছিল দ্রোহ। প্রশ্নটা যেহেতু অজান্তে হয়ে গিয়েছিল, তাই উত্তরের আশা সে করেনি। রেখাও এমন পরিস্থিতিতে প্রথমবার পড়ায় বেশ ঘাবড়ে গিয়েছিল। একে তো মাঝ রাতে দ্রোহ বাড়ি এসেছিল বলে কি কি হতে পারে সেই নিয়ে চিন্তায় শেষ হয়ে যাচ্ছিল, তার উপর অসময়ে আরেকটা প্রশ্ন। তাও এমন প্রশ্ন, যার উত্তর রেখা কি দিবে সেটা ভাবতে গিয়ে কোন উত্তর পাচ্ছিল না। দ্রোহ চলে আসায় হাঁফ ছেড়ে বাঁচে সে। কিন্তু সত্যিই কি বেঁচেছিল? অবশ্যই না। পাশের বাড়ির অ্যান্টি কি করে যেন ওই রাতে রেখার বাড়ি থেকে দ্রোহকে বের হতে দেখে। যেহেতু দ্রোহকে চিনে না, তাই অচেনা একটা ছেলেকে মাঝ রাতে বের হতে দেখে নিশ্চয়ই ভালো কিছু ভাবার কথা নয়। দ্রোহ সিঁড়ি বেয়ে নেমে যেতেই তিনি এসে সরাসরি রেখাকে থামান দরজা লাগানোর পূর্বেই। রেখা এই অ্যান্টিকে অনেক ভালোমতো চিনত। যার কারণে সে আরও বেশি নার্ভাস হয়ে পড়ে। হঠাৎ করে এমন ঘটনা ঘটায় তার কি করা উচিত, সেটাই ভুলে যায়। এর মাঝে ওই অ্যান্টি আরও ২ জন অ্যান্টিকে এনে হাজির করেন। তারা ৫-১০ মিনিট মতো নিজেদের মধ্যে গবেষণা করে রেখাকে সকালে বাড়িওয়ালার ঘরে আসার কথা বলে ঘুমাতে চলে যান। উনারা বেশ স্বাস্থ্য সচেতন। রাত জাগার ফলে তাদের চোখের নিচে কালো দাগ পড়ার ভয়েই চলে যান। কিন্তু রেখা মূর্তির মতই সেখানে দাঁড়িয়ে থেকে ব্যাপারটা বোঝার চেষ্টা করে। আর যখন বুঝতে পারে যে এই অল্প সময়ে কি কি হয়েছে, তখন নিজের ঘরে ফিরে যায়। তারা যে কি কি কথা আলোচনা করবেন, সেটা ভাবতে গিয়েই সেরাতে তার আর ঘুম আসে না। চিন্তায় পড়ে আর কাঁদতে কাঁদতেই রাত পার হয়।

ভোর হতেই রেখা তার খালাকে ফোন করে। এই শহরে একমাত্র খালাই তাকে এর মধ্যে থেকে বের করতে পারেন। উনি রেখাকে খুব ভালোবাসেন। এই বাড়ির ব্যবস্থাও উনিই করে দিয়েছিলেন। তাই এই ব্যাপারটা রেখা নিজে সামলাতে না পারলেও তিনি সামলাতে পারবেন এই আশা করেছিল রেখা।

খালামণি সময়মত ফজরের নামাজ পড়েন। তাই রেখা বেশি দেরি না করে তাকে ফোন করে। কয়েক বার রিং হতেই তিনি রিসিভ করেন।রেখা তাকে রাতের ব্যাপারটা বলল শুধু। একজন মাঝ রাতে এসে দরজায় অনেকক্ষণ শব্দ করার পর এক গ্লাস পানি চাইল। তারপর পানি পান করে চলে গেল। এইটুকুই বলে থামল। ছেলেটা কে, তাকে রেখা চিনে কি না- এসব বিষয় আপাতত এড়িয়ে গেল। এই মুহূর্তে সব কথা ব্যাখ্যা করে বলার মতো অবস্থায় সে নেই। কিন্তু একদিন সব জানাবে এই ভেবেই শান্ত থাকল রেখা।

সকাল ৭ টা বাজতেই তার ঘরের কলিং বেল বেজে উঠল। রেখা শান্ত হয়েই খুলল। দেখল, গতরাতের ৩ অ্যান্টিকে। কোন কথা না বলে তাদের সাথে চলে গেল। বাড়িওয়ালী ছিলেন বাসায়। উনারা রেখাকে সামনে রেখেই নিজেদের মতো আলোচনা করে চললেন। রেখাকে না প্রশ্ন করলেন, আর না কোন কথা বলার সুযোগ দিলেন। রেখার সাথে যেই দুজন মেয়ে থাকত, তারা ছুটি নিয়ে নিজেদের বাড়ি গিয়েছে। রেখা এই কয়দিন একাই থাকছিল ফ্ল্যাটে। ব্যাপারটা তাদের আলোচনার মূল অংশ ছিল। তাছাড়া বাড়িওয়ালী অনেক দিন ধরে চেষ্টায়ও ছিলেন রেখাকে বের করার জন্য। কোন এক অজানা কারণে হয়তো পছন্দ করতেন না কিংবা বাড়ি ভাড়ার ব্যাপারটাও হতে পারে। সেটা জানা নেই রেখার। এর পাশাপাশি ইন্ডাইরেক্টলি রেখাকে অনেক কথাও শোনালেন। সেসব কথার ধরণ শুনেই কেঁপে কেঁপে উঠছিল রেখা। কান্নারা চোখে ভিড় করলেও তাদের গড়িয়ে পড়তে দিল না শুধু। শেষ মুহূর্তে অবশ্য রেখার খালাই তাকে বাঁচিয়েছিল। তিনি তাদের সাথে কথা বলে কিছু বোঝাতে পারলেন কি না সেটা তার জানা নেই। কিন্তু শেষমেশ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় রেখা বাড়ি ছেড়ে দিবে। আপাতত সে তার খালার সাথেই থাকবে। সেই অনুযায়ী সব গুছিয়ে নিজের রুমের সব আসবাবপত্রের ব্যবস্থা করে। আসবাব পত্র বলতে গেলে একটা সিঙ্গেল বেড, একটা টেবিল আর একটা চেয়ার। সেগুলোর ব্যবস্থাও খালামণি করে দেন। তার কোন এক পরিচিতের বাসায় রাখা হবে আপাতত। বাকি রেখার জামাকাপড় আর বই ব্যাগের ভরে বাড়ি থেকে বের হয়ে আসে। শুধু বের হওয়ার আগে বাড়িওয়ালীকে বলে গেল,

— বের করার ইচ্ছা থাকলে সরাসরি বললেই পারতেন। না জেনে সম্পূর্ণ মনগড়া কাহিনী বানিয়ে আমার অপমান না করলেও কিন্তু খুব বেশি ক্ষতি হত না আপনার।

বলেই সালাম দিয়ে বের হয়ে আসে।

সেখান থেকে বাসে উঠে সরাসরি মিটফোর্ড এ গিয়ে থামবে তারা। কিন্তু সেখানে বাঁধল আরেক ঝামেলা। প্রায় ১ ঘণ্টার রাস্তা যদিও, তাও প্রায় দুই- আড়াই ঘণ্টা ট্রাফিক জ্যামে বসেই কাটাতে হলো। তবুও ঠিক করে পৌঁছানো গেল না। তার কিছুদূর আগেই বাস সেই যে আটকাল, আর এগিয়ে যেতে পারল না। আশেপাশের মানুষের কাছ থেকে শোনা গেল কোন এক বিশেষ ব্যক্তিত্ব এই রাস্তা দিয়ে নিজেদের গন্তব্যে পৌছাবে। তার নিরাপত্তার জন্য পুরো রাস্তা আটকে দেওয়া হয়েছে। রেখার খালামণি শেষ পর্যন্ত অপেক্ষা না করতে পেরে রেখাকে জানান, তারা হেঁটে যাবেন যদি রেখা রাজি থাকে। রেখাও রাজি হয়ে যায়। প্রায় এক ঘণ্টা হাঁটার পর তারা গন্তব্যে পৌঁছে যায়। একে তো ভারী ব্যাগ তার উপর মানুষের লাথি খেয়ে রেখার আর তার খালামণির অবস্থা বেহাল। রাস্তা আটকানোর জন্য অনেকেই এতো সময় বসে থাকার পর ভাড়া মিটিয়ে রাস্তায় নেমে পড়েছিল। হেঁটে হেঁটেই যাচ্ছিল তারা। যার জন্য ফুটপাথে ভিড় হয়। তার থেকে লাথির উৎপত্তি।

রেখার খালা মনোয়ারা খাতুন মিটফোর্ডে এক হাসপাতালের লেকচারার। তিনি নার্সদের শিক্ষিকা। সেখানেই থাকেন তিনি। ছাত্রীবাসের মধ্যে শিক্ষিকাদের থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। কর্মস্থল আর বাসস্থল একই জায়গায় থাকার সুবিধা হাতছাড়া করেননি তিনি। তাছাড়া অবিবাহিত হওয়ায় এই সুবিধা নিতেই পারেন। তখন থেকে রেখা মনোয়ারার সাথে থাকা শুরু করে। সেখান থেকেই স্কুলে যাতায়াত করে। সকালে ট্রাফিক জ্যাম না থাকায় কোন সমস্যা না হলেও রাতে বেশ ভয়ে থাকে। বাইরে থেকে সেটা না প্রকাশ করলেও মনের মধ্যে সে প্রচুর ভয় রেখে দেয়। সকালের আর রাতের টিউশনিও ছাড়তে হয়েছে। সেই নিয়ে তার দুঃখের শেষ নেই। ভেবেছিল অন্য কোথাও বাড়ি খুঁজবে। কিন্তু ঢাকার বাড়ি ভাড়ার সাথে খাপ খাইয়ে নিতে পারে না বলেই ১ মাস হওয়া সত্ত্বেও এখান থেকে যেতে পারে নি। লুকিয়ে থাকতে হলেও এখানেই থাকে সে। যেহেতু হাসপাতালের বাইরের কারো থাকার অনুমতি এখানে নেই।

রেখার এসব ভাবনার মাঝে ছেদ পড়ে জাহাজের সাইরেনে। সামনে তাকিয়ে দেখার চেষ্টা করে। বুড়িগঙ্গা নদীর পানি দেখা যাচ্ছে বিল্ডিং এর পাশ থেকে। তাও অল্প একটু। জাহাজ আর দেখা গেল না। গ্রিলে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকল। সেদিনের পর থেকে রাত জাগা আর রাতে চা পানের অভ্যাসও চলে গিয়েছে রেখার। রাত হলেই মনে এক ভয় চলে আসে। না জানি আজ আবার কি হয়ে যায়! ওই অ্যান্টিদের কথাগুলো সে আজও ভোলেনি। কিছু কিছু মানুষ আছে, যারা বিপদ দেখলে বা বিপদের আভাস পেলে সেটাকে যথাসম্ভব এড়িয়ে চলে। রেখা সেই দলের মধ্যেই পড়ে।

সামনের দৃশ্যটাকে ঠিক করে দেখার জন্য রেখার ইচ্ছা করল, বিল্ডিংগুলো সেখান থেকে কিছু সময়ের জন্য পাশে সরিয়ে দিতে। কিন্তু সেটাও সম্ভব নয়। রেখা আশেপাশে তাকাল। বিশাল বারান্দা টাইপ জায়গাটা। সারি দিয়ে একটা একটা করে রুম। একেকটা রুম এক জনের জন্য বরাদ্দ। তারপর গিয়ে ডানে মোড়। সেদিকে ছাত্রীরা থাকে। আর এদিকে শিক্ষিকারা। মনোয়ারার জন্যও একটা রুম। আকারে একটু বড় বলা যায় ফ্ল্যাট বাড়ির এক রুমের তুলনায়। সেখানে একটা আলমারি আর একটা সোফা একদিকে রাখা। তার অপরদিকে দেওয়ালের সাথে লাগিয়ে একটা ডাবল সাইজের বেড আর কাঠের র‍্যাক রয়েছে। ওদের রুমে একটা টিভি ও রয়েছে। র‍্যাকের দিকটাকে একটা খুব ছোট আকারের রান্নাঘর বলা চলে। সেখানে কিছু হাড়ি পাতিল আর রান্নার সরঞ্জাম রয়েছে। র‍্যাকের উপরে কিছু শুকনো খাবার আর পানি। রান্নার ব্যবস্থা ঘরের বাইরে। একটা চুলা, সেখানে সেই ফ্লোরের সব শিক্ষিকারা রান্না করেন। আবার ছাত্রীদের আলাদা। বাথরুমও একেবারে অপর কোণে। সেখানে একেজনের জন্য আলাদা সময় রাখা হয়েছে। এইএক মাসে সবটা মুখস্ত হয়ে গিয়েছে রেখার। ছুটির দিনে এখান থেকে বের হয় না বলেই সম্ভব হয়েছে। রুমের সামনে লম্বা ফাঁকা স্থান। সেটা ঘেরা রয়েছে অর্ধেক ইটের দেওয়াল দিয়ে, আর বাকি অর্ধেক বর্গাকৃতির ছোট ছোট ঘর বিশিষ্ট লোহার গ্রিল দিয়ে। এই জীবন যাপনের সাথে মানিয়েও নিয়েছে রেখা।

সময়টা দেখে নিল রেখা। দুপুরে খালা খাবার খেতে এখানে আসবেন। তাই সে চলে গেল খাবারের ব্যবস্থা করতে। থাকার জায়গার সাথেই কর্মস্থল হওয়ায় সুবিধা হয়েছে। যখন তখন রুমে এসে বিশ্রাম নেওয়া যায়, আবার সময় হলেই হাসপাতালে চলে যাওয়া যায়।

__________

ফোনের রিং অনেকক্ষণ ধরে বাজায় বিরক্ত হলো দ্রোহ। রাতে বাসায় ফেরার জন্য সবটা গুছিয়ে নিচ্ছিল সে। কাজে বাঁধা পড়ায় আর দেরি না করে পকেট থেকে ফোন বের করে স্ক্রিনে তাকাল। রাফি নামটা জ্বলজ্বল করছে। সে রিসিভ করে প্রথমে সালাম দিল। তারপর বলল,

— কি খবর রাফি? এতদিন পর বন্ধুর কথা মনে পড়ল?

ওপাশ থেকে রাফি সালামের জবাব নিয়ে বলে উঠল,

— আলহামদুলিল্লাহ, আছি। তুই এখন কোথায় দ্রোহ? অফিসে?

— হ্যাঁ, কেন? তোর আওয়াজ এমন শোনাচ্ছে কেন?

— আসলে আমার ভাইয়ের একটা এক্সিডেন্ট হয়েছে। তুই একটু গিয়ে দেখে আসতে পারবি? ওর সাথে কেউ নেই। হাসপাতাল থেকে কল এসেছিল। আমি নিজেই শহরের বাইরে। তাই তোকে বলছিলাম।

— আমার সাথে এতো ফর্মালিটির কি আছে? তুই আমাকে হাসপাতালের নাম ম্যাসেজে পাঠিয়ে দে। তোর ভাই কোথায় আছে সেটা জানলেও বলে দে। আমি এখনই বের হচ্ছি।

বলেই ফোন কেটে দিল দ্রোহ। মাকে কল করে জানিয়ে দিল যে বাড়ি ফিরতে দেরি হবে। কেন হবে- সেটাও বলল। তারপর কল কাটতেই দেখল ম্যাসেজ এসেছে। সে বাকি কাজ কোন মতে শেষ করে বের হয়ে মেইন রোডে গিয়ে গিয়ে বাস ধরল। গন্তব্য মিটফোর্ড।

চলবে।

#অজান্তে_আগমন
#সাদিয়া_সৃষ্টি
পর্বঃ- ০৭

হাসপাতালে পা রাখতেই দ্রোহর নাকে ফিনাইলের তীব্র ঘ্রাণ এসে পৌছাল। প্রতিবারের মতো এবারও ভ্রূ কুঁচকে এলো তার। হাসপাতালের ফিনাইলের ঘ্রাণ তার কস্মিনকালেই ভালো লাগেনি। তার উপর মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার করে থাকে বলে মাস্ক পরার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করল যেন সে। পকেট হাতড়ে একটা রুমালও না পেয়ে হতাশ হলো। তারপর ফোনের দিকে তাকিয়ে সময় আর ম্যাসেজ দেখে নিল একবার। ১০ টা পার হয়ে গিয়েছে। রাতে এমন সময় বের হয়েছিল যে এক জ্যামেই অনেক সময় লেগে গিয়েছে। এছাড়া তিন বার বাস বদলিয়েছে। অনেকখানি হেঁটেও এসেছে। রোগীর কথা মনে পড়তেই দ্রুত পদে এগিয়ে গেল সামনে। খুব দ্রুত নির্দিষ্ট স্থানে পৌঁছে ডাক্তারের সাথে কথা বলে সব কাজ শেষ করে রাফিকে ফোন করল। রাফির সাথে ফোনে কথা বলতে বলতেই হাসপাতাল থেকে বের হয়ে আসলো সে। গেট পার হওয়ার সময় চেনা চেহারা নজরে পড়তেই তার কথা বলা থেমে গেল। ওপাশ থেকে রাফি তখনও ‘হ্যালো’ ‘হ্যালো’ করায় ব্যস্ত। দ্রোহ পিছনে ফিরে কাউকে দেখতে না পেয়ে আবার সামনে হাঁটা ধরল। কিন্তু সেই চেনা চেহারা এতদিন পর হ্যালুসিনেট কেন করবে- এই প্রশ্ন মস্তিষ্কে আঘাত হানতেই কোনমতে কল কেটে ভেতরের দিকে হাঁটা ধরল। কিছু সময় পর কাঙ্ক্ষিত ব্যক্তির দেখা পেয়েও গেল। তবে তার থেকে বেশ দূরে চলে গিয়েছে সে হাঁটতে হাঁটতে। দ্রোহ তার পিছু নিল।

রেখাকে তৃতীয় তলায় উঠে একটা ঘরে তালা খুলে প্রবেশ করতে দেখে অবাক হলো সে। তাও এতো রাতে। কিন্তু পর মুহূর্তে ভাবল হয়তো রেখা ঘুরতে এসেছে কিংবা অন্যকিছু। তার মস্তিষ্ক তৎক্ষণাৎ পাল্টা প্রশ্ন ছুঁড়ে দিল,

“ঘুরতে কি মানুষ রাতের বেলায় আসে?”

দ্রোহও নিজের উত্তর হিসেবে ভেবে নিল,

“অবশ্যই পারে। আমিই যেখানে রাতে ঘোরার জন্য বের হই, সেখানে কেন ও পারবে না? একটা মেয়ে বলে শুধু? দরকার পড়লে রাত তিন টায় ঘুরতে বের হবে। ওর ইচ্ছা।”

মস্তিষ্ক বিপরীতে আরেকটা কথা এনে দাঁড় করালো।

“সবাই তো আর তোর মতো গাধা না যে রাতবিরাতে ঘুরে বেড়াবে।”

এই পর্যায়ে তার ভাবনার ইতি টানল দ্রোহ। প্রয়োজনের থেকে বাড়িয়ে বলা বা ভাবা যেন তার স্বভাব হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাও রেখার ক্ষেত্রেই শুধু। দেখা হল তো এক মাস পর। এই এক মাসে তো প্রায় ভুলেই গিয়েছিল রেখার কথা। প্রথমদিকে মনে পড়লেও পরে নিজেকে কাজে এতই ব্যস্ত করে তোলে যে আর মনে পড়েনি। অবশ্য মাঝে মাঝে নির্লজ্জের মতো রেখার শাড়ি পরিহিত রূপ ভাবার চেষ্টা চালায় আনমনে, কিন্তু সেটা কয়েক মুহূর্তের জন্যই। কিন্তু অতিরিক্ত ভাবার কাজটা সে অন্য কারো ক্ষেত্রে বা অন্য কোন কিছুর ক্ষেত্রে করেনি। শুধু এই একটা মানুষ আসলে সুদূরপ্রসারী ভাবনার উদয় হয়। যেমন এখন মনে মনে নিজের সাথে নিজের কথোপকথনের মধ্যেই সে নিজেকে “গাধা” ডেকে ফেলেছে, সেটা বুঝতেই ভাবনা থামিয়ে দিল। অতিরিক্ত কোন কিছুই ভালো নয়। তাই এসব ছেড়ে দিয়ে ফিরে যাওয়ার কথা ভাবল।

“সত্যিই তো এমন হতে পারে যে সে শুধু কারো সাথে দেখা করতে বা ঘুরতে এসেছে এখানে। হোক না অনেক রাত।”

ফেরার জন্য পা বাড়াতেই দুজনের কথোপকথন না চাইতেও কানে আসলো দ্রোহের। মূলত রেখার নাম শুরুতে উল্লেখ করার জন্যই। দুটো মেয়ের মধ্যে কথোপকথন ছুঁল কিছুটা এরকম-

“আচ্ছা, তুই কি রিখিয়ার সাথে দেখা করেছিস?”

“কোন রিখিয়া?”

“মনোয়ারা ম্যামের সাথে যে থাকে, বোধহয়, উনার বোনের মেয়ে।”

“ওহ! মিসের সাথে এক মাস আগে যে এসেছিল? রেখা নামের মেয়েটা?”

“হ্যাঁ হ্যাঁ, ওই।”

“কেন? কি হয়েছে?”

” আমার ওর সাথে দেখা করা হয়নি এখনো। অনেকেই নাকি ওর সাথে দেখা করে এসেছে।”

“দেখবি, নাম্বারের জন্যই খাতির করতে গিয়েছে।”

“বাজে বকা বন্ধ কর। নতুন কেউ এসে থাকছে, তাই কৌতূহল থেকে দেখা করতে গিয়েছে। আর তাছাড়া শুনেছি মেয়েটা যে এখানে থাকছে, সেটা কর্তৃপক্ষ জানেন না। লুকিয়েই থাকছে না কি? অনুমতি নেয়নি ম্যাডাম।”

“ওহ, আমি দেখিনি।”

“চল না, আজ দেখা করে আসি। এক মাস ধরে আছে এখানে কিন্তু দেখাই করলাম না। কথা বলি চল।”

“ঠিক আছে চল।”

কথা শেষ হতেই ওদের দুজনকে ওই রুমের দিকে যেতে দেখা গেল যেখানে কিছুক্ষণ আগে রেখা ঢুকেছিল। তারা দরজায় নক করতেই রেখা দরজা খুলে দিল। তারপর ওরা ভিতরে ঢুকে গেল।

দ্রোহর সচল মস্তিষ্কে একটা কথা বারবার ঘুরতে থাকল। রেখা এক মাস আগে এখানে এসেছে আর এখানেই থাকছে। সে হিসাব করে দেখল রেখার সাথে প্রায় এক মাস আগেই শেষ দেখা হয়েছিল। সে এসব ভাবতে ভাবতে সেদিনের মতো চলে গেল।

__________

সেদিনের পর থেকে একটা অজানা চিন্তা তাকে ভাবাচ্ছে বেশ। কি এমন হলো যে এক মাস আগে অমন ভালো বাসা ছেড়ে এই খানে এসে থাকতে হচ্ছে। তাও লুকিয়ে লুকিয়ে। যখন-তখন জানাজানি হয়ে গেলে যেখানে থাকার অনুমতি পর্যন্ত পাবে না সে, সেখানে কেন থাকছে রেখা।

মস্তিষ্ক বারবার জানাল দিল, অন্যের ব্যক্তিগত ব্যাপারে ভাবার দরকার নেই। তাও ভেবেই চলেছে দ্রোহ। এর মাঝে পরপর দুই দিন গিয়ে ঘুরেও এসেছে। যদিও এরপর আর রেখার দেখা পায়নি সে। তাও হাল ছাড়েনি। রাফির ভাইয়ের খেয়াল রাখার পাশাপাশি রেখার সাথে কথা বলা সুযোগ খুঁজছে যদিও। কিন্তু পাচ্ছে না সে। রেখার এই বাড়ি বদলানোর ব্যাপারটা তো মাথায় গেঁড়ে বসে আছে। বারবার তার মনে অদ্ভুত সব খেয়াল আসছে। সেটা নিশ্চিত হতেই পরের দিন শুক্রবার দেখে বের হয়ে পড়ল সকালেই। দ্রোহকে সকালে বের হতে দেখে, তাও ছুটির দিনে, তার মায়ের হাত থেকে রান্নার করার খুন্তিটাই পড়ে গেল। দ্রোহের বাবা নিজের খাবার খাওয়া শেষ করেছিলেন তখন। তিনি বেসিনে হাত ধোঁয়ার সময় বলে উঠলেন,

— আরে, সাবধানে কাজ করো দিবার মা। ভাগ্য ভালো তোমার হাতে গরম হাড়ি ছিল না। নাহলে কেলেঙ্কারি হয়ে যেত।

— কিন্তু দ্রোহ, এই সকালে বের হলো? হাউ ইজ ইট পসিবল?

— রোজ অফিসের জন্য সকালে বের হতে পারে, আর ঘুরতে যেতে পারবে না কেন সকালে?

— কিন্তু গেলে তো ও রাতে যায়।

— তাতে কি? অফিসে তো আর রাতে গিয়ে সারারাত বসে থাকে না। তাই হয়তো এই অভ্যাস হচ্ছে। সকালে ঘুরতে যাওয়া সুবুদ্ধির উদয় হলো হয়তো। যাক, এই খুশিতে আজ আমি বাজার থেকে সোনালী মুরগি কিনে আনব দুটো। ভালো করে রেঁধে দিও। আর এই ফেলাফেলি কাণ্ড ঘটিয়ো না আবার।

— আচ্ছা।

বলেই ভাবতে ভাবতে রান্নাঘরে ঢুকে পড়লেন আবার দ্রোহের মা। বাবা চলে গেলেন টিভি দেখতে। সকাল সকাল উঠে বক্সিং খেলা না দেখলে আবার বাবার খাবার হজম হতে চাইবে না- এমনটা ভাবতে ভাবতে দিবাও নিজের ঘরে চলে আসলো। মারামারি তার ভালো লাগে, তবে সেটা চলচ্চিত্রের। নাটক কিংবা বক্সিং খেলার নয়।

দ্রোহ এসে থামল সেই পুরনো বাড়িটার সামনে। আগের বার প্রতিবার রাতে এলেও এই প্রথমবার দিনে এলো। চিকন বিল্ডিংটা দেখে প্রথমেই ওর নজর আটকে গেল সেই চার তলায়। কিন্তু সেখানে জানালায় একটা অন্য একজন মেয়েকে দেখে ধরে নিল রেখা সত্যিই এখান থেকে চলে গিয়েছে। আরও উপরে তাকাতেই ৬ তলার ছাদে থাকা পেয়ারা গাছটা নজরে পড়ল। দ্রোহ অন্য দিকে না তাকিয়ে সরাসরি ছাদে চলে গেল। রেখার এখান থেকে চলে যাওয়ার কারণ না জানতে পারলেও অন্তত পেয়ারা নিয়ে যাওয়া যাবে। কিছু তো পাওয়া যাবে, অকারণে আসাও হবে না, শক্তির অপচয়ও হবে না। দ্রোহ উপরে উঠেই প্রথমে পুরো ছাদটায় চোখ বুলিয়ে নিল। কেউ নেই সেখানে। ঘড়ির দিকে তাকাতেই দেখল এখানে আসতে আসতে সাড়ে বারোটা বাজিয়ে ফেলেছে। তাই ছাদের দরজাটা ভিড়িয়ে দিয়ে পেয়ারা গাছ থেকে একটা পেয়ারা নিয়ে নিল। সেখানে বসেই খাওয়া শুরু করে দিল। মাথার ঠিক উপরে সূর্য অবস্থান করছে। জ্যৈষ্ঠ মাসে সূর্যের উত্তাপ কম নয়। ছাদে আয়েশ করে বসতে পারল না দ্রোহ। রোদের জন্য গরম হয়ে আছে, পা রাখার অবস্থা নেই। দ্রুত একটা পেয়ারা শেষ করে আবার আশেপাশে তাকাল। নিজের পকেট হাতড়ে একটা নীল রঙের পলিথিন বের করে তাতে গুনে গুনে ৫ তা পেয়ারা নিল সে। মামার জন্য একটা, মামির জন্য একটা, রূপ আর রাহাতের জন্য একটা করে আর সবশেষে তার নিজের জন্য একটা। যে বাড়ির ছাদে পেয়ারা গাছ লাগিয়েছে তাকে মনে মনে ধন্যবাদ দিয়ে বিল্ডিং এর ছাদ থেকে নেমে পড়ল। গন্তব্য মামার বাড়ি। নিশ্চয় সে এই পেয়ারা ওয়ালা ব্যাগ হাতে রেখার প্রতিবেশির সাথে কথা বলতে যাবে না। দেখা যাবে গাছের মালিকের সামনে তার গাছের তাজা পেয়ারা নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকায় রাম কেলানি না খেতে হয়। ভাগ্য ভালো তাই ওই সময়ে কেউ বাড়ির বাইরে ছিল না। তাই বিনা বাধায় পেয়ারা নিয়ে চলে আসতে পারে সে। তাছাড়া এতদিন রাতে মামা বাড়িতে গিয়েছে। আজ দিনের বেলা গেলে নিশ্চিত মামা চমকে যাবে। এই আশা নিয়েই পা বাড়াল সেদিকে।

মামা বাড়িতে পৌঁছে একেবারে দুপুরের খাবার খেয়েই বের হওয়ার অনুমতি পেল দ্রোহ। না খেয়ে আর বের হতে পারল না। মামির ইমোশনাল কথায় তো দ্রোহ শুরুতেই গলে যায় প্রতিবার। খাবার শেষে একেবারে দুপুরে আবার ওই বিল্ডিং এর সামনে গিয়ে দাঁড়াল। মামা এবারও চমকে যাননি। মা তাকে ফোন করে দ্রোহের যাওয়ার কথা বলে দিয়েছিলেন আবার।

রেখার বাড়িতে যেয়ে কোন লাভ হবে না এই ভেবে পাশের বাড়ির দরজায় নক করল সে। সেই অ্যান্টি দরজা খুলে দিতেই সালাম দিয়ে দ্রোহ সরাসরি বলে উঠল,

— এই ফ্ল্যাটে কি আগে রিখিয়া ইসলাম রেখা থাকতেন?

— কেন? কি দরকার?

— আমি উনার স্কুল থেকে এসেছি। স্কুলের কিছু দরকারি কাজ ছিল।

অ্যান্টিটা দ্রোহের কথা কতটা শুনলেন, সেটা জানা নেই দ্রোহের। কিন্তু তখন তিনি রেখাকে নিয়ে যা যা মনে করেন তাই তাই বলে দ্রোহকে দূরে থাকার নির্দেশ দিলেন। নিজের ছোট একটা প্রশ্নের উত্তর “হ্যাঁ” কিংবা “না” এর বদলে এমন ব্যাখ্যামূলক কথা শুনে প্রথমে বেশ কিছুটা সময় নিল সে পুরোটা বিষয় বুঝতে। রেখার চরিত্র নিয়ে তার মনগড়া কথা শুনে রাগ হলেও সেটা প্রকাশ করল না। তার কথার বিপরীতে বলে উঠল,

— মিস রেখার সম্পর্কে এমন কথা বলছেন কেন আপনি? উনাকে আমি যতটুকু চিনি, স্কুল থেকে, তাতে তো মনে হয়নি উনি এমন।

অ্যান্টি আবার সেই রাতের কথা অতিরঞ্জিত করে ব্যাখ্যা করলেন। দ্রোহও তার কথা শুনে মনে মনে বলতে বাধ্য হলো,

“অ্যান্টি, আপনার চিন্তার ধারা অসাধারণ। আপনি কোন নাটক না চলচ্চিত্রের লেখিকা হতে পারেন।”

কিন্তু প্রকাশ্যে বলল,

— সেদিন রাতে আমিই এসেছিলাম। আর শুধু পানি পান করতেই। রাত করে দোকান বন্ধ থাকে। আর অজানা বাড়িতেও ঢুকলে নির্ঘাত ডাকাত বলে মারত। তাই আমি উনি পরিচিত বলেই উনার কাছে সাহায্য চেয়েছিলাম। তবে আপনার চিন্তার লেভেল অসাধারণ। আমার তো তালি বাজাতে ইচ্ছা করছে। আপনি তো লেখক হতে পারেন। সেখানে নিজের সৃজনশীলতা খাটালে উপার্জন করতে পারবেন ভালো। শুধু শুধু একটা ভালো মানুষের চরিত্রে অকারণে আঙুল তুলছেন কেন?

বলেই বিলম্ব না করে জোরে জোরে তালি বাজানো শুরু করল দ্রোহ। অ্যান্টি আরও কিছু বলতে যাবেন, তার আগেই দ্রোহ বলে উঠল,

— বিশ্বাস না হলে দরজা খোলাই ছিল। দরকার পড়লে ভেতরে এসে দেখে যেতেন। অসময়ে এসেছিলাম ঠিকই। কিন্তু আমার উদ্দেশ্য খারাপ ছিল না। আর একজন মানুষ সম্পর্কে এতো জঘন্য কথাও কোন দিন ভাবিনি আমি।

বলেই সেখান থেকে চলে গেল দ্রোহ। সেই পুরোটা সময় ওই বাকি দুটো মহিলা আর বাড়িওয়ালীও উপস্থিত ছিলেন ওখানে। বাড়িওয়ালী চিৎকার করতে করতে আসছিলেন, তার গাছের পেয়ারা কে চুরি করেছে। তারাও চিন্তায় পড়ে গেলেন, সেদিনের কাজটা কি আসলেই ঠিক ছিল?

দ্রোহ এদিকে বাড়ি থেকে বের হয়ে এসে মনে মনে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ হলো, এরপর থেকে পেয়ারার দরকার হলে এই বাড়ির ছাদ থেকেই নিবে। এরে তো সত্তিকার অর্থে কোন শাস্তি পাবে না পৃথিবীতে। উল্টো আরও ভালো মানুষের জীবন নষ্ট করবে। এদের গাছ থেকে পেয়ারা নিয়ে গেলে বেশি কিছু হবে না। সে সরাসরি বাস ধরল। এবার সরাসরি রেখার কাছেই যাবে। শুক্রবার হওয়ায় রেখা হয়তো এখন ওখানেই থাকবে। তাছাড়া এই দুইদিনে কিছুটা আন্দাজ করেও নিয়েছে সে, রেখা যেহেতু আগে আগে সেখান যায় না তাহলে হয়তো টিউশনি করিয়ে বাড়ি ফিরতে দেরি হয়। যেটা শুক্রবারে হওয়ার কথা না। ওর সাথে কথা বলতে হবে দ্রোহের। যাই হোক না কেন, আপাতদৃষ্টিতে ভুলটা ওরও ছিল। আগে পরে কিছু চিন্তা ভাবনা না করে এমন কাজ করা উচিত হয়নি তার।

__________

বুড়িগঙ্গা নদীর কাছে যাওয়ার ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও সময় পায় না রেখা। আজ তার খালামণিই বলেছেন, ওর সাথে কাছে গিয়েই দেখিয়ে নিয়ে আসবেন। রেখাও রাজি হয়েছে। শুধু মনোয়ারার আসার অপেক্ষা।

রেখার হাতে পিঠার বাটি। গত রাতে এখানকার শিক্ষিকা আর ছাত্রীরা মিলে পিঠা বানিয়েছিলেন। সেগুলো সবাই ভাগ করে নিয়েছে। সেটাই এখন খাচ্ছে রেখা। চোখ সেই দুই বিল্ডিং এর মাঝে, যেখানটায় পানির দেখা মিলছে। এই মুহূর্তে আবার দ্রোহের কথাও মনে পড়ছে তার। রাতে জানালায় দাঁড়িয়ে থেকে কিশোরীর ন্যায় কি পাগলামোই না করেছিল সে শুধু এই মানুষটার জন্য, জীবনে প্রথমবার। আর তারপর ঝামেলায়ও পড়ল দ্রোহের জন্য। তবে ঝামেলা হয়েছে শুধু এক বার। আর রেখাকে দ্রোহ বাঁচিয়েছে দুই বার। সেগুলোয় কি কাটাকাটি করা যাবে? তাহলে নিজের ওই মুহূর্তটা মুছে ফেলত রেখা।

ভাবনার মাঝ পথে বহুদিন পর একই কণ্ঠস্বরে নিজের নাম শুনতে পেরে চমকে উঠল রেখা। পাশে ফিরতেই দ্রোহের চেহারা নজরে পড়ল ঠিকই। কিন্তু তাতে সেই পুরনো হাসিটা নেই। জোরপূর্বক হালকা হাসছে যেন দ্রোহ।

চলবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here