অগত্যা_তুলকালাম,পর্ব ৬,৭

#অগত্যা_তুলকালাম,পর্ব ৬,৭
নাফীছাহ ইফফাত
পর্ব ৬

সেদিন ফোন রেখে দিয়েছিলাম। কাঁদতে কাঁদতে একসময় বোধদয় হলো। নিজেকে খুব বেহায়া মনে হতে লাগলো। চোখের পানি মুছে নিজের মনে বিড়বিড় করে বললাম,
যার কাছে আমার এই এতটুকু মূল্য নেই, আমার কান্না শুনেও যার গলার স্বর নামে না তার কাছ থেকে আমি ভালোবাসা আশা করছি কি করে? যে মুখের ওপর রিলেশন ব্রেক করার কথা বলতে পারে, রিলেশন রাখার জন্য আজগুবি একটা শর্ত ঠুকে দিতে পারে সে আমাকে কখনোই ভালোবাসেনি। তখনই আমি কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলাম, ওর সাথে আর কখনোই কথা বলবো না আমি। অনেক হয়েছে। যেখানে ও চায় না, সেখানে আমি কেন প্রতিবার বেহায়ার মতো ওর কাছে ছুটে যাবো? যাইনি আমি। সেদিন সন্ধ্যাবেলা ও নিজে ফোন দেয় আমাকে। রিসিভ করিনি আমি। বারবার ফোন দেয়। নাকীবকে দিয়ে কৌশলে কাশবনে নিয়ে যায় আমাকে।

আমার কাঁদো কাঁদো চেহারা, ফোলা চোখ-মুখ দেখে ও বলেছিলো,
‘হুদাই এত কাঁদছিলে কেন?’

সে-ই প্রথমবার আমি উচ্চস্বরে ওর সাথে কথা বলেছিলাম। চেঁচিয়ে বলেছিলাম,
‘হুদাই আমাকে পার্কে ডেকে আনার মানে কি?’

‘আমার জন্য যে খাওয়া-দাওয়া বন্ধ করে বসে আছো!’
‘আমি কারো জন্য কেনোকিছু বন্ধ করিনি। অত টাইম নেই আমার।’ অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে নিয়ে বললাম।
‘চোখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে সেটা। আচ্ছা যাইহোক, শোনো আমি যা বলেছি সবটা তোমার ভালোর জন্য।’

‘ভালোর জন্য রাগের মাথায় অত কথা শোনাতে হলো?’ ভ্রু কুঁচকে বললাম।
রাফিন শান্তস্বরে বললো,
‘আরোহী, ফার্স্ট অফ অল তুমি ভুল বুঝছো। আমি একটা কথাও রাগের মাথায় বলিনি। যা বলেছি মন থেকে।’

এই কথা শোনার পর নিজেকে নিজের কাছে এত মূল্যহীন লাগছিলো আমার। সেদিন রাফিনের সাথে আর একটাও কথা বলিনি আমি। ঠিক সেদিন থেকে ওর সাথে যোগাযোগ কমিয়ে দিয়েছিলাম। সারাক্ষণ টেক্সট করা, ফোন করা থামিয়ে দিয়েছিলাম। তাতেও ওর কোনো ভাবান্তর হয়নি। বরং ও হয়তো মনে মনে খুশিই হয়েছে।

অনেকক্ষণ ধরে পুরোনো কথা ভাবছিলাম। ভুলেই গিয়েছি রাফিন আমার সামনে বসে আছে।
রাফিন আমার চোখের সামনে তুড়ি বাজিয়ে বাজখাঁই গলায় ডাকে আমাকে।
‘এই আরোহী, কই হারিয়ে গেলে?’

ওর ডাকে সম্বিৎ ফিরে পাই। চমকে তাকাতেই বললো,
‘কি ভাবছিলে?’
‘কিছু না।’ মাথা নেড়ে ঝটপট বললাম।
‘বললেই হলো? এরমধ্যেই আমার পাবজিতে একটা ম্যাচ খেলা হয়ে গেল।’
‘ওহ!’ হতাশ দৃষ্টিতে তাকাই ওর ফোনের দিকে।

প্রসঙ্গ পাল্টে ও নিজেই বললো,
‘একটা কথা বলবো ভেবেছিলাম।’
‘হ্যাঁ বলো।’

‘তুমি আজকাল আমাকে আর টেক্সট করো না কেন?’
‘করি তো।’
‘গত দুদিনে কত কি ঘটে গেল একটাবারও তো টেক্সট করলে না।’
‘বিজি ছিলাম তো।’

‘তুমিই তো আগে সবসময় বলতে, আমার জন্য নাকি তুমি সবসময় ফ্রী।’
‘সেরকম অনেককিছু তো তুমিও বলতে।’
‘আমি হয়তো রাগের মাথায় অনেককিছুই বলি। তুমি সেগুলো সিরিয়াসলি নিও না প্লিজ।’
‘না, তুমি কখনো রাগের মাথায় কিছুই বলো না। রেগে থাকলেও সবকিছু ঠান্ডা মাথায় বলো।’ ক্ষীণ কন্ঠে বলি আমি।

‘অনেকসময় তো রাগের মাথায় অনেককিছুই বলে ফেলি। হয়তো এমন কখনো হয়েছে তোমাকে বলেছি, টেক্সট না করতে। বলেছি?’
‘মনে নেই আমার।’ তাচ্ছিল্যের সুরে বললাম আমি। নিজের মনে নেই, আসছে আমাকে জিজ্ঞেস করতে।

‘দেখো আরোহী, আমি হয়তো রাগের মাথায় বা গেইমসে আছি ঐ টাইমে তুমি টেক্সট বা কল করলে। তুমি তো জানোই গেইমসে থাকলে তখন কেউ টেক্সট বা কল করলে আমার রাগ ওঠে যায়। বাবা-মা কল করলে পর্যন্ত রেগে যাই আমি। তখন হয়তোবা রেগে বললাম যে, আর কখনো আমাকে টেক্সট করবা না। তুমি সত্যিই টেক্সট করা বন্ধ করে দিবে? তা তো না।’

আমি প্রথমে ভেবেছিলাম রাফিন আমার কাছে জানতে চাইছে। পরে ওর ‘তা তো না’ কথাটা শুনে গা জ্বলে গেল আমার। ও কি বোঝাতে চায়, ওকে টেক্সট না করে আমি থাকতে পারবো না? আলবাৎ পারবো। সহসা বললাম,
‘অবশ্যই বন্ধ করে দিবো। তোমার সব কথা শুনি, এটা শুনবো না? এটাও অবশ্যই শুনবো। তাতে অবশ্য তোমারই লাভ।’

‘লাভ তো অবশ্যই আছে। বাট তুমি রাগ করে থাকবে না, বলো?’

আমি দাঁড়িয়ে পড়লাম। ওর সাথে কথা বলতে ইচ্ছে করছে না। এমন ঠোঁটকাটা কেন ছেলেটা? মুখের ওপর সব বলে দেয়। মিনিমাম সেন্সটুকুও কি নেই? কারও মন রাখার জন্যও কি অল্প একটু মিথ্যে বলা যায় না? মিথ্যা না বলুক অন্তত চুপ তো থাকা যায়। তাই বলে সবকিছু মুখের ওপর বলে দিতে হবে? আজব!

‘কি হলো? চলে যাচ্ছো?’
‘হুম।’
‘কথা তো শেষ হয়নি।’
‘আমার কাজ আছে অনেক। তুমি গেইমস খেলো। আমি যাচ্ছি।’
‘ওকে।’

‘অসহ্য একটা! একবার আটকালো না পর্যন্ত।’ বিড়বিড় করে কথাটা বলে চলে এলাম ওখান থেকে। এরকম কাটখোট্টা একটা বয়ফ্রেন্ড আমার কপালে ছিল? এটাকে নিয়ে আমি কি করবো? সবাই ভাবে কিভাবে বাবা-মাকে বয়ফ্রেন্ডের কথা বলবে আর রাজি করাবে? আর আমি? এই ফুটো কপালী আমি ভাবি শেষমেশ এই আজব চিজটা আমার সাথে থাকবে তো? নাকি গেইমসের কোনো একটা কার্টুন মেয়েকে ধরে বিয়ে করে ফেলবে কে জানে? নাকি কোনো একটা রোবট বিয়ে করবে? ও নিজে তো রোবটের মতোই। ওর সাথে রোবটই ভালো মানাবে। আমার মতো শান্তশিষ্ট মেয়েকে কিছুতেই ওর সাথে মানায় না। কিছুতেই না।

আমি অনেকদূর চলে আসার পর রাফিন দৌড়ে এসে খপ করে আমার হাতটা ধরে বললো,
‘এত্ত ওভারথিঙ্ক করো কেন তুমি? একটু বাস্তববাদী হও পাগলী!’ এটা বলে যেভাবে এসেছিলো সেভাবেই চলে গেল। এদিকে আমার মন অদ্ভুদ ভালো লাগায় ছেয়ে গেল। সেটাকে খুব একটা পাত্তা না দিয়ে ভেংচি দিয়ে স্থান ত্যাগ করলাম।

পরদিন ভোরে রিয়াদের ফোন পাই। তখনও ঘুম ভাঙ্গেনি আমার। রিয়াদ সুখবর শোনায়। বলে,
‘দোস্ত, তোর সবকিছু ম্যানেজ হয়ে গেছে।’
‘সত্যি? কিভাবে করলি?’
‘সেসব তোর জানতে হবে না। আঙ্কেলকে গিয়ে সব জানা যা।’
‘হ্যাঁ দোস্ত, এখনই জানাচ্ছি।’
‘হুম। আর শোন, আজকে ভার্সিটি আসিস।’
‘শিউর।’

ফোন রেখে বাবার রুমে ছুটলাম। বাবাকে খবরটা জানাতেই ভীষণ খুশি হয়ে বললো,
‘সত্যিই তুই সমাধান করেছিস? কিভাবে করলি বলতো?’
‘সেসব তোমাকে জানতে হবে না বাবা। তুমি এখন টেনশন ফ্রী থাকো।’ বিজ্ঞের মতো বললাম।

বাবা আমাকে জড়িয়ে ধরে বললেন, ‘আমার ছোট্ট হৃদিটা তো অনেক বড় হয়ে গেছে। এবার বিজনেসের দায়িত্বটা পুরোপুরি তোর কাঁধে দিয়ে আমি সারাক্ষণ বাসায় বসে থাকবো।’

আমি বাবাকে ছেড়ে দিয়ে হালকা সরে এসে বললাম,
‘বাসায় সারাদিন কি করবে বাবা?’
‘তোর মায়ের সাথে ঝগড়া করবো। হাহাহা।’ বাবা ঘর কাঁপিয়ে হাসতে লাগলেন।

আমি মৃদুস্বরে বললাম, “বাবা, রাসূল (সাঃ) কখনো অট্টহাসি দিতেন না।”
বাবা সাথে সাথে হাসি বন্ধ করে বললেন, “স্যরি!”
আমি মুচকি হেসে বেরিয়ে এলাম। কিচেনে গিয়ে মাকে বললাম,
‘মা, যাও গিয়ে বাবার সাথে ঝগড়া করো। সব মিটমাট হয়ে গেছে।’
‘সত্যি? কে মিটমাট করলো? নাকীব?’

আমার মুখের হাসি মুহুর্তেই উবে গেল। সব কি শুধু নাকীবই পারে? আমি কিছুই পারি না? আমি মৃদু কন্ঠে বললাম,
‘হুম নাকীবই করেছে।’
মা গর্ব করে বললেন,
‘আমার ছেলে হলো দশে একটা। ও-ই তো পারবে সব। তুই এতবড় হলি কিচ্ছুটি শিখলি না রে হৃদি।’

চোখের কোণে পানি জমছে। মায়ের সামনে থেকে সরে নিজের রুমে চলে গেলাম। বড্ড চোখ জ্বালা করছে। হাতমুখ ধুয়ে ফ্রেশ হয়ে খাবার না খেয়েই বেরিয়ে পড়লাম। ভার্সিটি যেতে হবে। বাসার নিচে নামতেই দেখি রিয়াদ ওর গাড়ি নিয়ে এসেছে। আমাকে দেখতেই বললো,
‘আজকে ভার্সিটি যাবো না। একটা জায়গায় নিয়ে যাবো তোকে।’

আমার এমনিতেই ভার্সিটি যেতে ইচ্ছে করছিলো না। রিয়াদের সাথে কথা বলার জন্যই মূলত যাচ্ছিলাম আমি। তাছাড়া আমি ভেতরে ভেতরে পুরোটা ঘেঁটে আছি। একদিকে রাফিনের কাটখোট্টা স্বভাব অন্যদিকে মায়ের অবহেলা সবকিছু নিয়ে ভীষণ মন খারাপ হয়ে আছে আমার। তাই বিনাবাক্যে রিয়াদের গাড়িতে উঠে পড়লাম। কোথায় যাবে তাও জিজ্ঞেস করলাম না। গাড়িতে উঠতেই দেখি শাওন, মৌ, মারিয়া সবাই বসে আছে। রিয়াদের দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকাতেই বললো,
‘ঘুরতে যাচ্ছি সবাই।’

আমি আর কথা বাড়ালাম না। চুপচাপ গাড়িতে বসে ছিলাম। অনেকক্ষণ পর সুন্দর একটা জায়গায় গিয়ে গাড়ি থামে। চারপাশে সুউচ্চ পাহাড়। বয়ে চলা মেঠোপথ। পথের দু’পাশে ঘন গাছপালা। আমরা গাড়ি থেকে নেমে সামনে হাঁটতে থাকি। অনেকদূর হাঁটার পরও কারো দেখা মেলেনি। আমরা আসলে পাহাড়ে ওঠার রাস্তাটা খুঁজছিলাম। কিন্তু আশেপাশে কেউ না থাকায় কাউকে জিজ্ঞেসও করতে পারছিলাম না।

জায়গাটায় জনমানব নেই বললেই চলে। অনেকদূর হাঁটার পর অবশেষে একটা চায়ের দোকান পাওয়া গেল। চায়ের দোকানির কাছ থেকে পাহাড়ে ওঠার রাস্তা জেনে নিলো রিয়াদ। ঐ দোকান থেকে আমরা এক কাপ চা খেলাম পাউরুটি দিয়ে। এরপর আবার হাঁটতে হাঁটতে দোকানির নির্দেশ অনুযায়ী যেতে থাকলাম। আমরা তখনও জানি না কি বিপদ আমাদের জন্য ওৎ পেতে আছে।

অবশেষে পাহাড়ে ওঠার রাস্তা পেলাম। অনেক কসরত করে পাহাড়ে উঠে চারপাশটা দেখে চোখ জুড়িয়ে গেল সবার। এতক্ষণের সমস্ত ক্লান্তি যেন উবে গেল। মুগ্ধ হয়ে চারপাশে দেখতে দেখতে বেশ খানিকক্ষণ সময় পেরিয়ে যায়। আমরা পাহাড়ের ওপর সুন্দর নরম ঘাসে বসি। হঠাৎ শাওন বললো,
‘চল, সুন্দর জায়গাটায় আমরা সবাই নিজেদের জীবনের সবচেয়ে সুন্দর কিংবা মজার ঘটনাটা একে অপরের সাথে শেয়ার করি।’

‘হ্যাঁ ঠিক বলেছিস।’ মারিয়া সায় দেয়।
‘শাওন, প্রথমে তাহলে তুই-ই বল সুন্দর ঘটনা।’

শাওন বিনাবাক্য ব্যয়ে বলতে শুরু করে,
‘আমার জীবনের সবচেয়ে সুন্দর ঘটনা ঘটেছিলো কলেজে ঢোকার প্রথমদিন। আমি ভয়ে ভয়ে কলেজের গেইটে পা রাখতেই একদল ছেলেমেয়ে এসে আমাকে মালা পরিয়ে দিলো। আমি তাজ্জব হয়ে গিয়েছিলাম সেদিন। একে তো নতুন কলেজ, কি না কি হবে ভেবে ভয়ে আমি আধমরা। তারওপর কলেজে ঢুকতেই গণ্যমান্যদের মতো মালা পরিয়ে দিলো আমাকে। আমি তাড়াহুড়ো করে বলতে গেলাম, তোমরা ভুল মানুষকে মালা পরাচ্ছো। কিন্তু সেটা আর বলা হয়নি। তার আগেই একটা মিষ্টি মেয়ে এসে সবচেয়ে বড় মালাটা পরিয়ে বললো,
‘ওয়েলকাম টু আওয়ার কলেজ, ম্যাম!’

আমি মুচকি হাসলাম। শাওন বললো, “সেই মিষ্টি মেয়েটা ছিল হৃদিতা।”
বাকিরা অবাক হয়ে জানতে চাইলো,
‘তখন হৃদিতা তোকে চিনতো নাকি?’
‘না, বরং সেদিনই আমাদের পরিচয়।’ শাওন বলে।

‘তাহলে হৃদি, হঠাৎ ওকে মালা পরালি কেন?’
আমি হাসতে হাসতে বললাম,
‘সেদিন আমাদের কলেজে নবীন বরণ অনুষ্ঠান ছিল। অনুষ্ঠান শেষে আমরা কয়েকজন মিলে বসেছিলাম। দূর থেকে দেখছিলাম শাওন আসছে। প্রথমদিন দেরী করে আসায় হয়তো ভয়ে কাঁপছিলো ও। নিউ স্টুডেন্ট বোঝাই যাচ্ছে। আমি সবাইকে বললাম, ওকে গিয়ে মালা পরিয়ে আরও ভড়কে দিতে হবে। ভড়কে দেওয়ার কথা শুনে সবাই রাজি হয়ে গেল। আমাদের গলায় এমনিতেই মালা ছিলো। সবাই গিয়ে পরিয়ে দিলাম ওকে। শাওন তো বিস্ময়ে হতবাক। ও হাত নেড়ে বারবার কিছু বলতে চাইছিলো কিন্তু আমরা কিছু বলতে দিইনি ওকে। নিয়ে গিয়ে বসিয়ে দিয়েছিলাম প্রধান অতিথির চেয়ারে। হাহাহা!’

‘তারপর, তারপর?’

‘তারপর সবাই মিলে বলছিলাম, ম্যাম আপনার আসতে কোনো অসুবিধে হয়নি তো? কি খাবেন বলুন ম্যাম? অনুষ্ঠান শুরু হতে তো ঢের দেরী, এত আর্লি চলে এলেন যে?’

আমার কথা শেষ হতেই সবাই হাসিতে ঢলে পড়লো। শাওন আমার কাঁধে ধাক্কা দিয়ে বললো,
‘ফাযিল তুই, ভীষণ ফাযিল!’

আমি হাসতে হাসতে বললাম, ‘এটা বুঝি সুন্দর ঘটনা হলো? এটা তো মজার ঘটনা।’
‘এটাই আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ ঘটনা। এই ঘটনা না ঘটলে কি তোকে পেতাম?’
‘আহারে!’ জড়িয়ে ধরলাম শাওনকে।

‘এবার তোর ঘটনা বল?’ রিয়াদ বললো।
‘আমার… উমম!’
কি ঘটনা বলা যায় ভাবছি। ইয়েস! মনে পড়েছে।

#Be_Continued_In_Sha_Allah ❣️

#অগত্যা_তুলকালাম
নাফীছাহ ইফফাত

পর্ব ৭

‘আমার জীবনের সবচেয়ে সুন্দর ঘটনা, সুন্দর মুহুর্ত ছিল প্রিয় মানুষটার সাথে পথচলার শুরুর দিনটা।’ আমি বলা শুরু করলাম।

শাওন বললো, ‘তোর প্রিয় মানুষ মানে? তোর প্রিয় মানুষও আছে? কই আমাকে তো বলিসনি কোনদিন?’
‘বলার মতো কিছু না তো।’
‘সেসব বললে হবে না। আজকে আর কোনো কাহিনি না। শুধু তোর লাভ স্টোরি শুনবো। বল বল, শুরু কর।’ মৌ বললো।

‘সেটা বলতে গেলে পুরো একটা গল্পই হয়ে যাবে।’

‘বল বল? গল্পই বল।’ রিয়াদ বলে।

অগত্যা বলা শুরু করলাম আমি।
‘আমাদের দেখা হয় অনেকটা সিনেমাটিকভাবে। আমি জোরে সাইকেল চালিয়ে কাশবনে ঢুকছিলাম আর সে বের হচ্ছিল। হুট করে ধাক্কা লেগে বেসামাল আমি পড়ে যাই কিন্তু সে পড়েনি। আমার দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে মাটি থেকে তুলে এনেছিল আমাকে। সেদিন পরিচয়। এরপর আবার দেখা হয় বেশ কিছুদিন পর। তখনই মূলত চেনাজানা হলো আমাদের। এরপর থেকে প্রায় প্রতিদিন দেখা হতো। কথা বলতাম, ভালো লাগতো। আর সে আমাদের সাথে ক্রিকেট খেলতো প্রায়ই। এরপর একদিন হুট করে ও আমাকে প্রপোজ করে বসে।’

‘কীভাবে প্রপোজ করেছিলো বলনা?’ শাওন বললো।

‘বলছি। কাশবনের গহীনে নিয়ে গিয়ে একগুচ্ছ কাশফুল হাতে আমার সামনে হাঁটুমুড়ে বসে বলেছিলো,
“আমরা কখনো বন্ধু নই, শত্রুও নই। বেস্টফ্রেন্ড, ক্লোজফ্রেন্ড কিছুই নই আমরা। আমাদের সম্পর্কের আসলে কোনো নামই নেই। আমি এই সম্পর্কের নাম দিতে চাই, আরোহী। আমার চলার পথে, আমার বাইকের পেছনের সিটে, আমার পুরো জীবনে একমাত্র তোমাকে আরোহণ করাতে চাই। তোমাকে আমি আমার আরোহী বানাতে চাই। আমার একান্ত আরোহী। যার ওপর সব অধিকার শুধু আমার থাকবে। যে-ই আরোহীকে আমি অন্যকারো সাথে আরোহন করতে কখনো দেখতে চাই না। যে-ই আরোহী সারাক্ষণ আমার সাথে থাকবে, আমার সাথে আরোহণ করবে, আমার সাথে পুরো পৃথিবী ভ্রমণ করবে আর সারাক্ষণ শুধু আমার মনে বিরাজ করবে। তুমি আমার হৃদয়ের আরোহী হবে, প্লিজ?’

আমার বুকের ভেতর ধুকপুকানি বেড়ে গেল। শিরদাঁড়া বেয়ে ঠান্ডা স্রোত বয়ে গেল। কোনোরকমে ওর হাতসমেত কাশের গুচ্ছদ্বয় ধরে বলেছিলাম,
‘আমি শুধু তোমার আরোহী হতে চাই। আর কারো না। কারো আরোহী হওয়ার আগে তোমার হৃদয়ে ঠায় দাও আমায়।’

ও মুচকি হেসে উঠে দাঁড়িয়ে আমার হাতজোড়া শক্ত করে ধরে বলেছিলো, ‘তুমিই আমার হৃদয়ের আরোহী, হৃদিতা আরোহী!’

এটুকু বলে থামলাম আমি। সবাই মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। মৌ বললো,
‘তোর বয়ফ্রেন্ড তোকে এত সুন্দর করে প্রপোজ করেছিলো? মাই গুডনেস! এভাবেও প্রপোজ করা পসিবল? হাউ ইন্টেলিজেন্ট হি ইজ!’

মারিয়া বললো, ‘আসলেই সাংঘাতিক সুন্দর প্রপোজ। আমার শোনা সেরা প্রপোজ। তোর পুরো নাম দিয়ে কি সুন্দরভাবে ভালোবাসার কথাটা এক্সপ্লেইন করলো। “তুমি আমার হৃদয়ের আরোহী, হৃদিতা আরোহী!” উফ! কি সুন্দর! তুই অনেক লাকী রে দোস্ত।’ ’হায়’ বলে বুকে হাত দিয়ে পড়ে যাওয়ার ভঙ্গি করলো মারিয়া।

‘আমার বয়ফ্রেন্ড তো ঠিকভাবে গোলাপটাই ধরতে পারেনি। হাত কাঁপছিলো ওর। আর কথা বলার ভঙ্গি..হুহ! তার হাবভাব দেখে মনে হচ্ছিল আমি না, তার সামনে বাঘ দাঁড়িয়ে আছে, তাকে খেয়ে ফেলবে তাই ভয়ে আধমরা সে। হুশশ!’ মৌ আফসোস করে বললো।

ওর কথায় সবাই হেসে ফেললো। মারিয়া বললো,
‘আমার বয়ফ্রেন্ডেরও সেইম অবস্থা দোস্ত।’

শাওন বক্রহাসি দিয়ে বললো, ‘আমার তো ভাই বয়ফ্রেন্ডই নেই। আমি জন্মগত সিঙ্গেল।’
আবার হাসির রোল পড়ে গেল। আমি রিয়াদকে বললাম,
‘তুই কিছু বলছিস না কেন? তোর প্রিয় মানুষ নেই?’

‘আমার? আছে তো, কিন্তু ধরা-ছোঁয়ার বাইরে।’ হতাশ গলায় বললো রিয়াদ।
‘মানে?’
‘সে আশেপাশেই আছে কিন্তু আমার না।’
‘একতরফা ভালোবাসা? বলিসনি ভালোবাসার কথা?’ মৌ বললো।

‘বলা হয়নি।’
‘কেন?’
‘ওর সাথে আমার রোজ কথা হয়৷ ভালোবাসার কথা বললে যদি তাও না হয়? যদি ছেড়ে চলে যায় এই ভয়ে বলিনি।’
‘বলে দে, বলে দে। আমরা তোর লাভ স্টোরিও শুনতে চাই।’ আমি বললাম।

রিয়াদ কিছু বলার আগেই হঠাৎ দেখলাম চার-পাঁচজন মুখোশধারী লোক আমাদেরকে ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে। আমরা তাড়াহুড়ো করে উঠে দাঁড়ালাম। লোকগুলোর মধ্যে একজন ঘাসের ওপর একটা রুমাল বিছিয়ে দিয়ে কর্কশ কন্ঠে বললো,
‘তোমাদের ফোন, ক্যামেরা, ঘড়ি যা কিছু আছে সব এক্ষুনি এখানে রাখো। নাহয় কারো ঘাড়ে মাথা থাকবে না।’

রিয়াদ কিছু বলতে যাবে তখনই ফ্যাচ করে একটা ছুরি বের করে লোকটা। আমরা ভয় পেয়ে পিছিয়ে আসি। লোকটা আবার বললো,
‘জিনিসগুলো রাখো, তাড়াতাড়ি ভাগো।’

আমরা ফোন, ওয়ালেট, ক্যামেরা ও ঘড়িসহ নিজেদের সাথে থাকা সব দামি জিনিসগুলো রুমালে রাখলাম। কিন্তু সবাই ফোন রাখলেও আমার ফোনটা আমি এপ্রোনের ভেতরে গোপন পকেটে রেখেছিলাম। লোকগুলো রুমালটা বেঁধে ফেলছিলো ঠিক তখনই আমার ফোনে কল আসে। আমার আত্মা বেরিয়ে আসার অবস্থা হয়। লোকগুলো রীতিমতো তেড়ে আসে আমার দিকে। ওদের আসার ভঙ্গি দেখে আমি পিছুতে গিয়ে ধপাস করে নিচে পড়ে গেলাম। শাওনরা আতঙ্কে চেঁচিয়ে উঠলো। লোকটা আমার গলায় ছুরি ধরে বললো,
‘ফোন বের কর।’

লোকটার চোখের দিকে ভালোভাবে তাকাতেই হঠাৎ চেনা চেনা মনে হলো। আমার তখন কি হয়েছে আমি জানি না। একটানে লোকটার মুখোশ খুলে ফেলি আমি। লোকটা সটান আমার গালে চড় মেরে দেয়। লোকটাকে দেখে আমি হতবাক। কারণ এই লোকটাই সেই চা-ওয়ালা। আমি বিড়বিড় করে আয়তুল কুরসি পড়ে বুকে ফু দিয়ে নিলাম। মুহুর্তেই মনে হাজারগুণ সাহস বেড়ে গেল। চিৎকার করে বললাম,
‘ফোনে অনেক ইম্পর্ট্যান্ট ডকুমেন্টস আছে। আমি কিছুতেই ফোন দিবো না।’

বাকি লোকগুলো ততক্ষণে আমার চারপাশে এসে দাঁড়িয়েছে। আমার ওপর ঝুঁকে আছে সবাই। বুক ধড়ফড় করছে আমার। হঠাৎ জোরে সমস্বরে চিৎকার শুনতে পাই দু’দুবার। ঘটনা কি হয়েছে বুঝতে পারিনি তবে এটুকু বুঝেছি লোকগুলো আর আমার সামনে নেই। সবগুলো মাথায় হাত দিয়ে মাটিতে পড়ে গেছে। বেকায়দায় পড়ায় দুজন গড়িয়ে পাহাড় থেকেই পড়ে গেছে।

রিয়াদ চিৎকার করে বললো, ‘চল সবাই, দ্রুত। মারিয়া দৌড়ে গিয়ে আমাদের জিনিসভর্তি রুমালের পুটলিটা তুলে নিলো। এরপর প্রাণপনে নিচের দিকে ছুটতে থাকে সবাই। আমি তখনো মাটিতে পড়ে আছি। রিয়াদ এসে আমাকে তুলে আমাকে নিয়ে দৌঁড়াতে থাকে ও।

একদম গাড়ির কাছে এসে থামি আমরা। চটজলদি গাড়িতে উঠে বাসায় চলে আসি। সেদিন রাতেই আমাদের সবার একসাথে জ্বর হয়। প্রচন্ড জ্বর নিয়ে দুদিন কেটে যায়। এই দুদিন আমার কোনো সেন্স ছিলো না বলতে গেলে। পাহাড় থেকে দৌড়ে নেমেছি বলে সারা শরীর ব্যাথায় জর্জরিত ছিল। তিনদিনের মাথায় সুস্থ হয়ে প্রথমেই রাফিনকে ফোন করি। ও ফোন ধরেই বললো,
‘কয়দিন লাগে ফোন ব্যাক করতে?’

আমি হেসে বললাম, ‘তিনদিন।’
‘হুহ! কেমন আছো এখন?’
‘ভালোই তো। তুমি?’
‘হুম ভালো। কি হয়েছিল তোমার? তুমি নাকি সেন্সলেস হয়ে পড়েছিলে বাসার সামনে? কোথায় গিয়েছিলে সেদিন?’

আমি রাফিনকে সব খুলে বললাম। শুনে রেগে বোম হয়ে বললো,
‘তুমি যে বিপজ্জনক পাহাড়টায় গিয়েছো আমাকে বলেছিলে একবারও? বলো বলেছিলে?’
‘ইয়ে হুট করে…’
‘কিসের হুট করে? আমার কথা ছাড়ো, আঙ্কেল-আন্টিকে বলে গিয়েছিলে? বলো?’
‘না।’
‘এত্ত কেয়ারলেস? কাউকে না বলে কোন সাহসে তুমি ঐ পাহাড়ে যাও? তুমি তো খুব ভালো করেই জানতে ঐ পাহাড় ডাকাতদের আড্ডাখানা। ডাকাতগুলো যদি মেরে পু্ঁতে রাখতো জানতাম আমরা কেউ?’

‘স্যরি! আর যাবো না, ভুল হয়ে গেছে।’ কাঁচুমাচু করে বললাম।
‘হোয়াট স্যরি? তোমার স্যরি তোমার কাছেই রাখো। এক নাম্বারের একটা কেয়ারলেস তুমি। তোমার কিছু হয়ে গেলে সবার খুব আনন্দ হতো ভেবেছো তাই না?’

‘সবার হতো না, তোমার তো হতো। তোমাকে অনেক জ্বালাই না আমি? আমি না থাকলে তো আর কেউ জ্বালাতো না।’ রাফিনকে আরেকটু রাগাতে কথাটা বললাম।

‘বাজে কথা বলবা না। ইচ্ছে করছে কেটে কুচিকুচি করে ফেলি। হেই তুমি বিকেলে আমার সাথে মিট করবা। খেয়েই ফেলবো আজকে।’ বলে ফট করে ফোন কেটে দিলো।

আমি তখনো ফোন হাতে নিয়ে ফোনের দিকে তাকিয়ে আছি। না জানি বিকেলে কি হয়? ফোনে তো ভালোই রাগিয়ে দিয়েছি। সামনাসামনি তো কথাও বলতে পারব না ভালো করে। উফ!

ভাবতে ভাবতে আবার ফোন এলো। রাফিনের ফোন। ও আবার কেন ফোন দিচ্ছে? আবার কি হলো?
তাড়াতাড়ি রিসিভ করে কানে দিতেই বললো,
‘খেয়েছো তুমি?’

আমার মাথায় আবার দুষ্টামি চাপলো। বললাম,
‘কি খাবো?’
ও আমার কথায় পাত্তা না দিয়ে বললো,
‘ব্রেকফাস্ট করেছো?’
‘হ্যাঁ, তুমি?’
‘করেছি। মেডিসিন নিয়েছো ঠিকঠাক?’
‘না, অসুখ সেরে গেছে।’
‘কিচ্ছু সারেনি। ঠিকঠাক মেডিসিন নিবে আর বিকেলে মিট করবে। রাখলাম।’
‘অকে।’

ফোন কাটতে উদ্যত হতেই রাফিন বললো,
‘শোনো..’
‘শুনছি।’
‘টেক কেয়ার!’

আহা! মনটা জুড়িয়ে গেল আমার। উৎফুল্ল মনে বললাম, ‘ইউ টু!’

যাক রাগ কমে গেছে। ওর এই একটা ভালো দিক। ও বেশিক্ষণ রাগ করে থাকতে পারে না। প্রথমে রাগ করলেও কিছুক্ষণ পর আবার কোমল সুরে কথা বলো। ওর এই দিকটা আমার খুব ভালো লাগে। রাগে যদি ভুল কিছু বলে কিছুক্ষণ পর আবার নিজেই এসে স্যরি বলে।

বিকেলে নাকীবের সাথে আগেভাগেই বের হয়ে গেলাম। রাফিন আসার আগে আমরা একটা ক্রিকেট ম্যাচ খেলবো। আমি যেতেই সব পিচ্চিরা আমার ওপর হামলে পড়লো। ব্যাট, বল, স্ট্যাম্প হাতে আমার চারপাশে ঘুরে সবাই স্লোগান দিচ্ছে,
‘আজকে আমাদের সাথে খেলতে হবে, না খেললে ছাড়ছি না, ছাড়ব না।’

আমি বললাম, ‘খেলতেই তো এসেছি। টস কর। কারা আগে খেলবে? আর কে কোন টিমে?’

আমরা একই টিমের মোট বারোজন, ছয়জন করে দু’দলে ভাগ হয়ে গেলাম। আমি ও নাকীব এখন আলাদা টিম। টসে নাকীবের দল জিতলো। ওরাই প্রথম ব্যাটিং করবে। খেলা হবে ছয় ওভারে।

সবাই পিচ্চি হওয়ায় নাকীব ছাড়া বাকিরা দুই ওভারের মধ্যে অলআউট হয়ে গেল। নাকীব মাঠে নেমে ধুমসে কয়েকটা ছক্কা হাঁকায়। তিন ওভারে ও একাই ৪৭ রান করে। চার ওভারের ফার্স্ট বলে আউট হয়ে যায় ও।

এরপর আমরা মাঠে নামি। আমিই প্রথমে ব্যাট হাতে নিই। প্রথম ওভারেই পরপর ছক্কা ও চার মেরে ২৬ রান করি। এরপর ব্যাট দিই শিহাবকে। ও এক ওভার খেলে ৪ রান করে। এভাবে খেলা চলতে থাকে। সবার শেষে আবার আমি মাঠে নামি। নাকীব বল করছে আর আমি ব্যাটিং। আমাদের রান এখনো ৪৩। পরের বলটা করতেই বল ড্রেনে গিয়ে পড়ে। সবাই সেদিকে ছুটে যায়। শিহাব বল তুলে আনে। আমি বলটা মাঠে ঘষে হাতে তুলে নিই। এরপর তিনটা বাউন্স মেরে আবার খেলায় ফিরে আসি। শেষ বলে আমি জোরে একটা ছক্কা হাঁকিয়ে আকাশের পানে তাকিয়ে আছি। বল কতদূর উঠেছে দেখছি তখনই কেউ এসে আমাকে টেনে নিয়ে যায়। আমি ব্যাট হাতে পিছু পিছু দৌড়াচ্ছি।

রাফিন রেগেমেগে অস্থির হয়ে আছে। আমাকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে ও।
‘অসুখ সেরেছে কয়েক ঘন্টা হলো না উনি এখানে এসে ক্রিকেট খেলছেন। ফাইজলামি হচ্ছে?’ রাগে গিজগিজ করতে করতে বললো রাফিন।

আমি হাতটা বারবার ছাড়িয়ে নেয়ার চেষ্টা করছি আর বলছি,
‘ছাড়ো বলছি, আমরা জিতে গেছি। ওদেরকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানো হয়নি।’
‘চুপপ! চুপ একদম।’ ধমকে উঠলো রাফিন।

আমি চেঁচিয়ে আমার টিমের উদ্দেশ্যে বললাম,
‘হেই বিপক্ষ দলকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে দিস। আমরা জিতে গেছি।’

‘চুপ করতে বলেছি না তোমাকে?’ রাফিন রক্তবর্ণ চোখে তাকালো আমার দিকে। আমি মুখ গোমড়া করে ব্যাটটা দূরে ছুড়ে ফেললাম।

রাফিন আমাকে নিয়ে কাশবনের গহীনের সুউচ্চ টাওয়ারটার দিকে যেতে থাকে। আমি আবার চেঁচিয়ে নাকীবকে বললাম,
‘ব্রো, আমার ট্রফিটা রেখে দিস কিন্তু।’

নাকীবও সমানতালে চেঁচিয়ে বললো, ‘তোমার ট্রফিই তোমাকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে, আমি আর কি রাখবো?’

রাফিন পিছু ফিরে মুচকি হাসলো। দূর থেকে নাকীবকে হাই ফাইভ দিয়ে একচোখ টিপে চলে আসলো আমাকে নিয়ে।

#Be_Continued__In_Sha_Allah ❣️

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here