#অগত্যা_তুলকালাম,পর্ব ৪,৫
নাফীছাহ ইফফাত
পর্ব ৪
আমি রাস্তায় দাঁড়িয়ে অশ্রু বিসর্জন দিতে ব্যস্ত। পেছন থেকে বারবার হর্ণ বাজছে, শুনতে পাইনি। বাইকটা আমার সামনে এসে দাঁড়িয়ে জোরেই হর্ণ বাজালো। সামান্য কেঁপে মাথা তুলে তাকাতেই দেখি রাফিন। ওকে দেখেই বাসায় চলে যেতে উদ্যত হলাম। ও চট করে বাইক থেকে নেমে আমাকে আটকালো। চিবুক ধরে মুখ ওপরে তুলে বললো,
‘এইটুকুর জন্যও কাঁদতে হয় তোমার? বাসায় যেতে বললাম না? যাওনি কেন?’
আমি চোখ মুছে বললাম, ‘যাচ্ছি।’
‘হুম দ্রুত।’ রাফিন হাত ছেড়ে দিতেই আমি সামনে এক পা অগ্রসর হলাম। আরেক পা বাড়াতেই কানের পাশে ফিসফিসানি শুনলাম, ‘আমিও ভালোবাসি তো!’
আমি দ্রুত ফিরে তাকালাম। আমার নাক-মুখ প্রায় রাফিনের কাঁধ ঘেঁষে সরে এলো। ও মুচকি হেসে বললো,
‘বাসায় যাও। কাঁদবে না একদম, যাও।’
আমি মাথা কাত করে সম্মতি জানালাম। ও আবার বললো, ‘আমার সামনেই হাসো একবার।’
আমি হাসলাম না। ও বললো, ‘কি হলো? আবার খাবে নাকি ধমক?’
আমি দ্রুত দু’পাশে মাথা নেড়ে মুচকি হাসলাম। আমি হাসতেই রাফিন বাইকে উঠে বললো,
‘গুড গার্ল।’ এরপর সাই করে বেরিয়ে গেল।
বাসায় আসতেই নাকীব আমার ওপর প্রায় হামলে পড়লো।
‘আপু, তুমি আমাকে ফেলে কাশবনে গিয়েছিলে?’
আমি কাঁচুমাচু ভঙ্গিতে জবাব দিলাম, হ্যাঁ আসলে ঐ…’
‘আপু, তুমি আমাকে রেখে যেতে পারলে? আমি সারা বিকেল বসেছিলাম তোমার জন্য।’
আমার মাথায় চট করে অন্য বিষয় ঘুরে গেল। নাকীব কিভাবে জানলো আমি কাশবনে গিয়েছি? আমি তৎক্ষনাৎ প্রশ্ন করলাম,
‘কোথায় বসেছিলি?’
‘কাশবনে…’ বলতে গিয়ে আচমকা থেমে গেল ও।
আমি ফ্যানের সুইচ অন করে দিয়ে বিছানায় গা এলিয়ে শুয়ে বললাম,
‘তুইও তো কাশবনেই ছিলি। আমাকে রেখেই গিয়েছিস। নাহলে জানলি কি করে?’
খানিক চুপ থেকে ও বললো, ‘আমি তোমার পিছু পিছু গিয়েছি আপু। আমি দেখেছি, ভাইয়া তোমাকে নিতে এসেছিলো। তুমি ভাইয়ার বাইকেই গিয়েছো।’
‘দেখেছিস যখন ফলো করলি কেন আমাদের?’
‘দেখলাম আর কি আমার বোনকে কোথাকার কোন ছেলে কোথায় নিয়ে যায়।’ আশেপাশে তাকিয়ে কথাটা বলে নাকীব৷
আমি চট করে শোয়া থেকে উঠে বসি।
‘কোথাকার কেন ছেলে মানে?’
‘আপু, আমার মাঝেমাঝে ভাইয়াকে একটুও ভালো লাগে না।’ মেঝেতে তাকিয়ে কথাটা বললো নাকীব।
আমি আস্তে আস্তে বললাম, ‘কেন?’
‘ও তোমাকে কেন কাঁদায় আপু? তুমি কাঁদলে তো আমার ভালো লাগে না।’
‘কই কাঁদায়? ও কাঁদায় না তো আমাকে। আমিই অল্পতে কেঁদে ফেলি।’ আমিও মেঝের দিকে তাকিয়ে রইলাম।
নাকীব আমার হাত ধরে বললো, ‘তুমি কখনোই কাঁদো না আপু। তোমাকে আমি খুব ভালো করে চিনি। তোমার খুব বেশি রাগ হলে তুমি জিনিস ভাঙ্গো, শান্ত, চুপচাপ হয়ে যাও নাহয় চেঁচামেচি করো। কেউ আঘাত করলেও কখনো কাঁদতে দেখিনি তোমাকে। সে-ই তুমি…’
‘আসলে যাদেরকে বেশি ভালোবাসি তাদের অল্প কথার আঘাতেই আমার কান্না পেয়ে যায়।’
‘আমার চোখে চোখ রেখে বলতো, ও তোমাকে কষ্ট দেয় না? তুমি ওর জন্য সবচেয়ে বেশি কষ্ট পাও না? ও বোঝে সেসব? সারাক্ষণ তো কাঁদায়।’
আমি দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললাম, ‘তুই এখনো ছোট তো অতকিছু বুঝবি না।’
‘তুমিই তো বলো, কিছু কিছু ক্ষেত্রে ছোটরা বড়দের চেয়ে বেশি বোঝে।’
‘আচ্ছা এসব বাদ দে। এখন বলতো তুই হঠাৎ এসব কেন বলছিস? তেমন কিছুই তো ঘটেনি আজ।’
‘ঘটেনি? আমি সব দেখেছি আপু। তুমি কিছুক্ষণ আগেও কেঁদেছো। তোমার চোখ ফোলা এখনো।’
আমি চট করে নাকীবের দিক থেকে চোখ সরিয়ে নিলাম। নাকীব চলে যাওয়ার জন্য উঠে দাঁড়িয়ে আবার বসে পড়লো। বললো,
‘তোমাকে একটা কথা বলতে এসেছিলাম।’
আমি চোখের কোণা মুছে বললাম, ‘কি কথা?’
‘বাবা হঠাৎ করেই কেমন যেন চুপচাপ হয়ে গেছে। সারাদিন কথা বলেনি একটুও। সন্ধ্যার আগে থেকে রুমের দরজা বন্ধ করে বসে আছে। বাবার ঘরের সামনে থেকে মা একবারও সরেনি।’
আমি স্কার্ফটা খুলে খাটে ছুড়ে মেরে বললাম, ‘এসব এতক্ষণ পর বলছিস তুই? চল তাড়াতাড়ি।’
আমরা দুজন দ্রুত বাবার রুমের সামনে চলে এলাম। নাকীব মাকে ডাইনিং রুমে চেয়ারে বসিয়ে দিলো। আমি বাবাকে ডাকতে থাকি। বাবা কিছুতেই দরজা খুলছে না।
আমি আবার ডাকি, ‘বাবা, কি হয়েছে তোমার? দরজা খোলো।’
ভেতর থেকে কোনো সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না। আমার ভয় হতে থাকে খুব। বারকয়েক দরজা ধাক্কাতেই বাবা দরজা খুলে বেরিয়ে আসে। বিমর্ষ চেহারা। অন্ধকার রুম থেকে বেরিয়ে হঠাৎ চোখে আলো পড়ায় চোখ দুটো ছোট ছোট করে রেখেছে।
বাবাকে বেরুতে দেখে মা দৌঁড়ে আসে। বাবা সরে দাঁড়িয়ে বলে,
‘হৃদিতা ছাড়া কেউ আমার সাথে দেখা করতে এসো না। হৃদিতা, আমার ঘরে আয় তো। তোর সাথে কিছু কথা আছে।’
মা কাঁদো কাঁদো গলায় বললো, ‘আমি কি কোনো ভুল করেছি? তুমি এমন করছো কেন? আচ্ছা আমি কখনো ঝগড়া করবো না তোমার সাথে। তোমার কথাই শুনবো।’
বাবা ধমকে বললেন, ‘কেন ঝগড়া করবে না? অবশ্যই করবে, আরও বেশি করে করবে। তুমি ঝগড়ার প্রস্তুতি নাও, আমি আসছি৷’
বাবার কথার মাথামুণ্ডু কিছুই বুঝলাম না আমরা। বাবা আমাকে নিয়ে ভেতরে চলে গেলেন। নাকীব মাকে নিয়ে ডাইনিং রুমে বসে রইলো।
রুমে ঢুকতেই প্রথমে আমি বাবাকে প্রশ্ন করলাম।
‘কোনো সমস্যা হয়েছে?’
‘তেমন কোনো সমস্যা না। বিজনেসে একটু…’
‘কি হয়েছে বাবা?’
‘একদল লোক হঠাৎ ঝামেলা করছে। অফিসে এসে ভাঙচুর করছে। এক সপ্তাহের মধ্যে তাদের ১০ কোটি টাকা না দেয়া পর্যন্ত থামবে না।’
‘১০ কোটি টাকা মানে? বললেই দিতে হবে নাকি? তোমরা পুলিশের কাছে কেন যাচ্ছো না বাবা?’
‘মা রে! থানায় কি লোক পাঠাইনি আমি? পুলিশ কি বলেছে জানিস?’
‘কি?’
‘বলেছে প্রবলেম সল্ভ করতে হলে ওদেরকেও অন্তত ১ কোটি টাকা দিতে হবে।’
‘হোয়াট?’ আমার গলার স্বর নেমে এলো।
‘পুলিশ এই কথা বলছে বাবা?’
‘হুম। এজন্যই এত টেনশন হচ্ছে।’
‘আচ্ছা বাবা, হুট করে কেউ টাকা চাইলেই তো আমরা দিবো না তাই না? ওরা কিসের টাকা চায় তোমার কাছে?’
‘একবার একটা বিজনেস ডিল করেছিলাম ওদের সাথে। ডিলটা তখনই মিটমাট হয়ে যায়। ওদের কারো সাথে আর যোগাযোগ ছিলো না আমাদের। এতদিন পর হঠাৎ ফেইক কাগজপত্র নিয়ে ওরা আমাদের অফিসে হামলা করে বসলো। কিছুতেই দমানো যাচ্ছে না।’
‘বাবা, তুমি অন্য থানায় যোগাযোগ করো তাহলে। এভাবে অন্যায়ভাবে তো কাউকে জিতিয়ে দেয়া যায় না।’
‘অন্য থানায়ও গিয়েছিলাম। তারা বলেছে আমাদের অফিস এরিয়াটা তাদের আন্ডারে পড়ে না। ওখানে ডায়েরি করাতে পারলাম না। কি হবে কিছুই বুঝতে পারছি না।’
আমি খানিকক্ষণ চুপ থেকে বললাম, ‘আচ্ছা বাবা, ব্যাপারটা আমি দেখছি। কিছু করা যায় কিনা চেষ্টা করে দেখি। তুমি টেনশন নিও না।’
বাবা আমাকে কাছে টেনে নিয়ে বললেন,
‘তুই এখনো ছোট। বাবাকে বলছিস টেনশন না নিতে?’
‘হু। তুমি টেনশনে থাকলে, তুমি ভেঙ্গে পড়লে এই বাড়িটা ভেসে যাবে বাবা। তুমি ব্যাপারটা থেকে পুরোপুরি বেরিয়ে এসো তো। আমি ম্যানেজ করছি বললাম তো। তুমি বরং মায়ের সাথে ঝগড়া করো। ওটাতেই তোমাকে ভালো মানায়৷’
আমি উঠে দরজার দিকে এগুতেই বাবা বললেন, ‘তোর মাকে কিছু বলিস না।’
‘আচ্ছা বাবা।’
আমি বেরুতেই মা হন্তদন্ত হয়ে রুমে ঢুকলো। আমি নাকীবের পাশে গিয়ে মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়লাম। ও বললো,
‘কি হয়েছে আপু?’
‘অনেক ঝামেলা!’
‘কিরকম?’
আমি নাকীবকে সবটা খুলে বললাম। সব শুনে ও হতাশ গলায় বললো,
‘আমরা কি করতে পারি এখানে? আমাদের তো কিছুই করার নেই।’
‘কিছু করার নেই বললে তো চলবে না। কিছু একটা অবশ্যই করতে হবে।’
কি করবো ভাবতে ভাবতেই দু’দিন কেটে গেল। তৃতীয় দিন সকালবেলা হুট করে আমি বাবার অফিসে চলে গেলাম। ম্যানেজারের কাছ থেকে সবটা ভালোভাবে শুনে নিলাম। সব শুনে যা বুঝলাম তা হলো, এসব গুন্ডাপান্ডা লোকেদের টাকা না দিলে শান্ত হবে না।
অফিস থেকে বাসায় ফিরতে ফিরতে ভাবছি…
বাবা গুন্ডা লোকগুলোর সাথে ডিল করলো কি করে? না জেনেই কি? এসব গুন্ডা লোক বিজনেস করে নাকি এভাবেই সবার কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেয়? যদি সবার কাছ থেকেই হাতিয়ে নিয়ে থাকে তাহলে সেই সবাই কারা? তাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারলেও কিছু একটা করা যেত। কিন্তু তাদের খোঁজ আমি কিভাবে পাবো?
যদি ওদের কাউকে খুঁজে না পাই তাহলে তো একমাত্র টাকা দেওয়া ছাড়া আমাদের আর কোনো উপায় থাকবে না। তারপরেও একটা কিন্তু থেকে যায়। এক সপ্তাহ থেকে অলরেডি তিনটে দিন কেটে গেছে। আজ চতূর্থ দিনটাও শেষের দিকে। মাত্র তিনদিনের মধ্যে আমরা এত টাকা কোথায় পাবো?
মাথায় হাজাররকমের টেনশন নিয়ে বাসায় ঢুকতেই যথারীতি চেঁচামেচি শুনতে পাই। বেশ কয়েকবার কলিংবেল বাজানোর পর নাকীব দরজা খুলে দেয়। ভ্রু কুঁচকিয়ে বললাম,
‘আবার কি হলো?’
‘আপু, আম্মু সব জেনে গেছে।’
জুতো খুলতে খুলতে বললাম,
‘কি জেনে গেছে?’
‘বাবার বিজনেসের ঝামেলাটা।’
‘জেনে গেছে তো কি হয়েছে? এমনিতেই জানতো একদিন না একদিন।’
মুখে বারকয়েক ‘চ’ শব্দ তুলে নাকীব বললো,
‘ব্যাপারটা বুঝতে পারছো না। মা ভীষণ ঝামেলা করছে। তুমি চলো তো।’
নাকীব আমার হাত ধরে টেনে নিয়ে গেল বাবা-মায়ের সামনে। বাবা-মা তখন তুমুল ঝগড়া করছে। ওদের সামনে খাটের ওপর মায়ের সমস্ত গয়নাগাটি ছড়ানো-ছিটানো।
‘তুমি আমার গয়নাগাটি নিতে পারবে না কেন?’ মা চেঁচিয়ে উঠলো।
‘বললাম তো নিতে পারবো না। কতবার এক কথা বলবো?’
মাঝখানে গিয়ে আমি প্রশ্ন করলাম, ‘কিসের গয়নাগাটির কথা হচ্ছে মা, বাবা?’
মা-ই প্রথম জবাব দিলো।
‘দেখ, তোর বাবাকে কিছু লোক রাতে-বিরেতে হুমকি দিচ্ছে। টাকা না পেলে মেরে ফেলবে বলছে। কত টাকা জানিস? দশ কোটি টাকা। এত টাকা সে কোথায় পাবে? বলছি আমার গয়নাগাটি বিক্রি করে টাকা দিয়ে দিক ওদের। ল্যাটা চুকে যায়।’
বাবা উঠে দাঁড়িয়ে মাকে ঠাস করে ঠেলে খাটে বসিয়ে দিয়ে বললো, ‘চুপ করে থাকো একদম। তোমার গয়না মানে ওগুলো তোমারই। আমার দরকার হলে আমার জমিজমা সব বিক্রি করে দিবো তাও তোমার গয়না মরে গেলেও নিবো না আমি।’
‘এখন তোমার-আমার ভাগ হয়ে গেল না? গয়নাগুলো আমায় তুমি জুড়ে দাওনি? তুমিই তো এনে দিয়েছিলে সময়ে-অসময়ে। এখন তোমার দরকারে নিতে পারবে না কেন? বলো কেন?’ মায়ের চোখে পানি চলে এল।
বাবা অন্যদিকে ফিরে বললো, ‘হৃদি, তোর মাকে বল এই গয়না আমি কোনোভাবেই নিতে পারবো না।’
আমি মাথায় হাত দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে আসলাম। মাথাটা ধরেছে খুব। টেনশনটা আর নেওয়া যাচ্ছে না। আসলে কখনো কোনকিছু নিয়ে ভাবতে হয়নি। কিছু ভাবার আগে বাবা-মাই সবসময় সমস্যার সমাধান করে দিয়েছে। ওরা শুধু নিজেদের প্রবলেম সল্ভ করতে পারে না, বাকিদেরটা খুব সুন্দর সমাধান করতে পারে। কিন্তু এবারের সমস্যার কথা যেহেতু বাবা ভরসা করে আমায় বলেছে সেহেতু কিছু একটা তো আমাকে করতেই হবে। সে-ই টেনশনে দিবারাত্রি ঘুম হারাম আমার। এদিকে আবার বাবা-মা ঝগড়া করছে সে-ই টেনশন। কি করবো কিচ্ছু বুঝতে পারছি না।
রুমে এসে বিছানায় গা এলিয়ে দিতেই রিয়াদের কথা মনে পড়লো আমার। রিয়াদকে বললে হয়তো ও কোনো সল্যুশন বের করতে পারবে। রিয়াদকে ফোন দিতেই রিসিভ করে বললো,
‘এতদিন পর মনে হলো আমার কথা? কোথায় ছিলি তুই? কোনো খোঁজ নেই, ভার্সিটি আসছিস না। কিছু হয়েছে?’
‘হ্যাঁ মানে… হয়েছে।’
‘কি সমস্যা বল আমাকে?’
‘তুই সল্ভ করতে পারবি?’
‘বলেই দেখ না।’
শেষ আশা নিয়ে রিয়াদকে সবটা খুলে বললাম। ও হেসে গড়াগড়ি খেয়ে বললো, ‘এটা কোনো প্রবলেম হলো? শোন, কাল সকালের মধ্যে প্রবলেম সল্ভ হয়ে যাবে। বাট একটা কাজ করতে হবে তোকে।’ শেষ কথাটা বললো গম্ভীর হয়ে।
‘হ্যাঁ বল কি কাজ?’
‘একদমই টেনশন নিতে পারবি না, ওকে?’
ঢোক গিলে বললাম, ‘ওকে।’
রিয়াদের ফোন কাটতেই রাফিনের কল ঢুকলো। রিসিভ করে সালাম দেয়া-নেয়া শেষে বললো,
‘কার সাথে কথা বলছিলে?’
‘ফ্রেন্ডের সাথে।’
‘কোন ফ্রেন্ড?’
‘ভার্সিটি ফ্রেন্ড।’
‘ছেলে নাকি মেয়ে সেটা জানতে চাইছি।’
‘ছে..ছেলে।’ আমতা আমতা করে বললাম।
‘বাহ! ভালোই তো আছো। আমি ভাবছি, কদিন ধরে খোঁজ নেই কেন তোমার? কোথায় লাপাত্তা হয়ে গেছো। আমার সাথে কথা না বলে, দেখা না করে নাকি থাকতে পারো না? বেশ তো আছো ভার্সিটির বয়ফ্রেন্ডদের সাথে।’
ওর কথা শুনে তাজ্জব হয়ে গেলাম আমি। কিভাবে কথা বলছে ও আমার সাথে?
#Be_Continued__In_Sha_Allah ❣️
#অগত্যা_তুলকালাম
নাফীছাহ ইফফাত
পর্ব ৫
আমার ভীষণ কান্না পেয়ে গেল। রাফিন আমাকে অযথা ভুল বুঝছে। কান্না আটকে কোনোরকমে বললাম,
‘কোনো বয়ফ্রেন্ডের সাথে নেই আমি। আর ওরা বয়ফ্রেন্ড কেন হতে যাবে। ওরা তো…’
আমাকে থামিয়ে রাফিন বললো,
‘কেন ওরা কি মেয়ে? গার্লফ্রেন্ড বলবো? নাকি গে ওরা?’ উভয় লিঙ্গ?’
‘এভাবে কেন কথা বলছো তুমি? আমাকে অযথা ভুল বুঝছো।’ কান্নাটা আর আটকে রাখতে পারলাম না। চোখ ফেটে বেরিয়েই এলো।
‘এইই শুরু হয়ে গেল ন্যাকা কান্না? শোনো, যা বলার ক্লিয়ারলি বলো নাহয় ফোন রাখলাম।’
আমি কান্নার দমকে কিছুই বলতে পারলাম না। রাফিন ‘ধ্যাৎ’ বলে ফোন কেটে দিলো।
ফোন হাতে নিয়ে কিছুক্ষণ কাঁদলাম। এরপর ফ্রেশ হয়ে সাইকেল নিয়ে বেরিয়ে চলে গেলাম কাশবনে। রাফিনের সাথে দেখা করতে হবে। ওর ভুলটা ফোনে ভাঙ্গানো সম্ভব ছিলো না। তাই আর ফোন দিইনি ওকে। ভাবলাম সরাসরি দেখা করেই সব বলবো।
কাশবনের গহীনে ঢুকছি তো ঢুকছি। কোথাও রাফিন নেই। অনেকটা ভেতরে যাওয়ার পর দেখি পাশে বাইক রেখে লম্বা লম্বা গাঢ় ঘাসের ওপর ও দিব্যি ফোন হাতে নিয়ে বসে আছে। পাবজি খেলছে নিশ্চয়ই। ঠাস ঠাস করে মানুষ কোপানোর আওয়াজ আসছে। ওর পাশে গিয়ে বসে চোখ মুছলাম আমি। ওকে দেখামাত্র আবার কান্না পেয়ে যাচ্ছে।
আমি যে ওর পাশে এসে বসেছি সেটা ও খেয়াল করেনি তখনও। সে-ই সুযোগে ওর মিষ্টি মুখের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলাম। কি নিষ্পাপ চেহারা। কেউ দেখলে বলবে, এই ছেলে আমাকে এত কষ্ট দেয়? তার একেকটা কথায় আমার বুক এফোঁড়ওফোঁড় হয়ে যায়? ওর দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতেই অনেক সময় অতিবাহিত হয়। ওর খেলা শেষ হয় ততক্ষণে।
রাফিন ফোন থেকে চোখ তুলে আমার দিকে তাকিয়ে নরম সুরে বলে,
‘কাঁদছিলে কেন তখন?’
কি অদ্ভুত ছেলেটা! আমাকে দেখে একটুও অবাক হয়নি। যেন আগে থেকেই জানতো আমি আসবো আর ও ঠিক এই প্রশ্নটাই করবে আমাকে।
আমি মাথা নিচু করে চোখের পানি মোছার চেষ্টা করলাম। ও নিজ থেকেই আমার মুখটা উপরে তুলে চোখের পানি মুছিয়ে দিলো। এরপর বললো,
‘কেন কাঁদছিলে তখন বলো?’
‘তুমি কিভাবে কথা বলছিলে আমার সাথে। কাঁদবো না?’
‘আমি তো জাস্ট জানতে চেয়েছি। আমাকে থামিয়ে বলে দিলেই হতো।’
‘ফোন করলে তুমি সবসময় রেগে থাকো। আমার ভয় লাগে তখন।’
‘আমাকে কেন ভয় লাগবে? কি এমন করতে পারবো তোমাকে বলো?’
আমি অবাক চাহনিতে ওর দিকে তাকিয়ে বললাম,
‘তুমিই তো আমার সবচেয়ে বড় ক্ষতিটা করতে পারবে।’
‘কিহ? আমি?’
‘নয়তো কে? তুমি সামান্য রেগে কথা বললেও সারারাত আমি ঘুমাতে পারি না, সারাদিন কিছু খেতে পারি না। আর সে-ই প্রিয় তোমাকে আমি যদি রেগে কিছু বলি আর তুমি যদি আমার সাথে আর কথাই না বলো, যদি আমাকে ছেড়ে চলে যাও আমি কিভাবে বাঁচবো? একদম মরে যাবো আমি।’
‘এত সহজ তোমার কাছ থেকে মুক্তি পাওয়া? এত সহজে মুক্তি দিবে আমাকে? মনে তো হয় না।’ ঘাসে শুয়ে পড়ে রাফিন। আমি কিছুক্ষণ ওর দিকে তাকিয়ে থেকে কিছুটা দূরত্ব বজায় রেখে ওর পাশে শুয়ে পড়লাম।
দুজনে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছি। ও ফিসফিস করে বললো,
‘তুমি জানো, তোমাকে ছেড়ে থাকার কথা আমি কখনো ভাবি না? ভাবলেই দম আটকে আসে আমার। আর বলছো ছেড়ে যাওয়ার কথা? এত সহজে তোমাকে আমি ছাড়ছি না, আর তুমিও আমাকে না।’
আমিও ওর মতো ফিসফিস করেই বললাম,
‘তুমি ছাড়লেও আমি পারব না ছাড়তে। একদম মরে যাবো আমি।’
দুজনের মনের কথা মনেই রয়ে গেল, বলা হলো না।
রাফিন হুট করে বললো, ‘ধরো, তোমার বাবা-মা কিংবা আমার বাবা-মা আমাদের সম্পর্কটা মেনে নিলো না। কি করবে তুমি?’
আমি কোনোকিছু না ভেবে জবাব দিলাম, ‘মানবে ওরা।’
‘না-ও তো মানতে পারে৷ যেমন ধরো, আমি কোনো জব করি না, খোঁজার ট্রাইও করছি না। জব করার কোনো ইচ্ছেও আমার নেই জানো তুমি। তাহলে একজন বেকার মানুষকে তোমার বাবা মেয়ে দিবে কেন?’
‘তুমি তো বলেছো বিজনেস করবে। বিজনেসম্যানকে নিশ্চয়ই মেয়ে দিবে।’
‘বিজনেস করবো বলেছি, করছি না তো। আর বিজনেস করা এত ইজি?’
‘তাহলে করো না বিজনেস। এখন থেকেই ট্রাই করো।’
‘আহা! সেদিকে না যাই। বলো যে, মেনে না নিলে কি করবে?’
‘অতকিছু জানি না। আমি সোজা মরে যাবো। হয়তো…’
‘ছিহ! তুমি এটা বলতে পারলে? একজন মুসলিম হয়ে তুমি সুইসাইড করার কথা বলতে পারলে?’ ভীষণ রেগে গেল রাফিন।
আমি হায় হায় করে বললাম, ‘আরে আমি সেটা মিন করিনি। আমি বোঝাতে চেয়েছি, হয়তো শারীরিকভাবে বেঁচে থাকবো কিন্তু মানসিকভাবে আমি পুরোপুরি নিঃশেষ হয়ে যাবো৷ তুমি না থাকলে আমি কিছুতেই ভালো থাকতে পারবো না। তোমাকে ছাড়া আমি সত্যিই অচল হয়ে যাবো।’
‘ওকে ফাইন, তাহলে এখনই ছেড়ে চলে যেতে হচ্ছে। আমার জন্য কেউ অচল হয়ে যাক সেটা আমি মোটেও চাই না।’
‘না, না। তুমি কি চাও আমি এখন থেকেই অচল হয়ে যাই?’
‘হ্যাঁ চাই। তুমি অচল হয়ে যাও, যা খুশি করো। পরে যদি কোনো কারণে আমি তোমাকে বিয়ে করতে না পারি তখন তুমি বলবে, আমার এত সময় নষ্ট করেছো কেন? ওগুলো ফেরত দাও। আমাকে অচল বানিয়েছো তুমি। ভালোবাসার ফাঁদে ফেলে ছেড়ে গেছো। তখন আমি সেসব কোথা থেকে ফেরত দিবো আর কথাগুলোরই বা কি জবাব দিবো? তারচে ভালো এখনই ছেড়ে চলে যাই।’ খুব সিরিয়াস ভাব নিয়ে রাফিন কথাগুলো বললো।
আমার বুক ফেটে যাচ্ছে ওর কথা শুনে। সারা শরীরে কাঁপন ধরেছে। পেটের ভেতর সব গুলিয়ে আসছে। মনে হচ্ছে এক্ষুনি সব ছেড়েছুড়ে মাটিতে গড়াগড়ি করি, নিজের চুল টেনে ছিঁড়ে ফেলি। রাফিনকে হারানোর কথা ভেবে কান্না প্রায় চলেই আসছে আমার। আমি কাঁদো কাঁদো গলায় বললাম,
‘তুমি সবসময় ছেড়ে যাওয়ার কথা কেন বলো? কষ্ট হয় না একটুও?’
‘না।’ অন্যদিকে ফিরে বললো রাফিন।
‘আমাকে একটুও ভালোবাসো না?’
ও এই কথার জবাব দিলো না। আমি আবার জিজ্ঞেস করলাম।
‘বলো?’
‘ভালোবাসার কথা আসছে কেন?’
‘ভালোবাসার কথাই তো।’
কিছুক্ষণ চুপ থেকে রাফিন অত্যন্ত শান্ত স্বরে বললো,
‘তোমাকে একটা কথা খুব ক্লিয়ারলি বলে দিই। আমার জন্য যদি তোমার এক চুল পরিমাণ ক্ষতি হয় না, আমি তোমাকে ছাড়বো না। আর যদি আমার জন্য মরার চেষ্টা করেছো তো কবর থেকে উঠিয়ে আবার মারবো তোমাকে। কথা ক্লিয়ার?’
ওর শান্ত অথচ রাগী কন্ঠে আমি ভীষণভাবে কেঁপে উঠলাম। ওর দিকে ফিরতেই আবার বললো,
‘ইজ দ্যাট ক্লিয়ার? এটাই আমার শেষ কথা।’
ওর শীতল চাহনিতে জমে গিয়ে ভয়ে ভয়ে হালকা মাথা নেড়ে সায় দিলাম ওর কথায়। কথাটায় কি ছিল আমি জানি না। হয়তো গভীর অনুরাগ, গভীর ভালোবাসা। ছেলেটা বড্ড অদ্ভুদ। ‘ভালোবাসি’ কথাটা সোজাসাপটা বলে না, ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে বলে। এই যে কথাটা বললো কতটা প্রণয় জড়িয়ে আছে কথাটায়। কতটা আবেগ, কতটা ভালোবাসলে এমন কথা কেউ বলতে পারে। অথচ ও কথাটা বললো, ভীষণ রেগে। রাগী ছেলেটাকে আমার মাঝেমাঝে ভীষণ ভয় করে, সেই ভয়েও স্পষ্ট ভালোবাসা বিরাজমান।
আমি চুপচাপ অন্যদিকে তাকিয়ে রইলাম। কিছুদিন আগের একটা ঘটনা মনে পড়ে আমার।
রাফিনের সাথে কথা না হলে, দেখা না হলে আমার পুরো দিনটা কাটে বিষন্নতায়। কথা বা দেখা না হলেও অন্তত অল্প একটু চ্যাটিং করতেই হয়। কিন্তু এসব ওর একদমই পছন্দ না। ওর মতে, ভালোবাসলেই কাউকে একটা গন্ডিতে বেঁধে ফেলতে হয় না। তাকে মুক্ত করে দিতে হয়, তাকে স্বাধীনতা দিতে হয়। এতে সে থাকলে থাকবে, গেলে যাবে। কাউকে জোর করে কিছু করানো যায় না, ভালোবাসা তো না-ই।
আমি বলেছিলাম, আমরা তো স্বাধীনই আছি। ও বলেছিলো, স্বাধীন কই আছি? এই যে তুমি ভাবো, তুমি কল করলেই আমাকে রিসিভ করতে হবে এটা স্বাধীনতা হলো? আমি তো ব্যস্ত থাকতে পারি বা এমন কারো সামনে থাকতে পারি যার সামনে কলটা আমি ধরতে পারবো না। তখন তুমি ওভারথিঙ্কিং করবে, যেটা তুমি খুব ভালো পারো। ভাববে, আমি তোমাকে ইগনোর করছি, তোমাকে আর ভালোবাসি না, অন্য মেয়েদের ভালোবাসি ব্লা ব্লা ব্লা। আমি তখন জবাবে বলেছিলাম, তুমি তো কখনোই ফোন রিসিভ করো না। ও বলেছিলো, কখনোই করি না, আর করবও না। সবসময় করে হঠাৎ একদিন না করলে তুমি আরও বেশি ওভারথিঙ্ক করবে যেটা আমি একদমই চাই না।
ওর কথাগুলো তখন তেতো লাগলেও পরে এর মর্ম অবশ্য বুঝেছি।
যাইহোক, বেশ কদিনযাবৎ লক্ষ্য করছি রাফিন আমাকে এড়িয়ে চলছে। রাতেবিরেতে দিব্যি জেগে থাকছে কিন্তু আমি মেসেজ দিলে পাত্তাও দিচ্ছে না। এসব আমি মেনে নিতে পারছিলাম না। বুকের ভেতর ভেঙ্গে গুড়িয়ে যাচ্ছিলো। একরাতে হঠাৎ দুঃস্বপ্ন দেখে আমার ঘুম ভেঙ্গে যায়৷ কি ভেবে যেন অনলাইনে গিয়ে দেখি রাফিন তখনো জেগে। আমি একটা, দুটো, তিনটে মেসেজ করি ওকে। কিন্তু মেসেজ সিন করছে না। আমি তখন ঘুমের ঘোরে ব্যাপারটা একেবারেই হজম করতে পারলাম না। উল্টাপাল্টা অনেককিছু বকে চলে আসলাম। এরপর সেই বকাবকির টেনশনেই সারারাত আর ঘুমাতে পারিনি।
সকাল গড়িয়ে দুপুর হয়। রাফিন তবুও অনলাইনে আসে না। আমি ভয়ে তটস্থ হয়ে আছি। মেসেজ গুলোতে ওর সাথে আমি খুব খারাপ আচরণ করেছি। দেখলে নিশ্চয়ই অনেক কষ্ট পাবে। বাধ্য হয়ে ওকে ফোনে টেক্সট করি, একটা কল করার জন্য। ও অনলাইনে এসে মেসেজগুলো দেখে তারপর কল করে আমাকে।
কল দিয়েই রেগে বলে,
‘কি হয়েছে? এত্ত টেক্সট করছো কেন?’
‘ঐ যে রাতে ভুল করে অনেক বকাবকি করে ফেলেছি তো ওজন্য।’
‘বকাবকি করেছোই বা কেন এখন আবার টেক্সটই বা করছো কেন?’
‘আমি তোমাকে নিয়ে বাজে স্বপ্ন দেখেছি।’
‘হ্যাঁ তো?’
‘অনেক বাজে স্বপ্ন। ওগুলো দেখার পর মাথা ঠিক ছিলো না। উল্টাপাল্টা বলে ফেলেছি।’
‘তো?’
‘তো মানে কি? উল্টাপাল্টা বলেছি তাই স্যরি।’ হালকা রেগে বললাম কথাটা।
‘ফালতু কথা বলো না। তারচে বলো যে, ফোন করার ইচ্ছে জেগেছিলো।’
বেশ আর্তনাদ করে বলে উঠলাম,
‘না।’
কথাটা হজম করতে বেশ কষ্ট হলো। মিথ্যে অপবাদ হজম করা সবচেয়ে কঠিন।
‘কি না?’
‘ফোন করার ইচ্ছে না। ভুল করে কথাগুলো…’
‘একদম চুপ থাকো। আমার মেজাজ এমনিই বিগড়ে আছে। এসব ফালতু কথা বলে মেজাজটা আর খারাপ করো না। ফোন রাখো।’
‘স্যরি!’ রাফিনের কঠিন কঠিন কথাগুলো নিতে না পেরে প্রায় কেঁদেই ফেললাম।
রাফিন আরও বেশি রেগে গেল। বললো,
‘তারপর বলো? কি স্বপ্ন দেখেছো?’
‘দেখলাম যে, তোমার সাথে একটা মেয়ে…’
‘হ্যাঁ আমার সাথে একটা মেয়ে তো? তো কি হয়েছে?’
‘এটা দেখে আমার মেজাজ খারাপ হয়ে গিয়েছিল।’
‘এটা কি আমার ফল্ট? মেজাজ ঠান্ডা করে দিতে হবে? এসে মাথায় পানি ঢালবো?’ সীমাহীন রেগে গেল রাফিন।
আমি চুপ করে থাকলাম। ও আবার ধমকে বললো,
‘এরপর কি হয়েছে দ্রুত বলে ফোন রাখো।’
‘এরপরে সারারাত আমি আর ঘুমাতে পারিনি।’
‘ঘুমাতে পারোনি এটাও আমার ফল্ট? ঘুমের ঔষধ পাঠিয়ে দিবো নাকি?’
খানিক চুপ থাকার পর ও আবার বললো,
‘তোমার কি মনে হয় না তুমি সিক? তুমি এখানে আছো কি করতে? তোমার তো পাবনা থাকা উচিত। নাকি পাবনা থেকে পালিয়ে এসে আমার গলায় ঝুলে পড়েছো?’
এবার আর কোনোভাবেই কান্না আটকে রাখতে পারলাম না। ভ্যাঁ করে কান্না করে দিলাম। হাত দিয়ে মুখ চেপে ধরেও কান্না আটকানো সম্ভব হচ্ছিল না।
রাফিন বললো,
‘শোনো আরোহী! পরিষ্কার করে আমার কথাটা শোনো, মাথায় ঢুকিয়ে নাও ভালোমতো। তোমার মতো সাইকো পার্সনের সাথে থাকা আমার পক্ষে সম্ভব না। তুমি সারাক্ষণ আমাকে নিয়ে উল্টাপাল্টা ভাববে তারপর আজেবাজে স্বপ্ন দেখে টেক্সট করবে পাগলের মতো। ফোন দিয়ে ফ্যাচফ্যাচ করে কাঁদবে এসব আমি কখনোই টলারেট করবো না। এসব আমার সাথে চলবে না। যদি ভেবে থাকো এরকম চলতে থাকবে, তুমি তোমার মতো থাকবে, তাহলে ভাই তুমি নিজের রাস্তা নিজে দেখো। রিলেশন ব্রেক করে দাও। এরকম ফালতু রিলেশনের আমার কোনো দরকার নেই।’
আমি নির্বাক ওর কথাগুলো শুনে গেলাম। কান্নার মাত্রা আরও বেড়ে গেল। নিজেকে কতটা অসহায় লাগছিলো তখন বোঝাতে পারবো না। কোনরকমে বললাম,
‘না, না ব্রেক করো না। এরকম আর কখনো করবো না আমি।’
‘এই কথা তুমি আগেও হাজারবার বলেছো। কথা রাখোনি। সে-ই কদিন পর পর নতুন নতুন ন্যাকামি নিয়ে হাজির হও। আর “ফোন দাও, ফোন দাও” করে মরে যাও। রিলেশন রাখতে হলে তোমার বাবা-মাকে গিয়ে সবটা বলে দাও যাও৷ যদি বলতে পারো তাহলে রিলেশন থাকবে নয়তো না।’
‘এটা..এটা কিভাবে সম্ভব? বাবা-মাকে কিভাবে এখন সব বলবো আমি?’
‘সম্ভব না হলে রিলেশন রাখাও সম্ভব না। এখন ফোন রাখো। নাহলে খুব খারাপ হয়ে যাবে কিন্তু।’
#Be_Continued_In_Sha_Allah ❣️