হৃদপিন্ড পর্ব-৩

হৃদপিন্ড পর্ব-৩
#জান্নাতুল নাঈমা

ইমন রাগে বিরবির করতে করতে রুম ছেড়ে বেরিয়ে সায়রী কে ফোন করলো। সায়রী একজন স্কুল টিচার তাঁর ক্লাশ চলছিলো তাই সে আসতে পারবেনা। ইমন ওর আরেক হিন্দু ফ্রেন্ড রিক্তা কে ফোন করলো।
রিক্তা দশমিনিট পর এসে মুসকান কে হেল্প করলো।
ইমনের কাছে মুসকানের বিষয়ে সব শুনে মুসকানের সাথে বেশ বন্ধুত্বপূর্ন সম্পর্ক করে ফেললো। মুসকান ও তার ভাষায় বেশ গল্পস্বল্প করলো।

,
বিকালের দিকে ইমনের ফ্রেন্ড ফোন করে জানালো মুসকানের বাবার নামের সাথে কয়েকজনের নাম মিলেছে বাট তাদের মুসকানের বয়সি কোন মেয়ে নেই।
আর জানালো হয়তো মেয়েটা শহড়ের নয় গ্রামের দিকের হবে মেয়েটার থেকে গ্রামের নাম জেনে আমাকে জানা।
ইমন ফোন রেখে উপরে চলে গেলো।
রুমে ঢুকে মুসকান কে দেখে বেশ হকচকিয়ে গেল।
পুরো লুকটাই চেন্জ,
একবার মুসকান আরেকবার রিক্তার দিকে তাকালো।
রিক্তা ভ্রু নাচিয়ে ইশারা করলো কেমন,,,
ইমন আবার মুসকানের দিকে তাকালো।
কালো টি-শার্ট, সাদা লং স্কার্ট, গলায় কালো ওড়না পেচানো, উষ্কখুষ্ক চুলগুলোতে চিরুনি পড়াতে বেশ গোছালো লাগছে। সেই সাথে গায়ের উজ্জ্বল শ্যামবর্নটায় আরো দ্বিগুন উজ্জ্বলতা বেড়ে গেছে।
রিক্তা ছিলো ভার্সিটির সেরা বিউটিশিয়ান। এমনিতেই যথেষ্ট সুন্দরী ছিলো তাঁর ওপর মুখটা থাকতো আর্টিফিশিয়ালে ভরপুর। এসবে বরাবরই ওর আগ্রহ বেশী ছিলো। সবকটা বান্ধবীর বিয়েতে তো পার্লার যাওয়ার প্রয়োজনই পড়েনি কখনো।
ওই এসব দায়িত্ব নিতো। ওর হাতের ম্যাজিক দেখে সবার এতো প্রশংসা পেয়েই তো বি.সি.এস করা মেয়ে শেষে পার্লার খুলে বসলো। শহড়ের নাম করা পার্লার এর মালিক সে।
তারঁ হাতে এই মেয়ে পড়েছে এটাই তো স্বাভাবিক,,,
সত্যি কি তাই,,,সাঁঝ কি কখনো কাউকে সুন্দরী করে ফেলতে পারে নাকি সাঁঝ লুকিয়ে থাকা সৌন্দর্যের বহিঃপ্রকাশ ঘটায়।
মেয়েটা তো সাজেওনি এতেই তাঁর মধ্যে এতোটা সৌন্দর্য বৃদ্ধি পেয়েছে।
পরোক্ষনেই ভাবলো ধূর কিসব ভাবছি এই মেয়েটা কে নিয়ে কেনো এতো ভাবছি আমি। যেভাবেই হোক বিদায় করলে বাঁচি।

মুসকান বেশ লজ্জা আর ইতস্তত বোধ করতে লাগলো।
রিক্তা বললো কিরে ওখানেই হা করে দাঁড়িয়ে থাকবি নাকি ভিতরে আসবি।
ইমন গম্ভীর লুক নিয়ে এগিয়ে গেলো। রিক্তা বললো বোস এখানে ইমন গম্ভীর ভাব নিয়েই বললো বসবো না। মুসকানের দিকে তাকাতেই মুসকান মাথা নিচু করে ফেললো। ইমন বললো তোমার গ্রামের নাম কি।
গ্রামের নাম বললে তোমাকে পৌঁছে দিতে সুবিধা হবে।
মুসকান এক ঢোক চিপে বললো নয়াপাড়া,,,
ইমন ভ্রু কুঁচকে বললো কোন উপজেলার,,,
মুসকান উপজেলার নাম বলতেই ইমন রুম ছেড়ে বেরিয়ে গেলো।
রিক্তা বেশ কিছু সময় কাটিয়ে চলে গেলো।
ইমনও বাড়ির বাইরে পুরো বাড়িতে মুসকান একা।

ব্যালকুনিতে গিয়ে দাঁড়াতেই মুসকান বেশ অবাক হলো সেই সাথে বুকটা ধক করে ওঠলো।
সামনে তিন মোড়ের রাস্তা,,, বড় বড় বিল্ডিং,,, অহরহ মানুষ জন। গাড়ির পর গাড়ি,এতো এতো মানুষ এতো এতো বড় বড় বিল্ডিং দেখে মনে হলো সে কোন এক স্বপ্নের রাজ্যে এসে পড়েছে।
কিন্তু সেই রাজ্যে রাজা,রানী, রাজকুমার কই???
ব্যালকুনি ছেড়ে রুমে গিয়ে বিছানায় চুপ মেরে বসে রইলো।

,
সায়রী স্কুল থেকে বেরিয়ে তাঁর মেয়ে সুপ্তি কে নিয়ে দ্রুত চলে গেলো বাবার বাড়ি। গাড়িতে ওঠেই ইমনকে ফোন করে জানিয়ে দিলো তাঁর দাদী মারা গেছে বাসায় ফেরা সম্ভব নয়। এখনি না গেলে দাদীকে শেষবারের মতো দেখতেও পারবো না।
ইমন বললো আমি আসবো,,,
সায়রী বললো না থাক তোর আসার প্রয়োজন নেই এছাড়া বাসায় তো মেয়েটা আছে।
ইমন ভুলেই গেছিলো তাঁর বাসায় কেউ রয়েছে।
মেয়েটা তো একা আছে আমার কি এখনি বাসায় যাওয়া উচিত,,,

পাঁচটার দিকে ইমন বাসায় এসে বুয়াকে ফোন করলো। নিজের রুমে গিয়ে ড্রেসআপ চেন্জ করে ভাবলো মেয়েটা কে দেখে আসি।
পাশের রুমে যেতেই দেখতো পেলো বিছানায় শুয়ে চুপিসারে কাঁদছে,,,
ইমন ভ্রু কুঁচকে তাকালো জিগ্যেস করলো এনি প্রবলেম,,,
মুসকান ভয়ে ভয়ে ওঠে বসলো।
ইমন লক্ষ করলো পুরো বিছানার চাদর টা এলোমেলো দেখেই বুঝা যাচ্ছে এখানে খুব জোর প্রয়োগ করে মোচড়ানো হয়েছে। মুসকান কে দেখে স্পষ্ট বুঝতে পারলো বেশ অস্বস্তিতে ভুগছে কিন্তু কেনো,,,
বাচ্চা মেয়ে মা, বাবা কে ছেড়ে অচেনা, অজানা জায়গায় আছে এ জন্যই কি,,,
মুসকান কাঁপা কাঁপা গলায় বললো আপা কই,,,
আপারে একটু আমার কাছে আবাড় কবাইন।
ইমন বললো সায়রী বাসায় নেই ওর দাদী মারা গেছেন তাই নিজের বাড়ি গিয়েছে। কোন সমস্যা থাকলে আমাকে বলতে পারো।
মুসকান কিছু বললো না চুপ মেরে দাঁত দাঁত লাগিয়ে পেটে হাত দিয়ে বসে রইলো।
ইমন মুসকানের থেকে কোন রেসপন্স না পেয়ে বেরিয়ে গেলো।
বুয়া রাতের খাবাড় রান্না করে চলে গেছে।
রাত প্রায় নয়টা,,, অফিসের কাজগুলো গুছিয়ে নিয়ে রুম ছেড়ে বেরুলো।
মুসকানের কথা মনে পড়তেই ভাবলো মেয়েটারও তো রাতে খেতে হবে। বলে আসবো,,,ধ্যাত কি সব আজাইরা ঝামেলায় পড়লাম। এটাকে যতোক্ষন না ঘাড়ে থেকে নামাতে পারছি শান্তি নেই।
রুমের কাছে যেতেই বুঝতে পারলো কান্নার আওয়াজ। দ্রুত পা ফেলে রুমে গিয়ে দেখলো মুসকান পেট চেপে কাতরাচ্ছে,,,
ইমনের আর বুঝতে বাকি রইলো না মেয়েটা কেনো এমন ছটফট করছে।
কিন্তু মেয়েটার এমন ছটফটানি দেখে ইমনের বুক টা কেমন করে ওঠলো। এতোটাই কি যন্ত্রনা হচ্ছে ওর,,,
এতোটাই যে এভাবে কাতরাচ্ছে ব্যাথায়,,,
একটা মেয়ের পিরিয়ড চলাকানীন কষ্টের কথা শুনেছি কিন্তু কখনো চোখে দেখিনি। এই বাচ্চা মেয়েটা কি ব্যাথা সহ্য করতে পারছে না,,,
ইমন কিছু বলতে গিয়েও থেমে গেলো।
মেয়েটা গ্রামের যতোটা সহজ ভাবে আমি ওর সাথে কথা বলতে যাবো ততোটাই কঠিন ভাবে নেবে ও।
কিন্তু একটা মানুষের এমন অবস্থা দেখে কি চুপ থাকা যায়,,,
অচেনা এক মায়া ঘিরে ধরলো ইমনকে।
কিন্তু ইমন চৌধুরীর মন তো এতোটা নরম নয়,,,
নিজের পরিবার সহ,বন্ধু -বান্ধব সবাই জানে ইমন চৌধুরী কতোটা কঠিন মানুষ। এই একটা সামান্য মেয়ের কষ্ট দেখে সে দূর্বল হয়ে পড়লো,,,
নাকি মেয়েটা সামান্য নয় এর মাঝে অসামান্যও কিছু রয়েছে???

ইমন আরেকটু কাছে গিয়ে বললো তোমার কোন সমস্যা থাকলে আমাকে বলতে পারো।
মুসকান হঠাৎ শুয়া থেকে ওঠে বসলো।রাগি চোখে ইমনের দিকে তাকিয়ে বললো আপনাকে কেনো বলবো? কে আপনি?
আমারে বোকা পাইছেন,আপারে ভাগাই দিয়া খারাপ মতল আঁটছেন।
ইমন ভ্যাঁবাচ্যাকা খেয়ে গেলো কথা শুনে,,,
ভ্রু কুঁচকে চেয়ে বললো এই মেয়ে তোমার সাহস তো কম নয়,,, বয়স কতো তোমার আর জানো আমার বয়স কতো। একদম বেয়াদবি করবে না। কাল থেকে অনেক সহ্য করেছি চুপচাপ বলো সমস্যা কি নয়তো তুমিই পস্তাবে আমি না। আর খিদে পেলে নিচে এসো খেয়ে নাও। এইটুকুনি মেয়ে আমার সাথে অনেক খেল দেখিয়েছো। খুন করতে পর্যন্ত এসেছো বেশী ত্যাজ দেখাতে এলে একদম পুলিশের হাতে তুলে দিবো।
মুসকান ভয়ে এক ঢোক চিপে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগলো।
ইমন আঙুল নামিয়ে মুসকানের দিকে তাকালো।
এতো পিচ্চি মেয়ের এমন বিষন্ন মুখ দেখে বড্ড খারাপ লাগলো। আর ভাবলো মেয়েটা শারীরিক দিক থেকে যেমন অসুস্থ তেমন মানুসিক দিক থেকেও অসুস্থ।
আমি একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ হয়ে এইটুকুন মেয়ের সাথে এমন আচরন কি করে করতে পারলাম।
একটা মেয়ের জীবন যে এতো সহজ নয়,,,
আর সব মেয়ে আমার মায়ের মতোন ও নয়,,,
আমি বোধ হয় একটু বাড়াবাড়ি করে ফেললাম।
মেয়েটা না হয় আনম্যাচিওর কিন্তু আমিতো ম্যাচিওর।

,
একজন মেয়ের পিরিয়ড চলাকালীন মাসের এই চার,পাঁচ টা দিন এতোটা অস্বস্তিকর যা ভাষায় প্রকাশ করার মতো না। এই কটা দিনের প্রতিটাদিনই বিশ্রি এক ধরনের খারাপ লাগা কাজ করে দেহে এবং মনে। সবসময় একটা অস্বস্তি ঘিরে রাখে প্রতিটা মেয়েকেই। তার উপর অসহ্য পেটে ব্যাথা তো আছেই। কোমড় থেকে পা অবদি অবশ ভাব।সোজা হয়ে ঠিক ভাবে দাঁড়ানো যায় না।
কাজ করা তো দূরে থাক শুয়ে থাকাও যেনো বিরক্তিকর হয়ে ওঠে। এই সময় কারো বকবকানি শুনলে তো কথাই নেই ভীষন রাগ ওঠে যায়।

ইমন মুসকান কে বুঝিয়ে শুনিয়ে নিচে নিয়ে গেলো।
মুসকানের খুব কষ্ট হলেও পেটের দায়ে নিচে চলেই গেলো।
ডায়নিং টেবিলে সব খাবাড় গোছানোই ছিলো।
ইমন নিজের প্লেটে খাবাড় নিয়ে মুসকান কে ইশারা করলো মুসকান ইমনের মুখের দিকে চেয়ে আবার খাবাড়ের দিকে চেয়ে খাবাড় বেড়ে খেতে লাগলো।
ইমন খাওয়ার ফাঁকে ফাঁকে মুসকান কে দেখতে লাগলো।

হাই স্ট্যান্ডারের মানুষদের সাথে সব সময় চলা ফেরা ইমন চৌধুরীর। পড়াশোনা শেষ করে জব নিয়েছিলো। বাবার এতো বড় বিজনেস ফেলে অন্য কম্পানিতে জয়েন করে ইমন। সেখানে উপর মহলের আদেশ-নিষেধ অফিসের বস কে স্যার বলে ডাকা সবকিছুতেই বড্ড অস্বস্তি হতো তাঁর।
সারাজীবন বাঘ হয়ে থেকে শেষে কিনা বিড়াল হতে হবে। না এটা হতে পারেনা। তখন থেকেই সিদ্ধান্ত নিয়ে নেয় অন্যের আন্ডারে থেকে কখনোই কাজ করবেনা। বরং নিজের আন্ডারেই হাজার হাজার মানুষকে কাজ করাবে। পরিবার থেকে আলাদা থাকলেও দাদার দেয়া শেষ দায়িত্ব টা নিখুঁত ভাবে পালন করে যাচ্ছে সে। চৌধুরী ইন্ডাস্ট্রির সকল ভাড় নিজের মাথায় নিয়েছেন। দূরে থেকেও পরিবারের দায়িত্ব গুলো ঠিকঠিক ভাবে পালন করে যাচ্ছে।
অফিসের কাজেই মাঝে মাঝে বাবার সাথে দেখা হয়। বছরে দুবার নিজ বাড়িতে যায় দাদীকে দেখতে।
দাদী তাকে পাগলের মতো ভালোবাসে দাদী চায় তাঁর প্রথম সন্তানের প্রথম সন্তান বাড়িতেই থাকুক।
বিয়ে করে বউ বাচ্চা নিয়ে সুখে ঘর করুক।
দাদী এ পর্যন্ত অনেক মেয়ে দেখেছে,,, কিন্তু ইমনকে বিয়েতে রাজি করাতে পারেনি। কতো মেয়ে বাড়ি বয়ে এসে কান্নাকাটি করেছে ইমনের বউ হবে। ভার্সিটির সেরা স্টুডেন্টসদের মধ্যে ইমন ছিলো একজন। ভার্সিটির শতাধিক মেয়ের ক্রাশ ছিলো সে।
কিন্তু সে সায়রী, আর রিক্তা ছাড়া আর কোন মেয়ের সাথে কথা তো দূর চেয়েও দেখেনি।
সায়রী যাকে কিনা নিজের বোনের মতো ভালোবাসে। প্রিয় বন্ধুর ভালোবাসার মানুষ আর রিক্তা অন্যধর্মের কিন্তু বন্ধুত্ব খুবই স্ট্রং।
এতো স্ট্রং পার্সোনালিটির একজন মানুষ কিনা এমন গেয়ো একটা মেয়ের সাথে এক টেবিলে বসে খাবাড় খাচ্ছে,,,
ইমন খানিকটা বাঁকা হাসলো,,,
সবই উপরওয়ালার ইচ্ছে,,,
ভার্সিটির কিছু মেয়ে এমন ঘটনার সম্মুখীন হলে হয়তো গলায় দড়ি দিতো।
মুসকান খেয়ে উপরে গিয়ে পেটে বালিশ চেপে শুয়ে বিছানায় ছটফট করতে লাগলো আর বলতে লাগলো।
আল্লাহ গো আমারে বাঁচাও,,, আমার যে এইখানে কেউ নাই।
আমি মরলে আমারে কেউ কবর ও দিতে আবো না।
চোখ বেয়ে অঝড়ে পানি পড়তে লাগলো।
ইমন এসে একটা ট্যাবলেট সামনে ধরে বললো ওঠে এটা খেয়ে নাও।
মুসকান খুব কষ্ট করে ওঠে বসলো আর বললো এইডা কি,,,
ইমন রেগে বললো এটা ওষুধ তুমি কি ওষুধ ও চেনো না।
মুসকান ভয় পেয়ে বললো কিসের ওষুধ।
ইমন বিরক্তি মুখ নিয়ে বললো পেটে ব্যাথার খেয়ে নিও বলেই চলে গেলো।
মুসকান লজ্জায় কান্না করে দিলো। পরোক্ষনেই ভাবলো আমার পেটে ব্যাথা ওনি কি কইরা বুঝলো।

ওষুধ টা খেয়েছে আধাঘন্টা কেটে গেছে পেটে ব্যাথাও কমে গেছে। বেশ স্বাভাবিক লাগছে এখন।
মুসকান হঠাৎ ভাবলো লোকটা খারাপ নাহ।
খারাপ হইলে এতক্ষনে আমার সাথে খারাপ কিছু করতো তা তো করেনাই তাইলে লোকটা ভালা।
তয় আমি যে ছুঁড়ির আঘাত করলাম, কাজটা ঠিক করিনাই আল্লাহ পাপ দিবো তওবা,,,তওবা,,,তওবা বলেই দুগালে তিন থাপ্পর দিলো।

মুসকান রুম ছেড়ে ধীর পায়ে হাঁটছে আর ভাবছে কেরা এমন চিল্লাইতাছে। এই বাড়িত আর কেউ নাই।
মুসকান চট করে থেমে গেলো মাথায় হাত দিয়ে বললো হায় হায় হায়,,,
এই বাড়িতে মানুষ নাই ক্যা,,,
ঐ লোকটার মা, বাবা নাই ক্যা ভাই বোন নাই ক্যা,,,
তাঁর মানে কি লোকটা আসলেই খারাপ,,,
মুসকান অসংখ্য প্রশ্ন মাথায় নিয়ে এগোতে লাগলো।
আরেক পা এগিয়েই থেমে গেলো।
হ এই রুম থিকাই চিল্লানি আইতাছে বলেই দরজা ফাঁক করে মাথা আগালো। কাউকে দেখতে পেলো না।
কৌতুহলের বসে রুমের ভিতরে গিয়ে ব্যালকুনিতে চোখ পড়তেই চমকে গেলো।
ইমন হাতের কাছে মদের বোতল ফ্লোরে হাত পা ছুড়ে শুয়ে আছে আঙুল তুলে চিৎকার করে বলছে ঐ কি অপরাধ আমার,,,
আমার ভাগ্য কেনো এমন, আমার জীবন কেনো এমন রাস্তা ঘাটে সবাই আমাকে দেখে ভয়ে থাকে।
ফিসফিস করে কেনো আমি এমন হলাম।
কেউ তো ভালোবেসে আমার কাছে আসে না, সবাই ভয়ে আসে সবাই আমার রাগ,জেদটাই দেখে কেউ এই মনের ভিতর টা দেখতে চায় না।
নিজের বাবা কোন দিন মাথায় হাত রেখে বলেনা বাবা কেমন আছিস? বাবা ঠিকভাবে খেয়েছিস।
সারাদিন না খেয়ে থাকলে কেউ খোঁজ রাখে না।
চট করে ওঠে বসে মদের বোতলটা ছুঁড়ে ফেললো। কাঁচের টুকরো ভেঙে ছড়িয়ে এদিক সেদিক পড়লো।
মুসকান ভয়ে কেঁপে ওঠলো।
তবুও ইমনের কথা গুলো শুনতে লাগলো।
আর ভাবতে লাগলো আমার মতো কষ্ট ওনার।ওনার বাবাও ওনার খোঁজ নেয়না। তাঁর মানে ওনার ও মা নেই। আহারে

লোকটার কতো কষ্ট আর আমি কিনা তারে খারাপ ভাইবা মারতে গেছি।
মুসকান এর জরতা অনেকটায় কমে গেলো।
ভ্রু কুঁচকে চেয়ে বললো ওনি কারে বলতাছে এইসব।
আমার মতোই ওনারও কথা শুনার মানুষ নাই তাই কি আল্লাহর কাছে কইতাছে,,,কিন্তু আমিতো আল্লাহরে ভালো কইরা বুঝাইয়া কই। ওনি এমন ঝাড়ি দিতাছে ক্যা পাপ হইবো তো।

মুসকান অচেনা অজানা এক মায়ার টানেই সব ভয় জরতা কাটিয়ে ইমনের একদম কাছে চলে গেলো।
পাশে গিয়ে বসে বুকের বা পাশে চোখ পড়তেই আত্মাটা ধক করে ওঠলো তাঁর।
ইমন বিরবির করেই যাচ্ছে,,, সারাদিন এটা সেটা, কাজের মাঝে ডুবে থাকলেও রাঁতের আঁধারে চারদিকের নিস্তব্ধতায় জীবনে ঘটে যাওয়া কিছু কঠিন বাস্তবতা,,, আপনজনদের দেওয়া আঘাত বুকের মাঝে খুব করে কড়া নাড়ে।
প্রতিটা রাত সেই আঘাত বয়ে বেড়ানো তাঁর জন্য খুবই কষ্টকর হয়ে পড়ে তাই নিজেকে মদের মাঝে ডুবিয়ে রাখে,,,সুস্থ মস্তিষ্কে নিজের জীবনের অতীত বয়ে বেড়াতে বেড়াতে যখন ক্লান্ত হয়ে পড়ে ঠিক তখনি নিজের অশান্ত মন কে শান্ত করার জন্য সুস্থ মস্তিষ্ক অসুস্থ করার জন্য মদের নেশায় মত্ত হয়ে থাকে। নিজের কষ্ট গুলো প্রতিরাত আওরাতে থাকে।
চাপা স্বভাবের মানুষ হওয়ায় নিজের একান্ত দুঃখ, কষ্ট,যন্ত্রণা গুলো কারো সাথে শেয়ার করে না।
নিজেই নিজের সাথে শেয়ার করে। আজো তাই করছে,,,কিন্তু মুসকান হঠাৎ এভাবে পাশে আসায় তাঁর প্রতিক্রিয়া কি???

ব্যান্ডেজের ওপর আলতো করে হাত রাখলো মুসকান,,, সাথে সাথেই রক্তবর্ণ চোখে তাকালো ইমন। মাথা কাত করে মুসকান কে দেখে ধপ করে ওঠে বসলো,,,
মুসকান খানিকটা ভয় পেয়ে গেলো।
ইমন বললো নারী জাতিটাই আমি সহ্য করতে পারিনা। আর সেই নারী জাতিই আমার জীবনে চলে আসে কোন না কোন ভাবে,,,তুই ও এসেছিস শুধু আসিসনি তুই আমার এইখানে আঘাত করেছিস। বলেই বুকের বা পাশে হাত রাখলো,,,
সায়রীর কাছে মেয়েটার ব্যাপারে শুনে মেয়েটাকে ক্ষমা করলেও তাঁর ভিতর একটা রাগ ছিলোই,,,
মদের নেশায় সেই রাগটা আরো দ্বিগুন হয়ে গেছে।
ইমন ধীরে ধীরে হাত এগিয়ে মুসকানের গলায় চেপে ধরলো,,,
বল তোর সাহস কি করে হয় আমাকে আঘাত করার,,,
মুসকাম ভয়ে চিৎকার দিয়ে ওঠলো।
মুসকান এর ভয়ার্ত মুখ আর চিৎকার শুনে ইমন গলাটা ছেড়ে দিলো।
মুসকান ভয়ে খানিকটা দূরে সরে গিয়ে বললো আমি তো আপনার কষ্ট শুইনা আইছি আর আপনি আমারে মারতে নিছিলেন।
আমি মনে করছি আপনি ভালা মানুষ, তাই আইছি।
ইমন মুসকানের কথা শুনে ভ্রু কুঁচকে তাকালো,,,
বাঁকা হেসে বললো আমি ভালো মানুষ।
মুসকান বললো আমারো তো কেউ নাই আমিও তো এমন কইরা আল্লার কাছে কষ্টের কথা কই।
ইমন মুসকানের অমন শিশু সুলভ মুখের দিকে তাকালো, কথাগুলো শুনে তাঁর হৃদয়ে কেমন শীতলতা অনুভব হলো,,,
ইমন বললো এখানে বসো,,,
মুসকান ভয়ে আরেকটু পিছিয়ে গেলো।
ইমন বললো বসো এখানে।
মুসকান এবার ভয়ে ভয়েই এগিয়ে এসে ইমনের সামনে বসলো।

চলবে…….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here