#সর্বনাশীনি_তুমি
#পর্ব:১৩
#Mishmi_muntaha_moon
কিছুদিন হলো উপমার বাবা গেছে তার বাবার বাড়ি মানে উপমার নানু বাড়ি কোনো একটা ঝামেলার কারণে। উপমার মার সাথে রাবেয়ার কথা হয়।রাবেয়া বেগম ও জাফর সাহেবকে বোঝানোর চেষ্টা করে প্রায়ই কিন্তু উনার সহজ কথা উপমাকে যদি নিজের জীবনে সত্যি চেয়ে থাকে সেহরিশ তাহলে তার জীবনে উপমার থেকে বড় কিছু থাকার প্রশ্নই উঠে না।কিন্তু উপমা উনাকে বুঝাতে পারলেন না মানুষকে এতো টাফ পরিস্থিতিতে ফেলা উচিত না।
আজ উপমার মা বলল রাবেয়া বেগমের বাড়ি যাবেন। উপমাকেও তৈরি হতে বললেন।উপমার অস্বস্তি কাজ করছে।সেহরিশের কাছ থেকে তার বাবার জন্য দূরে থাকার চেষ্টা করছে কিন্তু কোনো মতে তা সম্ভব হচ্ছে না। সেহরিশ নিজ থেকে পা বাড়ালে উপমা কোনোমতেই তাকে ফিরিয়ে দিতে পারে না।
উপমা রেডি হয়ে নিলো সবুজ রঙের একটি থ্রিপিস সাথে গোলাপি ওরনা।
বিকেল দিকে বের হলো।রাবেয়া বেগম উপমা আর তার মাকে দেখে বেশ খুশি হলো।ভিতরে নিয়ে যেতেই সেহরিশের বাবাকে দেখে উপমা ঘাবড়ে গেলো।মৃদু কন্ঠে মাথা নিচু করে সালাম দিলো।উপমার আম্মুও সেহরিশের বাবাকে সালাম দিয়ে জিজ্ঞেস করেন
‘ আসসালামু আলাইকুম। ভালো আছেন?’
সেহরিশের বাবা রাবেয়া বেগমের দিকে তাকিয়ে মাথা মৃদু ঝাকিয়ে বলে
‘জ্বী আলহামদুলিল্লাহ। আপনি জাফর সাহেবের ওয়াইফ নাকি?’
‘জ্বী জ্বী।’
‘ওহ উপমা তাহলে আপনাদেরই মেয়ে?’
উপমার আম্মু উপমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলল
‘ হুম।’
সেহরিশের বাবা আবারও মাথা ঝাকিয়ে উনার রুমে ঢুকে গেলো।উনি যেতেই রাবেয়া বেগম উপমা আর তার মাকে হাসিমুখে গেস্ট রুমে বসিয়ে কিছু ফল এনে সামনে রেখে উপমার মায়ের সাথে কথা বলতে লাগলো।কথার মাঝেই উপমা রাবেয়া বেগমের উদ্দেশ্যে বললেন
‘আন্টি একটা কথা বলি?’
‘হুম বলো জিজ্ঞেস করতে হয় নাকি।’
বলে হেসে উপমার মার দিকে তাকিয়ে আবারও উপমার দিকে তাকালো।উপমা উৎসুক হয়ে বলল
‘আংকেল কোথায় থাকে। না মানে উনাকে বেশি একটা দেখি নাতো তাই।’
বলে রাবেয়া বেগমের দিকে তাকিয়ে রইলো।রাবেয়া বেগমের হাসি উবে গেলো।জোড়পূর্বক হাসির রেখা টেনে বললো।
‘সেহরিশের আব্বু এখানেই থাকে মাঝে মধ্যে ওই বাড়িতেও যায়।আর তাছাড়া সেহরিশ পছন্দ করে না বলে এই কয়েকদিন বেশি একটা আসে নি কিন্তু এইটা তো উনারই বাড়ি আর সেহরিশের আব্বু এখানেই থাকবে এইটাই স্বাভাবিক। ‘
উপমার খারাপ লাগলো।এই প্রশ্ন করা উচিত হয় নি কিন্তু কি করবে আগ্রহ দাবিয়ে রাখতে লারে নি।উপমা তার মায়ের দিকে তাকাতেই দেখে তার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকালো।উপমা চোখ ফিরিয়ে নিচে তাকালো।কথা পরিবর্তন করতে উপমার আম্মু বলল
‘সেহরিশ কোথায় আপা?’
সেহরিশের কথা শুনে উপমার চোখ গুলো চিকচিক করে উঠলো।বলতে গেলে ওকে দেখার জন্যই এসেছিলো উপমা কিন্তু না দেখে কিছুটা নিরাশ হয়।রাবেয়া বেগমের উত্তরের আশায় মনোযোগ সহকারে তাকিয়ে থাকে।রাবেয়া বেগম মুখটা মলিন করে বলল
‘ছেলেটা এখন বাহিরেই বেশি থাকে।ওর খবর জানার সাধ্য কি আছে আমার বলেন। ‘
বলে মন খারাপ করে রইলেন। উপমার মাও কিছুটা নিরাশ হয়।
শেষ বিকেল পর্যন্ত কথা বলে, যাওয়ার উদ্যোগ নিলেন।উপমার মা কথা শেষ করে আগেই বেরোলেন রাবেয়া বেগম ও উপমার মার সাথে গেলো এগিয়ে দিতে।উপমা হাসি মুখে বেরোতে নিতেই সেহরিশের বাবার ডাকে পিছে তাকায়।সেহরিশের বাবা উপমার মুখোমুখি হতেই উপমা হচকচিয়ে যায়।আমতা আমতা করে বলে
‘কিছু বলতেন আংকেল?’
উপমা সেহরিশের বাবার থমথমে মুখের দিকে তাকায়।সেহরিশের বাবা সময় নষ্ট না করে বলে
‘আমি আমার ছেলের ব্যাপারে সকল খবর রাখি।আর আমি সবসময় সেহরিশের ভালো চাই।তোমার বাবা মিস্টার জাফর সাহেব আমার ছেলেকে পছন্দ করে না ভালো কথা তোমাকে আমার ছেলের থেকে দূরে থাকতে বলেছে এইটাতো আমার মতে আরও ভালো কথা। কিন্তু তুমি যে দুই নৌকায় পা দিয়ে আমার ছেলেকে ডুবানোর প্ল্যান করছো এইটা একদমই চিপনেস।একে তো বাবাকে দেখাচ্ছো তার বাধ্য মেয়ে তুমি আর আমার ছেলেকে তার বাবার অবাধ্য করছো।দূরে গেলে একেবারেই দূরে যাও আমার ছেলে থেকে বুঝলে মেয়ে।’
সেহরিশের বাবার কথা শুনে উপমার মুখ চুপসে গেলো।চোখজোড়া ফ্লোরে নিবদ্ধ।
‘তোমার মা হয়তো তোমার অপেক্ষা করছে যাও।’
বলে উনি প্রস্থান করলেন।উপমা কিছুক্ষনে ফ্লোরে একই ভাবে তাকিয়ে থেকে সিড়ি দিয়ে বেয়ে নিচে নেমে গেলো।সেহরিশের মা আর তার মা এখনো কথা বলছিলো।উপমাকে দেখে উপমার মা বলল
‘এতোক্ষন কোথায় ছিলি তারাতারি আয়।’
বলে কুচকানো ভ্রু ঠিক করে মুখে হাসি ফুটিয়ে রাবেয়া বেগমের দিকে তাকিয়ে বলল
‘আচ্ছা আজ আসি তাহলে আপা।’
‘হুম কিন্তু এভাবে মাঝে মধ্যে আসবেন। ভালো লাগে না সারাদিন একা একা বাড়িতে।’
বিদায় দিয়ে চলে গেলো উপমা আর তার মা।রাস্তায় উপমার মা তার চুপসানো মুখ দেখে একবার জিজ্ঞেস করলো কি হয়েছে।কিন্তু উপমা কিছু বলল না।কি বলবে আর কার নামেই বা বলবে সেইটা তো যতই হোক সেহরিশের বাবা।
____
জুইদের বাড়ি বসে আছে।সকলে জুই কে ঘিরে আছে।এতোদিন পর জানতে পারলো তারা জুইয়ের বয়ফ্রেন্ড এর কথা আর এতোদিন লুকিয়ে লুকিয়ে চালিয়ে যাচ্ছিলো প্রেম।লাবিবা রেগে বলল
‘তুই প্রেম কি করে করতে পারিস। এইটা একদমই এক্সপেক্ট করি নি আমি তোর থেকে।’
জুই হেসে বলল
‘উনার কথা তো বলেছিলাম তোদের। এমন রিয়েক্ট করছিস কেনো আজব।আর আমি প্রেম করি না উনি আমায় প্রপোজ করেছে আমি কিছু বলি নি।’
‘বাটপার! কিছু বলিস নি তো কি হয়েছে। মনে ফিলিংস নিয়ে ঘুরিস আবার দেখে হাসি আদান-প্রদান ওইটা কি এমনে এমনেই।’
লাবিবা আর জুইয়ের এভাবেই অনেকক্ষণ ঝগড়া চলল।
তাদের এইসব কথোপকথনে উপমা বিরক্ত হয়ে বলল
‘আচ্ছা প্রেম করে এইটা খুব স্বাভাবিক ব্যাপার ঝগড়া করার কি আছে।কিন্তু আমাদের থেকে লুকিয়ে এইটা একটু অসন্তোষজনক।’
‘তুইও তো করছিস প্রেম তাও চুটিয়ে সেহরিশ ভাইয়ের সাথে।’
জুইয়ের কথায় অপ্রস্তুত হয়ে পড়লো উপমা।থতমত খেয়ে বলল
‘আমার টা লুকাইত ছিলো না কমবেশি ওরা জানতো সকলেই।’
উপমা কথা শেষ করে ইশফা,লাবিবা,মারজিয়ার দিকে তাকাতেই দেখে ওরা চোখ ছোটো ছোটো করে তাকিয়ে আছে।উপমা ঢোক গিললো।মলিন মুখে বলল
‘আর তাছাড়া আমাদের ব্রেকআপ হয়ে গেছে।’
এইটা শুনে সকলে চমকে উঠলো।জুই অবাক হয়ে বলল
‘কিহ! কেনো? পাগল তুই নাকি?’
উপমা ব্যাগ কাধে তুলে বলল
‘ফ্যামিলি থেকে নেগেটিভ উত্তর পেয়ে আমি কি করে চালিয়ে যাই।আমার বাবা উনার রাজনীতি পছন্দ করে না আর উনার বাবা তো আমাকেই পছন্দ করে না।’
বলে মলিন মুখে কচলাতে থাকা হাতের দিকে তাকিয়ে রইলো।ইশফা এসে উপমাকে জড়িয়ে ধরলো।উপমা মলিন হেসে ইশফাকে সরিয়ে দাঁড়িয়ে বলল
‘আচ্ছা আমি যাই।আজ বাবা আসবে। ‘
‘কোথায় গিয়েছিলো তোর বাবা?’
‘নানিবাড়ি ‘
‘ওহ’
___
উপমা ধীর গতিতে হাটতে লাগলো।কোনো রিকশাই পাচ্ছে না খুজে।কিছুক্ষন হাটার পর রিকশা পেতেই তারাতারি উঠে বসলো।
উপমা হাতের ঘড়িতে তাকালো ৪টা বেজে ১০ মিনিট।বাড়িতে পৌছে গেছে আর কিছুটা পথ।সামনে পাঞ্জাবী পরিহিত সেহরিশকে দেখে মুখে আনমনে হাসি ফুটলো।কিন্তু সাথে তার বাবাকে দেখে হাসি মিলিয়ে গেলো।সেহরিশের মুখ গম্ভীর।হাত মুঠো করে আছে শক্তভাবে।দাতে দাত খিচে তার বাবার দিকে তাকিয়ে আছে।
তার বাবার দিকে চোখ যেতেই দেখতে পেলো একফালি হাসি ঠোঁটের কিনারায়।
থমকালো উপমা।কিছুটা দূর চলে যেতেই উপমা রিকশা থামাতে বলে এখানেই নামিয়ে দিতে বলে।টাকা শোধ করে পিছনে তাকায়।ঠাই কিছুক্ষন দাঁড়িয়ে তাদের দুজনকে দেখে।কথা শেষ হতেই সেহরিশ তার গাড়িতে উঠে।
উপমা দাঁড়িয়ে দাড়িয়েই ভাবতে লাগে সেহরিশ কথা বলে আবার গাড়ি দিয়ে চলে যাচ্ছে কেনো বাড়িতে না গিয়ে।ভাবনার মাঝেই সেহরিশের গাড়ি তাদের বাড়ির রাস্তা দিয়ে আসতে দেখে এদিক সেদিক তাকিয়ে লুকানোর জায়গা খুজতে লাগলো।ব্যর্থ হয়ে গায়ের ওরনা দিয়ে ঘুমটা টেনে পিছে ঘুরে দাড়ালো।
গাড়ির তাকে ফেলে চলে যেতেই উপমা সোজা হয়ে গাড়িতে তাকাতেই আচমকা গাড়ি থেমে গেলো।উপমা ঠোঁট কামড়ে গাড়ির দিকেই তাকিয়ে রইলো গাড়ি আবার পিছনে আসতে দেখে আবারও ঘুরে দাড়ালো উপমা তারাতারি করে।
‘উপমা,,’
সেহরিশের ডাক শুনেও অনড়ভাবে দাঁড়িয়ে রইলো উপমা।সেহরিশ আবারও ধীর কন্ঠে বলল
‘ডোন্ট টেল মি তুমি পালাচ্ছো আমার থেকে?দেখো উপমা আমার মাথা ঠিক নেই আমাকে আর টায়ার্ড করো না।’
উপমা মাথা নিচু করে ঘুরে তাকালো সেহরিশের দিকে।সেহরিশ দাত দিয়ে নিচের ঠোঁট চেপে কিছুক্ষন ভ্রু কুচকে তাকিয়ে থেকে পাশের দরজা খুলে দিয়ে বলল
‘গাড়িতে বসো।’
উপমা ঢোক গিলে সেহরিশদের বাড়ির দিকে তাকালো।সেহরিশের বাবা দাঁড়িয়ে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তাদের দিকে।উপমা মাথা দুই পাশে নাড়িয়ে চলে যেতে নিতেই সেহরিশ বেড়িয়ে উপমার হাত ধরলো ধমকে বললো
‘ দৌড়াচ্ছো কেনো।হ্যা?’
উপমা সেহরিশের হাত ছাড়াতে ছাড়াতে বলল
‘ছাড়ুন হাত আপনার বাবা দেখছে।ছেড়ে দিন।’
সেহরিশ একপলক তার বাবার দিকে তাকালো।মুখ খিচিয়ে বলল
‘কেনো উনি কিছু বলেছে তোমাকে?`
‘নাহ।কিন্তু উনি আপনার বাবা আর উনি আমায় পছন্দ করে না।’
সেহরিশ উপমার দিকে গম্ভীর মুখে তাকিয়ে বলল
‘আই ডোন্ট কেয়ার। দেখো উপমা ডোন্ট ডু দিস জাস্ট ডোন্ট,,, বসো গাড়িতে।’
উপমা শুনলো না সেহরিশের কথা হাত ছাড়িয়ে মলিন চোখে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে দৌড়ে চলে গেলো।
সেহরিশের মাথাটা তেতে উঠলো।হাত শক্ত করে মুষ্টিবদ্ধ করে ওইপাশ গিয়ে রেগে গিয়ে জোরে গাড়ির দরজা বন্ধ করলো।পা দিয়ে কয়েকটা জোরে জোরে গাড়িতে হিট করে গাড়িতে বসে চলে গেলো বাতাসের গতিতে।
চলবে,,,,
(ভুল ত্রুটি গুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন সবাই ❤️❤️)