#শেষ_বিকালের_আলো (৭ম পর্ব)
অবনী প্রথমবার যখন এই বাগানে ঢুকেছিলো তখন ভালো করে খেয়াল করেনি কি কি ফল,সবজি গাছ আছে এই বাগানে।
অবনী বাগান এর চারিদিকে ঘুরে ঘুরে দেখতে লাগলো। সামনের বাগানের জায়গা কম কিন্তু পিছনের বাগানটা বেশ বড় আছে।মোটামুটি সব ফলের গাছই বাগানে দেখতে পেলো।
বাগানের শেষ সীমানায় টিনের দেয়ালের দুই কোণ ঘেঁষে দুই দিকে দুটো বড় নারকেল গাছ, চারপাশে সাড়ি বেঁধে লাগানো বিভিন্ন জাতের আম,কাঁঠাল,লিচু,জাম,বড়ই,জাম্বুরা,পেঁপে গাছ।
একটু ছোট জাতের ফল গাছ বাগানের ভিতর দিকটায়।কমলা,ডালিম,সফেদা এমনকি ড্রাগন ফ্রুট ও বাদ যায়নি।ছোট ছোট পেয়ারা গাছগুলো বাড়ির লাগোয়া।যেগুলো দিয়ে সকাল বেলা লিনসা পেয়ারা পেরেছিলো।
আম কাঁঠালের সময় চলছে।আম গাছগুলোতে অনেক পরিপক্ক আম ঝুলে আছে। অবনী গুনে দেখলো ৫ টা আম গাছ আছে বাগানে।তার মধ্যে ৩ টা গাছে আম আছে।২ টা গাছ থেকে কাকিমা বেশ কিছু আম পারলেন।একটা গাছে ছোট ছোট কাঁচা আম ঝুলছে। অবনী বুঝলো এটা বারোমাসি আম “কাটিমন”।
অবনীর ছাদ বাগানেও একটা কাটিমন আছে।এবারই প্রথম সেই গাছে ৯ টা আম ধরেছে।
কাকিমার বাগানে ড্রাগনফ্রুট গাছ আছে ৩ টা। কাকিমা বলল, এখানে ২ টা লাল ড্রাগন আর একটা সাদা ড্রাগন। কাকিমা ২ টা বড় দেখে ড্রাগন ফ্রুট পারলেন। লিনসা আর লিনিয়া অনেকগুলো পেয়ারা পারলো।
এই বাগানের সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিক হচ্ছে পাখি।বিভিন্ন জাতের প্রচুর পাখির আনাগোনা।কিচিরমিচির ডাকে সারাক্ষণ মাতিয়ে রাখে এই ফল বাগান।তার একটাই কারণ এই বাগানে মানুষের আনাগোনা কম,বাগানের অর্ধেক ফল নাকি তাদের অধিকারে থাকে,কাকিমা বলে হাসলেন।
পুকুরের ওই দিকটায় সবজি বাগান।ওই দিকে আজ আর যাওয়া হলোনা।
সন্ধ্যা হয়ে গিয়েছে।সবাই বাড়ির সামনের দিকটায় চলে আসলো।এসে দেখলো সুমন মিয়া চলে এসেছে আর নিলুফা বেগম ফুল বাগানের আগাছা পরিষ্কার করছে।
অবনী খেয়াল করলো আকাশে মেঘ করেছে অনেক।মনে হচ্ছে প্রচুর বৃষ্টি নামবে। সুমন মিয়া লিস্ট অনুযায়ী সব জিনিসপত্র বুঝিয়ে দিয়ে অবনীর হাতে বাকি কিছু টাকা ফেরত দিলো।
কাকিমা সুমন মিয়াকে সব জিনিসপত্র উপরে তুলে দিয়ে আসতে বলল। অবনী কাকিমাকে বিদায় দিয়ে সুমন মিয়ার পেছন পেছন উপরে চলে আসলো। জিনিসপত্র দিয়ে সুমন মিয়া যাওয়ার সময় অবনী তাকে বখশিশ সাধলো কিন্তু বখশিশ নিতে সুমন মিয়া রাজি হলোনা।বলল, “আম্মায় রাগ করবো আফা। ”
অবনী: কোন আম্মা?
সুমন মিয়া: এই বাড়ির মালকিন।
অবনী: ওহ্ আচ্ছা। যাও তাহলে।
সুমন মিয়া বখশিশ না নিয়েই চলে গেলো।
অবনী ঘরে ঢুকে বিছানাটা রেডি করে ফেললো।লিনসা আর লিনিয়াকে ফ্রেশ হয়ে শোবার ঘরে যেতে বলে বাকি জিনিসপত্র আর খাবার নিয়ে অবনী কিচেনে চলে গেলো।
সবকিছু গুছিয়ে ফ্রেশ হয়ে অবনী শোবার ঘরে আসলো।বিছানায় বসবে এর মধ্যেই কলিংবেল এর আওয়াজ। কলিংবেলের আওয়াজ শুনে হঠাৎ অবনীর বুকের মধ্যে ধক করে উঠলো।অবনীর বাসার কলিংবেল এর আওয়াজ এর মতই লাগলো।
অবনী দরজা খুলে দেখলো বিকাল বেলায় যে ফলগুলো সবাই মিলে পেরেছিলো তার বেশির ভাগই নিয়ে এসেছেন কাকিমা।
অবনী: সবই ফলই তো নিয়ে এসেছেন কাকিমা।আসুন ভেতরে আসুন।
কাকিমা: না,মা…এখন ঢুকবো না।ফলগুলো নাতনীদের কেটে দাও, তুমিও খাও।আমি একা মানুষ আর কত খাবো! তোমার যখন লাগবে তুমি বাগান থেকে ফল নিয়ে খেও।
অবনী : একটু লজ্জা পেয়ে বলল…আচ্ছা কাকীমা।অবনী দরজা বন্ধ করে কলিংবেল টা ছুটিয়ে রাখলো।এই আওয়াজ আর শুনতে মন চায়না অবনীর।
অবনী ফল কেটে নিয়ে লিনসা আর লিনিয়াকে নিয়ে খেতে খেতে জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে।
হঠাৎ দেখলো বাইরে বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে। বৃষ্টি নামবে হয়তো।
একটু পরেই মেঘ গর্জন করতে লাগলো।লিনসা আর লিনিয়া একটু ভয় পেয়ে অবনীর কাছে ঘেঁষে বসলো।
অবনী মনে মনে ভাবতে লাগলো, এক অজানা পরিবেশে,অচেনা বাড়িতে অরণ্যকে ছেড়ে রাত কাটাচ্ছে।অবনী তার অতীতের ইতিহাস হাতড়িয়েও মনে করতে পারেনা শেষ কবে অরণ্যকে ছেড়ে রাত কাটিয়েছে!!!
হঠাৎ করেই ঝমঝম বৃষ্টির শব্দে অবনীর সৎবিৎ ফিরে পেলো।কতদিন পর যে এভাবে টিনের চালে বৃষ্টির শব্দ শুনতে পেলো!
অবনীর বৃষ্টিটা ভালো লাগছিলো আবার একটু একটু ভয় ভয় ও লাগছিলো।নিরিবিলি পরিবেশে বাড়িটা।বাড়িতে কোন পুরুষ মানুষ নেই।
রাত ৯ টা বাজে।অবনী মেয়েদের নিয়ে রাতের খাওয়া শেষ করে ঘরের জানালা,দরজা ভালো করে লক করে দ্রুতই শুয়ে পরলো।
রাত ১০ টা বাজলো শুয়ে পরতে পরতে। অবনী শুয়ে শুয়ে চিন্তা করতে লাগলো অরণ্য কি করছে তাদেরকে না পেয়ে!রাত ১ টার আগে তো কখনও ঘুমায়না।তাই অবনীরও ১ টার আগে ঘুমানো হতোনা মন চাইলেও।আজ বহু বছর পরে এত তাড়াতাড়ি রাতে ঘুমাতে আসলো অবনী।
অবনীর ক্লান্ত শরীর কখন যে ঘুমিয়ে গেলো তা সে নিজেই টের পেলোনা…ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখতে লাগলো অরণ্য তাদেরকে খুঁজে পেয়েছে….
চলবে….
লেখনী: #নুসু