#শুধু_তুমি_চাও_যদি 🥀
#পর্ব – ০২
#লেখনীতে – Aloñe Asha [ছদ্ম নাম]
#Kazi_Meherin_Nesa
মুহুর্তের মধ্যেই আদি দিয়াকে ধাক্কা দিয়ে নিজের থেকে সরিয়ে দেয়, ঠিক তখনই সজোরে এক থাপ্পড় পড়ে দিয়ার গালে..দিয়া গালে হাত দিয়ে অসহায় দৃষ্টিতে আদির দিকে তাকায়..আদি রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে বলে ওঠে..
আদিত্য — how dare you..! এরকম করার রাইট কিন্তু তোকে আমি দেইনি দিয়া, তাহলে কোন সাহসে তুই এটা করলি..?
দিয়া কান্না করে ফেলে, আসলে আজকে আদির থেকে এভাবে মার খাবে সেটা বেচারির কল্পনার বাইরে ছিল..একে তো এর কান্না থামার নামই নেই, এদিকে আদির রাগ আরো বেড়ে যাচ্ছে..
আদিত্য — একদম কান্না করবি না, তোকে এখন কি করতে ইচ্ছে করছে জানিস…!!
দিয়া কান্না করতে করতেই মিনমিন করে বলে..
দিয়া — আমি ভুল কি করছি? আমি তো তোমাকেই কিস করেছি, কোনো বাইরের ছেলেকে তো করিনি..!!
আদিত্য — একদম চুপ..! এইসব চলে তোর মাথায় সবসময়! I knew it, তুই যখন এইভাবে আমার কাছে এলি তখনই আমার সন্দেহ হয়েছিলো যে তোর মাথায় কিছু চলছে..
দিয়া — কি খারাপ কাজ করেছি আমি? তুমি তো এমনভাবে বলছো যেনো আমি কোনো মারাত্মক অপরাধ করে ফেলেছি!
আদিত্য — হ্যা করেছিস!
দিয়া — না করিনি, তুমি আমার হাসবেন্ড, তোমাকে কিস করা অপরাধ নাকি বলো? আমি তোমাকে না তো আর কাকে কিস করবো?
আদিত্য — যাকে ইচ্ছে কর, কিন্তু আমার থেকে দূরে থাক.. আর হ্যা ভবিষ্যতে আমাকে জড়িয়ে ধরতে এলেও খবর আছে তোর!
দিয়া — আমার যখন রাতে ভয় করবে তখন..? তখন ও জড়িয়ে ধরতে পারবো না তোমাকে?
আদিত্য — বললাম তো পারবি না..! সবসময় দূরে দূরে থাকবি তুই আমার থেকে বুঝেছিস! না জানি মাঝে মাঝে কি চলতে থাকে তোর মাথায়, আজকে তো সব লিমিট ক্রস করে দিলি
দিয়া — হ্যা, আমার মাথাতেই তো সব উল্টোপাল্টা জিনিস ঘোরে, তুমিই একা ভালো আর পৃথিবীর সব খারাপ, আর সেইসব এর মধ্যেও আমি তোমার কাছে আরো খারাপ!
কান্না করতে করতে দিয়া কথাগুলো বলে দেয়, আদি জানে দিয়া বড় হয়েছে ঠিকই কিন্তু ওর মধ্যে বাচ্ছামি স্বভাব এখনও রয়ে গেছে আর তার প্রমাণ প্রতি নিয়ত আদি পেয়ে যাচ্ছে, আজকেও পেলো..
আদিত্য — বাচ্চাদের মত আচরণ করাটা বন্ধ কর, তুই ভালোভাবে জানিস এসব আমার পছন্দ না
দিয়া — তোমার তো আমার কিছুই ভালো লাগেনা, আমি যতই ভালোভাবে থাকার চেষ্টা করি কিন্তু তুমি তো আমাকে কথা শোনাবেই!
আদি আরো রেগে গিয়ে দিয়ার বাহু আরো জোড়ে চেপে ধরে বলে..
আদিত্য — listen, stop it..! যে জিনিসটা আমি বারন করি সেটা repeat কেনো করিস তুই?
দিয়া হাতে ব্যথা পাচ্ছিলো, ও আদির হাত সরানোর চেষ্টা করে কিন্তু ছেলেমানুষের হাত ছাড়ানো কি এতই সহজ..? দিয়া চোখ বন্ধ করে বলে..
দিয়া — ব্যথা পাচ্ছি আমি আদিত্য..!!
সঙ্গে সঙ্গে আদি দিয়ার বাহু ছেড়ে দেয়, তারপর চোখ ঘুরিয়ে ফেলে দিয়ার দিক থেকে..মেয়েটা এখনও অসহায় দৃষ্টিতে আদির দিকে তাকিয়ে আছে..মাঝে মাঝে এতটা একা লাগে ওর যেটা ভাষায় প্রকাশ করতে পারেনা মেয়েটা.. আর করলেও বা কার কাছে করবে, কার জন্যে করবে? আদি তো পাত্তা দেবেনা ওকে..
দিয়া — আমাকে সবসময় হার্ট করে, ভালো কিছু বললে তো আরো বেশি হার্ট করে..কি চায় তুমি? কেনো এরকম করে বারবার আমার সাথে?
আদিত্য — তোর প্রশ্নের তোর দিতে আমি বাধ্য না দিয়া, আর হ্যা এইসব ফালতু কাজ যেনো আর করতে না দেখি তোকে.. তাহলে কিন্তু আরো দু – তিনটে থাপ্পড় তোর গালে পড়বে
দিয়ার এবার বেশ অভিমান হয়, সবসময় তো আদি এভাবে ওকে বলে যেটা শুনতে একটুও ভালো লাগে না, আর আজকের পর চুপ করে থাকার মানেই হয় না! দিয়া নাক ফুলিয়ে কিছুটা রাগী স্বরে বলে…
দিয়া — একশো বার বলবো, আর আজকে কিস করেছি? রোজ করবো, কি করবে তুমি? আবার মারবে আমাকে? আমি আন্টিকে গিয়ে বলে দেবো!
দিয়ার কথা শুনে আদি চমকে যায়, কি বলে মেয়েটা? এইসব কথা আবার মাকে গিয়ে বলবে নাকি? অবশ্য বলতেই পারে.. এ মেয়েকে দিয়ে তো আর ভরসা নেই..আদি জলদি করে কফি মগ রেখে দিয়ার ডান বাহু ধরে জিজ্ঞাসা করে..
আদিত্য — what did you just say? এই তুই মাকে গিয়ে কি বলবি..?
একটা পাঁচ – ছয় বছরের বাচ্চা মেয়ে যেভাবে বলে দিয়া ঠিক সেভাবেই কথাটা বলল আর এটা শুনে তো আদি আশ্চর্য হয়ে গেছে..
দিয়া — এটাই বলবো যে তোমার ছেলেকে আমি কিস করেছিলাম তাই সে আমাকে মেরেছে, তারপর তুমি কি করবে বুঝে নিও!
আদিত্য — what the..! তোর মাথা ঠিক আছে দিয়া? মাকে গিয়ে এসব কথা বলবি তুই, seriously? (অবাক হয়ে)
দিয়া — তো আর কি করবো? তুমি তো আমার কথা শুনতেই চাও না, আর আজকে তো মেরেও দিলে..আন্টিকে না বললে আর কাকে গিয়ে নালিশ করবো আমি? (মুখ গোমড়া করে)
কিস করতে দেয় না বলে বউ বলে নাকি মাকে গিয়ে নালিশ করবে..এসব শুনে হাসবে না কাদবে সেটাই বুঝতে পারছে না আদি..এতো সিরিয়াস মেডিক্যাল কেস হ্যান্ডেল করেছে ও এতদিন, সেখানেও এতটা অবাক হয়নি, চিন্তিত হয়নি যতোটা আজকে নিজের বৌর কথা শুনে হচ্ছে..
আদিত্য — হায় আল্লাহ..! এ কাকে বিয়ে করলাম আমি? কিছু বলেও শান্তি নেই..কি করবো আমি এই মেয়েটাকে নিয়ে এবার (মনে মনে)
মনে মনে আরো অনেককিছুই বলে আদি, দিয়া আদিকে চুপ করে থাকতে দেখে আবার বলে ওঠে..
দিয়া — কি হলো? এখন মুখের কথা কোথায় গায়েব হয়ে গেলো শুনি? ছাড়ো আমাকে, আমি আন্টির কাছে যাবো!
দিয়া আদির হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করতেই আদি আরো শক্ত করে ওর হাত ধরে বলে…
আদিত্য — একদম চুপ করে এখানে দাড়িয়ে থাকবি আর খবরদার তুই এসব কথা মাকে একদম বলবি না, মাথা খারাপ হয়ে গেছে নাকি তোর? কি বলছিস নিজে বুঝতে পারছিস?
দিয়া এক হাতে চোখ মুছে নাক টানতে টানতে একটা শয়তানি মার্কা হাসি দিয়ে বলে..
দিয়া — কেনো? ভয় পেলে নাকি?
আদিত্য — এটা ভয় পাওয়ার ব্যাপার না, আর না মজা করার ব্যাপার..আমাদের ব্যক্তিগত ব্যাপার এটা আর মাকে এসব কথা একদম বলবি না, নাহলে আমার থেকে খারাপ কিন্তু কেউ হবেনা
কথাগুলো বলেই আদি দিয়ার হাত ছেড়ে দেয়, দিয়া ঠোঁট উল্টে আঙ্গুলে ওড়না প্যাচাতে প্যাঁচাতে অভিমানী গলায় বলে…
দিয়া — সবসময় বকো কেনো আমাকে? ভালোভাবে একটু কথা বললে কি এমন ক্ষতি হবে বলোতো? আমার সাথে একটু মিষ্টি করে কথা বললে তোমার ডাক্তারের ডিগ্রি চলে যাবে নাকি তোমার রোগী কমে যাবে? কোনটা হবে বলো?
ভীষণ সিরিয়াস মুডে ছিলো আদি, এতক্ষণ রাগ হচ্ছিল মেয়েটার ওপর কিন্তু এবার দিয়ার কথা শুনে নিজের অজান্তেই হাসি চলে আসে ওর মুখে..আদির মুখে হাসি দেখে দিয়াও হেসে দেয়, চোখে জল আছে এখনও তবে আদির হাসি দেখে ভালো লাগছে..
আদিত্য — তোর sense of humor একদম মারাত্মক! কোত্থেকে শিখেছিস এভাবে কথা বলা? (হেসে)
দিয়া — এটা আমার ability..! তুমি যেমন ডাক্তারি উপায়ে treat করো আমি তেমন ঘরোয়া উপায়ে ট্রিট করতে জানি, মানুষকে হাসাতে জানি..
আদির কি যেনো হলো, ও আবার মুখ গোমড়া করে ফেললো..দিয়াকে ছেড়ে দিয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে বললো..
আদিত্য — অনেক রাত হয়েছে, রাত জাগলে অসুস্থ হয়ে যাবি..গিয়ে শুয়ে পড়!
দিয়া — বাব্বাহ..! আমার কথা ভাবো নাকি তুমি? শুনে ভালো লাগলো!
আদি কিছু বলল না, অবশ্য আদি যতোটা সম্ভব কম কথা বলে দিয়ার সাথে কারণ মেয়েটার সাথে কথা বলতে গেলেই কেমন যেনো এক অদৃশ্য কথার জালে জড়িয়ে যায় ও..আদি বিছানায় যাওয়ার জন্যে উদ্যত হচ্ছিল তখন দিয়া ধপ করে ওর সামনে এসে দাঁড়ায়..আদি ভ্রু কুচকে বলে..
আদিত্য — কি হলো..? তোকে আমি ঘুমাতে বলেছি, আমার সামনে এসে দাড়ালি কেনো?
দিয়া — আমার ইচ্ছা..! আসলে কি জানো? তোমাকে বিরক্ত করাটাই এখন আমার favourite timepass!
আদি কয়েক সেকেন্ড দিয়ার দিকে তাকিয়ে ছোটো একটা নিঃশ্বাস ফেলে, সত্যি মেয়েটা বড্ড জ্বালায় ওকে…
আদিত্য — এই জন্যেই তোকে আমার পছন্দ না! জানিনা মা তোর মধ্যে কি এমন দেখেছে যে তার মনে হলো you’re the best choice for me
দিয়া — সব যদি তুমিই বুঝে যাও তাহলে তো আর পৃথিবীতে বোঝার দ্বিতীয় কেউ থাকবেই না তাইনা?
আদি চোখ গরম করে ফেলে, দিয়া তখন দু হাত পেছনে নিয়ে দাড়িয়ে ভ্রু নাচিয়ে বলে..
দিয়া — কি হলো ডাক্তার সাহেব, আবার মুখ গোমড়া করে ফেললেন যে..! মাঝে মাঝে এভাবে একটু হাসতে পারেন না? দেখুন তো আপনাকে কতো মিষ্টি লাগে হাসিমুখে
আদিত্য — শেষ হয়েছে তোর কথা? এবার যা, ঘুমা..তোর একটু কিছু হলেই তো মা আবার আমাকে blame করবে! আর সেটা আমি হতে দেবো না
আদি আর দিয়াকে কিছু বলতে না দিয়ে জলদি বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়ে, বেড সাইড লাইটটা ও বন্ধ করে দেয়, দিয়াই বা আর জেগে থেকে কি করবে? ও নিজেও গিয়ে শুয়ে পড়ল..মিনিটে দশেক পর দিয়া উচু হয়ে আদির দিকে ঘুরে ওর হাতে সুড়সুড়ি দিতে থাকে..আদি তাও চুপ করে ছিলো..ওর কোনো প্রতিক্রিয়া না দেখে এবার দিয়া কিছুটা জোরেই বলে ওঠে..
দিয়া — এই আদিত্য..
আদি অন্যদিকে মুখ করে শুয়েছিল, দিয়ার ডাকে আদি কিছুটা বিরক্ত হয়..চোখ বন্ধ অবস্থাতেই বলে…
আদিত্য — আরেকটা কথা না..!
দিয়া — একটা কথা আছে!
আদিত্য — একটা কথা যদি থাকে তাহলে বল, তার বেশি থাকলে বলবি না
দিয়া — তুমি আমাকে সরি বললে না?
দিয়ার প্রশ্ন শুনে আদি সোজা হয়ে শোয়, মেয়েটা দু কুনুই বালিশে ভর দিয়ে আদির দিকে মুখ উচিয়ে আছে..
আদিত্য — আমি সরি কেনো বলতে যাবো তোকে? (ভ্রু কুচকে)
দিয়া — আমাকে একটু আগে মারলে তুমি তাও কোনো অপরাধ ছাড়া, প্রথমবার মারলে তাও আবার এতো জোরে..একটা সরি বলবে না? নাকি সরি বলতে হয় এইটাও জানো না?
আদিত্য — you’ve kissed me without my permission, তাই মার খেয়েছিস..এখানে তোকে সরি বলার কোনো প্রশ্নই আসে না
আদি আবার উল্টোদিকে মুখ ফিরিয়ে শুয়ে পড়লো..দিয়া এবার রাগ দেখিয়ে বলে…
দিয়া — ওহ! তারমানে বলবে না তুমি আমাকে সরি?
আদিত্য — নাহ!
দিয়া — সত্যিই বলবে না?
আদিত্য — বললাম তো না..!
দিয়া — ঠিক আছে, তাহলে এরপর থেকে আমার যখন ইচ্ছে হবে আমি তোমাকে ছাড়া আর অন্য ছেলে খুজে কিস করে নেবো! তখন বুঝবে মজা!
বেশ অভিমান নিয়ে কথাটা বলে দিয়া উল্টোদিকে মুখ ফিরিয়ে শুয়ে পড়লো, দিয়ার এহেন কথায় একটুও অবাক হলো না আদি উল্টে এসব কথা শুনে আদি আরো নিশ্চিত হচ্ছে যে ওর মধ্যে কোনো defect আছে..
আদিত্য — মেয়েটার মাথা সত্যিই খারাপ আছে, ওর মাথার চেক আপ করানো দরকার তাহলে কোনো না কোনো প্রবলেম তো পাওয়াই যাবে.. স্টুপিড (মনে মনে)
দিয়াকে এভাবে থাপ্পড় মারার কোনো ইচ্ছেই ছিলো না আদির কিন্তু আচমকা এমন কাণ্ডে নিজেকে সংযত রাখতে পারেনি ও, মনে মনে guilty feel করছে ও কিন্তু তবুও মুখে সরি বলবে না দিয়াকে..ওদিকে দিয়া নিজেকে সামলে নিয়েছে, কান্নাও করছে না এখন..নিজেকে বুঝিয়েছে যে কান্না করে কোনো লাভ নেই! এর থেকে যা হয়েছে সেটা ভুলে যাওয়াই ভালো
.
.
পরেরদিন সকালে…
দিয়া রান্নাঘরে নিজের শ্বাশুড়ীকে রান্নার কাজে সাহায্য করছিলো, যদিও আদির মা ওকে কাজ করতে দেয় না তাও টুকটাক সাহায্য করছিলো দিয়া..তখন আদি জগিং শেষে বাড়ি ফেরে..স্বাস্থের ব্যপারে ভীষণ সচেতন ও, যতো যাই হোক সকলের জগিং কোনোদিন মিস করেনা..রোজকার মতন আজকেও এসেই আদি জুস চায়, আদির মা রান্নাঘর থেকে সেটা শুনে ফ্রিজ থেকে জুসের বোতল বের করে গ্লাসে ঢেলে দিয়ার হাতে ধরিয়ে দেয়..
শেফা — দিয়া, যা তো..ওকে জুস দিয়ে আয়..!
দিয়া — আমি? অ্যান্টি, তুমি গিয়ে দিয়ে এসো না!
শেফা — আমি আর তুই যাওয়া একই কথা, যা তুই দিয়ে আয় আর চিন্তা নেই, আদি কিছু বলবে না তোকে..
দিয়া আর করা বাড়ালো না, জুসের গ্লাস হাতে রান্নাঘর থেকে ড্রইং রুমে এলো..আদি তখন সোফায় গা এলিয়ে চোখ বন্ধ করে বসে আছে..দিয়া নিঃশব্দে এসে দাড়ালো আদির সামনে, পর্যবেক্ষণ করতে লাগলো তার সামনে থাকা শ্যাম বর্ণের সুদর্শন পুরুষটিকে… কালো রঙের জগিং স্যুট গায়ে, হালকা ঘামে কপালে কিছু ছোটো চুলগুলো লেপ্টে আছে..ব্যস এতেই মারাত্মক লাগছে তাকে..খুব সহজে দিয়া আদিকে এইভাবে পর্যবেক্ষণ করার সুযোগ পায়না, আজকে পেয়েছে তাই হাতছাড়া করতে চায় না..তখনই হুট করে আদি চোখ খুলে দিয়াকে দেখে..দিয়াও কিছুটা হকচকিয়ে যায়, জুসের গ্লাস এগিয়ে বলে..
দিয়া — তোমার জুস..!
আদিত্য — তুই কেনো আনলি?
রান্নাঘর থেকে আদির মা বলে উঠলো..
শেফা — আমি পাঠিয়েছি ওকে, তোর জুস খাওয়া দরকার সেটা খা..কে পাঠালো সেটা দেখার দরকার কি?
আদি আর কিছু বলল না, দিয়ার দিকে এক নজর তাকিয়ে ওর হাত থেকে গ্লাস নিয়ে উঠে দাড়ালো সোফা থেকে.. তবে মায়ের কথা শুনে আদি বুঝতে পারলো গত রাতের কোনোকিছুই দিয়া বলেনি মাকে..গ্লাস হাতেই আদি ওপরে চলে যায়..দিয়াও ছোটো একটা নিঃশ্বাস ফেলে আবার রান্নাঘরে চলে আসে, আদির মায়ের পাশে দাঁড়ায়..আদির মা রান্না করতে করতেই বলেন..
শেফা — ভাবিস না তুই কিছু, অনেক সময় নতুন নতুন বিয়েতে এইরকম হয়.. আস্তে আস্তে দেখবি সব ঠিক হয়ে যাবে..
দিয়া একটু চুপ থেকে বললো..
দিয়া — অ্যান্টি, বলছিলাম যে আমি তো পরীক্ষার পর সোজা এখানে চলে এসেছি, বন্ধুরা একটু দেখা করতে চাইছে..আমি যাবো?
শেফা — হ্যা যা না..দেখা করে আয়, ভালো লাগবে তোর
দিয়া — তুমিও চলো না তাহলে আমার সাথে, আমি তো আগে মাকেও আমার সাথে নিয়ে যেতাম মাঝে মাঝে, এবার না হয় তুমি চলো
শেফা — আরে না না, আমি তোদের বন্ধুদের মাঝে গিয়ে কি করবো? উল্টে তোর বন্ধুরা আনইজি ফিল করবে.. তুইই বরং যা
দিয়া — ঠিক আছে!
.
.
পরীক্ষা শেষে সোজা দিয়া বাপের বাড়ী থেকে এই বাড়িতে চলে এসেছে, বন্ধুদের সাথে এক্সামের পর দেখা করার সুযোগই পায়নি..তাই আজকে সবাই মিলে প্ল্যান করেছে দেখা করতে যাবে..একটা হালকা আকাশী রঙের শাড়ি পরেছে আজকে দিয়া, যদিও শাড়ি পড়তে অভ্যস্ত না তবে মোটামুটি ক্যারি করতে পারে, বিয়ের আগে শিখেছিল আর কি.. আজকে বন্ধুদের অনুরোধে শাড়ি পড়ে নিয়েছে, ভারী সাজ কখনোই দিয়ার পছন্দ না, সবসময় সাধারণ ভাবে থাকতে পছন্দ করে, আজকেও তাই করেছে..ড্রেসিং টেবিলের আয়নায় সামনে দাঁড়িয়ে চুল আঁচড়াতে আঁচড়াতে দিয়ার হঠাৎ গত রাতের কথা মনে হলো, মুহূর্তেই মন খারাপ হয়ে গেলো বেচারির..মনে মনে নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করে ওঠে…
দিয়া — গত রাতে আমার ভুল কোথায় ছিল? কোনো অন্যায় তো করিনি আমি তারপরও কেনো ও এমন করলো আর আদিত্য আমাকে পছন্দ করেনা কেনো? আমার মধ্যে কি দোষ আছে?
চুল আঁচড়ে ছাড়া অবস্থাতেই একটা ক্লিপ দিয়ে সামনের চুলগুলো হালকা উচু করে বেঁধে নেয় দিয়া.. মনটা এখনও অন্যমনস্ক হয়ে আছে, এইটুকু একটা ব্যাপারে আদি ওকে থাপ্পড় মারবে সেটা ভাবতেই পারেনি বেচারি..মাথা থেকে কিছুতেই সরাতে পারছে না কথাটা..এরপর ড্রেসিং টেবিলের সামনে থেকে এসে দিয়া ফোন ধরে, ওর বন্ধু মেসেজ করেছে যে কখন বেরোবে, দিয়া মেসেজের রিপ্লাই দিয়ে বিছানার ওপর বসে, নিজের হ্যান্ডব্যাগ গুছিয়ে নেয়..কিন্তু মাথায় চিন্তাগুলো কিন্তু ঘুরছেই…তখনি হুট করে আদি রুমে আসে..একটু আগেই হসপিটালের জন্যে বেরিয়েছিল কিন্তু বাড়িতে ফোন ফেলে গেছে বিধায় সেটাই আবার নিতে এসেছে, তখন দিয়াকে দেখে ও..দিয়া নিজের ভাবনায় এতটাই মশগুল ছিলো যে আদিকে খেয়ালই করেনি..বিছানার সাইডে থেকে নিজের ফোনটা নিয়ে পকেটে ঢুকিয়ে আদি বলে ওঠে..
আদিত্য — হঠাৎ শাড়ি..? আমাকে ইমপ্রেস করার চেষ্টা নাকি?
আদির কথা শুনে দিয়া থতমত খেয়ে উঠে দাড়ায় বিছানা থেকে..আদির দিকে ঘুরে তাকায়, আদি ওকে দেখে ক্রাশ না খেলেও দিয়া আবার যেনো নতুন করে আদির ওপর ক্রাশ খায়..ব্ল্যাক শার্ট আর গ্রে প্যান্টে যেনো আজকে একটু বেশিই সুন্দর লাগছে ওকে, তার ওপর সামনের কিছু চুলে বামদিকের কপালের খানিকটা ঢেকে আছে, যার ফলে তাকে দেখতে আরো কিউট লাগছে..দিয়া আদির দিকে তাকিয়ে আছে তো আছেই তখন হঠাৎ আদি ওর দিকে এগোতে শুরু করে…
চলবে…