শুধু_তুমি_চাও_যদি 🥀 #পর্ব – ০৮

#শুধু_তুমি_চাও_যদি 🥀
#পর্ব – ০৮
#লেখনীতে – Aloñe Asha [ছদ্ম নাম]
#Kazi_Meherin_Nesa

ধমক শুনে ভয় পেয়ে যায় দিয়া, লোকটা এইভাবে যে কেনো বকছে বুঝতে পারছে না বেচারি, ও তো আর কোনো বড় অন্যায় করেনি..আদি দিয়ার এক বাহু ধরে ঝাকিয়ে বলে..

আদিত্য — তোমাকে আমি এতো করে বললাম বোঝালাম তারপরও..? আমার কথা কি শুনতে ইচ্ছে করে না তোমার নাকি তুমি চাও না আমি তোমার সাথে ভালোভাবে কথা বলি?

দিয়া — আদিত্য আমি তো..

আদিত্য — কি আমি তো..? স্পিক আপ, বাড়ি থেকে দূরে একটা দরকারি কাজে এসেছি আমি, সেখানে তুমি কি শুরু করলে এসব! ইচ্ছে করছে তোমাকে এখুনি বাড়ি পাঠিয়ে দিতে

অনেক রেগে কথাগুলো বলে আদি, আসলে কেউ কথা না শুনলে সেটা আদি মানতে পারে না,সেটা যে কেউই হোক তার ওপর তো দিয়াকে এতো ভালোভাবে বোঝালো তাও মেয়েটা ওর কথা শুনলো না..অবশ্য আদির এই রাগের পেছনে আরেকটা কারণ হলো ধ্রুব, কিন্তু সেটা প্রকাশ করতে পারছেনা ও..বাড়ি পাঠিয়ে দেবার কথা শুনে দিয়া অনুনয়ের স্বরে বলে..

দিয়া — আমি বাড়ি যাবো না..! প্লিজ!

আদিত্য — কেনো পাঠাবো না? তোমাকে এখানে রাখলে আমারই প্রবলেম হবে কারণ তুমি তো ঠিক করেই নিয়েছ আমি যেটাই বলবো তার উল্টোটা করবে

এতক্ষণ ধ্রুব চুপ ছিলো, আসলে ও এটাই চাইছিল যে দিয়াকে আদি বকুক তাহলে ও দিয়ার হয়ে কথা বলতে পারবে.. ও দিয়াকে ফিল করাতে চায় আদির থেকে ও বেশি ভাবে দিয়ার কথা..

ধ্রুব — দিয়া তোর কাছে ছোট্ট একটা আবদার করছিলো সেটা তুই ফুলফিল করিসনি তাই আমি করে দিলাম, এতে এরকম করার কি আছে?

এমনিতেই রেগে আছে তার ওপর ধ্রুবের কথা শুনে রাগ আরো বেড়ে যায়, তবে নিজের রাগ নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা আছে আদির, ও যথাসম্ভব স্বাভাবিক কণ্ঠেই বললো..

আদিত্য — আমি বুঝতে পারছি না তুই একটা ডাক্তার হওয়া সত্বেও সব জেনেও ওর অন্যায় আবদার মেটাতে গেলি কেনো? কি দরকার ছিলো?

ধ্রুব — আই নো আদি, তুই কেনো না করছিস সেটাও আমি জানি কিন্তু দিয়ার এতো ইচ্ছে হয়েছে সেটা পূরণ করতে হবে তো..শহরে ফিরে তো এসব পাওয়া যাবে না

দিয়া — ধ্রুব প্লিজ! আপনি আর ওকে বলবেন না কিছু.. ও আমার ভালোর জন্যেই বলছিলো, দোষ আমারই যে ওর কথা শুনিনি..! আদিত্য সরি..! আমি আর তোমার কথা অমান্য করবো না

আদিত্য — এখন আর বলে কি হবে, যা করার সেটা তো করেই দিয়েছ

আদি দিয়ার বাহু ছেড়ে দেয়, আসলে ও নিজেও জানেনা রাগটা আসলে হচ্ছে কার ওপর..দিয়ার ওপর, ধ্রুবের ওপর নাকি নিজের ওপর? কোনোদিন কোনো বিষয় নিয়ে এতটা কনফিউজড হয়নি আদি তবে আজকাল যেনো কিছু বিষয়ে কনফিউসন ক্লিয়ার করতেই পারছে না..নিজের রাগ ও নিয়ন্ত্রণ করা কষ্টসাধ্য হয়ে যায় ওর জন্যে.. দিয়ারও এখন মনে হচ্ছে যে ও একটু বেশিই অবাধ্য হয়ে গেছে..

দিয়া — আদিত্য, প্লিজ রাগ করো না আমার ওপর, আমি..আমি আর করবো না এমন প্লিজ!

দিয়া আদির হাতটা ধরতে যাচ্ছিলো কিন্তু আদি হাত সরিয়ে ফেলে, ভীষণ ডিসাপয়েন্ট হয়ে আছে ও এই মুহূর্তে..দিয়ার এটা ভালো লাগছে না, ওর যেনো মনে হচ্ছে আদি আবার সেই আগের মতো হয়ে যাচ্ছে..

দিয়া — আদিত্য, তুমি আমার ওপর রেগে আছো তো? বকো আমাকে আমি কিছু বলবো না কিন্তু প্লিজ রাগ করো না

আদিত্য — দিয়া প্লিজ লিভ মি..

দিয়া আদির প্রতি একটু বেশিই দুর্বল, আদি একটু রাগ করে কথা বলেছে এতেই দিয়া প্রায় কান্না করে দিলো বলে..ধ্রুব বুঝতে পারছে না দিয়াকে কিভাবে আদির ব্যাপারে ভুল বোঝাবে?

ধ্রুব — কিন্তু এসব তো আমার জন্যে হয়েছে..তাহলে যা বলার আমাকে বল ওকে তুই বকছিস কেনো আদি?

আদিত্য — আমাদের দুজনের মাঝে তুই কথা না বললেই আমি খুশি হবো ধ্রুব! প্লিজ লিভ আস..!

ধ্রুব — কিন্তু তুই ভুল করছিস, আবারও ভুল করছিস..নিজেই নিজের সাজানো জীবনটা নষ্ট করতে যাচ্ছিস! একটা সামান্য বিষয় নিয়ে দিয়ার সাথে ঝামেলা করাটা দেখছি তোর অভ্যাস হয়ে গেছে

আদিত্য — তো তুই এখন আমাকে শেখাবি যে আমি আমার ওয়াইফের সাথে কথা বলবো? তোর থেকে লেকচার শুনতে হবে আমাকে? (রেগে)

ধ্রুব — আমার সামনে তুই যদি ভুল করিস তাহলে তো আমাকে বলতেই হবে আদি..!

দিয়া এবার রেগে যায় ধ্রুবের ওপর..

দিয়া — আদিত্য আমাকে যা ইচ্ছে যখন ইচ্ছে বলতে পারে, আমার ওপর রাগ করার অধিকার আছে ওর তাই আপনাকে আমার হয়ে কথা বলতে হবেনা.. দোষ করেছি, তাই বকছে আমার এতে কোনো আফসোস নেই!

ধ্রুব — কিন্তু ও তো তোমাকে বিনা কারণেই..

দিয়া — সেটা আমি বুঝে নেবো, আপনি প্লিজ যান এখন এখান থেকে, বিষয়টা আর জটিল করবেন না

ধ্রুব আর কথা বাড়ালো না, ও চায়না দিয়া আর আদির বিষয় নিয়ে দিয়ার সাথে ওর কোনো ঝামেলা হোক, নাহলে ও যা চাইছে সেটা তো পন্ড হয়ে যাবে..ওখান থেকে সরে আসে ও..আদিও চলে আসতে যাচ্ছিল দিয়া তখন ওর এক হাত শক্ত করে চেপে ধরে..

আদিত্য — ছাড়ো আমাকে..! (রেগে)

দিয়া — সরি..!

আদিত্য — আমার ভালো লাগছে না এসব, হাত ছাড়ো..! আর হ্যা তোমাকে সরি বলতে হবেনা

দিয়া — অবশ্যই বলতে হবে, লাস্ট ২-৩ দিন ধরে তোমার মুড কতো ভালো ছিল, আজকে আমার জন্যে তোমার মুড স্পয়েল হয়ে গেলো

আদি টান দিয়ে হাত সরিয়ে আনতে যাচ্ছিলো তখন দিয়া ওর হাতটা আরো শক্ত করে ধরে ওর বাহুতে মাথা ঠেকিয়ে কোমল কণ্ঠে বলে..

দিয়া — আমি বুঝতে পারিনি তুমি এত রেগে যাবে, নাহলে আমি তোমার মানা করা কাজ জীবনেও করতাম না..বিশ্বাস করো!

আদিত্য — আমার মনে হয় তোমার ভালো চাইতে গিয়ে আমি তোমার ওপর জোড় করে এমনকিছু বিষয় চাপিয়ে দিচ্ছি যেটা আসলে তুমি করতে চাও না

দিয়া — না তো..! তুমি যা চাও যেভাবে চাও আমি সেটাই করব, কারণ আমি জানি আমার ভালোর ব্যাপারে তুমি আমার থেকেও বেশি ভাবো

আদি কিছু বললো না, রাগটা একটু ঠাণ্ডা হয়েছে আর কি কিন্তু এখনও কথা বলার ইচ্ছে হচ্ছে না..দিয়া ওকে চুপ দেখে আবার বলে ওঠে..

দিয়া — কি হলো গো? এখন কি কথাও বলবে না আমার সাথে?

আদিত্য — তোমার সাথে কথা বলা ছাড়াও অনেক কাজ আছে আমার, তোমার আর কি, একবার কথা শুরু হলে তো থামার নাম নেই

দিয়া — তুমি না এতো কিছু জানো তাহলে এটা জানো না যে চুপ করে থেকে নিজেকে ডিপ্রেসড করার থেকে বেশি বেশি কথা বলে নিজেকে খুশি রাখা ভালো?

আদিত্য — এটা তোমার মনে হয়, আমার না..!

আদি দিয়াকে সরিয়ে আসতে যাচ্ছিলো তখন..

দিয়া — আদিত্য, তোমার সমস্যাটা আসলে কোথায় সেটা কি আমাকে একটু বলবে?

ভ্রু কুচকে ঘুরে তাকায় দিয়ার দিকে আদি..

আদিত্য — মানে?

দিয়া — মানে তোমার রাগের কারণটা কি? আমি লক্ষ্য করেছি যখনই আমি আর ধ্রুব কথা বলছি অমনি তুমি তেড়ে চলে আসছো, সামান্য একটু খেজুরের রস এনেছে তাই নিয়ে এতো রাগারাগি?

আদি চুপ হয়ে যায়, সত্যি বলতে এতক্ষন ও নিজেই তো এই বিষয় নিয়ে ভাবছিল ওর রাগ আসলে কার ওপর কিন্তু সেটা নিজেই এখনও বুঝত পারেনি..তবে ও অবাক হয়েছে এটা দেখে যে দিয়া এই বিষয়টা এতো সহজেই বুঝতে পেরেছে যে আদির রাগের কারণের মধ্যে কোনোভাবে ধ্রুব জড়িয়ে আছে..

দিয়া — কি হলো? আমি কি ঠিক বললাম?

আদি আপাতত বিষয়টা এড়িয়ে যেতে চাইছে, ধ্রুবের বিষয়ে দিয়ার সাথে কোনো কথা বলতে চায় না ও..

আদিত্য — নাহ, সম্পূর্ন ভুল বললে..কারণ ধ্রুবের সাথে তুমি কথা বলবে এতে আমার প্রবলেম কেনো হতে যাবে?

দিয়া একটু এগিয়ে এসে দাঁড়ায় আদির সামনে, ভালোভাবে ওর মুখটা পর্যবেক্ষণ করে ওর মনের কথা বোঝার চেষ্টা করে..

দিয়া — সেটা তো তুমি ভালো বলতে পারবে তাইনা? তবে আমার মনে হয় আমি যেটা বলছি সেটা ভুল না, তোমার এই রাগের পেছনে ধ্রুব ও জড়িয়ে আছে

আদি দিয়ার থেকে চোখ ঘুরিয়ে অন্যদিকে তাকায়..

আদিত্য — সবটাই তোমার মনগড়া ভাবনা..!

দিয়া — আদিত্য, একটা কথা কি জানো? কিছু বিষয় আছে যেগুলো ছেলেদের তুলনায় মেয়েরা জলদি বুঝতে পারে আর আমিও বুঝেছি তোমার ধ্রুবকে নিয়ে সমস্যা আছে.. দেখো কোনো সমস্যা থাকলে সেটা বলো আমাকে, অযথা রাগারাগি করে কেনো নিজের মানসিক শান্তি নষ্ট করছো? আমাকে বললে আমি..

আদি কিছুটা বিরক্ত হয়ে দিয়ার দিকে তাকিয়ে বলে..

আদিত্য — ইউ নো হোয়াট? তোমাকে তো কিছু বলাই বেকার, কারণ তুমি তো সেটাই করবে যেটা তোমার ইচ্ছে, ফাইন, যা ইচ্ছে করো..আমার তোমাকে কিছু বলবো না..!

দিয়া — ঠিক আছে কিছু বলতে হবেনা, শুধু একটা কথা বলো..তোমার বিশ্বাস আছে তো আমার ওপর আদিত্য? ভরসা করো আমাকে তুমি?

আদি কোনো উত্তর না দিয়ে চলে আসে ওখান থেকে.. দিয়ার আজকে যেনো আদির কথা শুনে একটু বেশিই খারাপ লাগছে, কারণ রাত পোহালেই কালকে দিয়ার জন্মদিন, অনেক প্ল্যানিং ছিলো ওর কালকের দিনটা নিয়ে কিন্তু এখন তো সেসবের কিছুই হবেনা..! ধপ করে বাড়ির বারান্দায় বসে পড়ে দিয়া..! কান্না পাচ্ছে ওর..!

দিয়া — আদিত্য কোনো উত্তর কেনো দিলো না? ও কি আমাকে ভরসা করেনা নাকি ভরসা করে কিন্তু প্রকাশ করতে চায়না? লোকটা এমন কেনো? কেনো কিছু প্রকাশ করেনা আমার সামনে? (মনে মনে)

চোখে কোন গড়িয়ে পানি পড়ছিল, হাতের পিঠ দিয়ে ও সেটা মুছে ফেলে..মনটা একদম খারাপ হয়ে গেছে ওর..

দিয়া — এইতো দুদিন কতো ভালো ব্যবহার করছিলো আমার সাথে আবার কি হলো ওর? কেনো এরকম করছে? কোনো কারণ ছাড়া রাগ করছে না এই ব্যাপারে আমি নিশ্চিত কিন্তু কি সেই কারণ? সেটাও তো বলছে না আমাকে..! কোথায় ভাবছিলাম কালকে আমার জন্মদিনে আমি ওর থেকে কিছু চাইবো না উল্টে নিজেই ওকে সারপ্রাইজ দেবো, আর এখন তো দেখছি সেসবের কিছুই করা হবেনা আমার..!!

এগুলো ভেবেই বেচারির মন আরো বেশি করে খারাপ হয়ে যাচ্ছে, আদিও আর আসেনি ওর কাছে..ধ্রুব কথা বলার চেষ্টা করেছিল কিন্তু দিয়া ওকে এড়িয়ে যাওয়ায় আর কথা বলতে জোর করেনি..যথারীতি সময় মতো আদিরা নিজেদের ক্যাম্পে চলে যায়..
.
.
ক্যাম্পের কাজে মন দিয়ে আদি সকালের কথা কিছুটা হলেও ভুলে গেছিলো, সারাদিন আর দিয়ার দেখা পায়নি ও..বিকেলে ক্যাম্পের কাজ মিটিয়ে নেয় ওরা, কালকে তো আবার ফিরতে হবে..

আদিত্য — আমরা যা যা ইকুইপমেন্ট এনেছি সব দেখে গুছিয়ে নিয়ে নিতে হবে, কিছু আবার ভুল করে রেখে যাওয়া যাবেনা যেনো

ধ্রুব — আমি সব চেক করে নিয়ে নেবো, ডোন্ট ওয়ারি..!

সিমি — সত্যিই স্যার, আমি তো এই প্রথম এলাম..এক্সপিরিয়েন্স ভীষণ ভালো ছিল, থ্যাংক ইউ আমাকে এই টিমে শামিল করার জন্যে

আদিত্য — এখানে ধন্যবাদের কিছু নেই ডাক্তার সিমি, সবারই শেখার দরকার আছে আর সুযোগ সবাই পাবে, আপনিও পেয়েছেন..! এনিওয়ে আপনারা সব গুছিয়ে নিন, বিকেল হয়ে গেছে (হেসে)

সিমি — জী স্যার..!

ওরা সবাই গোছানোর কাজ শুরু করে, আদি তখন ওর ফোন বের করে দেখে দিয়ার না তো কোনো ফোন এসেছে না ম্যাসেজ, কিছুটা অবাক হয় ও..আবার কিছুটা অনুশোচনা ও হচ্ছে, মেয়েটাকে একটু বেশিই কথা শুনিয়ে দিয়েছিল না সকালে..?

আদিত্য — দিয়াকে একটু বেশি বকাবকি করে ফেলেছি আজকে, লাস্ট কিছুদিন তো ওর সাথে নরমাল বিহেভ করছিলাম, আজকে আমার এরকম করাটা ঠিক হয়নি..! আমার ওকে সরি বলা উচিত!

যদিও আদির ফোনে বেশিরভাগ কল দিয়ার থেকেই এসেছে তবে এই প্রথম আদি নিজেই কল করে দিয়াকে..

আদিত্য — অদ্ভুত তো, দিয়া ফোন ধরছে না কেনো? মনে হচ্ছে আমার ওপর একটু বেশিই রেগে আছে..অবশ্য ভুল আমারই, ধ্রুবের ওপর রাগটা আমি ওর ওপর দেখিয়ে দিয়েছি..কিন্তু ধ্রুবের ওপর আমার রাগ কেনো হচ্ছে? (মনে মনে)

মনে মনে এসব ভাবতে ভাবতেই আবারও দিয়ার নাম্বারে কল করে ও কিন্তু ফোন বেজেই যাচ্ছে দিয়ার ফোন ধরার খবর নেই..প্রায় ২-৩ বার ফোন দেয় কিন্তু ফোন ধরেনি ও..! কেমন একটা খটকা লাগে আদির কাছে..

আদিত্য — দিয়া আবার একটু বেশি আপসেট হয়ে গেলো নাকি? ফোন বাজছে অথচ ধরছে না? আমি ফোন করলে তো সঙ্গে সঙ্গে ধরে (মনে মনে)

ক্যাম্প থেকে ওই ভাড়া নেওয়া বাড়ির দূরত্ব প্রায় ৫ মিনিটের তো আদি আর দেরি না করে বাড়ি চলে আসে..কিন্তু দিয়াকে পেলো না ওখানে..পুরো বাড়ি খুঁজলো নেই ও, বাড়িতে আর কোনো মানুষ ও নেই যে জিজ্ঞাসা করবে দিয়ার কথা..অস্থির লাগছে এবার, চিন্তা হচ্ছে আদির..

আদিত্য — দিয়া তো বাড়িতে কোথাও নেই, গেলো কোথায় ও..?

আদি আবার ফোন করে দিয়াকে কিন্তু সেই একই ব্যাপার, ফোন ধরছে না..ততক্ষণে সিমি আর পলাশ ফিরে এসেছে জিনিসপত্র নিয়ে..আদি হন্তদন্ত হয়ে সিমির কাছে এগিয়ে আসে..

আদিত্য — ডাক্তার সিমি, দিয়াকে দেখেছেন?

সিমি — স্যার আমি তো দেখিনি ওনাকে, ইন ফ্যাক্ট অনেকক্ষণ হলো দেখিনি, সেই সকালেই দেখেছিলাম তারপর তো আমরা ক্যাম্পেই ছিলাম..ডাক্তার পলাশ আপনি দেখেছেন কি?

পলাশ — না তো..! আমরা সবাই তো একসাথেই ছিলাম কিন্তু ম্যাডাম তো ছিলেন না..!

আদিত্য — হোয়াট? দেখেননি আপনি ওকে? তাহলে দিয়া কোথায় গেলো..! বাড়িতে নেই, ক্যাম্পেও তো ছিলো না

এবার তো আদির মাথায় যেনো আকাশ ভেঙে পড়ে, ভয় পেয়ে যায় ও..মেয়েটা গেলো কোথায়? তার ওপর সন্ধ্যা হয়ে আসছে, গ্রাম এলাকায় কোথায় খুঁজবে দিয়াকে? আদির এবার ভয় হচ্ছে, সকালে দিয়ার সাথে রাগারাগি করেছিলো সেই জন্যে দিয়া আবার কোথাও চলে গেলো না তো?

ধ্রুব — কি হয়েছে, সবাই এভাবে দাড়িয়ে কেনো? কোনো ইম্পর্ট্যান্ট কথা হচ্ছে নাকি?

সিমি — দিয়া ম্যাডামকে পাওয়া যাচ্ছে না

সঙ্গে সঙ্গে ধ্রুব আদির দিকে তাকায়, চিন্তায় আদির মুখটা একটুখানি হয়ে গেছে..কিন্তু ধ্রুব ভাবছে যে ও যাওয়ার পর আদি দিয়ার সাথে হয়তো আরো রুড বিহেভ করেছে যার জন্যে দিয়া আপসেট হয়ে চলে গেছে কোথাও

ধ্রুব — কংগ্রাচুলেশন রে আদি..! তোকে জ্বালানোর মানুষটা মনে হয় এবার পার্মানেন্টলি চলেই গেলো!

ধ্রুবের বলা এইটুকু কথা যেনো আদির কানে শিকের মতো গিয়ে বিধলো, রক্তলাল চোখে ধ্রুবের দিকে তাকায় ও, ধ্রুব আরো কিছু বলতে যাচ্ছিল তার আগেই ক্ষিপ্রগতিতে এসে আদি ধ্রুবের কলার দু হাতে চেপে ধরে..এমনভাবে কলার চেপে ধরেছিল যেনো ধ্রুবের শার্টের কলার না বরং ওর গলাটাই চেপে ধরেছে…এরপর মারাত্মক রাগী কণ্ঠে আদি বলে ওঠে..

আদিত্য — এতো বড় কথা বলার সাহস কিভাবে পেলি তুই ধ্রুব..! হাউ ডেয়ার ইউ!

পরিস্থিতি বেগতিক দেখে পলাশ ছাড়ায় আদিকে ধ্রুবের থেকে..!

পলাশ — স্যার, ছাড়ুন! কন্ট্রোল করুন নিজেকে, ম্যাডামকে আমরা ঠিক খুজে বের করবো

আদিত্য — খুজে তো বের করতেই হবে, পলাশ সিমি আপনারা যান, আশেপাশে গিয়ে দেখুন..

সিমি — এখুনি যাচ্ছি স্যার! আপনি চিন্তা করবেন না..!

পলাশ আর সিমি দেরি না করে জিনিসপত্র রেখে জলদি বেরিয়ে পড়ে দিয়াকে খুঁজতে..আদি রাগান্বিত দৃষ্টিতে একবার ধ্রুবকে দেখে যেতেই যাচ্ছিলো দিয়াকে খুঁজতে তখন ধ্রুব তাচ্ছিল্যের সুরে বলে ওঠে..

ধ্রুব — এইটুকু একটা সত্যি শুনে খারাপ লাগলো? ওর সাথে যে এতদিন ধরে তুই অবিচার করছিস, মেয়েটাকে কষ্ট দিচ্ছিস তখন এই চিন্তা হয়নি তোর?

ধ্রুবের কথাটা বলতে দেরি, কিন্তু আদির পাঞ্চ খেতে দেরি হয়নি ওর..সঙ্গে সঙ্গে আদি পেছনে ঘুরে নিজে সর্বশক্তি দিয়ে ধ্রুবের মুখ বরাবর পাঞ্চ করে..নাকেও লেগেছে অনেকটা বিধায় সঙ্গে সঙ্গে কিছুটা রক্ত বেরিয়ে আসে ধ্রুবের নাক থেকে..আদি আবার ওর কলার চেপে ধরে, রাগের তীব্রতার দরুন ঘন নিঃশ্বাস পড়ছে ওর..

আদিত্য — জাস্ট শাট আপ ওকে, জাস্ট কিপ ইউর মাউথ শাট..! আর একটা কথা বলবি না তুই দিয়াকে নিয়ে..আমাদের মধ্যে সব নরমাল চলছিল কিন্তু এইযে আজ যা হলো এইসবের জন্যে তুই রেসপনসিবল..তুই প্রোভক করেছিস যার জন্যে আমি তখন দিয়ার সাথে ঐরকম বিহেভ করেছি

ধ্রুব — আমি কিছু জন্যে দায়ী না, দায়ী তুই কারণ হলো ট্রাস্ট ইস্যু..দিয়াকে তুই ট্রাস্ট করিস না, তুই ওর কেয়ার করিস না এটাও আমি জানি তাহলে আজকে হঠাৎ এত্তো টেনশন? আমাকে মারছিস তুই? হুয়াই আদি?

চলবে…

[ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন..!!]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here