#একা_তারা_গুনতে_নেই
— লামইয়া চৌধুরী।
পর্বঃ ৭
আশরাফ মুনিরাকে শান্ত করতে ওর কাঁধে হাত রাখল, “দয়া করে, আমার কথা শুনো।”
মুনিরা ত্বরিত আশরাফের হাত সরিয়ে দিল, “ছুঁবে না আমায়।”
আশরাফ ছটফট করে উঠল, “ভুল বুঝছ আমায়। ও মিথ্যে বলছে।”
“ও ত কিছু বলেনি। যা দেখার আমার চোখ দেখেছে। যা বুঝার আমি বুঝেছি।”
আশরাফ মুনিরার দিকে এগিয়ে গেল। মুনিরা আশরাফের বুকে দু’হাতে ধাক্কা দিয়ে দূরে সরিয়ে কাঁদতে কাঁদতে ছুটে বেরিয়ে গেল। আশরাফ কড়ির দিকে অগ্নিদৃষ্টি ছুঁড়ে দিলো, “আমি তোমাকে ছাড়ব না, কড়ি। আই ওন্ট স্পেয়ার ইউ।” “আপনার উপর শান্তি বর্ষিত হোক।” কড়ির ঠোঁটের কোণায় স্মিত হাসি।
আশরাফ দাঁতে দাঁত পিষল। আঙুল তুলে বলল, “তোমাকে আমি পড়ে দেখ নিব।”
তারপর মুনিরার পিছন পিছন ছুটে বেরিয়ে গেল। মুনিরাকে যে কোনো মূল্যে বুঝাতে হবে এসব মিথ্যা, বানোয়াট। কিছুই সত্য নয়। প্রাণটা হাতে নিয়ে সিঁড়ি দিয়ে তরতর করে নামল সে। মুনিরা একদম শেষ সিঁড়িটায় বসেছিল। ওর পা চলছে না। পাগুলো সর্বশক্তি হারিয়ে এখানেই পড়ে রয়েছে। শরীরটা বয়ে নিয়ে যাওয়ার অবস্থাতেও সে আর নেই। রেলিং এ মাথা ঠেকিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে সে। চোখের কোলে জলের অভাব না থাকলেও বুকের ভেতর ফেটে চৌচির। আশরাফ গিয়ে মুনিরার সামনে হাঁটু ভেঙে বসল। দু’হাতে মুনিরার মুখটা তুলে ধরে চোখে চোখ রাখল, “বিশ্বাস করো মুনিরা, দয়া করে বিশ্বাস করো। প্লিজ বিশ্বাস করো। দোহাই লাগে বিশ্বাস করো।”
আশরাফের জ্বরমাখা উষ্ণ হাতের ছোঁয়ায় মুনিরা যেন আরো পুড়ে গেল। পুড়ে ছাই হয়ে গেল। ওর হাত সরিয়ে টলতে টলতে উঠে দাঁড়াল। কাঁচি গেইটটার দিকে এগিয়ে গিয়েই পড়ে গেল। আশরাফ উঠাতে সাহায্য করতে চাওয়ায় বলল, “প্লিজ দূরে থাকো।”
আশরাফ সর্বশক্তি দিয়ে গেইটটায় একটা লাথি বসাল। এরপর সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠল আবার। বাসায় গিয়ে কড়িকে বলল, “এই মেয়ে শুনো রামিম কোথায় আমি জানি না। তবে ওর বাড়ির ঠিকানা আমি তোমায় দিতে পারি।”
“আমাকে রামিমের কাছে নিয়ে চলো, আশরাফ।”
আশরাফ গলা ফাঁটিয়ে চেঁচিয়ে উঠল, “ডোন্ট কল মি আশরাফ। সে আশরাফ ভাইয়া।”
“পৃথিবীতে আপনিই বোধহয় একমাত্র ছেলে যে কিনা কেঁদেকেটে ভাইয়া শুনতে চাইছেন।” কড়ি হেসে ফেলল।
“এক থাপ্পরে সব হাসি বের করে দিব বেয়াদব মেয়ে।”
“ভদ্রভাবে কথা বলুন।” কড়ি সতর্ক করে দিলো।
আশরাফ হাত মুঠো করে আত্মসংবরণ করল। তারপর অনুনয়ের গলায় বলল, “কড়ি, লিসেন টু মি। তুমি আমায় মেরে ফেললেও আমি ওর খবর দিতে পারব না। কারণ আমি সত্যি বলছি সে কোথায় জানি না।”
কড়ি আশরাফের দিকে কেমন করে যেন তাকাল। বিশ্বাস হলো কথাটা। তাই বলল, “এড্রেস লিখে দিন।”
“তুমি আগে মুনিরাকে সব সত্য বলো।”
“আগে ঠিকানা তারপর বাকিসব।”
“পরে যদি তুমি ওকে সত্য না বলো?”
“কথা দিলাম বলব।”
আশরাফ মোবাইল বের করে ঠিকানাটা মেসেজ করল কড়িকে। কড়ি মেসেজটা চেক করে বলল, “যদি ঠিকানা ভুল হয় তবে আমার চাইতে খারাপ আর কেউ হবে না, আশরাফ ভাইয়া।”
“ভুল না।”
“মুনিরা আপু কোথায়?”
“নীচে।”
কড়ি দ্রুত নীচে নামল। কড়ির পেছন পেছন আশরাফও নামল। মুনিরা নীচে নেই। আশরাফ গেইট থেকে বেরুলো। মুনিরা রিকশায় উঠে গেছে। আশরাফ লাফ দিয়ে রিকশায় মুনিরার পাশে উঠে বসে মুনিরা হাত চেপে ধরল। মুনিরা তেলেবেগুনে জ্বলে উঠল। কিছু একটা বলতে যাবে তার আগেই কড়ি ওকে থামিয়ে দিয়ে বলল, “স্যরি আপু। আমি আসলে আশরাফ ভাইয়ার বন্ধু রামিমের এক্স। রামিমের সাথে বাসা থেকে পালিয়েছিলাম। রামিম আমার গয়নাগাটি নিয়ে আমাকে ফেলে চলে গিয়েছে। ওকে খুঁজছি আমি। আশরাফ ভাইয়ের কাছ থেকে ওর ঠিকানা আদায় করতে বাধ্য হয়ে এসব করেছি। আপনি আশরাফ ভাইয়াকে ভুল বুঝবেন না। উনি সত্যি বলছেন। আপনার জন্যে উনি সমগ্র ছেলে জাতির বিপক্ষে গিয়ে ভাইয়া ডাক শুনবার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছিলেন। আপনাদের একসাথে ভালো দেখায়। সবসময় একসাথে থাকুন। তবে চোখে চোখে রাখবেন। সঙ্গদোষে লোহা ভাসে। রামিমের মতন অসভ্যদের সাথে মিশতে দিবেন না।”
একটানা কথাগুলো বলে কড়ি ঘুরে হাঁটা শুরু করল। রোদ বাড়ছে। চোখে, মুখে রোদ হুমড়ি খেয়ে পড়ছে বলে কড়ি ভ্যানিটি ব্যাগ থেকে সানগ্লাসটা বের করে চোখে দিলো। মুনিরা হা করে সেদিকে তাকিয়ে আছে। সে থ বনে গেছে।
দীপা তাড়া দিলো, “এরপর? এরপর?”
“এরপর আর কী?”
কড়ি জানালার ধার থেকে সরে এলো। দীপা উদগ্রীব হয়ে বলল, “আরে এরপর রামিমের বাড়ি যাওয়ার পর কী হলো?”
“সে এক বিশাল কাহিনী। পড়ে একদিন বলবনে তোমায়। এখন ইচ্ছে করছে না।”
“উফ আমার এখনি শুনতে ইচ্ছে করছে।”
“পরে শুনো, সুন্দরী।”
“না, না এখনি।” দীপা ঘ্যানঘ্যান করতে লাগল। তবুও শেষ পর্যন্ত সে কড়িকে কড়ির ইচ্ছের বিরুদ্ধে একটি কথাও বলাতে পারল না। কড়ি একসময় বলল, “আচ্ছা বলব তবে একটা শর্ত আছে।”
“কী শর্ত?” দীপা অস্থিরতার শেষ সীমানায় পৌঁছে গেছে। কোনো কথা অর্ধেক শুনে বাকিটা আর জানতে না পারলে ওর জীবনে অক্সিজেনের ঘাটতি ঘটে। শ্বাস নিতেও কষ্ট হয়।
“তাহমিদ এর সাথে জড়িয়ে থাকা সবকিছু এখন এই মুহূর্তে আমার সামনে তোমার পুড়িয়ে ফেলতে হবে। ওর ছবি থেকে শুরু করে সব।”
দীপা ধপ করে নিভে গেল। গাল ফুলিয়ে ফেলল চট করে। তবে জানবার ইচ্ছা আর দমিয়ে রাখতে পারল না। বলল, “আচ্ছা এসো পুড়িয়ে ফেলি।”
কড়ি দেখলো দীপা ড্রেসিংটেবিল এর লক খুলে একটা বড় কাঠের বাক্স বের করল। কড়ি বাক্সের মুখ খুলে দেখল বিভিন্ন ডিজাইনের কানের দুল, মালা, চুড়ি, ব্রেসলাইট দিয়ে বাক্স বোঝাই করা। দীপাকে প্রশ্ন করল, “এগুলো সব গিফ্টস?”
“হ্যাঁ, ও দিয়েছিল। আরো আছে।” বলেই আলমারির নীচের তাকে রাখা কম্বলের নীচ থেকে একটা আইস্ক্রিমের বক্স বের করল। কড়ি বলল, “এটায় কী?”
“ওর আর আমার ছবি। আমি ছবি তুলতে প্রচন্ড ভালোবাসি আর ওয়াশ করাতেও। আইস্ক্রিমের বক্সে রেখেছি যেন কেউ দেখতে না পায়।”
সে বক্স খুলে ছবিগুলো উল্টে মেঝেতে ফেলল। এরপর ম্যাচের বক্সে দেশলাইকাঠি ঘষে আগুন জ্বালল। কাঠিটা ছবিগুলোর উপর ফেললেও আগুন জ্বলছে তার বুকে। দীপা কাঁদছিল খুব। কড়ি স্বান্তনা দেবার ভঙ্গিতে দীপার পাশে দাঁড়িয়ে দীপার কাঁধ চেপে ধরল। আর তখনি তার চোখ আটকে গেল আগুন ধরে যাওয়া একটা ছবিতে। দীপাকে ছেড়ে দিলো সাথে সাথে। ঝুঁকে পড়ে ছবিটা হাতে তুলে নিলো। চোখ বড় বড় হয়ে কোটর ছেড়ে বেরিয়ে আসার দশা হলো প্রায়। ভ্রু কুঁচকে অবিশ্বাসের গলায় বলল, “এ কে?”
দীপা বলল, “যার জন্য মরতে বসেছিলাম সে।”
আগুনের আঁচে কড়ির হাত জ্বলছিল তবুও ছবিটা কিছুতেই ছাড়তে পারল না। শেষে যখন একদম আগুন আঙুলে পৌঁছে যাচ্ছিল তখন হাত ফসকে পড়ে গেল ছবিটা। কড়ি কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছে না।
চলবে…
★অটোগ্রাফ সহ আমার ২য় বই “যে শ্রাবণে ফাগুন” এর প্রি-অর্ডার চলছে….
★প্রি- অর্ডার লিঙ্কঃ
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=882805749142024&id=100022378217757
ফোনে অর্ডার করুন- ১৬২৯৭ এই নাম্বারে।