#একা_তারা_গুনতে_নেই
— লামইয়া চৌধুরী।
পর্বঃ ৫৯
মিলার পরপর দুটো প্রাইভেটের মধ্যে এক ঘণ্টার গ্যাপ ছিল। আবার বাসায় না গিয়ে এক ঘণ্টা আগেই সে পরবর্তী প্রাইভেটে এসে পড়ল৷ অন্য একটা ব্যাচের পড়া চলছিল বলে সে উপর তলায় ছাদে উঠার সিঁড়িতে উঠে বসে রইল। কয়েকটা সিঁড়ি উপরে অভ্র বসেছিল একদম ছাদ বন্ধ করা গেইটটার কাছে। দুপুরের রোদ আর অভ্র মুখোমুখি। ওর নিশ্চয়ই এমন কিছুই হবে। মিলা ব্যাগ থেকে বই খুলে কোলের উপর রেখে গুনগুন করে পড়তে লাগল। পড়ার তালে তালে দুলছে ও। অভ্র ভ্রু কুঁচকে বলল, “তুমি কি সারাক্ষণ’ই পড়ো?”
মিলা ঘাড় ঘুরিয়ে তাকাল, “থ্যাঙ্কস।” তারপর আবার বইয়ে ঝুঁকে পড়তে শুরু করল। অভ্র বিস্মিত হয়ে বলল, “কিসের থ্যাংঙ্কস?”
মিলা আবার ফিরে তাকিয়ে ধীর গলায় বলল, “সবসময় পড়ি বলায় থ্যাঙ্কস বললাম।”
অভ্র ভাবুক হয়ে চেয়ে বলল, “এটা তো কমপ্লিমেন্ট না। প্রশ্ন?”
“ও। মনে হয় পড়ি।”
অভ্র মাথা ঝাঁকাল৷ আগের ব্যাচের ছুটি হয়ে গেলে মিলা উঠে দাঁড়াল। কাঁধে ব্যাগ, হাতে বই নিয়ে সে সিঁড়ি দিয়ে সাবধানে নেমে গেল। অভ্র উঠল না। মেয়েরা সামনে বসার পর তারপর ছেলেদের বার জায়গা। এখন গেলে বারবার উঠে মেয়েদের সামনে বসবার জায়গা দিতে হবে। তারচেয়ে শেষে যাওয়া ভালো। সে রোদ আর ছায়া দেখছিল। হঠাৎ মিলা আবার উঠে এল। অভ্র জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকাল, “কি হয়েছে নীচে?”
মিলা খানিক আমতা আমতা করে বলল, “আমার ছোট্ট একটা হেল্প লাগবে।”
বিস্ময়ে অভ্রর চোখ বড় বড় হয়ে গেল, “পড়াশুনার বিষয়ে?”
“না।”
অভ্র মাথা ঝাঁকিয়ে বলল, “আমিও তো বলি পড়াশুনার হেল্প কেন লাগবে তোমার!”
মিলা একটু কেশে বলল, “ছুটির সময় তুমি সবার জুতায় পাড়া দিয়ে ময়লা করে দৌড়ে নামো। প্রায়দিন আমাদের জুতার উপর জুতা পায়ে দাঁড়িয়েও থাকো। জুতা ময়লা হয়ে গেলে বাজে দেখায়৷ একটু খেয়াল করে নেমো।”
অভ্র বলল, “তোমার জুতা কোনগুলো দেখি।”
মিলা তার সাদা লংস্কার্ট খানিক উঁচিয়ে ধরল। অভ্র জুতার চেয়ে বেশি দেখল মিলার পায়ের পাতা। পায়ের পাতায় ছোট্ট তিল।
.
ব্যাংকে শিল্পীর কাছে একজন গ্রাহক ঋণ নেবার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে উঠে গেলেন। আরেকজন চলে আসবার আগেই শিল্পী কম্পিউটার স্ক্রিনে চোখ রেখেই ডাকল, “জুয়েল সাহেব।”
জুয়েল সাহেব পাশের ডেস্ক থেকে ভয়ে ভয়ে তাকালেন, “জি বলুন।”
শিল্পী বলল, “আপনার বন্ধু যাকারিয়া সাহেবের নাম্বারটা আছে?”
জুয়েলের আতঙ্কিত চেহারা মুহূর্তেই আলোকিত হলো। তিনি আগ্রহ নিয়ে বললেন, “জি, জি আছে তো। লাগবে নাকি?”
শিল্পী ক্লান্ত ভঙ্গিতে কিছু কাগজে সিল মারতে মারতে বলল, “লাগবে বলেই তো বললাম।”
জুয়েল সাহেব আন্তরিক ভঙ্গিতে নিজের সবকাজ ফেলে রেখে রঙিন কাগজ নিলো। কমলা একটা ছোট কাগজে নীল কলমের কালিতে যাকারিয়া সাহেবের নাম্বার লিখে শিল্পীর দিকে বাড়িয়ে ধরল। শিল্পী কাগজটা হাতে নিয়ে হাসল। পরিস্কার গলায় সাবলীলভাবে বলল, “জুয়েল সাহেব, আপনি ভালো মানুষ।”
জুয়েল সাহেব দু’হাত গুটিয়ে একদম লজ্জিত হয়ে গেলেন। জিহ্বে কামড় বসিয়ে মাথা নাড়তে নাড়তে বললেন, “কি যে বলেন!”
.
কড়ি খাতা কলম নিয়ে বসল। মুবিনকে সে যতটা সহজ ভেবেছিল ততটা সে নয়। ছেলেটা প্রখর বুদ্ধিসম্পন্ন। অপরিপক্ব তীক্ষ্ণ বুদ্ধিসম্পন্ন মুবিনের সাথে কথা বলার আগে কড়ি খাতার মাঝখানে একটা লাইন টানল। একপাশে সে কি কি বলবে সেগুলোর বুলেট পয়েন্টগুলো লিখল। অন্যপাশে লিখল মুবিনের কথা বলার ধরন এবং তার সাথে কথা বলার সময় যে যে বিষয়ে দৃষ্টি রাখতে হবে সে বিষয়গুলো। তারপর সময় নিয়ে এক কাপ চা খেয়ে মুবিনকে কল করল।
চলবে…
★আজকের পর্ব অনেক ছোট হয়েছে জানি। তবে রেগুলার দিতে চাইছি বলেই ছোট হলেও দিয়ে দিতে হলো। আগামীকাল বড় পর্ব দিব ইনশাআল্লাহ।
অটোগ্রাফসহ আমার পাঠকদের বহুল প্রতীক্ষিত উপন্যাস, আমার তৃতীয় বই “একটুখানি” এর প্রি- অর্ডার চলছে। (প্রি-অর্ডার চলবে ২০ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত।)
★প্রি- অর্ডার লিঙ্কঃ
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=1127224604700136&id=100022378217757