একা_তারা_গুনতে_নেই — লামইয়া চৌধুরী। পর্বঃ ৫৬

#একা_তারা_গুনতে_নেই
— লামইয়া চৌধুরী।
পর্বঃ ৫৬
ইমাদ খেতে খেতে মুবিনকে কি কি বলা যেতে পারে গুছিয়ে নিলো। খাবার শেষ করে বলল, “থ্যাংক্স।”
মুবিন চিবিয়ে চিবিয়ে বলল, “আচ্ছা।”
ইমাদ মুবিনকে ইশারায় এ ঘরের অন্য বাসিন্দা আলিকে দেখাল। ফিসফিস করে বলল, “আলি ভাই। বাইরে যাবে? তোমার যদি সমস্যা না থাকে।”
মুবিন হামি তুলে এবারেও বলল, “আচ্ছা।”
ইমাদ উঠেও মুবিনের জন্য দাঁড়িয়ে রইল। মুবিন বসে পা নাচাতে নাচাতে আরো একটু ভাবল। এরপর ধীরে সুস্থে উঠে দাঁড়াল। ইমাদ নিজে আগে না গিয়ে মুবিনকে সামনে হাঁটতে দিলো। কোথায় দাঁড়িয়ে কথা বলবে কিছুই বলল না। সবটা মুবিন আর তার ইচ্ছার উপর ছেড়ে দিলো। মুবিন সিঁড়িতে বসে বলল, “কথা প্যাঁচাবেন না।”
ইমাদও মুবিনের পাশে সিঁড়িতে বসল। মুবিন ইমাদের দিকে তাকিয়ে রইল। ইমাদ তাকাল না। সে অন্ধকার গেইটের দিকে চেয়ে বলল, আমাকে বেশ কমাস ধরে একটা মেয়ে অনবরত মেসেজ করে। কলও করে। মেয়েটা কে আমি এখনও জানি না। এটা নিয়েই আমার গার্লফ্রেন্ডের সাথে আমার ঝামেলা।”
বিরতি নিয়ে ইমাদ মুবিনের দিকে তাকাল। মুবিন ঠোঁট উল্টে মাথা নাড়তে নাড়তে বলল, “আচ্ছা।”
ইমাদ বলল, “আমার গার্লফ্রেন্ড এখন আমাকে সন্দেহ করে।”
“মিচকা শয়তান বলে?” মুবিন ঠ্যাশ দিয়ে বলল।
ইমাদ আহত হলো। তবুও জোর করে ঠোঁটে হাসি টেনে এনে বলল, “আজকে আবার তোমার সাথের মেয়েটাকে বাসায় পৌঁছে দিয়ে আরো বিপদে পড়েছি।”
“বাসায় পৌঁছে দিয়েছেন?”
“হাত দিয়ে রক্ত ঝরছিল।”
আচ্ছা।” মুবিন লম্বা করে মাথা নাড়াল।
ইমাদ দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, “এখন আমাকে উদ্ধার করো।”
মুবিন বিরক্ত মুখে চেয়ে রইল। ইমাদ না চাইতেও বলল, “আমি ওকে বলেছি আমি মেয়েটাকে চিনি না। তোমার সাথে ঝগড়া বাঁধায় এগিয়ে গিয়েছি। বিশ্বাস করছে না। তোমার সাথে কথা বলতে চায়।”
মুবিন আবার হামি তুলল। ইমাদ বলল, “তোমার ঘুম নষ্ট করলাম।”
“জি।” উঠে দাঁড়াল সে। দুমদাম করে সিঁড়ি বেয়ে উঠতে শুরু করল। ইমাদও উঠে দাঁড়াল। আবার বলল, “ও তোমার সাথে কথা বলতে চায়।”
মুবিন না থেমে বলল, “আচ্ছা।”
ইমাদ ভ্রু কুঁচকে বলল, “আচ্ছা মানে কি হ্যাঁ নাকি না?”
“ভাবুন, ভাবুন। আচ্ছা মানে কি ভাবতে থাকুন।” মুবিন টগবগ করে চলে গেল।
ইমাদ পড়ে গেল মুশকিলে। নীচে গিয়ে কড়ির সাথে কথা বলল। কড়ি শুনে শব্দ করে হেসে ফেলল। পরে বলল, “ছেলেটাকে আমার খুব পছন্দ হয়েছে।”
“আমাকে ভুগাল বলে?”
কড়ি রহস্য করে বলল, “কি মনে হয়?”
ইমাদ কথা ঘুরিয়ে বলল, “ও কথা বলবে বলে মনে হয়?”
“এখনও বলা যাচ্ছে না।”
ইমাদ চিন্তায় পড়ে গেল। এই আচ্ছা মানে কি কথা বলবে নাকি বলবে না? তখনও দুজনের কানে ফোন ধরা। কড়ি হঠাৎ বলল, “কথা বলবে।”
“কেন মনে হলো?”
“খুব সোজা৷ বলব?”
“জি।”
“গোলাপের পাঁপড়ি গুণে বের করেছি।” বলে সে আবার হেসে ফেলল।
ইমাদ বলল, “পাঁপড়িগুলো ছিঁড়ে ফেলেছেন?”
“কষ্ট হলো?”
ইমাদ বলল, “গোলাপ তো আমার দেওয়া নয়। কষ্ট কেন পাব?”
“গোলাপ আপনার দেওয়া নয় এটাই তো কষ্ট।”
“আচ্ছা।”

পরদিন ভোরে ইমাদ গেল ফুলের দোকানে। শুধু শুধু টাকা জলে ফেলে এক মুঠো গোলাপ কিনল। কড়িকে দেওয়ার জন্য নয়। পাঁপড়ি ছিঁড়ে গুণে দেখবে সে। কড়ির গয়না দিতে পারবে নাকি পারবে না পরখ করার জন্য। সেই ভোরেই কড়ি বেরুলো বইয়ের দোকানে। ঢাকা শহরের বইয়ের দোকানগুলোর আনাচকানাচে সে কিশোরকিশোরীদের উপর লেখা বিভিন্ন সাইক্যোলজির বই, ম্যাগাজিন, খুঁজতে লাগল।
.
রিমা দরজা খুলে একগাল হাসল, “এতদিন কোথায় ছিলে? ভুলেই গেলে মনে হলো।”
তাহমিদ বলল, “এখন কি তাই শাস্তি দিবে? ভেতরে আসতে দিবে না?”
রিমা সরে বলল, “এসো ভাই এসো।”
দীপা শ্বশুরকে সকালের নাশতা দিচ্ছিল। ওড়নায় হাত মুছে আসতে আসতে বলল, “কে এসেছে, রিমা আপু?”
রিমা যতক্ষণে বলল কাদিনের প্রিয় বন্ধু তাহমিদ এসেছে ততক্ষণে দীপা ড্রয়িংরুমের দরজায়। তাহমিদকে দেখে সে সরে পড়ছিল। তার আগেই রিমা বলল, “এসো পরিচয় করিয়ে দিই।”
তাহমিদ দীপার দিকে তাকিয়ে বলল, “আমরা পরিচিত।”
“পরিচিত?”
দীপা বিস্ময়, ক্রোধ আর ভয় মিশ্রিত চোখে চেয়ে রইল। তাহমিদ দীপার চোখে চোখ রেখে হেসে বলল, “বিয়েতে পরিচয় হয়েছে।”
দীপা মুহূর্তটা থেকে মুক্তি পেল কাদের সাহেবের বদৌলতে। কাদের সাহেব দীপাকে ডাকছেন। দীপা বলল, আসছি, বাবা।”
কাদের সাহেবের কাছে গেল সে। রিমা গেল তাহমিদের জন্য চা নাশতার ব্যবস্থা করতে। সব ট্রেতে সাজিয়ে সে ট্রে নিয়ে এল দীপার কাছে। বলল, “নিয়ে যাও৷ আমি সব গুছিয়ে আসছি।”
দীপা ঢোক গিলল একটা। ট্রে হাতে নিয়ে বলল, “আমি গুছাই।তুমি যাও গল্প করো।”
রিমা বলল, “তুমি ছোট মানুষ। এত কাজ করতে হবে না তো।”
দীপা এই ঘাবড়ে যাওয়া অবস্থাতেও হেসে ফেলল। আদুরে গলায় বলল, “তুমি কি আমার শাশুড়ি নাকি?”
“ওরকমই ভেবে নাও। তটস্থ থাকবে ভয়ে।”
দীপা হাসতে হাসতে ট্রে নিয়ে ড্রয়িংরুমে গেল। তাহমিদ বলল, “কি অবস্থা, দীপা? মনে হচ্ছে ভালোই আছো।”
দীপা বলল, “অনেক ভালো আছি।”
তাহমিদ চায়ে চুমুক দিলো। দীপা চলে আসছিল। তাহমিদ নীচু গলায় বলল, “ভাবি ডাকব নাকি তোমাকে?”
দীপার এত রাগ হলো যে ও বলল, “আপু ডাকলে বেশি খুশি হব।”
তাহমিদ হেসে বলল, “তুমি বদলাওনি।”
“আমি তো খারাপ না যে বদলে যাব? পারলে তুমি নিজেকে শুধরে নিও।”
“কাদিন অফিসে?”
“এ সময়ে আর কোথায় থাকবে?”
“হ্যাঁ, ও আবার খুব জ্যান্টেলম্যান। পড়াশুনা, কাজ এসব ছাড়া অন্যকিছুতে নেই। আসলে সবকিছুরই অভিজ্ঞতা থাকা ভালো। নাহয় শেষে এমনটাই হয়।”
“এমনটা হয় মানে?”
“সব বলব। একদিন দেখা করি চলো।”
“তোমার মাথা ঠিক আছে?” দীপা চটে গেল।
তাহমিদ বলল, “রেগে যাচ্ছ কেন? তোমাকে নিয়ে ভেগে যাচ্ছি না। তোমাকে আমিই ছেড়েছিলাম।”
“খুব ভালো করেই সব মনে আছে। কতটা কষ্ট দিয়েছিলে তুমি।”
“এখানে আর কথা না। ঐযে রিমা আপু আসছে৷ আমরা বরং একদিন দেখা করি। তোমার সাথে গুরুত্বপূর্ণ কিছু কথা আছে আমার।”
“আমার তোমার সাথে কথা বলার রুচি নেই। ভ্যারি স্যরি।”
দীপা উঠে চলে গেল। তাহমিদ দাঁতে দাঁত পিষল।
চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here