#একা_তারা_গুনতে_নেই
— লামইয়া চৌধুরী।
পর্বঃ ৫২
স্কুলের মাঠে সুহা একদল মেয়ে নিয়ে দাঁড়িয়েছিল। মিলাও সঙ্গে ছিল। মুবিন সুহাকে ইশারায় কিছু বলল। সুহা চেঁচিয়ে আঙুল উঁচিয়ে বলল, “ইশারা করো কেন? যা বলার সামনে এসে বলো।”
গোল হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েদর দলটা মুবিনের দিকে ঘুরে তাকাল। মুবিন মাথা উঁচু করে গম্ভীর ভঙ্গিতে হেঁটে এগিয়ে এল। মিলা অবাক হয়ে বলল, “কিছু বলবি?”
মুবিন সুহার দিকে আঙুল তাক করে বলল, “ওর সাথে কথা।”
সুহা মুখ বাঁকিয়ে বলল, “বলুন, জনাব।”
মেয়েরা হাসতে গিয়েও মুবিনের ভয়ে কেউ হাসল না। মুবিন বলল, “আমার সুহার সাথে কথা আছে।”
মিলা বাদে সবাই সরে গেল। মুবিন মিলার দিকে তাকাল। মিলা বলল, “আমি যাব না।”
মুবিন চোখ উল্টে বিরক্ত হয়ে বলল, “আচ্ছা সুহা শুনো। দোষ তোমারও৷ বলো সন্দেহ করোনি আমাকে?”
“ভালো করেছি সন্দেহ করেছি। তুমি সন্দেহ করার মত পাবলিক।”
মিলার কোটর থেকে চোখজোড়া বের হওয়ার উপক্রম হলো। সে ঘন ঘন চোখের পলক ফেলে বলল, “মানে কি? কিসের সন্দেহ? তোরা একজন আরেকজনকে ডেইট করছিস?”
মুবিন সুহা দুজনই একসাথে মিলার দিকে তাকিয়ে ঝারি মেরে বলল, “তুই চুপ থাক।”
মিলা মাথায় হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে রইল। মুবিন বলল, “তুমি আমাকে বিশ্বাস করে তোমার সবগুলো প্র্যাক্টিকেল খাতা একেবারে দাওনি বলে ক্ষেপেছিলাম। মাথা ঠান্ডা হওয়ার পর ধন্যবাদ দিতেই কেকটা পাঠিয়েছি। টাকার গরম মনে করার কিছু নেই।”
সুহা আবার মুখ বাঁকাল। মিলা বলল, “কিসের কেক? কিসের প্র্যাক্টিকেল খাতা? তোরা কি নিয়ে কথা বলছিস?”
মুবিন বলল, “এক থাপ্পরে দাঁত ফেলব মিলা।’
সুহা বলল, “অ্যাই, আমার বান্ধবীকে ধমকাবে না তুমি। খবরদার।”
মুবিন বলল, “যাকগে থ্যাংকস।”
সুহা বলল, “আচ্ছা আমিও স্যরি।”
“এই তো লাইনে এসেছ।”
সুহা খুব ভাব নিয়ে বলল, “এখন ফুটো।”
মুবিন বলল, “আমি তারিখ লিখতে ভুলে গেছি।”
সুহা বলল, “আজ তো আনিনি কাল নিয়ে আসব।”
“আজই লাগবে। এমনিতে অনেক দেরি হয়ে গেছে।”
সুহা একটু ভেবে বলল, “তুমি ছুটির সময় আমার সাথে এসো। এখন খাতা বাসায়।”
“তোমার বাসায় সমস্যা হবে না?”
“তা একটু হবে। আম্মু ঝামেলাবাজ। সমস্যা নেই আমি সামলে নিব।”
মিলা এতক্ষণে বুঝল। মুবিনের প্র্যাক্টিকেল খাতা দরকার৷ সে বলল, “তুই আমারগুলো নিয়ে নে। উফ আমি ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।”
“তোর খাতা তোর কাছেই রাখ। আমাকে কখনো দিতে আসবি না।” মুবিন ঘাড় শক্ত করে বলল।
স্কুল ছুটি হলে মুবিন সাইকেলে বসে একটা পা রাস্তায়, অন্য পা প্যাডেলে রেখে অপেক্ষা করছিল। ভিড়ের মাঝে মুবিনকে খুঁজে বের করতে সুহার কষ্ট হলো। পেয়ে বলল, “ধুর মিঞা তুমি গেইটের বাইরে এসে পড়েছ। আর আমি ভিতরে খুঁজতে খুঁজতে শেষ।”
মুবিন কথা বলার প্রয়োজনবোধ করল না। মেয়েরা ফাউ কথা বেশি বলে। সুহা কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে রিকশা নেওয়ার চেষ্টা করল। দামাদামিতে বনছে না তার। মুবিন অন্যদিকে তাকিয়ে অপেক্ষা করতে করতে বলল, “ভাড়া তো ত্রিশ টাকাই।”
সুহা বলল, “বলেছে তোমাকে! আমি প্রতিদিন পঁচিশ টাকা দিয়েই যাই।”
মুবিন বিরক্ত হলেও কিছু বলল না। কিছু বললে বলবে টাকার গরম।
অনেকটা সময় পর যখন বেশিরভাগ ছাত্র ছাত্রীরাই চলে গেল। রাস্তা ফাঁকা হলো তখন সুহা পঁচিশ টাকা দিয়ে রিকশা ঠিক করল। মুবিন রিকশা অনুসরণ করে সুহার পেছন পেছন গেল। বাসায় পৌঁছে সুহা রিকশা থেকে নেমে মুবিনকে বলল, “বাসায় এসো।”
“না।”
“আচ্ছা দাঁড়াও তুমি।”
সুহা এক দৌড়ে ভেতরে গিয়ে তার প্র্যাক্টিকেল খাতাগুলো খুঁজে নিয়ে এল। মুবিনকে খাতাগুলো দেওয়ার সময় বারান্দা থেকে সুহার মা ওদের দুজনকে দেখল। সুহাও খেয়াল করল মা তাকিয়ে আছে। মুবিন চলে গেলে সে বাসায় গেল। মা কিছু একটা বলতে চাইছিলেন তার আগেই সুহা হাত দেখিয়ে মাকে থামাল, “শুনো শুনো ঐ পুঁচকে পোলাপানের সঙ্গে আমি আর যাই করি প্রেম করব না। যাও নাকে তেল দিয়ে ঘুমাও।”
.
ইমাদ রাতে মুবিনের রুমমেটের সাথে দেখা করবার ছুঁতোয় মুবিনের ঘরে ঢুকল, “আলি ভাই আপনার কাছে স্ক্রু ড্রাইভার আছে?”
মুবিন উগ্র চোখে তাকাল একবার। পরে নিজের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। ইমাদ কথা বলতে বলতে মুবিন কি করছে লক্ষ্য করে চিন্তিত হয়ে পড়ল। সে টেবিলে একটার পর একটা প্র্যাক্টিক্যাল খাতা তুলছে আর শরীরে সর্ব শক্তি দিয়ে পাতাগুলো মাঝখান থেকে ছিঁড়ে ফেলছে। প্রতিটা পাতা ছিঁড়বার সময় তার ঠোঁটে ক্রুর হাসি।
.
সুহা অনেক রাতে ইমাদকে কল করল। ইমাদ কল ধরল না। সুহা মেসেজে লিখল, “আপনার গ্রামের বাড়ি কোথায়? কয় ভাই বোন আপনারা? আপনি কি আমার সাথেই এত চুপচাপ? নাকি সবার সাথে এমন? আমার কণ্ঠটা সুন্দর না? কল ধরুন।”
ইমাদ রিপ্লাইয়ে লিখল, “আপনি কে?”
সুহা লিখল, “আমি খুবই মিষ্টি দেখতে দুষ্টু একটা মেয়ে। সবাই বলে আমার চোখজোড়া কথা বলে। আমার চুল কালো, লম্বায় কাঁধ পর্যন্ত। আর আমি লম্বায় একদম আপনার বুকের কাছে পড়ব। পড়াশুনায় মোটামুটি। নাচতে জানি। মাঝে মাঝে মেঘলা দিনে ছাদে উঠে নাচি। তবে লুকিয়ে লুকিয়ে। মা দেখলে পিঠের ছাল তুলবেন৷ ভালো লাগে আপনাকে। অন্যায় এবং টাকার গরম অপছন্দ করি। ঠাশ ঠাশ কথা বলা বদভ্যাস (মায়ের দৃষ্টিতে)। বন্ধু হিসেবে আমি সেরা। এই ছিল আমার জীবনবৃত্তান্ত।”
ইমাদ লিখল, “আপনার নাম কি?”
সুহা লিখল, “আমার নাম নেই। আমি অনামিকা। কল ধরুন৷ আপনার সঙ্গে কথা আছে।”
ইমাদ লিখল, “আগে নাম বলুন।”
“বলব না।”
“আচ্ছা।”
সুহা কল দিলো। ইমাদ মোবাইল বন্ধ করে ফেলল।
চলবে ইনশাআল্লাহ….