#একা_তারা_গুনতে_নেই
— লামইয়া চৌধুরী।
পর্বঃ ৪৪
বাতাসের দাপট বেড়েছে। বাইরে বৃষ্টি আসি আসি করছে। কড়ি জানালা ধরে বাইরে তাকিয়ে রইল। বৃষ্টির প্রথম ফোঁটা অন্ধকারে খুঁজে পাওয়া যায় কিনা চেয়ে দেখবে। অজানা কারণে বৃষ্টি এলো না, হয়তো ইমাদের কল আসবে বলে! ইমাদের কল পেয়ে কড়ি প্রচন্ড বিরক্ত হলো। বিরক্ত হলেও ফোন ধরল, “হ্যালো।”
ইমাদ বলল, “জি হ্যালো।”
কড়ি স্বাভাবিকভাবেই বলল, “বলুন।”
ইমাদ শান্তস্বরে বলল, “কথা বলার সময় হবে?”
কড়ি উত্তর দিলো, “জরুরি কথা বলার সময় হবে।”
“আমার জরুরি তলব আপনার কাছে জরুরি নাও হতে পারে। সেক্ষেত্রে?”
“কি বলবেন বলে ফেলুন।”
“দীপুর সাথে আজ জুয়েলারি শপে গিয়েছিলাম।”
কড়ি হোঁচট খেল। মেজো ভাবি তাদের সব বলে দিলো? কড়িকে চুপ থাকতে দেখে ইমাদ বলল, “দীপু আমাদের কাছে কিছু লুকায় না। তবে চিন্তার কোনো কারণ নেই। কাদিন ভাইয়া এবং অন্যরা কখনো কিছুই জানবে না।”
কড়ি স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করতে করতে বলল, “ঠিক আছে।”
কড়ি জানালা ছেড়ে বিছানায় এসে বসল। ফোনের ওপাশের ইমাদ বিছানা ছেড়ে জানালায় হেলান দিলো, “আপনার ভাই আর দীপুর যখন বিয়ের কথা হচ্ছিল তখন আমি আপনাকে সন্দেহ করেছিলাম। মনে আছে?”
কড়ি প্রশ্ন করল, “ভুলব কেন?”
ইমাদ নিঃশব্দে হাসল, “স্যরি।”
“স্যরি বলবার মত কিছু হয়নি। আপনার জায়গায় আমি থাকলেও সেটিই করতাম।”
“তাহলে এ কথা বললেন যে?”
“কি কথা বললাম?”
“ভুলব কেন!”
“আপনার সাথে কঠিন করে কথা বলবার চেষ্টা করছি।”
ইমাদের শান্ত কণ্ঠ আরো শান্ত হলো। রাতের মত গভীর আর গাঢ় হলো,”কেন?”
কড়ির জ্বলন্ত ভাষা আরো খানিক প্রখর হলো, “যেন আপনি কখনো আমাকে আর কল করবার সাহস না পান।”
“আমি কি আপনাকে সহসা কল করি?”
“সুযোগ দিতে চাই না।”
ইমাদ বলল, “আচ্ছা।”
তারপর আবার সাথে সাথেই বলল, “আমি ক্লাস টেনে পড়ুয়া প্রেমিক না। যাই হোক, যে জন্য কল করেছিলাম সেটা বলি।”
“জি বলুন।”
“কাদিন ভাইয়ার ভাগের গুলো নাহয় দীপুকে বুঝিয়ে দিলেন। কায়েস ভাইয়ার গুলো কি করবেন?”
“ঠাট্টা করছেন নাকি মজা নিচ্ছেন?”
“দুটোই।”
“এই আপনার জরুরি তলব?”
“আপনার সাথে বলা যেকোনো কথাই আমার জন্য জরুরি তলব।”
কড়ি তীক্ষ্ণ গলায় বলল, “আমি ক্লাস সিক্সে পড়া প্রেমিকা নই। পুনশ্চ, আমি আপনার প্রেমিকা নই।” কড়ি কল কেটে দিলো। ইমাদ মোবাইলের দিকে তাকিয়ে বড় একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। কোথায় পাবে সে কড়ির গয়না?
.
মিশেল জানালা দিয়ে বাইরে দেখতে দেখতে মদের গ্লাসে চুমুক দিলো। তার ঠোঁটের কোণে হাসি। সবুজ চোখের দৃষ্টিতে বৃষ্টি দেখার ঘোর। মঈন বসে আছে কাউচে। মিশেল দেখছে বৃষ্টি আর মঈন দেখছে মিশেল। বাইরের ঝুম ঝুম বৃষ্টিতে মিশেল পুরোপুরি হারিয়ে গেছে। কিছু সময় এভাবেই চলে গেল। একসময় মিশেল মঈনের দিকে না তাকিয়েই ফরাসী ভাষায় বলে উঠল, “তোমার দেশের তুষারপাতও কি এত বেশি মোহনীয়?”
মঈন হেসে হেসে ইংরেজীতে বলল, “তুমি বোধহয় ভুলে গেছ আমি ফরাসী ভাষা জানি না।”
মিশেল ঘুরে তাকাল। মদের গ্লাস হাতে হেঁটে এসে মঈনের পাশে বসল। পায়ের উপর পা তুলতেই তার কালো গাউনের কাটা পাশটা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। গোলাপী আভা রঞ্জিত নগ্ন পা দুটো এখন দৃশ্যমান। সে ইংরেজীতে বলল, “তোমার দেশের তুষারপাতও কি এত বেশি মোহনীয়?”
“আমাদের দেশে তুষারপাত হয় কে বলল তোমায়?”
“হয়না?”
“উঁহু। তবে আমাদের বৃষ্টির কাছে পৃথিবীর যেকোনো দেশের বৃষ্টি নস্যি। আর তোমার আদরের কাছে, যাবতীয় সবকিছু তুচ্ছ।” মঈন মিশেলের দিকে এগিয়ে গেল।
.
মাঝে মাঝে শিল্পীর মনে হয় ব্যাংকে আবার মানুষরা কাজ করে নাকি? ব্যাংকে কাজ করে রোবটরা। কম বয়সী এক মেয়ে এল তার বাবাকে নিয়ে। টাকা এফডিআর করেছিল। মেয়াদ নাকি উত্তীর্ণ হয়েছে তাই টাকা তুলবে। শিল্পীর হয়ে গেল মেজাজ খারাপ। ডেইট দেখে আসবে না? টাকা রেখেছে ১৪ মাসের জন্য আর এসে বলছে এক বছরের জন্য টাকা রেখেছিল! কি আশ্চর্য! বাবাটি পরে বলল, “আমি ত আর করিনি। ও ওর মাকে নিয়ে এসে করেছিল। আর এখন কাগজপত্রও হারিয়ে ফেলেছে।”
শিল্পী মেয়েটাকে কঠিন মুখ করে বলে দিলো, “এত আলাভোলা হলে হয়?”
মেয়েটি লজ্জা পেয়েছে, বাবাও নিশ্চয়ই বাসায় গিয়ে অনেক বকবে! মেয়েটি চলে যাওয়ার পর শিল্পীর মনে হলো ওভাবে না বললেও হতো! পাশের টেবিল থেকে জুয়েল সাহেব বললেন, “কিছু মনে করবেন না। আজকাল হুটহাট সবার সাথে রেগে যান। এত উত্তেজিত হবেন না। স্ট্রোক করে বসবেন!”
শিল্পী বলল, “বয়স হচ্ছে তো তাই ধৈর্য্য কমে যাচ্ছে।”
“আমি তো বয়স দেখি না। আপনি এখনও ইয়াং। অ্যাইজ ইজ জাস্ট আ নাম্বার!”
শিল্পী কম্পিউটার থেকে চোখ সরিয়ে জুয়েল সাহেবের দিকে তাকাল। কথাটা ওর পছন্দ হয়নি।
চলবে ইনশাআল্লাহ্…
( জানি পর্ব ছোট হয়ে গেছে, কিন্তু বড় পর্ব লেখার মত সময় করে উঠতে পারছি না। 💔)