#একা_তারা_গুনতে_নেই
— লামইয়া চৌধুরী।
পর্বঃ ১১
ইমাদ কোটবাড়ি থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসে উঠল। সবুজের সমারোহকে সাই সাই করে পেছনে ফেলে বাসটা ক্রমশ এগিয়ে যাচ্ছে কুমিল্লা শহরের দিকে। সে জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে। বাসের তালে তালে তার শরীরটাও দুলছে। সে নির্বিকারভাবে দেখছে শহরের টানে প্রকৃতিকে ফেলা আসার এই ক্লান্তিমাখা যাত্রা। একইসাথে অনেকক্ষণ ধরে একটা বিষয় মনে করার চেষ্টা করছে, কিন্তু কিছুতেই মনে করতে পারছে না। একটু পরই কড়ির সাথে ওর দেখা হবে। কিন্তু কোথায় যেন? কড়ি কী উজির দীঘির পাড় বলেছিল নাকি রাণীর দীঘির পাড়? আবার ধর্মসাগর দীঘির ওখানে নয় ত? নানুয়া দীঘির পাড়ও হতে পারে। এজন্যই ত কুমিল্লাকে লোকে দীঘির শহর বলে। এই শহর ত জলের কুটুমবাড়ি। শহরের বুকে এত এত জলাধার। কী আশ্চর্য! এই শহরেই সে থাকে অথচ, বিষয়টা এর আগে কখনো ভাবায় হয়নি! হ্যাঁ, এই তো মনে পড়েছে। নানুয়া দীঘির পাড়ের কথা হয়েছিল। সকালে সেই কড়িকে ফোন করেছিল, “আসসালামু আলাইকুম।”
“ওয়ালাইকুম আসসালাম।”
“আপনার সঙ্গে কিছু কথা বলার ছিল।”
“জি বলুন।”
“এভাবে না, সামনাসামনি কথা বলতে চাইছি। বিষয়টা গুরুত্বপূর্ণ।”
“কী বিষয়ে?”
“দীপুর বিষয়ে।”
কড়ি একটু ভেবে বলল, “ঠিক আছে।”
“কখন? কোথায়?”
“রেস্টুরেন্টে আমি বেশিক্ষণ বসতে পারি না।”
“আচ্ছা।”
“অন্য কোথায় দেখা করলে ভালো হয়।”
“আচ্ছা।”
“নানুয়া দীঘির পাড় আসতে পারবেন?”
“জি পারব।”
“আপনি আপনার সুবিধামত সময় বলতে পারেন। আমার ব্যস্ততা নেই।”
“পাঁচটার দিকে হলে আমার জন্য ভালো হয়।”
“ওকে।”
নানুয়া দীঘি শান্ত জলের জলাধার। যার চারিদিক জুড়ে বিশাল বিশাল সব দালানকোঠা। তবে জায়গাটা কোলাহলমুক্ত। এখানে এলে সময় যেন থমকে যায়। আকাশ হয়ে উঠে সাদা মেঘেদের ঠিকানা। আর বাতাসে বয়ে বেড়ায় মিষ্টি গন্ধ।
বিশাল দীঘির প্রতিটি পাড়েই বসবার জন্য একটি করে পাকা করে গড়ে তুলা বেঞ্চের মতন জায়গা আছে। কড়ি দক্ষিণ পাড়ে বসে ইমাদের জন্য অপেক্ষা করছে। ইমাদকে অন্য পাড় দিয়ে হেঁটে আসতে দেখল সে। ইমাদ এসে ওর মুখোমুখি হয়ে উল্টোদিকের জায়গাটায় বসল। কড়ি বলল, “বলুন কী বলবেন।”
“দীপু এ বিয়েটা কেন করছে?”
কড়ি ভ্রু কুঁচকে তাকাল, “এ বিষয়ে কথা বলতে চাইছেন?”
“জি এ বিষয়ে কথা বলতে চাইছি।”
“আপনি কী কিছুই জানেন না?” কড়ি সামান্য অবাক হলো।
“না।”
“তারমানে দীপা আপনাকে কিছুই বলেনি।”
“কিছুই বলেনি।”
“আর আপনি সেটাই জানতে এসেছেন?”
“জি।”
“আপু না বললে আমি কী করে বলতে পারি?”
“ও আমাকে বলেনি তার মানে হলো ও জানে কাজটায় আমি সায় দিব না এবং বাধা দিব। আর আমি বাধা দিব মানে ঘটনা নিশ্চয়ই ওর অনুকূলে নয়।”
“আপু বিয়েতে রাজি হয়েছে। জীবনে এগিয়ে যাচ্ছে। আপনি শুধু শুধু দুশ্চিন্তা করছেন।”
“সে বিয়েতে এমনি এমনি রাজি হয়নি।”
“জি এমনি এমনি রাজি হয়নি। কেন রাজি হয়েছে আপনাকে বলতে আমার কোনো আপত্তি ছিল না। তবে উনি যেহেতু লুকাচ্ছেন আমি নিশ্চয় সে কথা আপনাকে বলে দিতে পারি না?”কড়ি চলে যেতে উঠে দাঁড়িয়ে ভ্যানিটি ব্যাগ কাঁধে চড়াল। সেই আবার বলল, “দুঃখিত, আমি আসছি।”
সে চলে যেতে পা বাড়াতেই ইমাদও উঠে দাঁড়াল। বলল, “আপনি কেন যেচে পড়ে নিজের ভাইয়ের সাথে এমন একটা মেয়ের বিয়ে দিতে চাইছেন যে কিনা তার এক্সকে পাগলের মতন ভালোবাসে?”
কড়ি ফিরে তাকাল, “আপনি জবাবদিহি চাইছেন?”
“বিষয়টা একটু কেমন হয়ে গেল না?”
কড়ি আবার নিজের জায়গায় বসল, “কেমন হয়ে গেল?”
ইমাদও আবার নিজের জায়গায় বসল, “নিজের ভাইয়ের প্রতি অন্যায় হয়ে গেল না? বন্ধুদের সাথে এমন অন্যায় মানুষ করতে পারে, কিন্তু নিজের ভাইয়ের সাথে না।”
কড়ি হাসল, “আপনার বোধহয় মনে হচ্ছে এর পেছনে আমার নিজস্ব কোনো স্বার্থ আছে।”
ইমাদ নিশ্চুপ। কড়ি জবাব দিলো, “কোনো স্বার্থ নেই।”
“আচ্ছা।”
“আমি অতটা খারাপ কেউ নই যে স্বার্থের কারণে আপনার বন্ধুর সাথে আমার ভাইয়ের বিয়ে দিব। আমার ভাইয়ের মাঝে কোনো ঘাটতি আছে বলে সন্দেহ করবেন না। আবার, আমি অতি মহান কেউও নই। অতি মহান হলে দীপাদের বাসায় আরো আগেই বিয়ের প্রস্তাব যেত। ভাইয়ার জন্য ত অনেকদিন ধরেই পাত্রী খুঁজছি আমরা। আমাদের বাসায় দীপাকে দেখে বাবা পছন্দ করে ফেলেন। এখন আমি নিশ্চয়ই এতটাও খারাপ নই যে দীপার সব জানি বলেই বিয়েতে বাধা দিয়ে বসব। যেখানে আমিও ওর মতই ভোক্তভোগী।”
ইমাদ নির্লিপ্ত গলায় বলল, “আচ্ছা।”
কড়ি উঠে বিদায় নিয়ে হাঁটতে শুরু করল। সন্ধ্যে নেমে আসছে। বড় বড় দালানগুলোর সাঁঝবাতির প্রতিফলন দীঘির পানিতে টলটল করছে। কড়ি পাড় ধরে নীরবে বাসার দিকে হেঁটে যাচ্ছে। বাতাসে ওর চুলগুলো উত্তাল হয়ে উড়ছে। সেও নিশ্চয়ই সারাজীবন ঐ প্রতারকের জন্য বসে থাকবে না? সময় এলে সেও বিয়ে করব। সংসার করবে এবং অনেকবছর পর এক্সের সাথে দেখা হয়ে গেল আমার বাচ্চাকাচ্চার সাথে মামা বলে পরিচয়ও করিয়ে দিবে। সেও ত রামিমকে পাগলের মতন ভালোবাসে। এখন তার বিয়ের সময় যদি কেউ একই কারণে বাধা দেয়! তখন কেমন লাগবে ওর? একটা মেয়ে হয়ে কেন আরেকটা মেয়ের সুখে বাধা দিতে যাবে সে?
ইমাদ এক পায়ের উপর ৯০ ডিগ্রী এঙ্গেলে অন্য পা তুলে একই জায়গায় বসে আছে। সে এখনো উঠেনি। কড়িকে এখন উত্তরপাড়ে দেখা যাচ্ছে। চেহারা স্পষ্ট নয়, শুধু হেঁটে চলাই চোখে পড়ে।
চলবে…
★অটোগ্রাফ সহ আমার ২য় বই “যে শ্রাবণে ফাগুন” এর প্রি-অর্ডার চলছে….
★প্রি- অর্ডার লিঙ্কঃ
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=882805749142024&id=100022378217757
ফোনে অর্ডার করুন- ১৬২৯৭ এই নাম্বারে।