অবান্তর_চিরকুট,পর্ব-13,14

#অবান্তর_চিরকুট,পর্ব-13,14
♡আরশিয়া জান্নাত
13

“হ্যালো বাবা, তাহজীব,,,,,”

“সিতারা তুই একদম ওর কথায় প্রভাবিত হবিনা। ওর মতো সেলফিস আর যাই হোক কারো জন্য মরতে বসবেনা। তোকে বিভ্রান্ত করতে এসব বলছে। তুই এসব কানে তুলবিনা।”

“কিন্তু উনার যেই রাগ, রাগের বশে যদি কিছু করে?”

“আমার তো মনে হয় না। তাছাড়া ও তো একা নেই ওর ওয়াইফ আছে আপা দুলাভাই আছে। ওরা ওকে দেখবে।”

“আমি কি একবার কল করে দেখবো?”

“মোটেও না। কল করে ওর আবেগী কথা শুনে কি হবে? আমিতো বুঝিনা ওর জন্য এতো মায়া হলে রাফসানকে কেন জড়িয়েছিস?? এসবের মানে কি সিতারা??”
খানিকটা রেগেই বললেন জহির সাহেব। সিতারার কান্না থেমে গেল ভয়ে। আসলেই তো এখন এসব ভেবে কি হবে। এই বিয়েতো তাঁর ইচ্ছেতে হয়েছে।
“কে বলেছিল বিয়ে করতে। তাহজীবের অপেক্ষা করলেই হতো, ও যদি আফসানাকে ডিভোর্স দিয়ে আমার কাছে আসতো আমিই ফিরে যেতাম। হোক সে রাগী বদমেজাজি, প্রয়োজনে তাঁর পায়ের ধারেই পড়ে থাকতাম সারাজীবন। এখন আমি কি করবো? তাহজীবের কিছু হয়ে গেলে আমি নিজেকে ক্ষমা করতে পারবোনা!”
রাফসান রুমে ঢুকতেই সিতারার কথা শুনে ফেললো।
“কি হয়েছে তাহজীবের?”

“সে সুইসাইড করার ইঙ্গিত দিয়েছে। আমি জানিনা কি করবো। সে যদি সত্যিই করে ফেলে??”

“চলেন তাহলে গিয়ে দেখি,,,”

“কিন্তু,,,”

“কোনো কিন্তু না।যদি গিয়ে দেখি সুইসাইড করেনি তাহলে তাঁর মাথা ফাটিয়ে দিবো। সে এতোদিন যার চোখে পানি ঝরিয়েছে সে আমার কেউ ছিল না, কিন্তু এখন যাঁর চোখে পানি পড়ছে সে আমার অর্ধাঙ্গিনী। এটার শাস্তি তো তাঁকে পেতেই হবে নাকি?”
রাফসানের কথায় সিতারার মনটা ভরে গেল। তারা দুজনেই বেরিয়ে পড়লো তাহজীবের বাসার উদ্দেশ্যে।


“আমি ঠিক বুঝলাম না তুমি সিতারাকে এমন টেক্সট কেন করেছ? এটার মানে কি, তুমি তো আগে বলোনি তোমার সাথে ওনার এফেয়ার ছিল?”

তাহজীব কল্পনাই করেনি আফসানা সেই মুহূর্তে ফোনটা ছোঁ মেরে নিয়ে যাবে। যেখানে ওর ফোন কেউ ধরার স্পর্ধা দেখায় না। রাগে মাথা গরম হলেও সেটা প্রকাশ না করে বললো,

“তুমি যা ভাবছো তেমন নয় আফসানা।”

“আমি যা ভাবছি তারচেয়েও ডিপ কিছু। আমার ডাউট ছিল তোমার এক্স আছে কিন্তু সেটা সিতারা সে তো ভাবিনি। তোমার বিহেভিয়ার কিংবা সিতারার ভাবভঙ্গিতে তো তেমন কিছু দেখিনি। ও নিজে বিয়ের সব কিছু করলো,,,, তাহজীব তুমি ওকে এই মেসেজ কেন করলে? ওকে ছাড়া তোমার জীবন কল্পনা করতে পারোনা মানে কি? আমি কে এখানে! আমার অবস্থান কি? ”

“সিতারা আমার খুব প্রিয়জন। ওর বিয়েতে আমার খারাপ লাগছিল তাই এমন বলেছি। এর বাইরে কিছু না,”

“আমাকে তোমার বাচ্চা মনে হয়? তুমি দেবদাসের মতো সুইসাইড করার ইঙ্গিত দিয়ে পার্বতী কে টেক্সট করেছ এইটুকু বোঝার ক্ষমতা আমার নেই?”

“চেঁচাচ্ছ কেন আফসানা। আমার সামনে এমন চিৎকার করবেনা আমার মেজাজ খারাপ হয়,”

“তোমার ইললজিক্যাল কথাবার্তা শুনে আমি শান্ত থাকবো ভাবছো? আমি তোমার ওয়াইফ তোমায় প্রশ্ন করার অধিকার আমার আছে।”

“তাহজীব চৌধুরী কাউকে কৈফিয়ত দেয়না।”

“আমায় দিতে তুমি বাধ্য। তুমি এমন দুশ্চরিত্র আমিতো জানতাম না। আমার সঙ্গে সংসার করছো আবার এক্সকে ইমোশনাল ব্ল্যাকমেল করছো,,,, তাহলে কি ধরে নিবো তুমি আমাকে সব মিথ্যা বলেছিলে? আসলে তুমি আমাকে ভালোবাসো না। তবে আমাকে বিয়ে করেছিলে কেন?”

তাহজীব রাগে জিনিসপত্র ভাঙতে শুরু করলো। আর চিৎকার করে বললো, তোর সাহস কি করে হয় এভাবে রাগ দেখানোর? আমি বলেছিনা চিৎকার না করতে কথা কানে যায়নি? চুপচাপ সহ্য করছি দেখে মাথায় চড়ে বসছোস?

“তুমি এমন তুইতোকারি করছো কেন?”

“মুখ খারাপ করাইস না বের হ এখান থেকে। নাহয় খুব খারাপ হয়ে যাবে।”

তাহজীবের বাবা-মা ভাঙচুরের শব্দ পেয়ে চলে এলেন,
“কি ব্যাপার তাহজীব এমন করছো কেন?”
আফসানা কাঁদতে কাঁদতে সবটা বললো। তাহজীবের বাবা ছেলের এহেন কান্ডে ধমকের সুরে বললেন, সবসময় তোমার ইচ্ছেমতো সব হয়েছে। তোমার কথামতোই আফসানাকে এই বাড়ির বৌ করে এনেছি। এখন এসবের মানে কি? আর সিতারার অন্যজনের সঙ্গে বিয়ে হয়েছে এখন তুমি এসব করে চারজনের জীবন নষ্ট করছো কেন? কি সমস্যা তোমার?”

সিতারাকে ভেতরে আসতে দেখে তাহজীবের মা সকলের অগচোরে বাইরে এসে ওদের থামিয়ে দিলেন।
“সিতারা তুই কি পাগল? বিয়ের রাতে এভাবে চলে এসেছিস! রাফসান কি ভাবছে বলতো?”

“ফুপ্পী তাহজীব,,,”

“আমার সাইকো ছেলের কথা বাদ দে। তোকে দেখলে এখন আরো কাহিনী শুরু করবে। তুই চলে যা, আমরা আছিতো সব ঠিক হয়ে যাবে। জামাই কিছু মনে করোনা এই প্রথম ফুফুশাশুড়ির বাসায় আসছো তাও এমন অস্বস্তিকর পরিস্থিতিতে। তোমরা বরং চলে যাও। আমার ছেলের মাথা ঠিক নাই,,”
রাফসান সিতারার দিকে তাকাতেই সিতারা ইশারা করলো ফিরে চলেন।
____________________
রাত প্রায় বারোটা,
রাফসান আর সিতারা একসঙ্গে ফুটপাতে হেঁটে যাচ্ছে। এলাকায় সিএনজি নেই বললেই চলে,মোড় থেকে গাড়ি নিতে হবে এমন ভাবনাতেই হেঁটে চলছে দুজন।

“আপনাকে অযথা ঝামেলায় ফেললাম।আসলে,,,”

সিতারাকে থামিয়ে রাফসান বললো, আপনার জায়গায় থাকলে আমিও এমনটাই করতাম সিতারা। আমি বুঝি এমন পরিস্থিতিতে মাথায় ভালোমন্দ কিছু কাজ করেনা।

“আপনি আসলেই খুব বুঝদার মানুষ।ধন্যবাদ”

রাফসান মুচকি হাসি দিয়ে চলতে লাগলো।

আফসানা বেডের একপাশে গুটিশুটি হয়ে শুয়ে কেঁদে যাচ্ছে। তাহজীব বেলকনীতে দাঁড়িয়ে নিকোটিনের ধোঁয়া উড়াচ্ছে। আর মনে মনে ভাবছে কতশত কথা। তারা এতো পাথর হয়ে গেল। এমন একটা মেসেজ পেয়েও একটা কল করলোনা, বাসায় আসাতো বহুদূর। অতীতের একটা ঘটনা মনে পড়ে গেল তাঁর,
অনার্সে পড়াকালীন ঘটনা, সিতারা তখন ইন্টারে ভর্তি হয়েছে কেবল। ওর বাবা ওকে পার্সোনাল ফোন কিনে দিলো, সেই ফোনে বলতে গেলে শুধুমাত্র তাহজীবের সাথেই কথা হতো। একদিন ফোন ওয়েটিং এ পেয়ে তাহজীব স্বাভাবিকভাবে রেখে দিল। বেশকিছুক্ষণ পর আবার ট্রাই করে দেখে তখনো ওয়েটিং। এবার তো তাঁর মাথা ঠান্ডা রাখা অসম্ভব। আধ ঘন্টা পর তাহজীব আবার কল করলো। সিতারা প্রফুল্ল গলায় বললো, জানো আজ কে ফোন করেছে? আমার প্রাইমারি স্কুল ফ্রেন্ড ছিল যে মুক্তা,,,
কথা না শুনেই তাহজীব চিৎকার করে বললো, সে যেই হোক এতোক্ষণ কিসের কথা ফোনে? আমি যে ওয়েটিং এ ছিলাম দেখোনি? আমাকে এক মিনিটে বলা যেত না এটা? আমি কখন থেকে ট্রাই করছি?

“আসলে অনেকদিন যোগাযোগ ছিল না তো, কথার তালে খেয়াল করিনি। স্যরি ভুল হয়ে গেছে।”

“স্যরি দিয়ে কি শাক খাবো আমি? যাও গিয়ে কথা বলো তোমার বান্ধবীর সাথে আমি আর কল করবোনা। আমার জন্য কারো ডিস্টার্ব হোক আমি চাইনা।”
কল কেটে দিয়ে ফোন সুইচড অফ করে সন্ধ্যায় শুয়ে পড়েছিল সে। ওদিকে সিতারা কেঁদেকেটে বারবার ফোনে ট্রাই করে যাচ্ছিল। কতবার যে স্যরি লিখে পাঠিয়েছে হিসেব নেই। যে কখনো একা বের হয়নি সেই প্রথম একা রিকশা নিয়ে তাহজীবের বাসায় চলে এসেছিল।
কান্নার শব্দে তাহজীবের ভাঙতে দেখে সিতারা ওর হাত ধরে বসে কাঁদছে। চোখমুখ ফুলিয়ে কি একটা অবস্থা বানিয়ে ফেলেছিল। তাহজীব উঠে ওর দিকে বোকার মতো চেয়ে রইলো। সে যেন ভুলেই গিয়েছিল কি হয়েছে। ওদিকে সিতারা কাঁদতে কাঁদতে হিঁচকি তুলে বলল,আপনাকে কতোগুলি কল করেছি মেসেজ লিখেছি, আর আপনি ফোন অফ করে ঘুমাচ্ছেন? টেনশনে আমার কত অস্থির লাগছিল জানেন? কেন এমন করেন জানেন না আমার খুব কষ্ট হয়?

তাহজীব ওর চোখের পানি মুছে দুহাতে মুখটা ধরে বললো, তাই বলে এভাবে কান্না করবে! এতো নরম মনের তুমি আল্লাহ!!

“এখানে নরম আর শক্ত কি। আপনার রাগের বিশ্বাস নেই কিছু করে ফেলতেন যদি! তাই একা ছুটে এসেছি বাসায় বলেও আসিনি,,”

“বাব্বাহ এতো সাহস জনাবার? একা একা চলে আসছো! বাসায় ওরা টেনশন করবেনা?”

“ফুপ্পীকে ফোন করতে বলে এসেছি।”

“তা আসলে কেন, যাও গিয়ে পুরনো বান্ধবীর সাথে কথা বলো। আমিতো কেউ না,”

সিতারা তাঁকে পেছন থেকে জড়িয়ে আবার কাঁদতে শুরু করলো, ভুল হয়ে গেছে আমার আর কখনো কারো সঙ্গে কথা বলবোনা। বললেও আপনার পারমিশন নিয়ে বলবো। প্লিজ এভাবে পিঞ্চ মেরে কথা বলবেননা আমার সত্যিই খুব কষ্ট হয়।

তাহজীব হেসে বললো, পাগলী দুষ্টুমি করেছি। দেখি কান্না থামাও। এতো চোখের পানি তোমার উফফ।

“আগে বলেন রাগ নেই?”

“নেই নেই কোনো রাগ নেই।”

“এবার বলেন ভালোবাসেন??”

“হুহ কত্ত ঢং ম্যাডামের। অনেক অনেক ভালোবাসি। হ্যাপি?”

“হু”

তুই এতো বদলে গেলি কি করে তাঁরা? এখন কি আর আমায় ভালোবাসিস না? তোর এইসব ভালোবাসা বুঝি এখন রাফসান পাবে? আমি কেন তোকে আটকে রাখতে পারলাম না। আমার আজ এতো একা লাগছে কেন! সব দোষ আসলেই আমার, আমি তোর ভালোবাসায় এতোটাই অভ্যস্ত হয়ে গেছিলাম ভুলেই গেছি বেশি টাইট দিলে পাখিটা মরে যাবে। এখন দেখ আমার ভালোবাসার পাখিটা মরে গেছে। তুই আর আমায় ভালোবাসিস না। কেন যে আমি সবকিছু এতো জটিল করে ফেলেছি। কিচ্ছু ভালো লাগছেনা আমার।

চলবে,,,,

#অবান্তর_চিরকুট (পর্ব-14)

♡আরশিয়া জান্নাত

“নিন গরম গরম চা খান। সারারাত যে যুদ্ধ করেন আপনি আল্লাহ!”

সিতারা গাল ফুলিয়ে বললো, আমি যুদ্ধ করি? কি করেছি আমি হু?

“নাহ না এ তো যুদ্ধ না মহাযুদ্ধ। এমনভাবে ঘুমান যেন স্বপ্নে রেসলিং খেলছেন। এতো অস্থির আপনি! হাতপা যেভাবে ছুঁড়েছেন আমি তো ধড়ফড়িয়ে উঠেছি।”

“উহু মিথ্যা কথা। আমি অনেক ভালো করে ঘুমাই অযথা মিথ্যা বলছেন কেন?”

“ঠিকাছে ভিডিও রেকর্ড করে রাখবো। এখন নিন চা টা শেষ করুন।”

“আপনি আর্লি রাইজার বলে দিলেই হতো। আমি থাকতে আপনি চা করলেন কেন?”

“কেন করা নিষিদ্ধ নাকি?”

“না তবুও,,”

“শুনুন সংসারে তোমার কাজ আমার কাজ বলে কিছু নেই। সব কাজ দুজনেরই,যে যেটা করতে ইচ্ছে করবে।”

“আচ্ছা বেশ। সকালের নাস্তায় কি খাবেন তা বলুন?”

“অনেকদিন রুটি খাইনা। ওটা করতে পারেন,তা রুটি গোল হয়তো?”

“কি ভাবেন পারিনা?”

“সেটা না। সাফা প্রথম প্রথম রুটি বানাতে পারতোনা,ওর জন্য সবচেয়ে কঠিন কাজ ছিল রুটি গোল করা।”
বলেই চুপ হয়ে গেল রাফসান।

“চলেন টেস্ট দেই।”

“টেস্ট দিতে হবেনা। চলুন আমিও হেল্প করবো।”

রাফসান আর সিতারা রুটি বানানোতে ব্যস্ত হয়ে গেল।

আফসানা ব্যাগপত্র গুছিয়ে নিচ্ছে তাহজীব দেখেও না দেখার মতো করে অফিসে চলে গেল। আফসানাকে থামানো তো দূর জিজ্ঞাসা করারও প্রয়োজনবোধ করলো না। তাঁর এমন অবজ্ঞায় আফসানার চোখে পানি থামছিল না।
“এ কেমন লোককে বিয়ে করেছি আমি। দোষ করেও এমন ভাব যেন আমি অন্যায় করেছি সে না!”

“এ কি আফসানা কোথায় যাচ্ছ?”

“বাসায় যাচ্ছি মা”

“তাহজীব জানে? ও আটকায় নি?”

আফসানা চুপ করে রইলো। তাহজীবের মা আফসানার মাথায় হাত রেখে বললো, ওর স্বভাবটাই এমন। কোনোকিছুরই তোয়াক্কা করেনা, তুমি কোথাও না গিয়ে বরং এখানে থেকেই ওকে পানিশ করো। ও যেই ভুলেও তোমায় আনতে যাবেনা।

আফসানা ভেবে দেখলো কথাটা ভুল না। তাহজীবের ঘাড়ের রগ ত্যাড়া এ তো সে জানেই। কিন্তু এখানে থেকে কি আসলেই কিছু করা যাবে??
______________

নগরীর রাত ১০টা অদ্ভুত এক সময়। এ সময়টাতে তাহজীবের আজকাল একটুও ভালো লাগেনা। অফিসে ইচ্ছে করে বসে থাকে, কাজ না থাকলেও কাজ তৈরি করে নেয়। বাসায় ফিরতে ইচ্ছে হয় না।
সিতারার নাম্বার আনব্লক করলেও টেক্সটগুলো স্পামে পড়ে আছে। এক বছরে জমা পড়েছে শ’খানেক মেসেজ। সেইসব দেখার সাহস হয়না তাঁর। নিজেকে কেমন ছদ্মবেশী ডেভিল মনে হয়। সিতারাকে সে কখনওই ভুলতে পারেনি, পারবেওনা হয়তো। অথচ আফসানার সঙ্গে কি সুন্দর অভিনয় করেছে। নাহয় সদ্য পরিচিত হওয়া মেয়েটাকে বিয়ে করা এটা জেদ নয়তো কি? ভেবেছিল সিতারার চেয়ে দ্বিগুণ রুপবতী কাউকে জীবনে জড়ালে সিতারার মনপ্রাণ জ্বলে যাবে। কত্ত পৈশাচিক চিন্তাভাবনাই না তাঁর!! সে যেন ভুলেই বসেছিল দিনশেষে সিতারার জন্য মন ব্যাকুল হবে।

বেশ কয়েক জায়গায় সিভি জমা দিয়েছে রাফসান।যদিও জব নিয়ে সিতারা কিছু বলেনি তবে এখন তো আর ছন্নছাড়া ভাব নিয়ে চলা ঠিক না। সংসারে যখন বাঁধা পড়েছে সবকিছুতে গুরুত্ব দিতে হবে।

“কাল আপনি ফ্রি আছেন?”

“কেন?”

“মা বলছিল বাসায় যেতে নিয়মমাফিক তো যাওয়া হয়নি”

“দেখেছেন কান্ড! ভুলেই গিয়েছিলাম, আমি খুব দুঃখিত সিতারা। আপনি আরো আগে মনে করালেন না কেন? ”

“হিহি সমস্যা নাই, এতো ফর্মাল হচ্ছেন কেন? সবে তো এক সপ্তাহ হলো,,”

“তবুও আপনাকে জিজ্ঞাসা করা উচিত ছিল,,”

“সেটা তো অবশ্যই। এখন থেকে সব জিজ্ঞাসা করবেন বুঝছেন?”

“সবসময় ফান তাই না?”

“হেহেহে কেউ ফর্মালিটি দেখালে আমার খুব মজা লাগে। হাসি আসে শুধু”

“হাসুন বেশি করে। হাসলে অবশ্য খারাপ লাগেনা,,”

“না হাসলে বুঝি লাগে?”

“নাহ সেটা বলিনি,,”

“তাহলে কি বলেছেন?”

“আপনি খুব প্যাঁচান!”

“হিহিহি। আপনি পঁচেন তাই প্যাঁচাই।”

“কি রান্না করলেন আজ খুব ক্ষুধার্ত আমি।”

“আপনি ফ্রেশ হয়ে আসুন। তারপর নিজেই দেখতে পাবেন,,,”

“ব্যাগটা খুলে দেখুন,,,,”

রাফসান ওয়াশরুমে চলে গেল সিতারা ব্যাগ খুলে দেখে বেলী ফুলের মালা আর চুলের কাঠি!
“বাহ! রাফসান সাহেব তো বেশ রোমান্টিক।”
চটজলদি কাঠি দিয়ে চুলে খোঁপা করে বেলীর মালা পেঁচিয়ে প্রফুল্লমনে রাফসানের জন্য খাবার পরিবেশন করতে লাগলো সিতারা। খেতে বসে রাফসান বললো,

“আজ দুপুরে বাসায় কে এসেছিল?”

“আফসানা ভাবী।”

“তিনি হঠাৎ?”

সিতারা কিছুক্ষণ থেমে বললো, সুখবর দিলো।

রাফসান আর কিছু বললো না। সিতারা নিজেই বললো, সেদিনের টেক্সটটা উনি দেখে ফেলেছিলেন। উনি মূলত এসেছেন আমাকে কনভিন্স করতে,,,

“আপনি কি ভেবেছেন? কথা বলবেন তাহজীবের সাথে?”

“হুম। এখন তো আর হেয়ালি করলে চলবেনা তাই না! জানেন ভাবীর চেহারা কেমন হয়ে গেছে। বেচারী,,,”

রাফসান মুচকি হেসে বললো, আপনি খুব মিষ্টি একটা মেয়ে,,,

” মিষ্টি বলেই কেউ বেশিদিন নিতে পারেনা,,,,,”

“আমি অনেক ঝাল খাই তো ব্যালেন্স হয়ে যাবে আশা করি,,”

“কথায় আপনি ওস্তাদ”

রাফসান মনে মনে বললো, আমি মোটেও ওস্তাদ নই। আপনার সঙ্গে কথা বলতে শুরু করলে অটোমেটিক সব কথা বের হয়। হয়তো এটা আপনারই প্রভাব,,,,,,

চলবে,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here