You are my property,Part_30,31
M Sonali
Part-30
আরিয়ান কে শান্ত হয়ে দাড়াতে দেখে রাকিব আর দেরি না করে দ্রুত চলে গেল অটো ড্রাইভারের কাছে। তারপর ওর মাথা নিজের কোলে তুলে নিয়ে জিজ্ঞেস করল,
— আচ্ছা তুমি সত্যি করে বলতো তোমার স্ত্রীর নাম আসলে কি?
— আর কইবার কমু স্যার, আমার বউ এর নাম আফিয়া। ওর লগে আমার দুই মাস আগে বিয়া হইছে। আপনে কইতাছেন আপনে আমার বউ এর ভাই। তয় আপনেরে আমি বিয়ার দিন শশুরবাড়িতে দেখলুম না ক্যান? তহন তো ওইহানে সকলেই আছিলো। তাইলে আপনে তখন কই আছিলেন? আর আমারে এমনে মারতাছেন’ই বা কি জন্যি? আমি আপনাগো কি করছি?
অটো ডাইভার রাজুর কথা শুনে এবার আরিয়ান ভ্রু কুঁচকে ফিরে তাকাল ওর দিকে। তারপর ওর পাশে এসে বসে বলে উঠলো,
— তার মানে তোমার বউ রাহি নয়? তুমি সত্যি আফিয়া নামের কোন মেয়েকে বিয়ে করেছ? তোমার বউ এর কোনো ছবি আছে তোমার কাছে?
আরিয়ানের কথায় উঠে বসল লোকটি। তারপর পকেট থেকে একটি মানিব্যাগ বের করে তার ভিতর থেকে একটি ছোট পাসপোর্ট সাইজের ছবি বের করে আরিয়ানের হাতে দিয়ে বলল,
— এই লন স্যার এইটা আমার বউ আফিয়া। দুই মাস আগে আমাগো বিয়া হইছে। আর আমার বউ এহন এক মাসের পুয়াতি।
অটো ড্রাইভার এর হাত থেকে ছবিটা দ্রুত হাতে নিল আরিয়ান। ছবিটা দেখে চমকে উঠল সে। কেননা এটা অন্য একটি মেয়ের ছবি রাহির নয়। আরিয়ান এর হাত থেকে রাকিবও ছবিটা নিয়ে দেখলো। তারপর আরিয়ান বলে উঠলো,
— তুমি কি সত্যি বলছ এটাই তোমার বউ আফিয়া?
— তো আমি মিথ্যা কেন বলমু স্যার? আপনের কোন সন্দেহ থাকলে আমার লগে আমার বাড়িতে চলেন। আমার বৌয়ের লগে আপনাগো পরিচয় করায় দিমু নি। আমি বুঝতে পারতাছি না আপনি আমারে এমনে ধইরা নিয়া আইসা মারধর করলেন ক্যান। এখন মুই গাড়ি চালায় খামু কেমনে?
কথাগুলো বলে হু হু করে কাঁদতে লাগল রাজু নামের অটো ড্রাইভারটি। ওনাকে কাঁদতে দেখে এবার নিজেকে অসম্ভব অপরাধী মনে হচ্ছে আরিয়ানের। আরিয়ান ধপ করে মাটির মধ্যে বসে পরলো। তারপর লোকটির হাত ধরে অপরাধীর মতো বলল,
— আমাকে তুমি ক্ষমা করে দেও ভাই। আসলে আমি বুঝতে পারিনি, রাগের বসে তোমার সাথে খারাপ আচরণ করে ফেলেছি। সেজন্য তোমার কাছে আমি অনেক দুঃখিত। আসলে কাকতালীয় ভাবে তোমার সাথে সব কিছু মিলে গেছে। আর তাতেই এত ভুল!
— মুই তো আপনের কথা কিছুই বুঝতে পারতাছি না স্যার। আপনি আসলে কি কইবার চাইতাছেন? আর আমারে মারার পিছনে আসলে কারণটা কি? আমারে সবকিছু খুইলা কন তো। আমি সব কিছু জানবার চাই।
অটো ড্রাইভার রাজুর কথা শুনে এবার রাকিব এক এক করে সকল ঘটনা খুলে বললো ওর কাছে। সবকিছু শুনে রক্তাক্ত অবস্থায় অটো ড্রাইভার হাসতে লাগল। ওকে হাসতে দেখে বেক্কলের মত তাকিয়ে রইলো রাকিব আর আরিয়ান। তারপর অটো ড্রাইভার হাসতে হাসতে বলে উঠলো,
— মুই বুঝতে পারছি স্যার আপনার মনের কষ্টডা। আমি বুঝতে পারছি সব। কিন্তু আমার মনে হয় আপনার বউ আপনার লগে দুষ্টামি করছে। তা ছাড়া আর কিছুই না। হেতি আপনারে পরীক্ষা করতে চাইছে হয়তো। আপনি হেতিরে কতটা ভালবাসেন এটা জানবার লাইগা এমন করছে। কিন্তু মাঝখান থাইকা আমি আপনেদের হাতের এত গুলা মাইর খাইলাম।
অটো ড্রাইভার এর সকল কথাগুলো শুনে পকেট থেকে একটি চেক বই বের করল আরিয়ান। তারপর তার মাঝে সাইন করে দিয়ে পাঁচ লাখ টাকার চেক হাতে তুলে দিলো অটো ড্রাইভার এর। তারপর অপরাধীর মত বলে উঠল,
— তুমি কিছু মনে করো না ভাই। আসলে আমার ভুলবশত তোমার সাথে এমন করাটা একদম’ই উচিত হয়নি। প্রথমেই সবকিছু জেনে নেওয়া উচিত ছিল আমার। আসলে কি করবো বলো তো, আমি আমার বৌকে অসম্ভব ভালোবাসি তাই ওর মুখে এমন কথা শুনে সহ্য করতে পারিনি। নিজে হিতাহিত শূন্য হয়ে পরেছিলাম। তুমি আমাকে ক্ষমা করে দিও আর এইটা আমার তরফ থেকে তোমার এবং তোমার বউ বাচ্চার জন্য উপহার। তুমি দয়া ভেবো না এটাকে, এটা ভালোবেসে আমি তোমায় দিলাম। আর কখনো কোনো প্রয়োজন পড়লে অবশ্যই আমার সাথে যোগাযোগ করবে। এই নাও এটা আমার কার্ড কখনো কোনো প্রয়োজন হলে নির্দিধায় আমার কাছে চলে এসো। আর আমি সত্যিই ভিষন দুঃখিত।
আরিয়ানের কথা শুনে ওর হাত থেকে টাকার চেক টা নিয়ে, তারপর ঠোঁটের পাশে লেগে থাকা রক্তটা হাত দিয়ে মুছে ফেলে বলল,
— আপনে আমার কাছে এমনে ক্ষমা চাইয়েন না স্যার। আমি বুঝতে পারছি আপনের মনের দুক্কুডা। আসলে আপনের বউডা অনেক ভাইগ্যবান যে আপনের মত একখান জামাই পাইছে। এহুনকার যুগে তো এমন জামাই কোন হানে দেখাই যায় না। আর স্যার আপনের এই ট্যাহা মুই নিতে পারমু না। আপনি খালি আমারে ২০০ হান ট্যাহা দেন আমি ডাক্তাররে দেখাইয়া ওষুধ খাইবার চাই। আর এইডা নিজের কাছে রাখেন আমি যে টাকা কামাই করি আমার ওটা দিয়েই সংসার ভালোমতো চইলা যায়। তাই আমাদের ট্যাহা দেওয়া লাগবো না। মুই কিছু মনে করি নাই।
অটো ড্রাইভার এর কথা শুনে নিজেকে বড্ড বেশি অপরাধী মনে হচ্ছে আরিয়ানের। ও আর সহ্য করতে পারল না, অটো ড্রাইভার কে বুকে জড়িয়ে নিল। একটু পর আবার ছেড়ে দিয়ে বলতে লাগলো,
— ভাই আমি সত্যিই আজ একটা কথা মন থেকে মেনে নিয়েছি। সবাই যেমন বলে যে বড় লোকের চেয়ে গরিবের মন অনেক বড় হয়। সেটা আজকে আমি তোমার থেকে প্রমাণ পেলাম। সত্যিই তোমার মনটা অনেক বড়। আমি ভাবতে পারছি না আমি এত ভালো একটা মানুষকে কিভাবে এভাবে মারতে পারলাম। নিজেকে বড্ড বেশি অপরাধী মনে হচ্ছে আমার। ভাই এই টাকা টা তুমি রাখো। এটা আমি তোমাকে মারার জন্য বা অন্য কোনো কারণে দিচ্ছি না। এটা আমার পক্ষ থেকে তোমার জন্য হাদিয়া মনে করো। তুমি দয়াকরে টাকাটা রাখো। নইলে আমি নিজেকে কখনোই ক্ষমা করতে পারবোনা। আর এটা কে কোন দান ভেবোনা, এটা আমার ভালোবাসা তোমার জন্য। তোমার ছোট ভাই হিসেবে।
আরিয়ানের কথা শুনে আর না করতে পারল না অটো ড্রাইভার। চেকটা এবার নিজের পকেটে রেখে বলল,
— আপনের জন্যে অনেক দোয়া রইলো ভাই। আপনি যেন নিজের বউয়ের ভালোবাসা খুব তাড়াতাড়িই পাইয়া যান। আমি এখন যাই অনেক রাইত হইয়া গেল আমার বউডা মনে হয় আমার লেইগা চিন্তা করতেছে।
তারপর আরিয়ান আর রাকিব অটো ড্রাইভারকে ধরে নিয়ে গাড়িতে বসিয়ে একটি বড় হাসপাতালে নিয়ে গেল। সেখানে লোকটাকে ডাক্তার দেখিয়ে ভালো করে রক্ত পরিষ্কার করে, ঔষুধ কিনে বাড়ি পাঠিয়ে দিলো। ডাক্তার জানালো ওর তেমন কিছু হয়নি। দুদিন রেস্ট নিলেই ঠিক হয়ে যাবে।
অটো ড্রাইভার কে ওর বাড়ির সামনে নামিয়ে দিয়ে গাড়ি নিয়ে চলে যেতেই, অটোওয়ালা মনে মনে বলতে লাগল,
— আরে শালা আর কিছু ট্যাকা বেশিও দিলো না! মাত্র পাঁচ লাখ ট্যাকা দিয়ে চলে গেল। যার জন্যে মাইর খাইয়াও এত ভালো হওনের নাটক কইরলেম, এত মিথ্যা কথা কইলাম। তারপরেও আমারে আর কিছু ট্যাকা বেশি দিলো না। যাকগে পাঁচ লাখ ট্যাকা তো পাইছি আপাতত এটা দিয়াই কাম চালাই। পরে ঠিকানা তো আছেই হেতির। হেই ঠিকানা মতো যাইয়া আরো ট্যাকা হাতানো যাইবো।
(অটো ড্রাইভার রাজু আসলে একজন পাকা জুয়ারু। সে সারাদিন রাস্তাঘাটে অটো চালিয়ে টাকা রোজগার করে। তারপর সেই টাকায় জুয়া খেলে। আর রাতে বাসায় ফিরে বউয়ের সাথে খারাপ আচরণ করে যৌতুকের টাকা আনার জন্য। সাথে যাত্রাপালায় অভিনয়ও করেছে অনেকবার। আর সে খুব ভালভাবেই বুঝতে পারে কার মন কেমন। সে ভিষন ধুর্তবাজ লোক। সে জন্যই আরিয়ানের সাথে এত ভাল হওয়ার নাটক করেছে সে। কারন সে জানতো এই টাকাটা আরিয়ান তাকে দিবে। আর পারলে আরো কিছু টাকা বেশি দিবে। কিন্তু বেশি না পাওয়ায় রাগ করে এ ধরনের কথাগুলো বলল লোকটি।)
——————————
অটো ড্রাইভার কে বাসায় পৌঁছে দিয়ে আরিয়ান রাকিবকে নিয়ে ওর বাসার দিকে রওনা হয়েছে। কিন্তু মাঝ রাস্তায় আসতেই রাকিব ওকে গাড়ি থামাতে বলে। ওর কথামত গাড়ি থামিয়ে ওর দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকায় আরিয়ান। ওকে এভাবে তাকাতে দেখে রাকিব মুচকি হেসে বললো,
— জানো আরিয়ান, আজকে আমার মন থেকে সব দ্বিধা দ্বন্দ্ব শেষ হয়ে গেছে। তোমার প্রতি অগাধ বিশ্বাসের সৃষ্টি হয়েছে আমার মনে। আমি বুঝতে পেরেছি সারা পৃথিবীতে আমার বোনের জন্য বেস্ট পাত্র হিসাবে তুমি ছাড়া আর কেউ নেই। তুমি’ই একমাত্র আমার বোনকে সারা জীবন সুখে রাখার যোগ্য। আমার বোন পৃথিবীর সেরা স্বামীকেই পেয়েছে। সত্যিই আজ খুব খুশি হয়েছি আমি। তোমাকে এতটা কেয়ারিং হাসবেন্ড হিসেবে দেখে। সাথে তুমি অনেক ভালো একজন মানুষও। নইলে এত বড় একজন মানুষ হয়ে সামান্য অটো ড্রাইভারের কাছে যে কেউ এভাবে ক্ষমা চাইতে পারে না। সত্যিই তুমি বেস্ট।
— না ভাইয়া আপনি ভুল বলছেন। আমার জন্য আপনার বোন আমার পৃথিবীতে সবচাইতে শ্রেষ্ঠ উপহার। আমি ওকে অসম্ভব ভালোবাসি। আর এতটা ভালবাসি বলেই এতটা কেয়ার করি। জানেন ভাইয়া ওর মুখে যখন শুনেছি ও কোন টেরা অটো ড্রাইভারকে ভালোবাসে, আমি পাগলের মত হয়ে গিয়েছিলাম। কারন আমি ওকে ছাড়া অন্য কিছু বুঝিনা। জানেন ভাইয়া আমি ওকে নিজের প্রপার্টি কেন বলি? কারণ ও আমার হার্ট। আর নিজের হার্ট তো শুধু নিজেরি থাকে তাই না? এটা তো অন্য কাউকে দেওয়া যায় না। কারন হার্ট ছাড়া তো মানুষ মারা যায়। তেমন আপনার বোনও আমার হার্ট। ওকে যদি অন্য কাউকে দিয়ে দেই, তাহলে আমি বেঁচে থাকতে পারবো না ভাইয়া। মরে যাবো আমি।
আরিয়ানের কথা শুনে চোখে পানি এসে যাওয়ার উপক্রম হল রাকিবের। সত্যিই ও মনে মনে অসম্ভব খুশি আজ। নিজের বোনের জন্য এতটা কেয়ারিং একজন হাসবেন্ড এবং ভালবাসার মানুষ পেয়েছে বলে। এতদিন নিজের চোখে দেখেছে কতটা ছটফট করেছে আরিয়ান রাহির জন্য। রাকিব মুচকি হেসে আরিয়ানকে একবার বুকে জড়িয়ে নিয়ে আলিঙ্গন করল। তারপর দুজনে আরো কিছুক্ষন গল্প করে বাসার দিকে রওনা হলো।
চলবে,,,,,
You are my property
Part 31
M Sonali
ফোন হাতে নিয়ে জানালার কাছে এসে দাঁড়ালাম আমি। কারণ রাই এর সাথে প্রয়োজনীয় কিছু কথা বলার আছে আমার। আর তখন’ই জানালা দিয়ে দেখতে পেলাম দূরে একটি কালো রঙের গাড়ি দাঁড়িয়ে। গাড়িটাকে দেখে একটুও চিনতে অসুবিধা হলো না আমার। গাড়িটা আর কারো নয় এটা রাজের গাড়ি। আর তখনই গাড়ি থেকে নেমে এল ভাইয়া আর রাজ। দুজনে কাছাকাছি এসে মুখোমুখি দাঁড়িয়ে কিছু গল্প করতে লাগলো। যদিও এখান থেকে ওদের কথা শুনতে পাচ্ছি না। তবে বেশ ভালই বুঝতে পারছি ওরা আমাকে নিয়ে আলাপ করছে। আমি রুমের লাইটটা অফ করে দিয়ে জানালার পাশে এসে দাঁড়ালাম। বেশ কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে রইলাম সেখানে। ওরা কি করে সেটা দেখার জন্য। গলার সাথে থাকা ইয়ার ফোনটা কানে লাগিয়ে নিলাম আমি। তারপর চুপটি করে দাঁড়িয়ে থেকে ওদের দিকে তাকিয়ে রইলাম। এভাবে কেটে গেল বেশ কিছুক্ষণ। তারপর আমি রুমের মধ্যে ঢুকে গেলাম। যখন দেখতে পারলাম ভাইয়া রাজের থেকে বিদায় নিয়ে বাসার দিকে ফিরছে তখনই। রুমের মাঝে গিয়ে কানের ইয়ারফোন টা খুলে রেখে ফোনটা হাতে নিয়ে সাইলেন্ট করে দিলাম। তারপর কানের কাছে ধরে একা একাই বলতে লাগলাম,
— হ্যালো রাজু বেবি, তোমাকে ভাইয়া দেখে ফেলেনিত? অনেক বাঁচা বেঁচে গেলাম। আমি তো ভেবেছিলাম তুমি আমার ভাইয়ার কাছে ধরা না পড়ে যাও। সে যাইহোক এখন কেমন আছো বলো বেবি?
এতোটুকু কথা বলতেই ভাইয়া এসে রুমের মাঝে প্রবেশ করল। আর অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল আমার দিকে। ভাইয়াকে দেখে ফোনটা কানের কাছে ধরে বলে উঠলাম,
— আচ্ছা বাবু এখন ফোনটা রাখো। তোমার সাথে পরে কথা হবে।
কথাটা বলেই ফোনটা কেটে দিয়ে লক করে পাশে রেখে দিলাম। ভাইয়া আমার সামনে এগিয়ে এসে রাগি চোখে আমার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো,
— তুই এতক্ষণ কার সাথে কথা বলছিলি রাহি?
আমি ভাবলেশহীনভাবে অন্যদিকে তাকিয়ে বলে উঠলাম,
— আমি তোমাকে বলেছি ভাইয়া আমি রাজু নামের একটা ট্যাড়া অটো ড্রাইভারকে ভালোবাসি। আর আমি এতক্ষণ তার সাথেই কথা বলছিলাম। তুমি কেন আমাকে জিজ্ঞেস করছো এ কথা বলতো? আর তোমরা যেটা করেছ সেটা কিন্তু মোটেও ঠিক করোনি ভাইয়া? এভাবে না জেনে একটি অটো ড্রাইভার কে মারা তোমাদের কিন্তু একদমই উচিত হয়নি। আর সত্যি করে বলতো ওই আরিয়ানের সাথে তোমার কিসের সম্পর্ক? তুমি ওর সাথে কেন ছিলে এতক্ষণ?
আমার কথা শুনে ভাইয়া অবাক চোখে আমার দিকে তাকাল। তারপর থতমত খেয়ে বলে উঠলো,
— তুই কি করে জানলি আমরা অটো ড্রাইভার কে মেরেছি? আর আমি এতক্ষণ আরিয়ানের সাথে ছিলাম?
— আমাকে আমার রাজু বলেছে।
— রাজু বলেছে মানে? তার মানে কি ঐ অটো ড্রাইভারটাই তোর রাজু? কিন্তু ও তো বলেছিলো ওর বউ আছে তাও আবার প্রেগন্যান্ট?
— আরে ভাইয়া তুমি কি পাগল হয়েছ? ওই অটো ড্রাইভার কে কেন ভালোবাসতে যাব আমি? উনি আমার রাজু নয়। বরং তোমরা যখন ওকে ধরে নিয়ে যাও তখন আমার ভালোবাসার অটো ড্রাইভার রাজু তোমাদের আশেপাশে ছিল। আর তোমরা যখন সবার কাছে ওর খোঁজ করছিলে তখন ও ফোন করে আমাকে সবকিছু বলে। যার কারণে আমি সব শুনেছি বুঝলে। আর তোমরা শত চেষ্টা করেও রাজুকে খুঁজে পাবে না। কারণ ওর ঠিকানা আমি ছাড়া আর কেউ জানে না। আর আমি তোমাদের মরে গেলেও ওর ঠিকানা বলব না। এখন যাও তো ভাইয়া আমার রাজুর সাথে কথা বলতে হবে।
আমার কথা শুনে ভাইয়া রাগে হাতের মুঠো শক্ত করে ফেলল। সেটা দেখতেই ভয়ে বুক কেঁপে উঠলাম আমার। আমি দু পা পিছিয়ে গিয়ে ফোনটা হাতে নিয়ে ফাঁকে সরে গেলাম। ভাইয়া কোন কিছু না বলে রাগি চোখে আমার দিকে তাকিয়ে থেকে রুম থেকে বেরিয়ে চলে গেল। আমি গিয়ে দ্রুত দরজাটা লাগিয়ে দিলাম। তারপরে ইয়ারফোন ফোনটা আবারো কানের মধ্যে দিলাম। ওটা কানের মধ্যে দেওয়ার বেশ কিছুক্ষণ পরে শুনতে পারলাম ফোনের শব্দ। তার মানে ভাইয়া আরিয়ানের কাছে ফোন করেছে। আমি হাসি মুখে ইয়ারফোনটা ভালোভাবে কানের মাঝে দিয়ে চুপ করে বসে রইলাম। কি কথা হয় ওদের মাঝে সেটা শুনতে।
( আপনারা সবাই হয়তো ভাবছেন যে ওদের কথা আমি কিভাবে শুনতে পাচ্ছি? তাহলে শোনেন আসল ঘটনা! আমি রাই এর সাথে অনেক আগেই প্ল্যান করে আরিয়ানের জামার সাথে ছোট একটি মাইক্রোফোন লাগিয়ে দিয়েছি। আর সেটার মাধ্যমে ওর সব কথা সব কিছু আমি এখানে বসে থেকেই শুনতে পাচ্ছি। জানতে পারছি ও কোথায় যাচ্ছে কি করছে সব কিছুই। কিন্তু বেচারা আরিয়ান কোন কিছুই জানোনা। আর সেই মাইক্রোফোনের সুবিধার্থেই আমি এতকিছু জানি। ওরা তখন কি করেছে না করেছে সবই আমার জানা। হিহিহি রাহি তোর কত বুদ্ধি রে। আই এম প্রাউড অফ মি😁)
ভাইয়ার ফোন রিসিভ করে ওই পাশ থেকে আরিয়ান বলে উঠলো,
— কী হয়েছে ভাইয়া? এখন’ই তো আমাদের দেখা হয়েছিল তাহলে আবার ফোন করলেন কেন?
— আরিয়ান তোমার সাথে আমার কিছু জরুরী কথা আছে। আমরা ভুল করে ফেলেছি!
ভাইয়ার কথা শুনে আরিয়ান চিন্তিত গলায় বলে উঠলো,
–কী বলছেন ভাইয়া? কি এমন হয়েছে এত টুকু সময়ের মাঝে?
— আরিয়ান রাজু নামের ঐ ট্যাড়া অটো ড্রাইভার এখনো আছে। আর আমরা ভুল একজনকে মেরেছি। আর আসল অটো ড্রাইভার আমাদের আশে পাশেই ছিল। আমি রাহির কাছে এখন সবকিছু শুনতে পারলাম। ও এতক্ষণ তার সাথে কথা বলছিল। ব্যাপারটা আমার একদমই সুবিধার মনে হচ্ছে না আরিয়ান। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এর একটি ব্যবস্থা করতে হবে। নইলে সবকিছু হাতের বাইরে চলে যাবে। আমার মনে হয় রাহিকে সব সত্যিটা বলে দেওয়া উচিত এখন।
ভাইয়ার কথার উত্তরে কিছুক্ষণ চুপ থেকে একটা পাগলের মত প্রশ্ন করে উঠল আরিয়ান। ওর প্রশ্ন শুনে ইয়ারফোন কানে আমি হাসতে হাসতে বিছানায় কুটিকুটি হয়ে পড়ে যাচ্ছি। প্রশ্নটা ছিল এমন,
— আচ্ছা ভাইয়া আমার এক চোখকি ট্যারা? আমাকে কি অন্য রকম দেখতে? মানে দেখতে ভালো নই আমি? সত্যি করে বলেন তো ভাইয়া?
আরিয়ান এর এমন প্রশ্নে ভাইয়া অবাক হয়ে কিছুক্ষণ চুপ করে রইলো। হয়তো বোঝার চেষ্টা করছে আরিয়ান হঠাৎ এটা কি প্রশ্ন করল? তারপর কিছুটা ধমকের সুরে বলে উঠল,
— এসব তুমি কি বলছো আরিয়ান? তোমার কি মাথা ঠিক আছে? আমি তোমাকে কি বলছি আর তুমি এসব কি বলছ পাগলের মতো?
ভাইয়ার কথায় আরিয়ান এবার অসহায় কন্ঠে বলে উঠলো,
— তো কি করব ভাইয়া আমার কেন জানি না বারবার মনে হচ্ছে রাহি আর কাউকে নিয়ে না আমাকে নিয়ে বলছে। হয়তো ওর কাছে আমার চোখ টাকে ট্যারা মনে হয়। আমাকে দেখতে ভালো লাগে না হয়তো। জানেন ভাইয়া সকাল থেকে আমি অনেকবার আয়না দেখেছি আর কেন জানিনা এখন আমার মনে হচ্ছে আমার এক চোখ সত্যিই ট্যারা। আর আমাকে দেখতে ভালো নয়। সত্যি করে বলেন তো ভাইয়া এটা কি ঠিক?
আরিয়ানের কথায় ভাইয়া বেশ কিছুটা ব্যাক্কল হয়েছে এটা বেশ ভালোভাবেই শুনে বুঝতে পারছি আমি। তাই ভাইয়া কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে আবারো জোরে ধমকের সুরে বলে উঠল,
— আরিয়ান তুমি সত্যি পাগল হয়ে গেছো। শুনেছি প্রেমে পড়লে মানুষের জ্ঞান বুদ্ধি সব লোপ পায়। কিন্তু তোমাকে তো দেখছি শুধু জ্ঞান বুদ্ধি নয় সাথে তোমার মাথার তারও ছিড়ে গেছে হয়তো দুই একটা। একদম পাগল হয়ে গেছো তুমি। এসব কি বলছ তুমি আবোল তাবোল? তোমার মতো হ্যান্ডসাম সুন্দর ছেলে পুরা বাংলাদেশে আর একটা নেই। আর তুমি কিনা হতে যাবে ট্যারা! এটা কি মানা যায় বল?
ভাইয়ার কথা শুনে কিছুক্ষন চুপ করে রইলো আরিয়ান। ওকে চুপ করে থাকতে দেখে ভাইয়া আবারো বলে উঠল,
— এখন ওসব কথা বাদ দাও আরিয়ানা। আর চিন্তা করো এখন কি করা যায়? সবকিছু কি বলে দেওয়া উচিত এখন রাহিকে? নাকি আরো সময় নিতে চাও তুমি? কিন্তু ভেবে দেখো আবার যেন সবকিছু উল্টা না হয়ে যায়। রাহি যেন সত্যি সত্যি আবার ভুল পথে পা না বাড়ায়?
— ভাইয়া রাহিকে সবকিছু বলে দেওয়ার আগে ওকে একবার টেস্ট করতে হবে। আমাদের এই কষ্টগুলো বিফলে গিয়েছে নাকি সব কিছু সফল হয়েছে। সেটা টেস্ট না করে সবকিছু বলে দিলে তাহলে সব কষ্ট বৃথা যাবে আমাদের।
— তা তুমি ঠিকই বলেছো আরিয়ান। কিন্তু এখন তাহলে কি করা যায় বলতো আমায়?
— ভাইয়া সেটা আমি ফোনে নয় আপনাকে কাল সামনা সামনি বলব। এখন তাহলে ফোনটা রাখছি আমাকে একবার আয়নায় নিজের চোখটা দেখতে হবে!
— মানে?
— সরি ভাইয়া মানে বললাম আমাকে এখন ওয়াশরুমে যেতে হবে।
কথাটা বলেই আরিয়ান ফোনটা কেটে দিলো। আরিয়ানের কথাটা ভাইয়া না বুঝলেও আমি বুঝেছি। তাই আমি হাসতে হাসতে বিছানায় গড়াগড়ি খেতে লাগলাম। জামাই একটা পেয়েছি কপালগুণে। এভাবে আর কিছুদিন চললে বেচারা সত্যিই ট্যাড়া হয়ে যাবে।
চলবে,,,,,,,,,,,,