You are my property,Part_28,29 Bonus part

You are my property,Part_28,29 Bonus part
M Sonali
Part-28

ছাদে বসে বসে সেই কখন থেকে এক নাগাড়ে পাগলের মতো হেসে চলেছি আমি। কিছুতেই যেনো নিজের হাসি টাকে থামাতে পারছিনা। সারাদিনের সব ঘটনা গুলোর কথা মনে করছি আর হাসতে হাসতে পাগল হয়ে যাচ্ছি আমি। সত্যিই আজকে দুলাভাই ডাকাতে রাজের মুখটা দেখার মতো হয়েছিল। ইচ্ছে তো করছিল ওর নাকটা ধরে একটু টেনে দেই। একে তো চোখ ট্যাড়া তার ওপর আবার অটো ড্রাইভার। ভাবতেই মনের ভিতর থেকে এক পৈশাচিক হাসি বেড়িয়ে আসছে আমার। হঠাৎ ফোনের রিংটোনের শব্দে ধ্যান ভাঙলো আমার। আমি এবার হাসি কিছু টা কমিয়ে নিয়ে ফোনের স্ক্রীনের দিকে তাকালাম। আর তাকাতেই দেখতে পেলাম রাই ফোন করেছে। তবে আমার ফোনে নাম্বারটা রাই দিয়ে সেভ করার নেই। বরং রাবিদা নামে সেভ করা। কেননা আমি চায়না ভাইয়া কখনো ধরে ফেলুক যে রাই আমার সাথে কথা বলে। আর আমি সবকিছু জানি। তাই আমি রাবিদা নামে নাম্বারটা সেভ করে রেখেছি। এবার ফোনটা রিসিভ করে কানে ধরে হাসতে লাগলাম। আমাকে এভাবে হাসতে দেখে কিছুটা রাগী গলায় বলে উঠলো রাই,

— হ্যালো ভাবি কি হয়েছে কি তোমার তুমি এভাবে পাগলের মত হাসছো কেন? তুমি জানো এদিকে কি হয়েছে? ভাইয়া কি করেছে জানো তুমি?

রাই এর কথা শুনে আমি এবার হাসি থামিয়ে কিছুটা সিরিয়াস মুড নিয়ে জিজ্ঞেস করলাম,

— কি হয়েছে, কি করেছে তোমার ভাইয়া?

আমার কথার উত্তর রাই কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলতে শুরু করলো,

— কি করে নাই সেটা বল! রুমের মাঝের সব কিছু ভেঙে চুরে চুরমার করে ফেলেছে। পাগলের মত করছে। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে বারবার নিজের চোখ দেখছে আর আমাকে জিজ্ঞেস করছে ওর চোখদুটো কি ট্যারা নাকি? তুমি’ই বলো ভাবি! ভাইয়ার মতো হ্যান্ডসাম ছেলে সারা ঢাকা শহরের ভিতরে আর দুইটা আছে? আর সে নাকি ট্যাড়া হতে যাবে বলতো?

রাইয়ের কথা শুনে এবার যেন দম ফাটানো হাসি শুরু হলো আমার। আমি হাসতে হাসতে চেয়ারের উপর থেকে ছাদের উপর ধপ করে বসে পড়লাম। তবুও হাসি যেন কিছুতেই থামাতে পারছি না। তারমানে আমার ওষুধ টা ঠিক কাজে লেগেছে। তীরটা সঠিক জায়গাতেই ছুড়েছি আমি। ভাবতেই যেন অসম্ভব আনন্দ লাগছে আমার। আমি হাসতে হাসতে মরে যাচ্ছি এমন অবস্থা। আমাকে এভাবে হাসতে দেখে রাই এবার ধমকের সুরে বলে উঠলো,

— ভাবি কি হয়েছে বলোতো? তুমি এভাবে হাসছো কেন? আমি তোমাকে যেটা বলছি সেটার উত্তর দাও। আচ্ছা তুমি ভাইয়ার সাথে কিছু করোনি তো? ভাইয়া হঠাৎ এমন করছে কেন? ভাইয়া তো আগে কখনো এমন করেনি? নিশ্চয়ই তুমি কিছু করেছ, কি করেছ বলো তো?

আমি হাসতে হাসতে বলে উঠলাম,

— তেমন কিছু করিনি রাই। শুধু একটা তীর ছুড়েছি আর আমার তীরটা গিয়ে সঠিক জায়গাতেই লেগেছে। এবার বোঝো মজা কাকে বলে। আমার সাথে অভিনয় করা তাই না? এখন বোঝো ঠেলা। তা তোমার ভাইয়া এখন কোথায় শুনি? মহাশয় কি এখনো নিজের চোখ দেখতে ব্যস্ত, নাকি ভাঙচুর করায়?

— ভাইয়া বাসায় নাই একটু আগেই সব ভাঙচুর করে বাসা থেকে বেরিয়ে গেছে। যাওয়ার আগে বলল কোন অটো ড্রাইভারকে নাকি খুঁজবে, কি দরকার আছে তাই।

অটো ড্রাইভারের কথা শুনতেই এবার হাসি থামিয়ে নড়েচড়ে বসলাম আমি। তারপরে বলে উঠলাম,

— অটো ড্রাইভারকে খুঁজছে মানে? অটো ড্রাইভারকে দিয়ে কি হবে ওনার?

— সেটা আমি জানি না ভাবি। তবে দেখে মনে হল অসম্ভব রেগে আছে ভাইয়া। ভাইয়া এতটা রাগ কখনোই করেনি। আর আমি জানিনা এখন কোন অটো ড্রাইভার কি করেছে, আর কেনো তাকে খুঁজতে গেল ভাইয়া।

কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলে উঠলাম আমি,

— আচ্ছা তুমি চিন্তা করো না। তেমন কিছুই হবে না। আর তোমার ভাইয়া যাকে খুঁজতে গেছে তাকে শুধু ঢাকা শহর কেন, সারা বাংলাদেশে খুঁজেও পাবে না। তাই ওইসব চিন্তাভাবনা বাদ দাও আর কুল থাক বেবি। নো প্রবলেম আমি আছি তো। শুধু আগে আগে দেখে যাও কি হয়। আর হ্যাঁ ভুলেও কিন্তু কারো কাছে বলবে না যে তুমি আমার কাছে সবকিছু খুলে বলেছো। তাহলে কিন্তু,,,,,!

— হয়েছে হয়েছে বলবোনা বলছি তো! আর ভয় দেখাতে হবে না ভাবি জান।

— হুমম লাভ ইউ মাই কিউটি ননদিনী।

— লাভ ইউ টু মাই সুইটি ভাবিজান।

রাই এর সাথে কথা বলে ফোন কেটে দিতেই ছাদের উপর এসে হাজির হলো ভাইয়া। ভাইয়ার দিকে এক নজর তাকাতেই অনেকটা কেঁপে উঠতাম আমি। কেননা ভাইয়াকে অসম্ভব রাগি মুডে দেখা যাচ্ছে। দেখেই বোঝা যাচ্ছে সে অনেক রেগে আছে। আমি সেদিকে গুরুত্ব না দিয়ে আবারও আমার ফোন টিপায় ব্যাস্ত হয়ে পড়লাম। ভাইয়া আমার পাশে এসে দাঁড়িয়ে বললো,

— রাহি, কি করছিস তুই এখানে?

আমি ভাইয়ার দিকে না তাকিয়েই ভাবলেশহীন ভাবে উত্তর দিলাম,

— দেখতে পাচ্ছ না ভাইয়া কি করছি! বসে বসে ফোন টিপছি। কেনো কিছু বলবে?

আমার প্রশ্ন শুনে ভাইয়া বেশ কিছুক্ষন চুপ করে থেকে নিজেকে শান্ত করল। ভাইয়ের দিকে না তাকিয়ে আমি ভাইয়ার অনুভূতি ঠিক বুঝতে পারছি। কিন্তু কোন কথা বলছি না। মোবাইল টেপায় ব্যস্ত রাখছি নিজেকে। ভাইয়া কিছু টা রাগি সুরে বলে উঠলো,

— এই অটো ড্রাইভার রাজুটা কে?

ভাইয়ার প্রশ্নে আমি ওর দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বললাম,

— মানে?

— মানে এই অটোর ড্রাইভার রাজু টা কে? যার এক চোখ লক্ষীটেরা আর তুই তাকে ভালোবাসিস? এসব কি রাহি? আমাকে আগে কেন বলিসনি তুই। আর এই ছেলেটা আসলে কে?

আমি এবার চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে সিরিয়াস মুড নিয়ে ভাইয়ার দিকে আতঙ্কিত চোখে তাকিয়ে বলে উঠলাম,

— তুমি এসব কথা কোথা থেকে জানলে ভাইয়া? আমি তো এসবের কোনকিছুই তোমায় বলিনি?

— আমি কোথা থেকে জানলাম সেটা তোর জানতে হবে না। আগে তুই বল এই ছেলেটা কে? আর তোর সাথে এর সম্পর্ক কতদিন থেকে চলছে?

আমি এবার ভাইয়ার দিক থেকে চোখ সরিয়ে শান্ত ভাবে চেয়ারে বসে শান্ত গলায় বলে উঠলাম,

— আমি ওকে ভালোবাসি ভাইয়া। অ্যাকচুয়ালি আমি স্বপ্ন দেখেছিলাম। স্বপ্নে ওর সাথে আমার বিয়ে হয়েছিল। তবে স্বপ্ন ওর নাম ছিল রাজ চৌধুরী, আর বাস্তবে ওর নাম রাজু। স্বপ্নে ও অনেক হ্যান্ডসাম ছিল। তবে বাস্তবে ও একটু ট্যাড়া কিন্তু বেশ হ্যান্ডসাম। আমি ওকে খুব ভালোবাসি ভাইয়া। আর খুব তাড়াতাড়ি আমরা বিয়েও করছি। আমি তোমাদের জানাতাম কিন্তু কিছুদিন পর। জানিনা তুমি এখন কিভাবে যেনে গেলে সব?

ভাইয়া আমার সামনে ধপ করে হাঁটু গেড়ে বসে আমার দু গালে হাত রেখে নরম সুরে বলে উঠলো,

— দেখ রাহি তুই এখনো অনেক ছোট। তোর এখনও ভালো মন্দ বোঝার বয়স হয়নি। আর স্বপ্নে তুই যেরকম দেখেছিস সেরকম না হলে তাকে কিভাবে ভালবাসতে পারিস তুই? এ সব থেকে সরে আয়। আর তাছাড়া তোর সাথে একজন অটো ড্রাইভার যায় না। তুই আমাকে বল ছেলেটা কে? আমি ওকে দেখে ছাড়বো?

আমি এবার কাঁদো কাঁদো মুখ করে বললাম,

— এসব তুমি কি বলছো ভাইয়া? এটা তুমি কি বলতে পারো। রাজু একজন অটো ড্রাইভার বলে কি ওকে ভালোবাসার অধিকার নেই আমার? আমি শুধু ওকেই ভালবাসি আর ওকেই বিয়ে করব। তাতে তোমরা মানলে মানবে, নইলে আমি ওর সাথে চলে যাব। তোমরা আমাকে জোর করবে না। আমি যাকে স্বপ্নে আমার স্বামী হিসেবে পেয়েছি। বাস্তবেও তাকে আমার স্বামী হিসেবে পেতে চাই। অন্য কাউকে নয়।

কথাগুলো একনাগাড়ে বলে ভাইয়াকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে দ্রুত ছাদ থেকে নেমে আসলাম আমি। কেননা আমি চাইনা ভাইয়া আমাকে আরো বেশি প্রশ্ন করে আমার মাথা ধরিয়ে দিক। আমি যে প্ল্যানটা করেছি আমি এই প্লানে সাকসেস হবই হব। শুধু রাই যদি আমার সাথে থাকে। কথাগুলো ভাবতে ভাবতেই নিজের রুমে গিয়ে দরজাটা ঠাস করে লাগিয়ে দিলাম আমি।

—————————-

রাত ৮.৪৫ মিনিট

গত তিন ঘন্টা হল পাগলের মত সব অটোতে চেক করে বেরিয়েছে আরিয়ান। এখান থেকে সেখানে, সেখান থেকে এখানে, এভাবে করে চলেছে সে। শুধু খোঁজ করছে রাজু নামে সেই অটো ড্রাইভারকে। যেভাবেই হোক তাকে খুঁজে বের করতে হবে আরিয়ানের। সে কিছুতেই মানতে পারবে না তার রাহি অন্য কাউকে ভালোবাসে। এটা সে কিছুতেই সহ্য করতে পারবে না আরিয়ান। কিন্তু গত তিন-চার ঘন্টা হল খুঁজেও কোনমতেই সেই রাজু অটো ড্রাইভার কে খুঁজে পাচ্ছে না। নাম মিললেও চেহারার সাথে কোন মিল নেই। আর চেহারার সাথে মিললেও নামের সাথে কোনো মিল নেই। এমন হয়েছে বহুবার। হঠাৎ একটি চায়ের দোকানে একটি লোকের দিকে চোখ আটকে গেল আরিয়ানের। আরিয়ান ভালো করে তাকাতেই দেখল একটি ট্যাড়া লোক বসে চা খাচ্ছে। বাইরে একটি অটো দাড় করে রাখা। আরিয়ান আর দেরি না করে দ্রুত এগিয়ে গেল লোকের সামনে। তারপর তার সামনে গিয়ে জিজ্ঞেস করল,

— আপনার নাম কি রাজু? আর আপনি কি একজন অটো ড্রাইভার?

লোকটি কিছুটা বিরক্ত নিয়ে তাকালো আরিয়ানের দিকে। তারপর বলল,

— জ্বি আমি রাজু আর আমি একজন অটো ড্রাইভার। কেন আপনি কিছু বলবেন?

চলবে,,,,,,,

You are my property
Part 29 Bonus part
M Sonali

— আপনার নাম কি রাজু? আর আপনি কি একজন অটো ড্রাইভার?

লোকটি কিছুটা বিরক্ত নিয়ে তাকালো আরিয়ানের দিকে। তারপর বলল,

— জ্বি আমি রাজু আর আমি একজন অটো ড্রাইভার। কেন আপনি কিছু বলবেন?

লোকটির কথা শুনতেই নিজের হাতের মুঠো শক্ত করল আরিয়ান। কিন্তু এখন কারো সামনে লোকটাকে কিছু করতে চায়না সে। তাই মুখে মৃদু হাসির রেখা টেনে বলে উঠলো,

— অ্যাকচুয়ালি আপনার সাথে আমার কিছু কথা আছে। আপনি কি আমাকে একটু সময় দিতে পারবেন?

— ও তা কি কথা শুনি? আমি তো আপনাকে চিনিও না। তাইলে আমি আপনার লগে কেন যামু? আপনার যা কওনের এখানেই কন আমি কোথাও যাইতে পারমু না এহন।

লোকটার কথায় যেন মেজাজটা আরও দ্বিগুন বেশি বিগড়ে গেল আরিয়ানের। তবে যে করেই হোক এখন নিজেকে কন্ট্রোলে রাখতে হবে ওর। এত মানুষের মাঝে কোন গ্যাঞ্জাম করলে সেটা মোটেও ভালো দেখাবে না। তাই নিজেকে আরেকটু শক্ত করে নিয়ে মুখে হাসির রেখা টেনে পকেট থেকে একটি টাকার বান্ডিল বের করে বলল,

— আসলে আমার বোনের কলেজে যাতায়াতের জন্য একটি অটো রিজার্ভ করতে চাই। প্রতিমাসে মোটা অঙ্কের টাকা দেবো অটোওয়ালাকে। আর এডভান্স দেবো এক মাসের জন্য ২০ হাজার টাকা। আপনি কি আমার সাথে যাবেন? আমি আপনার অটো আমার বোনের জন্য রিজার্ভ করতে চাই।

আরিয়ানের হাতে টাকা দেখে এবার চোখ দুটো চকচক করে উঠলো অটো ড্রাইভার রাজুর। সে হাতে থাকা চায়ের কাপটা সরিয়ে রেখে টাকার বান্ডিল এর দিকে বিস্ফোরিত চোখে তাকিয়ে বলল,

— আমি রাজি, আমি রাজি আপনার বোনের অটো ড্রাইভার হতে। এত টাকা একসাথে কখনো কেউ দেয়নি আমায়। আমি রাজি আপনার প্রস্তাবে। চলুন কি বলবেন শুনবো আমি।

লোকটার মুখে সম্মতি পেতেই পৈচাশিক হাসি ফুটে উঠল আরিয়ানের মুখে। কিন্তু হাসিটা বেশিক্ষনের জন্য রইল না। বাহির কথা মনে পড়তেই হাসিটা হাওয়ায় মিলিয়ে গিয়ে আরো বেশি রাগে পরিনত হল। আরিয়ান কোন কথা না বলে নিজের হাতের মুঠো শক্ত করে সামনের দিকে হাটতে লাগল। অটো ড্রাইভার টাকার লোভে আরিয়ানের পিছু আসতে লাগল। তখন’ই আরিয়ান ফোন বের করে মেসেজ করে দিলো রাকিবকে ওর দেওয়া ঠিকানায় চলে আসতে।

অটো ড্রাইভার কে সাথে নিয়ে একটি গোডাউনের ভেতর প্রবেশ করল আরিয়ান। কিছুক্ষণের মাঝেই সেখানে এসে হাজির হলো রাকিব। অটো ড্রাইভার এখানে আসার পর থেকেই আরিয়ানকে বারবার প্রশ্ন করে যাচ্ছে কি কথা বলবে। কিন্তু আরিয়ান কোন প্রশ্নেরই উত্তর দিচ্ছে না। চুপ করে বসে হাতের মুঠো শক্ত করে রাগী ভাবে মাথা নিচের দিকে দিয়ে বসে আছে সে। তাকে এভাবে বসে থাকতে দেখে অটো ড্রাইভার এবার অনেকটা বিরক্ত নিয়ে সেখান থেকে চলে যেতে নেয়। আর তখনই অটো ড্রাইভার এর সামনে এসে দাঁড়ায় রাকিব। রাকিব এর চোখেও রাগ স্পষ্ট। রাগে যেন শরীর জ্বলে যাচ্ছে রাকিব আর আরিয়ানের। কিন্তু কোনো কথা বলছে না ওরা। আরিয়ান চুপটি করে বসে আছে। রাকিব এবার গুটি গুটি পায়ে অটো ড্রাইভার এর সামনে এসে জিজ্ঞেস করলো,

— আপনার নাম রাজু?

— হ আমি রাজু! কিন্তু কি হয়েছে বলেন তো? আর আপনেরা আসলে কেডা। আমার তো আপনেদের এহন সুবিধার মনে হইতাছে না। আমি কি আপনাদের লগে আইসা ভুল করে ফেলাইলাম নাকি?

লোকটির কথা শুনে পিছন থেকে রাগী গলায় বলে উঠলো আরিয়ান,

— তুই রাহিকে ছেড়ে দে রাজু! ওর সাথে আর কোন সম্পর্ক রাখিস না তুই।

আরিয়ানের কথা শুনে পিছন দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকাল লোকটি। তারপর কাছে এগিয়ে গিয়ে জিজ্ঞেস করল,

— রাহি, এই রাহি ডা আবার কেডা?

আরিয়ান এবার নিচের দিক থেকে মুখ তুলে রাজুর দিকে তাকিয়ে দাঁত কিড়মিড় করে বলে উঠলো,

— যার সাথে তুই প্রেম করছিস যাকে তুই ভালবাসিস সে।

আরিয়ানের কথা শুনে কিছুক্ষণ চুপ থেকে কিছু একটা চিন্তা করে লোকটা বলে উঠলো,

— আপনে কি আমার আফিয়ার কথা কইতাছেন?

ওর মুখে আফিয়া নামটা শুনতেই পেছন থেকে রাকিব রাগি ভাবে ওর সামনে এসে বললো,

— আমরা আফিয়ার কথাই বলছি। আফিয়া আমার বোন। তুই ওকে ছেড়ে দে ও আরিয়ানের বিয়ে করা বউ। তুই ওর সাথে সম্পর্ক করিস কোন সাহসে?

রাকিবের কথা শুনে লোকটা যেন অবাক এর শীর্ষে পৌঁছে গেল। তারপর কাঁদো কাঁদো মুখ করে বলল,

— আপনারা এগুলা কি কইতাছেন, আমার আফিয়া আপনার বউ হবো কেমনে? ওর লগে তো দুই মাস আগে আমার বিয়ে হইছে। ওর পেটে আমার বাচ্চা ও আছে। আর আপনারা কি কইতাছেন এগুলা? আমি ওরে জীবনেও ছাড়মু না। আমি ওরে অনেক ভালোবাসি।

এতোটুকু বলতে’ই আরিয়ান আর সহ্য করতে না পেরে পিছন থেকে সজরে একটি লাথি মারলো লোকটার পিঠে। লাথি মারার সাথে সাথে লোকটা মুখ থুবরে নিচে পড়ে গেল। আরিয়ান তার ওপরে গিয়ে এলোপাথাড়ি মারার জন্য প্রস্তুত হল। কিন্তু তার আগেই ওকে ধরে ফেলল রাকিব। তারপর বলল,

— আরিয়ান তুমি শান্ত হও। ওর সাথে আমাকে কথা বলতে দাও। আমার কেন জানি না মনে হচ্ছে এখানে কোন ভুল বোঝাবুঝি হচ্ছে আমাদের।

কিন্তু আরিয়ান যেন কোনো কিছুতেই মানতে চাইছে না। এখন সে পাগলের মত হয়ে আছে। কেউ কিভাবে তার প্রপার্টিতে হাত দিতে পারে? যে প্রপার্টি টা শুধুমাত্র তার, অন্য কারো নয়। অন্য কারো অধিকার নেই তার এই প্রোপার্টির উপর। আরিয়ান গিয়ে লোকটার পিঠে বেশ কয়েকটা কিল ঘুষি মেরে দিল। তখন’ই ওকে ধরে ফেলল রাকিব। তারপর আরিয়ানকে ধাক্কা দিয়ে কিছুটা সরিয়ে দিয়ে বলল,

— আরিয়ান রাগের বশে নিজের ওপর থেকে কন্ট্রোল হারিয়ে ফেলো না। একটু বোঝার চেষ্টা করো ও আমাদের রাহির নাম আফিয়া বলছে। হতে পারে আমাদের রাহির পুরো নাম “আফিয়া আক্তার রাহি”। কিন্তু তার পরেও তো ওর রাহি নামটা জানার কথা তাই না? তাই সব কিছু ঠিক ঠাক জানতে দাও আমায়।

কিন্তু আরিয়ান যেনো নাছর্বান্দা। ও একদম ক্ষেপে হিংস্র বাঘের মত হয়ে রয়েছে। রাকিবের কথা না শুনে ওকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিয়ে রাজু নামের লোকটিকে এলোপাথাড়ি মারতে লাগল ও। মারতে মারতে লোকটার নাক মুখ দিয়ে রক্ত বের হতে শুরু করে দিল। তখন জোর করে সরিয়ে নিল আরিয়ানকে রাকিব। তারপর ধাক্কা দিয়ে দুরে সরিয়ে রাগি গলায় বলল,

— তুমি কি একটা মানুষ এভাবে কেন মারছো লোকটাকে? আগে তো সবকিছু জানতে দাও? আমার বিশ্বাস হয় না এমন একটি মানুষকে রাহি ভালবাসবে। প্লিজ একটু শান্ত হও আমাকে ব্যাপারটা হ্যান্ডেল করতে দাও। তোমার মত রাগ কিন্তু আমারও হচ্ছে আরিয়ান। কিন্তু তবুও আমি সবকিছু না জেনে ওকে মারতে পারি না এভাবে।

রাকিবের কথা শুনে রাগ কন্ট্রোল করতে না পেরে পিছন দিকে ঘুরে দাঁড়ালো আরিয়ান। আরিয়ান কে শান্ত হয়ে দাড়াতে দেখে রাকিব আর দেরি না করে দ্রুত চলে গেল অটো ড্রাইভারের কাছে। তারপর ওর মাথা নিজের কোলে তুলে নিয়ে জিজ্ঞেস করল,

— আচ্ছা তুমি সত্যি করে বলতো তোমার স্ত্রীর নাম আসলে কি?

চলবে,,,,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here