You Are my property,Part_20,21
M Sonali
Part-20
রাস্তার মাঝখানে দাঁড়িয়ে রাজের গাড়ির দিকে এক নজরে তাকিয়ে আছি আমি। রাজ কিভাবে পারলো আমাকে এভাবে চিনেও না চেনার ভান করে আমার থেকে সরে যেতে? ও বলেছিল ও আমাকে ভালোবাসে তাহলে এই কি ওর ভালোবাসার নমুনা? এভাবে কি কেউ কাউকে ভালবাসতে পারে? আমি ওকে মুখে হাজারবার ভালোবাসি না বলা সত্ত্বেও আজ বারবার ওর কাছে ফিরে আসতে চাইছি। তাহলে ও কেন আজ আমাকে এভাবে দূরে ঠেলে দিচ্ছে? কেন চিনেও না চেনার ভান করে পর হয়ে যাচ্ছে আমার থেকে?
কথাগুলো মনে মনে ভাবছি আর এক নজরে তাকিয়ে আছি ফাঁকা রাস্তার দিকে। কারন ততক্ষণে রাজের গাড়ি চেখের আড়াল হয়ে গেছে। হঠাৎ আমার হাতে টান অনুভব করায় রাস্তার মাঝখান থেকে সাইটে এসে দাঁড়ালাম আমি। তারপরে সামনের দিকে তাকাতেই দেখলাম একটি মেয়ে আমার দিকে রাগি ভাবে তাকিয়ে আছে। মেয়েটি রাগি গলায় বলে উঠলো,
— এই মেয়ে তোমার কি কোন বুদ্ধি সুদ্ধি নেই? রাস্তার মাঝখানে এসে দাঁড়িয়ে আছো! আর একটু হলেই তো গাড়ির নিচে চাপা পড়ে মারা যেতে। খেয়াল করেছো একবার তোমার পাশ থেকে যে গাড়ি আসছিল? এখন আমি ঠিক সময় না আসলে কি হতো বলতো?
মেয়েটির কথায় সামনের দিকে ফিরে তাকালাম আমি। তার পর খেয়াল করলাম সত্যিই আমি একদম রাস্তার মাঝখানে দাঁড়িয়ে ছিলাম। আর আমার পেছন থেকে একটি গাড়ি দ্রুতগতিতে ছুটে আসছিলো আমার দিকে, একটুর জন্য হয়তো বেঁচে গেছি আমি। এই মেয়েটি আমায় না বাঁচালে হয়তো এখনি আমাকে হাসপাতালে থাকতে হতো। আমি মেয়েটির দিকে তাকিয়ে মাথা নিচু করে বললাম,
— সরি, আসলে আমি খেয়াল করিনি।
এবার মেয়েটা নিজেকে কিছুটা শান্ত করে আমার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো,
— নাম কি তোমার?
— জ্বি, আমার নাম রাহি।
— তোমার নামের মত তোমাকেও বেশ মিষ্টি দেখতে। আমি আরিশা, এই কলেজেই পড়ি। তুমিও কি এখানেই পড়ো?
— হুমম আমি এবার ফাস্ট ইয়ারে।
— আরে আমিও তো সেইম। বাট তোমাকে তো এখানে দেখিনি আগে? আর তুমি এভাবে রাস্তার মাঝখানেই বা দাঁড়িয়ে ছিলে কেনো? আমি যদি আমার বয়ফ্রেন্ডের সাথে কথা বলতে না আসতাম তাহলে তোমার কি হতো বলোতো?
আরিশার কথার উত্তরে আমি ভাবলেশহীন ভাবে বলে উঠলাম,
— মরে যেতাম, এটাই তো? মৃত্যুকে আমি ভয় পাই না। আমার সাথে যে প্রতিনিয়ত মৃত্যুর চাইতেও কষ্টদায়ক সব ঘটনা ঘটে যাচ্ছে। যেটা মেনে নেওয়া খুবই কঠিন হয়ে পড়েছে আমার সজন্যে।
আমার কথা শুনে আরিশা ভ্রু কুঁচকে বলে উঠল,
— এমন কি ঘটছে তোমার সাথে? যে তুমি মরতে চাইলেও সেটাকে কষ্টদায়ক মনে করছো না?
আমি আরিশার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললাম,
— তেমন কিছু না, বাদ দাও সে সব। এখন বলো তোমার বয়ফ্রেন্ড কোথায়? যার সাথে তুমি এখানে দেখা করতে এসেছিলে?
আমার কথার উত্তরে আরিশা এদিক-ওদিক একবার চোখ বুলিয়ে নিয়ে ঠোঁট উল্টে বলে উঠলো,
— আরিয়ান হয়তো চলে গেছে। ও কি আর জানত যে আমি আবার ব্যাক করে ওকে এখানে খুঁজতে আসবো? জানলে ও এখানেই দাঁড়িয়ে থাকতো।
— আরিয়ান মানে, কোন আরিয়ান?
— আরিয়ান চৌধুরী! চৌধুরী গ্রুপ অফ ইন্ডাস্ট্রিজ এর একমাত্র মালিক আরিয়ান চৌধুরি। ও’ই আমার বয়ফ্রেন্ড।
আরিশার কথা শুনে যেন বুকের ভেতরটা কেঁপে উঠল আমার। অসম্ভব শূন্যতা অনুভব করতে লাগলাম আমি। তবে কি আরিয়ান বলতে কার কথা বলছে আরিশা? রাজ ওর বয় ফ্রেন্ড হয়? তবে কি সত্যি ওগুলো আমার স্বপ্ন ছিল? রাজ আমায় ভালোবাসে না? তাহলে আরিশা কে ও ভালোবাসে? এসব হাজারো চিন্তা যেন মাথার মধ্যে এসে ভর করল আমার। কিচ্ছু ভালো লাগছেনা। ইচ্ছে করছে সারা দুনিয়ার সবকিছু ভেঙেচুরে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে শেষ করে দেই। এমনটা কেন হচ্ছে আমার সাথে? আমি দু পা পিছিয়ে গিয়ে কলেজের গেটের সাথে পিঠ ঠেকিয়ে চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলাম। কেন জানিনা হাত-পা থরথর করে কাঁপছে আমার। কিচ্ছু ভালো লাগছেনা মুখ দিয়ে কোন কথা আসছে না আমার। আরিশা আমার কাছে এগিয়ে এসে আমার হাত ধরে বলল,
— আর ইউ ওকে রাহি? তোমার কি কোথাও কষ্ট হচ্ছে? তুমি এমন করছ কেন?
আমি বেশ কিছুক্ষণ চুপ থেকে নিজেকে কন্ট্রোল করার চেষ্টা করলাম। তারপর আরিশার দিকে তাকিয়ে বললাম,
— আমাকে একটু ধরে ক্লাস রুমে নিয়ে যাবে আরিশা? আমার ভালো লাগছে না কিছু শরীরটা ভীষণ ক্লান্ত লাগছে।
আরিশা আমার কথার কোন উত্তর না দিয়ে আমার হাত নিজের কাধের ওপর আলতো করে ধরে নিয়ে ক্লাসে একটি বেঞ্চে বসিয়ে দিল। আরিশার মুখে চিন্তার ছাপ স্পষ্ট। কিছুক্ষণ সময় এর পরিচয়ে যেনো সম্ভব আপন মনে হচ্ছে ওকে আমার। আরিসা আমার মাথায় আলতো করে হাত বুলিয়ে বলল,
— চিন্তা করো না রাহি। আমাদের সাথে যেটা হয় সব সময় ভালোর জন্যই হয়। নিজেকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করো।
আরিশার কথার অর্থ আমি কিছু বুঝতে পারলাম না। ও কি বিষয়ে আমাকে চিন্তা করতে না করছে? আর কি এমন ভালো হবে আমার সাথে? তবে সেটা চিন্তা করার মত অবস্থাতেও এখন আমি নেই। আমার মনের মাঝে শুধু একটা কথাই বার বার দোল খাচ্ছে যে একটি স্বপ্ন কিভাবে বাস্তবের সাথে এতটা মিলে যেতে পারে। স্বপ্নের মানুষ গুলো কিভাবে বাস্তবে এভাবে ফিরে আসতে পারে। সবকিছু যেন মাথার মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে আমার। এসব কিছুর উত্তর যে করেই হোক আমাকেই খু্ঁজে বের করতে হবে।
কথাগুলো মনে মনে বলে যতটা সম্ভব নিজেকে সামলে নিলাম আমি। তারপর আর আরিশার দিকে তাকিয়ে বললাম,
— তুমি চিন্তা করো না আমি এখন অনেকটাই সুস্থ আছি। আসলে তখন কি হয়েছিল নিজেও জানিনা। এনিওয়ে তোমার সাথে পরিচয় হয়ে অনেক ভালো লাগলো।
আমার কথা শুনতেই আরিশা চট করে বলে উঠলো,
–তাহলে আর দেরি কিসের চলো এক্ষুনি আমরা ফ্রেন্ড হয়ে যাই। আইমিন বেস্ট ফ্রেন্ড! কি হবে তো আমার বেস্ট ফ্রেন্ড?
— উয়াই নট, অবশ্যই।
এভাবে অনেকটা সময় নিয়ে বসে গল্প করলাম আমরা। তারপর ক্লাসে স্যার ঢুকতেই সবাই যার যার মতো ক্লাসে মনোযোগ দিলাম।
——————————-
কলেজ টাইম শেষে আমি আর আরিশা একসাথে কলেজের গেট দিয়ে গল্প করতে করতে বের হয়েছি বাসায় ফিরব বলে। হঠাৎ সামনে থেকে কয়েকটি বাজে ছেলে এগিয়ে এসে ঘিরে ধরে আমাদের। তাদের মধ্যে থেকে একটি ছেলে বলে ওঠে,
— হাই বেবিস কোথায় যাচ্ছ তোমরা? চলো আমরা তোমাদের বাসায় পৌঁছে দিচ্ছি।
কথাটি বলেই আমার আর আরিশার হাত চেপে ধরে ছেলেটা। সাথে সাথে আরিশা নিজের হাতটা ওর হাত থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে ঠাস করে ছেলেটির গালে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দেয়। তারপর রাগী গলায় বলে ওঠে,
— আপনার সাহস হলো কি করে আমাদের হাত ধরার? নেক্সট টাইম এমন কিছু করলে খুব খারাপ হয়ে যাবে বলে দিলাম।
আরিশার হাতে থাপ্পড় খেয়ে ছেলেটার রাগে চোখ মুখ নাক সব লাল হয়ে গেল। তার এমন রাগ দেখে অন্তরাত্মা কেঁপে উঠল আমার। কিন্তু আরিশার মাঝে ভয়ের চিহ্নটুকুও নেই। আমি কেঁপে কেঁপে কয়েক পা পিছিয়ে গেলাম। মুখ দিয়ে কোন কথা আসছে না আমার। ছেলেটি আরিশার হাত শক্ত করে চেপে ধরে বলে উঠলো,
— তোর সাহস হয় কিভাবে আমার গায়ে হাত তোলার? তুই জানিস আমি কে? এই এলাকার সবাই আমায় এক নামে চেনে। আমি এখানকার নাম্বার ওয়ান মাফিয়া। আমার কাকা এই এলাকার একজন প্রভাবশালী লোক। আর তোর এত বড় সাহস তুই আমার গায়ে হাত তুললি? তোকে তো আজকে আমি।
কথাগুলো বলেই আরিশার গালে থাপ্পড় মারার জন্য হাত তুলল ছেলেটি। সাথে সাথে কেউ একজন এসে ছেলেটির হাত ধরে ফেলে সজোরে একটি লাথি মেরে দিল তার পেটে। ছেলেটি ছিটকে গিয়ে দূরে পড়ে গেল। সাথে সাথে তার সাথে থাকা ছেলেগুলো এবার সেই আগুন্তক এর উপর ঝাপিয়ে পরল। আমি ভালোভাবে খেয়াল করতেই দেখতে পেলাম উনি আর কেউ নয়, উনি হলো রাজ, আমার রাজ। আমি হা করে তাকিয়ে থেকে সবকিছু দেখতে লাগলাম। আরিশাও আমার পাশে এসে দাঁড়ালো। এবার আরিশার চোখে জল টলমল করছে স্পষ্ট। হয়তো আরিশাও এবার বেশ ভয় পেয়েছে। রাজের সাথে বেশ ভালই লড়াই শুরু হলো ওই বখাটে ছেলে গুলোর সাথে। আমরা পাশে দাড়িয়ে শুধু চুপটি করে দেখতে লাগলাম। হঠাৎ খেয়াল করলাম ঐ বখাটেদের মাঝে একটি ছেলে পকেট থেকে একটি ছোট ছুড়ি বের করে রাজের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এটা দেখে আর সহ্য করতে পারলাম না আমি। ছুটে গিয়ে ছেলেটির হাত ধরে ফেললাম। ফলস্বরূপ ছেলেটির ছুরির আঘাতে অনেকটা হাত কেটে গেল আমার।
আমার হাত কেটে যাওয়া দেখতেই আরিশা আমার নাম ধরে চিৎকার করে উঠল। সাথে সাথে রাজ আমার দিকে ফিরে তাকাল আর তাকিয়ে আমার হাতের ক্ষত স্থান দেখে আর ওই ছেলেটির হাতে ছুড়ি দেখতেই যেন চোখ মুখ লাল এবং হিংস্র হয়ে গেল রাজের। অদ্ভুত ভাবে ছুটে এসে সেই ছেলেটিকে ধরে এলোপাথাড়ি মারতে লাগল রাজ। এমন ভাবে মারতে লাগল যেন আজ ওকে মেরে ফেলে তারপরেই শান্তি হবে ও। এদিকে ওকে থামানোর জন্য নানাভাবে চেষ্টা করতে লাগলো আরিশা। কিন্তু রাজের মাঝে যেন সে খেয়াল নেই। একদম পাগলের মত ছেলেটাকে মারতে শুরু করেছে রাজ। এটা দেখে বাকি ছেলেগুলো দৌড়ে পালিয়ে গেছে অনেক আগেই। আমিও অবাক চোখে তাকিয়ে আছি রাজের এই হিংশ্র রুপের দিকে। ঠিক এমন রুপটাই যেনো আমি সেদিন রাতে দেখেছিলাম।
এদিকে রাস্তার মাঝখানে এমন মারামারি করতে দেখে আশেপাশে অনেক লোক জড়ো হয়ে গেল। বেশ কিছু লোক এসে রাজ কে থামিয়ে ফাঁকে সরিয়ে নিল। কিন্তু রাজ যেন থেমে যাওয়ার পাত্র নয়। সে চিৎকার করে বলতে লাগল,
–তোর এত বড় সাহস তুই আমার জানের গায়ে হাত দিয়েছিস? তোর সেই হাত আমি টুকরো টুকরো করে কেটে কুকুর দিয়ে খাওয়াবো। তোর এত বড় সাহস তুই আমার প্রপার্টিতে হাত দিয়েছিস। তুই জানিস তোকে আমি কি করবো? ছাড়ুন আপনারা আমায়, আজ আমি ওকে শেষ করে তারপরে ছাড়বো। চেনে না ও, আমি কে?
রাজের এমন হিংস্র রূপ দেখে এবার ছেলেটি ভয়ে ছেঁচড়াতে ছেঁচড়াতে দ্রুত ভির এর মধ্য থেকে পালিয়ে গেল। তবুও যেন রাজকে কোন ভাবেই শান্ত করা যাচ্ছে না। তখনই আরিশা এগিয়ে গিয়ে রাজের সামনে দাঁড়িয়ে ওর দুই হাতের মধ্যে হাত গুজে বলল,
— প্লিজ আরিয়ান শান্ত হও। পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করো। নিজেকে কন্ট্রোল করো। ভুলে যেও না তুমি কি করছো এসব। আর তুমি এখন কোথায় আছো।
আরিশার কথাতে হালকা শান্ত হলেও যেনো চোখ দুটো লাল টকটকে আর হিংস্র হয়ে আছে রাজের। আশেপাশের মানুষ অনেকটা ভিতু চোখেই তাকিয়ে আছে ওর দিকে। ও সেদিকে তোয়াক্কা না করে আরিশা কে বলল,
— মেয়েটিকে গাড়িতে তোলো ওকে হসপিটালে নিয়ে যেতে হবে।
আরিশা এবার যেন একটু শান্তির নিশ্বাস ছাড়লো।তার পর আমার কাছে এগিয়ে এসে আমার কাটা হাতের জায়গায় চেপে ধরে বলল,
— তাড়াতাড়ি চলো তোমার এখানে ব্যান্ডেজ করতে হবে। নইলে রক্ত বেশি পড়ে গেলে শরীর দুর্বল হয়ে যাবে।
আমি কোন কথার উত্তর না দিয়ে আরিশার সাথে যেতে লাগলাম। তারপর গাড়িতে উঠে দ্রুত গতিতে গাড়ি চালিয়ে রাজ আমাদের একটি বড় ক্লিনিকের সামনে নিয়ে গাড়ি দাঁড় করালো। তারপর আরিসা আমার হাত ধরে নিয়ে ক্লিনিকের ভিতরে প্রবেশ করল। আমাকে নিয়ে ভিতরে যেতেই একজন মহিলা ডাক্তার ছুটে এলেন আমার পাশে। তারপর বললেন,
— এ কি কি হয়েছে ওর হাতে? অনেক রক্ত বের হচ্ছে তাড়াতাড়ি পরিষ্কার করতে হবে ওকে নিয়ে এসো।
ডাক্তারটি এমন আচরণ করতে লাগল যেন সে আমাকে আগে থেকেই চেনে। আমাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই একটি কেবিনে নিয়ে গিয়ে চেয়ারের ওপর বসানো হলো আমায়। তারপর ডাক্তার অনেক যত্নসহকারে আমার হাত পরিষ্কার করে দিয়ে ব্যান্ডেজ করে দিলেন। তারপর আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,
— এখন কেমন লাগছে তোমার মামনি?
ওনার এমন আচরণে বেশ কিছুটা অবাক হলাম আমি। তাই ওনার দিকে জিজ্ঞেসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে উঠলাম,
— জ্বি ঠিক আছি আমি। কিন্তু আপনি কি আমাকে আগে থেকে চেনেন?
উনি আমার কথায় মুচকি হেসে বললেন,
— চিনতাম না, তবে এখন থেকে চিনি। তুমি আমার আরিশার বন্ধু তাই না? এই যে এই মেয়েটিকে দেখছো? এটা আমার’ই মেয়ে। ও ফোনে আগেই তোমার কথা বলেছিলো আমায়।
চলবে,,,,,,,,
You are my property
Part_21
M Sonali
— চিনতাম না, তবে এখন থেকে চিনি। তুমি আমার আরিশার বন্ধু তাই না? এই যে এই মেয়েটিকে দেখছো? এটা আমার’ই মেয়ে। ও ফোনে আগেই তোমার কথা বলেছিলো আমায়।
আমি ওনার কথা শুনে বেশ কিছুটা অবাক হলাম। কেন না পুরোটা রাস্তা আমি একবার এর জন্যেও আরিশাকে ফোন হাতে দেখি নি। এমনকি কলেজে থাকাকালীনও। তাহলে ও ফোন কখন করলো ওর আম্মুর কাছে? তাই আমি কিছুটা ভ্রু কুঁচকে জিগ্যেসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে উঠলাম,
— কিন্তু আরিশাকে তো আমি মোবাইল হাতে একবারের জন্যও দেখিনি আন্টি। তহলে ও আপনাকে কিভাবে মোবাইলে আমার কথা বলল?
আমার কথা শুনে যেন কিছুটা ইতস্ততায় পড়ে গেলেন ডাক্তার আন্টি। উনাকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে উনি এখন কি বলবে সেটা ভেবে পাচ্ছেনা। তখনই আরিশা পাশ থেকে বলে উঠলো,
— আরে বাবা আমি আম্মুকে মেসেজ করে দিয়েছিলাম। ডাইরেক্ট ফোন করেছি নাকি? কিন্তু তুমি এত জিগ্যেসাবাদ করছো কেনো বলোতো?
ওর কথায় আমি মুচকি হাসলাম। কোন উত্তর দিলাম না। কারন ম্যাসেজ ও দিতেই পারে। তবে মেসেজ দেয়াতে যে এভাবে আন্টি আমাকে চিনবে আর মামনি বলে ডাকবে সেটা আমার ভাবনার বাহিরে ছিলো। তাই একটু অবাক হলাম আমি। কিন্তু ওদের বুঝতে দিলাম না। হঠাৎ আমার চোখ পড়ল দেওয়ালের সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে, মাথা নিচের দিকে দিয়ে, বুকের সাথে দুই হাত গুজে দাঁড়িয়ে থাকা রাজের দিকে। আর ওকে দেখে বোঝা যাচ্ছে ওর মনটা ভীষণ খারাপ। চোখ বন্ধ করে নিচের দিকে তাকিয়ে চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে একপাশে। আমাকে ওর দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে আরিশা এবার ওর কাছে এগিয়ে গিয়ে হাত ধরে বলল,
— কি হল আরিয়ান এভাবে এখানে দাঁড়িয়ে আছো কেন? তোমার কি শরীর খারাপ লাগছে? অবশ্য শরীর খারাপ লাগতেই পারে যতটা মারামারি করেছো রাস্তার মাঝখানে। সত্যিই তুমি এত রাগী না কি বলবো?
আরিশার কথায় ওর দিকে ফিরে তাকাল রাজ। তারপর গম্ভির গলায় বলে উঠলো,
— কি করবো বলো, তুমিতো ভালো করেই জানো আমার জান আমার প্রপার্টির ওপর অন্য কেউ হাত বা নজর দিলে সেটা আমি কখনোই সহ্য করতে পারি না। ইচ্ছে করে তাকে খুন করে ফেলি। সেটা তো তোমার চাইতে বেশি আর কারো জানার কথা নয়, তাই না আরিশা?
আরিশা শুধু মুচকি হাসল কোন উত্তর দিল না। তবে আমার মনের মাঝে কেন জানিনা রাজের কথাগুলো অন্য ভাবে আঘাত করল। কেন যেন মনে হচ্ছে রাজ জান ও নিজের প্রপার্টি বলতে আমাকেই বোঝাচ্ছে। কিন্তু এটা কি করে সম্ভব হবে, রাজ তো একবারের জন্য আমার দিকে ফিরেও তাকাচ্ছে না। এমনকি যখন আমাকে সেখান থেকে নিয়ে আসলো তখন ও আরিশাকে আমায় মেয়েটাকে বলে সম্মধন করে ছিল। আমার নাম বলে একবারের জন্যও ডাকেনি। হয়তো সত্যিই আমি সব স্বপ্নেই দেখেছি। ওগুলো সব আমার কল্পনা ছিলো। বাস্তবে সাথে কল্পনার মিলে গেছে ঠিক। কিন্তু তার সাথে বাস্তবের কোন ভ্যালু নেই। আমি শুধু শুধুই তাকে নিয়ে এত ভাবছি। কথাগুলো মনে মনে বলেই একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লাম আমি। আর মনে মনে শপথ করলাম এখন থেকে আর রাজ কে নিয়ে কোন কিছু ভাববো না। আই মিন আরিয়ান চৌধুরীকে নিয়ে আর কোন কিছু ভাববো না। সে আমার বান্ধবীর হবু স্বামী তাকে নিয়ে ভাবা নিতান্তই বোকামি আর পাপ ছাড়া কিছু নয়। স্বপ্ন কখনো সত্যি হয় না।
———————————
বেশ অনেকক্ষণ সময় ধরে চেয়ারের উপর মাথা নিচের দিকে দিয়ে বসে আছে রাজ। চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি গড়িয়ে পড়ছে তার। চোখ গুলো ভীষণ লাল রঙের হয়ে আছে। মুখটাও রূপ নিয়েছে অসম্ভব হিংস্রতার। চুলগুলো এলোমেলো একদম পাগলের মত লাগছে দেখতে তাকে। আরিশার আম্মু এসে রাজের মাথায় হাত বুলিয়ে বলে ওঠেন,
— আরিয়ান নিজেকে শান্ত করো বাবা। এভাবে ভেঙে পড়লে চলবে না। তুমি মনে রেখো তুমি কোন মিশনে নেমেছো। আর যেটা তুমি করছো সেটার পিছনের কারন। তাই এতোটা ভেঙে পড়লে কখনোই তুমি সফল হতে পারবে না।
— কিন্তু আমি কি করবো আন্টি। আমার যে আর সহ্য হচ্ছে না। আমি কিভাবে নিজের চোখের সামনে অন্য মানুষ আমার জানের সাথে বাজে আচরণ করবে আর সেটা আমি সহ্য করবো? আমি নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারছি না। ওই ছেলেগুলোকে যে পর্যন্ত মেরে না ফেলবো সে পর্যন্ত নিজেকে কন্ট্রোল করা অসম্ভব কষ্টকর হয়ে যাচ্ছে আন্টি। ওরা আমার প্রপার্টিতে হাত দিয়েছে। আর আমার জিনিসে যারা হাত দেওয়ার চেষ্টা করে তাদের হাত কেটে না নেওয়া পর্যন্ত আমি শান্ত হতে পারিনা। Because she is just my property.
কথাগুলো বলেই যেন আরো বেশি রাগে ফুসতে লাগলো রাজ। অসম্ভব ভয়ানক হয়ে উঠল ওর চেহারা। যেন এখনই ছুটে গিয়ে ওই ছেলেগুলো কে নিজে হাতে টুকরো টুকরো করে কেটে ফেলবে সে। ওকে এভাবে রেগে যেতে দেখে এবার আরিশা এসে ওর সামনে হাঁটু গেড়ে বসে, ওর দুই হাত নিজের হাতের মধ্যে নিলো। তারপর রাজের চোখের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো,
— আরিয়ান আমার দিকে তাকাও, একবার ভালো করে দেখো আমি একদম সুস্থ আছি। কিছু হয়নি আমার। এমন কি আমার বান্ধবী রাহিও ঠিক আছে। তাহলে তুমি কেনো এভাবে উত্তেজিত হচ্ছো। তোমাকে এখন যতটা সম্ভব নিজেকে কন্ট্রোল করে চলতে হবে। তুমি বেশ ভালো করেই জানো তুমি কি কাজে নেমেছো। আর সেটা পূরণ করতে হলে ধৈর্য্য ধরতে হবে তোমায়। এভাবে ধৈর্য্য হারিও না। তাহলে মাঝপথে সব শেষ হয়ে যাবে।
আরিশার কথা শুনে কোন উত্তর দিল না রাজ। বেশ কিছুক্ষন চুপ করে বসে থেকে আরিশার হাত থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে উঠে দাড়িয়ে শুধু একটা কথাই বলল,
— আমি বাসায় যাচ্ছি আরিশা তোমার সাথে পরে কথা হবে।
কথাটা বলেই আর এক মুহূর্ত দেরি না করে ছুটে বেরিয়ে গেল ক্লিনিক থেকে। তারপর গাড়ি নিয়ে ছুটে চলে গেল বাসায়। রাহীকে অনেক আগেই আরিশা সাথে নিয়ে বাসায় পৌঁছে দিয়ে এসেছে। তবে রাজ ক্লিনিকেই ছিলো এতক্ষণ।
————————–
রাত ৯.০০ টা
খোলা চুলে জানালার ধারে দাঁড়িয়ে আকাশের দিকে এক নজরে তাকিয়ে আছি আমি। মাথার মধ্যে নানা রকম চিন্তা বারবার ঘুরপাক খেয়ে যাচ্ছে আমার। হাতের ক্ষত স্থানে ও বেশ যন্ত্রণা হচ্ছে। কিন্তু সেই যন্ত্রণার চাইতেও এখন মনের যন্ত্রণা টা বেশি জ্বালাচ্ছে আমায়। কিছুতেই কোন কিছুই মিলাতে পারছি না। সবকিছু যেন বারবার তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে মাথার মধ্যে। আকাশের দিক থেকে চোখ সরিয়ে হাতের ব্যান্ডেজ এর দিকে ফিরে তাকালাম আমি। ব্যান্ডেজ ভেদ করে রক্ত উপর পর্যন্ত বেরিয়ে এসেছে। স্পষ্ট রক্তের চিহ্ন দেখা যাচ্ছে ব্যান্ডেজ এর ওপর।
আরিশা আমাকে বাসায় পৌঁছে দেওয়ার পর। নানা রকম প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়েছিল আমায়। কিন্তু বাসায় এসে যখন আমি বলি সব ঘটনা তখন আরিয়ানের কথা শোনা মাত্রই সবাই চুপ হয়ে যায়। কেউ আর একটা কথাও বলেনি। আর এটাই সবচাইতে বেশি চিন্তায় ফেলেছে আমায়। কেন তারা আরিয়ানের কথা শোনার পর আর কোন কিছু বললো না? তবে কি সবাই আমার সাথে মিথ্যে নাটক করছে? আরিয়ান’ই আসলে রাজ? আর সবাই মিথ্যে বলে আমার কাছে ওকে আরিয়ান হিসেবে প্রমান করতে চাইছে? কিন্তু এমনটা কেন করছে সবাই? কি এমন কারন লুকিয়ে আছে এর পেছনে?
এসব কথা ভাবতে ভাবতে যেন মাথায় প্রচন্ড ব্যাথা শুরু হয়ে যাচ্ছে আমার। তবুও কোন কিছুই মেলাতে পারছি না আমি। বারবার সবকিছু এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে মাথার মধ্যে। মন বলছে আমি যেসব ভাবছি সব সত্যি। কিন্তু ব্রেন বলছে সবই আমার মনের ভুল। ওগুলো শুধুই স্বপ্ন ছিল বাস্তবে তার কোন ভ্যালু নেই। ভাইয়ার ডাকে পেছন ফিরে তাকালাম আমি। তাকাতেই দেখলাম ভাইয়া গম্ভীরমুখে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। ভাইয়ার চোখ মুখ দেখে বোঝা যাচ্ছে সে হয়তো কোন কারনে ভীষন বিষন্ন মনে রয়েছে। আমি ভাইয়াকে চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ওর কাছে এগিয়ে গিয়ে বললাম,
— কি হয়েছে? কিছু বলবে ভাইয়া?
ভাইয়া আমার দিকে কিছুক্ষণ অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো। তারপর আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,
— এখন তোর কেমন লাগছে রে পুচকি? তোর হাতের যন্ত্রণা কি একটু কমেছে? শরীর কেমন তোর?
হঠাৎ ভাইয়ার এভাবে কথা বলা শুনে কেন জানি না বুকটা কেঁপে উঠল আমার। আমি কিছুক্ষণ চুপ থেকে ভাইয়াকে হাত ধরে নিয়ে এসে খাটে বসিয়ে দিয়ে সামনে বসে বললাম,
— আমি ঠিক আছি ভাইয়া একদম সুস্থ। কিন্তু তুমি হঠাৎ এভাবে মন খারাপ করে ওখানে দাঁড়িয়ে ছিলে কেন? আর এমন প্রশ্নই বা করছো কেনো বলো তো ভাইয়া?
আমার কথার উত্তর না দিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে ভাইয়া বলল,
— অনেক রাত হয়ে যাচ্ছে খেতে আয়। তোকে ঔষধ খেতে হবে তো তাই না? খেয়েদেয়ে সকাল সকাল ঘুমিয়ে পড়বি। তোর একটু ঘুমের প্রয়োজন।
কথাটা বলে আমাকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে চলে গেল ভাইয়া। আমি অবাক হয়ে ভাইয়ার চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলাম। কোন কিছুই আমার মাথায় ঢুকছেনা। সবার আচরণ যেন কেমন পাল্টে গেছে। সবাই অদ্ভুত আচরণ করে আমার সাথে। বুঝতে পারছি না এসব কিছুই আমার মনের ভুল নাকি সত্যি। কিছু ভালো লাগছেনা আর। তাই আর এত কিছু না ভেবে খাবার খাওয়ার জন্য রুম থেকে বেরিয়ে এলাম।
চলবে,,,,,,,,