You are my property,Part_10,11

You are my property,Part_10,11
M Sonali
Part-10

— আচ্ছা আপনি মেয়েদের দেখে এতটা অসস্তি ফিল করেন কেনো বলুন তো? আপনার সাথে দেখা হওয়ার পর থেকেই দেখছি, আপনি সব সময় মেয়েদের এড়িয়ে চলেন। সবার কথা বাদ দিলাম আমি তো আপনার এক মাত্র বিয়ান সাব তাই না? আমার সাথে অন্তত একটু দুষ্টুমিষ্টি কথা বলতে পারেন, তা নয় আমাকেও এভাবে এড়িয়ে চলতে হয়?

কফির মগে চুমুক দিতে দিতে কথাগুলো বলে উঠলো রাই। ওর কথা শুনে কিছুক্ষণ চুপ থেকে রাকিব মুচকি হেসে বলে উঠলো,

— আসলে তেমন কিছুই নয়! আমি আসলে মেয়েদের সাথে একটু কম কথা বলি ছোট বেলা থেকে। সে কারণেই এ ভাবে এড়িয়ে চলি সবাইকে।

রাই নিজের চেয়ার টা আরেকটু রাকিব এর কাছে এগিয়ে এসে বসে, ওর দিকে তাকিয়ে ভাব নিয়ে বলল,

— You know what মিষ্টার বিয়াই সাব। আমি মুখ দেখে সকলের মনের কথা বলে দিতে পারি। আর এখন আমি 100 পার্সেন্ট গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারি যে আপনি আমার কাছে মিথ্যে বলছেন। মেয়েদের এড়িয়ে চলার ব্যাপারে অবশ্যই কোন না কোন কারন আছে আপনার মাঝে। যেটা আপনি এখন আমাকে বলতে চাইছেন না। বাট আমার নামও রাইশা, আমি আসল কথা না শুনে আপনাকে আজ ছাড়ছি না।

রাই এর কথা শুনে শুখনো ঢোক গিললো রাকিব। তারপর মনে মনে বলল,

— এটা মেয়ে নাকি অন্যকিছু? আমার মুখ দেখে কি করে মনের কথা বুঝে ফেলল? এখন এর কাছে আমি সত্যি কথাটা লুকোবো কি করে? মনে মনে

কথাটা ভেবেই নিজের মাথা চুলকাতে লাগলো রাকিব। ওকে নিজের মাথা চুলকাতে দেখে রাই এবার হাসতে হাসতে বলে উঠলো,

— এত ভাবতে হবে না বিয়াই সাব। আমি আপনার সাথে মজা করছিলাম। বলতে না চাইলে সমস্যা নাই। তবে একদিন না একদিন ঠিক আপনার কাছ থেকে আমি এটার রহস্য জেনেই ছাড়বো।আর এটা আপনার কাছে এই রাই এর চ্যালেঞ্জ। বাই দ্যা ওয়ে কফিটা কিন্তু অনেক সুন্দর খেতে ছিল ঠিক আপনার মতো।

রাই এর মুখের শেষ কথাটা শুনতে ই কাশি উঠে যায় রাকিব এর। রাকিব কাশতে কাশতে যেন দম বন্ধ হয়ে যাওয়ার মত অবস্থা হয়ে যায়। তখন ই রাই নিজের চেয়ার ছেড়ে উঠে এসে রাকিবের মাথায় হালকা থাপ্পর দিতে দিতে ফু দিতে থাকে। একসময় রাকিবের কাশি থেমে গেলে রাই অস্থির হয়ে বলে ওঠে,

— আর ইউ ওকে রাকিব?

রাকিব মাথা ঝাঁকিয়ে রাই এর কথায় সায় দেয়। রাই নিশ্চিত হয়ে নিজের চেয়ার টেনে বসে পড়ে। তারপর রাকিবের দিকে তাকিয়ে অপরাধীর মতো মাথা নিচু করে বলে,

— আই এম সো সরি রাকিব। আমি বুঝতে পারিনি আপনার সাথে মজা করলে আপনার এমন অবস্থা হবে। প্লিজ ইউ ডোন্ট মাইন্ড, আমি আর কখনো আপনার সাথে এভাবে মজা করবোনা আম ভেরি সরি।

রাইকে এত অনুতপ্ত হতে দেখে যেন বুকের মাঝে হালকা ব্যথা অনুভব হয় রাকিবের। রাই এর দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলে,

— এটস্ ওকে রাই। আমি আপনার কথায় কিছু মনে করিনি। আসলে আচমকা কফিটা মাথায় উঠে যাওয়ায় এমন হয়েছে। প্লিজ ইউ ডোন্ট বি আপসেড।

তারপর এভাবেই দুজনে অনেকক্ষণ একসাথে বসে কফি খেতে খেতে গল্প করে। এখন রাকিব যেন অনেকটাই ফ্রি হয়ে গেছে রাই এর সাথে। রাই ও বেশ ভালই কব্জা করে নিয়েছে রাকিব কে। রাকিব এর মনে হয়তো জায়গাও করে নিতে শুরু করেছে সে।

——————————-

দীর্ঘ ত্রিশ মিনিট যাবত্ চুপটি করে গাড়ির জানালা দিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে বসে আছি আমি। আর গাড়ি টাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন রাজ তার কোন কিছুই আমার মাথায় ঢুকছেনা। ওনাকে কিছু জিজ্ঞেস করবো সে সাহসটাও হয়ে উঠছে না আমার মাঝে। তাই বাইরের দিকে তাকিয়ে প্রকৃতির সৌন্দর্য দেখতে ব্যাস্ত আমি। কিন্তু বেশ ভালভাবেই বুঝতে পারছি আমরা শহর ছেড়ে অনেক দূরে চলে এসেছি। এটা হয়তো কোনো একটি গ্রামের দিকে যাচ্ছে। এভাবে অনেকক্ষন বসে থাকার কারণে এবার অনেকটাই ঘুম ধরে যাচ্ছে আমার। তাই গাড়ির সিট এর সাথে হেলান দিয়ে ঘুমের দেশে পাড়ি দিতে যাচ্ছি আমি। আর তখনই হঠাৎ গাড়িটা ব্রেক কষায় ঘুম ভেঙ্গে গেল আমার। পাশে উনার দিকে তাকাতেই দেখলাম উনি আমার পাশে নেই। গাড়িটা একদম ফাঁকা। উনাকে এদিক ওদিক তাকিয়ে খুঁজবো তার আগেই উনি আমার পাশের গাড়ির দরজার কাছে এসে গাড়ির দরজাটা খুলে দিয়ে আমার দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বললেন,

— নেমে এসো রাহি বেবি। আমরা চলে এসেছি।

আমি একবার ওনার হাতের দিকে একবার ওনার মুখের দিকে এভাবে বেশ কয়েকবার তাকালাম। তারপর উনাকে পাশ কাটিয়ে গাড়ি থেকে নিচে নেমে গেলাম। উনি আমার দিকে হাত বাড়িয়ে ছিলেন আমি উনার হাত না ধরায় হয়তো অনেকটাই কষ্ট পেলেন উনি। তাই মুখটাকে হাল্কা গম্ভীর বানিয়ে নিচের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলেন। তারপর আবারও মুখে হাসির রেখা ফুটিয়ে আমার দিকে ঘুরে দাঁড়িয়ে বললেন,

— আমার সাথে আসো রাহি!

আমি ওনার কথায় কোন উত্তর না দিয়ে উনার পিছু পিছু হাটতে লাগলাম। আমার দৃষ্টি এখন নিচে মাটির দিকে। আশেপাশের কোন কিছুই দেখছি না আমি। বেশ কিছুক্ষণ সামনে হেঁটে যাওয়ার পরেই কানে পানির শব্দ শুনতে পেলাম। তখনই সামনে ফিরে তাকাতেই যেন মনটা ভরে গেল আমার। সামনে বিশাল বড় এক নদী। আর নদীর কিনারায় অসংখ্য কাশফুল গাছ। সাদা সাদা কাশফুল যেন উড়ে উড়ে যাচ্ছে হাওয়ায়। অসম্ভব সুন্দর একটি প্রাকৃতিক দৃশ্য। আমার জীবনে হয়তো এত সুন্দর দৃশ্য এত কাছ থেকে আমি কখনও দেখিনি। এ যেনো এক স্বপ্নপুরী। নিজেকে যেনো আজ প্রকৃতির সুন্দর্য্যে ডানামেলে উড়ে যাওয়া এক পাখি মনে হচ্ছে। আমি আশেপাশের সব কিছু ভুলে গিয়ে নদীর কিনারে এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত ধরে দৌড়াদৌড়ি করতে লাগলাম। প্রতিটি কাশফুল ছুঁয়ে ছুঁয়ে দেখতে লাগলাম। আমার হাতের ছোঁয়ায় আর এলোমেলো বাতাসে কত সুন্দর করে প্রতিটি কাশফুল থেকে ছোট ছোট কাশফুলের কনা উড়ে যাচ্ছে চারিদিকে। ইচ্ছে করছে আমি ওদের সাথে ভেসে ভেসে উড়ে যাই আকাশ নীলে। এতটা আনন্দ হয়তো জীবনে কখনো পাইনি আমি। আমি পাগলের মত এদিক থেকে ওদিক ছোটাছুটি করতে লাগলাম। আর প্রকৃতির এই সুন্দর্যকে নিজের মনের মাঝে আকরে ধরতে লাগলাম।

এভাবে অনেক্ষণ ছোটাছুটি করার পর অনেকটাই ক্লান্ত হয়ে গেলাম আমি। তখন ধপ করে নিচে ঘাসের উপর বসে পড়লাম আমি। এখানে আমি কার সাথে এসেছি সে কোথায় এগুলো কোন কিছুই যেন খেয়াল নেই আমার। হঠাৎ পাশে কারো উপস্থিতি টের পেয়ে পাশে ফিরে তাকালাম আমি। আর তাকাতেই দেখলাম রাজ আমার পাশে হাসিমুখে দাঁড়িয়ে আছে। ওর হাতে একটা ব্যাগ রয়েছে। আমি ওর দিকে একবার তাকিয়ে আবার অন্য দিকে দৃষ্টি রাখলাম। নদীতে প্রতিটা শ্রোত খুব গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করতে লাগলাম আমি। আমি তো এই প্রকৃতির মাঝে হারিয়ে গেছি পাশে থাকা লোকটির দিকে যে আমার একদমই খেয়াল নেই। তখন ই সে আমার পাশে বসে পড়ে ব্যাগটি খুলে তার মাঝে থেকে খাবার বের করে আমার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল,

— খাবারটা খেয়ে নাও রাহি। তুমি সেই সকাল বেলা বাসা থেকে খাবার খেয়ে বের হয়েছ। এখন অনেক বেলা হয়ে গেছে, সারাদিন কিছুই খাওয়া হয়নি তোমার। খাবারটা খেয়ে নাও তারপর প্রকৃতির আসল সৌন্দর্য দেখাবো আমি তোমায়।

ওনার কথায় আমি কোন উত্তর দিলাম না। খাবারের প্যাকেট এর দিকে একবার তাকাতেই যেন পেটের মাঝে ইঁদুর দৌড়াতে লাগল আমার। সত্যিই অসম্ভব ক্ষুদা লেগেছে আমার। আমি ক্ষুধা একদমই সহ্য করতে পারিনা। তাই ওনার কথার কোন উত্তর না দিয়ে ওনার হাত থেকে ছো মেরে খাবারের প্যাকেটটা নিয়ে নিলাম। তারপর পাশে থাকা ওয়াটার বোতল থেকে পানি দিয়ে হাত ধুয়ে নিয়ে খাবার খাওয়া শুরু করলাম।

যতক্ষণ সময় নিয়ে আমি খাবার খেয়েছি ততক্ষণ একনজরে উনি আমার দিকে তাকিয়ে ছিলেন। আমারও বেশ কয়েকবার চোখাচোখি হয়েছে ওনার সাথে। কিন্তু আমি একটি বারের জন্য ওনাকে জিজ্ঞেস করিনি উনি খেয়েছেন কিনা? বা কখন খাবেন? জিজ্ঞেস করার প্রয়োজনও বোধ করছিনা আমি। ওনার সাথে আমার বিয়ে হলেও আমি এখন অব্দি ওনাকে মন থেকে স্বামী হিসেবে মেনে নিতে পারিনি। উনার প্রতি কোন আলাদা ফিলিংসও জন্ম নেয়নি আমার মনে। বরং ওনার দিকে তাকালেই সব সময় একটি ঘৃণ্য কাজ করে আমার মনের ভেতর। যেটা আমি প্রকাশ না করতে পারলেও মনের মাঝে ঠিকি উকি দিয়ে যায়। উনি আমার সাথে যেটা করেছেন সেটা হয়তো অন্য কোন মেয়েই মেনে নিতে পারবে না। উনি শুধু আমার বিয়েটা ভেঙে দেয় নি বরং সকলের চোখে আমাকে একটি চরিত্রহীন মেয়ে বানিয়ে দিয়েছেন। এমনকি আমার হাত কেটে নিজের নাম লিখে সেটাও আমার ঘাড়ে চাপিয়ে দিয়েছেন উনি। আমি কি করে ভুলব সে কথা? নিজের হাতের দিকে তাকালে যে সেই সব স্মৃতি গুলো চোখের সামনে ভেসে ওঠে আমার। আমি ওনাকে কখনোই মেনে নিতে পারব না কখনোই না।

কথাগুলো মনে মনে ভাবতে ভাবতে খাবার খাচ্ছিলাম আমি। হঠাৎ খাবার গলায় আটকে গিয়ে অসম্ভব ভাবে কাশি শুরু হয়ে গেল আমার। কাশতে কাশতে যেন চোখ নাক মুখ সব লাল হয়ে যেতে লাগলো। আমাকে এভাবে কাশতে দেখে অনেক টাই ঘাবড়ে গেলেন রাজ। উনি উত্তেজিত হয়ে বোতলের মুখা খুলে আমার মুখে পানির ধরলেন। আমি বেশ কয়েক ঢোক পানি খেয়ে অনেকটাই শান্ত হয়ে গেলাম। শান্ত হয়ে ওনার দিকে তাকাতেই দেখতে পারলাম ওনার চোখে পানি টলমল করছে। আমাকে তাকাতে দেখে উনি উত্তেজিত হয়ে বলে উঠলেন,

— তুমি ঠিক আছো রাহি? কোথায় কষ্ট হচ্ছে বলো আমায়?

আমি এবারও ওনার কথার কোন উত্তর দিলাম না। খাবারের খালি প্লেট টা ওনার সামনে রেখে হাত ধুয়ে উঠে দাঁড়ালাম। তারপর হেঁটে হেঁটে কাশ ফুলের কাছে চলে গেলাম। উনি বেশ কিছুক্ষণ সেখানে বসে থেকে আমার দিকে এক নজরে তাকিয়ে রইলেন।

বেশ কিছুক্ষণ কাশফুলের ভেতর দিয়ে ঘুরে বেড়ানোর পর উনার ডাকে পিছু ফিরে তাকালাম আমি। তাকিয়ে দেখতে পেলাম একটি ডিঙ্গি নৌকার উপরে হাসিমুখে দাঁড়িয়ে আছেন উনি। আমাকে হাত দিয়ে ইশারা করে সেদিকে ডাকছেন। নৌকায় চড়ার শখ আমার অনেক ছোট থেকেই। কিন্তু সাঁতার জানিনা বলে আব্বু কখনোই আমাকে নৌকায় চড়তে দেয়নি। তাই নৌকা দেখতেই যেন খুশিতে মনটা গদগদ হয়ে গেল আমার। আমি দ্রুত দৌড়াতে দৌড়াতে নৌকার পাশে এসে দাঁড়িয়ে হাঁপাতে লাগলাম। উনি আমার দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে ইশারায় আমাকে ওনার হাত ধরে নৌকায় উঠতে বললেন। আমি এবার স্বইচ্ছায় নিজের হাতটা ওনার হাতে রেখে ওনার হাত ধরে নৌকায় উঠে পড়লাম। তারপর আমি নৌকার এক প্রান্তে আর উনি আরেক প্রান্তে বসে নৌকা চালাতে শুরু করলেন। নৌকায় আমরা দুজন ছাড়া বাড়তি কোনো মানুষ নেই। উনি নৌকা চালানোর জন্য বৈঠা নিয়ে প্রস্তুতি হলেন।

চলবে,,,,,,,,,

You are my property
Part_11
M Sonali

প্রায় একঘন্টা হলো নদীর বুকে ভেসে চলেছি আমরা দুজন। নৌকার ওপর থেকে একবার পানিতে হাত বুলাচ্ছি তো একবার খোলা আকাশের দিকে তাকিয়ে খলখলিয়ে হাসছি আমি। অসম্ভব ভালো লাগছে এই সময়টা আমার। এমন একটি মুহুর্ত পেতে যেন সবসময় স্বপ্ন দেখতাম আমি। আজ যে সেই স্বপ্নটা এভাবে পূরণ হয়ে যাবে কখনো ভাবতে পারিনি। পৃথিবীর সবকিছু যেন ভুলে গিয়ে শুধু এই মুহূর্তটার আনন্দ ভোগ করতে মেতে উঠেছি আমি। আনন্দের মুহূর্তের মাঝেও বেশ কয়েকবার রাজের সাথে চোখাচোখি হয়েছে আমার। আর যতবারই আমি ওর দিকে তাকিয়েছি ততবারই দেখেছি উনি এক নজরে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন। কিন্তু সেই তাকানো টাকে অনুভব করার মত অনুভুতি টা এখন আমার মাঝে নেই। কারণ আমি এখন প্রকৃতির প্রেমে মুগ্ধ হয়ে চারিদিকে তাকিয়ে দেখছি। কিন্তু এতোটুকু বুঝতে পারছি যে উনি আমার দিকে দেখছে প্রকৃতিকে নয়। কিন্তু আমিতো তাকে এখনো মন থেকে মেনে নিতে পারিনি! হয়তো কখনো মানতে পারব কিনা তাও সন্দেহ। তবে আজকের দিনের এই উপহারটা আমার সারা জীবন মনে গেঁথে থাকবে। সত্যি উনি আমাকে অনেক খুশি উপহার দিলেন আজ। মন দিয়ে চারিদিকে দেখছি আর এসব কথা মনে মনে ভাবছি আমি। হঠাৎ উনার ডাকে ধ্যান ভাঙলো আমার,

— অনেক হয়েছে রাহি বেবি, এবার আমাদের তীরে ফিরতে হবে। সন্ধ্যা হয়ে আসছে, অন্ধকার হলে নদীর বুকে থাকা ঠিক নয়।

ওনার কথা শুনে মনটা খারাপ হয়ে গেল আমার। আমি ঠোঁট উল্টে বলে উঠলাম,

— আরেকটু থাকি না প্লিজ! আমি এমন মুহূর্তের অনেক স্বপ্ন দেখেছি। আর আজ যখন এমন একটা মুহূর্ত পেয়েছি আর যেতে ইচ্ছা করছে না। প্লিজ আমাকে আর একটু থাকতে দিন আমি আর আরেকটু কাছ থেকে অনুভব করতে চাই এই সময়টাকে।

— আমি তোমাকে আবার নিয়ে আসবো রাহি বেবি। আই প্রমিস ইউ। কিন্তু এখন আর এখানে থাকা ঠিক হবে না চারিদিকে অন্ধকার নেমে আসছে। আর তাছাড়া রাতের অন্ধকারে এই জায়গাটা মোটেও ভালো না। তাই আমাদের এখনই ফিরতে হবে। আমি তোমাকে আবার এখানে নিয়ে আসব। এখন চলো তীরে ফেরা যাক।

কথাগুলো বলে আমাকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে উনি বৈঠা চালিয়ে তীরের দিকে যেতে লাগলেন। আমি আর কোন কিছু না বলে মুখ গোমরা করে চুপ করে নৌকার একপাশে বসে পড়লাম। বেশ কিছুক্ষণ পরেই নৌকাটা এসে নদীর কিনারায় থেমে গেল। উনি নৌকা থেকে নেমে আমার দিকে হাত বাড়িয়ে দিলেন আমাকে ওনার হাত ধরে নামার জন্য। কিন্তু আমি ওনার হাত না ধরে উনাকে পাশ কাটিয়ে নিজে নিজেই নেমে সোজা গিয়ে গাড়িতে বসে পড়লাম। উনি আমার দিকে তাকিয়ে হাত সরিয়ে নিয়ে মৃদু হাসলেন। তারপর এসে আমার পাশের সিটে বসে কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে একটি শ্বাস নিয়ে বললেন,

— মাই রাহি বেবি, তুমি কি জানো রাগলে তোমাকে কতটা সুন্দর এবং আকর্ষণীয় লাগে? ইচ্ছে করে বারবার তোমাকে রাগিয়ে দেই। আচ্ছা তোমাকে রাগাতে হলে আর কি কি করতে হবে বলতো?

ওনার কথায় অসম্ভব বিরক্ত হলাম আমি। কত বড় ফাজিল একটা লোক। আবার বলে কিনা রাগলে আমাকে সুন্দর লাগে, আর কিভাবে রাগানো যায়? ইচ্ছে তো করছে উনার গলা টিপে এখানেই মেরে ফেলি। কিন্তু সেটাও তো পারব না। কেন জানিনা আমি কখনোই নিজের রাগগুলোকে কাউকে দেখাতে পারি না।ধুর কিছু ভালো লাগে না।

মনে মনে কথাগুলো ভেবে বাইরে জানালার দিকে ফিরে তাকালাম আমি। উনিও আর কিছু না বলে একটি মুচকি হাসি দিয়ে গাড়ি স্টার্ট দিলেন। তারপর গাড়ি চলতে থাকল আপন গতিতে।

———————–

একটি রিক্সায় চড়ে রাই এবং রাকিব একসাথে বাসায় ফেরার জন্য রওনা হয়েছে। যদিও রাকিব প্রথমে রাই এর সাথে আসার জন্য একদমই রাজী ছিল না। কিন্তু রাই এর জোড়াজড়িতে শেষে বাধ্য হয়েই ওর সাথে এক রিক্সায় বসতে হয়েছে তার। রাই বলেছে রাস্তার মোড়ে দুজন আবার আলাদা রিক্সায় উঠে চলে যাবে আর সে কারণেই এক রিক্সায় উঠতে রাজি হয়েছে রাকিব। কিন্তু রিক্সায় ওঠার পর থেকেই একদম চুপচাপ বসে রয়েছে মুখে তার কোনো রকমের কথা নেই। এটার জন্য অসম্ভব বিরক্ত হচ্ছে রাই। সে একা একা অনেক বকবক করলেও বিপরীতে কোনো উত্তর ই পাচ্ছে না সে রাকিবের কাছ থেকে। এতটা গম্ভিরও যে কোন মানুষ হতে পারে এটা জানা ছিল না রাই এর। কিন্তু কে জানত যে এই রকম একটি গম্ভির লোকের ওপর ই এভাবে ফিদা হয়ে যাবে সে? আর তাকেই মনে মনে ভালোবেসে ফেলবে? হয়তো সেটা প্রকাশ করতে পারছে না রাই, তবে সে বুঝতে পারছে যে তার আচার-আচরণ চালচলনে বেশ অনেকটাই বুঝে গেছে রাকিব যে, সে তাকে পছন্দ করে। বেশ অনেকক্ষণ চুপচাপ থাকার পর এবার বেশ কিছুটা রেগে বলে উঠলো রাই,

— আচ্ছা আপনার সমস্যাটা কি বলুন তো? আমি সেই কখন থেকে একের পর এক বকবক করেই যাচ্ছি। আর আপনি কোন রকম কথা বলছেন না! বলি এতো গম্ভীর হয়ে থাকতে কেমন লাগে আপনার? মুখে কি একটুও ব্যথা করে না?

রাই এর দিকে এমন করে তাকাল রাকিব যেন রাই এমন কিছু বলেছে জে তার কল্পনার বাইরে ছিল।ওকে এভাবে তাকাতে দেখে এবার রাগটা যেন মাথায় চড়ে বসলো রাইয়ের। রাই খপ করে রাকিবের হাতটা ধরে ফেলে বলল,

— এই যে মিস্টার আপনি যে পর্যন্ত আমার সাথে ভালোভাবে কথা না বলবেন সে পর্যন্ত আপনাকে এই রিকশা থেকে নামতে দিচ্ছি না আমি। দরকার হলে আপনাকে নিয়ে আমার বাড়িতে চলে যাব। অবশ্য সেখানে আপনার সমস্যা হবে না। কারন সেটা তো আপনার বোন জামাইয়ের ই বাড়ি তাই না?

— ছিঃ রাই কি হচ্ছে কি? আপনি আমার হাত ধরছেন কেন এভাবে? আশেপাশের লোক দেখলে কি ভাববে বলুনতো? আমার হাত ছাড়ুন। আমি এজন্য আপনার সাথে এক রিক্সায় উঠতে চাইনি আপনি একটু বেশি কথা বলেন।

রাকিবের এমন কথায় যেন রাগ এর চাইতে বেশি অভিমান দেখা দিলো এবার রাই এর মাঝে। রাই কোন কথা না বলে আস্তে করে রাকিবের হাতটা ছেড়ে দিয়ে রিক্সাওয়ালাকে বলল,

— মামা রিক্সা থামান আমি এখানেই নেমে যাব!

কথাটি বলে রিক্সা থামতেই রিক্সা থেকে নেমে পরল রাই। রাই কে বেশ কয়েকবার পিছু ডাকলো রাকিব। কেন রিক্সা থেকে নেমে পড়ল সেটা জানার জন্য। কিন্তু একবারের জন্যও ওর দিকে ফিরে তাকাল না রাই। রাকিব রিক্সা ভাড়া মিটিয়ে রিক্সা থেকে নামার আগেই রাই কোথায় যেন হারিয়ে গেল। ও অনেক খুঁজেও আর রাই এর দেখা পেলো না। শেষে একটি ছোট করে দীর্ঘশ্বাস ফেলে নিজের বাসার দিকে রওনা হলো রাকিব।

—————————–

গ্রাম পেরিয়ে শহরের দিকে ঢুকতেই রাজ খেয়াল করলো রাহি বিভোরে ঘুমিয়ে আছে গাড়ির মধ্যে। রাজ আস্তে করে রাহির মাথাটাকে নিয়ে নিজের ঘাড়ের ওপরে রেখে দিল। তারপর গাড়িটিকে রাস্তার এক সাইডে ব্রেক করে ফিরে তাকাল রাহির ঘুমন্ত মুখটার দিকে। ওকে ঘুমন্ত অবস্থায় যেন অনেক বেশি আকর্ষণীয় লাগছে।রাজ এক নজরে বেশ কিছুক্ষন তাকিয়ে রইল ওর দিকে। তারপর রাহিকে ঠিকঠাক করে বসিয়ে দিয়ে নিজের ঘাড়ের উপরে ওর মাথাটা নিয়ে আবার গাড়ি চালাতে শুরু করলো। বেশ কিছুক্ষণ পর পৌঁছে গেল নিজের বাসায়।রাজ খুব সাবধানে রাহির মাথাটা আস্তে করে গাড়ির সিটের সাথে হেলান দিয়ে রেখে গাড়ি থেকে নেমে অন্য পাশে এসে রাহিকে কোলে তুলে নিল। তারপর তাকে নিয়ে সোজা চলে গেলো নিজের বেডরুমে। খুব যত্ন সহকারে রাহিকে নিজের বিছানায় শুইয়ে দিয়ে ওর জুতা খুলে দিয়ে শরীরের ওপর চাদর টেনে দিয়ে ব্যালকনিতে চলে এলো রাজ। তারপর রাকিব এর কাছে ফোন করে বলে দিল রাহি কে নিয়ে নিজের বাসায় আসার কথা। তারপর আবারো রুমে ফিরে এসে রাহির সামনে গিয়ে ফ্লোরে হাটু গেড়ে বসলো। রাহির মুখের ওপর পরে থাকা এলোমেলো চুলগুলো আলতো হাতে সরিয়ে দিয়ে বেশ কিছুক্ষণ ওর দিকে তাকিয়ে রইলো রাজ। তারপর মনে মনে বলে উঠলো,

— তুমি আমাকে কবে বুঝবে রাহি? কবে মেনে নেবে মন থেকে নিজের স্বামী হিসেবে? আর কত অপেক্ষা করতে হবে আমার তোমার কাছে নিজের স্বামীর অধিকার পাবার জন্য? তোমাকে এতটা কাছে পেয়েও নিজের করে না পেয়ে যে বড্ড বেশি কষ্টে আছি আমি। তুমি কি আমার সে কষ্টটা দেখতে পাও না? বুঝতে পারো না আমার অনুভূতিগুলো? কেন নিজেকে এতো শক্ত করছো রাহি? একবার ভালোবাসার চোখ দিয়ে দেখো তুমিও আমায় ভালবাসতে বাধ্য হবে। আর কতদিন আমাকে এভাবে নিজের থেকে দূরে সরিয়ে রাখবে রাহি? তুমি আমাকে কবে নিজের করে কাছে ডাকবে? এমন তো হবে না, যে তুমি আমাকে নিজের কাছে ডাকার আগেই আমি তোমার জীবন থেকে চিরতরে হারিয়ে যাব? তখন কী করবে তুমি রাহি? আমার জন্য কি তোমার একটুও কষ্ট হবে না তখন? কখনো কি ভুল করেও খুঁজবে আমায়? নিজের করে পাওয়ার জন্য। নাকি সারা জীবন এভাবে অবহেলায় হারাবে আমায়? আমি তোমাকে অনেক কষ্ট দিয়েছি জানি রাহি। কিন্তু সেই কষ্ট দেওয়ার আড়ালেও যে তোমার ভালোর কারণ ছিল। সে কারণটা হয়তো কখনোই তোমাকে জানাতে পারবো না আমি। Please Rahi You love me. you feel my love.

কথাগুলো মনে মনে একনাগাড়ে বলে দু চোখ দিয়ে দুফোঁটা জল গড়িয়ে পরলো রাজের। রাজ সেখান থেকে উঠে দাঁড়িয়ে জামাকাপড় নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেল ফ্রেশ হওয়ার জন্য। তারপর ফ্রেশ হয়ে ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে সোজা নিচে নেমে গেল। নিচে নামতেই রাজ দেখলো রাই সোফার ওপর গাল ফুলিয়ে বসে আছে। দেখেই বুঝা যাচ্ছে অসম্ভব রেগে আছে সে। রাজ ডাইনিং টেবিলের ওপর থেকে একটি আপেল নিয়ে তাতে কামড় দিয়ে খেতে খেতে রাই এর পাশে এসে বসে পরলো। তারপর ওর মাথায় আস্তে টোকা দিয়ে বলে উঠলো,

— কিরে কি হয়েছে তোর? এভাবে গাল ফুলিয়ে বসে আছিস কেন?

রাজের প্রশ্নের উত্তরে রাই ওর দিকে ছলছল চোখে তাঁকালো। তারপর কিছু না বলেই কান্না করতে করতে নিজের রুমে চলে গেল। রাইয়ের এমন আচরণ আগে কখনো দেখেনি রাজ। রাই ওর একমাত্র কলিজার টুকরা ছোট বোন। নিজের চাইতেও বেশি ভালবাসে ও রাইকে। ওকে এমন কান্না করে চলে যেতে দেখে এবার অনেকটাই ঘাবড়ে গেলো রাজ। রাই এর পিছু পিছু ও নিজের ছুটতে লাগলো রাই এর রুমের দিকে। কিন্তু তার আগেই দরজা লাগিয়ে দিয়েছে রাই। রাজ গিয়ে দরজা ধাক্কাতে ধাক্কাতে রাইয়ের নাম ধরে ডাকতে লাগল। আর দরজা খোলার জন্য বলতে লাগলো। কিন্তু কোনো কিছুতেই দরজা খুলছে না রাই। এবার অনেক টাই রেগে গেল রাজ। রেগে গিয়ে বলে উঠলো,

— রাই কি হয়েছে তোর? ভালোভাবে বলছি দরজা খোল। আমি কিন্তু দরজা ভেঙ্গে ফেলবো। তুই এভাবে কাঁদছিস কেন? আমাকে না বললে আমি কিভাবে বুঝবো বল? প্লিজ বোন আমার এভাবে আমাকে কষ্ট দিস না। তুই কেন বুঝিস না তোর চোখের অশ্রু জল আমি সহ্য করতে পারিনা। প্লিজ বোন দরজাটা খোল আর বল আমায় তোর কি হয়েছে?

কথাগুলো বলতে বলতে দরজা ধাক্কাতে লাগলো রাজ। রাই এবার রাজের কথা শুনে এসে দরজাটা খুলে দিয়ে সোজা রাজকে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে লাগল। রাইয়ের এভাবে কান্না করতে দেখে যেন আরো বেশি ভয় কাজ করতে লাগল রাজের মনে। ও কাঁপা কাঁপা হাতে রাই এর মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,

— কি হয়েছে বল আমাকে, কে কি করেছে তোর সাথে? শুধু একবার বলে দেখ তোকে যে কষ্ট দিয়েছে তাকে আমি চিরতরে শেষ করে ফেলব। বল আমার কাছে কি হয়েছে তোর?

রাজের কোন প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে ওকে জড়িয়ে ধরে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্না করতে লাগল রাই। এবার যেন সহ্যের সীমা পেরিয়ে যেতে লাগল রাজের। কলিজাটা যেন বেড়িয়ে আসতে চাইল তার। নানা রকম ভয় এবং কিছু অজানা কারণে। তাই ও ধমক দিয়ে বলে উঠলো,

— রাই কি হয়েছে তোর সত্যি করে বল আমায়?আমার কিন্তু এবার সহ্যের সীমা পেরিয়ে যাচ্ছে। তুই কেন এভাবে কাঁদছিস আমাকে না বললে আমি কি করে বুঝবো বল? বল আমায় কি হয়েছে তোর? প্লিজ বোন বল?

— আমি ভাবির বড় ভাই রাকিবকে ভালোবেসে ফেলেছি ভাইয়া। আমি ওকে নিজের জীবন সাথী হিসাবে পেতে চাই।

চলবে,,,,,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here