my unexpected love part_5

my unexpected love
part_5
Arohi Ayat
.
ভাইয়া কোথায় গেলো? আমাকে ফেলে এখানে একা! এখন আমাকে কে বাচাবে? আমি আশে পাশে তাকিয়ে ভাইয়াকে খুজতে লাগলাম৷ হার্ট বিট এত দ্রুত চলছে যে বলার বাহিরে৷ হঠাৎ কে যেন আমার হাত টেনে ধরতে আমি চোখ মুখ খিচে এক চিৎকার দিলাম৷ আমার আত্না বেরিয়ে আসার উপক্রম! ভাইয়া আমার মুখ চেপে ধরে বলল
– এমন রাস্তার মাঝখানে এইভাবে চিৎকার করছিস কেন?

আমি চোখ খুলেই দেখলাম ভাইয়া৷ তারাতাড়ি ভাইয়ার পাঞ্জাবী খামচে ধরলাম ভয়ে৷ আমি ভাঙা গলায় বললাম
– কোথায় গিয়েছিলে তুমি? আমি ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম!

– আমি কোথাও যাই নি এখানেই ছিলাম! ছার আমাকে!

– না না প্লিজ তোমাকে এখন এইভাবে ধরে না রাখলে এইবার নিশ্চয়ই ভুত আমাকে ওর সাথে নিয়ে যাবে প্লিজ!

– আচ্ছা পাঞ্জাবী ছার তুই আমার হাত ধর!

আমি পাঞ্জাবী ছেরে ভাইয়ার হাত চেপে ধরলাম৷ তারপর বললাম
– প্লিজ তারাতাড়ি বাসায় চলো না!

– না প্ল্যান করেছি আজকে রাতে এখানেই থাকবো!

আমি কান্না জরিত কন্ঠে বললাম
– কি? না না প্লিজ চলো!

–ডাফার!

এটা বলে ভাইয়া আমার আচল ধরে নিজের কপালে ঘাম মুছলো৷ তারপর আমার হাত ধরে সামনে হাটা দিল৷


অনেক কষ্টে একটা গাড়ি খুজে পাওয়ার পর বাসায় ফিরলাম৷ বাসায় ফিরতেই সবাই আমাদের কাছে এসে জিজ্ঞেস করতে লাগলো যে কোথায় ছিলাম? কি ভাবে বাসায় এলাম? কি করলাম? নিশান ভাইয়া ত সবাই জানেই কোন কিছুরই জবাব দিবে না! ভাইয়া এসেই আমাকে ওদের কাছে ফেলে রুমে চলে গেলো৷ আর এইদিকে আমি নিজেও এত টায়ার্ড এখন কিন্তু কি করার আমার একাই সব প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে৷ কিন্তু আসলে সব দোষ ছিল নিশান ভাইয়ার তার জন্যই ত এইসব কিছু হয়েছে নাহলে আমরা ত নিবির ভাইয়াদের সাথেই আসতে পারতাম! ওদের প্রশ্নের সব উত্তর দিয়ে তারপর রুমে এলাম৷ এখন আমি যদি একা আসতাম বাসায় তাহলে ত আমার আর আজকে বেচে ফিরা লাগতো না৷ শুধু নিশান ভাইয়া আমার সাথে ছিল বলে বাসার কেউও কিছু বলে নি নাহলে আম্মুর হাতে একটা থাপ্পড়ই মনে হয় খেতে হতো! আমি রুমে আসতে আমার সাথে তানিশা আর রিদিয়ানা আপুও আসলো৷ আমি ফ্রেশ হয়ে বের হয়ে তারপর ওদের সাথে বেডে বসলাম৷ তানিশা অনেক এক্সাইটেড হয়ে জিজ্ঞেস করলো
– তুই ভাইয়ার সাথে ছিলি এতক্ষন?

আমি ভ্রু কুচকে বললাম
– হুম তো? এইভাবে জিজ্ঞেস করছিস কেন?

– না মানে তুই ত জানিস ভাইয়া কেমন তাই বললাম তুই ভাইয়ার সাথে ছিলি এতক্ষন!

আমি বললাম
– আসলেও তোর ভাইটা কেমন যেন বুঝিই না! আসলেও অনেক কষ্ট হয়েছে এই কয়েক মুহুর্তে!

রিদিয়ানা আপু হেসে বলল
– কিসের কষ্ট?

– আরে ধুর! নিশান ভাইয়া কেমন জানি আমাকে ফেলেই বার বার চলে যায়! মানে আমি যে তার সাথে আছি সেটা মনে হয় সে জানতো না! আজকে যদি আমি হারিয়ে যেতাম?!

তানিশা বলল
– লিসেন! আমার ভাই যেমনই হোক একটু চুপি স্বভাবের বুঝলাম কিন্তু আমার ভাই কোন কাজে irresponsible না অকে! ভাইয়ার উপর যে দায়িত্ব পরে সে সেটা যেভাই হোক পালন করে!

আমি বললাম
– কচু পারে তোমার ভাই! আর হ্যা আমি এখন থেকে পারলে ভুতের সাথে হারাবো কিন্তু তোর ভাইয়ের সাথে না!!

রিদিয়ানা আপু বলল
– তুই হারিয়ে যাওয়ায় আমরা সবাই টেনশনে ছিলাম তার উপর আবার দেখি নিশান ভাইয়াও নেই! বেচারা নিবির ভাইয়া একেবারে টেনশনেই পরে গিয়েছিল!

– হুহ! তোমার কেউ আনার উপর নজর রাখো না!

আমরা এইভাবেই কথা বলতে বলতে ঘুমিয়ে পড়লাম৷

হালকা রোদ এসে মুখে পরতে আমার ঘুম ভেঙে গেলো৷ মুচড়া মুচড়ি করে উঠে বসে দেখলাম পাশে রিদিয়ানা আপু আর তানিশা নাক ডেকে ঘুম৷ ওদের ঘুমিয়ে থাকতে দেখে অবেক হলাম৷ ওরা না আমার আগে ঘুম থেকে উঠে? তাহলে কি আমি আজকে ঘুম থেকে জলদি উঠেছি নাকি ওরাই লেট উঠবে! ফোন অন করে দেখলাম মাত্র ৬টা বাজে৷ আমি এত তারাতাড়ি উঠেছি ঘুম ভেঙে গেছে৷ উঠেই যখন গেছি আর ঘুম ত আসবে না তাই গিয়ে মুখ ধুয়ে ফ্রেশ হয়ে একবারে তারপর একটু ছাদে যাওয়ার জন্য রুম থেকে বের হলাম৷ সবাই ঘুম কারণ কালকে বিয়ে ছিল তাই সবাই টায়ার্ড৷ আমি ছাদে যেতে দেখলাম কে যেন রেলিং ধরে ওইদিকে ঘুরে দাড়িয়ে আছে৷ আমি ভ্রু কুচকে তার সামনে গেলাম গিয়ে দেখলাম নিশান ভাইয়া৷ আমি বললাম
– তুমি এত সকালে এখানে?

–তুই এখানে কেন?

– আমার ঘুম ভেঙে গেছে তাই ছাদে এসেছি!

ভাইয়া আর কিছু বলল না৷ আমিও রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে রইলাম৷ নিশান ভাইয়ার সাথে ত আমি এত কথা বলি না এত ফ্রি না তাই তাকে কিছু জিজ্ঞেস করতেও কেমন যেন লাগে৷ এই মুহুর্তে আমার মাথায় একটা প্রশ্ন ঘুরছে কিন্তু জিজ্ঞেস করতে পারছি না কেন যেন সাহস হচ্ছে না কিন্তু জিজ্ঞেস না করলেও মাথার ভিতরে ঝিমঝিম ধরে যাবে৷ আমি জিজ্ঞেস করতে গিয়েও আবার ভাবছি ভাইয়া ত সহজে এন্সার দেয় না যদি জিজ্ঞেস করি আর এন্সার না দেয় তাহলে ত আবার ইচ্ছে করবে ছাদ থেকে লাফ দিয়ে পরে যাই৷ ভাইয়া হয়তো বুঝতে পেরেছে আমি কিছু জিজ্ঞেস করতে চাচ্ছি তাই ভাইয়া বলল
– কিছু জিজ্ঞেস করতে চাচ্ছিস?

আমি ভাইয়ার দিকে তাকালাম হয়তো ভাইয়া এন্সার দিবে তাই আমি বললাম
–হুম কিছু জিজ্ঞেস করবো কিন্তু যদি তুমি এন্সার দাও! আচ্ছা তুমি যে ওইদিন,,,,,,

আমাকে আর বলতে না দিয়ে ভাইয়া বলল
– ওহ! তাহলে কিছুই জিজ্ঞেস করা লাগবে না কারণ আমি এন্সার দিব না! আর আমি তোকে শুধু বলেছি কিছু জিজ্ঞেস করতে চাচ্ছিস কিনা!? আমি এটা বলি নি যে জিজ্ঞেস কর!

– মানে কি? আর আমি তোমাকে এত বড় কিছু জিজ্ঞেস করবো না যে এন্সার দিতে পারবে না!! তুমি ত কোন সময় কারো এন্সারই দাও না! কালকে রাতেও আমাকে একা সামলাতে হয়েছে সবাইকে কিন্তু আসলে ভুল ছিল সব তোমার! আবার কালকে তোমার জন্য আমি এত ভয় পেয়েছি!! তুমি এমন কেন বুঝলাম না!!

ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে আছে রুড চেহারা নিয়ে৷ আমি ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে মনে মনে বললাম উফফ বেশি বলে ফেলেছি৷ আমি চুপ হয়ে গেলাম৷ ভাইয়া বলল
– আমার এত কথা পছন্দ না! এতক্ষন কত শান্তি ছিল এখানে তুই এত সকালে উঠে এখানে কেন এসেছিস?

আমি বললাম
– কেন আমি কি এসে অশান্তি সৃষ্টি করেছি নাকি এখানে! হুহ!

ভাইয়া কিছু না বলে শেষ মেষ সেখান থেকে চলেই গেলো৷ আমি ঘুরে ভাইয়ার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছি৷ এই মানুষটা কোন জগতের কে জানে? মনেই হয় না যে আমার খালাতো ভাই হয়!!


আমরা সবাই নাস্তা করার পর আমাদের বাসায় রওনা দিলাম৷ বাসায় যেতে যেতে ৩ঘন্টা লেগেছে৷ বাসায় পৌছিয়ে সবাই টায়ার্ড তাই যে যে যার মত ফ্রেশ হয়ে রেস্ট নিতে চলে গেলো৷ আমি দুপুরে খাওয়ার পর আমার রুমে গিয়ে যেই এক ঘুম দিয়েছি একেবারে সন্ধ্যা বেলা উঠেছি৷ ঘুম থেকে উঠে দেখি ৬টা বাজে৷ ফ্রেশ হয়ে রুম থেকে বের হলাম৷ সিরি দিয়ে নিচে নামতে নামতে দেখলাম সবাই একসাথে সোফায় বসে আছে কথা বলছে৷ আমি নিচে নেমে গিয়ে তানিশার পাশে বসে পড়লাম৷ তানিশা আমাকে বলল
– কিরে ঘুম ভেঙেছে?

–হুম! ওরা কি কথা বলছে?

– শুন!

আম্মু আন্টিকে বলছে
– আরে তোরা আরো কয়েকটা দিন থাকলে অনেক ভাল লাগতো!

আমি ভ্রু কুচকে তাকালাম৷ আন্টি বলছে
– হুম আমরা আরও কয়েকদিন থাকলে আমাদেরও ভাল লাগতো কিন্তু তবুও অনেক দিন ত থাকলাম৷ বিয়ের অনেক দিন আগে এসেছি না আমরা!

এইবার আমি বললাম
– তোমরা চলে যাচ্ছো আন্টি?

রিদিয়ানা আপু বলল
– হুম কালকে চলে যাবো!

– কেন?

আন্টি বলল
– আর কয়েকদিন পর যেতাম কিন্তু একটা আরজেন্ট কাজের জন্য যেতে হবে!

আমার মনটা সাথে সাথে খারাপ হয়ে গেলো৷ আমি দুঃখী কন্ঠে বললাম
– কেন? থাকো না প্লিজ!

নিবির ভাইয়া বলল
– না কাজ আছে বললাম না! কালকেই চলে যাচ্ছি আমরা!

আমার মনটা আরও বেশি খারাপ হয়ে গেলো৷ গিয়ে রুমে বসে রইলাম৷ অনেক খারাপ লাগছে সবাই আবার দূরে চলে যাবে৷ আমি এখানে একা একা ভাল লাগে না ধুর! এত দিন একসাথে সবাই ছিলাম কত মজা হয়েছিল৷ আর এখন ওদের যাওয়ার কথা শুনে মনটা মুহুর্তে খারাপ হয়ে গেলো৷ একটু পরে তানিশা আর রিদিয়ানা আপু আমার রুমে এসে বলল
– আয় আজকে সারা রাত আমরা আড্ডা দেই তাহলে তোর আর খারাপ লাগবে না!

– দূর তোমরা চলে যাবে এত জলদি!

এটা বলে ওদের জরিয়ে ধরলাম৷ রিদিয়ানা আপু বলল
– মন খারাপ করিস না! আমি জানি তুই এখানে একা থাকিস তাই তোর ভাল লাগে না! কিন্তু চিন্তা করিস না এর পরের বার তোর বিয়েতে আসবো!

আমি বললাম
– ধুর!

সেই এক রাত এইভাবেই ওদের সাথে কথা বলতে বলতে চলে গেলো৷ সকালে ওরা সবাই নাস্তা করেই রেডি হতে লাগলো চলে যাওয়ার জন্য৷ ওরা রেডি হচ্ছে আর আমি এইদিকে মুখ বেজার করে ওদের ব্যাগ গুছাতে হেল্প করছি৷ শেষ মেষ ওরা সবাই চলে গেলো৷ ওরা যেতে কেমন যেন ঘরটা একেবারেই ফাকা ফাকা লাগছে যেন আমাদের ঘরে কিছুই নেই শুধু আমি একা৷ এইদিকে নিড়বও নিজের রুমে গিয়ে ওই আগের মত আবার গেম খেলা শুরু করেছে৷ আর আম্মুও মন খারাপ করে কাজ করা শুরু করেছে৷ সেই আবার আগের মত চলছে সবকিছু৷

২ ঘন্টা হয়েছে ওরা গেছে আমার মনটা এখনো খারাপ৷ আমি নিচে এসে ফ্রিজ থেকে আইসক্রিম বের করে খাওয়া শুরু করলাম৷ হয়তো এই আইক্রিমই আমার সঙ্গি এখন৷ সোফায় বসে আইস্ক্রিম খাচ্ছিলাম তখন কলিং বেল বেজে উঠতে বিরক্ত হয়ে গিয়ে দরজা খুললাম৷ দরজা খুলে চোখ গুলো এমন বড় বড় করে তাকিয়ে অবাক হয়ে বললাম
– তুমি এখানে???

আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে নিশান ভাইয়া৷ আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি৷ ভাইয়া আমাকে সরিয়ে ভিতরে ঢুকে বলল
– ভুত দেখেছিস নাকি?

আমি ভাইয়ার পিছনে গিয়ে বললাম
– তুমি এখানে কেন? তোমাদের ফ্লাইট মিস হয়ে গেছে নাকি?

ভাইয়া ভ্রু কুচকে বলল
– ফ্লাইট মিস হবে কেন? সবাই ত চলে গেছে!

এটা বলে ভাইয়া ফ্রিজ থেকে পানি বের করে খাওয়া শুরু করলো৷ আমি আবার অবাক হয়ে বললাম
– তাহলে তুমি এখানে কেন?

– কেন চলে যাবো?

– উফফ একটু বলো না!! আমি ত কিছুই বুঝলাম না ওরা চলে গেছে তাহলে তুমি এখানে কেন? একটু তারাতাড়ি বলো না কি হয়েছে?

পানির বোতল টা টেবিলে রেখে ভাইয়া বলল
– আমি এখানে কারণ,,আমি যাই নি ওদের সাথে! আমি শুধু ওদের এয়ারপোর্টে দিয়ে আসতে গিয়েছিলাম!!

চলবে,,,,,,,,

(ভুল ত্রুটিগুলো ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here