my unexpected love part_4

my unexpected love
part_4
Arohi Atat

বাহির থেকে দরজা নক করার আওয়াজ শুনে নিশান ভাইয়া ওড়নাটা আমার দিকে ছুরে মেরে গিয়ে দরজা খুলল৷ তানভীর এসেছে ৷ আমি কিছু না বলে চলে গেলাম তারাতাড়ি সেখান থেকে৷ তানভীর ভ্রু কুচকে নিশানকে জিজ্ঞেস করলো
– ও এখানে কেন?

নিশান ভাইয়া কিছু বলল না ব্যাগ থেকে নিজের কাপড় বের করে ওয়াশরুমে ঢুকে গেলো৷ কিন্তু এই তানভীর যতক্ষন ওর প্রশ্নের উত্তর পাবে না ততক্ষন শান্তিতে বসবে না৷ তানভীর আমাদের রুমে এলো৷ আমার কাছে এসে জিজ্ঞেস করলো
– তুই ওইখানে কেন ছিলি?

– এই ওয়াশরুম খালি ছিল না তাই তোমাদেরটায় গিয়েছিলাম! কেন কি হয়েছে?

তানভীর এর মন ঠান্ডা হয়েছে তাই শুধু ‘ওহ’ বলে রুম থেকে চলে গেলো৷ রিদিয়ানা আপু জিজ্ঞেস করলো
– কি হয়েছে?

আমি শ্বাস ছেরে বললাম
–আরে আমি শাওয়ার নিতে গিয়েছি রুমে কেউ ছিল না৷ আমি বের হয়ে দেখি নিশান ভাইয়া! আর এই তানভীর ত জানোই কেমন রুমে ঢুকে হঠাৎ আমাকে ওদের রুমে দেখেছে তাই এসে জিজ্ঞেস করলো!

– ওহ্ আচ্ছা আয় তারাতাড়ি রেডি হয়ে নে!

আমি বসলাম রেডি হতে এইভাবেই দেরি হয়ে গেছে আমার৷ আয়নার সামনে বসে রেডি হতে হতে কেন যেন হঠাৎ মাথায় এসে গেছে এইসব ভাবনা গুলো যে নিশান ভাইয়া এত চুপি স্বভাবের মানুষ কেন? সবসময় কি এমনই থাকবে? কোন সময় ভালো মন্দ কিছুই বলে না সবসময় চুপ করেই রুড চেহারা নিয়ে বসে থাকে৷ এইভাবেই ত দূরে থাকে সবাই আমার থেকে তাই এত ভালো করেও সবার সম্পর্কে জানি না কিন্তু যখন সবাই আমাদের বাসায় আসে সবাই আমার সাথে কথা বলে তাই তাদেরকে একটু হলেও বুঝি তাদের সাথে মিশতে পারি৷ কিন্তু নিশান ভাইয়া,,,নিশান ভাইয়াও ত দুরেই থাকে কিন্তু আমাদের বাসায় আসলেও কোনো কথা বলে না কিছু করে না তাই তাকে আমি আজ পর্যন্ত বুঝতেই পারলাম না৷ এটা ত বাদ দিলাম আজ পর্যন্ত ভাইয়ার হাসি দেখি নাই ৷ ভাইয়া কি শুধু আমাদের বাসায় এলেই এমন থাকে নাকি সবসময়! শুধু মাত্র এইবার একটা গেম খেলার পর একটা কথা শুনলাম ভাইয়ার যে উনি নাকি কিস করেছে এখন উনি কোন রিলেশনেও ছিল না তাহলে কাকে করেছে কে জানে? আজব লাগে! রিদিয়ানা আপুর ডাকে হঠাৎ আপুর দিকে তাকালাম৷ আপু বলল
– কিরে বাবা কি ভাবছিস? তারাতাড়ি কর! আবার শাড়ি পরতে হবে!


সবাই রেডি হয়ে গেছে আমিও পুরো রেডি৷ রিদিয়ানা আপু আমি আর তানিশা ত একই রকম শাড়ি পরেছি৷ তিন জনেরই চুল ছেরে দেওয়া৷ আমি শেষ বারের মত নিজেকে আয়নায় দেখে তারপর রুম থেকে বের হলাম৷ বের হতেই সকলের দৃষ্টি আমাদের দিকে৷ আসলে একই রঙের শাড়ি পরেছি তিনজন তাই৷ আমার নজর গেলো আমাদের দিকেই আসা নিবির আর নিশান ভাইয়ার উপর৷ ওরা দুইজনও ব্ল্যাক কালার এর পাঞ্জাবী পরেছে দেখতে অসাধারণ লাগছে৷ নিবির ভাইয়ার মুখে তেমন কোন হাসি নেই কিন্তু দেখতে খুশি খুশিই লাগছে৷ সবার বড় ভাই বলতে হবে নিবির ভাইয়াকে দেখতে ত এইভাবেই অনেক হ্যান্ডসাম তার উপর এই কালো পাঞ্জাবীতে যেন তার হ্যন্ডসাম লুকটা দ্বিগুন করে দিয়েছে৷ আর এইদিকে নিশান ভাইয়ার কথা কি বলবো সবসময়ের মত তার চেহারা সেই রুড৷ মানে দেখে মনে হচ্ছে একেবারে বিরক্তিকর চেহারা৷ কিন্তু সত্যি কথা বলতে এখন যদি কোন মেয়ে নিবির ভাইয়া আর নিশান ভাইয়াকে এইভাবে একসাথে দেখে তাহলে নিশ্চয়ই সর্ব প্রথম নিশান ভাইয়ার উপর ফিদা হয়ে যাবে৷ মনে হচ্ছে যেন তার এই চেহারাটার জন্য এই কালো রঙ আরো ঝকঝক করে উঠেছে৷


বিয়ে শেষ,, এখন বউকে নিয়ে যাচ্ছে৷ আমরা সবাই দাঁড়িয়ে বিদায় দেখছি৷ বউ ত তার মাকে ধরে অনেক কান্না করছে৷ নিবির ভাইয়া এটা দেখে রিদিয়ানা আপুকে উদ্দেশ্য করে বলল
– দেখ কি কান্না শুরু করেছে আর তোর বিয়ের সময় ত তুই কান্না কিরবি কি খুশিতেই তোর দম চলে যায়!

রিদিয়ানা আপু বলল
– আমার বেশি কষ্ট এইজন্য লাগে নি কারণ আমি তোমাদের থেকে দূরে যাই নি!

মাঝখান দিয়ে আমি বললাম
– আহারে আমিও আমার বিয়েতে অনেক কান্না করবো!!

সবাই আমার দিকে তাকালো৷ নিবির ভাইয়া বলল
– আরেকজন এসেছে কান্না করবে! তুই ত আমার মনে হয় আগে গিয়েই গাড়িতে বসে থাকবি! অটিস্টিক!

– দুর ভাললাগে না৷ কথায় কথায় অটিস্টিক বলবে না!

এইদিকে আমার মাও কান্না জুরে দিয়েছে আমার জন্য৷ নিবির ভাইয়া বলল
– আন্টি মেয়েকে ত মনে হয় এখনি বিদায় করে দিচ্ছ! কান্না করছো কেন? মনে হচ্ছে আজেকে নিশারও বিয়ে!

আমি কপালে হাত দিয়ে শ্বাস ছেরে বললাম
– উফফু রে! কি যে হচ্ছে না!

শেষ মেষ বিদায় শেষ হলো৷ আমরা কালকেই বাসায় চলে যাবো৷ আর এখন আমাদের কোন কাজ নেই তাই আমরা গাড়ি নিয়ে ঘুরতে বের হলাম৷ নিবির ভাইয়া ড্রাইভিং করছে আর আমরা পিছনে বসেছি আর নিশান ভাইয়া সামনে৷ আমরা সবাই বিয়েতে যেইভাবে ছিলাম সেইভাবেই এসে পরেছি৷ আমি নিবির ভাইয়াকে বললাম
– তুমি এখানকার কিছু চিনো?

– নাহ!

– তাহলে তুমি আমাদের কোথায় নিয়ে যাচ্ছো? কিছু ত চিনোই না আর আমরা কেউই ত চিনি না!

নিবির ভাইয়া তানিশাকে উদ্দেশ্য করে বলল
– তানিশা ওর মুখটা একটু চেপে ধরে রাখ! নাহলে ওকে এখানে নামিয়ে দিয়ে আমরা চলে যাব!

আমি ভেংচি কেটে চুপ করে বসে রইলাম৷ একটু পরে ভাইয়া কোথায় যেন গাড়িটা থামালো৷ আমরা সবাই নামতে দেখলাম এটা একটা পার্কের মতই কিন্তু আসলে এটা একটা রেস্টুরেন্ট কিন্তু চার পাশে ঘুরার জায়গা আর পার্ক আছে৷ আমি গাড়ি থেকে নেমে বললাম
– ওয়াও কত সুন্দর জায়গাটা! নিবির ভাইয়া তুমি নাকি চিনো না তাহলে কিভাবে এলে এখানে?

নিবির ভাইয়া বলল
– এক কাজ কর গাড়িতে বসে তুই ভাবতে থাক যে আমরা কিভাবে এলাম এখানে,,, আর আমরা গিয়ে একটু ঘুরে-টুরে খেয়ে-দেয়ে আসি!

– একটু আমার প্রশ্নের এন্সার ভালো মত দিলে কি হয়!?

আমি রেগে বললাম৷ কেউ আমার কথায় পাত্তা না দিয়ে সবাই ভিতরে চলে গেলো৷ আমি দৌড়ে ওদের পিছনে গেলাম৷ আমরা প্রথমে রেস্টুরেন্টে গিয়ে বসলাম৷ রেস্টুরেন্টের ভিতরেও অনেক সুন্দর করে সাজানো৷ আমার কাছে ভালোই লাগলো জায়গাটা৷ এখন বিকেল বেলা আর একটু পরেই সন্ধ্যা হয়ে যাবে৷ আমরা সবাই কফি অর্ডার করলাম৷ এইভাবে যখন আমরা সবাই একসাথে ঘুরতে বের হই আমার অনেক অনেক বেশি ভাল লাগে৷ কিন্তু যখন আবার ওরা চলে যায় আমার অনেক খারাপ লাগে৷ সবাই দূরে থাকে শুধু আমি একাই এখানে৷ তাই বেশির ভাগ এইভাবে ঘুরতে যাওয়াও হয় না এমন মজাও হয় না৷ ওই এক বোরিং লাইফ,, কলেজ থেকে বাসা,, বাসা থেকে কলেজ৷ আমরা বসে আড্ডা দিতে ব্যাস্ত তখন ওয়েটার এসে আমাদের কফি দিয়ে গেলো৷ সবাই হাতে কফির কাপ নিয়ে ব্যাস টুস করে একটা সেল্ফি তুলে ফেললাম৷ কারণ এই মোমেন্ট গুলো সবসময় আসে না৷ কফিতে চুমুক দিয়ে দিলটা শান্তি হয়ে গেলো৷ অনেক মজার কফিটা৷ আমাদের কফি খেতে খেতেই সন্ধ্যা হয়ে গেছে৷ সন্ধ্যা হতেই পার্কের সব লাইট গুলো জ্বলে উঠলো অনেক বড় পার্কটা৷ দেখতে অনেক সুন্দর লাগছে৷ আমরা কফি শেষ করে বাহিরে এলাম পার্কটা একটু ঘুরার জন্য৷ কিন্তু এই সময়ই পার্কে এত ভির যে কি বলবো! যেখানে তাকাই সেখানেই মানুষ একটুও ফাকা জায়গা নেই৷ হঠাৎ আমার এই সময় কল আসতে দেখলাম মা কল করেছে৷ আমি কল রিসিভ করে কথা বলতে লাগলাম৷ এইখানে ভালো মত কথাও বলতে পারছি না৷ আমি হ্যালো হ্যালো করতেই শেষ৷ কল কেটে রেখে দিলাম৷ তারপর বুঝতে পারলাম আমার সাথের মানুষ গুলো আর আমার সাথে নেই৷ মানে ভাইয়ারা সবাই কেউ নেই৷ আমি ভিরের মধ্যে ওদের খুজতে লাগলাম৷ কি আজব এতটুকু সময়ে ওরা কোথায় চলে গেলো৷ বুঝতে পারছি না ওরা হারিয়ে গেছে নাকি আমি হারিয়ে গেছি৷ আমি তারাতাড়ি তানিশার নাম্বারে কল দিলাম৷ কিন্তু কল ঢুকছে না৷ বার বার দেওয়ার পরেও ঢুকছে না৷ ধুর এখন মেজাজ গরম লাগে না৷ আবার রিদিয়ানা আপুকে কল করলাম এইবারও কল ঢুকছে না৷ আমি আবার আশে পাশে তাকিয়ে ওদের খুজতে গিয়ে দেখলাম নিশান ভাইয়া আমার দিকেই আসছে৷ আমি নিশান ভাইয়াকে দেখতে পেয়ে শান্তির নিশ্বাস নিলাম৷ ভাইয়ার সামনে গিয়ে বললাম
– উফফ তুমি এখানে আমি ত ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম! ওরা কোথায় সবাই??

– জানি না!

– জানো না মানে কি? তুমিও হারিয়ে গেছো তার মানে? উফফু রে কি ঝামেলা এখন ওদের খুজবো কোথায়?

নিশান ভাইয়া কিছু বলল না৷ আমি আবার বললাম
– আচ্ছা এখন প্লিজ তুমি আবার আমার চোখের সামনে থেকে দূর হয়ে যেয়ো না তাহলে আমি আর ভয়ে বেচে থাকবো না তোমাদের না পেয়ে! এক কাজ করো,,,

এটা বলে ভাইয়ার হাত ধরলাম৷ ভাইয়া বলল
– কি?

– হাত ধরে রাখো তাহলে আমরা হারাবো না!

ভাইয়া আর কিছু বলল না৷ আমরা দুইজন হাটতে হাটতে ওদের খুজছিলাম৷ অনেক্ষন পর আমার চোখে পড়লো নিবির ভাইয়া তানিশা রিদিয়ানা আপুকে কিন্তু ওরা আমার থেকে অনেক দূরে এত ভিরে চিল্লান দিলে ত আর শুনবে না৷ আমি নিশান ভাইয়াকে বললাম
– ওই দেখো ওইযে ওরা! চলো!

আমি যেতে নিলে ভাইয়া আমার হাত টেনে ধরে বলল
– কোথায় আমি ত দেখছি না?

আমি বললাম
– ওইযে ওরা দেখতে পারছো না? চলো আমার সাথে ওরা ওইখানেই আছে!

– কই আমি কাউকে দেখতে পারছিনা!

– আরে আমার সাথে চলো বলছি না! ওরা চলে যাবে তারাতাড়ি চলো!!

কিন্তু নিশান ভাইয়া আমার হাত টেনে ধরে দাঁড়িয়ে আছে আর একই কথা বলছে যে ভাইয়া কাউকে দেখতে পারছে না৷ আমি ভাইয়ার সাথে কথা বলতে বলতে ওইখানে আবার তাকিয়ে দেখলাম ওরা নেই৷
– ধুর! আবার চলে গেলো ওরা হারিয়ে গেলো!!

ভাইয়া ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলল
– আগে এখান থেকে বাহিরে চল! মাথাটা ব্যাথা করছে!

এটা বলে আমার হাত টেনে বাহিরে নিয়ে গেলো৷ বাহিরে যেতে আমি বললাম
– চলো গাড়ির সামনে গিয়ে দাড়াই!

ভাইয়া বলল
– নাহ!

– আজব কেন? ওইখানে গেলেই ওদের পাবো!

ভাইয়ার ফোনে কল আসতে ভাইয়া রিসিভ করলো৷
– নিবির! হুম নিশা আমার সাথেই! এক কাজ কর তোরা বাড়ি চলে যা! আমরা দুইজন এসে পড়বো! আসলে আমরা তোদের খুজতে খুজতে কোথায় এসে পরেছি আমরা নিজেও জানি না! কিন্তু তোরা যা আমি আর নিশা আসছি!!

এটা বলে ভাইয়া কলটা রেখে দিল৷ আমি হা করে বললাম
– মানে কি ভাইয়া? আমরা একা যাবো?

– একা কই আমরা ত এখানে দুইজন!!

আমি বললাম
– কিন্তু আমাদের একা যাওয়ার কি দরকার? আমরা চাইলে গাড়ির সামনে দাঁড়ালে ওদের খুজে পেতাম কারণ ওরা গাড়ির সামনে ত আসতোই!! আর তুমি মিথ্যা বললে কেন আমরা অনেক দূরে চলে এসেছি?! আচ্ছা বাদ দাও এখন দেখো রাত হয়ে যাচ্ছে৷ তোমার জন্য!নাহলে ওদের খুজে পেয়ে যেতাম!

নিশান ভাইয়া রেগে বলল
–যা তাহলে খুজ গিয়ে ওদের!!

এটা বলে সামনে হাটা দিল৷ আমি কিছুক্ষন সেখানে ভ্রু কুচকে দাঁড়িয়ে থেকে দৌড়ে ভাইয়ার সামনে গেলাম৷
– দাড়াও এখন আমাকে একা ফেলে কোথায় যাচ্ছো?

– যা তুই ওদের গিয়ে খুজ আমি যাই!

এটা বলে ভাইয়া আবার সামনে হাটা দিল৷ আর আমি পিছনে পিছনে দাড়াও দাড়াও বলতে বলতে ছুটছি৷ এখন রাত হয়ে যাচ্ছে৷ চার পাশে অন্ধকার আবার এইখানের জায়গাটাও কেমন জানি মনে হয় ভুতের এলাকা৷ আর আমরা এখন যেই রাস্তা দিয়ে হাটছি সেখানে বেশি মানুষ নেই৷ ভাইয়া আমাকে ফেলেই মনে হয় চলে যাবে৷ আমি এখনো পিছনে পিছনে হাটছি৷ হঠাৎ আমার ভয় করছে৷ বার বার আশে পাশে তাকাচ্ছি ৷ মনে হয় পিছনে কে যেন আসছে৷ আমি পিছনে তাকিয়ে আবার আশে পাশে তাকিয়ে দেখলাম কেউ ত নেই৷ কিন্তু হঠাৎ সামনে তাকাতে দেখলাম ভাইয়া উধাও!!!!

চলবে,,,,,

(ভুল ত্রুটিগুলো ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here