I_live_in_your_hope,Part_10,11

I_live_in_your_hope,Part_10,11
Adnan_Mahmud
Part_10

এসময়টাতে কেন আমার এরকম হলো।আরো দুদিন পরে হতো।ঠিক বিয়ের সময়টা কেনো এমনটা হলো।আমি তোমাকে স্বামী হিসেবে একদিন পেলেও খুব খুশি হতাম।বড্ড ইচ্ছে ছিলো আমার তোমাকে নিয়ে ঘর বাঁধার।আর হ্যাঁ, আমি অনেক আগেই বুঝতে পেরেছিলাম, আমার ভিতরে একটা সমস্যাকে আমি দিনদিন লালন-পালন করে বেড়াচ্ছি। কাউকে বলিনি, বুঝতে দেইনি।আসলে আমি চাইতাম না আমার জন্য মা-বাবার কষ্ট হোক।আমাকে নিয়ে চিন্তিত হোক।আমার সময় শেষ হয়ে আসছে।আমাকে একটু জড়িয়ে ধরবে প্লিজ।এই ইচ্ছেটা পূরণ করো।
আমাকে দেখে তাসনিয়া চোখ দিয়ে পানি ছেড়ে দিলো।আমার হাতটা ওর হাতের মধ্যে নিয়ে চুমে খেয়ে কথাগুলো বলল।

-আমি সাথে সাথে সবার সামনেই ওকে একটু জড়িয়ে ধরলাম।অনেকটা সময় হয়ে গিয়েছিলো জড়িয়ে ধরার।ছাড়ার কথাও কিছু বলতেছিলো না।তাই নিজেই ছেড়ে দিলাম।ছেড়ে দিয়ে যেটা দেখলাম,কেউ ভাবেনি।তাসনিয়া হাসি মুখে শুয়ে আছে।যখন জড়িয়ে ধরেছি তখনই নাকি প্রাণপাখিটা বের হয়ে গিয়েছে।আমি এতোটা সময় তাসনিয়ার নিথর দেহটাকে জড়িয়ে ধরে ছিলাম।

-গল্প বলতে বলতে রিয়াদের চোখ বেয়ে নোনা জল গড়িয়ে পড়ল।পকেট থেকে রুমাল বের করে চোখ মুছে নিলো রিয়াদ।
রিয়াদের চোখের পানি দেখে তাসনিমের চোখও যেন বাঁধ মানছে না।নিজের অজান্তে তাসনিমের চোখ দিয়েও পানি পড়ল।

-পরেরটা পরে শুনবো।এখন বাদ দেন।রিয়াদের দিকে তাকিয়ে বলল,তাসনিম।
নাহ,আজই শোন।শেষই তো।তাসনিমের দিকে তাকিয়ে বলল রিয়াদ।

-ঠিক আছে বলুন।পাশ থেকে মাম পট নিয়ে একটু পানি খেয়ে বলল তাসনিম।

-পরে ওর লাশটাকে ওখানেই মানে জার্মানিতে মাটি দেওয়া হয়।আর আমি এখন যেমনটা স্বাভাবিক হয়েছি।তখন এর ছিটেফোঁটাও ছিলো না।পরে বাবা মা আমাকে নিয়ে বাংলাদেশে চলে আসে।আর দুবছর অনেক চেষ্টা করে আমাকে স্বাভাবিক করার।আর একদিন হুট করেই শুনি আমার বিয়ে।রাগ করে তোর ছবি চেহারা পারিবারিক অবস্থা কিছুই শুনিনি।তারপর এই হলো জীবন।আমার আর তাসনিয়ার অনেক স্মৃতি জমে ছিলো।আমি এত সহজে ওগুলো ভুলি কি করে?আর হ্যাঁ, মেইন কথাই তো বলা হয়নি।আমি যেসব মেয়ের দিকে তাকাই,ওদের সাথে তাসনিয়ার কোন না কোন দিক থেকে মিল থাকে।আর আমি কোন কু নজরে তাকাই না।আমার তখন মনে হয় তাসনিয়া আমার সামনে।এটাই তাসনিয়া।এতগুলো স্মৃতি যাকে নিয়ে, তার মতন কেউ সামনে থাকলে তার দিকে না তাকিয়ে আমি কি করে থাকবো?

-তাসনিম সব কথা শুনে ভাবল,রিয়াদ আসলেই খুব ভালো মানুষ।একটা শকড খেয়ে জীবন ওলোট পালোট হয়ে গেছে।আমি ওর অগোছালো জীবনটাকে সাজিয়ে দিবো ইনশাআল্লাহ।

-গল্প শেষ করে রিয়াদ ঘুমিয়ে পড়েছে মন খারাপ করে।তাসনিম রান্নার কাজ সেরে নিয়ে খাবার গুছিয়ে নিবে।খাবার টেবিলে সাজানোর আগে রুমে গিয়ে রিয়াদের মাথায় আলতো করে হাত বুলিয়ে ডেকে নিলো রিয়াদকে।রিয়াদকে গোছল করতে পাঠিয়ে দিয়ে খাবারগুলো সাজিয়ে রাখলো টেবিলে।এরপর রিয়া,তামিম তামান্নাকে খাবারের জন্য ডেকে নিলো।

-রিয়াদের গোসল শেষে তাসনিম গোসল করে এলো।
খাবার টেবিলে সবাই আছে কিন্তু একমাত্র শশুর মশাই নেই।
খাওয়া শেষ করে যে যার মতো চলে গেলো।তাসনিমের শুরু হয়ে গেলো মিশন।মিশনটা হলো রিয়াদকে ভালো বানানোর। রুমে গিয়ে রিয়াদ বেলকনিতে বসেছিলো।তাসনিম সোজা গিয়ে রিয়াদের কোলে বসে গেলো।
রিয়াদ প্রথমে একটু রাগী চোখে তাকালেও সাথে সাথে ঠিক হয়ে গেলো।ডান হাতটা তাসনিমের কাঁধের উপর দিয়ে রাখলো।

-কারো মুখে কোন কথা নেই। তাসনিম বারবার তাকাচ্ছে।এইজন্য যে,রিয়াদ কিছু বলে কি না।কিন্তু রিয়াদও নিরিবিলি বসে রয়েছে।খানিকটা সময় পর রুয়াদ বাম হাত নিজের পকেটে ঢুকিয়ে সিগারেটের একটা প্যাকেট বের করে আনলো।যেই একটা সিগারেট এনে ধরাতে গেলো,অমনি তাসনিম সিগারেটটা থাবা দিয়ে নিয়ে বাইরে ফেলে দিলো।এতে রিয়াদ খানিকটা রেগে গেলো।

-দেখি সিগারেটের প্যকেটটা।আজ থেকে এটা বন্ধ করতে হবে আপনার।প্যাকেটটা হাতে নিয়ে বাইরে ফেলে দিয়ে বলল তাসনিম।
রিয়াদ কিছু না বলে তাসনিমকে কোল থেকে নামিয়ে দিয়ে চলে গেলো বাইরে।

-বিকালবেলা ঘুম থেকে উঠে ওয়াশরুমে গেলো তাসনিম।রিয়াদ চলে যাবার পর তাসনিম ঘুমিয়ে পড়েছিলো।

-এখন থেকে এভাবেই চলতে লাগলো রিয়াদ তাসনিমের দিন।অতিরিক্ত রাগ হলে তাসনিমকে মাইর ও দেয় রিয়াদ।তারপরও তাসনিম নিজের মিশন পূরণে ব্যস্ত।এভাবে মাস দুয়েক কেটে যায়।রিয়াদ কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে উঠেছে।এখন আর সিগারেট খায় না রিয়াদ।

তাসনিমকে মারাও অফ করে দিয়েছে।
একদিন তাসনিম বাসায় বসে কাজ করতেছিল।তখন রিয়াদ হঠাৎই বাসায় এসে তাসনিমকে রুমে ডেকে বলল,আজ থেকে আমি তোকে তুমি করে বলবো।আর তুইও আমাকে তুমি করে বলবে।

-রিয়াদের মুখে এমন কথা শুনে তাসনিম খুবই অবাক হলো।কিন্তু হঠাৎই এরকম হওয়ার কারণটা কি বুঝতে পারলো না তাসনিম।
রিয়াদের দিকে তাকিয়ে আছে তাসনিম।রিয়াদও তাকিয়ে আছে তাসনিমের দিকে।রিয়াদ এক পা দু পা করে এগোচ্ছে তাসনিমের দিকে। তাসনিমের কাছে গিয়ে তাসনিমের হাত ধরে রিয়াদ তার মুখটা এগিয়ে নিলো তাসনিমের দিকে।তাসনিম নিজের চোখ অফ করে নিলো।দুজনের নিশ্বাস এক হয়ে গেছে।তাসনিমের নিশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে।

-ভাবী ও ভাবী,মা তোমাকে ডাকছে।রিয়ার কথা শুনে তাসনিমকে ছেড়ে দিলো রিয়াদ।তাসনিম অন্য একটা কাজে লেগে গেলো।

-ভাবী মা তোমাকে ডাকে।ঘরে ঢুকে আবার বলল রিয়া।
চলো যায়।রিয়াকে বলল তাসনিম।

-মা,আসতে পারি?শাশুড়ী থেকে অনুমতি নিলো তাসনিম।
হুম মা,বসো।রিয়া তুই যা।রিয়াকে বলল রাহি বেগম।

-শোন,আমি অনেক খুশি।আমার ছেলের আজ একটু হলেও পরিবর্তন এসেছে।আচ্ছা শোন, তোমরা একটু ঘুরে আসো কোথাও থেকে।এটা তোমার শশুরও চাই।দেশের বাইরে গেলেও যেতে পারো।আর জার্মানি গেলে তো যেতে পারো।জার্মানির কথা বলেই নিজের মুখ কালো করে ফেললেন রাহি বেগম।তিনি ভেবেছিলেন,তাসনিম জার্মানি সম্পর্কে কিছুই জানে না।

-মা,রিলাক্স!আমি সব জানি।আপনি হয়তো এটা লুকিয়েছেন আমার থেকে।তবে আমি সেটা রিয়াদের থেকেই জেনে নিয়েছি। আপনি এটা আরে আগে বললে আমার আরো সুবিধা হতো।শাশুড়ীকে শান্তনা দিয়ে বলল,তাসনিম।

-আচ্ছা, বাদ দেও সব।এখন তোমরা মিলে ডিসকাসড করবে যে,তোমরা কোথায় যাবে।চশমার গ্লাস শাড়ির আঁচল দিয়ে মুছে তা চোখে পরতে পরতে বলল,রাহি বেগম।

-আসলে মা,জার্মানি যাওয়া তো যাবেই না।কারণ,ওখানে গেলে রিয়াদের তাসনিয়ার কথা বারবার মনে পড়বে।কারণ,তাসনিয়া আর রিয়াদের অনেক স্মৃতি সেখানে জড়িয়ে আছে।মন খারাপের ভঙ্গিতে কথাগুলো শাশুড়ীকে বলল,তাসনিম।

-হুম,ব্যাপারটা ভাববার। তাহলে দেশেই কোথাও যাও।কক্সবাজার বা,কুয়াকাটা। দর্শনীয় স্থানগুলো সব ঘুরে আসো।হাসিমুখে বলল,রাহি বোগম।

-ওকে,আমি আপনার ছেলের সাথে যোগাযোগ করে দেখি।শাশুড়ীর রুম থেকে বেরিয়ে গেলো তাসনিম।

-ওই!তুমি কোথায় গেছিলা?তাসনিমকে জিজ্ঞেস করল রিয়াদ।
আচ্ছা আগে আপনি এটা বলেন যে,হঠাৎই এমন কি হলো যে,আপনি আমাকে তুই থেকে তুমি বলা শুরু করলেন?
রিয়াদকে টেনে নিয়ে খাটের উপর বসিয়ে জিজ্ঞেস করল তাসনিম।

-বলবো,তার আগে তুমি আমাকে এই কথাটিই ঠিকভাবে বলো।তাসনিমেট মুখের উপরের অগোছালো চুল গুলো কানে গুজে গুছিয়ে দিতে দিতে বলল রিয়াদ।

-উফফ্,হঠাৎই আপনি থেকে তুমি বলা যায় না।কেমন যেন লাগে।
কপাল ভাজ করে বলল,তাসনিম।

-বলো,চেষ্টা করো সব হবে।চেষ্টা করলে সবই সম্ভব। করো চেষ্টা তো করো।মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলল রিয়াদ।

-আচ্ছা বলো, হঠাৎই এমন পরিবর্তন কেনো হলো।মাথা নিচু করে আস্তে করে বলল তাসনিম।

-শুনতে হলে শর্ত পূরণ করতে হবে।তাসনিমকে বলল রিয়াদ।

-ওই এতো বাহানা করবেন না।রিয়াদকে বলল তাসনিম।

-আবারো আপনি করে?বলবোই না তোমাকে।খাট থেকে উঠে যেতে গিয়ে বলল রিয়াদ।

সরি সরি সরি,ভুল হয়ে গেছে।বসো বসো।বলে যাও।
হাত ধরে টেনে পুনরায় বসাতে বসাতে বলল তাসনিম।

শর্ত পূরণ করো।হাসতে হাসতে বলল রিয়াদ।

নাহ,কোন শর্ত টর্ত নেই।বলো তো।মাথা ঝাঁকাতে ঝাঁকাতে বলল তাসনিম।

-ধুরু বাবা!তোমাকে নিয়ে আর হলো না।পারা গেলো না তেমাকে নিয়ে।আগে জিজ্ঞেস তো করো কি শর্ত।
অন্য দিক মুখ করে বলল রিয়াদ।

-আচ্ছা বলো শর্তটা কি?রিয়াদকে জিজ্ঞেস করল তাসনিম।

-শর্তটা হলো আগে আমাকে দুটো কিস করো।পরে আমাকে দুটো কিস করতে দাও।এটাই শর্ত।

-কিহহ্,কি বললা?

চলবে….

I_live_in_your_hope
Adnan_Mahmud
Part_11
.
হুম আমাকে ফাস্টে কিস করতে দিতে হবে তোমাকে।আমার হয়ে গেলে তুমি আমাকে কিস করবে।হ্যাঁ এটাই হলো শর্ত।হাস্যজ্বল মুখ নিয়ে বলল রিয়াদ।

-ধুরু এটা কি কোনো শর্ত হলো নাকি?
খানিকটা বিরক্তিকর ভাব নিয়ে বলল,তাসনিম।
তবে ভিতরে ভিতরে যে মহা খুশি সেটা তাসনিমের মুখ দেখলে যে কেউই বুঝতে পারবে।

-রিয়াদ তার দুহাত বাড়িয়ে দিলো তাসনিমের দিকে।একটু এগিয়ে বসলো রিয়াদ।এক হাত দিয়ে তাসনিমের মাথার পিছনে ধরল।অন্য হাত তাসনিমের কাঁধে রাখলো।
-দুজেনেই খামিকটা এগিয়ে বসল।রিয়াদ তার মুখ এগিয়ে নিয়ে গেলো তাসনিমের মুখের একেবারে কাছে।
দুজনের নিশ্বাস যেন এক হয়ে গেছে।চোখ বন্ধ করে ঘনঘন নিশ্বাস ফেলছে তাসনিম।হার্টবিট যেন বেড়ে গেছে।

-তাসনিমের নরম কোমল গোলাপি মসৃণ ঠোঁটে রিয়াদ তার ঠোঁট ডুবিয়ে দিলো।
-নীরবতা কাটিয়ে হঠাৎই জোরে আওয়াজে বেজে উঠলো পাশে রাখা রিয়াদের ফোন।

-আচমকা ফোনের রিংটন শুনে তাসনিম নিজের চোখ খুলেই রিয়াদের দুই বাহুর মাঝ থেকে বেরিয়ে আসতে চাইলো।রিয়াদ ফোনের দিকে তাকিয়ে তাসনিমকে ছেড়ে দিলো।

-তাসনিম,দেখতো কে ফোন করল।তাসনিমকে বলল,রিয়াদ।

-ধুর শালার ডিস্টার্ব। কিচ্ছু করে শান্তি নেই।মনে মনে বিড়বিড় করছে রিয়াদ।খুব রাগও হচ্ছে।

-বাবা ফোন করেছে আমার।ফোনের কাছে গিয়ে যেতে যেতে ফোন কেটে গিয়েছিল।মনে মিসডকল চেক করে নিয়ে বলল তাসনিম।

-শশুর মশাই আর ফোন করার সময় পেলো না।জামাই মেয়েকে শেষপর্যন্ত ডিস্টার্ব করে দিলো।

-ওই কি বলো?থামোতো।তারা কি জানতো আমরা কি করছি।কপাল ভাঁজ করে বলল তাসনিম।

দাও ফোন দিয়ে কথা বলো।তাসনিমকে ফোন দিতে বলল,রিয়াদ।আর হ্যাঁ, ছাড় কিন্তু পাবে না।কথা বলে আবার আসবে।বাকিটুকু শেষ করতে হবে।
হাসতে হাসতে বলল,রিয়াদ।

-তাসনিম বাসায় ফোন করে মা-বাবা,ভাই-বোনের সাথে কথা বলে নিলো।

-হলো তোমার কথা বলা?তাসনিমকে জিজ্ঞেস করল রিয়াদ।
-এই নাও তোমাকে চাচ্ছে। ফোন এগিয়ে দিয়ে বলল তাসনিম।

-শোন,এখানে আসো এবার।কথা তো অনেক বলা হলো বাসায়।তাসনিমের হাত ধরে টেনে বলল রিয়াদ।
-উফফ্,ছাড়ো তো।অনেক হয়েছে কিস করা।এখন বলো।নাহলে খবর আছে বলে দিচ্ছি।

-আচ্ছা বসো।তাসনিমকে বললো রিয়াদ।
হুম বসলাম,এখন তো বলো।রিয়াদকে বলল,তাসনিম।

-হঠাৎ করে হো হো করে হেসে দিলো রিয়াদ।আরে যাওনা।পরে একদিন বলবো তোমাকে।

-খানিকটা রাগ করে চলে গেলো তাসমিম।

-বিকাল চারটা।রিয়া আর তাসনিম ছাদে বসে গল্প করছে।খানিকটা সময় বাদে,,
রিয়া,চলো আমরা এখান থেকে চলে যায়।এখানে আর থাকা যাবে না মনে হচ্ছে। রিয়াকে বলল,তাসনিম।

-কেন ভাবী হলোটা কি?তাসনিমের মুখের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল রিয়া।

-আশেপাশে মৌমাছি ভনভন করছে দেখো।রিয়াকে বলল তাসনিম।
রিয়া পাশের ছাঁদে তাকিয়ে দেখে হৃদয় দাঁড়িয়ে আছে।সেই ছেলেটা,যে তামান্নার কথা জিজ্ঞেস করেছিল।যার কারণে রিয়া ছাঁদে আসতে পারে না।

-ভাবী কি করেছে হৃদয়? তাসনিমকে জিজ্ঞেস করল রিয়া।
-ওর নাম তাহলে হৃদয় নাকি?রিয়াকে জিজ্ঞেস করল তাসনিম।

-হুম ভাবী,হৃদয় ওর নাম।তবে এলাকাতে লুচ্চা হৃদয় নামে পরিচিত।
হাসতে হাসতে বলল রিয়া।

-কিন্তু ভাবী, ও তোমাকে কি করেছে বললে না তো?
উৎসুক হয়ে জিজ্ঞেস করল রিয়া।

-কি আর করবে?হারামজাদা ওখানে দাঁড়িয়ে চোখ মারতেছে আমাকে।রিয়াকে বলল তাসনিম।

-কি বললা ভাবী?ওই হারামখোর তোমার সাথে এমন করছে?
দাড়াও ভাইয়াকে এখনি বলছি।খুব বেড়ে গেছে হৃদয়।
বসা থেকে উঠে দৌড়ে নিচে চলে গেলো রিয়া।তাসনিমও রিয়ার পিছন পিছন নিচে এলো তাসনিমও।

-ভাইয়া, ও ভাইয়া!রিয়াদের রুমে ঢুকে ডাকাডাকি শুরু করল রিয়া।
-কি হয়েছেরে রিয়ু?রিয়াকে জিজ্ঞেস করল রিয়াদ।
ভাইয়া লুচ্চা হৃদয় ভাবীকে নাকি চোখ মেরেছে।

-সত্যি নাকি তাসনিম?রিয়ার পিছনে তাসনিমকে দেখে জিজ্ঞেস করল রিয়াদ।
আরে মেরেছে।থাক বাদ দাও তো।ওরা খারাপ ছেলে।
রিয়াদকে বলল,তাসনিম।

আজকে ওর বারোটা বাজিয়েই ছাড়বো আমি।রাগে ফোসফোস করতে করতে বলল,রিয়াদ।

-বাসা থেকে রাগে বেরিয়ে পড়লো পাশের বাসা অর্থাৎ, লুচ্চা হৃদয়ের বাসার উদ্দেশ্যে।

-ওই আপনার ছেলে কই?হৃদয়ের বাসায় গিয়ে ফাস্টে ছাদে গিয়ে হৃদয়কে না পেয়ে ওদের ফ্লাটের কলিং বেল বাজেলে ওর মা গেট খুলে বের হলো।তাকে জিজ্ঞেস করল রিয়াদ।

-কেনো বাবা,কি হয়েছে?হৃদয়ের মা জিজ্ঞেস করল রিয়াদকে।
কিচ্ছু হয়নি। আপনার ছেলে কোথায় বলেন?
রক্তচক্ষু করে জিজ্ঞেস করল রিয়াদ।

-ও তো ভিতরেই আছে।
কোমল কন্ঠে বলল,হৃদয়ের মা।

-দরজা ঠেলে খুব গতির সাথে ভিতরে ঢুকলো রিয়াদ।
হৃদয় নিজের রুমে বসে ছিলো।
রিয়াদ গিয়েই ঠাস করে কষিয়ে একটা থাপ্পড় দিয়ে বলল,হারামীর বাচ্চা ছাঁদে কি করছিস?

-হৃদয় নিজের গালে হাত দিয়ে বসে আছে। মনে হচ্ছে মাথায় কোন কাজ করছে না।
এক থাপ্পড়ে হয়তো কাজ হয়ে গেছে।

-আরে রিয়াদ বাসায় আয়।রিয়াদের পিছন থেকে বলল রেহান সাহেব।হয়তো তাসনিম পাঠিয়েছে।

-সেদিনের মতো হৃদয়কে আর কিছু বললো না রিয়াদ।ইচ্ছে ছিলো অনেক কিছু বলার।কিন্তু নিজের বাবার জন্য পারেনি।

-রাতের বেলা খাবার টেবিলে বসে আছে সবাই।আজকে বিরিয়ানি রান্না করেছে তাসনিম।খুব ভালো বিরিয়ানি রান্না করে তাসনিম।

-বাহ্ মা!দারুণ রেঁধেছো তো।বেশ হয়েছে বিরিয়ানিটা।
মুখে দিয়ে চিবাতে চিবাতে বলল রেহান সাহেব।

-শশুরের প্রশংসায় তাসনিম খুবই খুশি হলো।আস্তে আস্তে একেক করে সবাই প্রশংসা করল তাসনিমের।সকলের প্রশংসায় তাসনিম তো মহা খুশি।

-ওই চলো একটু ছাঁদে যায়।তোমার সাথে কথা আছে।রিয়াদকে বলল তাসনিম।

-কি বলবে এখানে বলো।তাসনিমকে বলল রিয়াদ।
-আরে,ছাঁদে গেলে ভালো লাগবে। চলো ছাঁদে।

-দুজনে উঠে গেলো ছাঁদে।চাঁদের আলোয় আলোকিত হয়ে আছে পুরো ছাঁদটা।টিপ টিপ পা ফেলে দুজেনে চলে এলো ছাঁদের এক কর্ণারে।

-জানো আমার অনেক আগে থেকে স্বপ্ন ছিলো যে,নিজের হাসবেন্ডের সাথে রাতেট বেলা জোছনা বিলাস করার।রিয়াদের কাঁধে মাথা রেখে বলল তাসনিম।

-আচ্ছা, বুঝলাম।তো এখন বলো কি বলবে?
তাসনিমকে জিজ্ঞেস করল রিয়াদ।

-ওহ হ্যাঁ,সোজা কথায় চলে আসি।মা বলছিলো কোথাও ঘুরতে যাওয়ার কথা।এই ধরুন কক্সবাজার, কুয়াকাটা, মোটকথা, দর্শনীয় স্থানগুলো যা যা আছে।সব জায়গায় ঘুরতে যেতে বলেছে।এমনকি দেশের বাইরে যেত চাইলে সেখানেও যেতে বারণ নেই।
রিয়াদকে সব খুলে বলছে তাসনিম।

-হুম,তারপর?সব শুনে তাসনিমকে আবার জিজ্ঞেস করল রিয়াদ।

-তারপর আর কি?আমি বলছি,দেশের বাইরে যাওয়ার দরকার নেই। তখন মা বলছিল,জার্মানির কথা।বাট আমি না করে দিয়েছি।কারণ,ওখানে গেলে তোমার আবার তাসনিয়ার কথা মনে হবে।রিয়াদকে বুঝিয়ে বলল,তাসনিম।

-আমি একটা কথায় বলবো সেটা শুনবে?তাসনিমকে কড়া গলায় বলল,রিয়াদ।

-হুম,বলো?মনে মনে ভয় পেয়ে বলল তাসনিম।

-যদি কোথাও ঘুরতে যেতেই হয়, তাহলে সেটা হবে আউট বাংলা।আর দেশ হবে জার্মানি। বুকে টান টান উত্তেজনা নিয়ে বলল রিয়াদ।

-রিয়াদের এমন কথায় তাসনিমের মনের সব ভয় কেটে গেলো।তাসনিম ভেবেছিল হয়তো রিয়াদ না বলবে।কোথাও যেতে হবে না।এমনটি বলবে।

-পরেরদিন তাসনিম শাশুড়ীকে গিয়ে সব জানালো।রাহি বেগমও সব শুনে খুশি হলো।
রেহান সাহেবকে বলে দু-তিনদিনের মধ্যেই জার্মানি যাওয়ার ব্যবাস্থা করে দিলো।

-আগামীকাল সকালে বের হতে হবে এয়ারপোর্টে। দুপুর বারোটার ফ্লাইটে রওনা হবে জার্মানির উদ্দেশ্য।
বাসায় আজ অনেক কিছুর আয়োজন করেছে।তাসনিমের বাবা-মা,ভাই-বোন সকলে এসেছে।এক কথায় বাসায় আমোদ ফূর্তিতে ভরপুর।

-নানা আইটেমের খাবার,পিঠা ইত্যাদি ইত্যাদি তৈরি করা হচ্ছে। কিন্তু তাসনিমের মনটা খুবই খারাপ হয়ে গেছে।সবাইকে রেখে চলে যাচ্ছে। যদিও তা কিছুদিনের জন্য। কিন্তু আগে কখনো এভাবে বাবা-মা ছাড়া থাকেনি কোথাও তাই মন কেমন করছে।হ্যাঁ শশুর বাড়ি এসে প্রথমে একটু খারাপ লেগেছিল। বাট যখন মায়ের মতন একজন শাশুড়ী আর বাবার মতন একজন শশুর পেয়েছে সেটা বুঝতে পারে,তখন থেকে আর খারাপ লাগেনি।

-কিন্তু সেখানে তো না বাবা-মা থাকবে,না শশুর -শাশুড়ী থাকবে।সেটা ভেবেই একটু খারাপ লাগছে।

-কাপড়-চোপড়, ব্যাগ সবকিছু আজই গুছিয়ে রাখলো তাসনিম।কম হলেও এক মাসের সফর।

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here