I live in your hope,part_8,9

I_live_in_your_hope,part_8,9
Adnan_Mahmud
part_8

তাসনিম নিচে গিয়ে অন্তরার সাথে কুশল বিনিময় করল।প্রায় পাঁচ বছর পর দুজনের দেখা।অন্তরা আর তাসনিম দুজনে ভালো ছাত্রী ছিলো।অন্তরাদের আর্থিক প্রবলেম না থাকায় অন্তরার বাবা বিদেশে পড়া লেখার ব্যবস্থা করে দিয়েছে।আর তাসনিমদের অতটা ভালো না হওয়ায় তাসনিমের যেতে হয়েছে শশুর বাড়ি।

-তোর জামাই টাকে তো দেখা।গাল হালকা করে টান দিয়ে তাসনিমকে বলল অন্তরা।

-আচ্ছা তুই কি আমাকে দেখতে আসছিস নাকি আমার জামাইকে?ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করল তাসনিম।

-আমিতো তোদের দুজনকেই দেখতে আসছি।হাসতে হাসতে বলল,অন্তরা।

-নাহ,তোর জামাই দেখতে হবে না।সোজা বলে দিলো তাসনিম।

-প্রথমে ব্যাপারটা ফাজলামো মনে হলেও এটা কিন্তু কেনভাবেই ফাজলামো নয়।
অন্তরা কিছু বুঝতে পারলো না তাসনিম এরকম কেনো করছে।
আমি কি ওর জামাইকে খেয়ে ফেলবো নাকি?মনে মনে বিড়বিড় করছে অন্তরা।

-নাহ,রিয়াদকে এখানে আনা যাবে না।পরে অন্তরাকে দেখে কোথায় না কোথায় তাকায় থাকবে বলা যায় না।
মনে মনে বিড়বিড় করছে তাসনিম।

-তাসনিম, ও তাসনিম, কোথায়?, উপর থেকে ডাকতে ডাকতে নিচে নামলো রিয়াদ।

অন্তরাসহ তাসনিম নিচেই সোফাতে বসে ছিলো।অন্তরা রিয়াদকে দেখে নিজেকে কন্ট্রোল করতে না পেরে অস্ফুট স্বরে বলে ফেলল,ওয়ায়!!হাউ সুইট।

-তাসনিম রিয়াদকে দেখে চোখ বন্ধ করেছিল।কিন্তু অন্তরার ওয়াও বলা শুনে চোখ খুলে দুজনের সাথে দুজনের পরিচয় করিয়ে দিলো অনিচ্ছাসত্তেও।

-রোকেয়া বেগম সবাইকে পেয়ারা খেতে দিয়ে চলে গেলো।অন্তরা পেয়ারা খেতে খেতে একটা নিচে ফেলে দিলো।নিচু হয়ে পেয়ারাটা উঠাতে গেলে ওড়নাটা আর জায়গায় রইল না।

সাথে সাথে রিয়াদের চোখ চলে গেলো অন্তরার বুকে।বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে আছে অন্তরার বুকের দিকে।
তাসনিম বারবার রিয়াদের দিকে তাকাচ্ছে। আবার অন্তরার দিকেও তাকাচ্ছে। কারণ,দুজনের চোখাচোখি বা অন্তরা যদি দেখে রিয়াদ এভাবে তার দিকে তাকিয়ে আছে, তাহলে রিয়াদ আর তাসনিম দুজনেই অন্তরার কাছে ছোট হয়ে যাবে।

-ওড়না সরে যাওয়ায় তাড়াতাড়ি পেয়ারা উঠিয়ে নিয়ে ওড়না ঠিক করে নিলো অন্তরা।ওড়না ঠিক করে প্রথমে তাসনিমের দিকে তাকিয়ে একটু হাসি দিলো অন্তরা।এরপর রিয়াদের দিকে তাকাতেই মুখের হাসি উধাও হয়ে গেলো।রিয়াদ এখনো অন্তরার বুকের দিকে তাকিয়ে আছে।

-নাহ,এর বুকটা তাসনিয়ার মতনও না আবার তাসনিমের মতনও না।এর থেকে তাসনিমের বুকই সুন্দর। মনে এসব কম্পেয়ার করে বেড়াচ্ছে রিয়াদ।

-তাসনিমের ডাকে রিয়াদের কম্পেয়ার করা থমকে গেলো।
রিয়াদের এরকম করাটা মোটেও পছন্দ হয়নি অন্তরার।এটা ওর মুখ দেখলেই যে কেউ বুঝতে পারবে।এখন নিজের হাসবেন্ডের জন্য বান্ধবীর কাছে কালারিং হয়ে গেলো অন্তরা।

-দুপুরের পর সবাইকে নিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্য রওনা দিলো রিয়াদ।সাথে নতুন দুজন,তামিম তামান্নাকে নিয়ে পাঁচজনের জার্নি।মাগরিবের পর বাড়িতে এসে পৌছালো সবাই। তামিম তামান্নাকে দেখে খুবই খুশি হলেন রেহান সাহেব আর রাহি বেগম।

-সেদিনের মতো রাতে কিছু না খেয়ে বাইরে চলে গেলো রিয়াদ।
বাড়িতে সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে।তাসনিম নিজ ঘরে বসে আছে রিয়াদের ফিরার অপেক্ষায়।কিন্তু রিয়াদের এখনো
বাড়ি ফেরার নাম গন্ধও নেই।কয়েকবার রাহি বেগম এসে ঘুরে গিয়েছে।দেখে গিয়েছে ছেলে ফিরেছে কিনা।

-হঠাৎই গেট ঠেলে রুমে ঢুকল রিয়াদ।চোখ মুখ পুরো লাল হয়ে আছে।রিয়াদের এরকম চেহারা দেখে খানিকটা ভড়কে গেলো তাসনিম।সাহস নিয়ে রিয়াদের দিকে এগিয়ে গেলো তাসনিম।
রিয়াদ চোখের পলকে তাসনিমকে কোলে তুলে নিয়ে খাটের উপর ফেলে তাসনিমের উপর শুয়ে পড়ল।তাসনিমের ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে দিলো রিয়াদ।

-তাসনিমের বড় বড় চোখ দুটো আরো বড় হয়ে গেলো।রিয়াদের বুক ধরে ঠেলে ফেলে দেওয়ার ব্যর্থ চেষ্ট করছে তাসনিম।
রিয়াদ যেন ছাড়তেই চাচ্ছে না।
অনেক চেষ্টার পর রিয়াদকে এক পাশে ঠেলে ফেলে দিলো তাসনিম।
দৌড়ে বিছানা থেকে উঠে ওয়াশরুমে চলে গেলো।ওয়াশরুমে গিয়েই বমি করে দিল তাসনিম।এতটা দুর্গন্ধ আগে কখনো সহ্য করেনি।মদ আর সিগারেটের তীব্র গন্ধ এখন নাকে লেগে রয়েছে যেনো।

-কিস করা নিয়ে তাসনিমের কোন সমস্যা হচ্ছিল না।গন্ধের কারণেই বমিটা করতে হয়েছে তাসনিমের।
ওয়াশরুম থেকে বমি পরিষ্কার করে নিজেও ফ্রেশ হয়ে হাত মুখ ধুয়ে এসে আয়নাই চেহারা দেখতে গিয়ে একটু ভয় পেয়ে গেলো তাসনিম।ঠোঁট জায়গায় জায়গায় হালকা হালকা করে কেটে গেছে।অল্প অল্প করে রক্তও বের হচ্ছে। তাসনিম মেরিল বের করে ঠোঁটে লাগিয়ে নিলো।

-খানিক আগে আজকে যা ঘটে গেলো এটার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলো না তাসনিম।মনে মনে খুব খুশি লাগতেছে তাসনিমের।

-শরীর খুব ক্লান্ত থাকায় শুয়েই ঘুমিয়ে গেছে রিয়াদ।
তাসনিম গিয়ে রিয়াদকে ঠিকমতো শুইয়ে দিয়ে গায়ে খাতা জড়িয়ে দিয়ে নিজেও রিয়াদের পাশে শুয়ে পড়ল।

-রিয়াদকে ডাকো।রিয়াদের মা।স্ত্রীকে কড়া গলায় বলল,রেহান সাহেব।
রাহি বেগম রিয়াদকে ডেকে আনলেন।
সাথে তাসনিমও এলো।তাসনিম এসে রিয়াদকে কিছু বলতে মানা করলো।তাসনিম বুঝতে পেরেছে রাত করে বাড়ি ফেরা নিয়ে রাগারাগি করবে।তামিম তামান্নার সামনে এগুলো ঠিক হবে না।সবকিছু শশুর মশায়কে বুঝিয়ে বলল, তাসনিম।

-রাহি বেগম তাসনিমকে আলাদা করে নিজের রুমে ডাকলেন।
নিজের রুমে বসে বউ মায়ের জন্য অপেক্ষা করছে রাহি বেগম।
খানিক বাদে রুমে ঢুকল তাসনিম।
-আসসালামু আলাইকুম। সালাম দিয়ে শাশুড়ী মায়ের পাশে গিয়ে দাড়ালো তাসনিম।
সালামের জবাব দিয়ে তাসনিমকে বসতে বলল রাহি বেগম।

-দেখ মা!আমি তোমাকে এতটা ঘুরিয়ে পেচিয়ে বুঝাতে চায় না।সোজা বলতে চাই।
এই কয়দিনে হয়তো বুজে গেছো আমার ছেলে কেমন?
ওকে ভালো করার জন্য তোমার মতনই একটি লক্ষী মেয়ের প্রয়োজন।
প্রথমে আমি তোমাকে বা তোমার পরিবারকে বলিনি।কিন্তু এটা মনে করোনা যে,আমি বা আমরা তোমাকে বা তোমাদেরকে ধোঁকা দিয়েছি।

-তখনি যদি বলতাম তাহলে হয়তো তুমি বা তোমার পরিবার রাজি হতো না।কোন ভালো মেয়ে পেতাম না।আর ওকে ঠিক করার জন্য ভালো মেয়ের খুবই দরকার।

-আচ্ছা রিয়া,তোমাদের ছাঁদ তো দেখালা না আমাকে।
নিজের ওড়না ভালোভাবে পরতে পরতে বলল তামান্না।

-হুম,চলো চলো।মনেই তো নেই। তামিমকেও ডেকে নিবো নাকি?পায়ে স্যান্ডেল ভরতে ভরতে জিজ্ঞেস করল রিয়া।

-নাহ,ওকে ডাকার দরকার নেই। ফাজিল একটা।হাসতে হাসতে বলল তামান্না।
রিয়া আর তামান্না দুজনে ছাদে উঠে গেলো।
তামান্নাকে ছাঁদ ঘুরে দেখাচ্ছে রিয়া।
তখনি পাশের ছাঁদ থেকে শিস্ মারার শব্দ শুনে সেদিকে ঘুরে তাকাল উভয়ে।

-কিরে রিয়া এটা কেরে?পাশের ছাদ থেকে উকি দিয়ে জিজ্ঞেস করল একটা ছেলে।

-তোর কি?তোকে বলতে হবে নাকি?মুখ ভেংচি কেটে বলল রিয়া।

রিয়া এটা কে?পাশ থেকে জিজ্ঞেস করল তামান্না।
আরে বলো না,আস্ত একটা হারামখোর।বাজে ছেলে।
বিরক্তিকর কন্ঠে বলল, রিয়া।

-চলো নিচে চলো।এই বেয়াদব টার জন্য শান্তি নাই।ভাইয়াকে বললে ওকে মেরে তক্তা করে ফেলবে।
তামান্নার হাত ধরে টানতে টানতে বলল,রিয়া।

আচ্ছা, ব্যাপারটা কি বলতো একটু।রিয়াকে জিজ্ঞেস করল তামান্না।
আরে,আর বলনা।নতুন কোন মেয়ে আসলে এলাকায় তার সাথে ছলে বলে কলে কৌশলে কথা বলে তারপর রিলেশন করে। এরপর শারীরিক সম্পর্কও করে।বাজে ছেলে বলছি না?
আমি ছাঁদে যেতে পারি না ওই হারামীটার জন্য।
রাগে ক্ষোভে ফোসফাস করতে করাতে বলল রিয়া।

-শোন মা!আমি জানিনা তুমি কিভাবে আমার ছেলেকে ভালো বানাবা।কিন্তু যেভাবেই হোক আমার ছেলেকে তুমি ভালো বানাবা।এইসব ছাঁই পাস যেন না খায়।রাতে যেন দেরি না করে।তাসনিমের হাত ধরে কথাগুলো বলছে রাহি বেগম।

-মা!মেয়ে হয়ে যখন এসেছি।তাহলে মেয়ের কর্তব্য পালন করব।আপনার ছেলেকে ঠিক করার দায়ভার আমার।আমি তিলে তিলে আমার ভালোবাসা দিয়ে আমি ওকে ঠিক করার চেষ্টা করব।এতে আমার যদি কঠিন কষ্ট ও সহ্য করতে হয় করব।শাশুড়ী বউয়ের কথা র মাঝে রুমে এসে ঢুকলো রেহান সাহেব।তাসনিম উঠে গিয়ে একটা টুল এনে শশুরকে বসতে দিলো।

চলবে…

I_live_in_your_hope
Adnan_Mahmud
Part_09
.
-শাশুড়ীর রুম থেকে রিয়াদকে ভালো মানুষের মতন মানুষ করার অঙ্গীকার নিয়ে বের হলো তাসনিম।
বের হয়ে সোজা নিজেদের রুমে চলে এলো।
রুমে এসে রিয়াদকে খুজতে লাগলো।কিন্তু কোথাও খুজে পেলো না।শেষমেশ রিয়ার কাছে জিজ্ঞেস করে জানতে পারলো বাড়িতে নেই।বাজারে গেছে।

-খোজা বাদ দিয়ে বাড়ির কাজে মন দিলো তাসনিম।
কিছুটা সময় বাদে রিয়াদ বাড়ি ফিরল।তাসনিমও সোজা রুমে চলে এলো।

-ওই,আজকে আপনি বলবেন তাসনিয়ার সব ঘটনা।
কোমর থেকে শাড়ির আঁচল খুলতে খুলতে বলল তাসনিম।

-কি হলো তোর?হঠাৎই এরকম উঠে পড়ে লাগলি কেনো?তাসনিমেট দিকে ঘুরে তাকিয়ে হাত থেকে ঘড়িটা খুলতে খুলতে বলল রিয়াদ।

-কিছু হয়নি।আপনি এখানে বসুন আর বলুন।রিয়াদের হাত ধরে টান দিয়ে খাটে বসিয়ে বলল তাসনিম।

-রিয়াদ খাটে বসে খানিকক্ষণ তাসনিমের দিকে তাকিয়ে থেকে বলতে শুরু করল।
ওই শোন!লম্বা কাহিনী সংক্ষেপে বলছি।বলা শুরু করার আগে বলে নিলো রিয়াদ।

-হ্যাঁ,বলুন তো।অস্থির হয়ে বলল তাসনিম।

-এয়ারপোর্টে থেকে বাসায় গিয়ে রেস্ট নিলাম।পরে খাওয়া দাওয়া শেষ করে আঙেল ব্যাবসা সম্পর্কে কিছু ধারণা দিলো।পরে আমরা কোম্পানিতে গেলাম।
আস্তে আস্তে পাঁচ মাস এভাবেই কেটে গেলো।আঙেলের মেয়ে তাসনিয়ার সাথে ভালোই সম্পর্ক হয়ে গেলো।যেদিন আমার জার্মানিতে অবস্থানের এক বছর পূর্ণ হলো,সেদিন রাতে আমি আমার রুমে ল্যাপটপে অফিসিয়াল কিছু কাজ করছিলাম।

-হঠাৎ করে পিছন থেকে কেউ এসে জড়িয়ে ধরলো।কিছু সময়ের জন্য কিছু বুঝে উঠতে না পারলেও পিছনে ঘুরে দেখলাম তাসনিয়া।
আমি ওকে এতো রাত অবদি জেগে থাকার কারণটা জিজ্ঞেস করলে ও আমাকে একটা ধমক দিয়ে বসিয়ে রাখলো এটা বলে যে,নিজে জাগলে দোষ নাই আর আমি একদিন জাগলাম তাই আবার কথা শুনাচ্ছে।

-আমি ওকে আঙেল আন্টির কথা জিজ্ঞেস করলে ও বলল,তারাও এখনো জেগে আছে।আর আমাকে তোমার রুমে আসতেও দেখেছে।
আমি তখন খুবই ভয় পেয়ে গেছিলাম।কারণ,এতো রাতে একটা মেয়ে একজন ব্যাচেলার ছেলের রুমে আসাটা ভালো দেখায় না।
সাথে সাথে আমি তাসনিয়াকে আমার রুম থেকে বেট হবার জন্য তাগিদ দিতে লাগলাম।

-কিছু একটা বলতে আসছি আমি।আগে বলতে তো দাও আমাকে।এরকম করে আমাকে বলল তাসনিয়া।
আমি বললাম,কি বলবে জলদি বলে বের হও।আঙেল আন্টি খারাপ মনে করবে।বিষয়টা ভালো দেখায় না।
এরপর আমি তাসনিয়ার মুখ থেকে যা শুনলাম সেটা শোনার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না।
তাসনিয়া বলল,আমাকে বাবা-মা-ই পাঠিয়েছে।

-আমি কি বলবো বুঝতে পারছিলাম না।
আনার নীরবতাকে কাজে লাগিয়ে তাসনিয়া আমাকে প্রপোজ করে দিলো।
আমিও ওকে পছন্দ করে ফেলেছিলাম।আমি কিছু বলতেই যাচ্ছিলাম তখনই দরজা ঠেলে আঙেল – আন্টি আমার রুমে ঢুকল।

-হ্যাঁ বাবা,তাসনিয়া তোমাকে অনেক আগ থেকেই পছন্দ করে।যেদিন তুমি এসেছিলে জার্মানি, সেদিন থেকেই।আর এটা আমাদেরকে তখনই বলেছিলো।আর বুঝোইতো একটা মেয়ে আমাদের। সব আবদার রাখতে হয়।এখন তুমি বলো তোমার কি পছন্দ আমার মেয়েকে?তাহলে তোমার বাবা-মায়ের সাথে কথা বলে নিবো।

বাবার কথা শুনে তাসনিয় বলল,নাহ বাবা আগে প্রেম করব আমি।মেয়ের কথাই বাবা-মা,আর আমি তিনজনেই হেসে দিলাম।

আমার নীরবতা দেখে হয়তো তারা বুঝে নিয়েছিল যে,আমারও পছন্দ। তাই তারা রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।তাসনিয়াকেও আমি যেতে বললাম।ও বলল,আজ নাকি আমার এখানেই ঘুমাবে।ওর কথা শুনে আমি খুবই অবাক হয়ে গেলাম।তবে জার্মানিতে এসব কোন বড় বিষয় না।
তবে হাজার হলেও বাঙালি ছেলে তো, তাই কেমন জানি লেগেছিলো।বারবার না করে দিলাম।
পরে নতুন আরেকটা বায়না শুরু করল তাসনিয়া। ও নিজে ওর রুমে যাবে না।গেলে ওকে কোলে করে দিয়ে আসতে হবে।আর নাহলে এখানেই থাকবে।

-অবশেষে বাধ্য হয়ে কোলে তুলে নিয়ে দিয়ে আসতে হলো আমাকে।

-ওই ওয়েট ওয়েট!আপনি ওকে কোলে তুলে দিয়ে আসলেন শেষ পর্যন্ত। বড় বড় চোখ করে জিজ্ঞেস করল তাসনিম।

-হুম,না দিলে একসাথে থাকতে হতো।কপালের উপরে আসা চুলগুলো ঠিক করে নিয়ে বলল রিয়াদ।

-হুম,তাও ঠিক।আচ্ছা বলেন তারপর কি হলো।ভালো করে এটে পুটে বসে জিজ্ঞেস করল তাসনিম।

তারপর আর কি?,আস্তে আস্তে আমাদের রিলেশনশিপ শুরু হলো।দিনের বেশিরভাগ সময়ই আমার সাথে কাটাতো তাসনিম।আমার সাথে অফিস যেতো।সবাই জানতো আমরা ক্যাপেল।

দীর্ঘ তিন বছর আমাদের এভাবেই কেটে গেলো।তাসনিয়ার সাথে আমি পুরো জার্মানি ঘুরে বেড়িয়েছি।
একদিন অফিস থেকে ফিরে দেখি,বাবা-মা আঙেলের বাসায়। আমি হঠাৎই তাদের কে দেখে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না।আমার সাথে তাসনিয়ও ছিলো।বাবা-মা দুজনেই আমাদের দুজনকে একসাথে দেখে বলল,বাহ,দুজনকে বেশ মানাবে।

-বাবা মায়ের কথায় খানিকটা লজ্জাবোধ করে ভিতরে চলে গেলো তাসনিয়া।
তার কিছুদিন পর, অফিসের, নেইবারসহ,ওখানকার গণ্যমান্য লোকদের ডেকে নিয়ে আমাদের দুজনের বিয়ের ঘোষনা দিয়ে দিলো আঙেল।তারিখ ঠিক করা হলো তাসনিয়ার জন্মদিন।

-সেদিন সবার মতন আমিও খুশি ছিলাম।আস্তে আস্তে আমাদের বিয়ের সময় ঘনিয়ে এলো।একসময় বর বেশে সাজলাম।বিয়ে হবে কাজী সাহেবও রেডি ছিল।কাবীন কলমা করলেই হয়ে যাবে।তখনই হঠাৎ করে তাসনিয়া সেন্স লেস হয়ে মাটিতে পড়ে যায়।পুরো বাড়িতে হৈ হুল্লোড় লেগে যায়।আমি জলদি এম্বুলেন্স আনার ব্যবস্থা করি।কয়েক মিনিটের মধ্যে এম্বুলেন্স এসে উপস্থিত হয়।তারপর তাসনিয়াকে কোলে করে নিয়ে এম্বুলেন্সে উঠায়।

-ইমার্জেন্সিতে ঢুকানো হয় তাসনিয়াকে।আমরা সবাই বাইরে বসে ওয়েট করতে থাকি।তখন একজন ডক্টর বের হয়ে আমাদেরকে বলল,তাসনিয়ার নাকি মাথায় খুব বড় ধরনের একটা টিউমার। এটা নাকি প্রায় সাত থেকে আট বছর আগের।এটা নাকি আরো আগেই অপারেশন করার দরকার ছিলো।এখন এটাতে খগব রিস্ক আছে।

-তাসনিয়ার মা এটা শুনে মাটিতে বসে পড়লো।আর তাসনিয়ার বাবা ডক্টরকে বলছে যত টাকা লাগে দিবে।কিন্তু সে তার মেয়েকে সুস্থ দেখতে চাই।

মা,আন্টিকে সামলানোর চেষ্টা করছে।আর বাবা আঙেলকে।আমি তখন একটা ব্যপার বুঝতে পেরেছিলাম।কারণ,মাঝে মাঝেই দেখতাম,তাসনিয়া জোর গলায় আমাকে বলতো,ওই থামো তো আমার মাথা ব্যথা করছে।আর যখন মাথা ব্যথা হতো তখন চুল গুলো এলোমেলো করে একেবারে পাগলের মতন হয়ে যেতো।আমি অনেকবার জিজ্ঞেস ও করেছিলাম এমন করার কারণটা কি?
আমাকে কিচ্ছু বলেনি।

-আর এটা আমারই একটা মিসটেক ছিল যে,আমি ওকে ডক্টরের কাছে নিয়ে যায়নি।আসলে তখন তো আর বুঝে উঠতে পারিনি।নিজেকে খুবই দোষী মনে হলো।
সকলের সম্মতিক্রমে ডক্টর অপারেশানের কার্যক্রম শুরু করে দিলো।এতটাই রিস্ক ছিল যে সবাইকে আশা ভরসা বন্ধ করে দিতে বলে পরে অপারেশন থিয়েটারে ঢুকেছিলো ডক্টর।

চার ঘন্টা সময় নিয়েছিল অপারেশনে।এদিক দিয়ে সকলেই আল্লাহ আল্লাহ করতেছিল।
ডক্টর বেরিয়ে এলো থিয়েটার থেকে।সকলেই ডক্টরের মুখের দিকে তাকিয়ে ছিলাম।আঙেল এগিয়ে গিয়ে ডক্টরের হাত ধরে জিজ্ঞেস করল মেয়ের কথা।

-ডক্টর একটা হাসি দিয়ে বলল,অপারেশন তো করেছি।তবে বিপদমুক্ত কিন্তু নয়।ঘন্টাখানেক লাগবে জ্ঞান ফিরতে।সকলে বাইরেই ওয়েট করুন জ্ঞান ফেরা অবদি।

সকলে বাইরে বসে ওয়েট করতে লাগলাম।একসময় জ্ঞান ফিরে এলো তাসনিয়ার।

-আচ্ছা আমাকে একটু পানি খাওয়া।তাসনিমের দিকে তাকিয়ে বলল রিয়াদ।
পাশে থাকা মাম পটে পানি না থাকায় পানি আনতে চলে গেলো নিচে, তাসনিম।
রিয়াদের চোখ বেয়ে পানি পড়ে গেলো হঠাৎই। দুহাত দিয়ে পুরো মুখ চোখ ডলে নিলো কয়েকবার রিয়াদ।

-এই নেন পানি।মাম পট এগিয়ে দিয়ে বলল তাসনিম।
হাত বাড়িয়ে মাম পট ধরে পানি খেয়ে নিলো রিয়াদ।

-ধর,তুইও একটু খেয়ে নে।মাম পট এগিয়ে দিয়ে তাসনিমকে বলল রিয়াদ।
তাসনিম লক্ষী মেয়ের মতন পানি খেয়ে নিয়ে সামনে কন্টিনিউ করতে বলল ঘটনা।

-জ্ঞান ফেরার পর সবাই একেক করে ভিতরে গেলো।আমি বাইরেই থেকে গেলাম।একটু পর মা এসে বলল,তোকে তাসনিয়া ডাকছে।জ্ঞান ফেরার পর তোকেই খুজে চলছে।যা ভিতরে যা।
বিনাবাক্যে আস্তে করে ভিতরে ঢুকলাম।আমাকে দেখে তাসনিয়ার চোখ বেয়ে পানি পড়ে গেলো।আমি গিয়ে তাসিনিয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে জিজ্ঞেস করলাম কেমন লাগছে?
তাসনিয়া আমার হাতরা ধরে একটা চুমু খেয়ে নিলো হাতে।

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here