I live in your hope,Part_06,07

I_live_in_your_hope,Part_06,07
Adnan_Mahmud
Part_06
.
.
-রিয়াদ তাসনিমের চুলের মুঠি ধরাই তাসনিম খুব কষ্ট পাচ্ছিলো।এমনকি ব্যাথায় ককিয়ে উঠল।এরপরেও রিয়াদের ছাড়ার কোন নাম নেই।বরং আগের থেকে শক্ত করে ধরেছে।
তাসনিম নিজের হাত কামড়ে ধরেছে যাতে মুখ দিয়ে কোন শব্দ বের না হয়। অঝোরে চোখের পানি পড়ছে তাসনিমের।

-আমাকে বলিস খারাপ মতলবে তাকিয়ে থাকি।আমার মতলব খারাপ?চুলের মুঠি ধরে মাথা ঝাকাতে ঝাঁকাতে বলল রিয়াদ।

যেখানে তাসনিমের এরকম মায়াভরা চেহারা তার উপর চোখ লাল হয়ে পানি পড়ছে।এটা দেখে যে কারোর কঠিন রাগও পানি হতে সময় লাগবে না। সেখানে রিয়াদের রাগ বেড়েই চলছে।

তাসনিমকে কষিয়ে বাম হাত দিয়ে দুটো থাপ্পড় মারল রিয়াদ।এবার আর তাসনিম থাকতে পারছে না।বুঝার বয়স হওয়ার পর থেকে বাবা-মা কেউই তার গায়ে কোন আছড় কি ফুলের টোকা পর্যন্তও পড়তে দেয়নি।আর সেখানে এখন তার মার খেতে হচ্ছে তাও আবার স্বামীর হাতে।
যাকে ঘিরে রয়েছিল তার অনেক অনেক স্বপ্ন।
সবকিছু মিলিয়ে তাসনিমের চোখ যেন আর বাঁধ মানছে না।

আয় আজ তোকে শোনাবো কেন আমি এভাবে মেয়েদের দিকে তাকিয়ে থাকি।কেন তোর পেটের দিকে সেদিন তাকিয়ে ছিলাম।কেন তোর বোনের দিকে খাবার টেবিলে বসে তাকিয়ে ছিলাম। কেন আমি আজ পার্কে একটা মেয়ের দিকে তাকিয়ে ছিলাম।চুলের মুঠি এখনো ধরে আছে রিয়াদ।তবে তার মধ্যে এখন আগের মতো জোর নেই। হালকা করে ধরে রেখেছে।যেটা ব্যাথা পাওয়ার মতন নয়।

-আজ থেকে পাঁচ বছর আগে আমি,

ভাবী, ও ভাবী।তোমাদের খেতে আসতে বলেছে তোমার বাবা আমার আংকেল।
হঠাৎই দরজার বাইরে থেকে রিয়াএসে বলতে লাগল।

যা তুই, আমরা আসছি।রিয়াকে কথাটি বলে বিদায় করল রিয়াদ।

–চল আগে খেয়ে আসি।পরে তোকে সব গল্প বলব আজ।তোদের ছাঁদটা কিন্তু বেশ।সেখানে গিয়ে বলব।তাসনিমের চুলের মুঠি থেকে হাত সরিয়ে নিয়ে বলল রিয়াদ।

-আজকে কি রান্না করেছ মা?
মাকে জিজ্ঞেস করল তাসনিম।
গাল দুটো লাল হয়ে আছে।তাই মাথায় উড়না রেখেছে।যাতে গাল দেখা না যায়।

আজ পোলাও আর গরুর মাংস।
তাসনিমের দিকে তাকিয়ে বলল রোকেয়া বেগম।

ওহ,আচ্ছা খুব ভালো।তোমার জামাইয়ের এগুলো খুব পছন্দ।
মাকে বলল তাসনিম।

সবাই টপাটপ খেয়ে নিলো।রিয়াদও খেয়ে নিল আরামসে।দুপুরের মতো আর লজ্জা করলো না।কারণ,লজ্জা করলে যে নিজেরই লোকসান,সেটা সে পার্কে গিয়ে ঢের বুঝতে পেরেছে।

-খাওয়া শেষ করে রিয়াদকে ডাকলেন মাজেদ সাহেব।মনে মনে ভড়কে গেলো রিয়াদ।মেয়েকে মারার খবর পেয়ে গেল নাকি।

নাহ,তাসনিম ওরকম মেয়ে নয়।বলবে না কখনো কাউকে।মনে মনে ভাবল রিয়াদ।

মনে সাহস রেখে শশুরের সামনে গিয়ে সালাম দিয়ে বসল রিয়াদ।

আসলে বাবা কাল আমার সাথে তোমাকে বাজারে যেতে হবে।রিয়াদের দিকে তাকিয়ে বলল মাজেদ সাহেব।

রিয়াদ চাতক পাখির মতো তাকিয়ে আছে আর মনযোগ দিয়ে শুনছে শশুরের কথা।কিন্তু এতো মনযোগ দিয়েছে যে, শশুরের কথা বলা শেষে এখন যে তার উত্তর দেওয়ার পালা, সেটা সে ভুলে গেছে।কিছু না বলে শশুরের দিকে তাকিয়ে আছে রিয়াদ।দেখে মনে হচ্ছে বরফের ন্যায় জমে গেছে ওখানে।

কি বাবাজি,শুনছো?কাশি দিয়ে রিয়াদের দিকে তাকিয়ে বলল মাজেদ সাহেব।

রিয়াদ যেন বাস্তবে ফিরে এলো।
কেন যেতে হবে?,
মাজেদ সাহেবের দিকো তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল রিয়াদ।

তেমন কিছু না।একটা আংটির মাপ দিবো তোমার।
রিয়াদের দিকে তাকিয়ে বলল মাজেদ সাহেব।

-আসলে আমি স্বর্ণ ব্যবহার করিনা।আর ছেলেদের স্বর্ণ ব্যবহার করা শরীয়তে জায়েজ নেই। একজন হুজুর বলেছিল আমাকে।
শশুরের দিকে তাকিয়ে বলল রিয়াদ।

রিয়াদের মুখে এমন কথা শুনে খুবই খুশি হলো মাজেদ সাহেব।

আরে স্বর্ণ ব্যবহার করতে কে বলেছে তোমায়?রিয়াদের দিকে তাকিয়ে বলল মাজেদ সাহেব।

কেন,আংটি দিলে কি দিয়ে দিবেন?শশুরের দিকে তাকিয়ে বলল রিয়াদ।

ডায়মন্ড দিবো।ডায়মন্ডের আংটি দিবো।রিয়াদের দিকে তাকিয়ে বললেন মাজেদ সাহেব।

-দেখুন আপনার এই দেওয়াতে কিন্তু আমি খুশি না।আপনার মেয়েকে দিয়েছেন এটাই অনেক।এগুলো করার কোনো দরকার নেই। শশুরের দিকে তাকিয়ে বলল রিয়াদ।

রিয়াদের দিকে তাকিয়ে দূর থেকে দাড়িয়ে মুখ ভেংচি দিলো তাসনিম।

-ওগে শুনছো!আরেকটু ফোন দেও। দেখো ওরা কি করছে।বাড়িটা কেমন ফাঁকা ফাঁকা লাগছে।
স্বামীকে বলল রাহি বেগম।

জামাই শশুর কথা বলছিল তখনই রিয়াদের ফোন বেজে উঠল।

-হ্যাঁ বাবা,কথা বলছি।হুম সবাই খেয়েছি।তোমরা খেয়েছ তো?
ও কথা বলবে, আচ্ছা নাও।

নিন আপনার সাথে বাবা কথা বলবে।মাজেদ সাহেবের দিকে ফোন এগিয়ে দিয়ে বলল রিয়াদ।
-যত তাড়াতাড়ি করছি ততই দেরি হচ্ছে। মনে মনে বিড়বিড় করছে রিয়াদ।

কথা শেষ করে ফোন রেখে দিলো মাজেদ সাহেব।পরে রিয়াদের সাথে কথা বলা শেষ করে।যে যার মতো ঘুমেতে চলে গেলো।রিয়া আর তামান্না এক সাথে তামান্নার রুমে ঘুমোবে।তামিম তার রুমে।মাজেদ সাহেব আর রোকেয়া বেগম তাদের রুমে।রিয়াদ আর তাসনিম, তাসনিমের রুমে।

কিছু বলতে চেয়েছিলেন।বলুন তাহলে।
স্বামীর দিকে তাকিয়ে বলল তাসনিম।

–ছাঁদে গেলে ভালো লাগতো।ছাঁদে চল।তাসনিমকে বলল রিয়াদ।

দুজনে ছাদে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। তবে সমস্যা হলো একটা।ছাদে যেতে হলে মাজেদ সাহেবের রুম পেরিয়ে যেতে হবে।আর রুমের ওখানে ছাঁদের গেট।ওটা খুলতে গেলে খুব জোরে আওয়াজ হয়।ওটা খুলতে গেলে নির্ঘাত মাজেদ সাহেব আর রোকেয়া বেগম জেগে যাবে।

-দুজনে এটা নিয়ে খুব চিন্তায় পড়ে গেলো।

আচ্ছা আমি আগে গিয়ে চেষ্টা করি। তুই থাক।গেট খুলে তোকে ডাক দিবো। তাসনিমকে বলল রিয়াদ।

রিয়াদ গেটের হ্যাঁন্ডেল ধরে টান দিতেই খুব জোরে শব্দ হলো।আর সাথে সাথেই মাজেদ সাহেব রুম থেকে বেরিয়ে এলেন।

আরে বাবা তুমি?কোথায় যাবে?ছাঁদে নাকি?
রিয়াদকে দেখে হেসে জিজ্ঞেস করলেন মাজেদ সাহেব।

আসলে একটু ছাঁদে যাওয়ার ছিলো।তাই আরকি।
শুশুরের দিকে তাকিয়ে বলল রিয়াদ।

-ঠিক আছে যাও। তবে বেশিক্ষণ থেকো না ছাঁদে।রাতে ছাঁদে যাওয়া আমার ভালো লাগে না।আচ্ছা তুমি তসনিমকেও সাথে করে নিয়ে যাও।
একটু বিরক্তি ভাব নিয়ে বললেন মাজেদ সাহেব।

-ঠিক আছে, ওকে সাথে করেই নিয়ে যাবো।
শশুরের দিকে তাকিয়ে বলল রিয়াদ।

-রিয়াদ এপর্যন্ত একবারও শশুরকে বাবা আর শাশুড়ীকে মা বলে ডাক দেয়নি।তাসনিম এই বিষয়টা লক্ষ্য করেছে।

চল,তোর বাবাকে বলেছি।
ঘরে গিয়ে তাসনিমকে বলল রিয়াদ।

আচ্ছা আমি আপনার বাব-মা কে বাবা-মা বলে ডাকি।আর আপনি এখন পর্যন্ত একবারও আমার বাবাকে বাবা আর মাকে মা বলে ডাক দেননি।
কপাল ভাঁজ করে রিয়াদের দিকে তাকিয়ে বলল তাসনিম।

বলিনি বেশ করেছি।আর তোকে কি আমার বাবাকে বাবা আর মাকে মা বলতো বলেছি?
সোজাসাপটা জবাব দিলো রিয়াদ।

এতো কথা বলার সময় নেই চল ছাঁদে যায়।
তাসনিমকে বলে সোজা ছাঁদের দিকে হাঁটতে শুরু করল রিয়াদ।

-আচ্ছা রিয়া তুমি কি রিলেশন করো?
পাশে শুয়ে জিজ্ঞেস করল তামান্না।

-নাহ তো,আমার মনে হয়, আমার রিলেশন করার বয়সই হয়নি।কেন তুমি করো নাকি?
তামান্নার দিকে ফিরে শুতে শুতে বলল রিয়া।

-নাহ,আমিও করিনা।তবে একটা ছেলে আমাকে ভীষণ পছন্দ করে।
হাসতে হাসতে বলল তামান্না।

-ওহ,ওরকম পছন্দ আমাকেও অনেকে করে।তাইতো ভাইয়া বোরকা ছাড়া কোথাও বের হতে নিষেধ করেছে।

ছাঁদে একটা সুন্দর টুল আছে।ওই টুলের ডান পাশের জায়গাটাতে একটু ফোম সিস্টেম করা নরম।ওখানে বসলে ওই ডান পাশেই বসে তাসনিম।সিস্টেম টা তাসনিমই করেছে।

-প্রথমবার ছাঁদে এসে রিয়াদ ওই জায়গাতে বসেছিল।তাই ছাঁদে গিয়ে একটু জোরে হাঁটছে ওই জায়গাতে বসার জন্য। তাসনিম বিষয়টা বুঝতে পেরে তাসনিমও জোরে হাঁটতে শুরু করল।তাসনিমের জোরে হাঁটা দেখে রিয়াদ দৌড় দিল।সাথে সাথে তাসনিম ও দৌড় দিলো।

রিয়াদ ছেলে মানুষ বিধায় একটু জোরে দৌড়ে ওই জায়গাটা দখল করে নিলো।আর তাসনিম গিয়ে রিয়াদের কোল দখল করে নিলো।

সোজা গিয়ে রিয়াদের কোলে বসে গেলো তাসনিম।

চলবে…

l_live_in_your_hope
Adnan_Mahmud
Part_07
.
-তাসনিম দৌড়ে গিয়ে রিয়াদের কোলে বসে গেলো।তাসনিমের এরকম করা দেখে রিয়াদ খুবই অবাক হয়ে গেলো।তবে রাগলো না।

তুই আমার কোলে বসলি কেনো?তাসনিমের মুখের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল রিয়াদ।

-আপনি আমার জায়গায় বসেছেন কেনো?আপনি আমার জায়গায় বসেছেন আর আমি আপনার কোলে বসেছি।ব্যাস শোধবোধ। নখ কামড়াতে কামড়াতে বলল তাসনিম।

তুই নাম আমার কোল থেকে।নাহলে ফেলে দিলাম।তাসনিমের দুই বাহু ধরে হালকা ঝাকি দিয়ে বলল রিয়াদ।

চল,কাউকেই বসতে হবে না এখানে।চল ওই কর্ণারে গিয়ে দাড়িয়ো থাকি।দাড়িয়ে বলব সব।
কয়েকবার বলার পরও রিয়াদ যখন দেখলো তাসনিম কোল থেকে নামছে না,তখন কথাটি বলল রিয়াদ।

যেই কথা সেই কাজ।তাসনিম এবার কোল থেকে উঠে দাড়ালো। রিয়াদ টুল থেকে উঠে সোজা হাঁটতে শুরু করল।
তাসনিমও অবুঝ বালিকার মতন রিয়াদের পিছনে হাঁটতো লাগলো।

-ওই আমার ঘুম পাইছে।কাল তোমার সাথে গল্প করব।তামান্নার দিকে তাকিয়ে বলল রিয়া।
ধুরু কি যে বলো,এতো জলদি কারোর ঘুম পাই?
চোখ বাকিয়ে রিয়ার দিকে তাকিয়ে বলল, তামান্না।

আসলে বাড়িতে সাড়ে দশটার ভিতরেই ঘুমিয়ে যায়।রাত জাগলে ভাইয়া খুবই রাগ করে।তাই অভ্যাস না থাকায় ঘুম পেয়েছে।
তামান্নার দিকে তাকিয়ে খাতা দিয়ে নিজের শরীর মুড়িয়ে নিয়ে হাম ছাড়তে ছাড়তে বলল,রিয়া।

-ওরা তো ছাঁদে গেলো।আসছে কি না কে জানে?রোকেয়া বেগমের দিকে তাকিয়ে বলল মাজেদ সাহেব।
আরে নতুন স্বামী-স্ত্রী বাদ দেন।ওরা থাকুক।যখন খুশি আসবে নেমে।
মুখ ঝামটি মেরে মাজেদ সাহেবকে বলল রোকেয়া বেগম।

-ধুর ভালোই তো লাগছিলো।তাসনিয়া কখনো আমার কোলে বসেনি।কেন যে উঠিয়ে দিলাম।মনে মনে আফসোস আর বিড়বিড় করছে রিয়াদ।

-ওই বলুন আপনার ঘটানা।রিয়াদের কাধে আলতো স্পর্শ করে বলল তাসনিম।

-আরো পাঁচ বছর আগের কথা।তখন আমাদের ব্যবসা ছিল জার্মানিতে।আমার বাবা আর আমার বাবার ছোট বেলার বন্ধু দুজনেরই শেয়ার ছিল ব্যবসায়। আমাকে বাবা ব্যবসা দেখা শোনার জন্য পঠিয়েছিল।
বাড়ি থেকে একদিন সকালের ফ্লাইটের উদ্দেশ্য বেরিয়ে গেলাম।মনে মনে খুব খুশি ছিলাম যে,জার্মানি যাচ্ছি।
ভালোমতো পৌঁছেও গেলাম।বাবার বন্ধু রাজন আংকেল আন্টি রেহেনা বেগম আমাকে রিসিভ করতে এসেছিল এয়ারপোর্টে। কুশল বিনিময় শেষে গাড়িতে গিয়ে বসতেই অবাক হয়ে গেছিলাম।দেখলাম চোখ ধাধানো একটি মেয়ে বসে আছে গাড়িতে।
রাজন আংকেল তার মেয়ে তাসনিয়ার সাথে পরিচয় করিয়ে দিলো।
মেয়টি আমাকে দেখলোও না।মনে মনে ভেবিছিলাম ভাব বেশি।কিন্তু পরে বুঝতে পারলাম মোটেও না।

আমি আংকেলর সাথে সামনের সিটে বসেছিলাম। তাসনিয়া আর রেহেনা আন্টি পিছনে বসেছিল।
খানিকটা দূর যেতেই তাসনিয়া নামক মেয়েটি আদুরে গলায় তার বাবাকে বলল,গাড়ি থামাতে।এরপর আমাকে পিছনে ওর সাথে গিয়ে বসতে বলল।
বাবা- মায়ের খুব আদরের মেয়ে।তাই মেয়ের সব ইচ্ছে পূরণ করার চেষ্টা করে।

-দেখতো কয়টা বাজে?খানিকটা কেশে চোখ ডলতে ডলতে তাসনিমকে জিজ্ঞেস করল রিয়াদ।
-দেড়টা বাজে।কেন আপনার কি ঘুম পেয়েছে?রিয়াদের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল তাসনিম।

-আসলে অনেক বড় ঘটনা।রাত শেষ হয়ে যাবে বলা শেষ হবে না।পকেট থেকে একটা সিগারেট ধরিয়ে বলল রিয়াদ।

-চলুন ঘুমিয়ে যায়।রিয়াদকে বলল তাসনিম।
তুই যা, আমি আসতেছি।আর উপরের ঘুমাস কিন্তু। সিগারেটের ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে বলল রিয়াদ।

তাসনিম লক্ষী মেয়ের মতন কথা না বাড়িয়ে নিচে যেতে লাগল।
যাওয়ার পথে থেমে গেলো তাসনিম।ঘুরে পিছনে এসে গেট লাগিয়ে যেতে বলেছে ছাঁদের।

সকাল সকাল ঘুম ভাংলো তাসনিমের।উঠে দেখে রিয়াদ রুমে নেই। বেলকনি, ওয়াশরুম সব খুজে কোথাও পেলো না রিয়াদকে।তখনি মনে পড়লো ছাদের কথা।দৌড়ে ছাঁদে গেলো তাসনিম।দেখলো ওই টুলের উপর কাছুমাছু হয়ে শুয়ে আছে রিয়াদ।তাসনিম গিয়ে রিয়াদের গায়ে হাত দিতেই চমকে উঠলো। একি রিয়াদের গায়ে তো ভীষণ জ্বর বয়ছে।

এখনো পুরো বাড়ির কেউই হয়তো ঘুম থেকে উঠেনি।সাড়ে চারটা বাজে এখন।

আলতো স্পর্শ করে ফিসফিসিয়ে ডাক দিয়ে ডেকে তুলল তাসনিম রিয়াদকে।রিয়াদ চোখ খুলে তাসনিমকে দেখতে পেলো।শরীর বড্ড দূর্বল হওয়ায় নিজে একবার শুয়া থেকে উঠতে গিয়েও উঠতে পারলো না।

-তাসনিম রিয়াদকে টেনে তুল নিলো।নিজের কাঁধে রিয়াদের হাত উঠিয়ে দিয়ে রিয়াদকে নিচে এনে বিছানায় শুইয়ে দিলো।বালতি ভরে পানি এনে মাথায় পানি দিলো।কপালে জলপট্টি লাগিয়ে হাত পায়ে সরিষার তেল ডলতে লাগলো।

-তাসনিম নিজের কাজ মন দিয়ে করছে।আর রিয়াদ তানিমকে মন ভরে দেখছে।
কিন্তু বরাবরের মতনই তাসনিয়ার কথা মনে পড়ছে।জার্মানিতে থাকাকালীন জ্বর হলে তাসনিয়াও ঠিক এভাবে করতো।
রিয়াদ বারবার চেষ্টা করছে অতীত ভুলতে।এখন তার সামনে তাসনিয়া নয়,তাসনিম বসে আছে।
কিন্তু অতীত যেন পিছুই ছাড়ছে না।

খানিক বাদে ফজরের নামাজ পড়ে নিলো তাসনিম।
আপনার এখন কেমন লাগছে?স্বামীর দিকে তাকিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে জিজ্ঞেস করল তাসনিম।

-রিয়াদ মাথা নাড়িয়ে ভালো ইশারা করলো।
আপনি এখন ঘুমোন।আমি বাইরের কাজ সারি।
রিয়াদের গায়ে খাতা টেনে দিয়ে বলল তাসনিম।

আর হ্যাঁ, আপনি এই বিস্কুটটা খান।পাশের টেবিল হতে বিস্কুটের একটা প্যাকেট এনে ছিড়ে রিয়াদের মুখে গুজে দিতে গেলো তাসনিম।

আরে এগুলো দিস না আমাকে।এখন ভাল্লাগছে না।
তাসনিমের হাত মুখ থেকে ঠেলতে ঠেলতে বলল রিয়াদ।

-বলছি না খেতে হবে।খাওয়ার পর একটা নাপা খাওয়াবো।পরে ঘুমোবেন।ঘুম থেকে উঠলেই দেখবেন জ্বর একেবারে ভালো হয়ে গেছে।

তাসনিম রিয়াদকে বিস্কুট খায়িয়ে দিলো পরে একটা ওষুধ এনে খায়িয়ে ঘুমাতে বলল।

-সকালের নাস্তার সময় হয়ে এলে একেক করে সবাই এসে বসল খাবার টেবিলে।
কিরে তাসনিম জামাই কে ডাক,তাসনিমের দিকে তাকিয়ে বলল রোকেয়া বেগম।

-হুম,ডাকো জলদি। খেয়ে পরে বাজারে যেতে হবে।মেয়ের দিকে তাকিয়ে বলল,মাজেদ সাহেব।

না,বাবা। আজ না পরে। ওর একটু জ্বর হয়েছে।
জ্বরের কথা শুনে সবাই অবাক হয়ে গেছে।হা করে চাতক পাখির মতন তাকিয়ে আছে সবাই তাসনিমের দিকে।

-কই বললি নাতো?
ভাবী বললেন নাতো?
বুবু বললি না তো?
সবাই একসাথে না বলার কারণ জিজ্ঞেস করছে।

এখন ওষুধ খেয়ে ঘুমাচ্ছে। তাই ডাক দেওয়ার কোনো দরকার নেই। পরে যখন ঘুম ভাংবে তখন খাবে।

শেষমেশ যে যার মতন খেয়ে উঠে গেলো টেবিল থেকে।তাসনিম সব খাবার বেড়ে নিয়ে রুমে চলে এলো।

সকাল নয়টা বেজে পনেরো মিনিট।
ক্ষুধার তাড়নায় ঘুম ভেঙে গেলো রিয়াদের।চোখ খুলেই দেখলো খাবার নিয়ে বসে আছে তাসনিম।
তাসনিমকে দেখে একটা দারুণ হাসি উপহার দিলো রিয়াদ।তাসনিম গিয়ে রিয়াদের কপাল,গলা ও বুকে হাত দিয়ে দেখলো জ্বর আছে কি না?
নাহ, জ্বর পড়ে গেছে শরীর থেকে।

-এখন কেমন লাগছে?রিয়াদকে জিজ্ঞেস করল তাসনিম।
আগে খেতে দাও পরে বলছি। তাসনিমকে বলল রিয়াদ।
কি বললেন আবার বলেন না?রিয়াদকে জিজ্ঞেস করল তাসনিম।

খেতে দে। তারপর বলছি।তাসনিমকে বলল রিয়াদ।
তাসনিমের মনটা খারাপ হয়ে গেলো।প্রথমবার তুমি করে বলেছিলো।খেতে দাও বলেছিলো।তাই আবার জিজ্ঞেস করল,বাট এবার তুই করেই বলল।

তাসনিম খাবার বেড়ে দিলো রিয়াদকে।মজা করে খেয়ে নিয়ে বলল,আমি পুরোপুরি সুস্থ হয়ে গেছি।
তুই কি ডাক্তার নাকি?

বাবা বলেছিল বাজারে যাবার কথা।কথা অন্য দিকে ঘুরিয়ে নিয়ে রিয়াদকে বলল,তাসনিম।

দেখো,আমি কোন আংটি চাই না।তুই বলে দিস।আমি তো কাল বললামই। আর বাবা মা বাড়িতে একলা আছে।জলদি বাসায় যাওয়া উচিত।আর বাকি ঘটনা আস্তে আস্তে বলে দিবো।আর হ্যাঁ আমার মতলব খারাপ না আবারো বলছি।
আর আমি আজই চলে যাবো।তুই আর রিয়া দরকার লাগলে আরো একদিন থেকে আয়।

-ও কাকি মা ও কাকি মা!শুনলাম তাসনিম আর ওর হাসবেন্ড নাকি এসেছে এখানে?ওদেরকে একটু ডাকেন তো।
নিচে বেস্টফ্রেন্ড অন্তরার কথা শুনে দৌড়ে নিচে চলে এলো তাসনিম।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here