# EX গার্লফ্রেন্ড যখন ইংলিশ ম্যাম 💖,পর্বঃ ২৪
# লেখকঃ Sahid Hasan Sahi
রাতে মিম, নেহা আর আমি এক সঙ্গে ডিনার করেতেছি। মিম আমার কোলে বসে আমার হাতে তুলে খাচ্ছে। ডিনার করার সময় নেহা যা বললো তা শুনে তো আমার রাগে মাথায় রক্ত ওঠে গেলো।
নেহাঃ ভাইয়া একটা কথা বলার ছিলো।
আমিঃ হুমম বল।
নেহাঃ আসলে ভাইয়া সামিয়া ম্যাম যেই বাসায় থাকতো সেই বাসায় সমস্যা হয়েছে। এখন থাকার জন্য অন্য একটা বাসা খুঁজতেছে।
আমিঃ তো,,,?
নেহাঃ আমি বলতেছি যে তাকে আমাদের বাসায় রেখে দেই। তাতে তার কাছে আমার লেখাপড়াও ভালো হবে। আর মিম তার মামনি কে কাছে পাবে।
আমি নেহাকে ঠান্ডা মাথায় শান্ত ভাবে বললামঃ দেখ নেহা তুই কি চাস আমি তোদের কে ছেড়ে চলে যাই।
নেহাঃ না।
আমিঃ তাহলে এসব কথা আর বলিস না।
নেহাঃ প্লিজ ভাইয়া তুমি শুধু আমার এই কথাটা রাখো ।
আমিঃ আমি এই বিষয়ে আর কোনো কথা বলতে চাচ্ছি না।
এই কথা বলেই খাবার টেবিল থেকে উঠে মিমকে নিয়ে রুমে আসলাম। মিমকে ঘুম পাড়িয়ে রেখে ছাদে গেলাম। ছাদে যায়ে আকাশের তারাদের দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলতেছি, কেন সামিয়া কেন? কেন তুমি আমার সেই পুরোনো কষ্ট গুলো মনে করিয়ে দিচ্ছো। আমিতো তোমাকে ছাড়া ভালোই ছিলাম। কোথা থেকে তুমি এসে আবার তোমার সেই মায়ায় জড়িয়ে ফেললে। যেই মায়ার কাছে তোমার প্রতি আমার ঘৃণা টা হার মেনে নিয়েছিলো। আমিতো সব কিছু ভুলে তোমাকে বুকে জড়িয়ে নিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তুমি আমাকে আবার সেই একই ভাবে সন্দেহ করে চরিত্রহীন উপাধি দিলে। বেশ আমি চরিত্রহীনই হলাম কিন্তু আমার কাছে আসার জন্য আমার বাসায় থাকার জন্য এই রকম করতেছো কেন? হয়তোবা তুমি মনে করেছো আমি কিছুই বুঝতে পারিনি, হা হা হা,,,। দেখি তুমি কত দূর দৌড়াতে পারো।
_-_-_-_-_-_-_-_
নেহা মন খারাপ করে ডাইনিং টেবিল থেকে উঠে রুমে আসতেই ওর ফোন টা বেজে উঠলো। বেড থেকে ফোনটা হাতে নিয়ে দেখে সামিয়া ফোন দিয়েছে। নেহা রিসিভ করলো,,,,
নেহাঃ আসসালামুয়ালাইকুম। ভাবি কেমন আছো?
সামিয়াঃ ওয়ালাইকুমুস সালাম। আলহামদুলিল্লাহ। নেহা তোমার ভাইয়া কি বললো।(উত্তেজিত হয়ে)
নেহাঃ আসলে ভাবি ভাইয়া তো রাজি হচ্ছে না।
সামিয়াঃ ওহহ। (মন খারাপ করে)
নেহাঃ মন খারাপ করো না। সব ঠিক হয়ে যাবে।
সামিয়াঃ কিছুই ঠিক হবে না নেহা কিছুই ঠিক হবেনা। আমি অনেক বড় ভুল করে ফেলেছি। আমি মনে হয় আমার ভালোবাসা কে হারিয়ে ফেললাম।(কান্না করতে করতে)
নেহাঃ প্লিজ ভাবি তুমি ভেঙ্গে পড়ো না। আমি চেষ্টা করতেছি।
সামিয়াঃ প্লিজ নেহা তুমি কিছু করো।
নেহাঃ ঠিক আছে। তুমি কোনো চিন্তা করো না।
সামিয়াঃ আচ্ছা। পড়ে কথা বলবো।(ভাঙ্গা ভাঙ্গা কন্ঠে)
নেহাঃ ঠিক আছে। ভালো থেকো।
নেহার সাথে কথা বলে সামিয়া বেডে বসে থেকে চিৎকার দিয়ে কান্না করতে লাগলো। সামিয়ার মনে হচ্ছে সে সাহিদ কে হারাতে যাচ্ছে। বড্ড বেশিই ভালোবাসে যে সে সাহিদ কে। কিন্তু কিভাবে যে কি হয়ে গেল। হয়তো বেশি ভালোবাসার জন্য সন্দেহ টাও বেশি। আর একটা সম্পর্ক ভাঙতে সন্দেহের অবদানও সবচেয়ে বেশি।
নেহা ফোন রেখে ভাবতে লাগলো কি ভাবে সামিয়া কে তার বাসায় নিয়ে আসা যায়। আর এই জন্য তার ভাইকে রাজি করাতে হবে। কিন্তু কিভাবে? একটু পরে মনে পড়লো, তার ভাইতো তার কান্না আর কষ্ট সহ্য করতে পারে না। এসব ভাবতেই ঘুমিয়ে গেল।
_-_-_-_-_-_-_-_-_-_-_-
অনেক রাত পর্যন্ত ছাদে থেকে তারাদের খেলা দেখে রুমে এসে শুয়ে পড়লাম। ফজরের আজানে ঘুম ভাঙলো। ঘুম থেকে উঠে অযু করে নামাজ পড়লাম। নামাজ পড়ে একটু স্টাডি করলাম।
আটটার সময় আমি আর আমার মেয়ে নিচে এসে ডাইনিং টেবিলে বসে আছি। নেহা আসলে একসাথে ব্রেকফাস্ট করে কলেজে যাবো।
আমার মেয়ের সাথে গল্প করতেছি মানে ট্যুরে যাইয়ে কী দেখলো, ওর মামনি কি খাওয়ালো, কি বললো এসব আরকি। গল্প করতে করতে বিশ মিনিট পার হয়ে যাওয়ার পরেও নেহা আসতেছে না। আমি আমার মেয়েকে বললামঃ আম্মু তোমার আন্নি কে ডেকে নিয়ে এসো তো।
মিমঃ আততা বাবাই।
আমার মেয়ে নেহাকে ডাকতে গেলো। আমি ফোন বের করে ফেসবুকে ঢুকলাম। একটু পরে আমার মেয়ে একাই নেহার রুম থেকে আমার কাছে আসলো।
আমি জিজ্ঞাসা করলামঃ আম্মু তোমার আন্নি কোথায়?
মিমঃ বাবাই আন্নি রাগ কলেথে! থাবে না বললো!(রাগ করেছে, খাবে না বললো)
আমিঃ রাগ করেছে মানে।(অবাক হয়ে)
চলতো আম্মু কী হয়েছে দেখি।
মিমঃ তলো বাবাই।
আমার মেয়েকে কোলে নিয়ে নেহার রুমে গেলাম। রুমে এসে দেখি নেহা বালিশে মুখ গুঁজে শুয়ে থেকে কান্না করতেছে।
আমি নেহার পাশে বসে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললামঃ কি হয়েছে আপু তোর, কান্না করতেছিস কেন?( উত্তেজিত হয়ে)
নেহা কোনো কথা না বলে বালিশে মুখ গুঁজে কান্না করেই যাচ্ছে। এই বার আমি আর স্থির থাকতে পারলাম না। আমি আমার হাত দিয়ে ওর মাথাটা আমার কোলে নিয়ে বললামঃ কি হয়েছে নেহা আমাকে বলবি তো।
না, নেহা কিছুই বলতেছে না। চোখ বন্ধ করে শুধু পানি ফেলতেছে।
আমি বললামঃ দেখ বোন, তুই যদি আমার সাথে এমন করিস তাহলে আমি কাকে নিয়ে বাঁচবো বল্। তোরা ছাড়া আমার কে আছে।
নেহাঃ আমি কারো বোন নই। আমার জন্য কাউকে কষ্ট পেতে হবেনা। কেউ আমার কথা শোনে না, আমি কারো কেউ নই।
ওহহহ এই ব্যাপার। এতোক্ষণে বুঝলাম। মুচকি হেসে নেহার কপালে একটা চুমু দিয়ে বললামঃ বল তুই কি চাস ?
নেহাঃ ম্যাম কে আমাদের বাসায় থাকতে দিতে হবে।
আমিঃ ঠিক আছে যা।
নেহাঃ সত্যি,,।
আমিঃ হুমম। এখন ফ্রেশ হয়ে নিচে আয়। একসাথে নাস্তা কলেজে যাবো।
নেহাঃ ঠিক আছে।
আমি নেহার রুম থেকে বের হয়ে এসে মনে মনে হাসতেছি আর বলতেছি, সামিয়া তুমি আর কত কি করবো। আমার সহজ সরল বোনের মনে তুমি অভিমান ঢুকিয়ে দিলে। নিজের স্বার্থ হাসিলের জন্য। নিজের স্বার্থ হাসিলের জন্য আমাদের ভাই বোঐ মাঝে অশান্তি সৃষ্টি করাতে চেয়েছিলে। হা হা হা।
তোমাকে কখনই আমার বাসায় নিয়ে আসতাম না। কিন্তু আমার বোনের জন্য তোমাকে আমার বাসায় থাকতে দিলাম। নইলে আমার মা হারা বোনটা কষ্ট পাবে। আর সে কষ্ট পাইলে তার মাকে দেওয়া কথাটা আমি রাখতে পারবোনা।
তবে সামিয়া তুমি যখন আমার বাসায় আসতে চাইতেছো, থাকতে চাইতেছো, তাহলে বেশ তুমিও প্রস্তুত থেকো আমার অমানবিক অত্যাচার সহ্য করার জন্য।
নেহা নিচে আসলো তিন জন একসাথে নাস্তা করে কলেজের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। কলেজে পৌঁছে ওদের নামিয়ে দিয়ে বাইকটা পার্ক করে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে লাগলাম।
একটু পরে ক্লাসে যায়ে ক্লাসে গেলাম। প্রথম ক্লাস শেষ হতেই সামিয়া এসে ক্লাসে ঢুকলো। মনে হয় ক্লাস শেষ হওয়ার অপেক্ষায় ছিলো।
সামিয়া ক্লাস করাতে শুরু করলো। আমার দিকে সে একভাবেই তাকিয়ে আছে। যা আমার অস্বস্তি বোধ করতেছে।
অস্বস্তির মাধ্যমে কোনো রকম ক্লাস টা শেষ করে বাইরে চলে আসলাম। আজকে আর ক্লাস করবো না। নেহার কাছে মিমকে নিতে গেলাম। কিন্তু মিম নেহার কাছে নেই। নেহা বললো মিম নাকি সামিয়ার কাছে আছে।
কি আর করার অনিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও গেলাম সামিয়ার রুমে। সামিয়ার অফিস রুমের দরজাটা হালকা ফাঁকা ছিল। দরজার ফাঁকা স্থান দিয়ে দেখি সামিয়া মিমকে তার টেবিলের (ডেক্স ) উপর বসে রেখেছে আর সে তার সামনে চেয়ারে বসে আছে।
কী যেন বলতেছে আর মিম খিলখিল করে হাসতেছে।
আমি দরজা নক করে বললামঃ আসতে পারি।
সামিয়া মাথা নিচু করে অনুমতি দিলো।আমি মিমের কাছে যায়ে বললামঃ আম্মু বাসায় যাবে এখন?
মিমঃ হ্যাঁ বাবাই দাবো।
আমিঃ চলো আম্মু।
মিমঃ বাই মামনি।(আমার কোলে উঠতে উঠতে)
সামিয়াঃ বাই মামনি।
মিমকে নিয়ে দরজার কাছে আসতেই সামিয়া বললোঃ সাহিদ তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে প্লিজ শোন।
আমি তার কথা না শুনে দরজা খুলতে যাব তখন সামিয়া এসে আমার হাত ধরে বললোঃ প্লিজ সাহিদ,,,,
আমি আর বলতে না দিয়ে ঠাসসসস ঠাসসস করে দিয়ে বললামঃ কোন সাহসে আমার হাত ধরেছিস?
আমার থাপ্পড় খেয়ে সামিয়া সেখানে বসে থেকে কান্না করতে লাগলো। আমি সেদিকে খেয়াল না করে মিমকে নিয়ে ওর রুম থেকে বেরিয়ে আসলাম।
বাহিরে আসতেই মিম বললোঃ বাবাই মামনি তান্না তলতেথে তেন?
আমিঃ তোমার মামনি চকলেট খাবে তাই।
মিমঃ তাহলে একতা তিনে এনে দেও।
নাহহহ,,,, এই মেয়েকে কিছু বলে শান্তি নেই। শান্তনা মূলক বাক্য প্রদান করে বললামঃ তোমার মামনির কাছেই আছে অনেক চকলেট আছে। সেগুলো একাই খাবে তাই কান্না করতেছে। এই জন্য তোমাকে ঐখানে থেকে নিয়ে আসলাম। বুঝেছো?
মিমঃ হুমম বাবাই।
এরপরে মিমকে নিয়ে নেহার কাছে যায়ে বললামঃ নেহা তুই এখন বাসায় যাবি কী?
নেহাঃ কেন?
আমিঃ আমি এখন বাসায় যাবো । তুই যাবি নাকি?
নেহাঃ আমি পড়ে ম্যাম কে নিয়ে একবারে যাবো।
আমিঃ ম্যাম মানে?
নেহাঃ ম্যাম মানে মিমের মামনি কে নিয়ে যাবো।
আমিঃ ওকে আবার নিয়ে যাওয়ার কি আছে 😡😡😡।
নেহাঃ না মানে ভাইয়া তুমি যাও আমি একটু পরে ম্যামের সাথে আসতেছি।
আমিঃ ঠিক আছে ভালো ভাবে আসিস,,(গম্ভীর ভাবে)
নেহাঃ আচ্ছা ভাইয়া।
আমি আর কথা না বাড়িয়ে মিমকে নিয়ে পার্কিং লটের দিকে যাতেই মিমির সাথে দেখা।
এর পরে ওর সাথে কথা বলার জন্য ওকে নিয়ে একটা গাছের নিচে বসলাম।
মিমি আমাকে বললঃ সরি,, সাহিদ আমার জন্য সামিয়া ম্যাম তোমার সাথে সেই দিন ঐ বিভেব করলো।
আমিঃ আরে না এসব বাদ দাও। ট্যুরে কেমন সময় কাটলো তাই বলো।
মিমিঃ হুমম ভালোই কেটেছে। কিন্তু তোমার জন্য আমার কিছু টা খারাপ লেগেছে।
আমিঃ কেন আমার জন্য খারাপ লাগার কী আছে?
মিমের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে মিমি বললামঃ আমার জন্য সেদিন তুমি সেখান থেকে চলে আসলে। আবার আমার জন্য ম্যামের সাথে তোমার সম্পর্ক টা নষ্ট হয়ে গেল।
আমি মুচকি হেসে বললামঃ আরে না যেটা ভাগ্যে আছে সেটা হবেই। আর সেই দিন সেখান থেকে আসার কারণ হলো, পরের দিন অফিসে একটা মিটিং ছিল।
কথা বলতে বলতে হঠাৎ নজর পড়লো ক্যান্টিনে। যেখানে সামিয়া, নেহা আর নেহার কিছু ফ্রেন্ড ছিল। ওরা সবাই খাচ্ছে কিন্তু সামিয়া আমার দিকে বিষন্ন মনে তাকিয়ে আছে। মুখ টা কালো হয়ে আছে।আর মনে হচ্ছে চোখ দিয়ে যেকোন সময় ঝরনা প্রবাহিত।
আমরা মানে মিমি আর আমি ক্যান্টিন থেকে বেশ দূরে থাকলেও সামিয়ার চেহারা স্পষ্ট ভাবে দেখা যাচ্ছে।
আমি সামিয়া কে কষ্ট দেওয়ার জন্য মিমির সাথে আরো বেশি করে হেসে হেসে কথা বলতে লাগলাম। মিমি বিষয় টা বুঝতে পারে বললঃ আমি জানি সাহিদ তুমি ম্যামকে এখনো ভালোবাসো। কিন্তু বলতেছো না, কারণ আরো কষ্ট দিতে চাও। তবে এমন বেশি করো না যাতে আবার,,,
শেষ হতে না দিয়েই বললামঃ ওও কিছু না। এটা সামান্য কিছু। আচ্ছা ভালো থেকো। বাসায় যাবো।
মিমিঃ আচ্ছা যাও।
এরপরে আমি এবং আমার মেয়ে বাইক নিয়ে বাসায় আসলাম। বাসায় এসে আমার মেয়েকে গোসল করে দিয়ে আমিও গোসল করে নামাজ পড়ে লাঞ্চ করে বাবা আর মেয়ে একসাথে ঘুমিয়ে পড়লাম।
বিকেলে নেহার ডাকে ঘুম ভাঙলো।
নেহাঃ ভাইয়া ও ভাইয়া উঠো।
আমিঃ কি হয়েছে বল?(ঘুমের ঘোরে)
নেহাঃ ভাইয়া নিচে থেকে সামিয়া ম্যামের লাগেজ আর ব্যাগ টা নিয়ে এসো।
আমিঃ কিহহহহ,,,, বলে লাফ দিয়ে উঠে দেখি সামিয়া দরজার পাশে দাঁড়িয়ে মিটমিট করে হাসতেছে।
মেজাজ টা বিগড়ে গেলো। আমি রাগে কটমট করে বললামঃ আমাকে কি লোক মানুষ মনে হয়। আর আমি এখানে থাকতে দিয়েছি বলে আমাকে এসব করতে হবে আমি পারবো না। প্রয়োজনে এখান থেকে চলে যেতে পারে। আমি এসব করতে পারবো না।😠😠😡
সাহিদের কথা শুনে সামিয়ার হাসি মুখটা নিমিষেই কালো হয়ে গেল।
নেহাঃ প্লিজ ভাইয়া যাও একটু।
আমিঃ হোররর,, কোথা থেকে যেন এসব ঝামেলা আসে। আচ্ছা চল।
এরপরে বাসার বাইরে এসে গাড়ি থেকে সামিয়ার ল্যাগেজ আর কিছু ব্যাগ নিয়ে বাসায় আসলাম। বাসায় ভিতরে এসে দেখি সামিয়া মিমকে। কোলে নিয়ে বসে আছে।
আমি রেগে যায়ে বললামঃ বাসায় ভাড়া থাকতে এসেছে ভাড়াটিয়াদের মতো থাকবে। আমাদের সাথে কি যত্তসব??
সামিয়া আমার কথা শুনে দৌড়ে ওর রুমে চলে গেল। নেহার মন খারাপ করে বসে আছে।
আমিও রুমে চলে আসলাম। ডিনার করার সময় ডাইনিং টেবিলে যায়ে দেখি সামিয়া টেবিলে বসে থেকে মিমকে খাওয়াচ্ছে।
আর নেহা ওদের পাশে বসে থেকে আমার জন্য অপেক্ষা করতেছে। আমি চেয়ারে বসেই নেহাকে বললামঃ নেহা উনি কি আমাদের পরিবারের সদস্য নাকি ভাড়াটিয়া?
নেহাঃ কেন ভাইয়া?
আমিঃ আমাদের সঙ্গে ডিনার করতেছে যে😡😡😡।
নেহাঃ প্লিজ ভাইয়া এসব বাদ দাও।
আমি রেগে যায় বললামঃ থাক তুই আমি খাবোই না।
এরপরে রুমে এসে বেডের উপর বসে আছি। একটূ পরে বুঝতে পারলাম কে যেন রুমে ঢুকলো। আমি তাকিয়ে দেখি সামিয়া ।
আমাকে তাকাতে। দেখেই বললোঃ প্লিজ তুমি আমার উপর রাগ করে থেকে না খেয়ে থেকো না। শরীর খারাপ করবে।(করুন সুরে)
আমিঃ দেখুন আমি আপনাকে এখানে থাকতে দিয়েছি বলে এই নয় যে, আপনি যখন ইচ্ছা তখন আমার রুমে আসবেন।আর আমার শরীর খারাপ হবে কি না হবে সেটা আমি বুঝবো। কাউকে আলগা পিরিত দেখাতে হবে না। আর এখন আমার রুম থেকে বের হয়ে গেলে খুশি হতাম।(নিচের দিকে তাকিয়ে)
সামিয়া আর কিছু না বলে আমার রুম থেকে বের হয়ে গেল।
আমি কিছুক্ষণ স্টাডি করে ছাদে গেলাম। ছাদে বসে থেকে মেঘের খেলা দেখতেছি হঠাৎ পিছনে কারো আসার শব্দ শুনতে পেলাম। তাকিয়ে দেখি সামিয়া আসতেছে। সামিয়া কে দেখে আমি নিচে নেমে আসতে চাইলে সামিয়া আমাকে সামনে এসে দাড়িয়ে বললোঃ সাহিদ আমাকে কি মাফ করা যায়না। আমি পারতেছি না। আমি মানলাম সেদিনের ভুলটাও আমার হয়েছিলো। কিন্তু আমার জায়গায় তুমি থাকলে কী করতে? প্লিজ আমাকে ক্ষমা করে দাও,,,(কান্না করতে করতে)
আমিঃ ম্যাম আপনি আমার বাসায় থাকার জন্য বা আমার কাছে আসার জন্য বিভিন্ন চেষ্টা করেছেন। সেগুলোতে সফলও হয়েছেন। কিন্তু আবার আপনি কি চাচ্ছেন? আপনিও কি আমাকে পরিবার ছেড়ে যেতে বাধ্য করবেন। বের হয়ে যেতে বললে যাচ্ছি। তবুও আপনি আমাকে আপনার সেই মিথ্যা ভালোবাসার মায়ায় জড়ায়েন না। তাছাড়া আমি তো চরিত্রহীন, একজন চরিত্রহীনের সাথে কী ভাবে আপনার যায়। সুতরাং বলি কি, আপনি এসব বাদ দিয়ে নতুন করে জীবন শুরু করেন।
এই কথা বলেই আমি ছাদ থেকে নেমে নিজের রুমে আসলাম।
_-_-_-_-
সামিয়া ছাদ থেকে নেমে রুমে এসে বলতে লাগলো, সাহিদ তুমি আমার প্রতি যতই রাগ, অভিমান করো না কেন আমি তোমার সেই রাগ অভিমান সব আমার ভালোবাসা দিয়ে শেষ করে দিবো। আমি জানি তুমি আমাকে এখনো ভালোবাসো। কিন্তু আমাকে কষ্ট দিতে চাও। দেও সমস্যা নেই। তোমার সব কষ্ট মাথা পেতে সহ্য করবো তবুও তোমাকে আর ছাড়বো না।
এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা।
_-_-_
রুমে এসে ঘুমিয়ে পড়লাম। মিম নেহার কাছে আছে। সকালে ঘুম ভাঙলো অপরিচিত কন্ঠে। যেই কন্ঠ সকালে শুনা যায়নি।
চোখ খুলে দেখি সামিয়া কফি হাতে নিয়ে দাড়িয়ে আছে।
আমি রেগে গিয়ে বললামঃ এই আপনার সমস্যা কি হ্যাঁ? ইচ্ছে মতো আমার রুমে আসতেছেন? আর আপনার কী কমন সেন্স নেই যে একজনের রুমে ঢুকতে গেলে অনুমতি নিতে হয়😡😡😡😡😡।
সামিয়াঃ না মানে তোমার কফি।
আমি কফি হাতে নিয়ে এক চুমুক দিতেই বুঝলাম এটা সামিয়া তৈরি করেছে। খুব টেষ্ট হয়েছে। আমি বললামঃ এটা কে বানিয়েছে?( জানার পরেও)
সামিয়া খুশি হয়ে বললোঃ আমি বানিয়েছি।
আমি কফির মিটার সামিয়ার গায়ে ঢেলে দিয়ে বললামঃ ছিঃ এসব মানুষ খায়? কি বানিয়েছেন এসব। কফিও বানাতে পারেন না। যান চোখের সামনে থেকে।
সামিয়া বললো কফির মগটা হাতে নিয়ে কান্না করতে করতে রুম থেকে বের হয়ে গেল। যাওয়ার সময় লক্ষ্য করলাম, যেই জায়গায় গরম কফি পড়েছে সেই জায়গাটা লাল হয়ে গেছে।
নিজেকেই খারাপ লাগতেছে। কী করে করলাম এরকম।
আমিও ফ্রেশ হয়ে নিচে আসলাম। নিচে এসে দেখি মিম আর নেহা সোফায় বসে টিভি দেখতেছে। আমিও ওদের কাছে যায়ে বসলাম।
একটু পরে নাস্তা করে রেডি হয়ে কলেজের জন্য বের হলাম।
একটা জিনিস খেয়াল করলাম, সকালের পর থেকে সামিয়া কে আর দেখতে পাইনি। এমন কী নাস্তা করার সময়ও।
বাইরে এসে সামিয়ার জন্য অপেক্ষা করতে লাগলাম একসাথে যাবো বলে। আমাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে নেহা বললোঃ ভাইয়া কার জন্য দেরি করতেছো?
আমিঃ তোর ম্যাম চলে গেছে কী?
নেহাঃ হুমম অনেক্ষণ গেছে। হাতে নাকি গরম পানি পড়েছে এ জন্য মেডিসিন নিয়ে একবারে কলেজে যাবে।
নেহার কথা শুনে নিজেকে খুব নিকৃষ্ট মনে হলো। কি করলাম আমি।
নেহাঃ কী ভাবতেছো ভাইয়া?
আমিঃ না কিছু না চল।
নেহাঃ হুমমমম।
এরপরে কলেজে গেলাম। বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতেই ক্লাসের সময় হয়ে গেল। ক্লাসে যায়ে প্রথম ক্লাস করতেই পিয়ন এসে আমাকে বলে গেল এই ক্লাস শেষে প্রিন্সিপাল স্যারের রুমে যেতে।
আমি প্রথম ক্লাস শেষ করে প্রিন্সিপাল স্যারের রুমের দরজানক করে বললামঃ মে আই কাম ইন স্যার?
প্রিন্সিপাল স্যারঃ হুমম এসো।
প্রিন্সিপাল স্যারের রুমের ভেতরে ঢুকে দেখি সামিয়া,,,,,,,,,
(চলবে)
💘💘 কেমন হচ্ছে তা কমেন্ট করে জানাবেন 💘💘💘