# EX গার্লফ্রেন্ড যখন ইংলিশ ম্যাম 💖,পর্বঃ ২৩
# লেখকঃ Sahid Hasan Sahi
আমি রুমের ভিতরে ঢুকে সামিয়ার বেডের দিকে তাকিয়ে দেখে তো অবাক হয়ে গেলাম। কারণ, সামিয়া বেডের ওপর শুয়ে আছে আর তার গায়ের উপর কম্বল থাকার পরেও থরথর করে কাঁপতেছে। আর আবল তাবল বকতেছে। সামিয়ার কোল্ডে এলার্জি আছে। যার জন্য এখন তার অবস্থা বেশি খারাপ।
সামিয়ার এই অবস্থা দেখে আমার বুকের ভেতর মোচড় দিয়ে উঠলো। হাজার হলেও সে আমার ভালোবাসা। মুখে তাকে যতই বলি না কেন ভালোবাসি না ভালোবাসি না। কিন্তু অন্তরে তার প্রতি আমার ভালোবাসা একই রয়েছে। তবে তার প্রতি আমার অভিমানটাও এখনো আছে। জানিনা এই অভিমানটা শেষ কবে হবে। আমি সামিয়ার বেডের কাছে যায়ে সামিয়ার কপালে হাত দিয়ে দেখি জ্বরের কারণে সামিয়ার কপাল পুড়ে যাচ্ছে।
আমি নেহাকে জিজ্ঞাসা করলামঃ নেহা ম্যামের এই অবস্থা হলো কী করে?
নেহাঃ আসলে ভাইয়া, কালকে সন্ধ্যার পর ম্যাম কোথা থেকে যেন দৌড়ে রুমে আসলো। রুম এসে কোনো কথা না বলে ওয়াশরুমে চলে গেল। একটু পরে দেখি শাওয়ারের শব্দ আসতেছে। আমি মনে করলাম জার্নি করার জন্য শরীরটা ক্লান্ত হয়ে পড়েছে তাই শাওয়ার নিচ্ছে। আমিও আর কিছু বললাম না। প্রায় আধঘন্টা পার হয়ে যাচ্ছে তবুও বের হয়ে আসতেছে না। আমি ওয়াশরুমের দরজা ঠেলে ভিতরে ঢুকে দেখি ম্যাম ওয়াশরুমের মেঝেতে বসে থেকে কান্না করতেছে আর মাথার উপর ঝরনা থেকে পানি পড়তেছে।
আমি জিজ্ঞাসা করলামঃ কী হয়েছে তোমার ?
ম্যাম বললোঃ কিছু হয়নি।
আমিঃ তাহলে এখন এইভাবে শাওয়ার ছেড়ে বসে আছো কেন?
ম্যামঃ আমার কিছু হয়নি। প্লিজ তুমি এখানে থেকে চলে যাও। আমাকে একাই থাকতে দাও।
আমি আর কিছু না বলে ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে আসলাম। একটু পরে ডিনার করার জন্য ডেকে গেলো। আমি ম্যাম কে ডিনার করার জন্য ডাকলাম। কিন্তু সে বললো পরে ডিনার করবে। আমি জেদ করেও তাকে আমার সাথে ডিনার করতে নিয়ে যাতে পারিনি।
আমি মিমকে নিয়ে ডিনার করতে গেলাম।
ডিনার করে রুমে এসে দেখি ম্যাম এখনো শাওয়ার নিচ্ছে। আমি আর তার কোনো কথা না শুনে রুম থেকে ড্রেস নিয়ে যায়ে তার ভেজা ড্রেস গুলো চেন্জ করে দিয়ে ড্রেস পড়িয়ে দিয়ে তার বেডে শুয়ে দিলাম। তারপরে তাকে আবার জিজ্ঞাসা করলাম, কী হয়েছে?
ম্যাম আমাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে করতে বললোঃ আমি হারিয়ে গেছি নেহা আমি আমার ভালোবাসার প্রতি হারিয়ে গেছি। তখন আমি বুঝতে পারলাম তোমাদের মধ্যে কিছু হয়েছে।
নেহার কথা শুনে আমার দুই চোখ দিয়ে নোনাজল পড়তে লাগলো। কি করে পারলাম মেয়েটার সাথে এমন আচরন করতে। মন চায় বুকে জড়িয়ে নিয়ে চোখে চোখ রেখে বলি,,” পাগলি তোকে খুব ভালোবাসি রে কেন তুই বুঝিস না” । মন চায় আবার তাদের কাছে ফিরে যেতে।
কিন্তু কোনো এক অজানা শক্তি এসে বাঁধা দিয়ে বলে, “সাহিদ তারাও তো তোকে কম শাস্তি দেয়নি, তুই কি ভুলে গেলি?” তখনি আমি আর তাদের কাছে ফিরে যেতে পারিনা। জেগে ওঠে সেই পুরোনো ক্ষত গুলো। মনে পড়ে সেই তিন বছর আগের কথা গুলো। যখন তারা আমাকে বিনা দোষে বাসা ছাড়া করলো, বিনা দোষে চরিত্রহীন উপাধি দিলো। কি করে তাদের কাছে আবার ফিরে যাই।
নেহার কথাই আমি ভাবনার জগৎ থেকে বের হয়ে আসলাম।
নেহাঃ ভাইয়া জানি না তোমাদের মধ্যে কি হয়েছে। জানার চেষ্টাও করি না তবে একটা কথা বলি ভাইয়া, এই মেয়েটা তোমাকে খুব ভালোবাসে। তাই বলি অতীতের সব কিছু ভুলে আবার নতুন করে শুরু করো।
আমি নেহার কথার উত্তর না দিয়ে বললামঃ নেহা তোর কাছে রুমাল থাকলে নিয়ে আয় তো।
নেহাকে রুমাল নিতে পাঠিয়ে আমি ওয়াশরুম থেকে এক জগ পানি নিয়ে আসলাম। পানি নিয়ে এসে সামিয়ার মাথার কাছে বসে নেহার কাছ থেকে রুমাল টা নিয়ে পানিতে ভিজিয়ে সামিয়ার মাথায় পট্টি দিতে লাগলাম।
সামিয়ার জ্বর ক্রমশই বাড়েই চলতেছে। গায়ের কাঁপুনি বেশি হয়ে যাচ্ছে। আর জ্বরের ঘোরে ভুল ভাল বকতেছে। আমি আমার রুমে এসে ব্যাগ থেকে জ্বরের ক্যাপসুল নিয়ে এসে সামিয়া কে খাইয়ে দিলাম। সামিয়া এখনো অবচেতন অবস্থায় আছে।
প্রায় পঁয়তাল্লিশ মিনিট ধরে জল পট্টি দেওয়ার পরে সামিয়া কিছুটা স্বাভাবিক হলো। এতোক্ষণ নেহা আমার পাশেই বসে ছিল। আমি নেহাকে বললামঃ আপু তুই মিমকে নিয়ে তোর বেডে শুইয়ে পড়।
নেহাঃ আমি এখানে বসে আছি তুমি তোমার রুমে যায়ে ঘুমিয়ে পড়।
আমিঃ আমি এখানে আছি তুই যায়ে ঘুমিয়ে পড়। ঘুম জাগলে তুই অসুস্থ হয়ে পড়বি।
নেহাঃ ঠিক আছে ভাইয়া।
এরপরে নেহা মিমকে সামিয়ার বেড থেকে নিয়ে যায়ে ওর বেডে ঘুমিয়ে পড়লো।
আমি সামিয়ার মাথাটা আমার কোলের উপর তুলে নিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি আর মাথায় জল পট্টি দিয়ে দিচ্ছি। EX এর সেবা করতে করতে কখন যে রাত শেষ হয়ে গেছে বুঝতেই পারিনি।
ফজরের আযানের সময় সামিয়ার বেড থেকে উঠে নিজের রুমে এসে অযু করে নামাজ পড়ে বেডে গা টা এলিয়ে দিলাম। এখন সামিয়ার জ্বর টা ছাড়ে গেছে। তবে একটু একটু আছে।
সকাল সাতটায় ঘুম থেকে উঠে সোজায় মেডিসিন কর্ণার থেকে কিছু জ্বরের ঔষধ নিয়ে এসে নেহাকে দিয়ে বললামঃ নেহা এই মেডিসিন গুলো তোর ম্যাম কে খাইয়ে দিস।
নেহাঃ ঠিক আছে ভাইয়া।
আমিঃ এখন জ্বর কেমন আছে?
নেহাঃ জ্বর নেই তবে এই মেডিসিন গুলো খাইয়ে দিলে একে বারে সেরে যেতে পারে।
আমিঃ ঠিক আছে।
রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে ইকবাল আর আমি বসে আছি। একটু পরে রিয়াদ আর শাকিব আমাদের রুমে আসলো। শাকিব আর রিয়াদ বসতেই ইকবাল বলতে শুরু করলঃ জানিস তোরা আমাদের সাহিদ ভাই আজকে রাতে ভাবির কাছে ছিলো।
ইকবালের কথা শুনে শাকিব আর রিয়াদ আমার দিকে মুখ খোলা রেখে তাকিয়ে আছে। মনে হচ্ছে আমি অন্য গ্রহ থেকে এসেছি।
শাকিবঃ বলিস কি মামা এতো দূর আগিয়ে গেছে।
ইকবালঃ আরে আগে শুনি তো নাকি?
রিয়াদঃ হুমম বল?
ইকবালঃ রাত প্রায় দশটা বাজে, আমার ঘুম ভেঙ্গে গেল। পাশের বেডে তাকিয়ে দেখি সাহিদ নেই। মনে করলাম ওয়াশরুমে গেছে। কিন্তু বেশ কিছুক্ষণ পার হয়ে যাওয়ার পরেও ওয়াশরুম থেকে বের হচ্ছে না। আমি ওয়াশরুমে ঢুকে দেখি কেউ নেই। গেলো কইরে, আমি ভাবলাম হয়তো বাইরে গেছে। রুম থেকে বের হয়ে এসে দেখি বাইরে নেই। ম্যামের রুমে উঁকি দিয়ে দেখি আমাদের জানের দোস্ত সাহিদ কথা বলতেছে। তার মানে ভাইয়া ভাবির রুমে গেছে।
আমি রুমে এসে শুয়ে পড়লাম। ফজরের একটু আগে ঘুম থেকে উঠে দেখি সাহিদ এখনো আসেনি। একটু পরে রুমে আসলো।
আমি ঘুমানোর ভান করে মিটিমিটি চোখে তাকিয়ে বুঝতে পারলাম বন্ধুর শরির টা বেশ খারাপ। কারণ, সারা রাত হয়তো ম্যাস খেলেছে।😁😁😁😁
রিয়াদঃ এতো কিছু হয়ে গেল তারপরও তুই আমাদের কিছু জানানোর প্রয়োজন মনে করলি না। ছিঃ ভাবতেও খারাপ লাগতেছে।
আমিঃ আরে ভাই ইকবাল যা বলতেছে তার কিছু সত্য কিছু মিথ্যা। আমি রাতে ঐখানেই ছিলাম কিন্তু,,,
আমাকে আর বলতে না দিয়ে শাকিব বললঃ বুঝি বন্ধু বুঝি। আমরা কচি খোকা না।
আমিঃ কচু বুঝিস তোরা,,,। থাক তোরা।
বলেই রুম থেকে বের হয়ে আসলাম। কারণ, তাদের কাছে যতই থাকবো তারা ততই প্যাচাবে।
বাইরে আসতেই ফোনটা বেজে উঠলো। বের করে দেখি স্যার ফোন দিয়েছে। আমি রিসিভ করে বললাম,,,,
আমিঃ আসসালামুয়ালাইকুম।
স্যারঃ ওয়ালাইকুমুস সালাম। কোথায় আছো তুমি?
আমিঃ স্যার আমিতো বাইরে আছি। কেনো?
স্যারঃ তুমি হোস্টেলে যায়ে সকলকে ক্যান্টিনে নিয়ে এসো। ব্রেকফাস্ট করে আমরা ঘুরতে বের হবো।
আমিঃ ঠিক আছে স্যার।
আমি হোস্টেলে ফিরে এসে সবাইকে ক্যান্টিনে যাতে বললাম। সকালে একসাথে ব্রেকফাস্ট করে ঘুরতে বের হলাম। প্রথমেই হিমছড়ি গেলাম। এর পরে পর্যায়ক্রমে গেলাম বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে,রাডার স্টেশন ও লাইট হাউজে, লামার পাড়া ক্যাংএ, ইনানিতে। প্রকৃতির এমন মনোমুগ্ধকর দৃশ্য দেখে মনে হচ্ছে প্রকৃতির মাঝে হারিয়ে যাই।
অনেক্ষণ যাবৎ ঘোরাফেরা করলাম। দুপুর দুইটা বেজে গেছে। এরপরে একটা রেস্টুরেন্টে যায়ে সবাই একসাথে লাঞ্চ করে হোস্টেলে আসলাম। সকলে গোসল করে আবার রওনা দিলাম সমুদ্র সৈকতের উদ্দেশ্যে । বিকেলের সেই পড়ন্ত সূর্যের রোদটুকু এবং সন্ধ্যায় সূর্যাস্তের সময়টা উপভোগ করতে আমরা সৈকতে কাটাতে চায়।
আর আজকে রাতে রওনা দিবো সিলেটের উদ্দেশ্যে।
সৈকতে আমি, নেহা, মিম, সামিয়া একসাথে ঘুরতেছি। ইকবাল, শাকিব, রিয়াদ আর কিছু ফ্রেন্ড একসাথে ঘুরতেছে।
সামিয়া নেহা আর মিম ওরা তিনজন আমার সামনে সামনে যাচ্ছে আর আমি তাদের পিছু পিছু যাচ্ছি।
ফোনটা বেজে উঠলো। বের করে দেখি অফিসের এমডি ফোন দিয়েছে। রিসিভ করে বললো, আজকে রাতেই আমাকে ঢাকা ব্যাক করতে হবে। অফিসের কি যেন জরুরী মিটিং আছে যেটা আমার স্বাক্ষর ছাড়া হবে না।
এতোক্ষণে ওর তিনজন আমার থেকে অনেকটা দূরেই আছে হঠাৎ মিমি দৌড়ে এসে বললোঃ সাহিদ দেখো তো আমার চোখে কি যেন পড়েছে। খুবই ব্যাথা করতেছে প্লিজ একটু দেখো।
বিকেল তিনটার রোদ বেশ কড়া না হলেও রোদে দাড়িয়ে থাকা বেশ সুবিধার নয়। আমি মিমিকে নিয়ে একটা গাছের নিচে নিয়ে গেলাম। পকেট থেকে একটা টিস্যু বের করে কিছু অংশ ছিঁড়ে নিলাম। মনে করলাম বালি পড়েছে হয়তো।
মিমির চোখের কাছে চোখ নিয়ে যায়ে ভালো ভালো ভাবে দেখি একটা ছোট্ট পোকা পড়েছে। টিস্যু দিয়ে পোকাটা বের করে দিয়ে মিমির চোখে যখনই ফুঁ দিতে যাবো তখনই কে যেন পিছন থেকে আমার কাঁধে হাত দিয়ে ঘুরিয়ে নিলো। তাকিয়ে দেখি সামিয়া।
সামিয়া কোনো কথা না বলেই আমার গালে ঠাসসস ঠাসসস করে দুইটা থাপ্পড় মেরে বলতে লাগলোঃ লুচ্চা তোর লুচ্চামি কখনো শেষ হবেনা। তুই চরিত্রহীন ছিলি এখনো আছিস। তোর মতো চরিত্রহীন,,
আমি আর কিছু বলতে না দিয়ে ঠাসসস ঠাসসস করে লাগিয়ে দিয়ে বললামঃ ব্যাসসসস,,, অনেক বলেছিস। ভেবেছিলাম সব কিছু ভুলে আবার তোকে আমার বুকে জড়িয়ে নিবো। কিন্তু না সেটা তুই হতে দিলি না। তোর মতো মেয়ের সঙ্গে কথা বলার ইচ্ছে আমার নেই।😠😠😠😠( একদম রেগে)
এতোক্ষণে সবাই আমাদের এই কাহিনী সবাই দেখলো। সবাই ভাবতেছে এদের সম্পর্ক টা কী?
আমি নেহাকে বলে হোস্টেলে ফিরে আসলাম। মাথায় রক্ত উঠে গেছে। আমি ভাবলাম হয়তো সামিয়া তার ভুল বুঝতে পেরে আমাকে আবার ভালোবাসতে শুরু করেছে। কিন্তু না এটা তার একটা আবেগ। রুমে এসে শাওয়ার ছেড়ে দিয়ে ভিজতে লাগলাম।
_-_-_-_-_-_-_-_-
মিমিঃ আসলে ম্যাম আপনার ভালোবাসাটা আসল নয়। আর আসল হলে নিজের ভালোবাসার মানুষটিকে এভাবে সন্দেহ করতেন না।
সামিয়াঃ মানে কী বুঝাতে চাচ্ছো?(অবাক হয়ে)
মিমিঃ আমি বলতে চাচ্ছি আপনি সাহিদের যোগ্য নয়। সাহিদ আপনাকে আগের মতই ভালোবাসে। কিন্তু আপনি সাহিদের ভালোবাসার মর্যাদা টা দিলেন না। গত কাল রাতে যখন আপনি আমাকে সাহিদের সাথে দেখেছিলেন তখন আমি সাহিদ কে আমার ভালোবাসার কথা বলেছিলাম। কিন্তু সাহিদ আপনাকে ভালোবাসে বলে আমাকে রিজেক্ট করে দেয়। তবে আপনার সাথে এমন করার কারণ হলো সে আপনাকে কষ্ট দিতে চায় যে, ভালোবাসার মানুষ কে বিনা কারণে কষ্ট দিলে কেমন হয়। আপনাকে সে কয়েক দিনের মধ্যেই মেনে নিতে চেয়েছিল কিন্তু আপনি তা নিজ হাতে শেষ করে দিলেন।
মিমির কথা শুনে সামিয়া মাথায় হাত দিয়ে বিচে বসে পড়ে।
মিমি আবারও বলতে শুরু করলঃ আর আজকে আমার চোখে কি যেন পড়েছিলো। খুব ব্যাথা করতেছিল। আমি সাহিদ দেখতে পেয়ে তার কাছে দৌড়ে এসে চোখে কিছু পড়ার কথা বললে সাহিদ ট্যিসু দিয়ে আমার চোখের পোকা বের করে দেয়। আর আপনি এসে চড় মেরে কথা শুনিয়া দিলেন। এখনো সময় আছে নিজের ভালোবাসার মানুষকে নিজের করে রাখুন। সেটা যেকোনো উপায়ে করতে পারেন। হয়তোবা আপনার কষ্ট হতে পারে তবুও চেষ্টা করুন। কেননা একবার হারিয়ে ফেললে সারা জীবন চোখের পানি ফেলতে হবে।
বলেই মিমি সেখান থেকে চলে গেল। সামিয়া বিচের বসে থেকে কান্না করতে লাগলো। নেহা সামিয়া কে বিভিন্ন ভাবে শান্তনা দিচ্ছে কিন্তু সামিয়া কান্না করেই যাচ্ছে। সামিয়ার কান্না দেখে মিমো কান্না শুরু করে দিয়েছে।
নেহা সামিয়া আর মিম নিয়ে হোস্টেলে ফিরে আসলো।
_-_-_-_-_-_-_-_-
আমি স্যারের কাছে যায়ে বললামঃ স্যার আপনার সাথে জরুরি কিছু কথা ছিল।
স্যারঃ হুমম বলো।
আমিঃ স্যার আমি আজকেই ঢাকা ব্যাক করবো।
স্যারঃ কেন? ( অবাক হয়)
আমিঃ স্যার কালকে সকালে অফিসে একটা জরুরি মিটিং আছে। আর সেখানে আমি না থাকলে হবে না।
স্যারঃ আচ্ছা ঠিক আছে। তাহলে তো আর নিষেধ করা যাচ্ছে না।
আমিঃ ঠিক আছে স্যার। আর আমার বোন এবং আমার মেয়েকে একটু দেখে রাখেন।
স্যারঃ ঠিক আছে। কখন যাবে?
আমিঃ আটটার ফ্লাটে যাবো।
স্যারঃ ওকে।
স্যার রুম থেকে বের হয়ে আমার রুমে এসে প্যাক করতে লাগলাম। এতোক্ষণে সবাই বিচ থেকে চলে এসেছে। আমাকে প্যাক করতে দেখে ইকবাল বললঃ সাহিদ কোথায় যাবি প্যাক করেছিস কেন?
আমিঃ ঢাকায় যাবো দোস্।
ইকবালঃ কেন?(অবাক হয়ে)
আমিঃ অফিসে জরুরি মিটিং আছে। আর নেহাকে একটু দেখে রাখিস।
ইকবালঃ আচ্ছা ঠিক আছে।
আমি নেহার কাছে ফোন দিয়ে বাইরে রুম থেকে আসতে বললাম।
নেহা বাহিরে এসে আজ দেখে অবাক। কারণ, আমি ল্যাকেজ নিয়ে বের হয়েছি।
আমাকে এই অবস্থায় দেখে বললোঃ ভাইয়া তুমি কোথায় যাবে?
আমিঃ আসলে অফিসের একটা জরুরি মিটিং আছে তো তাই আমাকে যেতে হবে।
নেহাঃ না গেলে হয় না।(করুন সুরে)
আমিঃ নারে বোন যেতেই হবে। আর আমার আম্মু কে একটু নিয়ে আয়।
নেহাকে মিমকে নিতে তার রুমে গেলো।
একটু পরে সামিয়া সহ ওরা তিনজন আমাকে কাছে আসলো। সামিয়ার আমাকে এইভাবে দেখে অবাক।
আমি আমার মেয়েকে কোলে নিয়ে বললামঃ আম্মু তুমি আমার সাথে যাবে নাকি তোমার আন্নির সাথে থাকবে?
মিমঃ বাবাই থুমি তোথায় দাবে?
আমিঃ আমি ঢাকায় যাবো আম্মু। তুমি যাবে?
মিমঃ না বাবাই আমি আন্নি আর মামনির তাথে থাতবো।
আমিঃ আচ্ছা আম্মু থাকো। দুষ্টুমি করবে না।
মিমঃ আততা বাবাই।
আমিঃ আর নেহা মিমকে দেখে রাখিস।
নেহাঃ ঠিক আছে ভাইয়া ভালো ভাবে যেও।
আমিঃ আচ্ছা।
আমি সামনে ঘুরে ল্যাগেজ হাতে নিয়ে যেই এক কদম ফেলবো তখনি সামিয়া দৌড়ে এসে আমার পা জড়িয়ে ধরে কান্না করতে করতে বললোঃ প্লিজ এবার আমাকে ক্ষমা করে দাও। আর একবার আমাকে সুযোগ দাও।
আমি কিছু না বলে পা টি ছাড়িয়ে নিয়ে ইকবাল, রিয়াদ আর শাকিবকে বিদায় দিয়ে পা বাড়ালাম বিমানবন্দরের উদ্দেশ্যে।
বিমান বন্দরে পৌঁছতে আট টা বাজতে আর দশ মিনিট বাকি।
তারপরে বিমানে ওঠে পড়লাম।
বিমান ঢাকা ল্যান্ড করলো। বিমান থেকে নেমে বিমানবন্দরের বাইরে এসে দেখি ড্রাইভার আংকেল গাড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। বিমানে ওঠার সময় আংকেল কে আসতে বলেছিলাম।
গাড়ি নিয়ে বাসায় আসলাম। ফ্রেশ হয়ে হালকা ডিনার করে ঘুমিয়ে পড়লাম। কারণ, গত রাতে একটা প্রতারকের সেবা করতে ই কাটিয়ে দিয়েছি।
সকালে ঘুম থেকে উঠে নাস্তা করে অফিসে গেলাম। অফিসে প্রয়োজনীয় কাজ শেষ করে বাসায় এসে গাড়ি নিয়ে বের হলাম রাজশাহীর উদ্দেশ্যে। ড্রাইভার আংকেল কে নিয়ে আসি নি। একাই এসেছি।
রং ড্রাইভ করতে ভালো লাগে। দীর্ঘক্ষণ ড্রাইভ করে রাজশাহী মেডিকেলের সামনে এসে পৌঁছলাম। গাড়ি পার্ক করে নার্সের ড্রেস আপ করে ভিতরে ঢুকলাম।
আম্মুর কেবিনে যায়ে দেখি আব্বু মাথা হেলে বসে আছে আর আম্মু ঘুমিয়ে আছে। এখন নজর দেখে মাহফুজ ভাইয়ের সঙ্গে দেখা করলাম। মাহফুজ ভাই বললোঃ আম্মু এখন মোটামুটি সুস্থ। কয়েক দিন পর রিলিজ দিবে। মাহফুজ ভাই এর সাথে কিছু কথা বলে হাসপাতাল থেকে গাড়ির কাছে আসলাম।
আবার ড্রাইভ করে চলে আসলাম ঢাকায়।
আগামি কাল সকাল সাতটায় নেহারা সিলেট থেকে ঢাকায় ফিরবে করবে। রাজশাহী থেকে ঢাকায় আসতে রাত হয়ে গেল। ডিনার করে ঘুমিয়ে পড়লাম।
সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি সাড়ে ছয়টা বেজে গেছে। দ্রুত ফ্রেশ হয়ে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম কলেজে। কারণ , ট্যুরের বাস কলেজেই এসে সকল কে নামিয়ে দিবে।
একটু পরে বাস আসলো। একে একে সবাই নামলো। মিম নেহা আর সামিয়া এক সাথে নামলো। মিম আমাকে দেখে দৌড়ে এসে জড়িয়ে ধরলো। আমিও কোলে তুলে নিলাম।
এরপরে আমি বন্ধুদের সাথে কথা বলে নেহা আর মিমকে নিয়ে গাড়িতে উঠলাম।
বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে তিনজন মিলে নাস্তা করলাম। আজকে কলেজ বন্ধ আছে। নাস্তা করে নেহা ওর রুমে গেল ঘুমানোর জন্য। আর মিমকে আমার রুমে নিয়ে এসে গল্প করতে লাগলাম।
এই ভাবে দিন টা কেটে গেল।
পরের দিন কলেজে গেলাম। কলেজে ক্লাস তেমন হলো না। শুধু ট্যুরের কথাই হলো। ছুটির পরে আমি আর সামিয়ার রুমে গেলাম না।
ওদের দুজনকে নিয়ে বাসায় আসলাম।
গোসল করে নামাজ পড়ে লাঞ্চ করে পড়তে বসলাম। কারণ পরিক্ষার আর বেশি সময় নেই।
রাতে ডিনার করার সময় নেহা যা বললো তা শুনে রাগে আমার,,,,,,,
(চলবে)