Crush Villain,সূচনা পর্ব

Crush Villain,সূচনা পর্ব
লাবিবা ওয়াহিদ

ক্লাস করছিলাম এমন সময়ই ভার্সিটির সিনিয়র + সব মেয়েদের ক্রাশ আয়াফ জুরাইজ ক্লাসে এসে সবার সামনে আমাকে চড় মারলো। ছলছল চোখে একবার আয়াফের দিকে আরেকবার টিচারের দিকে তাকালাম। লজ্জায় মাটিতে মিশে যেতে মন চাইছে চড় খেলাম ক্লাসের সবার সামনে এমনকি টিচারের সামনে? টিচার হয়ে কিভাবে চুপ আছে উনি? ভার্সিটি আয়াফের বাবার বলে কি ন্যায় অন্যায় বাচ-বিচার করবে না? স্যারের দিকে তাকাতেই স্যার চলে গেলো ক্লাসরুম থেকে। আমি কি বলবো কি করবো কিছুই বুঝতে পারছি না। আয়াফের চোখ মুখ লাল হয়ে আছে এতেই বোঝা যাচ্ছে কি পরিমাণ রেগে আছেন উনি। সবাই দর্শকের মতো আমাদের দেখছে! আর পাবলিকের কাজই তো এটা ফ্রি তে বিনোদন নেয়া। বাঙালির ফ্রি জিনিস আবার খুব পছন্দের! আয়াফ চোখ মুখ লাল করে তার হাতে থাকা কাগজ আর চিঠি আমার মুখ বরাবর ছুড়ে মারে। আমি সাথে সাথে চোখ বন্ধ করে ফেলি! সে হুংকার ছেড়ে বলে,”হাউ ডেয়ার ইউ! তোমার সাহস কি করে হয় আমায় এই স্টুপিড লেটার দেওয়ার? ইউ লুজার! ডু ইউ নো ওয়াট ইউ ডিড স্টুপিড? এখন তো চড় মেরেছি নেক্সট টাইম যদি আবারও একই ভুল করেছো তো তোমার গালের জায়গায় আর গাল থাকবে না লুজার, ইডিয়েট একটা।”

বলেই হনহন করে করে চলে যায় আয়াফ সাথে তার বন্ধুরা। এতো বড় অপমানের জন্য চুপচাপ নিচের দিকে তাকিয়ে চোখের জল বিসর্জন করছি! এভাবে কেউ কখনো আমায় অপমান করেনি আর আজ কিনা শুধুমাত্র বেস্টফ্রেন্ডের জন্য এভাবে অপমানিত হয়েছি? তারা চলে যেতেই মার্জান কাঁপা কাঁপা গলায় আমারে বলে,”সসরি সাসানিয়া!”

আমি চোখে পানি নিয়েই রাগান্বিত দৃষ্টিতে মার্জানের দিকে তাকালাম। তারপর সেখানে একমুহূর্ত না দাঁড়িয়ে ব্যাগটা নিয়ে ক্লাস থেকে বেরিয়ে গেলাম। মার্জান পেছন থেকে অনেকবার ডাকলেও আমি তার কথায় পাত্তা দিলাম না।

– আরে সানিয়া দাঁড়া! আমার কথা টা তো শুন আরে আরে….যাহ চলে গেলো।! এখন মেয়েটাকে কি বলি আমার জন্য….উফফফ ধুর!!

হঠাৎ পেছন থেকে সানিয়ার এক ক্লাসমেট হেসে হেসে বলতে লাগলো,”বুঝেছো মার্জান তোমার ফ্রেন্ডের পাঙখা গজাইসিলো নইলে আয়াফের মতো একজন কে লাভ লেটার দেয় হাউ ফানি! উচিত শিক্ষা দিয়েছে আমার আয়াফ তাকে!”

মার্জান খুবই রাগের সাথে মিথিলার দিকে তাকালো। তারপর কিছু না বলে চুপচাপ বসে রইলো আর ভাবতে লাগলো সানিয়াকে কিভাবে সামলাবে? মিথিলা “আমার আয়াফ” বলাতে আরও কিছু মেয়ে তার সাথে ঝগড়া শুরু করে দেয় আয়াফকে নিয়ে। মার্জান ঝগড়া দেখে ভাবছে,”কোনো একদিন আমিও তাকে নিয়ে ঝগড়া করতাম এখন ওই একটা মানুষের জন্য আমার আর আমার বেস্টফ্রেন্ডের বিচ্ছেদ! সহ্য করার মতো নয় সেটা।”
ভেবে মার্জান দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো।

[আসুন আপনাদের আয়াফ এবং সানিয়ার পরিচয় দিয়ে দেই।

বাবা মায়ের বড় মেয়ে সানিয়া ইবনাথ। সানিয়ার একটা ছোট ভাই আছে যে ক্লাস ফোর(৪) এ পড়ে এবং সানিয়া অনার্স প্রথম বর্ষে। সানিয়া দেখতে মাহশাআল্লাহ তার মায়াবী চেহারা এবং চঞ্চল স্বভাবে যে কেউ তার প্রেমে পড়তে বাধ্য। সানিয়া বই পড়তে ভালোবাসে তাই বেশিরভাগ সময় বিভিন্ন লাইব্রেরিতেই সে সময় কাটায় এবং নিজে সখ করে একটা লাইব্রেরি করার প্লানিংও করেছে।

দেশের নামকরা সাইক্লোজিস্ট এবং টপ রিচম্যানের একমাত্র ছেলে আয়াফ জুরাইজ। উচ্চতা ৬ ফুট, ধবধবে ফর্সা, খোচা খোচা দাড়ি, তার সৌন্দর্য ফুটিয়ে তুলেছে তার ডান ভ্রু-র নিচের তিলটা। বলা যায় একজন ড্যাশিং, হ্যান্ডসাম বয়! আয়াফ জুরাইজ যেমন সুন্দর তেমনই তার ব্যবহার খারাপ। কখন কাকে কি বলে সে নিজেই বুঝে না জানেও না। অলয়েজ রুডলি থাকে বাট যখন ফ্রেন্ডস দের মাঝে থাকবে তখন জমিয়ে আড্ডা দিবে!]

নদীর পারে হাটুর মাঝে মুখ গুজে চুপচাপ কেঁদেই চলেছি। কখনো ভাবিনি ক্রাশ এভাবে চড় দিবে অপমান করবে তাও সবার সামনে! এই আয়াফ জুরাইজ কে প্রথমদিন দেখেই ক্রাশ খেয়েছিলাম কিন্তু মুখে স্বীকার করিনি। তাকে লুকিয়ে দেখতাম, তার ছবিও কালেক্ট করে রেখে দিয়েছিলাম। তার বাবার ভার্সিটি আছে সেটা শুনে এইচএসসির পরপরই এই ভার্সিটিতে ভর্তি হই তাও অনেক কষ্টে। কারণ এখানে প্রতি বছরেই বিভিন্ন জায়গা থেকে ৩০হাজারেরও বেশি স্টুডেন্ট এডমিশন টেষ্ট দেয় আর তার ভেতর থেকে ৮০০+ স্টুডেন্ট নেয়া হয় বিভিন্ন ডিপার্টমেন্টে। আমিও বেশ কষ্টেই এই ভার্সিটিতে চান্স পেয়েছিলাম সাথে আমার বেস্টফ্রেন্ড মার্জানও। লোকে বলে এই ভার্সিটির পড়াশোনার মান যেমন ভালো তেমনই এখান থেকেই ভালো পজিশনে যাওয়া যায়। কিন্তু আমি যে শুধু আমার ক্রাশের জন্য এখানে এসেছি সেটা তো সবারই অজানা। কিন্তু কিছুদিনের মাঝেই মার্জান আমায় আবদার করে যেনো একটা লাভ লেটার লিখে দেই।

★ফ্ল্যাশব্যাক★

লাইব্রেরিতে বই দেখছিলাম এমন সময় মার্জান আমার পিছে এসে দাঁড়ায় এবং বলে,”সানিয়া শুন!”

– হুম বলে ফেল!

– একটা লেটার লিখে দিবি? প্লিজ না করিস না তোর লেখা খুব সুন্দর তাই লিখে দে না প্লিজ প্লিজ প্লিজ!!

– আচ্ছা তা নাহয় বুঝলাম কিন্তু কেমন লেটার?(ভ্রু কুচকে)

– আসলে… আই ফল ইন লাভ উইথ আয়াফ!

আমি চোখ বড় বড় করে যিশার দিকে তাকালাম। মানে নিজের ক্রাশকে আমার বেস্টফ্রেন্ড ভালোবাসে, এর মানে কি ক্রাশকে আমার জিজু বলে ডাকতে হবে? এটা কি আদৌ সম্ভব? নাহ নিজের জন্য কি করে নিজের বেস্টফ্রেন্ডকে কষ্ট দিবো? আমি তো আর আয়াফকে ভালোবাসি না সে শুধুই আমার ক্রাশ এর বেশি কিছু না আর মার্জান তো তাকে ভালোবাসে। নাহ আমি কষ্ট দিতে পারবো না। এমন ক্রাশ কতো যাবে আসবে!

এসব ভেবেই মার্জানের কথায় রাজি হয়ে যাই এবং ইমপ্রেস করার মতো করেই লেটার টা লিখি। কিন্তু নিচে দিয়ে মার্জানের নাম লিখতে বারণ করে তাই আমি আর নাম লিখিনি। লেটার টা দেয়া হয়েছিলো আরও ৩-৪ দিন আগে আর আজ কি হলো?।

ভাবতে ভাবতেই আমার চোখ বেয়ে পানি ঝরে গেলো। খুব খারাপ লাগছে যে আমার।

আরও কিছুক্ষণ সেখান থেকে চোখে মুখে নদী থেকে পানি দিলাম ভালোমতো নইলে চোখ মুখ ফোলা দেখলে বাসায় অনেক প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হবে। এখনো যেহেতু ক্লাস টাইম চলছে সেহেতু এখন আর বাসায় না গিয়ে লাইব্রেরিতে চলে গেলাম সেখান থেকে বই পড়ে মনকে শান্ত করার চেষ্টা করবো। ভাবা অনুযায়ী চলে গেলাম এক লাইব্রেরিতে সেখানে বই পড়ায় মনোযোগী হলাম।

– কিরে মেয়েটার হুদিস পেয়েছিস?(যাহির)

– পেয়েছি মানে একদম কোপ দেয়াও শেষ। মেয়েটার বুকের পাঠা আছে বলা যায় নইলে আমার মতো ছেলেকে প্রপোজাল দিবে তাও এই লাভ লেটারের মাধ্যমে ইয়াক!(আয়াফ)

– তবে আর কতোদিন এমন সিঙ্গেল থাকবি ইয়ার?(নিল)

– আল্লাহ যতোদিন চাইবে।(আয়াফ)

– জাস্ট স্টপ আয়াফ! তোর এই একাকিত্বের জন্য তোর পিছে লাইন লেগে আছে আর তুই তো প্রপোজাল পাচ্ছিস না এমন তো নয়?ওয়াই ইগনোরিং দিস টপিক ব্রো?(নিশি)

– আরে এরে বলে কাজ নেই নিজের চরকায় তেল দে তুই!(মানিশা)

– শাট আপ! তুই কোনো কথা বলবি না!(নিশি)

– আহ থাম তোরা দ্যাট’স নট ফেয়ার! এভাবে ফ্রেন্ডস হয়ে লাগছিস কেন?(যাহির)

– তো কি করতাম? এই মানিশা অলয়েজ এভাবে ত্যাড়া ভাবে কেন কথা বলবে?(নিশি)

– তোর না সবিতেই বাড়াবাড়ি!(আয়াফ)

– ঠিক বলেছিস এই নিশি টা কখনো মজা বুঝে না স্টুপিড একটা!(মানিশা)

– ওকে ওকে কুল আর কথা বাড়াস না চল ক্যান্টিনে যাই আমার খুব খুদা পেয়েছে উফফ!(যাহির)

– এক সেকেন্ড তোর আবার কবে থেকে তিনয়ের বাতাস লাগলো রে?(নীল)

– মানেহ? কিসব যা-তা বলছিস?(বর্ণ)

– যাতা কই বললাম জাস্ট আস্ক করলাম কজ তিনয় যে পরিমাণ খায়…আর আজ ভার্সিটি আসেনি কি জানি কোথায় কি খেয়ে চিত্তায় আছে।(নীল)

– হারামি চুপ কর! শালা গুন্ডিবাজ!(“যাহির” রাগি চোখে)

– ওকে ওকে কুল গাইস ক্যান্টিনের দিকেই যাই। আজ ক্লাস করার মুড নাই!(মানিশা)

– ভূতের মুখে রাম রাম!(যাহির)

– মানে কি যাহির!(মানিশা)

– না যে সারাক্ষণ পড় পড় বলে মাথা খায় সে নাকি বলছে ক্লাস করবে না? নীল আমায় একটা চিমটি কাট তো!(যাহির)

– ওয়াই?(নীল)

– আমি জেগে আছি কিনা শিওর হতে!(যাহির)

নীলের বদলে আয়াফ খুব জোরে যাহিরের হাতে চিমটি কাটলো। যাহির ব্যথায় “আউউউউচ” করে চেঁচিয়ে উঠে। আয়াফসহ সবাই একসাথে হেসে দেয়। যাহির চিমটির জায়গায় ডলতে ডলতে দাঁতে দাঁত চেপে বলে,”শালা হারামী বজ্জাত পোলা। এতো জোরে চিমটি দিতে বলেছিলো কে তোরে উফফফ জ্বলে গেলো আমার হাত!”

আয়াফ হেসে বলে,”বেশি স্বপ্ন স্বপ্ন করছিস তাই মলম দিসি। এখন উপকারেরও দাম নাই মানুষের।”(মুখ বাকা করে)

– হইসে অনেক বকরবকর করছিস এখন যাহিরের ইচ্ছা টা পূরণ করতে ক্যান্টিন চল। দেখছিস না বেচারা কতো বছর খায়না!(নিশি)

– এক সেকেন্ড তুই আমার পক্ষে বললি না বিপক্ষে?(যাহির)

– তোর যা মনে হয় হোক আই ডোন্ট কেয়ার!(ভাব নিয়ে)

– ওকে বেশি কথা না বাড়িয়ে চল।(আয়াফ)

আর কোনোরকম কথা না বলে ফ্রেন্ডসরা মিলে চলে গেলো ক্যান্টিনে।

চলবে!!!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here