Accounting_Teacher(season2)
Part-9,10
Written_by_Ritu_Rosni
Part 9
.
–ঐ কুত্তা কই যাস?আর এক পা এগোলে ঠ্যাং ভেঙ্গে লুলা করে দেবো তোকে।
–এমা নাহহ,তাইলে আমি হাটবো কেমনে?আমি লুলা হলে কেউ আমায় বিয়ে করবে না।😰আমার বিয়ে না হলে আমি বাচ্চাকাচ্চা পামু কই?আর তোরে আমি বেয়াইন বানামু কেমতে,,এ্যাাাাাাাাাাাাাাাা
—ঐ ঢঙ্গি থামবি তুই?এমনিতেই লেট করে আসছে আবার দএসেই ঢং শুরু করছে।
ওদের এই খুনশুটি ভালোবাসা দেখে সবাই হেসে ফেলেছে।
দুজনে যেনো দুজনের আত্না।
,
বাইরে শরগোল শোনা যাচ্ছে খুব।মনে হচ্ছে বর এসেছে।সব ফ্রেন্ডস রা মিলে গেট ধরলাম।
জিজুর থেকে মোটা অংকের টাকা খোসানোর ধান্দা আরকি।
তার আগে জিজুর জন্য স্পেশালি নাস্তার ব্যবস্থা করেছি।শালিকা হিসেবে জিজু কে সারাজীবন জ্বালানোর লাইসেন্স প্রাপ্ত হতে যাচ্ছি।গেটে জিজু কে আপ্যায়ন করলাম খুব সুন্দর ভাবেই।
–আরে তোরা সবাই এভাবে দাড়িয়ে আছিস কেনো?দেখছিস না আমার জিজুর গুলুমুলু ফেস টা কেমন শুকিয়ে আছে।
একটু ঠান্ডা দে জিজু কে।হুররর একটাও কাজের না সব শালা অকাজের।
অনেক মজা করলাম গেট ধরার সময়।বাচ্চা বাচ্চা পোলাপাইন আসে এই #ঋতুর সাথে টক্কর দিতে।ওরা জানেনা হয়তো আমার সাথে টক্কর দেওয়ার আগে আমার থেকে ওদের ট্রেনিং নিতে হবে।তার আগে সম্ভব নাহ।
শালা যাদের নাক চিপলে দুধ বের হয় তারা আসে আমার সাথে পার্ট নিতে।হুহহহহহহ😒এমন নাকানিচুবানি দিমু যে সারাজীবনেও ভুলতে পারবো না মোরে।
,
ব্যাটা কুভ্র আজ হাল্কা আকাশী কালারের জিন্স,ওয়াইট শার্ট,আকাশী কালারের ব্লেজার।
মেচিং সু।চোখে সান গ্লাস,চুলে জেল দিয়ে এক পাশে সাট করা।জাতির ক্রাশ আজ জাতির কাছে ধরা দিয়েছে।বিয়ে বাড়ির সব মেয়েরা তো চোখ দিয়ে গিলে খাচ্ছে।নির্লজ্জ,বেহায়া মেয়েরা কেমন আগ বাড়িয়ে আলাপ করতে যাচ্ছে।সব কয়টা শাঁকচুন্নিকে মনে হচ্ছে মাথার চুল কেটে ন্যাড়া করে দেই।রাগে শরীর জ্বলে যাচ্ছে আমার।কি লুইচ্চা রে বাবা দাড়িয়ে দাড়িয়ে মেয়েদের সাথে মজা নিচ্ছে।চোখ মুখ দেখে মনে হচ্ছে বিষয় টা তে ও খুব ইনজয় ফিল করছে।
,
অনেকক্ষণ ধরে লক্ষ করছি যে একটা ছেলে আমায় ফলো করছে।যেখানেই যাচ্ছি দূর থেকে লক্ষ করছে।
মেয়েদের নাকি পঞ্চ-ইন্দ্রীয় আছে।দূর থেকে যদি কেউ তাকিয়ে থাকে তার দিকে তাহলে নাকি বুঝতে পারে সে।সত্যি সেটার বাস্তব প্রমাণ পেলাম নিজ থেকে।
—-সেই কখন থেকে দেখছি আপনি আমায় ফলো করছেন।কি ব্যাপার বলুন তোহ।(আমি)
—আমি যে আপনায় ফলো করছি সেটা আপনি বুঝলেন কি করে?আপনিও নিশ্চয়ই আমায় দূর থেকে আড়চোখে দেখছিলেন।
–মোটেও নাহ।আমি আপনার দিকে তাকিয়ে থাকবো কেনো?
–মোটেও হ্যাঁ।অবশ্য কিউট,হ্যান্ডসান,ডেসিং ছেলেদের দেখলে মেয়েরা এমনিতেই ফিদা হয়ে যায় তার ওপর যদি হয় আমার মতো।😊তাহলে তো কোনো কথাই নেই।(অচেনা ছেলেটি)
–যেই না চেহারা কুত্তায় দেয় পাহারা।আয়নায় কখনো নিজের এই বান্দর মার্কা চেহারা দেখেছেন?
হেয়ার স্ট্যাইল কি😖ইয়াকক আমার তো দেখেই বমি পাচ্ছে।
😰
কলাগাছের হনুমান,লাল কুমির একটা নাক টা দেখেছেন?মনে হচ্ছে যেনো হাতির নাক।একটা কাজ করতে পারেন প্রতিদিন এভাবে,(নাকে হাত দিয়ে নাকের ডগায় হাতের তালু উচা করে)করলে ও করতে পারেন।
–জ্বি আচ্ছা!! অবশ্যই মনে থাকবে।
–চশমা তো কানারাও পড়ে আপনি কি কানা?
–কানা না।আবার ভাব করেও নেই যে এমন তা না।
–হু,বুঝলাম।
—হ্যালো! আমি ইহান।
–হোয়াট?হ্যালো?আমি কি আপনার পূর্ব পরিচিত বা আপন কেউ?হ্যালো বলে সম্বধন করে তাদেরই যারা আপনার কাছের কেউ।
–জানতাম না তোহ।
–এখন তো জানলেন।
–হু,সরি।(কানে হাত দিয়ে)
–ইট’স অকে।ইট’স অকে।কোনো ব্যাপার না।(একটু হেসে)
–নাইস স্মাইল।
–কিছু বললেন?
–কই না তোহ।
–না বললেই ভালো।
দূর থেকে বোঝা যাচ্ছে এক জোড়া চোখ আমার দিকে তাকিয়ে রাগে ফুসছে।
খেয়াল করলাম ব্যাটা শুভ্র আমার দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে আছে।কিন্তু কেনো বুঝতেছি না।
রাগলে আমার কি হুহহহহ।আমি কারো রাগের ধার ধারি নাকি।
আমার তো বেশ ভালই লাগছে ইহান নামের এই জোকার ছেলেটা কে।কে না চায়! সব মেয়েরাই চাইবে সুন্দর,হ্যান্ডসাম ছেলেদের এটেনশন।আমিই বা তার ব্যতিক্রম হবো কেনো।
যেখানে আমার সব বান্ধবী রা ৩-৪ বছর করে রিলেশন করে বিয়ের পিড়িতে বসছে আর আমি সেখানে এখনো সিঙ্গেল।
এই দুঃখ আমি কই রাখুম😰আল্লাহ তুমি মাটি ফাঁক করো আমি ঢুকে যাই।
আজ যদি বফ থাকতো তাহলে কি আর একা একা ঘুরতে হতো?😰কপাল সবই আমার এই ভাঙ্গা কপালের দোষ।
লাইফে কম প্রোপজাল পাইনি।কিন্তু একটাও মনের মতো হয়নি বলে আজোও প্রেম করতে পারলাম না একটা।
তবে এবার ভেবে নিয়েছি যেই প্রথম প্রপোজ করবে তাকেই এক্সেপট করবো।দেন জমিয়ে প্রেম করবো।সবাইকে দেখিয়ে বেড়াবো,হুহহহহহ।
,
আম্মা কল দিচ্ছে বারবার।আম্মা এরকমই আমি বাইরে গেলেি বারবার কল দিয়ে খোজ খবর নিতে থাকবে।আসলে বাবা নেই আর বড় মেয়েতো।তাই একটু সবার আদরের নয়ন মনি।কল কেটে দিচ্ছি তারপরেও দিয়েই যাচ্ছে। মেজাজ টা গরম হয়ে যাচ্ছে।এতবার কেউ কল দেয় নাকি ফাউ।কি দরকার ফালতু বকবক করার?বুঝিনা কিছু এসব আদিখ্যেতা।একটু পর পর কল দিয়ে বলবে বাবু কি করিস?
খেয়েছিস কিছু?বাইরের খাবার খাস না তুই অসুস্থ হয়ে পড়বি।বেশিক্ষণ বাইরে ঘুরাঘুরি করিস না বাবু।শহরের অবস্থা ভালো না তুই তাড়াতাড়ি বাসায় চলে আসিস।
এত্ত সব প্যারা ভাল্লাগে আপনারাই বলুন?এসব নিয়ে মাঝেমাঝে ফ্রেন্ডস দের হাসির বলির পাঠা মনে হয় আমার।সেকেন্ডে সেকেন্ডে কল দেবে আর খোজ নেবে।
এর জন্য কম বকাবকি করি না তারপরেও আবার কল করবে আগের মতো।
একটু বেশিই ভালোবাসে তোহ।
কোথা থেকে যেনো শুভ্র এগিয়ে আসলো।
এসে-
তোমার ফোন কই?
–কেনো?এই তো আমার হাতেই তোহ
–কই দেখি তোহ
–এক্সকিউজ মি!!আমার ফোন আমি আপনাকে দিতে যাব কেনো বলুন তো?
–এই মেয়ে এত কথা বলো কেন?দিতে বলছি দাও(ধমক দিয়ে)
–এ,,,,ই নিিিনন(ধমক শুনে কাঁপা কাঁপা হাতে)
–কল লিস্ট চেক করে।ঋতুর সামনে ফোন ধরে,
এটা কি?মামনি কতবার কল দিয়েছে তোমায়?কি প্রবলেম টা কি?ফোন রিসিভ করতে যখন এতই প্যারা তাহলে ফোন ব্যবহার করতে যাও কেন?
–আমি ভাবছি এমনিই কল দিচ্ছে আম্মু তাই রিসিভ করিনি।আর ফোন সাই,,,,,,,,,,,,,,,,,
—নো এক্সকিউজ,আই টোল্ড ইউ না নো মোর এক্সকিউজ?
আন্সার মি ড্যামন👿
,
স,,সরিিিিিি স,,্যাররররর।আর এই ভুল হবে না।😰
–ইট’স অকে।মনে থাকে যেনো।
এখন চলো।
–কই যাব স্যার?
–জাহান্নামে😡
–কি বলেন কি স্যার?জাহান্নামে কেউ যায় নাকি?ঐখানে তো শুধু আগুন আর আগুন।😰
–হোয়াট ননসেন্স।
–জ্বি স্যার।
–ইডিয়ট একটা।
–জ্বি স্যার জানি।
–হোয়াট দ্যা
–জাহান্নাম,না মানে আপনি নাকি জাহান্নামে যাবেন বললেন? তো চলুন
–হোয়াট দ্যা হেল
–হুররর,,সেই জাহান্নামেই তো যাব বলছি তো চলুন নাহ
—ইডিয়ট ওটা জাহান্নাম না হাসপাতাল
–কিহহহহহহ!!হাসপাতালে কেনো?কার কি হয়েছে?
–প্রিয়া কে হাসপাতালে এডমিট করা হয়েছে নাকি শুনলাম।
–প্রিয়া কে মানে?ওর কি হয়েছে?
প্রিয়া হলো ঋতুর ছোট ফুফুর মেয়ে।ওর জন্মের ১মাস পরেই ওর বাবা মারা যায়।আর মা থেকেও না থাকার মতোই।
ছোট থেকেই আমাদের কাছে বড় হয়েছে।সব সময় নিজের বোনের মতোই ভালোবেসে গেছি।
পড়াশুনা করলো না।সবাই মিলে একটা সু পাত্রের হাতে কন্যা দান করলো।ওর বয়স টা খুব বেশি হলে ১৩ বছর ৬ মাস।
খুব অবাক হচ্ছেন তাই না?এত ছোট বয়সে বিয়ে হয়েছে শুনে।
অবাক হওয়ার মতোই কথা।একে তো বাবা মা নেই,এতিম।যদিও আমরা এতদূর লালন পালন করেছি তবুও ওর লাইফের ডিসিশন নেয়ার অধিকার আমাদের নেই।
সবার মতামতেই অল্প বয়সে বাল্য বিবাহের মতো একটা অপরাধের বলির পাঠা হতে হয় ওকে।তাদের কথা;
একেতো গ্রামের মেয়ে।তারপরে এতিম।আবার পড়াশুনাও জানে না।চেহারা টাও তেমন উজ্জল যে তা না।
এখন বিয়ে না দিলে তখন বয়স বেশি হলে বিয়ে দিতে গেলে সমস্যা হবে।
যে বয়সে ওর বই হাতে স্কুলে যাবার কথা সেই বয়সে ও স্বামী সংসার সামলাতে ব্যস্ত।যার এখনো সংসার,স্বামী সম্পর্কে কোনো ধারণাই নেই আর আজ তাকে সব কিছু সইতে হচ্ছে।
,
কিচ্ছু করার নেই।মেয়েদের একবার বিয়ে হয়ে গেলে আর বাপের বাড়িতে কোনো দাম থাকে না।থাকে না অধিকার।
আর ও তো এতিম।
যেখানে আমি পড়াশুনা করছি আর সেখানে ওর মতো তেরোষি বয়সী বাচ্চাকাচ্চার মা হতে যাচ্ছে।
বিষয়টা সত্যিই হাস্যকর বটে।
পাবনা সদর হাসপাতালের গাইনি বিভাগের বারান্দায় জীর্ণ শীর্ণ হয়ে শুয়ে আছে পাগলি টা।
দেখেই চোখ দিয়ে ঝরঝর করে পানি পড়ছে।
কে বলবে এই মেয়েটাই দুদিন আগেও আমাদের বাসায় গিয়ে মাতিয়ে রেখেছিল ওর পাগলামি তে।
ওর পেটের তিন মাসের বাচ্চা টা নষ্ট হয়ে গেছে অর্থাৎ মিসক্যারিয়েজ হয়েছে।হাসপাতালে ঢুকে সমস্ত গাইনি ওয়ার্ড ঘুরে দেখলাম প্রায় অধিকাংশ রোগী আসছে মিসক্যারিয়েজ এর।
অল্প বয়সে বিয়ে দিয়েছে।যারা নিজেই এখনো বাচ্চা তারা অন্য আর একটা বাচ্চার যত্ন নেবে কি করে?তার ভাল দেখবে কিভাবে?
প্রচুর পরিমাণে ব্লিডিং হচ্ছে।কিছু কিছু রোগীরা অতিরিক্ত ব্লিডিং আর শরীর দূর্বলতার কারণে উঠে দাড়াতেই পারছে না।গলা কাটা মুরগির মতো ছটফট করছে বেডে শুয়ে।
একটা বাচ্চা হওয়ার সময় না যে কষ্ট হয় তার থেকে বেশি কষ্ট হয় বাচ্চা নষ্ট হয়ে গেলে।
খুব রাগ হলো আমার ফ্যামিলির ওপর।ফ্যামিলির মানুষদের ওপর ঘৃণায় তাকাতে ইচ্ছে করছে না।নিজের মেয়ে হলে কি এরা পারতো এমন টা করতে?১৩ বছর যখন কষ্ট করে পালতে পারছে আর ৬ টা বছর কি একটু কষ্ট করতে পারতো না?
বাংলাদেশে মেয়েদের বিয়ের বয়স ১৮ বছর।এর নিচে হলে সেটা বাল্যবিবাহ।আর বাল্যবিবাহ এর উপরে সরকার জোরদার আইন পালন করছে তারপরে ও এমন হচ্ছে।
পরিণত বয়সে বিয়ে হলে আর আজ এই মরণ যন্ত্রণায় হাসপাতালের বেডে শুয়ে কাতরাতে হতো না।
,
দুদিন পরে সুস্থ হলে হাসপাতাল থেকে রিলিজ নিয়ে বাসায় চলে এলাম।
এর মধ্যে নুপুরের বিয়ে হয়ে ফিরনী ও চলে গেছে।সেদিন ফোন পেয়ে বিয়ের আসর থেকেই চলে আসতে হয়েছিল আমার।ওর বিয়ে পড়ানোর সময় আর দেখার সৌভাগ্য হয়নি।অবশ্য ভিডিও কলে কথা বলেছিলাম তার পরেও ভিডিও কলে কথা বলা আর সামনাসামনি কথা বলা এক হলো নাকি?
অনেক কান্নাকাটি করছিল নীল জিজুদের বাসায় যাওয়ার সময়।
.
.
.#Accounting_Teacher(season2)
#___Part___10
#Written_by_Ritu_Rosni
.
.
প্রিয়া এখন মোটামুটি সুস্থ।ওর শশুর বাড়ি থেকে নিতে এসেছিল তবে আম্মা কিছুতেই যেতে দিবে না।
তার মতে ওর নিজেকে গুছিয়ে নেয়ার জন্য কিছুটা সময়ের প্রয়োজন। এতবড় ঝড় বয়ে গেলো ওর জীবনে।এখন রেস্টে থাকা প্রয়োজন।যাওয়ার হলে যাবে তার জন্য সময়ের প্রয়োজন।
এর মাঝে নুপু একদিন নীলের সাথে করে আমাদের বাসায় এসে দেখা করে গেছে।
দেখতে দেখতে কেটে গেলো কয়েক্টা দিন।
.
সারাদিন ক্লাস,কোচিং নিয়ে এত্ত বিজি থাকি যে দম ফেলাবার সময় টুকু দেয় না ঐ ব্যাটা কুভ্র।
তবে আমিও নাছোড়বান্দা! সারাদিন ওর পেছনে কাঁঠালের আঠার মতো লেগে থাকি।সারাক্ষণ শয়তানি করি শোভা কে সাথে নিয়ে।আমার দল টাই বেশি ভারী।
আঙ্কেল,সোনা মা, শোভা আমার দলে আর আমার আম্মার কথা কি বলবো।মাঝেমাঝে মনে হয় আমার নিজের মা তো নাকি। নাহলে কিভাবে মেয়েকে সাপোর্ট না করে ডেভিল টার পক্ষ নেয়।
কখনো গাড়ির চাকা ফুটো করে,কখনো বা খাবারে কিছু গন্ডগোল করি আবার একেক সময় একেক রকম ফন্দী আটি।কিন্তু তাতে কোনো লাভই হয় না।
কেনো জানি আমার সব প্ল্যানিং ভুন্ডুল করে আমায় ফাসিয়ে দিয়ে চলে যায় গোমরামুখো টা।
এতো নিপুণ ভাবে প্ল্যানিং করি তারপরেও বুঝে ফেলে কিভাবে মাথায় ঢোকে না আমার।
তবে আমিও হাল ছাড়ার পাত্রি নই।সময় আমারো একদিন আসবে আর সেদিনই সব উশুল করে নেবো।
.
ইদানিং অভি ভাইয়া টা ঘনঘন আসা ধরেছে আমাদের বাসায়।
যাকে ফোনের পর ফোন করে ও আনা যায় না সে এখন প্রতিদিন আসে ব্যাপারটায় কেমন জানি রহস্যের গন্ধ পাচ্ছি।
আর একটা ব্যাপার লক্ষ করেছি অভি ভাইয়া আসার কিছুক্ষণ পরই শোভা ও আসে।
ব্যাপার টা কেমন জানি আমার সুবিধার ঠেকছে না।ডাল মে কুছ কালা হে।
আমি যে কিছু আন্দাজ করতে পারছি তা ওদের কিছুতেই বুঝতে দেওয়া যাবে না।
সময় মতো বোম ব্লাস্ট করবো।😊
,
শোভা!চল ঘুরতে যাই।
—–
—এই শোভা!!শুনছিস?
–উউ,,,কিছু বলছো আপি?
–হুম,সেই কখন থেকে ডাকছি।
–ওহহ!শুনতে পাইনি।বলো কি বলবে?
–তা শুনতে পাবি কি করে?মন এখানে থাকলে তো শুনবি।
–হুমম,,,,এ্যাাাাহহহহ কি বলছো?
–হুম ঠিকই বলছি।
আচ্ছা বাদ দে অভি ভাইয়া কে আসতে বল ঘুরতে যাবো।
–তোমার ভাই তুমি বলো।আমায় বলছো কেনো?
–ন্যাকা,যেনো কিছুই বোঝে না।ঢং বাদ দিয়ে বলেন।
“এই শোন তুই যে স্কুলে পড়তিস না সেই স্কুলের প্রিন্সিপাল আমি।”
সো আমার সাথে একদম চালাকি করার চেষ্টা করবি না।
–আপিিিিিিিিিিিি,,কান্না করে দেবো কিন্তু।
কি বলছো এসব?
—এই তোকে বললাম না আমার সাথে ঢং করবি নাহ।
–অকে করবো না।
–হুমম,গুড গার্ল।এবার সত্য করে বল তো বাছা এসব চলছে কবে থেকে?
—কোন সব আপি?ক্লিয়ার করে বলবা কি?
–সত্যি সত্যি বলবি নাকি সোনা’মা কে গিয়ে বলতে হবে?
—এই না নাাা আপিি।তুমি আমার লহ্মি আপি না।
এমন করতে পারো না তুমি।
–শোনো এসব হাওয়ায় কাজ হবে না।কবে থেকে চলছে এসব আমায় বলো তাড়াতাড়ি।
–তোমার ভাইয়ের থেকেই শুনে নিও।
–গুড আইডিয়া।তুই রেডি হয়ে আয়। আর শোন তোর কিছু বলার প্রয়োজন নেই ভাইয়া কে।
যা বলার আমিই বলবো নে।
—আচ্ছা আপি।আমি গেলাম।
–যাহ।
আহাাাা!!কি যে শান্তি লাগছে।চোর দুটো ধরতে পেরে।তবে ঐ টাকে একটু ধোলাই দেওয়া উচিৎ।
আগে আসুক তারপর বুঝবে মজা কত ধানে কত গম😂
.
গোসল করে তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নিলাম।অভি ভাইয়া ফোন করছিল চলে এসেছে প্রায়।
নিচে অপেক্ষা করতে বলছে।
আমার আটা ময়দা মাখতে একটু লেট হচ্ছে।
মনে হচ্ছে বফের সাথে ডেটে যাচ্ছি সেরাম ফিলিং মনে।
শোভা মুখ গোমরা করে এসে সোফায় বসে পড়লো।
বেচারির মুখ টা দেখে পেট ফেপে হাসি বেরিয়ে আসতে চাইছে তবে অনেক কষ্টে সেটাকে আটকে রেখেছি।
–কিরেেে!!তুই রেডি?
–হুমম।
–মন খারাপ?নাকি পেট খারাপ?
–কোনো টাই না আপি।তোমার দেরি থাকলে বলো আমি রুমে যাই।
–কেনো এটা কি রুম না?
–না কে বলছে?
—তোর কি হইছে বলতো সত্যি করে?
—কই কি হইছে?
—কই কিছু না তো আপি।
–তাহলে মুখ টাকে এমন করে রেখেছিস কেনো?
–কই?
–কই তো পুকুরে থাকে।আমার হয়ে গেছে চল নিচে যাই।
অনেকক্ষণ ধরে নিচে ভাইয়া অপেক্ষা করছে।
,
—তাই তো বলি ময়দার এতো দাম কেনো?
তা কয় কেজি ময়দা মেখেছিস মুখে?
–দোকানের সব ময়দা মেখে এসেছি। তোমার কোনো সমস্যা?
–আমার আর সমস্যা হবে কেনো?তা কোথায় যাবি বল।
–উম!!
আপাত খাইতে চলো বনলতায়।খুব ক্ষিদা লাগছে। তারপরে ভাবা যাবে।
–যো আপকা হুকুম।
খাওয়া দাওয়া করে হাটতে লাগলাম। উদ্দেশ্য স্টেশনের দিকে।
গাড়ি নিয়ে আসলেও আমার কথায় পার্কিং করে এসেছে।
সব সময় আর গাড়িতে চড়ে ঘুরতে ভালো লাগে নাকি।
রিক্সায় চড়ে ঘোরার মজাই আলাদা।
এতসময় শোভা একটা কথাও বলেনি।চুপচাপ আছে।
চোখে মুখে স্পষ্টতর ভয়ের ছাপ দেখা যাচ্ছে। হয়তো ভাবছে আমি যদি সবাই কে বলে দেই।
বিকেল টাইমে এখানে সকল শ্রেণির মানুষদেরই প্রায় দেখা যায়।
বিশেষ করে কাপল রাই তাদের সুন্দর কিছু মুহূর্ত কে স্মৃতির পাতায় বন্দি করছে।
,
ওদের দুজনকে একটু স্পেস দেওয়ার জন্য একটু দূরে চলে এলাম।
নিজেকে কেমন জানি কাবাবে হাড্ডি মনে হচ্ছিল।
এদিকে আমার জন্য আমার বন্ধুরা সবাই অপেক্ষা করছিল।
ওদের কে আগেই কল করে লোকেশন টা দিয়েছিলাম।
ছোট বোন হিসেবে তো আমার একটা দায়িত্ব আছে।
তবে সামনে অনেক বড় একটা দায়িত্ব আছে সেটা কে আমায় পালন করতেই হবে।
অভি ভাইয়ার ফোনে ছোট্ট করে একটা টেক্সট করে দিলাম
“এই যে আমার ভাবি কে স-সম্মানে বাসায় পৌছে দিয়ে আসবেন সন্ধ্যার আগেই।
আমার থেকে লুকানোর জন্য অনেক বড় শাস্তি পেতে হবে এবং তার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করো।”
অনেক মজা করেছি আজকে।
সারাদিনের ক্লান্তিতে বিছানায় গা টা ছেড়ে দেয়ার সাথে সাথেই গভীর ঘুমে তলিয়ে গেলাম।
ভোর হলেই আবার শুরু হবে আমার সেই রুটিনবাঁধা জীবন।
,
এভাবে কেটে গেছে এর মাঝে কিছুদিন।
আমার ১ম বর্ষের ফাইনাল পরিক্ষার আর কয়েক্টা দিন বাকি আছে।যার কারণে পড়াশুনায় নিজেকে নিয়ে খুব ব্যস্ত সময় পার করছি।
আগের মতো আর আড্ডা দেয়া হয় না।আসলে পড়াশুনার এত্ত চাপ যে মনে হয় কদিন পরে আমায় হেমায়েতপুরে এডমিট করাতে হবে।
ফিন্যান্স,হিসাব বিজ্ঞান, ব্যস্টিক অর্থনীতির কিছুই পারি না মনে হচ্ছে এখন।😰সারাজীবন ফাঁকি দিয়ে এসে এখন ফেঁসেছি মাইন্ক্যার চিপায়।
আম্মা বলেছে ফার্স্ট ক্লাস না পেলে রিক্সাওয়ালার সাথে বিয়ে দিয়ে দিবে।😰
আমার মনে হচ্ছে ৬ টা সাবজেক্টেই ইনপ্রুভ দিতে হবে।কি এক্টাবস্থা আমার।
এতদিন ফাঁকি দিলেও ভয়ে ভয়ে বই নিয়ে পড়তে বসি।কি পড়ি সব তো মাথার উপর দিয়ে চলে যায়।
এর মধ্যে একবারো স্যারের বাড়িতে যাইনি।
,
সন্ধ্যায় পড়তে বসেছি আর সে সময় শোভা এসে জড়িয়ে ধরে কান্না করছে।
–কি করে পাগলি কি হলো?হঠাৎ এমন জড়িয়ে ধরে কান্না করছিস?
–আপিিিি
–হুমম!!কি হলো?কাহিনী টা কি?
–আপি আজকে অভির আম্মা এসেছিল আমাদের বাসায় বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে।
–ওহহ ভালো তো।
–বাবা মা। রাজি হয়েছে।
–ওহহ এই ব্যাপার।তো কান্নাকাটি করার কি আছে?
–আমি জানি আপু এই সব কিছু সম্ভব হয়েছে তোমার জন্য।
তুমি না থাকলে হয়তো এসব সম্ভব হতো না।
–হয়েছে হয়েছে এতো সেন্টিমেন্টাল হতে হবে না।বিয়ের পর কিন্তু আমি তোকে অনেক জ্বালাবো আফটার অল আমি ননদ বলে কথা।
আমার ভাইগত অধিকার এটা।😂
–অকে তোমার ইচ্ছা।
অভি ভাইয়া ও এসে দেখা করে গেছে।বিয়ের ডেট টা পিছিয়ে দেয়া হয়েছে আমার এক্সামের কারণে।
,
আপনারা হয়তো ভাবছেন এতকিছু হলো কখন?
অকে তাহলে শুনুন বলছি।
সেদিন মানে যেদিন ওদের ঘুরতে নিয়ে গেছিলাম সেদিনই আমি আমার মণির কাছে গিয়েছিলাম মানে অভি ভাইয়ার মায়ের কাছে।
—মনি মা কেমন আছো?
–এই তো আমার কথা বাদ দে।তোর কি অবস্থা বল?
–এখন তো আসা বাদই দিয়েছিস।তা পথ ভুল করে চলে আসিস তো নি?
—না গো।একদম কারেক্ট পথেই এসেছি। খুব ক্ষিদা লেগেছে তাড়াতাড়ি কিছু নিয়ে এসো তো যাও।
–তুই বস আমি আসছি।
—ঐঐঐঐ আপনারা আবার ভাইবেন না যে আমি খাদক আসলে আমার মুখে একটু রুচি বেশি তো তাই আর কি।
–ওয়াওওওওও!!সরষে ইলিশ,কালো জিরা বাটা,ডালের বড়া,আর সাথে তো মনি মায়ের স্পেশাল পায়েস।
দেখেই জীভে জ্বল এসে যাচ্ছে।
মনি মাাাাা এসব কি সব আমার?
–হ্যাঁ সব তোর।কেউ ছিনিয়ে নেবে না।আস্তে আস্তে খা।
–হুমমম খাবোই তো।
আচ্ছা মনি মা।তোমার বয়স তো আর কম হলো না।তোমার ঐ বুড়ো ব্যাটারে বিয়া দিলেও তো পারো।তহন পায়ের উপর পা তুলে খাইতে পারবা।
—কথা টা কিন্তু মন্দ বলিস নি।কিন্তু তেমন মেয়ে পাবো কই বল?
–কেনো?আমি আছি না।আমার উপর ওসব ছেড়ে দাও।
–কেন তুই কি ঘটকালী শুরু করলি নাকি?
–ওই একটু আধটু আরকি।মনি মাকে সব বললাম (মানে ওদের দুজনের বিষয়ে)
মনি মা আমার কোনো কথাই ফেলে না।আমায় নিজের মেয়ের মতোই ভালোবাসে।
মনি মার সাথে প্লান করে স্যারের বাসায় প্রস্তাব পাঠালাম তবে ওদের রিলেশনের বিষয়টা গোপন রেখে।কারণ যদি মেনে না নেয়।
স্যারের বাসা থেকে পজিটিভ আনসার আসে।নেগেটিভ আসার মতো কোনো কারণ ই নেই অভি ভাইয়ার মধ্যে।
আমার অভি ভাইয়া লাখে নয় কোটিতে এক পিছই।
খুব ভালো লাগছে যে ওদের দুজনকে মেনে নিয়েছে সবাই।
,
১ তারিখ থেকে আমার এক্সাম শুরু হয়েছে।গতকালকে সীট দেখাতে নিয়ে গেছিল শুভ্র স্যার।
আমাদের বুলবুল কলেজের সীট পড়েছে এডওয়ার্ড কলেজে আর ওদের সীট পড়ছে আমাদের কলেজে।
আমার সীট পড়ছে এডওয়ার্ডের ০২ নং মিলনায়তনে।ফ্রেন্ডসারর্কেল এর সবারই সীট এলোমেলো ভাবে পড়ছে।
নিশ্চয়ই স্যার রা এমন করছে।সবাই একসাথে বসতে পারলে কতো ভালো হতো।নুপু বসছে সেই ০৪ নং এ।
এত ভেবে এখন লাভ নেই।প্রথমে স্বাধীন বাংলাদেশের অভূদ্যয়ের ইতিহাস পরিক্ষা।
প্রিপারেশন মোটামুটিভাবে ভালো।তারপরেও ভয় করছে একটু।আমি একাই যেতে চেয়েছিলাম কিন্তু তা আর হলো কই?স্যার কে আমার সাথে পাঠিয়ে দিয়েছে আম্মা।
পরিক্ষার টেনশনে খেয়ে আসি নি।গাড়ির ভেতরে বই রিভিশন দিচ্ছি।
একটা কেক মুখের সামনে ধরে,,মামনি বললো খেয়ে আসো নি।তাড়াতাড়ি এটা শেষ করে নাও চার ঘন্টা এক্সাম দিতে দিতে ক্ষুধা লেগে যাবে।
–আমি এখন খাবো না।ক্ষুধা নেই আমার।
–আমি খেয়ে নিতে বলছি সো চুপচাপ খেয়ে নাও।
–কিছু বলতে চেয়েও বললাম না কারণ বলে লাভ নেই।
চুপচাপ খেয়ে নিলাম।
কলেজে চলে আসছি গাড়ি থেকে নামার সময় ডাক দিলো আবার।
–এদিকে এসো।
–কি হইছে বলুন।
–তোমার মুখে
আমার মুখে কি?বলে হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে আরো ছড়িয়ে ছিটিয়ে দিলাম মুখে লেগে থাকা খাবার।
—টিস্যু দিয়ে মুছে দিলাম ওর মুখে লেগে থাকা খাবার টুকো।
শোনো!!একদম তাড়াহুড়া করবে না লেখার সময়।রোল রেজিস্ট্রেশন নম্বর ভালো করে দেখে তুলবে।
কোনো কিছু না বুঝলে স্যার কে আস্ক করবে।নিজে পন্ডিত গীরি করবা না।আর এক্সাম শেষ হলে এখানেই দাড়িয়ে থাকবে আমি না আসা পর্যন্ত।
–হু।
শুভ্রের ডিউটি থাকায় সে থাকতে পারবে না চাইলেও।
,
দুই পাশে ব্যবস্থাপণা আর মাঝখানে হিসাব বিজ্ঞান ডিপার্টমেন্ট দের সীট ফেলছে।
দুই পাশে অন্য কলেজে বেড়া আর চাটমোহর কলেজের স্টুডেন্ট দের সীট পড়ছে।
ভয়ে হাত পা কাপাঁকাপিঁ শুরু করছে।০৪ টা রুম একত্রে একটা মিলনায়তন রুম।যেখানে কয়েকশ স্টুডেন্ট আর প্রায় ২০ জনের মতো টিচার্স।
এতলোক এক সঙ্গে দেখে নার্ভাস হওয়ারই কথা।টিচার্স দের মাঝে একজনকে দেখে একটু হলেও ভয় কেটে গেলো ঋতুর।
.
.
To be Continue