টুয়েন্টি মিনিটস (চ্যাপ্টার-০৩),০৫,০৬
লেখা: ShoheL Rana
পর্ব:-০৫
একটা ট্যাক্সি নিয়েই শ্রীপুরে আসে রিহান প্রথমে। ওখান থেকে পরে একটা গরুর গাড়িতে করে ফাউগান গ্রামে আসে। সবুজে ঘেরা একটা গ্রাম। চারপাশে ধানক্ষেত। কাঁচা-সড়কের উপর দিয়ে ঘোড়ার গাড়িটি ছুটে চলেছে। গুটিগুটি বৃষ্টি পড়ছে। রিহান তার ব্যাগটা কোলে নিয়ে পা নামিয়ে বসেছিল। বৃষ্টির কারণে পা দুইটা তুলে বসলো উপরে। আরও কিছুদূর গেলে একটা লোককে দেখা গেল ছাতা মাথায় হেঁটে যেতে। রিহান গাড়োয়ানকে গাড়ি থামাতে বললো। গরুর গাড়িটা থামলে, রিহান ছাতা মাথায় লোকটাকে ডাকলো। তারপর জিজ্ঞেস করলো, ‘ভাই, এটা কি ফাউগান গ্রাম?’
‘জি, এটা ফাউগান গ্রাম।’ বলেই রিহানের আপাদমস্তক একবার দেখে নিলো লোকটা। রিহান পুনরায় জিজ্ঞেস করলো, ‘এখানে সুফিয়া নামে কাউকে চিনেন? তার ২০ বছরের একটা ছেলে আছে, ইউসুফ নামে।’
‘উনাকে কে না চিনে এখানে? এই যে আশেপাশে জমি দেখছেন, সব উনার। উনার কাছে বর্গা নিয়ে চাষ করে কৃষকরা।’
‘আমাকে কি দয়া করে বলবেন উনার বাড়ি কোনটা?’
‘এসেই তো পড়েছেন উনার বাড়ির সামনে। ওই যে, বিল্ডিং দেখছেন ওটাই উনার বাড়ি।’
‘অনেক ধন্যবাদ ভাই।’ কৃতজ্ঞতা জানালো রিহান। লোকটা চলে গেল। বৃষ্টি আরও বেড়ে গেল তখন। রিহান গাড়োয়ানের উদ্দেশ্যে বললো, ‘ওই সামনের গেইটটার পাশে নামিয়ে দিন আমাকে। সাথে ছাতা নেই।’
গাড়োয়ান রিহানকে গেইটের সামনে নামিয়ে দিলে রিহান ভাড়াটা দিয়ে, ব্যাগটা বুকের সাথে চেপে ধরে কয়েক লাফে গেইটের কাছে গিয়ে দাঁড়ালো। কয়েকবার গেইটে টোকা দিলো সে। কেউ গেইট খুললো না। হয়তো বৃষ্টির কারণে তার সংকেতটা কারও কান পর্যন্ত পৌঁছেনি। একজন লোককে দেখা গেল ভেতরে প্রাসাদ বাড়িটার বারান্দায়। গেইট থেকে খানিক দূরে হওয়ায় ডাক দিলেও শুনবে না। তাই ইশারায় লোকটার দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টা করলো সে। কিন্তু লোকটা কিছুতেই এদিকে তাকাচ্ছে না। আরও কয়েকবার গেইটে জোরে টোকা দিলো সে। জানে, শব্দটা লোকটার কানে পৌঁছাবে না, তবুও বৃথা চেষ্টা করলো। পরে লোকটার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে না পেরে রিহান ওখানেই দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে লাগলো।
একটানা ঘণ্টাখানেক পথঘাট ডুবিয়ে তারপর থামলো বৃষ্টি। গেইটের নিচে বৃষ্টি না পড়ার মতো জায়গায় দাঁড়ালেও বৃষ্টির ছিটকা লেগে রিহানের প্যান্টের নিচটা অনেকটা ভিজে গেছে। রিহান একহাতে তার ব্যাগটা শক্ত করে ধরে, আরেকহাতে নিচু হয়ে পরনের প্যান্টটা ঝাড়তে লাগলো। সেইসময় গেইটের দরজাটা খুলে গেল। রিহান সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে ঘুরে দেখলো সেই লোকটা, যাকে সে এতক্ষণ ইশারায় দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টা করেছে। লোকটা সরাসরি রিহানের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলো, ‘হে ভাই, কে আপ্নে? অনেকক্ষণ ধইরা দ্যাখতাছি এইহানে দাঁড়াইয়া উঁকিঝুঁকি মারতাছেন?’
রিহানের ভারি রাগ হলো। তারমানে লোকটা তার ইশারাগুলো দেখেও এল না। তাকে এতক্ষণ এখানে অপেক্ষা করিয়েছে। ‘ও আচ্ছা, আপনি দেখেছেন আমি এতক্ষণ ধরে এখানে দাঁড়িয়ে আছি?’
‘দ্যাখার লাইগা তো আল্লাহ মোরে দুখানা চক্ষু দিছে, তাই না?’
‘তা তো দিছেই৷ কিন্তু আল্লাহ আপনাকে বিবেক জিনিসটা মনে হয় দেয়নি। কোথায় একটা লোক এখানে এতক্ষণ ধরে দাঁড়িয়ে আছে, বৃষ্টির ছিটকা এসে ভিজিয়ে দিচ্ছে, সেই লোকটাকে আপনি সাহায্য করবেন তা না, লোকটা ইশারা করে ডাকছে দেখেও পাত্তা দেননি। আমি যে আপনাকে ইশারা করে ডেকেছি, দেখেননি আপনি?’
‘কী চান কন? ম্যাডাম নাই বাসায়। আজ দেখা হইবো না।’
‘নাই মানে? কোথায় গেছে? কবে ফিরবে?’
‘কবে ফিরবো তা দিয়ে কী করবেন? কাইল আইসেন যান।’
‘আমি কে তা জানেন তো?’
‘আপ্নে কোন প্রেসিডেন্ট? দেইখা তো মনে হইতাছে কোনো পাগল।’
‘হোয়াট, আমি পাগল!’ বিড়বিড় করে নিজের আপাদমস্তক দেখে নিলো রিহান। তারপর বললো, ‘আপনি পাগল মিয়া। দাঁড়ান, সুফিয়া আসুক, তারপর আপনার চাকরি নট করে দিবো। আপনি নিশ্চয়ই এ বাড়ির দারোয়ান?’
‘এ্যাহ, আইছে আমার প্রেসিডেন্ট সাহেব আমার চাকরি নট করতে। আমি এ বাড়ির বিশ্বস্ত লোক। বাড়ি পাহারা দিই, বাজার-সদাই করি। আপ্নে কোথা থেইকা আইসা আমার চাকরি নট করবেন। আর মিয়া, আপ্নে তো ভারি দুষ্টু লোক! আমাগো ম্যাডামের নাম মুখে নিছেন। ম্যাডাম কই আমরা উনাকে।’
‘আপনার ম্যাডাম সে, আর আমার কে জানেন?’
‘কে?’
‘আমার বিবাহিত স্ত্রী।’
রিহানের আপাদমস্তক দেখে নিলো গার্ডটা। তারপর রিহানকে আলতো করে ধাক্কা দিয়ে বললো, ‘যান তো মিয়া, যত্তসব পাগল লোক এসে হাজির হয়।’ বলতে বলতে গেইটের দরজা আবারও বন্ধ করে দিলো গার্ড। রিহান গেইটে বাড়ি মারতে মারতে বললো, ‘এই, সত্যি সত্যি তোমার চাকরি থাকবে না কিন্তু। সুফিয়া আসুক, তারপর তাকে বলবো আমি তোমার এই ব্যবহারের কথা।’
‘আরে পাগল, যা যা এখান থেকে।’ গার্ডের কণ্ঠটা দূরে সরতে লাগলো। রিহান আবারও অপেক্ষা করতে লাগলো গেইটের পাশে। দুপুর গড়িয়ে বিকেল হলো। একটা ঘোড়ার কোচগাড়ি এসে থামলো সামনে। ভেতর থেকে সেই গার্ডটা দৌড়ে এসে পুরো গেইটটা খুলে দিলো। কোচগাড়িটা ভেতরে প্রবেশ করলো রিহানকে পাশ কাটিয়ে। রিহান গাড়িতে সুফিয়াকে খুঁজলো। কিন্তু সুফিয়া নেই। একটা উনিশ-বিশ বছরের যুবককে দেখতে পেল সে গাড়ির পেছনের কৌচে বসা। সামনে বসা আরেকজন গাড়োয়ান। গাড়িটা যখন গেইট দিয়ে ঢুকলো, রিহানও সাথে সাথে ঢুকে পড়লো। তখন গার্ড এসে তার পথ অবরোধ করলো আবার। রিহান তাকে সামনে থেকে ঠেলে সরাতে সরাতে বললো, ‘এই সরো, আমাকে যেতে দাও। আমাকে ওই ছেলেটার সাথে কথা বলতে দাও। কে ও?’
‘ক্যান? তুমি জানো না উনি কেডা? ওইসময় তো কইছিলা, তুমি সুফিয়া ম্যাডামের স্বামী। তাহলে উনাকে চিনতে পারছো না কেন?’
‘ওই মিয়া, তোমার দেখি স্মৃতিও কম। ওইসময় আমি সুফিয়ার স্বামী বলিনি, বলেছি, সুফিয়া আমার স্ত্রী।’
গার্ডটা রেগে গিয়ে কিছুক্ষণ রিহানের মুখের দিকে চেয়ে রইলো। তারপর বললো, ‘ওই মিয়া, তুমি কি আমারে বলদ পাইছো, ম্যাডাম তোমার স্ত্রী হইলে, তুমি উনার স্বামী না?’
‘স্বামী তো। কিন্তু ওইসময় তো আমি নিজেকে ওর স্বামী বলে পরিচয় দিইনি, ওকে আমার স্ত্রী বলে পরিচয় দিয়েছি।’ ইচ্ছে করেই রিহান গার্ডকে রাগানোর চেষ্টা করছে। ব্যাটা এতক্ষণ ধরে গেইটের বাইরে অপেক্ষা করিয়েছে। গার্ডটা এবার শান্ত মেজাজে বললো, ‘ঠিক আছে বাপ, ম্যাডাম তোমার স্ত্রী। তাহলে আবার গাড়িতে উনি কে জিজ্ঞেস করছো কেন? উনাকে চিনো না?
‘ইউসুফ? ও কি ইউসুফ?’ রিহান যুবকটার দিকে এগোতে চাইলো। গার্ড তার কোমরটা শক্ত করে প্যাঁচিয়ে ধরে ঠেলে বাইরে নিয়ে যেতে যেতে বললো, ‘আবার স্যারের নাম মুখে নিস? উনাকে নাম ধরে ডাকার সাহস কোথায় পেলি? যা এখান থেকে।’ রিহানকে জোরে ধাক্কা দিলো গার্ড। রিহান নিচে পড়ে যেতে যেতে নিজেকে সামলালো। ইচ্ছে হলো এসে গার্ডের কান বরাবর দুইটা উসমানী থাপ্পড় লাগায়। পরে নিজেকে সামলালো সে। ইউসুফ তখন গাড়ি থেকে নেমে ঘটনাটা কয়েক মুহূর্ত পর্যবেক্ষণ করে গার্ডের উদ্দেশ্যে জিজ্ঞেস করলো, ‘কী হয়েছে রহিম ভাই? লোকটা কে? কী চায়?’
‘স্যার, লোকডা পাগল। আপ্নে ওর কথা হুইনেন না। ওর কথা হুনলে আপনার মাথা ঠিক থাকবো না।’
‘লোকটাকে আমার কাছে পাঠাও।’
‘স্যার, দরকার নাই তো। লোকডা খাঁটি পাগল একডা। আমি তাড়াচ্ছি ওরে।’ বলেই রিহানকে ধমক দিলো রহিম, ‘এই যা, যা, যা এখান থেকে।’ হাত দিয়ে ইশারা করে চলে যেতে বললো। পেছন থেকে ইউসুফ কড়া গলায় বললো, ‘রহিম ভাই, লোকটাকে আমার কাছে পাঠাতে বললাম না? আমার কাছে পাঠাও।’ বলেই ইউসুফ ভেতরে চলে যেতে লাগলো। রহিম এবার নরম কণ্ঠে রিহানকে বললো, ‘যাও, স্যার ডাকতাছে তোমারে।’
রিহান কড়া চোখে রহিমের দিকে একবার তাকিয়ে ভেতরে যেতে লাগলো। তার পাশাপাশি রহিমও হাঁটতে হাঁটতে সাবধান করে দিলো, ‘খবরদার! আমারে যেসব কইছ, ওসব স্যারের সামনে উচ্চারণ করবা না। স্যার তোমারে ওইহানেই গুলি কইরা দিবো। স্যার তার মা’রে খুব ভালোবাসে। মা’রে নিয়া উলডাপালডা কিচ্ছু সহ্য করবো না।’
রিহান রহিমকে হাত দিয়ে ঠেলে সরিয়ে বললো, ‘আমার জানের চিন্তা তোমাকে করতে হবে না।’
রহিম আর কিছু বললো না। নাক ছিটকিয়ে নিজের পথে চলে গেল। রিহান ধীরপায়ে ভেতরে প্রবেশ করলো। বারান্দায় একটা আরাম কেদারায় বসে আছে ইউসুফ। রিহানকে দেখে বললো, ‘বসুন এখানে।’ বসার আসন দেখিয়ে দিলো ইউসুফ। রিহান বসতে বসতে জিজ্ঞেস করলো, ‘তুমি ইউসুফ না?’
কয়েক মুহূর্ত কী যেন ভেবে ইউসুফ বললো, ‘হ্যাঁ, আমি ইউসুফ। আপনি কে? কেন এসেছেন? কী চান?’
‘আমি আমার পরিবারের কাছে এসেছি। আমার স্ত্রী সন্তানের কাছে?’
‘তাহলে এখানে কী? আপনার স্ত্রী সন্তানের কাছে যান?’
‘এখানেই তো আমার স্ত্রী সন্তান থাকে৷ তোমার মা কোথায়? সুফিয়া?’
মায়ের নাম মুখে নেয়ায় ইউসুফ কিছুটা রেগে গেল, ‘আপনার সাহস কী করে হয় আমার মায়ের নাম ধরে ডাকার?’
‘সেই অধিকার আমার আছে। সরাসরিই বলি তোমাকে কথাটা। হয়তো তোমার বিশ্বাস হবে না, অথবা আমার কথা শুনে থাকলে বিশ্বাস হতেও পারে। আমি কে জানো? আমি তোমার বাবা।’
‘বাবা!’ বিড়বিড় করলো ইউসুফ। কিন্তু রাগতে দেখা গেল না তাকে। অনেকক্ষণ কী যেন ভাবলো সে। তারপর বলে উঠলো, ‘হ্যাঁ, আমার বাবার সম্পর্কে শুনেছি আমি। তার সম্পর্কে সব জানি। কিন্তু, আপনি যে আমার বাবা সেটা কী করে বিশ্বাস করবো? আচ্ছা, বলুন তো- আমার নামে আরেকজন ব্যক্তি আছে, তিনি আপনার আত্মীয়, কে তিনি?’
‘আমার দাদা। আমার দাদার নামও ইউসুফ।’
‘হুমম…’ মাথা নেড়ে আবারও কয়েক মুহূর্ত ভাবনায় ডুবে গেল ইউসুফ। তারপর বললো, ‘এখনও পুরোপুরি বিশ্বাস করতে পারছি না। আপনি এখানে বসুন। অপেক্ষা করুন। খুব শীঘ্রই আমার মা এসে পৌঁছাবে।’
‘কোথায় গেছে সুফিয়া?’
‘জমি নিয়ে একটা সমস্যা হয়েছে। ওটা দেখতে গেছে। এখনই ফিরবে। আপনি বসুন।’ খুবই নম্র শুনালো ইউসুফের কণ্ঠ। তারও হয়তো তর সইছে না বাবাকে বুকে জড়িয়ে নিতে। কিন্তু তার আগে নিশ্চিত হতে হবে এটাই আসলে তার বাবা কি না। রিহানও তাকিয়ে আছে ইউসুফের দিকে। আবারও সে এভাবে ইউসুফকে দেখে আবেগ যেন ধরে রাখতে পারছে না। তার সময়ে গিয়ে তার নিজেরই ছেলে এই ইউসুফ, তার অফিসের বস হবে। রিহান নিজের ছেলেকে স্যার স্যার বলে ডাকবে, কোনো পরিচয় থাকবে না ছেলের সাথে। ইউসুফ কীভাবে মারা যাবে সেটা ভাবলো রিহান। তার চোখের সামনেই তো মারা যাবে। ইউসুফের মৃত্যুটা রিহানের জন্য অতীত হলেও, ইউসুফের নিজের জন্য এখনও ভবিষ্যত। তার মৃত্যুর সময় রিহান অনেক কষ্ট পেয়েছিল। এখন আবার ইউসুফের যুবসত্তার সাথে মিলিত হয়ে এক অন্যরকম অনুভূতি সৃষ্টি হলো রিহানের মনে। কোনোদিন সে ছেলেকে জড়িয়ে ধরতে পারেনি। এখন ইচ্ছে হচ্ছে ছেলেকে বুকে নিয়ে শক্ত করে জড়িয়ে ধরতে।
বাইরে শোরগোল শোনা গেল। ঘোড়ার ডাক আর রহিমের চিৎকার একসাথে ভেসে এলো। ইউসুফ উঠে দাঁড়িয়ে বললো, ‘মা এসেছে। আপনি বসুন। আমি মাকে নিয়ে আসছি।’ বলেই ইউসুফ বেরিয়ে গেল। রিহান অপেক্ষা করতে লাগলো ভেতরে। খানিকপর ওদের আসার শব্দ শোনা গেল। রিহানের হৃৎস্পন্দন বেড়ে গেল হঠাৎ। আবারও সে মুখোমুখি হতে যাচ্ছে সুফিয়ার সাথে। ওদের আওয়াজটা যত কাছে আসছে, রিহানের ভেতরটা ততবেশি ধকধক করছে। ভেতরে এল ওরা। ইউসুফ সুফিয়াকে চোখ বন্ধ করেই এনেছে। সুফিয়া বলে উঠলো, ‘এবার তো চোখ দুটো ছাড়, কী দেখাবি আমাকে।’
ইউসুফ বললো, ‘মনটা শক্ত করো মা, যা দেখবে, ওটা দেখার পর আমি তোমার প্রতিক্রিয়াটা দেখতে চাই।’
‘কী আছে? কী দেখাবি?’ হাত বাড়িয়ে কোনো কিছু ছুঁতে পারে কি না দেখলো সুফিয়া। ‘কই? চোখ ছাড়।’
‘ছাড়ছি। দেখো তো কে?’
ধীরে ধীরে চোখ খুললো সুফিয়া। সামনে রিহানকে দেখেই তার নিশ্বাস বেড়ে গেল। শরীরে সব শক্তি যেন তার উড়ে গেল নিমিষেই। নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করার শক্তিটুকুও হারিয়ে গেছে। টপটপ করে চোখ বেয়ে অশ্রু গড়াতে লাগলো। ধীরপায়ে এগিয়ে গেল রিহানের দিকে। রিহানও হাত বাড়ালো। সুফিয়া ঝাঁপিয়ে পড়লো তার বুকে। তারপর রিহানের কাঁধেই মাথাটা রেখে জ্ঞান হারিয়ে ফেললো।
[[চলবে…]]
টুয়েন্টি মিনিটস (চ্যাপ্টার-০৩)
লেখা: ShoheL Rana
পর্ব:-০৬
জ্ঞান ফেরার পর একটা কক্ষে আলাদাভাবে কথা বলতে দেয়া হলো রিহান ও সুফিয়াকে। বিছানায় শোয়া অবস্থায় ছিল সুফিয়া। পাশে বসা ছিল রিহান। জানালাটা খোলা ছিল। জানালা দিয়ে পড়ন্ত বিকেলের নরম আলো ঢুকছে। মেঘ কেটে গেছে অনেক আগেই। বাইরে থেকে দৃষ্টি ফিরিয়ে সুফিয়া শোয়া থেকে উঠে বসতে চাইলে, রিহান তার হাত ধরে বললো, ‘উঠতে হবে না, শুয়ে থাকো।’
‘নাহ্, শুয়ে থাকতে আর ভালো লাগছে না। বালিশে হেলান দিয়ে বসি।’ বলেই সুফিয়া বালিশটা পেছনে দিয়ে পা দুইটা টান করে বসলো। রিহান হাত দুইটা নিজের দু’হাতে ধরা অবস্থায় ছিল। ‘আরেকটু কাছে এসে বসো।’ রিহানের হাত ধরে টেনে বললো সুফিয়া।
রিহান সুফিয়ার সিনা বরাবর বসলো। সুফিয়া নিজেকে অনেকটা স্বাভাবিক করে নিয়েছে। তবে এখনও যেন সে বিশ্বাস করতে পারছে না, তার পাশে রিহান বসে আছে। রিহানের ডান হাতটা বুকের সাথে আলতো করে চেপে ধরে সে বললো, ‘আপনি কি সত্যি আমার পাশে বসে আছেন?’
‘এখনও বিশ্বাস হচ্ছে না বুঝি? এই যে আমি আমার স্পর্শ অনুভব করো।’
‘স্বপ্ন মনে হচ্ছে সব। আমি কি স্বপ্ন দেখছি? স্বপ্ন শেষে কি আপনি আবার চলে যাবেন আমাকে একা করে?’
‘স্বপ্ন না, আমি সত্যি সত্যি এসেছি। চার বছর…’ দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো রিহান। ‘প্রায় চারটা বছর আমি অপেক্ষা করেছি এই দিনটার জন্য।’
‘চার বছর?’ ভ্রু কুঁচকালো সুফিয়া।
‘হুমম, গতবার যখন আমি আমার বর্তমানে পৌঁছি, তারপর তোমাকে অনেক খুঁজি। তোমার দাদাবাড়িতে গিয়েছিলাম, ওখানে কেউ তোমার ঠিকানা জানে না।’
‘২০১৭ সালে?’
‘হুমম…’
‘তখন কেমনে জানবে? এতগুলো বছর পর? আজ দশ বছর ধরে আমরা শ্রীপুরে স্থায়ীভাবে থাকছি আমার দাদার মৃত্যুর পর থেকে। তারপর ওই বাড়ির কারও সাথে আর যোগাযোগ হয়নি, ওরাও যোগাযোগ করেনি কেউ। ২০১৭ সাল আসতে আসতে তো একেবারেই ভুলে যাবে। আর অত বছর কি বেঁচে থাকবো আমি?’
‘হ্যাঁ, তুমি তখনও বেঁচে থাকবে। তোমরা শ্রীপুর থেকে ঢাকায় চলে যাবে ২০১০ সালে। ঢাকায় বাড়ি করবে।’
‘কী বলেন? এত বছর বাঁচবো আমি? নিশ্চয়ই বুড়ি হয়ে যাবো৷ হাতে লাঠি ধরবো। কুঁজো হয়ে হাঁটবো?’ লজ্জামাখা হাসলো সুফিয়া।
‘না, তুমি তখনও শক্ত-সামর্থ্য থাকবে।’
‘আপনি আমাকে কীভাবে খুঁজে পাবেন তখন?’
‘আমি না, তুমিই আমাকে খুঁজে নেবে।’
‘সত্যি? দাঁড়ান…’ সুফিয়া বিছানা নামার চেষ্টা করলো।
‘কোথায় যাচ্ছ।’ প্রশ্ন করলো রিহান।
‘আসছি।’ বলেই সুফিয়া বেরিয়ে কোথায় যেন গেল। তারপর একটা কাগজ আর কলম এনে রিহানের হাতে দিয়ে বললো, ‘আপনার ঠিকানা লিখে দিন। আমি যত্ন করে রেখে দিবো কাগজটা।’
মৃদু হেসে রিহান কাগজটাতে ঠিকানা লিখলো। সুফিয়া জিজ্ঞেস করলো, ‘এখানেই আপনার জন্ম হয়েছে?’
‘না, জন্ম হয়েছে গফরগাঁওয়ে। ওখানে আমার দাদাবাড়ি।’
‘আমি তো চিনি, দাদা-বাড়িটা। আপনার জন্মের পর দেখতে যাবো৷ পিচ্চি বয়সে আমার বরকে দেখতে কেমন লাগে দেখবো। আদর করবো, গাল টানবো।’ বলতে বলতে ‘হিহিহি’ করে হেসে উঠলো সুফিয়া। রিহান মুগ্ধ হয়ে দেখলো, সেই আগের মতো হাসি৷ হাসিতে যেন তার ঝরনা ধারা বয়ে যায়। রিহান হাতের কাগজটা সুফিয়াকে দিয়ে বললো, ‘জন্মের পর তুমি আমাকে দেখতে যাও কি না জানো না, তবে আমার ৯ বছর বয়সে মানে ৯৭ সালে তোমার সাথে আমার একবার দেখা হবে। সেই সময় তুমি আমাকে চিনবে, কিন্তু আমি চিনবো না। তুমি আমাকে চকলেট কিনে দিবে, ঘুড়ি কিনে দিবে, আমাকে চুমু খাবে, অনেক আদর করবে।’
‘সত্যি?’ সুফিয়ার মুখে হাসি লেগেই আছে। কথাগুলো শুনতে তার বেশ ভালো লাগছে। ভবিষ্যতে সে কী করবে, আগে থেকেই জেনে যাচ্ছে সে।
‘হুমম৷ কিন্তু, তুমি খুব স্বার্থপর হবে। আমাকে চিনেও তুমি নিজের পরিচয় দেবে না। ২০১০ সালে আমাদের বাসা নিয়ে তুমি থাকবা। আমার সাথে আড্ডা দিবে, রান্না করে খাওয়াবে। তারপরও তুমি নিজের পরিচয় দিবে না। এমন কেন?’
‘ওটাই স্বাভাবিক। আপনি তো আমাকে চিনবেন ২০১৭ সাল থেকে। ২০১০ সালে তো আমি বুড়ি হয়ে যাবো। একটা অপরিচিত বুড়ি যদি আপনাকে তখন বলে, সে আপনার বউ। আপনি তো তাকে পাগল ভাববেন, তাই না?’
‘তা অবশ্য ঠিক। কিন্তু, ওই সময় থেকে যদি তোমাকে চিনতে পারতাম, তবে তোমাকে শ্রেষ্ঠ কিছু মুহূর্ত উপহার দিতে পারতাম।’
‘২০১৭ সালে তো পরিচয় পাবেন আমার, তারপর আমার সাথে সময় কাটাননি?’
‘না, তখন তোমার সম্পর্কে জানলেও, তোমার খোঁজ পাইনি। ওই যে বললাম, তোমার ঠিকানা কেউ দিতে পারেনি। কিন্তু তুমি আমার আশেপাশেই ছিলে। ইউসুফও ছিল। আমি ইউসুফের অফিসেই চাকরি করতাম। কিন্তু, তাকেও চিনি না। অবশ্য সে চিনেও পরিচয় দেয়নি। তোমার সাথে আমার দেখা হয় ঠিকই, তবে অনেক দেরি হয়ে যায় তখন?’
‘কেন?’
রিহান চুপ থাকে কিছুক্ষণ। সুফিয়া আবার জিজ্ঞেস করে, ‘দেরি হয়ে যায় কেন? আমার কি মৃত্যু হবে তখন?’ মুখটা বিবর্ণ হয়ে যায় সুফিয়ার। রিহান তার হাত দুটো ধরে বলে, ‘আরেক সময় বলবো। এখন অন্য কথা বলি।’
‘আচ্ছা, চারটা বছর কীসের জন্য যেন অপেক্ষা করেছিলেব, বলছিলেন? কেন?’
‘ওসবও পরে বলবো। আগে বলো, তুমি এখনও কি আমাকে আপনি করে বলবা?’
‘হুমম…’ হেসে মাথা দুলালো সুফিয়া।
‘এখন দেখো, আমার বয়স তোমার চেয়েও কম।’
‘তাতে কী? আপনি তো আর বর থেকে ডিমোশন হয়ে যাননি। বর-ই আছেন। বরকে আপনি করেই বলতে হয়। আপনি আমার আপনি, বুঝছেন?’ হাসার সময় সুফিয়ার সাদা ঝকঝকে দুপাটি দাঁত মুগ্ধতা ছড়াল। রিহান বললো, ‘বেশ, আমি তোমার আপনিই থাকি।’
‘কিন্তু, আপনি আবারও এলেন, আপনার চেয়ে বয়স্ক একটা মহিলাকে নিয়ে সংসার করতে সংকোচবোধ করবেন না?’
‘সংকোচ? সেটা কী জিনিস? এখন তোমার বয়স কত? চুয়াল্লিশ? আমার বয়স চৌত্রিশ। দশ বছরের ব্যবধান। সেটা শারীরিক গঠনে বোঝা যায় না। তোমাকে দেখে কে বলবে তোমার বিশ বছরের একটা ছেলে আছে৷ তুমি নিজেই তো বিশ বছরের কুমারির মতো। সেই আগের মতোই আছো তুমি, একটুও বদলাওনি।’ বলেই সুফিয়াকে কাছে টেনে বুকের সাথে জড়িয়ে নিলো রিহান। সুফিয়া রিহানের বুকে মাথা রেখে বললো, ‘থামলেন যে? বেশ তো লাগছে। কেউ কখনও এভাবে প্রশংসা করেনি আমার।’
‘একটুও বাড়িয়ে বলিনি কিন্তু। তোমার রূপে আপনি তখনও মুগ্ধ ছিলাম, এখনও৷ রূপের চেয়ে তবে তোমার চঞ্চলতা আর সাহসিকতা আমার বেশি পছন্দ ছিল।’
‘সন্ধ্যা হয়ে গেছে। ছাড়বেন এবার?’
‘হুমম…’ রিহান সুফিয়াকে ছেড়ে দিলো। সুফিয়া বের হয়ে কাজের লোকগুলো কিছু কাজ বুঝিয়ে দিতে লাগলো। ঘরের বাতিগুলো জ্বালিয়ে দিতে বললো।
রিহান ঘর থেকে বের হয়ে বাইরে এলো। গেইটের দিকে এগিয়ে গেল। গার্ড রহিম মিয়া সেই সময় গেইটের পাশে কুঁজো হয়ে বসেছিল। রিহানকে আসতে দেখে মুখটা নিচু ফেললো। রিহানের মুখোমুখি হওয়ার ভয়টাই সে এতক্ষণ করে আসছে। রিহান কাছে এসে বললো, ‘কী খবর রহিম সাহেব?’
আচমকা রহিম মিয়া রিহানের পায়ে লুটিয়ে পড়লো, ‘স্যার, স্যার, আমারে ক্ষমা কইরা দ্যান। আমার চাকরি খাইবেন না স্যার। আমি বুঝবার পারিনাই স্যার। মাফ কইরা দ্যান স্যার।’
‘আরে ওঠো, ওঠো। আমি কিছু মনে করিনি। ওঠো।’ রহিম মিয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে বললো রিহান।
‘সত্যি মাফ কইরা দিছেন স্যার?’ পা ধরা অবস্থায় রিহানের চেহারার দিকে মুখ তুলে তাকালো রহিম মিয়া।
‘হ্যাঁ, মাফ করে দিছি৷ বসো তুমি।’
‘বাইরে যাইবেন আপ্নে?’ উঠে দাঁড়িয়ে গেইটের দরজাটা খুলতে খুলতে প্রশ্ন করলো রহিম মিয়া। রিহান দরজাটা বন্ধ করে বললো, ‘না, তোমার সাথেই দেখা করতে এসেছি।’
‘ধমক দিবার আইছেন নিশ্চয়ই?’
‘না, যা বুঝছি- তুমি আসলেই বিশ্বস্ত লোক রহিম মিয়া। একজন অপরচিত লোককে মালিক আসা পর্যন্ত ঢুকতে দাওনি। তোমার উপর বিশ্বাস করাই যায়। তোমাকে ধমক দেয়া শোভা পায় না।’
‘বসেন স্যার, এইহানে বসেন।’ নিজের টুলটা রিহানের দিকে এগিয়ে দিলো রহিম মিয়া। রিহান বসলে সে পুনরায় বলতে লাগলো, ‘আমার কী দোষ কন স্যার? আপ্নেরে আর ইউসুফ স্যাররে পাশাপাশি দাঁড় করাইলে কেউ কি কইবো বাপ-ছেলে আপ্নেরা?’
‘না, তা ঠিক।’
‘আর ইউসুফ স্যারও আপ্নেরে চিনবার পারেনাই। আমি ক্যামনে চিনমু কন? এই বাড়িত অনেক ধইরা কাজ করি। আপ্নেরে কোনদিন দ্যাহিনাই। আপ্নে কই ছিলেন স্যার এত্তদিন?’
‘ভবিষ্যতে ছিলাম।’ হুট করে জবাব দিলো রিহান।
‘এ্যাহ্?’ রিহানের জবাবটা রহিম মিয়া ঠিক যেন বুঝতে পারেনি।
‘ভবিষ্যতে ছিলাম। ভবিষ্যত থেকে এসেছি।’ রিহান পুনরায় বললো।
‘স্যার, আপ্নে আমার লগে মজা করতাছেন। কন না, কই ছিলেন?’
‘সুফিয়ার সাথে ঝগড়া করে একটু দূরে ছিলাম। বুঝছো?’
‘এতদিন রাগ কইরা স্ত্রী-সন্তানরে রাইখা দূরে আছিলেন, আপ্নের কষ্ট অয়নাই?’
‘কষ্ট তো হয়ছে। অনেক কষ্ট। ঠিক আছে রহিম মিয়া, তুমি বসো তবে, আমি ভেতরে যাই।’ রিহান আর এ ব্যাপারে কথা বাড়াতে চাইলো না। উঠে ভেতরের দিকে হাঁটতে লাগলো।
ইউসুফের সাথে এখনও রিহানের ভালো করে কথা হয়নি। একটা সময় কত প্রতীক্ষা ছিল, ইউসুফ জন্ম নেবে, তারপর ওকে আদর করবে, বড়ো করবে। কিন্তু কিছুই হলো না, ইউসুফের জন্মের আগেই সে তার সময়ে ফিরে যায়। ইউসুফকে আর বড়ো করতে পারেনি। তাকে ছাড়াই ইউসুফ এখন কত বড়ো হয়ে গেছে।
ইউসুফের কক্ষে গিয়ে টোকা দিলো রিহান, ‘আসতে পারি?’
‘হ্যাঁ, আসুন বাবা…’ দ্বিধাহীন কণ্ঠেই ইউসুফ বাবা ডেকে ফেললো রিহানকে। এতেই বোঝা যায় বাবা ডাকার ক্ষুধাটা তার অস্তিত্বে কতটা মিশে আছে। রিহান ভেতরে পা বাড়ালে ইউসুফ উঠে গিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেললো ‘বাবা বাবা’ বলে। রিহানও হকচকিয়ে গেল। ইউসুফ তাকে পেয়ে এতটা আবেগি হয়ে উঠবে সে বুঝতে পারেনি। তার মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে সে বললো, ‘শান্ত হও ইউসুফ, শান্ত হও।’
আরও কিছুক্ষণ বাবাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদলো ইউসুফ। তারপর ছেড়ে দিয়ে বিছানা দেখিয়ে বসতে বললো। রিহান বসলো। ইউসুফও চোখ মুছে বসলো। তারপর বললো, ‘বাবাকে ছাড়াই বড়ো হয়েছি, বাবার আদর কখনও পাইনি। মায়ের কাছে আপনার শুধু গল্প শুনতাম, মা বলতো সব- আমার বাবা দেখতে কেমন? কোথা থেকে এসেছিল? কীভাবে মায়ের সাথে পরিচয়? তারপর আবার কীভাবে হারিয়ে গিয়েছিল, সব বলতো মা। আমি ছিলাম মায়ের সেই গল্পের একমাত্র শ্রোতা৷ মা বলতো আর আমি শুনতাম। তারপর মা-ছেলে মিলে কাঁদতাম। তবে আমরা কখনও আপনাকে দোষ দিইনি।’
‘আমিও যে কষ্ট পাইনি, তা কিন্তু নয়। তোমাদের মতো কষ্ট না পেলেও, আমিও কম কষ্ট পাইনি। একটা বাবার সবচেয়ে বড়ো সুখ কী জানো? তার ছেলে যখন ভূমিষ্ট হবে, তখন তার চেহারাটা দুচোখ ভরে দেখা। কিন্তু, আমার সেই সুযোগটা হয়নি, তুমি জন্ম নেয়ার মুহূর্তে নিয়তি আমাকে এতটা দূরে সরিয়ে দিয়েছিল যে, চাইলেও দেখার সুযোগ ছিল না।’
‘বাবা ছাড়া বড়ো হওয়া যে কতটা কষ্টের, তা হাড়েহাড়ে বুঝেছি। অনেক কষ্ট। সবসময় চাইতাম, আমার বাবাও যদি আমাদের সাথে থাকতো! কিন্তু বাস্তব বড়ো কঠিন বাবা, এখন আপনি এসেছেন। তবুও বলতে হচ্ছে- আপনি চলে যান। যেখান থেকে ফিরেছেন, সেখানেই চলে যান। এখন আমরা আপনাকে ছাড়া অনেকটা অভ্যস্ত হয়ে গেছি।’ নিচু হয়ে কথাটা বললো ইউসুফ। রিহান তার মুখের দিকে নিশ্চুপ হয়ে চেয়ে রইলো।
[[চলবে…]]