পবিত্র_বন্ধন #পর্ব – ৩

#পবিত্র_বন্ধন
#পর্ব – ৩

উনি বাহির থেকে দরজা নক করে বলছেন, আপনি একটু তাড়াতাড়ি বের হন আপনার সাথে আমার কাজ আছে।।এটা শুনে আমি আর নিজের মাঝে নেই, এত রাতে কিসের কাজের কথা বলছেন উনি!!

আমি যেটার ভয় পাচ্ছি সেটা হবে নাতো, না ন্য কিছুতে আমি আমার কাছে আসতে দিব না। ভয়ে ভয়ে বের হলাম বলে,

—— কিসের জন্য এত রাতে ডাকাডাকি করছেন!!

——– নামাযের ওজু করে আসুন, আমরা একসাথে ২ রাকাআত নফল নামায পড়ে নতুন জীবন শুরু করব।।

—— নতুন জীবন শুরু করবেন মানে!! দেখুন আমার খুব ঘুম পাচ্ছে, মাঝরাতে এসব নেকামি ভালো লাগে না।।

——- অবশ্যই ঘুমাবেন তবে নামায টা পড়ে।। এটা আমার অনেক দিনের স্বপ্ন প্লিজ না করবেন না।।

আমি আর মুখের উপর নিষেধ করতে পারলাম না, ওজু করে এসে নামাযের জন্য দাড়ালাম, নামাযে আমার চোখের পানি দেখে বলছেন,
—– আপনার কি আম্মু আব্বুর জন্য কষ্ট হচ্ছে। প্লিজ আর কাঁদবেন না। এটাই নিয়ম সব মেয়েকে তার বাবার বাড়ি ছেড়ে আসতে হয়,

আমি জানি মেয়েদের জন্য এ সময় টা পার করা কঠিন নতুন পরিবেশ প্রথমে খারাপ লাগবে।দেখবেন সবাই আপনাকে আপন করে নিলে আর খারাপ লাগবেনা।। চিন্তা করবেন না আমি কাল আপনাকে নিয়ে যাব।

কেন জানি না উনার কথা শুনে আলাদা এটা প্রশান্তি কাজ করছে মনে হচ্ছে খ্যাত টা এত খারাপ না…..

আপনি আমার সাথে একি বিছানায় থাকবেন না, আপনাকে আমি স্বামী হিসাবে মেনে নি নাই।।

——-আপনি ভয় পাবেন না, আপনি যতদিন না চাইবেন আমি আপনার কাছে স্বামীর অধিকার নিয়ে আসব না।

মনে মনে ভাবলাম এ ব্যাপার টা থেকে কিছুটা হলে ও মুক্তি ফেলাম। বিছানায় মাথা লাগাতে ঘুম চলে আসতেছে উনি গিয়ে সোফায় শুয়ে গেলেন, খারাপ ও লাগছে কিন্তু আমার যে কিছু করার নেই আমি মুগ্ধের জায়গা কাউকে দিতে পারব না…

ভোরে মিষ্টি কন্ঠ স্বরে ঘুম ভাঙলো। চোখ মেলে ঘুম ঘুম চোখে দেখি উনি কোরঅান তেলওয়াত করছেন।।
আমাকে ডেকে বলে,
—- আপনি উঠে পরুন ফজরের নামায পড়তে হবে।

কথা শুনে ও না শুনার ভান করে শুয়ে থাকলাম। তারপর বিছানার পাশে দাঁড়িয়ে বলে।

—— বিয়ের পর স্বামীকে তার বউ এর হিসেব দিতে হবে প্লিজ নামায টা কাজা করবেন না। চাইলে রুমেও পড়তে পারেন না হয় নামাজ পড়ার জন্য আলাদা রুম আছে ওখানে সব ভাবীরা একসাথে পড়ে।।

আমি উঠে নামায পড়তে গিয়ে দেখি, সবাই একসাথে নামায আদায় করছে, এত সুন্দর দৃশ্য দেখে চোখ টা ভরে গেল।

আমি যে নামায একদম পড়িনা তা না তবে ফজরের নামায টা বেশিরভাগ সময় মিস করে ফেলি ঘুমের জন্য। আজ পড়তে পেরে আলাদা একটা খুশি লাগছে।

নামায পড়া শেষে চলে আসব এমন সময় ভাবি ঠাট্টা করে বলছে, কি ব্যাপার মেঘলা ভোরে গোসল করতে কষ্ট হয় নিতো।। আমার খুব লজ্জা লাগছিল ওরা তো জানে না আমার আর উনার খ্যাত দেবর রাশেদ সাহেব এর মাঝে এসব কিছু নেই।।

সবাই রান্না ঘরে নাস্তা বানানোর জন্য ঢুকছে আমি ও চাইলাম করতে কিন্তু কেউ দিচ্ছে না, নতুন বউ প্রথম দিন কাজ করতে হবে না।। আমি চাইছিলাম যতটুকু এ খ্যাত টা থেকে দূরে থাকা যায়।। কিন্তু না সেটা পারা গেল না..

রুমে যাওয়ার সময় শাশুড়ী মা ডাক দিলেন উনার রুমে গিয়ে কিছুক্ষন বসতাম। আমি মনে মনে খুশি হলাম যাক কিছুটা বাঁচা যাবে খ্যাত টা থেকে।

মা কাছে এসে মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,

—–আমার ছেলে টা বড্ড ভালো রে কখনো কারো খারাপ করে নি, ও ছোটবেলা থেকে অনেক ইসলমিক মাইন্ড এর মেয়েদের সাথে কম মিশত।

যখন জিজ্ঞাস করতাম সবার মেয়ে বন্ধু আছে তোর থাকলে সমস্যা কি?? বলে,

—— মা আমার জন্য আল্লাহ যাকে বেঁধে রেখেছেন সে হবে আমার প্রথম আর শেষ মেয়ে বন্ধু!!

আমরা সবাই হাসতাম ও সবার চেয়ে আলাদা ছিল, এখন ও মনে আছে ওর বাবা যখন খুব অসুস্থ আমাকে বলে আমি না থাকলে তোমার পান, সুপারি কে আনি দিবে তখন রাশেদ আমার ছোট্ট ছেলেটা বলে,

বাবা আমি বেঁচে থাকাকালীন মায়ের পান সুপারি নিয়ে ভাবতে হবে না, সন্তান থাকতে মায়ের চিন্তা কিসের।।

এসব বলছিল আর আমার শাশুড়ী কান্না করছিলেন বুঝতে পারছিলাম উনারা খ্যাত টাকে কত ভালোবাসে।।

তুই আমার ছেলেটাকে আগলে রাখিস ও ভালোবাসার কাঙাল

সকালে সবাই একসাথে নাস্তা করলাম, একটা জিনিস খেয়াল করলাম খেত টা কোন ভাবীর সামনে আসে না, কথা বল্লেও নিচের দিকে তাকাই থাকে।।

বাড়ি থেকে মা বা আর ও অনেকে এসেছে, মা এসে বলে মেঘলা সুখে আছিস তো?? এ প্রশ্নের উত্তর আমার কাছে নেই (মনে মনে) হুম ভালো আছি এখানের সবাই খুব ভালো খুব আন্তরিক। মা আমার কথা শুনে তো খুব খুশি, দুনিয়ার সব মা চায় তার মেয়ে শুশুর বাড়িতে সুখে থাকুক।।

এভাবে কয়েকদিন কেটে গেল। আমি খুব দরকার না পড়লে খ্যাত টার সাথে কথা বলি না, খ্যাত টা আমাকে কোন কিছুতে জোর করে না, আমি বলার আগে সোফায় গিয়ে শুয়ে পড়ে, মাঝেমধ্যে মায়া লাগে সারাদিন এত পরিশ্রম করে এসে রাতে ঠিকমত ঘুমাতে পারে না।

সব সময় আমার দরকারী জিনিসের খেয়াল রাখে, বিভিন্ন খাবার রুমে রেখে সাথে চিরকুটে সব লিখে যায়, ধীরে ধীরে মানুষ টার প্রতি শ্রদ্ধা বেড়ে যাচ্ছে।।

হঠাৎ করে শুনলাম মোবাইলের রিং বাজতেছে অনেকক্ষন খুজাঁর পর বের করে দেখলাম মুগ্ধ কল দিছে, বুঝতে পারছিনা আমার কি খুশি হওয়া দরকার!! কল রিসিভ করলাম..

– মেঘলা কোথায় তুমি?? কেমন আছ??

– এত দিন পরে খবর হল আমি কেমন আছি!! আমি তোমার জন্য অপেক্ষা করছিলাম জানতে, তাও আসলে না কল টা ও ধরলে না।

– আমি আসব কিভাবে আমার এক্সিডেন্ট হইছে আসার সময়। আমি এত দিন হাসপাতালে ছিলাম, তাই কল করতে পারিনি।।

– কি বল এসব কিভাবে হল!! এখন কেমন আছ তুমি??

– ভালো, তুমি কি বিয়ে টা করে ফেলছ!!

– না মানে, বিশ্বাস কর মুগ্ধ আমি করতে চাইনি এটা ছাড়া আমার কাছে আর কোন পথ ছিল না।। আমি তোমার জন্য অনেক অপেক্ষা করেছি।।

– বাহ!! এ তোমার ভালোবাসা,, আমার জন্য অপেক্ষা করতে পারলে না।। করবে কেন বড়লোক জামাই পেয়েছ, আমার আর কি দরকার। ওকে সুখে থাকো স্বামী কে নিয়ে।।

– মুগ্ধ প্লিজ ভুল বুঝ না, আমি তোমার অধিকার কাউকে দি নাই,, অই খেত টার সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই।।

সব কিছু খুলে বলার আগে মুগ্ধ কল টা কেটে দিল, আমার কলিজা ফেটে কান্না আসতেছ আমি তো ওকে ভুল বুঝেছি এখন আমি কি করব!! চোখের পানি মুছে সামনে তাকিয়ে দেখি খ্যাত টা আমার দিকে তাকিয়ে আছে। ভয় পেয়ে গেলাম সব শুনে গেল নাতো, কখন রুমে আসলো বুঝতে পারিনি…

………..চলবে….

(কাজী সারা)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here