#প্রেম_প্রেম_খেলা,১৫,১৬ শেষ
মুমতাহিনা জান্নাত মৌ
১৫
আদ্রিয়ান হঠাৎ অহনার হাত ধরে বললো, তুমি এসব কথা আমাকে আগে কেনো বলো নি?কেনো বলো নি আমার নিজের বাবা মা মোহনার সাথে এতো বাজে ব্যবহার করেছে।আর আমার নিজের ক্লোজ ফ্রেন্ডরা মোহনার সাথে এতো বড় অন্যায় করেছে।
অহনা তখন আদ্রিয়ানের হাত সরিয়ে দিয়ে বললো,আপনাকে এসব কথা যদি আগে বলতাম আপনি কি বিশ্বাস করতেন?উলটো তো আমাকেই মিথ্যাবাদী বানিয়ে দিতেন।সেজন্য আমি সব প্রমাণ জোগাড় করে তবেই হাজির হয়েছি।
আদ্রিয়ান সেই কথা শুনে বললো, কিন্তু একবার তো বলে দেখতে পারতে।মোহনার সাথে যারা যারা এমন অন্যায় করেছে তাদের সব কয় টারে আমি নিজেই কিভাবে শাস্তি দিতাম।
অহনা তখন বললো এখন তো জানলেন।দিন এখন কি শাস্তি দেবেন।
অনিল তখন এগিয়ে এসে বললো, কাউকেই এদের শাস্তি দিতে হবে না।এদের শাস্তি আইন দিবে।
আদ্রিয়ানের আর কারো সাথে কথা বলার বিন্দুমাত্র রুচি হলো না।সে ভুল করেও তানহা,সানি,উল্লাস,লিথি আর টিনার দিকে তাকালো না।আদ্রিয়ান তার বাবা মার সাথেও একটা কথা বললো না।সে ঘৃণায় বিয়ের আসর থেকে চলে যেতে ধরলো।
তবে আদ্রিয়ানের আজ কেনো জানি কোনো কষ্টও হচ্ছে না।সে শুধু একটা কথাই ভাবছে তার আপন বলতে আর কেউ থাকলো না।কাকে সে বিশ্বাস করবে এখন?বিশ্বাস নামক শব্দ টাই যে তার ডিকশনারীতে রইলো না আর।
আদ্রিয়ান কে চলে যাওয়া দেখে তানহা তার পথ আটকিয়ে বললো,বিশ্বাস কর আদি আমি তোকে ভীষণ ভালোবাসি।তোকে ছাড়া আমি কিছুতেই বাঁচতে পারবো না।আদি আমাকে বাঁচা।
আদ্রিয়ান তখন তানহাকে বললো,হু আর ইউ?ডু
আই নো ইউ?
তানহা আদ্রিয়ানের কথা শুনে তাকে জড়িয়ে ধরে বললো,আদি এরকম করিস না আমার সাথে।বিশ্বাস কর আদি আমি এসব নিজের বুদ্ধিতে করি নি।আমি মোহনাকে অপছন্দ করতাম ঠিক আছে।তোর পাশে মোহনাকে সহ্য করতে পারতাম না এটাও ঠিক আছে।কিন্তু এইভাবে মোহনার বদনাম করতে চাই নি।এই বুদ্ধি টা আমাকে সানি দিয়েছে।সে বলেছিলো আমি যদি এই কাজটা করতে পারি তাহলে নাকি তুই মোহনাকে ঘৃনা করবি।ওর থেকে দূরে সরে যাবি।আর আমি এই সুযোগে তোর কাছাকাছি আসবো।তখন তুই আমাকে নাকি ভালোবাসবি।এই বলে তানহা এবার সানির কাছে চলে গেলো আর বললো,
এই তুই চুপ করে আছিস কেনো?বল সত্যি টা সবাইকে।
সানিও এবার আদ্রিয়ানের কাছে চলে এলো আর বললো, দোস্ত আমিও আমার নিজের বুদ্ধিতে এই কাজ করি নি।তবে এটা ঠিক যে আমিও মোহনাকে সহ্য করতে পারতাম না।কারন তোর সাথে মোহনার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠার পর থেকে তুই আমাদের কে তেমন একটা পাত্তা দিতি না।কেমন যেনো ইগ্নোর করতিস।তুই প্রায় সময়ই মোহনাকে নিয়ে আলাদা ভাবে টাইম স্পেন্ড করতিস।আগের মতো আমাদের সাথে কোথাও ঘুরতেও যাতিস না।সেজন্য মোহনার প্রতি আমাদের সবার ক্ষোপ তৈরি হয়ে গিয়েছিলো।
হঠাৎ একদিন তোর মা আর বাবা এসে আমাদের সবাইকে বললো,যে করেই হোক আদ্রিয়ানের কাছ থেকে এই মোহনা মেয়েটাকে দূরে সরে দাও।কারণ আমাদের ফ্যামিলির একটা স্ট্যাটাস আছে।এইরকম থার্ড ক্লাস মেয়ের সাথে আদ্রিয়ান কি করে রিলেশনে যেতে পারলো?দুইদিন পর তো তাকে বিয়ে করতেও চাইবে।ওই মেয়েকে আমরা আমাদের বাড়ির বউ কিছুতেই করবো না।
আন্টি আর আংকেলের কথা শুনে আমরা সবাই যুক্তি-বুদ্ধি করে এই আইডিয়া টা বের করি।আমরা জাস্ট তোর থেকে মোহনাকে দূরে সরাতে চাইছিলাম।কিন্তু এই ঘটনা টা যে এতোদূর গড়াবে সত্যি আমরা ভাবতে পারি নি।
আদ্রিয়ান তখন সানির দুই গালে ঠাসঠাস করে কয়েকটা চড় বসিয়ে দিয়ে বললো,
তোর মুখ আর কখনোই আমাকে দেখাবি না।তোর কোনো কথা শোনার রুচি নাই এখন আমার।এই বলে আদ্রিয়ান এক এক করে সবাইকে ঠাস ঠাস করে কয়েকটা চড় দিয়ে বললো, ইন্সপেক্টর! কি জন্য দাঁড়িয়ে আছেন আপনি?আপনাকে কি এসব তামাশা দেখার জন্য ডেকে আনা হয়েছে?নিয়ে যান সব কয়টারে জেলে।এরা যেনো কোনোদিন আর ছাড়া না পায়।যত টাকা খরচ হয় হোক,তবুও যেনো এদের কে কেউ বের করতে না পারে।এরা আমার কোনোদিন বন্ধু ছিলো না আর থাকবেও না।যারা পিছন দিক থেকে ছুরি মারে তারা কি করে আমার বন্ধু হতে পারে?এই অমানুষ দের সাথে আমি এতোদিন ছিলাম ভাবতেই আমার ঘৃনা লাগছে।সামান্য কারণে তারা মোহনাকে আমার কাছ থেকে কি করে আলাদা করে দিলো?এই ভুলের কোনো ক্ষমা নাই।
নিলয় তখন এক এক করে সবাই কে গাড়িতে ওঠালো।কিন্তু যেই তমালিকা আর আতিক হাসান কে নিয়ে যেতে ধরলো,তখন আতিক হাসান চিৎকার করে বললো,ডোন্ট টাচ।আমাদের কে ধরার সাহস কি করে হয় তোমাদের?আমি উপর মহলে গিয়ে সবার নামে নালিশ করে সবার চাকরি শেষ করে ফেলবো।
নিলয় সেই কথা শুনে বললো, সেটা থানায় গেলেই দেখা যাবে। আপনার পাওয়ার আপাতত পকেটে পুরে রাখুন।কারো বাপের ক্ষমতা নাই আপনাকে জেল থেকে ছাড়িয়ে আনার।
অহনা এবার নিজে এসেও বেশ কয়েকটা কড়া কথা শুনিয়ে দিলো তমালিকা আর আতিক হাসান কে।অহনা বললো,
একটা মেয়ের বয়সী নির্দোষ মেয়ের সাথে এতো বড় অন্যায় করতে কি আপনার বুকটা একবারও কাঁপে নি?একবারও কি মনে হয় নি এটা অন্যায় করা হচ্ছে মেয়েটার সাথে।আপনার নিজের মেয়ের সাথে কি এমনটা করতে পারতেন?
একে একে কতগুলো জীবন নষ্ট করলেন আপনারা?আমার বোন,বাবা শুধুমাত্র আপনাদের এই অপকর্মের কারনে দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছে।অন্যদিকে আমার মা,মেয়ে আর স্বামীর শোক করতে করতে নিজেও দুনিয়া থেকে সারাজীবনের জন্য চলে গেছে।আমি এখন নিঃশ হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছি।না আছে আমার মা না আছে আমার বাবা না আছে আমার কোনো বোন।
অনিল তখন অহনাকে শান্তনা দিয়ে বললো, এই কাঁদিস না তুই।আজ তো তোর খুশির দিন।যা আনন্দ কর আজ তুই।মন খুলে হাস আজকে।আজকের এই দিনটা দেখার জন্য তো তোকে কত কষ্ট সহ্য করতে হয়েছে।এই বলে অনিল আদ্রিয়ানের বাবা মাকে টানতে টানতে গাড়িতে তুললো।
আজকের এই ঘটনা পুরো দেশের লোকের কাছে কাছে পৌঁছে গেলো।সবাই পুরো কাহিনী শুনে শুধু ছিঃ ছিঃ করতে লাগলো।আর অহনার সুনাম করতে লাগলো।এরকম বোন যদি কারো থেকে থাকে তাহলে তার জীবনে আর কি চাই?সবাই অহনার জন্য দোয়া করতে লাগলো।মেয়েটা বোনের সাথে হওয়া অন্যায়ের প্রতিবাদ করার জন্য কত কষ্টই না করেছে।নিজের মানসম্মানের কথাও চিন্তা করে নি।
মুহুর্তের মধ্যে কমিউনিটি সেন্টার টা জনশূন্য হয়ে গেলো।এই কিছুক্ষন আগেই বিয়ের জন্য কত সুন্দর করে সাজানো হয়েছিলো।আর লোকে লোকে সরগরম করছিলো।কিন্তু এখন একদম ফাঁকা।
অহনা এবার আদ্রিয়ানের কাছে গিয়ে বললো, সরি।আমাকে ক্ষমা করে দিন প্লিজ।আপনাকে কষ্ট দেওয়ার বিন্দুমাত্র ইচ্ছা ছিলো না আমার।কিন্তু বাধ্য হয়ে আমাকে আপনার বিয়ের দিনই এই সত্য টা সবার সামনে আনতে হলো।আসলে আমি চাইছিলাম আমার বোনের সাথে যারা অন্যায় করেছে তাদের কথা সবার জানা উচিত।যেহেতু আপনার বিয়ে নিয়ে পুরো নেট দুনিয়ায় তোলপাড় শুরু হয়ে গেছে সেজন্য আজকেই আমি সত্যি টা সবার মাঝে জানিয়ে দিলাম।পারলে ক্ষমা করে দিয়েন আমাকে।আজ থেকে আমি ফ্রি হয়ে গেলাম।আমার বোনের সাথে অন্যায় করা লোকগুলো তো ধরা পড়লো।কিছুটা হলেও বোনটা আমার শান্তি পেয়েছে।এই বলে অহনা চলে গেলো।
অহনার সাথে সাথে টুশু,অর্পা আর সনিয়াও ছিলো।অহনা চলে যাওয়ার পর তারা আদ্রিয়ানের মুখোমুখি হলো।টুশু বললো,
ভাইয়া আমাদের একটা অনুরোধ রাখবেন?
আদ্রিয়ান কোনো উত্তর না দিয়ে ওদের তিনজনের দিকে অবাক নয়নে তাকালো।
টুশু তখন বললো, আমরা জানি আপনার আজ যথেষ্ট মন খারাপ,আর আমাদের এই সময়ে কথাটা বলা ঠিক ও হচ্ছে না।তবুও বলতে বাধ্য হচ্ছি।
–কি কথা?
সনিয়া তখন আদ্রিয়ানের হাত ধরে বললো আপনি আমাদের বোনের মতো ভাবতে পারেন।যদিও কোনোদিন আপনার নিজের বোনের মতো হতে পারবো না তবুও বোন হিসেবে একটা আবদার করতে চাচ্ছি।
আদ্রিয়ান তখন বললো,আগে বলবে তো কথাটা?
অর্পা তখন বললো ভাইয়া,মোহনা আপু তো আর জীবনেও আপনার জীবনে ফিরে আসবে না।তার জন্য কি আপনি আপনার এই সুন্দর জীবন টা এভাবে নষ্ট করবেন?প্লিজ ভাইয়া অহনাকে আপনি আপনার জীবনসঙ্গিনী করে নিন।দেখবেন আপনার জীবন থেকে সকল দুর্দশা কেটে যাবে।আপনি আপনার লাইফ টা নিয়ে অনেক বেশি খুশি থাকবেন।
অর্পার কথা শুনে আদ্রিয়ান একদম বোবা হয়ে গেলো।সে অহনাকে কি করে বিয়ে করতে পারে?না এটা সম্ভব না।
টুশু তখন বললো, ভাইয়া প্লিজ একবার অহনাকে বলে দেখেন না?আমাদের বিশ্বাস অহনা না করবে না।আমাদের বিশ্বাস সেও মনে মনে আপনাকে অনেক বেশি পছন্দ করে।
আদ্রিয়ান কারো প্রশ্নের কোনো উত্তর দিলো না।সে ওদের তিনজনকে রেখেই চলে গেলো।
এদিকে অহনা জানেই না তার বান্ধুবীরা আদ্রিয়ান কে এসব বলেছে।
▪️🖤▪️
আদ্রিয়ান পুরোপুরি নিঃসঙ্গতায় ভুগতে লাগলো।।না আছে তার বাবা মা,না আছে কোনো বন্ধুবান্ধব।আদ্রিয়ান একদম পাগলের মতো ঘর বন্দি হয়ে থাকলো।তার হাতে যে দুইটা মিউজিক ভিডিওর কাজ ছিলো সেটা সে ক্যান্সেল করে দিয়েছে।সে আগে মানসিক ভাবে স্ট্রং হবে তবেই তার নেক্সট প্রজেক্ট নিয়ে ভাববে সে।
তিন মাস পরের ঘটনা।অহনা তার ফাইনাল এক্সাম শেষ করে মামার বাড়ি যাবে বলে ব্যাগ গুছিয়ে নিলো।তার তো এখন আপনজন বলতে এই মামার বাড়ি টাই আছে।এই তিনমাসে অহনা আর আদ্রিয়ানের না দেখা হয়েছে না কোনো কথা হয়েছে।কেউ কারো সাথে কথা বলার প্রয়োজন মনে করে নি।তো আজ যখন অহনা বাস স্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে ছিলো হঠাৎ তার আদ্রিয়ানের সাথে দেখা হয়ে গেলো।একদম পাগল দের মতো হয়েছে তার চেহারা টা।চুলগুলো কত বড় বড় হয়েছে তবুও কাটে নি।দাঁড়ি মোচ সব বড় বড় হয়ে গেছে।অহনা তো চিনতেই পারছিলো না আদ্রিয়ান কে দেখে।আজ আদ্রিয়ান কে দেখে অহনার বেশ মায়া হতে লাগলো।কি হ্যান্ডসাম ছেলেটা এই তিন মাসের মধ্যেই কেমন যেনো হয়ে গেছে।
অহনাকে দেখে আদ্রিয়ান এগিয়ে আসলো।
এদিকে আদ্রিয়ান কে দেখে সবাই একের পর এক সেল্ফি উঠতে লাগলো।সে যে অহনার সাথে দুই চারটা কথা বলবে এই সুযোগ ও পাচ্ছে না।
আদ্রিয়ান বাস স্ট্যান্ডে এসেছিলো তার ফুপিকে নেওয়ার জন্য।আদ্রিয়ানের বাবা মা জেলে যাওয়ার পর থেকে কেউ না কেউ আদ্রিয়ান কে এভাবে দেখতে আসে।কোনোদিন তার খালামনি আসে তো কোনোদিন তার নানুর বাড়ি থেকে মামা মামি আসে।আবার কোনো দিন দূর সম্পর্কের আত্নীয়রাও আসতে থাকে।সেইরকম আজকে আদ্রিয়ানের ফুপি আসতেছে।
অহনা এবার নিজেই এগিয়ে আসলো আদ্রিয়ানের দিকে।কিন্তু কি কথা দিয়ে শুরু করবে বুঝতে পারছিলো না সে।
আদ্রিয়ান তখন ভীড় ঠেলে বললো,এক্সকিউজ মি।আমাকে যেতে দিন একটু।এই বলে সে অহনার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো।
অহনা আদ্রিয়ান কে দেখে বললো,আপনি এখানে?
আদ্রিয়ান তখন বললো,আমারও তো সেম প্রশ্ন।
অহনা তখন বললো,এক্সাম শেষ। সেজন্য মামার বাড়ি যাচ্ছি।
আদ্রিয়ান তখন বললো, আমার ফুপি আসবে সেজন্য তাকে নিতে এসেছি।
অহনা সেই কথা শুনে বললো, নেক্সট মিউজিক কবে আসবে আপনার?
–এখনো ভাবি নি ওটা নিয়ে।তবে আসবে।
অহনা তখন বললো, ও।আচ্ছা।
আদ্রিয়ান তখন বললো, তোমার বান্ধুবীরা কেমন আছে?
–জ্বি ভালো।
অহনা মনে মনে ভাবতে লাগলো আদ্রিয়ান তার কথা জিজ্ঞেস না করে তার বান্ধুবীদের কথা জিজ্ঞেস করছে কেনো?
হঠাৎ অহনার গাড়ি এসে গেলো।সেজন্য সে বললো, আমার গাড়ি এসে গেছে।
আদ্রিয়ান সেই কথা শুনে বললো, ওকে,সাবধানে যেও।
অহনা আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে আর কোনো কথা বললো না।সে তার ব্যাগ নিয়ে সোজা সীটে গিয়ে বসলো।
এদিকে আদ্রিয়ানের ফুপি অনেকক্ষন এসেছে।আদ্রিয়ান কে এভাবে দাঁড়িয়ে থাকা দেখে তার ফুপাতো বোন রুপা বললো, ভাইয়া!এখানে এভাবে দাঁড়িয়ে আছেন যে?
আদ্রিয়ান একদম চমকে উঠলো।সে তখন বললো তোমরা এসেছো?ফুপি কই?
আদ্রিয়ানের ফুপি মিসেস তায়বা বানুও এবার এগিয়ে আসলো।
অন্যদিকে অহনা জানালা দিয়ে দেখতে লাগলো ওদের।আদ্রিয়ান তখন নিজেও তাকালো অহনার দিকে।অহনা সেজন্য এবার তার মুখ ফিরিয়ে নিলো।
এদিকে রুপা আদ্রিয়ানের সাথে একের পর এক ছবি উঠিয়ে ফেসবুকে পোস্ট দিতে লাগলো।
তারপর আদ্রিয়ান সবাইকে নিয়ে তার গাড়িতে গিয়ে বসলো।
▪️🖤▪️
অহনা তার মামার বাড়ি পৌঁছে গেলো।অনিল বাস স্ট্যান্ডে এসেছিলো অহনাকে নেওয়ার জন্য।
অহনার মামা আর মামি অনেকদিন পর অহনাকে দেখে ভীষণ খুশি হলো।তারা যে অহনাকে তাদের নিজের মেয়ের মতোই ভালোবাসে।অহনাকে মামি একটা রুমে নিয়ে গিয়ে বললো, এই ঘরে থাকবি তুই।আর হ্যাঁ তাড়াতাড়ি করে ফ্রেশ হয়ে নে।আমি খাবার রেডি করছি।
অন্যদিকে অনিল আজ অফিসেই যায় নি।অহনা আসবে বলে সে আজ সারাদিন বাসাতেই ছিলো।
অহনা ফ্রেশ হয়ে এসে দেখে তার মামি কত রকমের খাবার বানিয়েছে তার জন্য।সব তার ফেভারিট ফেভারিট খাবার।
অহনা যখন দেখলো টেবিলে অনিল নাই তখন অহনা তার মামিকে বললো,মামি অনিল ভাইয়া কই?উনি খাবেন না?
অনিলের নাম নিতেই অনিল এসে হাজির।তখন সবাই একসাথে খাওয়াদাওয়া করতে লাগলো।হঠাৎ অহনার ফোনে কল বেজে উঠলো। অহনা তখন খাওয়া বাদ দিয়ে ফোনটা রিসিভ করার জন্য চলে গেলো।
আদ্রিয়ান কল দিয়েছে তাকে।অহনা তখন সাথে সাথে রিসিভ করলো।
অহনা কল রিসিভ করতেই আদ্রিয়ান বললো, পৌঁছিছো তুমি?
–হ্যাঁ।
আদ্রিয়ান তখন বললো এইজন্যই কল দিয়েছিলাম।ওকে বাই।এই বলে আদ্রিয়ান কল কেটে দিলো।
অহনা তখন ফোনটা রেখে আবার খাবার টেবিলে চলে গেলো।অহনা যেতেই অনিল বললো, কে ফোন দিয়েছে?
অহনা তখন বললো আদ্রিয়ান।
আদ্রিয়ানের নাম শুনে অনিল বেশ অবাক হলো।তবে সে আর আদ্রিয়ানের ব্যাপারে কিছু জিজ্ঞেস করলো না।
অহনা তখন নিজেই বললো,আজ এখানে আসার সময় আদ্রিয়ানের সাথে দেখা হয়েছিলো।সেজন্য তিনি কল করে বললেন,আমি পৌঁছেছি কিনা?
অনিল সেই কথা শুনে বললো, বাহঃ ভালোই তো কেয়ার করে দেখি।
অহনা অনিলের প্রশ্নের কোনো উত্তর দিলো না।কারণ আদ্রিয়ান কে কল করা দেখে সে তো নিজেই অবাক হয়ে গেছে।
▪️🖤▪️
রাতের বেলা অহনার মামি তার কিছু গহনা আলমারি থেকে বের করে আনলো।আর অহনাকে বললো,দেখ তো কোন সেট টা পছন্দ হয়?
অহনা তখন বললো সবগুলোই তো সুন্দর।
মামি তখন একটা সেটা হাতে নিয়ে অহনাকে বললো,এই সেট টা পড়ে আয় দেখি।
অহনা সেই কথা শুনে ড্রেসিং টেবিলের সামনে গিয়ে হার টা পড়ে নিলো।
অহনার গলায় হার টা বেশ মানিয়েছে।মামি তখন বললো, তোর বিয়ে তে তুই এটাই পড়বি।
–বিয়ে?আমার বিয়ের কথা বলছো?
মামি তখন বললো,বিয়ের কথা শুনে এভাবে অবাক হলি কেনো?মনে হলো প্রথম তুই এই কথাটা শুনলি?
–না মানে?পড়াশোনায় তো শেষ হয় নি।
“কি মানে মানে করছিস?বিয়ের পর কি পড়াশোনা করা যায় না?এখন তোর গার্ডিয়ান বলতে তো শুধু আমরাই।সেজন্য তোর ভালোমন্দ দেখার দায়িত্ব ও আমাদের।অনিল বললো সে নাকি তোকে বিয়ে করতে চায়।আমি আর তোর মামা সাথে সাথে রাজি হয়ে গেলাম।এখন তোর কি মতামত?
অহনা তখন বললো মামি আমি এখনি বিয়ে করবো না।
মামি তখন বললো,না করলি।কিন্তু এটা তো আগে বল অনিল কে তুই বিয়ে করবি কি না?
অহনা তো পড়ে গেলো মহাবিপদের মধ্যে।এখন কি করে সে মামিকে বলে অনিল সে কিছুতেই বিয়ে করতে পারবে না।
চলবে,
#প্রেম_প্রেম_খেলা(শেষ পর্ব)
মুমতাহিনা জান্নাত মৌ
অহনা ছাদে একা একা দাঁড়িয়ে আছে।সে আনমনে ভাবতে লাগলো যার ভাগ্যে যে লেখা নাই তার প্রতি মানুষের কেনো এতো আকর্ষণ তৈরি হয়?যাকে মানুষ কোনো দিনও ভালোবাসতে পারবে না তাকেই কেনো মানুষ ভালোবেসে ফেলে?ভালোবাসা এমন বিষাদ ময় কেনো?এই অসম্ভব ভালোবাসাগুলোর শেষ পরিনতি গুলো এমন কষ্টদায়ক কেনো হয়?
চারিদিকে অন্ধকার ঘনিয়ে আসতেছে।অনিল দুই মগ কফি হাতে নিজেও এগিয়ে আসলো ছাদে। আর অহনাকে বললো, কি দেখতিছিস এভাবে?
–আমার ভাগ্যে কি লেখা আছে সেটা দেখার ট্রাই করছি।
অনিল তখন হাসতে হাসতে বললো তাই?তা কি দেখতে পেলি?
অহনা তখন বললো,পরিষ্কার ভাবে দেখা যাচ্ছে না।কেমন যেনো আবছা আবছা লাগছে।
অনিল তখন বললো ধর কফির মগ টা নে।তারপর একটা চুমুক দিয়ে ভালো করে দেখ।দেখবি পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে।এই বলে অনিল কফির মগ টা অহনার হাতে দিলো।
অহনা কফির মগে চুমুক দিয়ে বললো, তেমন একটা ভালো হয় নি কফিটা।কেমন যেনো লাগছে।
অনিল তখন বললো, আমি বানিয়ে আনলাম।আম্মু কাজে ব্যস্ত আছে।
অহনা তখন বললো ফাস্ট টাইম বানালেন তাই না?
–হ্যাঁ।
অহনা তখন বললো সেইরকমই মনে হচ্ছে।তবে এটা আমার ভাগ্য যে আপনার তৈরি ফাস্ট কফিটা আমি খেতে পারছি?
অনিল তখন বললো আমারও ভীষণ ভালো লাগছে জীবনের ফাস্ট বানানো কফিটা তোকে খাওয়াতে পেরে।
তারপর দুইজন কিছুক্ষন চুপচাপ থাকলো।আর কফির মগে চুমুক দিতে লাগলো।
হঠাৎ অহনা বললো, আচ্ছা ভাইয়া ভালোবাসার সঙ্গা দিতে পারবেন?ভালোবাসা জিনিস টা আসলে কি?
অনিল তখন বললো, একে অপরের উপর ট্রাস্ট থাকতে হবে।যত বিপদ,বাধা বিপত্তি আসে না কেনো দুইজন দুইজনার হাত কখনোই ছাড়া যাবে না।একে অপরের সুখ দুঃখের সঙ্গী হয়ে থাকতে হবে।আরো অনেক কিছু আছে।আমি এর থেকে বেশি কিছু জানি না।
অহনা তখন বললো, আচ্ছা আরেকটা প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবেন?
–কি?
বলেন তো একজন মানুষ জীবনে কতবার প্রেমে পড়তে পারে?
অনিল তখন হাসতে হাসতে বললো,একজন মানুষ বার বার প্রেমে পড়তে পারে যতদিন না সে তার মনের মতো জীবনসঙ্গী খুঁজে না পায়।যখন কেউ তার পারফেক্ট জীবনসঙ্গী কে পেয়ে যায় তখন আর দ্বিতীয় বার প্রেমে সে কখনোই পড়বে না।যদি পড়ে যায় তখন ধরে নিতে হবে প্রথম জনকে সে ভুলে গেছে।
অহনা তখন অনিলের দিকে তাকিয়ে বললো আপনি কতবার প্রেমে পড়েছেন?
অনিল তখন নির্ধিদ্বায় বললো অনেকবার।
অহনা অনিলের কথা শুনে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো।আর বললো সিরিয়াসলি?
অনিল তখন বললো হ্যাঁ।তবে মানুষ টি একজনই।যার প্রেমে আমি অনেকবার পড়েছি।
অহনা তখন বললো আপনি আমার কথা বলছেন তাই না?
অনিল কোনো উত্তর দিলো না।
অহনা তখন বললো কিন্তু আমি কাকে ভালোবাসি সেটা শুনবেন না?
অনিল সেই কথা শুনে ছাদ থেকে চলে গেলো।কারণ সে আন্দাজ করতে পারছে যে অহনা আদ্রিয়ানের কথা বলতে চাচ্ছে।অহনা যে আদ্রিয়ান কে ভালোবেসে ফেলছে সেটা অনিল বুঝতে পারছে।সেজন্য অহনার মুখে তার ভালোবাসার মানুষের নাম শোনার বিন্দুমাত্র ইচ্ছা নাই তার।
অহনা অনিল কে এভাবে চলে যাওয়া দেখে বললো, এই যে অনিল ভাইয়া? চলে যাচ্ছেন কেনো?
কিন্তু অনিল আর পিছন ফিরেও তাকালো না।
🖤
আজ টুশু,অর্পা আর সনিয়া এসেছে অহনার মামার বাড়িতে।অহনা নিজে ইনভাইট করেছে তাদের।কি জন্য ইনভাইট করেছে সেটা বলে নি অহনা।শুধু বলেছে সারপ্রাইজ আছে।
এদিকে হঠাৎ আদ্রিয়ান এসে উপস্থিত হলো অহনার মামার বাড়িতে।কারণ অহনা নাকি তাকেও ইনভাইট করেছে।আদ্রিয়ান কে দেখে টুশু,অর্পা আর সনিয়া বেশ খুশি হলো।তারা ভাবলো শেষমেশ তাহলে অহনা আদ্রিয়ান কে তার মনের কথা বলবে।আর আদ্রিয়ান ও নিশ্চয় অহনার প্রতি আকৃষ্ট হয়েছে।আজ তাদের কে যে করেই হোক মিলিয়ে দিতেই হবে তাদের।
অনিল অফিস থেকে ফিরে সবাইকে দেখে একদম সারপ্রাইজড হয়ে গেলো।বিশেষ করে আদ্রিয়ান কে দেখে।অনিল আদ্রিয়ান কে দেখামাত্র হ্যান্ডশেক করলো।আর বললো কেমন আছেন আদ্রিয়ান?
আদ্রিয়ান হেসে উত্তর দিলো জ্বি ভালো আছি।
হঠাৎ আদ্রিয়ান বললো,
বেস্ট অফ লাক অনিল।আর কনগ্রাচুলেশনস।
অনিল বেশ অবাক হলো।হঠাৎ আদ্রিয়ান এভাবে বলছে কেনো?
টুশু,অর্পা আর সনিয়াও অবাক।তারা সবাই সবার মুখ চাওয়াচাওয়ি করতে লাগলো।
হঠাৎ মেরুন কালারের চুমকি বসানো একটা গাউন পরে অহনা আসলো সবার সামনে।তাকে বরাবরের মতো আজও বেশ সুন্দর লাগছিলো।অহনার পিছে পিছে তার মামা আর মামিও ছিলো।
অহনার মামি হঠাৎ অনিলের হাতে একটা রিং দিয়ে বললো বাবা অহনাকে পড়িয়ে দে।
অনিলের হাত পা কাঁপছিলো।তার মা কি বলছে এসব?
অহনা তখন বললো কি হলো পড়িয়ে দিন?
টুশু,অর্পা আর সনিয়া তা দেখে অহনাকে বললো,কি করছিস অহনা?অনিল ভাইয়া কে তুই বিয়ে করছিস?
অহনা হেসে হেসে বললো,হুম।
টুশু, অর্পা আর সনিয়া তখন আদ্রিয়ানের কাছে গিয়ে বললো, আপনি জানতেন আজ অহনা আর অনিলের এনগেজমেন্ট?
আদ্রিয়ান ও হেসে হেসে উত্তর দিলো হ্যাঁ,সেজন্যই তো এসেছি আমি।
টুশু অর্পা আর সনিয়া আর কিছু বললো না কাউকে।তবে তারা ভীষণ কষ্ট পেলো।তারা চেয়েছিলো অহনা আর আদ্রিয়ান সারাজীবনের জন্য এক হয়ে যাক।তাদের চাওয়াতেই তো আর সব হবে না।যেখানে অহনা আর আদ্রিয়ান ই চাইছে না এক হতে।
একজন কি সুন্দর বিয়ে করতে যাচ্ছে আর আরেকজন নাচতে নাচতে বিয়ে খেতে এসেছে।
অনিল কে চুপচাপ থাকা দেখে আদ্রিয়ান বললো,কি হলো অনিল?পড়িয়ে দাও।এতো লেট কেনো করছো?জানোই তো শুভ কাজে দেরি করতে নাই।
অনিল সেই কথা শুনে অহনার দিকে তাকিয়ে বললো কিন্তু অহনা তুই না?
–আমি কি?
অনিল বলতে ধরে আর বললো না।
অহনা তখন বললো আপনি কি নিয়ে চিন্তা করছেন তা আমি ভালো করেই জানি।আপনি মনে মনে ভাবছেন আমি আপনাকে ভালোবাসি কিনা?আর এই বিয়ে টা কি আমি নিজের ইচ্ছাতেই করছি না আমাকে মামা মামি জোর করে রাজি করিয়েছে?
অনিল তখন বললো হ্যাঁ।এই প্রশ্নগুলোই আমি করতে চেয়েছি?
অহনা তখন বললো আমি স্বজ্ঞানে আপনাকে বিয়ে করতে রাজি হয়েছি।মামা মামি কেউ আমাকে জোর করে নি।তবে এটা সত্যি যে এখনো আমি আপনাকে ভালোবাসতে পারি নি।বিয়ের পর থেকে ভালোবাসা শুরু করবো।এতে যদি আপনার কোনো আপত্তি না থাকে তাহলে রিং টা আমাকে পড়িয়ে দিতে পারেন।
অনিল সেই কথা শুনে বিসমিল্লাহ বলে অহনার হাতে রিং পড়িয়ে দিলো।কিন্তু অনিল যখন রিং পড়াচ্ছিলো অহনা চোখ বন্ধ করে ছিলো।অনিল রিং পড়ানোর সাথে সাথে অহনা সবাইকে বললো আমি একটু আমার বাবা মা ভাই আর বোনকে দেখিয়ে আসি রিং টা।ওকে।এই বলে অহনা দৌঁড়ে তার রুমে প্রবেশ করলো।
অন্যদিকে আদ্রিয়ান ও এক এক করে সবার থেকে বিদায় নিলো।কারণ তার আজ গুরুত্বপূর্ণ একটা শো আছে।অহনা ইনভাইট করেছিলো বিধায় তাকে আসতে হয়েছে।
আদ্রিয়ান হাসিখুশি মুখে চলে গেলো।
🖤
সন্ধ্যা ৭ঃ৩০ মিনিট।আদ্রিয়ানের শো স্টার্ট হয়েছে।উপস্থাপক ঘোষণা দিলেন কিছুক্ষনের মধ্যেই উপস্থিত হবে জনপ্রিয় সঙ্গীত শিল্পী আদ্রিয়ান। যিনি তার সুরেলা কন্ঠে ভরিয়ে দেবে আপনাদের মন।
আদ্রিয়ান গিটার হাতে উপস্থিত হলো।সে সবার উদ্দেশ্যে বললো,আজ আমি যে গানটা গাইবো সেই গানটা এখনো আমি রিলিজ করি নি।আর এই গানটা রিলিজ করার ইচ্ছাও নাই।আজ শুধুমাত্র আপনাদের উদ্দেশ্যে গানটি গাইবো আমি।এই বলে আদ্রিয়ান শুরু করলো তার গান।
“প্রেম প্রেম খেলা খেলতে খেলতে,
পড়েছি প্রেমে তোমার,
আমি অসহায়ের মতো চেয়ে আছি শুধু
তোমাকে বলার নেই কোনো অধিকার।
এটা প্রেম নাকি মায়া?
আজও জানি না।
এরকম ভালোবাসা কেনো আসে জীবনে
যে ভালোবাসায় পূর্নতা মেলে না?
আদ্রিয়ানের চোখে জল টলমল করছে।তবুও সে কাঁদলো না।তবে সে বুঝতে পারছে মোহনাকে সে পুরোপুরি ভুলে গেছে।নতুন করে অহনার প্রেমে পড়ে গেছে আদ্রিয়ান।
এটা কি ধরনের ভালোবাসা ভাবতেই আদ্রিয়ানের নিজের প্রতি নিজের রাগ হতে লাগলো।সে কিভাবে এতো তাড়াতাড়ি মোহনাকে ভুলে গেলো? সে যাকে একসময় পাগলের মতো ভালোবেসেছিলো তারই আপন বোনকে কি করে নতুন করে ভালোবাসার কথা ভাবছে?
না সে কিছুতেই ভুলবে না মোহনাকে।তার মনে সে অহনাকে আসতেই দেবে না।আদ্রিয়ান তার ইমোশনকে কন্ট্রোল করতে লাগলো।
অন্যদিকে অহনা নিজেও আদ্রিয়ানের লাইভ দেখছে।আদ্রিয়ানের গান শুনে তার চোখ দিয়েও টপটপ করে পানি পড়তে লাগলো।কারণ সে যে অনেক আগেই আদ্রিয়ানের প্রেমে পড়ে গেছে।আদ্রিয়ানের সাথে প্রেমের অভিনয় করতে গিয়েই সে দূর্বল হয়ে পড়েছে আদ্রিয়ানের প্রতি।কিন্তু তার যে আদ্রিয়ানের প্রতি প্রেম প্রকাশ করার কোনো ক্ষমতা নাই।আদ্রিয়ানের উপর শুধু যে মোহনার অধিকার আছে।আর তাকে ভালোবাসার অধিকারও শুধু মোহনার।সে বোন হয়ে কি করে তার বোনের প্রেমিক কে এভাবে ভালোবাসতে পারে?
যে ছেলে একসময় তার বোনের প্রাণ ছিলো,যার প্রতিটা নিঃশ্বাসে শুধু আদ্রিয়ানের নাম লেখা ছিলো সেই আদ্রিয়ানকে অহনা কখনোই ভালোবাসতে পারে না।এখনো মোহনার ডাইরির পাতা খুললে অহনার বুক টা ধক করে ওঠে।একটা মানুষ কি করে এতো ভালোবাসতে পারে তার প্রেমিক কে।
মোহনার শেষ চিঠিটা অহনার মন থেকে কিছুতেই সে মুছতে পারছে না।মোহনা লিখেছে,
প্রিয় আদ্রিয়ান,
যদি আমাকে জিজ্ঞেস করো তোমার কথা মনে পড়ে আমার কতবার?আমি উত্তরে বলবো আমার চোখের পাতা নড়ে যতবার।
যদি আমাকে জিজ্ঞেস করো তোমাকে ভালোবাসি কত?
আমি উত্তরে বলবো,আকাশে তারা আছে যত।
তোমাকে অনেক মেয়ে ভালোবাসলেও আমার মতো কেউ তোমাকে ভালোবাসতে পারবে না।কারণ তুমি যে শুধু আমার ভালোসাতেই পূর্ণ।
যদি পৃথিবীকে ধবংস করতে একদিন তৃতীয় মহাযুদ্ধ বাধে,
যদি কমে যায় কভু আলো আকাশের ঐ চাঁদে
সেদিনও তুমি শুধু আমারই থাকবে।
আর আমি যদি তোমার আগে মারা যায়,মাটির নিচে গিয়ে আমি অপেক্ষায় থাকবো প্রিয়।আমি জানি তুমি তখনো আমার হয়েই থাকবে।
মোহনার এই রকম একটা আবেগঘন চিঠি পড়ে সে কি করে আদ্রিয়ান কে ভালোবাসতে পারে?সেজন্য নিজের মনের কথা নিজের মনে রেখে সে হাসি মুখে অনিল কে বরণ করে নিলো।
তবে অহনা অনিল কে বিয়ে করলেও আদ্রিয়ান আর কাউকে বিয়ে করে নি।অহনার প্রতি সে কিছুদিন দূর্বল হলেও শেষ মেষ নিজেকে সে নিয়ন্ত্রণ করে।
অহনা আর আদ্রিয়ান দুইজনার কেউই জানে না যে প্রেম প্রেম খেলা খেলতে খেলতে দুইজন দুইজনকেই ভালোবেসেছিলো।কিন্তু তাদের এই ক্ষনিকের ভালোবাসা আর পূর্নতা পেলো না।সারাজীবনের জন্য তা অপূর্ণই রয়ে গেলো।এটাই হয়তো তাদের দুইজনের ভাগ্যে লেখা ছিলো।
সমাপ্ত