একজন_রুশা,দশম পর্ব (শেষ পর্ব)

#একজন_রুশা
দশম পর্ব (শেষ পর্ব)
ধারাবাহিক গল্প
নাহিদ ফারজানা সোমা

হাসপাতাল থেকে উত্তরা ফিরে এলে সপ্তাহ খানেক ওখানে থেকে নিজের বাড়ি ফিরে এলো রুশা। নিজের বাড়িতে আলাদা শান্তি। রফিক সাহেবের জন্য মন টানছিলো খুব। আর রুশা ছাড়া রফিক সাহেব বড্ড অসহায় বোধ করেন।

কিন্তু অসুস্থ উত্তরার জন্য মনটা বড্ড কেমন কেমন করে। মায়া বড় কঠিন জিনিস।একসময় বাপ-মা-ভাই-বোনদের ছাড়া থাকতে পারতো না রুশা, মা কোথাও কয়দিনের জন্য বেড়াতে গেলে কেঁদে কেটে বাড়ি মাথায় তুলতো,সেই বাবা-মায়ের সাথে একসময় দেখা হতো বছরে এক কি দুবার।আর তারপরতো কতো বছর চলে গেলো বাবা-মায়ের মুখ দুটো না দেখে।
বড় ভাইও চলে গেলেন।

একসময় তিন ছেলেমেয়ে, স্বামীকে ছাড়া থাকার কথা ভাবতেও পারতো না রুশা। এখন একেকজন একেক এলাকায়। সবাই ব্যস্ত। চাইলেই দেখা পাওয়া যায় না। জগতের কঠিন নিয়ম।

আগের দিনগুলো ভারি সুন্দর ছিলো। পরক্ষণেই মনে হয় পাঁচ নাতির কথা। ওরা বর্তমানে রুশার সব আনন্দের উৎস। আগে তো ঐ কচিমুখগুলো ছিলো না।

রুশা এখন আর গান গায় না। ছেলেমেয়েরা সাধাসাধি করে। কিন্তু রুশার ইচ্ছা করে না। বইপাগল মেয়ে এখন কদাচিৎ বই পড়ে। ভালো অনুষ্ঠানের অভাবে টিভিও দেখতে ইচ্ছে করে না। রফিক সাহেবও চুপচাপ থাকেন। তাঁর সাথে গল্প করে পোষায় না। নৈঋত -শ্রাবণী মহা ব্যস্ত। নৈঋত চেষ্টা করে,কিন্তু নানা কাজের ভীড়ে ইচ্ছে থাকলেও তেমন সময় বাবা-মা’কে দিতে পারে না। আগে পাড়া-পড়শীরা ছিলো আত্মীয়ের চেয়েও বেশি। ছোটবেলায় তো বটেই, উত্তরার যখন বিয়ে হলো,তখন পর্যন্ত পাড়া-প্রতিবেশীদের সান্নিধ্যে রুশার সুন্দর সময় কেটেছে। বিকাল হলে সবাই মিলে গল্প করা, এর ওর বাড়ি খাবার পাঠানো, প্রতিবেশীদের সাথে সবসময় ভীষণ হৃদ্যতা ছিলো রুশার। কিন্তু এখন প্রতিবেশীরা কেউ কাউকে চিনেও না। সবাই ছুটছে। টাকার জন্য, স্ট্যাটাস মেইনটেইন করার জন্য, বাচ্চাকে নামকরা স্কুলে দেওয়ার জন্য, বাড়ির জন্য, গাড়ির জন্য মানুষ শুধু ছুটছে। কিন্তু শান্তি পাচ্ছে না। কি একটা যান্ত্রিক যুগ আসলো।

বাচ্চারা এখন বড়দের থেকেও ব্যস্ত। লেখাপড়া, স্কুল-কলেজ,কোচিং, টিউটর আর নানারকম গ্যাজেট। বাসা আগে মেহমান দিয়ে জমজমাট থাকতো, এখন অতিথি তেমন আসে না বললেই চলে। হেকটিক শিডিউল, ট্রান্সপোর্টের অভাব, দুঃসহ জ্যাম এখন আত্মীয়তার সম্পর্কতেও ফাটল ধরিয়েছে। তাছাড়া সবাই যার যার নিউক্লিয়ার পরিবার নিয়ে ব্যস্ত।

কিন্তু রুশা ব্যাতিক্রম। আত্মীয় -বন্ধু সবার তত্ত্ব তালাশ করা তার স্বভাব। গোপনে কতো মানুষকে যে সাহায্য করে রুশা! এই কাজটি বরাবরই তার পছন্দের।

উত্তরা-ঈশানী মাসে দুই তিনবার আসে পরিবার পরিজন নিয়ে। কখনো সারাদিন থাকে,কখনো একবেলা। খুব ভালো লাগে তখন রফিক -রুশার। ওদের যাওয়ার সময় মন কাঁদে। যখন তিন ছেলেমেয়ে আর বাপ-মা মিলে পাঁচজনের একটা ছিমছাম সংসার ছিলো, প্রায় প্রতিদিনই কোনো না কোনো আপনজন বেড়াতে আসতো, মাঝেমধ্যেই বেড়াতে যাওয়া হতো এর বাড়ি,ওর বাড়ি,বইমেলা,আরও নানা জায়গায়, কি সুখের দিন ছিলো তখন। কারোর বাসায় যাওয়ার জন্য তখন অ্যাপয়েন্টমেন্ট করতে হতো না।তখনও মানুষের অফিস ছিলো,ব্যবসা ছিলো, ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া ছিল,জীবনে গতি ছিলো কিন্তু এমন দিশাহীন ছোটাছুটি ছিলো না।

ইদানিং রুশার উপরে অবসাদ ভর করেছে। কেমন একঘেঁয়ে নিস্তরঙ্গ জীবন। আহা,কিছুর সাথে জড়িত থাকলে বেশ হয়। যেমন, কোনো কিন্ডারগার্টেন, এতিম খানা, ওল্ড হোম, এইসব আর কি! কিন্তু সংসারের মায়া বড় মায়া। রফিক সাহেব মাঝেমধ্যে অসুস্থ হয়ে যান। তখন আশেপাশে কেউ না থাকলে কি হবে? নাতিগুলো স্কুল থেকে ফিরে ঠিক মতো খাবে তো? বুয়ারা তেমন যত্ন করবে?শিশুরা ক্ষুধায় কষ্ট পাবে, এটা ভাবনাতেও আনতে পারে না রুশা। সেখানে নিজের নাতি বলে কথা। বড় নাতি বুবুনকে পনেরো বছর বয়স পর্যন্ত রুশা খাইয়ে দিতো, নইলে তার মন ভরতো না।

অবশেষে নিস্তরঙ্গ জীবনে আলোড়ন এলো। অফিস টাইমে হঠাৎ নৈঋত -শ্রাবণী এসে হাজির। স্কুল থেকে ছেলেদেরও তুলে এনেছে। কি ব্যাপার? নৈঋত খুব স্বাভাবিক ভাবে বললো,” উত্তরার শরীরটা একটু খারাপ লাগছে। আশফাক ভাই ওকে হাসপাতালে নিয়ে যাবে কিছু টেস্ট করার জন্য। বুবুন,টুকুনের মন খারাপ। তোমরা যেয়ে কয়দিন ওদের ওখানে থাকো।”

রুশার বুকের মধ্যে ধ্বক করে উঠলো। এমন হলে উত্তরা বা আশফাক ফোন করতো রুশাকে। বলতো,”আম্মা,আমার শরীরটা খারাপ লাগছে। আমি কয়েকটা টেস্ট করতে যাচ্ছি। তুমি আর আব্বু এসে আমার বাসায় থাকো।”
উঁহু, তাও বলতো না। উত্তরা বাবা-মায়ের সঙ্গ পাওয়ার লোভেই বারবার তাঁদের আমন্ত্রণ জানাতো, থাকার জন্য জোরাজোরি করতো। টেস্ট করতে যাবে বলে ছেলেদের পাহারা দেওয়ার জন্য সে এতোদূর থেকে বাপ মাকে আসতে বলবে তা এক কথায় অবিশ্বাস্য।

রুশা নৈঋতের দিকে তাকালো। নৈঋত চোখ নামিয়ে নিলো।ছেলেটা ঠিক মতো মিথ্যাও বলতে পারে না।

“বুবুন-টুকুনের জন্য শুধু আমরাই যাবো, নাকি তোমরাও যাবে?”

শ্রাবণী খুব স্মার্ট ভাবে উত্তর দিলো,” নৈঋত আপনাদের সাথে যাবে। আমি এদের নিয়ে বাসায় একটু রেস্ট নিই।”

“এদের অসময়ে স্কুল থেকে তুলে আনলে কেন? ”

শ্রাবণী উত্তর হাতড়াতে লাগলো।

“কি হয়েছে আমার উত্তরার? নৈঋত, ঠিক করে বল্।”

রফিক সাহেবও এসে দাঁড়িয়েছেন স্ত্রীর পাশে।

নৈঋত কাঁপা গলায় বললো,” আব্বু-আম্মা, দেরি করা যাবে না, উত্তরা হঠাৎ খুবই অসুস্থ হয়ে পড়েছিলো, বুবুন ফোন করার পরে আশফাক ভাই দ্রুত হাসপাতাল থেকে অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে চলে এসেছিলো। উত্তরাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বুবুন-টুকুন খুব কান্নাকাটি করছে। ঈশানী, জোবায়ের বাবুকে নিয়ে রওনা হয়ে গেছে বুবুন-টুকুনের কাছে। এতোক্ষণে পৌঁছে গেছে হয়তো। উত্তরা তোমাদের দেখতে চাচ্ছে। ক্রাইসিস কেটে গেছে। এখন তাড়াতাড়ি চলো।”

নৈঋতের দুই ছেলে কান্নাকাটি করছে।ফুপুদের উপর তাদের ভীষণ টান।তারাও যেতে চাচ্ছে হাসপাতালে।

শ্রাবণী ছেলেদের সান্ত্বনা দিলো,” এখন হাসপাতালে বেশি ভীড় করা যাবে না। আমরা এখন ফুপির বাসায় যাবো। দাদা-দাদী আর বাবা যাবে শুধু হাসপাতালে। ”

গাড়িতে বসে রুশা উত্তরাকে ফোন দিলো। রিং হলো,কেউ ধরলো না। তারপরে ফোন দিলো আশফাককে। আশফাকের ফোন বন্ধ।

নৈঋত এই মুহূর্তে বাবা-মা’কে নিয়ে বেশি শংকিত। উত্তরা নেই। চলে গেছে কিছুক্ষণ আগে। বাসায় হঠাৎ জ্ঞান হারিয়ে পড়ে গিয়েছিল। খবর পেয়ে আশফাক এক মুহূর্ত সময় নষ্ট না করে বাসায় চলে এসেছিল। উত্তরার জ্ঞান এসেছিল কিছুক্ষণের জন্য। সে আশফাকের হাত ধরে বলেছিল, “ভালো থেকো। আমার বুবুন-টুকুনকে সারাজীবন আগলে রেখো। আব্বু-আম্মাকে দেখতে খুব ইচ্ছা করছে। ”

বুবুন-টুকুনও হাসপাতালে গেছে কাঁদতে কাঁদতে। ওদের প্রতিবেশীরা ভীষণ ভালো।একজন আংকেল -আন্টি তাদের কাছে থেকে সামলানোর চেষ্টা করছেন। বুবুনের এক চাচা আর দুই ফুপু পৌঁছে গেছেন হাসপাতালে। ঈশানীও পৌঁছে গেছে নিশ্চয় এতোক্ষণে। মৃত্যু সংবাদ বুবুন-টুকুনকে জানানো হয়নি। ঈশানীকেও না।

অ্যাম্বুলেন্সে আবার ঘোর কেটে গিয়েছিল উত্তরার। সে আশফাক আর দুই ছেলের গালে হাত দিয়ে আদর করেছিল। পানি খেতে চেয়েছিলো। এবং পুণরায় বলেছিল, “আব্বু,আম্মা কোথায়?ভাইয়া,ঈশা?”

হাসপাতালে সরাসরি আইসিইউতে নেওয়া হয়েছিল। ডাক্তাররা প্রাণপণ চেষ্টা করেছেন। উত্তরার শেষ কথা ছিল, “দেখা হলো না।”

নৈঋত জানে না কিভাবে বাপ-মা’কে সামলাবে সে। খবরটা দিবে কি করে?বুবুন-টুকুনকেই বা কিভাবে তাদের মায়ের মৃত্যু সংবাদ দেওয়া হবে?

মাঝেমধ্যে দায়িত্ব বা কর্তব্য হিমালয়ের মতো বিশাল হয়ে সামনে এসে দাঁড়ায়। নৈঋতের ইচ্ছা করছে চিৎকার করে কাঁদতে, বুকের ভারটা অসহনীয় হয়ে উঠছে,কিন্তু পিঠাপিঠি বোনের জন্য শোক প্রকাশের উপায় তার নেই।

রুশা ফোন করলেন ঈশানীকে। সে ফোন ধরলো না।

রফিক সাহেব বারবার নৈঋতকে জিজ্ঞেস করছেন, ” উত্তরার অবস্থা কেমন খারাপ? ক্রাইসিস কেটে গেছে বলছিস,তাহলে কি আজকে রিলিজ দেওয়ার সম্ভাবনা আছে? ”

” আজকেই রিলিজ দিবে।”

শুনে রফিক সাহেব আশ্বস্ত হন।

আশফাকের ভাই ফোন করেছেন। নৈঋত হ্যাঁ, হুঁ করে উত্তর দিলো। উত্তরাকে এখন বাসায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। কাজেই ওরাও যেন বাসায় চলে যায়।

রুশা চুপ করে উত্তরার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। শান্ত, ঘুমন্ত মুখ। বহু বছরের কষ্টের চির অবসান ঘটেছে। তাইতো শান্তির ছাপ চেহারায়।

রফিক সাহেব মেয়েকে জড়িয়ে হাউমাউ করে কাঁদছেন। নৈঋত বুবুনকে জড়িয়ে বুকফাটা কান্নায় ভেঙে পড়েছে। টুকুন নেতিয়ে আছে ঈশানীর কোলে। ঈশানী বোন পো কে বুকে চেপে চিৎকার করে কাঁদছে। শ্রাবণী কাঁদতে কাঁদতে ছেলেদের নিয়ে ঘরে ঢুকলো। আশফাক চুপ করে বসে আছে চেয়ারে। দৃষ্টি স্ত্রীর দিকে।

স্রোতের মতো মানুষ আসছে। রুশা অস্পষ্ট ভাবে তার ভাই বোন,ভাশুর জাকে দেখতে পেলো। তার মনে হচ্ছে সদ্য জন্মানো উত্তরার কথা। টুকটুকে ফর্সা একটা বাচ্চার কথা মনে হচ্ছে যার হাত-পাগুলো গোল গোল, মাথায় ফুরফুরে লালচে চুল। আরও অনেক কিছু মাথায় আসছে। জানালার ওপাশে চুলে ঢাকা ছোট্ট কপাল, ড্যাবডেবে দুটি চোখ। প্রাণভরে রুশাকে দেখছে।

তারপরে আর কিছু মনে নেই।

পরিশিষ্টঃ আজ বুবুনের বিয়ে। নানা-আপাকে সালাম করে বুবুন দু’জনকে জড়িয়ে ধরলো। তার বড় বড় চোখে পানি। রফিক সাহেবও কাঁদছেন। রুশা বললো,”ছি ভাইয়া,এমন শুভ দিনে কাঁদতে হয় না। ” রফিক সাহেব নাতির মাথায় পাগড়ি পরিয়ে দিলেন। বুবুন এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লেকচারার। পছন্দ করেছে সহপাঠীকে। মেয়েটা মনে হয় বেশ ভালো। বুয়েট থেকে পাশ করেছে।

টুকুন এই বছরে ঢাকা মেডিকেলে চান্স পেলো।

উত্তরার চলে যাওয়ার পরে শক্ত হাতে হাল ধরেছিল রুশা। আশফাক ব্যস্ততম চিকিৎসক। ছেলেদের তেমন সময় দিতে পারতো না। বুবুন -টুকুন ভীষণ ভেঙে পড়েছিল। পাগলের মতো আচরণ করতো দুই ভাই। রুশা ওদেরকে নিজের কাছে নিয়ে এসেছিলো। রুশা সহ সবার আদরে যত্নে,সাইকোথেরাপিস্টের অনবরত কাউন্সেলিং এ বুবুন -টুকুন আস্তে আস্তে সুস্থ হয়ে উঠলো। ওদের মুখে একটু হাসি ফুটাবার জন্য রুশা,রফিক সাহেব,আশফাক, নৈঋত, শ্রাবণী, ঈশানী,জুবায়ের, ওদের চাচা-ফুপুদের প্রচেষ্টার অন্ত থাকে না। আশফাকের বাবা-মা অনেক আগেই মারা গেছেন। রুশা বহু কষ্টে আশফাককে দ্বিতীয় বিয়েতে রাজি করায়। মেয়েটা বেশ ভালো। বুবুন -টুকুনকেও খুব আদর করে। আশফাক খুব চায় ছেলেদের নিজের কাছে রাখতে। রুশা দেয় না। ছেলেদের আর শ্বশুর-শাশুড়ির মানসিক অবস্থা বুঝতে পেরে আশফাক জোর করে না। তার একটি মেয়ে হয়েছে। রুশা তার অন্যান্য নাতিদের মতো এই বাচ্চাটাকেও আদর করে। প্রায়ই সে নাতিদের নিয়ে আশফাকের বাসায় যায়। রফিক সাহেব যেতে চান না,বুবুন -টুকুনও না। রুশারও যেতে ইচ্ছা করে না। কিন্তু যেতে হয়। আশফাক-জুবায়েরকে রুশা পুত্র জ্ঞান করে। তাছাড়া বাবার সাথে ছেলেদের গাঢ় সম্পর্ক থাকাটা খুবই জরুরি। তাই রুশা যায়। চারিদিকে উত্তরার কতো শত স্মৃতি। উত্তরার সবকিছু আশফাক সুন্দর ভাবে গুছিয়ে রেখেছে, চিরুনীটাও। হল ঘরের দেওয়ালে উত্তরার বিশাল পেইন্টিং। ভীষণ জীবন্ত। বুবুন -টুকুন যে বাসায় লাফিয়ে ঝাঁপিয়ে বেড়াতো, সেই বাসায় এখন চুপচাপ মেহমানের মতো বসে থাকে। নৈঋত আর ঈশানীর ছেলেরাও। অথচ উত্তরার বাসা ছিলো তাদের কাছে অতি আনন্দময়, অতি আকাঙ্খিত পিকনিক স্পট যেখানে যা মন চায়,তাই করা যায়, যেখানে শুধুই আদর আর আদর। রুশা হঠাৎ হঠাৎ উত্তরার গলা শুনতে পায়,”আম্মা,চুলটা একটু বেঁধে দাও না।”

সকালে রফিক সাহেব,আশফাক,বুবুন,টুকুন, নৈঋত, জুবায়ের,নৈঋত ও ঈশানীর ছেলেরা,বুবুনের চাচারা,আরও অনেকে উত্তরার কবর জিয়ারত করে এসেছেন।

বড় ছেলের বিয়ে উপলক্ষে আশফাক এলাহি আয়োজন করেছে। চারিদিকে হৈ চৈ,আনন্দ -উৎসব। কিন্তু এরই মধ্যে গুটিকয়েক মানুষের মনে ব্যথার সমুদ্র।

নাত বৌ রুশাকে সালাম করছে। উত্তরার বড় বৌমা। উত্তরা কি দেখতে পাচ্ছে? রুশার বুক ফেটে কান্না আসছে। অন্যদের ভালো রাখার জন্য সে প্রবল শোক সবসময় বুকের গভীরে লুকিয়ে রাখে, তার চোখে পানি দেখলে বুবুন -টুকুন-রফিক সাহেব ভেঙে পড়েন, তাই মেয়েটার জন্য প্রাণ খুলে কাঁদা হয়না।রাতের অন্ধকার ঘরে খুব সন্তর্পণে কাঁদে রুশা। আজ বুবুনের বৌকে দেখে সে আর নিজেকে সামলাতে পারলো না। নাত বৌয়ের চেহারা আর গড়নের সাথে উত্তরার ভীষণ মিল। বুবুন এজন্যই এই মেয়ের প্রেমে পড়েছিলো। রুশা নববধূকে জড়িয়ে ধরে চিৎকার করে কেঁদে উঠলো,”উত্তরা….”।

সমাপ্ত।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here