#আমি_জান্নাত
#পর্বঃ০৫
#ফারজানা_আক্তার
যাকে নিয়ে শত শত স্বপ্ন সাজিয়েছিলাম আমি সে কিনা তার নতুন মানুষটাকে নিয়ে এভাবে সোসাল মিডিয়ায় ছবি দিচ্ছে। কিভাবে এতোটা চেঞ্জ আসে মানুষের মধ্যে? ভাবতে ইচ্ছে করছে না আর কিছু। আল্লাহর কাছে হাজার শুকরিয়া বিয়েটা ভেঙ্গে দেওয়ার জন্য। এই মানুষটার সাথে যদি আমার বিয়ে হয়েই যেতো সেদিন তবে সে আমাকেও এভাবে পৃথিবী কে দেখিয়ে বেড়াতো।
ফোন হাতে নিতেই হৃদয় আর তার সদ্য বিবাহ করা বউয়ের ছবি আমার চোখের সামনে পড়লো। হৃদয় আমার প্রেমিক নয় তবুও বুকটা কেঁপে উঠলো ছবিগুলো দেখে। পারিবারিক ভাবেই আমার আর হৃদয়ের বিয়ে ঠিক হয়েছিল আর এই বিয়ের দিন পর্যন্ত হৃদয় কে নিয়ে ছিলো আমার চোখে মুখে শত শত স্বপ্ন। শুনেছিলাম আমার সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়েই হৃদয় আমাকে বিয়ে করতে চেয়েছিলো। আর তাইতো আমার সৌন্দর্য নষ্ট হওয়ার সাথে সাথে বিয়েটা ভেঙ্গে দিলো আর মুহুর্তেই নতুন কাউকে নিয়ে সংসার সাজিয়ে নিলো। একটিবার হাসপাতালে যেয়ে দেখে আসেনি হৃদয় আমাকে, এই কারণেই হয়তো বলা হয় যে দেহের সৌন্দর্য চিরকাল থাকেনা তাই কারো রুপের প্রেমে না পরে ব্যাক্তিত্বের প্রেমে পরতে হয়।
এসব ভাবতে ভাবতে কখন চোখ দু’টো লেগে এসেছে বুঝতে পারিনি। সকালে আজানের ধ্বনিতে ঘুম ভাঙ্গে আমার। কিছুক্ষণ অলস ভাবে শুয়ে থেকে লাফ দিয়ে উঠে দাঁড়ালাম। দ্রুত ফ্রেশ হয়ে ওজু করে নামাযে দাঁড়িয়ে গেলাম।
আজ কলেজে প্রথম দিন আমার। খুব সুন্দর অনুভূতি হচ্ছে আমার। নাহিদের প্রথম হার এটা তাই খুশিটা দিগুণ বেড়ে গেলো।
সকালে নাস্তা খেয়ে সম্পূর্ণ পর্দার সাথে রওনা দিলাম কলেজের উদ্দেশ্যে। ভাইয়া আমার সাথে যেতে চাইলেও আমি একাই রওনা হলাম। বাসা থেকে বের হয়ে কিছুদূর যেতে না যেতেই এক কাকি পেঁছন থেকে ডাক দিয়ে জিজ্ঞেস করেন আমি কে আর কার বাসায় এসেছি? কাকির কথা শুনে থম মেরে দাঁড়িয়ে থাকলাম কিছুক্ষণ। পূর্ণ পর্দা করায় কাকি আমায় চিনতে পারছেনা। কাকি মনে করেছে আমি বেড়াতে এসেছি কারো বাসায়। আমি খানিক চুপ থেকে কাকি কে বললাম
“জ্বী আমি জান্নাত”
আমার কথা শুনে কাকি আরো ভালো করে খুঁটে খুঁটে দেখতে লাগলেন আমাকে। আমি আর কিছু না বলে হাঁটা ধরলাম আবারো, যতক্ষণ গাড়ির রাস্তায় পৌঁছায় নি ততক্ষণ এভাবে সবাইকে বলে বলে যেতে হয়েছে যে আমি জান্নাত আমি জান্নাত। সবাই আমার পরিচয় পেয়ে অবাক হয়েছে লক্ষ করেছি আমি। নাহিদ আমার এতো বড় ক্ষতি করার পরেও আমি একা রাস্তায় বের হবো সেটা হয়তো কেউ কল্পনাও করেনি।
কলেজে পা রাখতেই যেনো অনুভূতি গুলো প্রাণভরে শ্বাস নিচ্ছে। যেহেতু মহিলা কলেজ তাই সবাই নিকাব টা খুলে রেখেছে কিন্তু আমি যে চাইলেও তা পারবোনা। আজকে প্রথম দিন এসেও অনেক মেয়ের সাথে পরিচয় হয়ে গিয়েছে আমার। কয়েকটা মেয়ে তো খুব ক্লোজ হয়ে গিয়েছে তবুও তারা আমাকে দিয়ে নিকাব খুলাতে সফল হয়নি।
কলেজ থেকে বাসায় ফেরার পথেই নয়নার সাথে দেখা হয়। নয়না ভার্সিটি থেকে ফিরছিলো। অনার্স প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী নয়না, আফসোস হয় কেননা হুট করে পড়ালেখা বন্ধ না করলে আমিও নয়নার সাথেই থাকতাম। আমার কলেজ আর নয়নার কলেজ একই পথে। আমার কলেজ পেরিয়ে একটু গেলেই নয়নার কলেজ। ভালোই হয়েছে, একসাথে আসা যাওয়া যাবে।
আমি আর নয়না কথা বলতে বলতে ফিরছিলাম তখন হুট করে নয়না বলে
“একটা কথা শুনবি?”
আমিও খুব আগ্রহের সাথে উত্তর করলাম “কি কথা রে?”
নয়না তখন একটু নরম সুরে বললো “নাহিদ কে দেখলাম মুখে রুমাল বেঁধে হাঁটে। ওই নরপশুটা মুখ নষ্ট করেছে তোর কিন্তু মুখ লুকাচ্ছে নিজে। আমার ওকে দেখলেই ইচ্ছে করে খু’ন করতে।”
নয়নার কথা শুনে খুব হাসি পেলো আমার। নয়নার হাত ধরে বললাম “একটা সিক্রেট শুনবি?”
নয়না বলে “তোর এমন কি সিক্রেট আছে যা আমি জানিনা?”
নয়না হয়তো কথাটা বলার সময় কিছুটা ভ্রু কুঁচকেছিলো কিন্তু নিকাবের জন্য তা আমি স্পষ্ট দেখতে পারিনি।
নয়না অধিক আগ্রহে আমার দিকে তাকিয়ে রইলো। তারপর গতকালের সব ঘটনা নয়নাকে খুলে বললাম। নয়না তো হাসতে হাসতে শেষ, নয়না কখনো ভাবতেও পারেনি আমি এমন একটা অদ্ভুত কাজ করে বসবো। নয়না খুশি হয়েছে খুব আর দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠে “ভালো করেছিস যা করেছিস, কিন্তু সিগারেটের দাগ তো অল্প দিনেই চলে যাবে”
নয়না কে শান্তনা দিয়ে বললাম “মন খারাপ করিস কেনো? কু’ত্তা আমাদের কে কামড় দিলে কি আমরাও কু’ত্তা কে কামড় দিবো নাকি বরং কু’ত্তা যেনো দ্বিতীয় বার আমাদের কে স্পর্শ করতে না পারে সইে ব্যবস্থা করতে হবে”।
নয়না চিন্তিত সুরে বলে ” কি করবি তাহলে এখন?”
কিছুটা মন খারাপ করে বললাম “জানিনা কি করবো তবে উচিত শিক্ষা দিবোই দিবো নাহিদকে”।
নয়না আমার হাতে হাত রেখে বলল “যা-ই করিস না কেনো সবসময়ই পাশে আছি তোর”।
____________
বাসায় এসে গোসল করে খেতে খেতে সন্ধ্যা হয়ে এলো। আমি খাবার খেয়ে রুমের দিকে পা বাড়াতেই খেয়াল করলাম আম্মু নিজের রুমে বসে কার সাথে জানি ফোনে কথা বলছে।
“মেয়েটার কপালে কি আছে জানিনা বোন, এই বিশ্রী চেহারা দেখে কেউই বিয়ে করতে রাজি হবেনা আমার মেয়েকে। আমার ফুলের মতো মেয়ের জীবন নষ্ট হয়ে গেছে রে বোন। আমার মেয়ের ভবিষ্যৎ অন্ধকার হয়ে গেছে। ”
আম্মুর কথা গুলো শুনে মন খারাপ হয়ে গেলো খুব। বুকটা মুচড়ে উঠলো হঠাৎ। কান্না করতে করতে বলছে আম্মু কথাগুলো। আম্মু একটা কথা ভুল বলেননি যে বিশ্রী চেহারা নিয়ে কে বিয়ে করবে আমায়। আসলেই এটাই সত্য, আমার নিজের কাছেও আমার নতুন চেহারা টা খুব বিশ্রী লাগে আর মানুষের কাছে তো লাগবেই।
আনমনা হয়ে হাঁটতে হাঁটতে নিজের রুমে চলে আসলাম। মন খারাপ থাকলে তখন কিছুই ভালো লাগেনা আর। মাগরিবের আজান দিলে ওজু করে নামাযে দাঁড়িয়ে গেলাম। নমাযের চেয়ে প্রশান্তি আর কিছুতেই নেই। নামায শেষ করে রান্নাঘরে যেয়ে এক মগ কফি বানিয়ে নিজের রুমে চলে আসলাম। পড়ার টেবিলে বসে ভাবতে লাগলাম আগামীকাল থানায় যাবো। বাকি সবাই গেলেও থানায় নাহিদের নামে ডায়রি করতে আমি কিন্তু যায়নি। আগামীকাল আমি নিজেই যাবো তারপর দেখবো নাহিদ কিভাবে নিজেকে বাঁচাই।
______________
পরের দিন কলেজ থেকে ফেরার পথে নয়না কে নিয়ে থানায় গেলাম। পুলিশকে সব খুলে বলেছি+সব মেডিকেল রিপোর্ট দেখিয়েছি তবুও তারা নাহিদকে দোষী শিকার করতে রাজি নয়। একটা মহিলা পুলিশকে আঁড়ালে মুখও দেখিয়েছি তবুও কাজ হয়নি, মহিলা পুলিশ টি মাথা নিচু করে বললেন “আমিও একটা মেয়ে, আপনার কষ্ট আমি বুঝি তবে আমি নিরুপায়, আমার হাতে কিছুই নেই।”
মহিলার কথা ভালো লেগেছে তবে মনটা ভীষণ খারাপ হয়ে গিয়েছে।
থানা থেকে ফেরার পথে নয়নার মুখে বিষন্নতার চাপ দেখে আরো বেশি খারাপ লাগা শুরু হয়। মেয়েটা একটু বেশিই ভালোবেসে আমায়।
এভাবেই কেটে গেলো অনেকগুলো দিন। দেখতে দেখতে আমার ইন্টার ফাইনাল পরিক্ষার দিন চলে এলো। শেষ পরিক্ষার দিন পরিক্ষা শেষে এক কেজি মিষ্টি কিনে হাঁটা ধরলাম নাহিদ দের বাসায় যাওয়ার উদ্দেশ্যে। ওদের বাসায় গিয়ে সদর দরজায় পা রাখতেই দেখি সবাই ড্রয়িং রুমে বসে কি জানি আলোচনা করছে। অনেকদিন ধরে পর্দা করার সুবিধার্থে সবাই আমাকে এক পলকেই চিনে ফেলে৷ আমাকে দেখে ভূত দেখার মতো করে তাকিয়ে আছে সবাই। আমি আর এক মিনিটও না দাঁড়িয়ে এগিয়ে গেলাম নাহিদের দিকে আর______
#চলবে_ইনশাআল্লাহ