#ভয়ানক_ভালোবাসা,পার্ট:১০
#Writer:#Meheruma_Imtaz_Raya(S.Q)#
ঘুমের ঔষুধ টা নিয়ে পেছন ফিরতেই রিধি ঘাবড়ে গেলো কারণ তাঁর সামনে রুদ্র দাঁড়িয়ে আছে ,
– কি করছো রিধি ?( হাসি মুখে)
-না মানে আসলে,,( আমতা আমতা করে)
– তোমার হাতে ঘুমের ঔষুধ কেনো?( হালকা সন্দেহের চোখে)
– আসলে ,আমার মাথাটা অনেক ব্যথা করছিলো ,ঘুমানোর চেষ্টা করলাম কিন্তু ঘুম আসেনি তাই ঔষুধ খুঁজছিলাম
– ওহ আচ্ছা ,তোমার কি বেশি খারাপ লাগছে ?
-হ্যা একটু ,
– তাহলে যাও তুমি রেস্ট নাও কিন্তু ঘুমের ঔষুধ খেয়োনা কারণ ডক্টরের পরামর্শ ছাড়া ঘুমের ঔষুধ খাওয়া ঠিক না , শরীরে এর বেড এফেক্ট পরতে পারে
– নিজে যখন আমার খাবারে ঘুমের ঔষুধ মিশিয়েছিলে তখন এসব কথা মনে ছিলো না তাইনা ( মনে মনে)
– কি ভাবছো?
– আমার ঔষুধ খাওয়ার অভ্যাস আছে ,আমার ঘুমের একটু প্রব্লেম আছে যার কারণে ডক্টর ঘুমের ঔষুধ দিয়েছিলো ,তুমি চিন্তা করোনা
– ওকে ,
-তুমি কি দুপুরের জন্য খাবার এনেছো ?
– না এখনো আনিনি , অনলাইনে অর্ডার দিবো
– ওহ আচ্ছা ,আমি ঘরে যাচ্ছি
– হুম যাও
রিধি চলে যাওয়ার পর রুদ্র রিধির যাওয়ার পানে তাকিয়ে রহস্যময় হাসি দিলো ,,
এদিকে,
রিধির চিন্তায় মুহিব সারা রাত ঠিক মতো ঘুমাতে পারেনি ,জানালার পাশে বসে রিধি আর মুহিবের একসাথে তোলা ছবি দেখছে মুহিব আর রিধির কথা ভাবছে ,
– সারা রাত ঠিক মতো ঘুমাওনি তাইনা মুহিব ভাইয়া ?
– হুম
পেছনে না তাকিয়েই উত্তর দিলো মুহিব , মুহিব এর পাশে এসে বসলো মিরাজ ,
– নিয়াজ ফোন দিয়েছিলো ,বাবা নাকি আরও অসুস্থ হয়ে পড়ছে ,নিয়াজ কোনো রকমে মা কে সামলিয়ে রাখছে, আল্লাহ জানেন রিধিপু এখন কেমন আছে ,
– আমার কিছু ভালো লাগছেনা মিরাজ ,তোমার রিধিপু কে খুব দেখতে ইচ্ছে করছে
– ইনশাআল্লাহ আমরা খুব তাড়াতাড়ি রিধিপু কে খুঁজে পাবো ,মুহিব ভাইয়া তুমি একটু রেস্ট নাও প্লিজ ,তোমাকে এখন সুস্থ থাকতে হবে ,তুমি যদি অসুস্থ হয়ে পড়ো তাহলে রিধিপু কে খুঁজে বের করবে কিভাবে ,
– আমার ঘুম আসছেনা মিরাজ ,
– একটু চেষ্টা করো
– ঠিক আছে , কিন্তু রিধির যদি কোনো খোঁজ পাও সাথে সাথে আমাকে জানাবা ওকে ?
– ঠিক আছে ,তুমি ঘুমাও আমি এখন তাহলে যাচ্ছি ,
মিরাজ চলে গেলো ,মুহিব রিধির কথা ভাবতে ভাবতে ঘুমের দেশে তলিয়ে যাচ্ছিলো তখনি হঠাৎ হন্তদন্ত হয়ে মিরাজ ঘরে ঢুকলো ,
-মুহিব ভাইয়া
আচমকা মিরাজ আসায় মুহিব ভয় পেয়ে যায়,
– কি হয়েছে মিরাজ ?
– রুদ্রের খোঁজ পাওয়া গিয়েছে
দুপুর ১টা ,,
রিধি গোসল শেষ করে নামাজ পড়ে ড্রয়িং রুমে এসে দেখলো রুদ্র সোফায় বসে ফোন টিপছে ,
– খাবার আনিয়েছো ?
– আমি অর্ডার দিয়েছি , বেশিক্ষণ লাগবেনা
– ওহ
তখনি বেল বেজে উঠলো , রুদ্র গিয়ে গেট খুললো , রুদ্রের থেকে রিধি একটু দূরেই দাঁড়িয়ে ছিলো ,রিধির সাথে ডেলিভারি বয় এর চোখাচোখি হলো ,রিধি ইশারায় সাহায্য চাইলো রুদ্র সামনে থাকায় তেমন কিছু করতে পারলো না । ডেলিভারি বয় এর দৃষ্টি অনুসরণ করে রুদ্র দেখলো ছেলেটি রিধির দিকে তাকিয়ে আছে ,,
– আপনার পেমেন্ট কমপ্লিট করা হয়েছে তাই আপনি এখন আসতে পারেন ( গম্ভীর কণ্ঠে)
– ওকে স্যার ( আমতা আমতা করে)
রুদ্র গেট লাগিয়ে দিলো ,
– খাবার চলে এসেছে ,তুমি খাবার রেডি করো আমি গোসল করে আসছি ওকে
– আজকেই তোমার সাথে এই বাড়িতে আমার শেষ দিন , এখান থেকে আমি আজ পালাবোই (মনে মনে)
-কি ভাবছো ?
– না কিছু না,
– তুমি রেডি করো ,
– ঠিক আছে
রুদ্র চলে যাওয়ার পর রিধি খাবার গুলো নিয়ে রান্না ঘরে গেলো ,রুদ্রের জন্য একটা প্লেটে খাবার বারলো তারপর ৩টা ঘুমের ঔষুধ মিশিয়ে দিলো । খাবার গুলো টেবিলে পরিবেশন করলো তারপর রুদ্র কে ডাক দিলো, রুদ্র হাত ধুয়ে টেবিলে বসে পরলো ।রিধি কে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে রুদ্র বললো ,
– রিধি তুমি দাঁড়িয়ে আছো কেনো ?বসো
– হ্যা বসছি ,
রিধি খেতে বসলো । খাওয়ার মাঝে মাঝে আর চোখে রুদ্রের দিকে তাকাচ্ছে, রুদ্র অনেক তৃপ্তি করেই খাচ্ছে ,
– খাও খাও আরও ভালো করে খাও ,তারপর তুমি যখন গভীর নিদ্রায় মগ্ন থাকবে সেই সুযোগে এই বন্দি কারাগার থেকে আমি চিরতরের জন্য পালিয়ে যাবো ( মনে মনে)
– খাবার টা অনেক ভালো হয়েছে তাইনা রিধি ?
– হুম
রুদ্র খাওয়া শেষ করে উঠে গেলো ।রিধি খাওয়া শেষ করে সব কিছু গুছিয়ে নিজের ঘরে গেলো ,আর রুদ্রের ঘুমানোর অপেক্ষা করতে লাগলো ।
এদিকে,,
গাড়িতে বসে আছে মুহিব ,মাহির ,মিরাজ আর পুলিশ ফোর্স । উদ্দেশ্যে জাফলং যাবে তাঁরা , কারণ মাহিরের কাছে খবর আছে রুদ্র কে জাফলং এ দেখা গিয়েছে যদিও খবর টা কতটুকু সত্য সেটা মাহির জানে না কিন্তু তাও মাহির কোনো রিস্ক নিতে চাচ্ছে না তাই তাঁরা রওনা দিয়েছে ,
– অফিসার মাহির আর কত দূর বাকি ?
– আর বেশিদূর নয় ,
রিধি ড্রয়িং রুমে গেলো ,গিয়ে দেখলো রুদ্র ঘুমিয়ে পড়েছে ,রিধি সিওর হওয়ার জন্য রুদ্র কে ডাকলো কিন্তু রুদ্র কোনো সাড়া দেয়নি ।রিধি মেইন গেট খুলতে গেলো কিন্তু দেখলো লক করা তাই আস্তে আস্তে রুদ্রের কাছে গিয়ে পকেট থেকে চাবি বের করলো তার সাথে কিছু টাকাও নিয়ে নিলো ।গেট খুলে চাবি নিয়েই রিধি বের হয়ে গেলো ,তারপর বাহির দিক থেকে গেট লক করে দিলো।
– অবশেষে আমি বের হয়েছি , কিন্তু এটা কোন জায়গা ? আমি তো কিছুই চিনি না ।
আশেপাশে তাকাতেই রিধির চোখ পড়লো সেই দোকান টায় ,রিধি তারাতাড়ি দোকান টা তে গেলো । দোকানে গিয়ে দেখলো একজন মধ্যবয়স্ক লোক সেখানে বসে আছে ,রিধি বললো ,
– আংকেল আপনার কাছে ফোন আছে ?
– হ্যা আছে ,
– আমাকে একটু দিবেন প্লিজ,
– এই নাও , কিন্তু নেটওয়ার্ক এর সমস্যা আছে,,
রিধি ফোন টা নিয়ে তারাতাড়ি মুহিবের নাম্বারে কল দিলো , ২বার রিং হওয়ার পর রিসিভ হলো ,
-হ্যালো মুহিব আমি রিধি ,,
– রিধি কোথায় তুমি ( উত্তেজিত কন্ঠে)
– আমি জানি না মুহিব , দাঁড়াও আমি জিজ্ঞেস করি ,
রিধি দোকানের লোকটাকে জিজ্ঞাসা করলো ,
– আংকেল এই জায়গাটার নাম কি ?
– এই জায়গাটা জাফলং এর মায়াবী ঝর্ণার পাশে,,
মুহিব তারাতাড়ি মাহির কে বললো রিধির লোকেশন ট্রেক করতে
রিধি মুহিব কে বললো ,
– মুহিব আমি জাফলং এর মায়াবী ঝর্ণার আশে পাশে আছি ,মুহিব আমাকে বাঁচাও প্লিজ
– রিধি তুমি চিন্তা করোনা আমরা আসছি ,
তখনি নেটওয়ার্ক এর সমস্যা শুরু হতে লাগলো ,
– হ্যালো মুহিব হ্যালো
কলটা কেটে গেলো ,রিধি এরপর কল দেয়ার চেষ্টা করলো কিন্তু কল গেলো না ,
– আংকেল এখান থেকে বাস স্ট্যান্ড কত দূর?
– বেশি দূর না , হেঁটে গেলে ২০মিনিট লাগবে আর যদি অটো তে যাও তাহলে ১৫ মিনিট লাগবে ,
– আংকেল অটো কোথায় পাবো?
– এখান থেকে সোজা ৫ মিনিট হাঁটতে থাকো তাহলে বড় রাস্তা দেখবে ,ওখানেই অটো পাবে
– আচ্ছা ধন্যবাদ ,
রিধি কথা না বাড়িয়ে তারাতাড়ি হাঁটতে লাগলো হঠাৎ পেছন থেকে কেউ রিধির নাম ধরে ডাক দিলো ।রিধি পেছন ফিরে তাকাতেই ভয়ে রিধির সারা শরীর যেনো বরফ হয়ে গেলো , কারণ সয়ং রুদ্র দাঁড়িয়ে আছে ।রিধি আর কিছু না ভেবেই দৌড় দিলো । দৌড়াতে দৌড়াতে বড় রাস্তায় না গিয়ে রিধি একটা জঙ্গল এর ভেতরে ঢুকে গেলো , দৌড়াতে দৌড়াতে অনেক দূর পর্যন্ত চলে আসলো ,রিধি পেছনে তাকিয়ে দেখলো রুদ্রকে দেখা যাচ্ছে না ,রিধি আরেকটু সামনে এগিয়ে দেখলো একটা উঁচু জায়গা রয়েছে ,রিধি ওখানে গিয়ে একটু বসলো ,
– আজ অনেক বছর পর এভাবে দৌড়ালাম ,,
একটু পর রিধির কাছে মনে হলো কেউ এখানে আসছে ,
– রিধি ,
রিধি ভয়ার্ত দৃষ্টি নিয়ে পেছন ফিরে তাকাতেই রুদ্র কে দেখতে পেলো ,
– এবার তুমি কোথায় পালাবে রিধি ,,
#চলবে ,,