শূন্য_অনুভূতি পার্ট:”পাঁচ”

শূন্য_অনুভূতি পার্ট:”পাঁচ”
#রোকসানা_ইয়াসমিন

“নিজেকে এতটা ইমপোর্টেন্ট কেন ভাবো তুমি?তুমি এটা কী করে ভেবে নিলে যে তুমি আমার সামনে ওই ছেলের গায়ে ঢলে পরলে আমি রেগে যাবো।তা দেখে আমি জেলাস ফিল করবো।লাইক সিরিয়াসলি?কে তুমি হ্যা?হু আর ইউ?নাথিং।তুমি আমার জীবনে কোনো ইমপোটেন্স ই রাখো না।তাই তুমি করা ওপর ঢলে পড়ছো না পড়ছো তাতে আমার কিচ্ছু আসে যায় না…..”
উনি সেই তখন থেকে বকবক করেই যাচ্ছেন।উনার কথা গুলো শুনে আমার খারাপ লাগা প্রয়োজন।কিন্তু আমার মোটেও খারাপ লাগছে না।আমি হয়তো এই কথা গুলোই আশা করেছিলাম ওনার কাছে।তাই খারাপ লাগাটা অনেকটা নিয়ন্ত্রণে আছে।তবে হাতের ব্যথা টা নিয়ন্ত্রণে নেই।সেই কখন থেকে উনি আমার হাত মুচড়ে ধরে আছেন।বার বার দাঁতে দাঁত চেপে কথা বলতে বলতে মোচড়ানো হাত আরো শক্ত করে ধরছেন।যার দরুণ ব্যথায় আমার প্রাণ যায় যায়।কি করবো না করবো কিছুই বুঝতে না পেরে উনার বুকে আলতো করে নিজের মাথা রাখলাম।আমার এমন কাজে উনি খানিকটা ভড়কে গেলেন।কিছুক্ষণের জন্য কথা বলা বন্ধ করে দম ধরে রইলেন।উনার ঘন হয়ে আসা হৃদস্পন্দন আমি স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছি।ইচ্ছে করছে দুই হাতে ওনাকে জড়িয়ে ধরে সারাজীবন এই স্পন্দন শুনে যাই।কিন্তু উপায় নেই।উনি আমার এক হাত এখনো মুচড়ে ধরে রয়েছেন।যদিও এখন বাঁধন একটু হাল্কা হয়ে এসেছে।তবে যদি বেশিক্ষণ এভাবে থাকি তবে যে এই বাঁধন দ্বিতীয় বার মজবুত হবে না তার কোনো গ্যারান্টি নেই।তাই উনার হাত থেকে নিজেকে বাঁচানোর জন্য উনার বুকে মাথা রেখে গোমড়া মুখে বলে উঠলাম,
“জানেন,আজ বিকেল থেকে আমার মাথায় প্রচন্ড যন্ত্রণা করছে।ভেবেছিলাম বাড়ি এসে একটু রেস্ট নেব কিন্তু দেখুন,বাড়িতে এসে সেই আপনি বকাঝকা শুরু করলেন।আমিও তো মানুষ।আমার কী খারাপ লাগে না বলুন।”
উনি এখনো চুপ করে দাঁড়িয়ে আছেন।তার সুযোগ নিয়ে আমি আরো বলে উঠলাম,
“শুনুন না,বলছি কি আজ একটু কম বকলে হয় না?কাল নাহয় আজকের টা মিলিয়ে শুনে নেব কেমন?”
কথাটা বলেই হাতের বাঁধন হালকা পেয়ে উনার কাছ থেকে সরে এলাম।আমাকে এভাবে সরে আসতে দেখে উনি কিছু বলতে যাবেন তার আগেই আমি ওখান থেকে কেটে পরলাম।নিজের ঘরে এসে বেডের ওপর থেকে ব্যাগ নিয়ে কাবার্ডের দিকে এগোলাম এমন সময়,
“তোমার মাথায় কী খুব বেশি যন্ত্রণা করছে?”
কথাটা শুনেই আমার হাত থেকে ব্যাগ টা পড়ে গেল।অবাক চোখে ওনার দিকে তাকালাম।আচ্ছা আমি কী ভুল শুনলাম।”উনি আমাকে নিয়ে চিন্তিত” কথাটা ভাবতেই বুকের ভেতরটা ধক করে উঠল।মূহুর্তেই চোখ ছলছল করে উঠল।এরই মাঝে উনি আবার ও বলে উঠলেন,
“কী হলো,মাথায় কী খুব বেশিই যন্ত্রণা করছে?”
উনার কথায় আমার ভাবনার ছেদ ঘটল।উনার মুখ খানা কেমন জানি মূহুর্তেই শুকিয়ে গেছে।উনার মুখের দিকে তাকিয়ে কী বলবো কিছু বুঝতে না পেরে তাড়াহুড়ো করে পড়ে থাকা ব্যাগ টা উঠিয়ে কাবার্ডে রাখতে রাখতে বলে উঠলাম,
“হ্যাঁ তো,খুব যন্ত্রণা করছে মাথাটা।যন্ত্রণায় তো দাঁড়িয়েই থাকতে পারছি না।”
“তাহলে শুয়ে রেস্ট নাও এভাবে লাফিয়ে বেড়াচ্ছো কেন?”
উনার কথায় আমি চট করে গিয়ে বেডের ওপর শুয়ে মাথায় হাত দিয়ে গোঙাতে লাগলাম।
আমাকে এভাবে গোঙাতে দেখে উনি ড্রয়ারে থাকা ফাস্ট-এইড বক্স আনতে লাগল।তা দেখে আমি লাফিয়ে উঠলাম।
“খালি পেটে ঔষধ খাবো কী করে!”
আমার কথায় উনি ওখানেই দাঁড়িয়ে পরলেন।
“বাড়িতে তো কিছু রান্না করা নেই।আর আমি তো এই অবস্থায় মোটেও রান্না করতে পারবো না।এখন কী করবো?”
আমার কথায় উনি ফাস্ট-এইড বক্স রেখে নিজের ফোন বের করলেন।
“খাবার অর্ডার দিচ্ছেন?আমি কিন্তু ও সব খাবার খাবো না।বাইরের খাবার আমার মোটেও রুচে না।”
আমার এমন কথায় এবার হয়তো উনি কিছু টা রেগে গেলেন।
“বাইরের খাবার খাবে না তো এখন কী খাবে?আর না খেলে মেডিসিন নিবে কি করে?”
“কেন আমি নাহয় রান্না করতে পারবো না কিন্তু আপনি তো পারেন।”
“হোয়াট?আমি আর রান্না!”
“কেন,বউয়ের জন্য এতটুকু করতে পারবেন না।”
কথাটা বলেই ইনোসেন্ট মার্কা চেহারা নিয়ে উনার দিকে তাকালাম।উনি আমার কথা শুনে রেগে গিয়ে কিছু একটা বলতে গিয়েও কিছু না বলেই ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন।আর আমি অসহায় এর মতো বসে রইলাম।এখন যদি আমি মাথা ব্যথার বাহানা নিয়ে বসে থাকি তাহলে আর রাতে কারোর মুখের খাবার জুটবে না।বাবাকেও না খেয়ে থাকতে হবে।কথাটা ভেবেই আমি বেড থেকে নামতে যাবো তখন বাইরে থেকে কিছু একটা পড়ার শব্দ কানে এলো।শব্দ টা উৎস খুঁজতে আমি চট জলদি ঘর থেকে বেরিয়ে উপর থেকে নিচে বসার ঘরে তাকাতেই আমি থ মেরে গেলাম।বসার ঘরের সাথেই রান্নাঘর।উপর থেকে রান্না ঘর খুব সহজেই দেখা যাচ্ছে।কিছুক্ষণ এর জন্য মনে হলো আমি স্বপ্ন দেখছি।কিন্তু পরক্ষণেই মনে হলো “না এ স্বপ্ন নয়।এটা সত্যি।”উনি আমার জন্য রান্না করতে গেছেন।বুক ফেটে কান্না বেরোনোর উপক্রম।বলে কী না উনার জীবনে আমার কোনো ইমপোটেন্সি নেই।হুহ,তার নমুনা তো চোখের সামনেই দেখতে পাচ্ছি।চোখের জলটা মুছে উনার দিকে তাকালাম।উনি প্রায় অনেকক্ষণ ধরে খুঁজে ফ্রাইংপেন নিয়ে চুলোর ওপর বসালেন।তারপর আবার অনেক খোঁজা খুজির পর কিছু ডিম বের করে হাতে নিয়ে এদিক ওদিক করে সেটা দেখতে লাগল।
চলবে❤
দুঃখিত দেরী করে দেওয়ার জন্য।আসলে সারাদিন রোজা রেখে লেখার মন একদমই ছিল না।কিছুক্ষণ আগে তারাবি পড়ে এসে গল্প লেখা শুরু করলাম।জানি ছোট হয়েছে তাই আবারো সরি।কাল পার্ট বড় করে দেব।ধন্যবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here