শূন্য_অনুভূতি পার্ট:”নয়”

শূন্য_অনুভূতি পার্ট:”নয়”
#রোকসানা_ইয়াসমিন

“আরে,বাবা উঠুন না!”
“আহা: কি হয়েছে কি সেটা তো আগে বলবে।হঠাৎ একরকম অফিসে যাওয়ার জন্য তাড়া দিচ্ছো কেন বলো তো।”
“বলছি তো সেটা সারপ্রাইজ
বলে দিলে সারপ্রাইজ কেমনে থাকবে?”
“কি এমন সারপ্রাইজ যে অফিসে যেতে হবে?”
“উফফ, আপনি না খুব বেশি প্রশ্ন করেন।অনেক হয়েছে আর নয়।উঠুন তো এবার আপনি।উঠুন….। যান গিয়ে রেডী হয়ে আসুন।যান বলছি।”
বাবা কে ঠেলে ঠুলে রেডী হতে পাঠালাম।আজ বাবার জন্য অনেক বড় একটা সারপ্রাইজ আছে।বাবা হয়তো ভাবতেও পারছেন না যে অফিসে তার জন্য কি অপেক্ষা করছে।আমি বসার ঘরে বাবার জন্য অপেক্ষা করছি।এরই মাঝে বাবা একেবারে স্যুট বুট পরে রেডী হয়ে বেরিয়ে এলেন।আরেহ বাহ,বাবা কে দেখে তো আমি নিজেই ক্রাশ।এবার বুঝতে পারছি ছেলের আসল সৌন্দর্যের রহস্য।
বাবা সিঁড়ি বেয়ে নামতেই আমি ওনার হাত ধরে টানতে টানতে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পরলাম অফিসের উদ্দেশ্য।
.
.
.
.
.
অফিসে এসেই বাবা কে ঠেলে ঠুলে আগে থেকে রেডী করা অফিসের একটা ফাঁকা রুমে পাঠিয়ে দিলাম।রুমে মমতাজ আন্টি রয়েছে।আমি রুমের দরজার ফাঁকা দিয়ে উঁকি মারলাম।ভেতরে কি হচ্ছে তা তো আমার জানা দরকার।আসলেই বাবা কতটা রোমেন্টিক হতে পারে তা দেখতে হবে না আমায়!মন তো খচখচ করছে।
.
.
.
.
.
(পুরো রুম ফুল আর কিছু বেলুন দিয়ে সাজানো হয়েছে।নিয়াজ আহমেদ রুমের ভেতরে ঢুকে এমন সাজ দেখে প্রথম মূহুর্তে কিছুটা অবাক হলেও রুমে আগে থেকে বসে থাকা মমতাজ কে দেখে তার অবাক হওয়াটা কেটে যায়।
“আরেহ,মমতাজ তুমি?আর এসব কী!আজ কী কোনো দিবস টিবস আছে নাকি?”
মমতাজ প্রায় অনেক্ষন ধরেই মনের মধ্যে নানা ধরনের সংকোচ বোধ নিয়ে রুমের ভেতর বসে আছে।সে বুঝতে পারছিল না চিত্রা তাঁকে হঠাৎ কেন এভাবে এই ঘরে বসিয়ে রেখে গেছে।কিন্তু যখন নিয়াজ কে ভেতরে আসতে দেখল তখন বুঝতে বাকী রইল না এসব কিছু সৃষ্টি কর্মকাণ্ড।মনে মনে মেয়েটার এমন কাজের জন্য ভীষণ হাসি পেলেও কিছুটা অসস্থিবোধ ও গ্রাস করেছিল তাকে।নিয়াজের করা প্রশ্ন টা তাকে আরো বেশি অস্থিতে ফেলে দেয়।কোনোরকম কাপা কাপা গলায় বলে উঠল,
“না,আসলে,,,আব,,,দে দেখ না এসব কিছু সৃষ্টি করেছে।কেমন পাগল মেয়ে একটা।”
“হ্যা তা তো বটেই।আমার বৌ মা একটু পাগল ঠিকই কিন্তু তার পাগলামো গুলোর মাঝে তার মাঝে থাকা বাচ্চামো গুলো ফুটে উঠে।কিন্তু বুঝতে পারছি আজ হঠাৎ এমন সারপ্রাইজ এর কারন কী।আজ কী কোনো বিশেষ দিন।না মানে কারো জন্মদিন টন্মদিন নাকি।আচ্ছা আজ কি তোমার জন্মদিন?”
“ন নাহ,না তো।”
“তাহলে…..?”
“নিয়াজ….?”
“হুম বলো।”
“ভালোবাসি তোমায়।বিয়ে করতে চাই।”
বুকের মধ্যে একটা বড় ধরনের পাথর রেখে কথা টা বলে উঠল মমতাজ।নিয়াজ ঘরের চারিদিকের সাজ দেখতে দেখতে কথা বলছিল।এমন সময় মমতাজের এরকম একটা কথায় থমকে গিয়ে তার দিকে তাকালো।মমতাজ দম ধরে দাঁড়িয়ে আছে।নিয়াজ তার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকালো।
“তুমি এই নিয়ে দ্বিতীয় বার এই কথাটা বললে।”
“আমি জানি।”
“তোমার কি করে মনে হলো যে এবার আমার উত্তর আলাদা হতে পারে!”
“কারণ,তখন তোমার জীবনে মোহনা ছিল।কিন্তু এখন আর নেই।”
মমতাজের এমন কথায় নিয়াজের চোখ মুখ লাল হয়ে এলো।যথাসম্ভব নিজেকে সংবরণ করে দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠল,
“কে বলেছে এখন আর আমার জীবনে মোহনা নেই।”
নিয়াজের এমন কথায় মমতাজ অবাক চোখে তার দিকে তাকালো।
“মোহনা আমার জীবনে কাল ও ছিল আজও আছে আগামী কাল ও থাকবে।হয়তো তার অস্তিত্ব আজ আর এই দুনিয়া তে নেই।কিন্তু সে আমার জীবনে আমার জীবন হয়েই বেঁচে রয়েছে।যতদিন আমি বাচবো আমার সাথে সাথে সে ও বাঁচবে।আর এখন জীবনে আমার ছেলে আর আমার বৌমা ছাড়া আমার জীবনে আর অন্য কারো প্রয়োজন আছে বলে।আশা করি তুমি আমার কথা টা বুঝতে পারছো।”
কথা টা বলে নিয়াজ রুম থেকে বেরিয়ে যেতে চাইলেই মমতাজ বলে উঠল,
“আর কতদিন এভাবে বাঁচবে নিয়াজ।তোমার ছেলে তো তোমার দিকে ফিরেও তাকায় না।আর যার কোনো অস্তিত্ব ই এই পৃথিবীতে নেই তার স্মৃতিতে আর কতদিন নিজেকে এভাবে পোড়াবে।তোমার নিজের কী কোনো চাওয়া পাওয়া নেই।
মমতাজের এমন কথা নিয়াজ গর্জন করে উঠল,
“না নেই।আমার কোনো চাওয়া পাওয়া নেই।আর তুমি দ্বিতীয় বার আমার ব্যক্তিগত ব্যাপারে এমন কোনো কথা বলো না যাতে তোমার প্রতি আমার সম্মান রাগ আর ঘৃণায় পরিণত হয়।”
কথাটা বলেই নিয়ে সশব্দে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল।আর মমতাজ সেখানেই মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে রইল।
“তুমি আজও আমায় ফিরিয়ে দিলে নিয়াজ।)”
.
.
.
.
.
আমি রুমের বাইরেই দাঁড়িয়ে ছিলাম।বাবার এমন রুপ আমি এর আগে কখনোই দেখি না।একটা হাসি খুশি মানুষ মূহুর্তেই কী করে এতোটা বদলে যেতে পারে।আমার সাহিত্যের কথা মনে পরে গেল।তখনই আমি লক্ষ্য করলাম উনি আমার থেকে কিছু টা দূরে দাঁড়িয়ে আমার দিকেই তাকিয়ে আছেন।আমার বুকটা ধক করে উঠল।আচ্ছা,আমি কি কোনো ভুল করলাম।বাবা আবার নতুন একটা জীবন শুরু করুক।আর সেই জীবনটা খুবই আনন্দ ময় হোক।এটা ভাবা কি আমার ভুল ছিল।আমার ভাবনার মাঝেই বাবা ঘর থেকে বেরিয়ে এলেন।বাবাকে দেখেই আমি ছলছল চোখে তার দিকে তাকালাম।আমাকে দেখে বাবা আমার দিকে এগিয়ে আসতেই আমি বলে উঠলাম,
“আন্টি কিন্তু আপনাকে সত্যিই খুব ভালোবাসে বাবা।”
আমার কথায় বাবা আমার মাথায় এক হাত রেখে শান্ত গলায় বলে উঠলেন,
“যখন তুমি সত্যিই কাউকে মন থেকে ভালোবাসবে তখন বুঝতে পারবে আমার এরকম সিদ্ধান্তের কারণ কী।”
কথা টা বলেই বাবা চলে গেলেন।আমি তার যাওয়ার দিকে ছলছল চোখে তাকিয়ে রইলাম।
চলবে❤

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here