শূন্য_অনুভূতি পার্ট:”ছয়”

শূন্য_অনুভূতি পার্ট:”ছয়”
রোকসানা_ইয়াসমিন

উনাকে এভাবে ডিমের দিকে তাকাতে দেখে আমার দারুণ হাসি পাচ্ছে।কী করতে যাচ্ছেন উনি এই ডিম নিয়ে তা দেখার জন্য উৎসুক চোখে উনার দিকে তাকিয়ে রইলাম।এরই মাঝে রান্নাঘরের দিকে বাবাকে দেখা গেল।বাবা উনাকে রান্না ঘরে দেখে বেশ অবাক হয়েই সেদিকে এগিয়ে যান।
“সাহিত্য,তুই রান্না ঘরে কী করছিস।তোর কী কিছু লাগবে?”
বাবার প্রশ্নের জবাবে উনি মাথা নিচু করে কিছুটা অপ্রস্তুত হয়েই বললেন,
“না।”
“তাহলে তুই রান্নাঘরে কী করছিস?”
“সৃষ্টির মাথায় যন্ত্রণা করছে।ওর জন্য রান্না করছি।ওর বাইরের খাবার পছন্দ নয়।”
কথাটা শুনেই বার কয়েক কেশে উঠল বাবা।উনার প্রায় হার্ট ফেল করার উপক্রম।অন্যদিকে উনার মুখে এই ধরনের কথা শুনে আমার মন যেন আকাশে বাতাসে যাত্রা শুরু করে দিয়েছে।ইচ্ছে করছে এখানেই সবকিছু ভুলে চিৎকার করে কাঁদি।মন খুলে কাঁদি।জানি কেন খুব বেশিই কাঁদতে ইচ্ছে করছে এই মূহুর্তে।অনেক কষ্টে নিজের অনুভূতি টা কে চেপে রেখে ওনার দিকে তাকালাম।বাবা নিজেকে সামলে নিয়ে ওনার দিকে কিছু টা এগিয়ে গিয়ে ফ্রাইংপেনের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলেন,
“আমি কী তোকে কিছু হেল্প করতে পারি?”
বাবার কথায় উনি বেশ কিছুক্ষণ চুপ থেকে শান্ত কণ্ঠে বলে উঠলেন,
“হুম।”
অনুমতি পেয়েই বাবা রান্নাঘরে ঢুকে পরলেন।অভিজ্ঞ সেফের মতো উনার হাত থেকে ডিম টা নিয়ে গ্যাসের দিকে এগোতে এগোতে বললেন,
“কী করছিস তুই?সামান্য অমলেট বানাতে এতো সময় লাগে নাকি।দেখ,আমি কি করে মূহুর্তেই অমলেট বানিয়ে ফেলি।”
কথাটা বলেই বাবা পাত্রের মধ্যে ডিম দেওয়ার জন্য তা ভাঙতে গিয়েই পুরো ডিম চুলোর ওপর ফেলে দিলেন।যা দেখে উনি ভ্রু কুঁচকে বাবার দিকে তাকালেন।বাবা আমতা আমতা করতে লাগল।
“ইয়েহ মানে,প্রথম বার তো তাই আর কি একটু খানি মিসটেক হয়ে গেল।তুই দাঁড়া আমি এক্ষুনি অমলেট বানিয়ে দিচ্ছি।”
কিন্তু পোড়া কপাল।উনি ডিম পাত্রের মধ্যে ফেলতে পারছেন না।এদের দেখে তো মনে হচ্ছে না এরা রান্নার “র” এর কাছেও কখনও ভিড়েছে বলে।
উনি বাবার অমলেট বানানোর পদ্ধতি দেখে চুপচাপ অন্যদিকে চলে গেলেন।ওখানে কি করছেন কিছুই বুঝতে পারলাম না।তবে বেশ কিছুক্ষণের মধ্যে উনি অর্ধেক হাঁড়ি চাল নিয়ে এগিয়ে এলেন।এদের কাজ দেখে আমার নিজের ই নিজের চুল ছেঁড়ার ইচ্ছে করছে।এরা তো এটাও জানে না যে চাল বাড়ন্ত।এরা তো ভাতের সমান চাল দিয়ে দিয়েছে।এদের কর্মকাণ্ড দেখে এক মূহুর্তের জন্য আমার মনে হচ্ছে দৌড়ে গিয়ে নিজের রান্না ঘর টা কে এদের হাত থেকে রক্ষা করি।কিন্তু পরক্ষণেই মনে হলো,থাক না দুই বাবা ছেলে কিছু মূহুর্তের জন্য এক সাথে।সময় টা কাটতে লাগল।ওরা নিজেদের মতো রান্নার কাজ চালিয়েই যাচ্ছে।অনেক চেষ্টার পর বাবা পাত্রের ওপর ডিম ফেলতে পেরেছে।এতেই যেন বাবা নিজেকে চ্যাম্পিয়ন ভেবে বসে আছে।অন্য হাঁড়ি ভর্তি ভাত উথলে ওঠে চারিদিক ছড়িয়ে ছিটিয়ে পরছে।অনেক হয়েছে আর না।নিজেকে আর আটকাতে পারলাম না।সিঁড়ি বেয়ে নেমে আমি তাড়াতাড়ি রান্নাঘরের দিকে এগোলাম।আমাকে দেখেই বাবা উচ্চ স্বরে বলে উঠলেন,
“আরে,সৃষ্টি মা!তোমার মাথার যন্ত্রণা এখন কেমন আছে?”
“ভালো বাবা,তবে আপনাদের কী রান্নাটা হলো?”
দুই হাত বুকের ওপর বেঁধে দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠলাম।আমার কথায় বাবা ফুল পাওয়ারে বলে উঠলেন,
“হ্যাঁ হ্যাঁ হয়ে গেছে রান্না।তবে বুঝতে পারছি না অমলেট টা এমন মিষ্টি মিষ্টি করছে কেন?”
“কারণ আপনি অমলেটে নুনের জায়গায় চিনি দিয়েছেন।”
চিনির বোয়ামটা হাতে নিয়ে কিছু টা রাগী কণ্ঠে কথা বললাম।আমার কথায় বাবার হালকা জিহ্বায় কামড় দিলেন।
“ওহ,তাই না কি।আমি ঠিক খেয়াল করিনি…..আমি বরং এখন আসি কেমন।”
কথাটা বলেই উনি মানে মানে রান্নাঘর থেকে কেটে পরলেন।বাবা চলে যেতেই আমি ওনার দিকে তাকালাম।উনি বাবার যাওয়ার দিকে শান্ত চোখে তাকিয়ে আছেন।তা দেখে আমি চেঁচিয়ে উঠলাম।
“আপনাকে কী এখন ইনভিটেশন দিতে হলে এখান থেকে থেকে যাওয়ার জন্য।”
আমার হঠাৎ এমন চেচানোয় উনি চট করে আমার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকালেন।আমি দুই হাত কোমরে রেখে ছোট ছোট চোখে উনার দিকে তাকিয়ে আছি।উনি কিছু মূহুর্ত আমার দিকে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে থেকে হঠাৎ ই বলে উঠলেন,
“যাচ্ছি,এতো চেচানোর কী আছে!”
কথাটা বলেই উনি এদিক ওদিক তাকিয়ে রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন।উনি যেতেই আমি রান্নাঘরের অবস্থার দিকে খেয়াল করলাম।এতো যেন পুরো একটা ডাস্টবিনে পরিণত হয়ে গেছে।আমি সময় নষ্ট না করে চুলো থেকে ভাত নামিয়ে অনেক টা সময় নিয়ে পুরো জায়গাটা পরিষ্কার করে দিলাম।তারপর তিনজনের জন্য ডিমের অমলেট বানিয়ে ডাইনিং টেবিলে নিয়ে গিয়ে সব সাজিয়ে রেখে নিজের চেয়ার টেনে বসে পরলাম।উনি সোফায় বসে ফোনের মধ্যে মুখ গুঁজে রেখেছেন।আর তার ঠিক বীপরীত পাশে বাবা বসে সকালের পড়া পেপারে চোখ বোলাচ্ছেন।এদের এসব কর্মকাণ্ড এই মূহুর্তে আমার মোটেও পছন্দ হচ্ছে না।তাই কিছুটা উঁচু স্বরে বলে উঠলাম,
“কী হলো কেউ কি খেতে আসবে না নাকি?”
আমার কথায় বাবা চট করে সোফা ছেড়ে এসে নিজের চেয়ারে বসে চুপচাপ খেতে লাগলেন।আর উনি সোফা থেকে উঠে সোজা নিজের ঘরে যাওয়ার জন্য সামনের দিকে এগিয়ে যেতেই আমি বলে উঠলাম,
“একি কোথায় যাচ্ছেন আপনি?”
আমার কথায় কিছু মূহুর্তের জন্য থমকে গিয়ে একবার আমার দিকে আরেকবার বাবার দিকে তাকিয়ে ডোন্ট কেয়ার একটা ভাব নিয়ে বলে উঠলেন,
“নিজের ঘরে।”
বলে চলে যেতে নিলেই আমি চেঁচিয়ে উঠলাম।
“আপনি চলে গেলে আমায় খাইয়ে দেবে কে?”
কথাটা শুনেই বাবার নাকে মুখে উঠে কাশতে লাগলেন।আমি তাড়াতাড়ি বাবার দিকে পানি এগিয়ে দিলাম।আর উনি অবাক চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আস্ফুট কণ্ঠে বলে উঠলেন,
“হোয়াট!”
চলবে❤

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here