মেঘের_উল্টোপিঠ,০৪,০৫

#মেঘের_উল্টোপিঠ,০৪,০৫
#সাদিয়া_মেহরুজ_দোলা
[পর্ব-০৪].

ভোরের দিকে জ্বরের প্রকোপ কমতেই তন্দ্রাছন্ন আভাসটা নিমিষেই মিটে যায়। বিছানা ছেড়ে উঠে বসতেই পর্দার আড়ালে স্পষ্টত দেখা মিলল পূর্বের অবয়বের। পূর্বের রাতের কিছু বিশেষ কথা স্বরণ করে আমি চটজলদি বিছানা ছেড়ে বেলকনিতে গিয়ে দাঁড়াই। পূর্ব তখন পুশআপে ব্যাস্ত ছিলেন। ঝলমলে রোদের হলদেটে আলো পূর্ণরূপে পড়েছে পূর্বের পিঠে। মৃদু পরিমাণের ঘামগুলো রোদের রশ্মিতে চকচক করছে। সুঠাম দেহের আনাচে – কানাচে রোদের রশ্মি যেনো হামাগুড়ি খাচ্ছে।

পরিশেষে নেত্রপল্লব বন্ধ করে নিজেকে ধাতস্থ করি। যা বলতে এসেছি তা বলার তুমুল প্রয়াসে, বর্তমান অনুভূত হওয়া অদ্ভুত অনুভূতিগুলো কে দূরে ঠেলে দেই। আলত পায়ে এগিয়ে পূর্বের সামনে গিয়ে দাঁড়াতেই পূর্ব পুশআপ করা বন্ধ করে দেয়। আমার দিকে রাশভারী দৃষ্টি নিক্ষেপ করে শুভ্র রঙের টাওয়াল দিয়ে তার সুদর্শন মুখশ্রীর নোনা ঘামগুলো কে মুছে নিয়ে বললেন,

‘ এতো ছটফটে কেনো তুমি? হু?’

পূর্বের কথা বুঝতে না পেরে ভ্যাবাচেকা খেয়ে বলি,

‘ মানে কি?’

‘ কাল রাতে জ্বরে পুড়েছো। ভোর হতেই ঘুম থেকে উঠে পড়ে, রেস্ট না করে এখানে কি? এখনি রুমে যাও দোল! ‘

তার কথার পরিপ্রেক্ষিতে ব্যাতিব্যাস্ত হয়ে বলি,

‘ আপনি কাল সারারাত ঘুমোননি কেনো? আমার সেবা করার দরকার কি ছিলো? আমার জ্বর এমনিতেই কমে যেতো! ‘

পূর্বের মুখশ্রীতে ক্ষনিকের জন্য ভড়কানো ভাবটা দেখলাম। তা দেখে নিভৃতে ফিচেল হাসি দেই! পূর্ব যে কাল সারারাত জেগে আমার সেবা করেছে তা সম্পর্কে তেমন নিশ্চিত ছিলাম না। মধ্যরাতের দিকে আলত করে নেত্রপল্লব উন্মুক্ত করতেই আবছা আলোয় খেয়াল হয়েছিলো পূর্ব আমার মাথায় জলপট্টি দিচ্ছেন। পরবর্তীতে কি হয়েছিলো জানা নেই। কিন্তু বর্তমানে চতুরতার সাথে বলা কথাটি যে পূর্ণরূপে সত্যি! তা প্রমানিত করছে পূর্বের মুখশ্রীর হাবভাব!

পূর্ব তার হাতের টাওয়াল সোফায় ছুঁড়ে মেরে ত্রস্ত পায়ে আমার নিকট এগিয়ে আসলেন। মূর্হতে হকচকিয়ে গিয়ে দেয়ালের সাথে মিশে যেতেই পূর্ব তার দু’হাত আমার দুপাশে রেখে মাথা নিচু করে ঝুঁকে ভ্রু কুঞ্চিত করেন! ঠোঁট বাকিয়ে হিসহিসিয়ে বললেন,

‘ চালাক হয়ে গিয়েছো! আমার সাথে চালাকি করো? যেই মেয়ে জ্বরের ঘোরে নিজের নাম অব্দি ভুলে যায় সে এতকিছু খেয়াল করেছে? হাউ ফানি!’

নিজেকে আর সংযত করা হলোনা। কৌতূহল নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে বলি, ‘ আপনি আমার ব্যাপারে এতকিছু কিভাবে জানেন? আমার পারসোনাল হ্যাবিট সম্পর্কে অবগত হলেন কি করে? আপনি তো আমায় চিনেন না বলা চলে। ‘

পূর্ব ঝুঁকে আমার কানের নিকট তার ওষ্ঠদ্বয় এগিয়ে নেন। ফিসফিস করে ফিচেল কন্ঠে বললেন,

‘ আমি আমার অস্তিত্ব সম্পর্কে অতোটা অবগত নই যতোটা না ‘ তার ‘ সম্পর্কে অবগত! ‘

পূর্বের কথা বলার সময় তার ওষ্ঠাধর বারংবার আমার কান কে এসে মৃদু স্পর্শ করছিলো। ব্যাপারটা আমার জন্য শ্বাসরুদ্ধকর! অস্বস্তিময়! তার ওপর তার হিসহিসিয়ে কথা বলা। কাঁপুনি তৈরি করে যেনো তার এই কথা বলার ধরন, আচার-আচরণ! লম্বা শ্বাস টেনে রুদ্ধ কন্ঠে বলি,

‘ আমার সম্পর্কে এতকিছু জানার কারণ?ডু ইউ লাইক মি? আপনি তো আপুর এক্স! আমার সাথে আপনার সম্পর্ক দুলাভাই- শালী টাইপ ছিলো যখন আপনি এবং আপু রিলেশনে ছিলেন। এক্স গার্লফ্রেন্ড এর বোনকে নিয়ে এতোকিছু অবগত হওয়ার কারণ? আর আপনার ওয়াইফ তো আমি দু’দিনের। ‘

পূর্ব ওষ্ঠাধরের স্বাভাবিক আকার পরিবর্তন করে হাসলেন। মনে মনে নিশ্চিত তিনি বুঝতে পারছেন আমি তাকে কথার প্যাচে ফেলতে চাইছি। পরিশেষে তিনি আমার থেকে খানিক দূরে গিয়ে ট্রাউজারের পকেটে হাত ঢুকিয়ে মৃদু কন্ঠে বললেন,

‘ আমি যে তুমি সম্পর্কে জেনেছি এটা তো বলিনি। আমি আমার কথার মধ্যে ‘ তার ‘ উল্লেখ করেছি।এটা নিশ্চয়ই তোমাকে সম্মোধন করা হয়নি। ‘

পূর্ব হেলতে – দুলতে ওষ্ঠাধর দ্বারা শিষ বাজাতে বাজাতে বেলকনি থেকে চলে গেলেন। আমি হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছি। এই লোক এতো ত্যাড়া কেনো?কোনো প্রশ্নের আজ অব্দি ঠিকঠাক উত্তর দিলোনা।অদ্ভুত লোক! বড্ড বেশী অদ্ভুত! তাকে কি কখনোই আমি বুঝতে পারবো না? ধরতে পারবো না তার কথার মধ্যিখানে অবস্থিত রহস্যগুলো?

___________________________

মুখশ্রী পাংশুটে, কুঁচকে নিয়ে থম মেরে বসে আছি। আমার ঠিক ডান পাশেই পূর্ব বসে! মনোযোগ সহকারে ল্যাপটপে দৃষ্টি ছুড়ে কিছু টাইপিং করছেন। তার মাঝে এক প্রকার ডোন্ট কেয়ার ভাব বিদ্যমান! তার পাশে যে স্বয়ং একজন জ্বলজ্যান্ত মানুষ বসে সেদিকে তার খেয়াল নেই। অথবা আমি তার পাশে বসে তাও বোধহয় ভুলে পগারপার!

তার প্রতি আমার এ মূর্হতে বিশাল বিরক্তির কারণ হচ্ছে তিনি আমায় বাসায় যেতে দিচ্ছেন না। অযথা অযুহাত দেখিয়ে বলছেন যাওয়ার দরকার নেই। সকালের দিকে ব্রেকফাস্টের পর্বের সমাপ্তি টেনে রুমে এসে বাসায় যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম তখনি তার আগমন ঘটে! ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আমার হাবভাব পর্যবেক্ষণ করে বললেন,

‘ কোথায় যাচ্ছো?’

ব্যাগ হাতে নিয়ে আমি নম্র কন্ঠে বলি,

‘ বাসায় যাচ্ছি! আংকেল আন্টি আসলে বলবেন আমি তখন আসবো। ‘

‘ বাসায় যাওয়ার দরকার নেই এখন। আব্বু আম্মু এসে পড়বে। তাছাড়া এই অসুস্থ শরীর নিয়ে তুমি বাহিরে বের হবে? মাথা ঠিক আছে নাকি? ‘

তার কথার পরিপ্রেক্ষিতে মৃদু কন্ঠে বলি, ‘ ঠিক আছি আমি! একদম ফিট। কিছু হবেনা বাহিরে বের হলে। বৃষ্টিও তো নেই বাহিরে। ‘

পূর্ব আমার কথার পরিবর্তে সটান ‘ না ‘ বলে দেন।অতঃপর তিনি আম্মুকে ফোন করে আমার অগোচরে এমনভাবে ব্রেইন ওয়াশ করেন যে আম্মু ফোন দিয়ে বলছে চার পাঁচদিন থেকে বাসায় আসতে। পূর্বের আম্মুরও একই বার্তা! পরিশেষে পূর্বের ওপর হটাৎই সন্দেহ চেপে বসলো। খানিক ভীতির নিভৃতে আগমন ঘটলো। শুকনো ঢোক গিলে সন্দিহান কন্ঠে বলি,

‘ আচ্ছা আপনার মতলব কি বলুন তো! আমাকে বাসায় যেতে দিচ্ছেন না কেনো? আমি কি আমায় বিক্রি করে দিবেন নাকি? নাকি নারী পাচারকারীর হাতে তুলে দিবেন? সত্যি করে বলুন তো! আপনাকে আমার বড্ড সন্দেহ হচ্ছে। ‘

পূর্ব ল্যাপটপের থেকে ধীরস্থির রূপে দৃষ্টি সরিয়ে আমার দিকে তাকান! তার মুখশ্রীতে আমার কথার কোনো প্রভাব ফেলেনি বোঝাই যাচ্ছে। তিনি অত্যান্ত বিরক্তি নিয়ে বললেন,

‘ ডাফার গার্ল! তোমার কোনো আইডিয়া আছে তুমি এসব কি বলছো? এসব ষ্টুপিড কথাবার্তা মাথায় আসে কি করে? ‘

‘ তাহলে আমায় যেতে দিচ্ছেন না কেনো? আমি তো সুস্থই! যেতে না দেয়ার কারণ কি?’

পূর্ব নিজের স্থান হতে কিছুটা সামনে এগোলেন! আমি পিছে যেতে নিলে তিনি তার শক্ত হাত দ্বারা আমার হাত আঁকড়ে নিয়ে ফিসফিস করে বললেন,।

‘ তোমাকে আমি এখানে আঁটকে রেখেছি কেনো জানো দোল? তোমায় আঁটকে রাখার মূল কারণ রোমান্স করা। আফটার অল একটা মাত্র বউ, নতুন বিয়ে করেছি তার সাথে রোমান্স না করলে চলে নাকি?’

বলে ভ্রু নাচালেন। আমি কিংকর্তব্যবিমুঢ়! রাশভারী লোকটার এই রূপ মেনে নেয়া আমার পক্ষে কষ্টসাধ্য! নিজেকে ধাতস্থ করে রুষ্ট কন্ঠে বলি,

‘ একদম এসব চিন্তা মাথায় আনবেন না আপনি। আমার কাছে আসলে আপনাকে খুন করে ফেলবো! এখনো আমি আপনাকে স্বামী হিসেবে মানিনি। ‘

পূর্ব আমার হাত এক ঝটকায় ছেড়ে দেন। উঠে দাঁড়িয়ে কয়েক কদম পিছিয়ে গিয়ে বললেন,

‘ রিলাক্স! আমি তোমায় ততক্ষণ অব্দি টার্চ করবোনা যতক্ষণ না তুমি আমায় মন থেকে মেনে নিচ্ছো। আমার ওপর এতটুকু ট্রাস্ট রাখো। ‘

পূর্ব এক মূর্হতও আর দাঁড়ালো না। তার কন্ঠনালি কাঁপছিলো তা হুট করেই মনে হলো। শেষে বলা তার কথাগুলো আমার কাছে ভিষণ বিশ্বাসযোগ্য মনে হলো। কিন্তু আদও কি আমি কখনো তাকে মেনে নিতে পারবো অতীতের কালো ধোঁয়া মিটিয়ে?

__________________________

পুরো সকালে পূর্বের আর দেখা মিললো না। আমিও আর নিচে যাইনি। আজ শুক্রবার! এইদিন তিনি রোগী দেখেন না। বাসাতেই আছে নিশ্চয়ই! শুক্রবার উপলক্ষে মেডিকেল বন্ধ! ক্লাসও নিতে যাননি তা নিশ্চিত! বাসাতেই থেকে একবারও আমার সামনে এতো সময়ের ব্যাবধান হলো তবুও আসলেন না কেনো? যদিও এটা আমার জন্যই স্বস্তিকর! তিনি না থাকলে নির্দ্বিধায় নিজের কর্ম সম্পাদন করতে পারি। তিনি সামনে থাকলে কেমন সঙ্কোচ কাজ করে!

কিন্তু অদ্ভুতুরে ব্যাপার হচ্ছে হটাৎই ভিষণ পূর্বকে মিস করছি! তাও আমি! ব্যাপারটা আশ্চর্যজনক আমার নিকট। যেই লোকের দূরে থাকা সর্বদা কাম্য করি, সে যখন আমার হতে দূরেই তখন তাকে আমি মিস করছি? অদ্ভুত!

ব্যাকুলতা কন্ট্রোল করতে না পেরে সিঁড়ি বেয়ে নিচে চলে আসি। পুরো বাসায় শূন্যতা বিরাজমান! এই বাসায় সার্ভেন্ট নেই নাকি? নিচ তলার সবগুলো রুমে চক্কর দেয়ার পর ফলাফল শূন্য! পূর্ব মানব উধাও যেনো! কিচেনের পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় টুংটাং শব্দে থমকে দাঁড়াই। উঁকি দিতেই দেখা মিলে পূর্বকে। কিচেন এপ্রোন পরে সবজি কাটছেন।এই দৃশ্য দেখার পর চোখ ছানাবড়া হয়ে গেলো। চোখ কচলিয়ে পুনরায় দৃষ্টি দিতে একই দৃশ্য দৃশমান হলো। তড়িৎ বেগে গিয়ে পূর্বের সামনে এসে দাঁড়াতেই তিনি মাথা তুললেন! মুখশ্রীতে কাঠিন্য ভাব বিদ্যমান! আমায় দেখার পর তা খানিক শিথিল হলো।

পূর্ব সবজিগুলো পাশে থাকা কাচের বাটিটায় রেখে দৃষ্টি সেদিকে নিক্ষেপ করে বললেন,

‘ কিছু বলবে?’

‘ আপনি এখানে কি করছেন?’

পূর্ব বিরক্ত হয়ে বললেন, ‘ কেনো দেখছো না কি করছি? ‘

পূর্বের প্রশ্নের প্রতিত্তুরে জবাব দেই, ‘ দেখছি কিন্তু বিশ্বাস হচ্ছেনা আরকি! এত বড় ঘরের ছেলে কিনা কিচেনে রান্না করছো। গড! ভাবা যায় এসব?’

সবজি কাটা শেষ করে পূর্ব কাচা মাংসের বাটি সামনে এনে বললেন,

‘ বড় ঘরের ছেলের যে রান্না করতে পারবে না এটা কি কোনো বইয়ে লেখা আছে? বড়, ছোট বলতে কিছু নেই। এটা যার যার ব্যাক্তিগত ব্যাপার। এখন সমাজ সেটাকে উল্টো দেখলে কি করার?’

প্রসঙ্গ পাল্টাতে আমি চটপট কন্ঠে বললাম,

‘ রান্না কি করে শিখলেন? আপনার আম্মুর কাছ থেকে। ‘

‘ হু বলা যায়! কানাডায় একা ছিলাম। ওখানে বাহিরে খেতে হতো। বাহিরের খাবার তেমন একটা ভালো লাগতো না। তাই আম্মুকে ফোন করার রান্না কিভাবে করবো তা জেনে নিজে রান্না করে খেতাম। ‘

অতঃপর নিশ্চুপতা! খানিক বাদে আমি বলি,

‘ আপনাকে হেল্প করি?’

পূর্ব তৎক্ষনাৎ কাঠ কাঠ কন্ঠে বললেন,

‘ একদম না। চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকো নয়তো রুমে যাও। ‘

পূর্বের আদেশ শুনলাম না। তিনি যখন রান্নায় ব্যাস্ত তখন আমি নিজ হতে ছুরি দিয়ে বাকি সবজিগুলো কাটতে নিলেই হাত কেটে যায়। ‘ উহ্’ শব্দ করে উঠলে পূর্ব চটজলদি আমাতে দৃষ্টি দেন। রক্তাক্ত আঙুল দেখে তার নেত্রপল্লবের সাদা অংশ রক্তিম বর্ণ ধারণা করে! ত্রস্ত পায়ে এগিয়ে এসে চিবিয়ে বললেন,

‘ মানা করেছিলাম আমি! কেনো কথা শোনোনা?’

প্রতিত্তুরে কিছু বলা হলোনা। তিনি আমার হাত টেনে ধরে রুমে নিয়ে আসেন। ফাস্ট এইড বক্স এনে কাটা স্থান পরিস্কার করে ব্যান্ডেজ করে দেন। খেয়াল হয় তার নেত্রপল্লব এখনো রক্তিম রূপে ধারণ করে আছে। আমি কাচুমাচু করে বলি,

‘ আপনি কি আমার ওপর বেশ রেগে আছেন?’

পূর্ব কটমট করে তাকিয়ে বললেন, ‘ হ্যা রেগে আছি! ভিষণ রেগে আছি তোমার ওপর। এতোটাই রেগে আছি যে তোমায় এখন শাস্তিস্বরূপ চু-মু দিতে ইচ্ছে করছে! ‘

চলবে…

#মেঘের_উল্টোপিঠ
#সাদিয়া_মেহরুজ_দোলা
[পর্ব-০৫].

‘ তোর কি পূর্বের সাথে ঝগড়া হয়েছে দোল? পূর্ব কাল আসলো যখন একবারও ওর সাথে কথা বলতে গেলিনা! আবার পূর্বকে তোর কথা বলাতেও ও এড়িয়ে গেলো। ৩ দিন হলো বাসায় থেকে বের ও হোস না! মেডিকেলে যাস না! কিছু হয়েছে? ‘

তাড়াহুড়োর মাঝে হুট করে ভাইয়ার এরূপ বক্তব্যে কান দিতে ইচ্ছে হলো না। তবে অন্তরালে যেনো খানিক হলেও আঘাতপ্রাপ্ত হলো!পরিশেষে নিজেকে ধাতস্থ করে স্বাভাবিক কন্ঠে বলি,

‘ কি হবে?কিছুই হয়নি! অযথা ফাউল চিন্তা করিস অলওয়েজ। হয়তো ব্যাস্ত তিনি। তাছাড়া বিয়ের আগে আমাদের পরিচিত পর্ব ছিলো টিচার, স্টুডেন্ট মানিয়ে নিতে তো সময় লাগে নাকি?’

ভাইয়া যে আমার কথা বিশ্বাস করেনি তা পুরোপুরি নিশ্চিত আমি। তার চিন্তিত মুখশ্রীর পানে দৃষ্টি না দিয়ে রুম থেকে বের হয়ে যাই। ভাইয়া পিছু ডাক দিলো দাড়াতে ইচ্ছে হলো না। শুক্রবার দিনই আমি বাসায় চলে এসেছিলাম এক প্রকার জেদ ধরে! সেদিন থেকেই পূর্বের সাথে আমার কোনো যোগাযোগ নেই। না তিনি কথা বলেছেন আর না আমি! দু’দিকেই নিস্তব্ধ! তার যোগাযোগ না করার কারণে অজান্তে খারাপ লাগছে। ব্যাপারটা অদ্ভুত! এটলিষ্ট আমার কাছে।

.

হসপিটালে পা রাখতে না রাখতেই পূর্বের সহকারী এহসান নামের ছেলেটা হন্তদন্ত হয়ে এসে বলল,

‘ ম্যাম,!স্যার ডাকে আপনাকে। ‘

ভ্রু খানিক কুঁচকে নিয়ে প্রতিত্তুরে বলি, ‘ পূর্ব? ‘

‘ জি! স্যার আপনার জন্য তার চেম্বারে ওয়েট করছে। জলদি যান ম্যাম! আপনার সাথে দেখা করার জন্য স্যার এখনো অপারেশন থিয়েটারেও যাননি। টাইম পিছিয়ে দিয়েছেন। ‘

এহসানের কথা মাথায় নিয়ে পূর্বের চেম্বারের দিকে এগোতে লাগলাম। আপাতত নিভৃতে আমার একটা
প্রশ্ন বারংবার ঘুরছে! ‘ পূর্ব আমার জন্য অপারেশন করার টাইম পিছিয়ে দিলো কেনো? এতো কি গুরুত্বপূর্ণ কথা। ‘ তবে পরবর্তীতে নিজেকে আশ্বস্ত করলাম। এহসান ছেলেটা আগ বাড়িয়ে কথা বলে!অতিরিক্ত! নিশ্চয়ই সে এই কথাটাও বানিয়ে বলেছে। চেম্বারের সামনে এসে কাঁচের দরজাটা ঠেলে ভেতরে প্রবেশ করি। হিম শীতল রুমটায় নিস্তব্ধতা বহমান। দৃষ্টি সামনে নিক্ষেপ করতেই দেখা মিলল পূর্বের। অপারেশন থিয়েটারের ড্রেস পরিহিত তিনি। পকেটে দু’হাতে পুরে কাচ ভেদ করে পূর্ণ দৃষ্টি বাহিরে তাক করে আছেন!

আমি কয়েক কদম সামনে এগিয়ে গলা খাঁকারি দিয়ে বললাম,

‘ আমায় ডেকেছিলেন?’

ঘাড় বাকিয়ে পিছন দিকে তাকালেন তিনি! বরাবরের মতোই রাশভারী ছাপটা মুখশ্রীতে বহমান। প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে তিনি ত্রস্ত পায়ে এগিয়ে এসে আমার সামনে দাঁড়ালেন। তবে ব্যাবধান বজায় রেখে। হাতের ঘড়ির দিকে এক পলক তাকিয়ে শেষে বললেন,

‘ মা, বাবা সবাই সামনের সপ্তাহেই বিয়ের ফাংশন করতে চাচ্ছে! তোমার কি মতামত? নিড টাইম?’

নতজানু হয়ে চিন্তায় মগ্ন হয়ে পড়ি। এতো জলদি কি আমি মেনে নিতে পারবো তাকে? পূর্বের দিকে দৃষ্টি দিলে আমার বারংবার আপুর আহত মুখশ্রী ভেসে ওঠে। তাছাড়া পূর্বের প্রতি এখনো আমায় ভীতি আছে। আদও কি আমি তাকে স্বামী রূপে গ্রহণ করতে পারবো? আমার এক বিশাল রোগ আছে। যার প্রতি ভীতি থাকে তার সাথে এক ছাঁদের নিচে বসবাস করাও যেনো আমার জন্য অত্যান্ত কষ্টকর।

চিন্তাকালের মধ্যে পূর্ব বাধা প্রদান করে ভরাট কন্ঠে বললেন,

‘ দেখো দোল! তোমার টাইম লাগলে আমি ফ্যামিলিকে ম্যানেজ করবো। তাছাড়া মা ও বারবার জিজ্ঞেস করছিলো তুমি এখন আমাদের বাড়িতে আসতে রাজি কিনা! সামনে এক্সাম তোমার। চাইলে তুমি তোমার পরিক্ষা শেষ হওয়া অব্দি টাইম নিতে পারো। আই হ্যাভ নো প্রবলেম! ‘

আমি তার কথার মাঝে ফোড়ন কেটে বলি,

‘ আপনি কি আমায় আপনার স্ত্রী রূপে মেনে নিতে পেরেছেন? ‘

পূর্ব একটু অন্যরকম দৃষ্টিতে তাকালেন। তার এরূপ দৃষ্টির যথার্থ অর্থ খুঁজে পেলাম না। তবে সে বিব্রত হয়েছেন এটা বুঝতে বাকি নেই। অতঃপর কন্ঠের খাদ নামিয়ে বললেন,

‘ মেনে না নিয়ে কোনো উপায়ও নেই! ধর্মীয় মতে অলরেডি আমরা বিবাহিত। এখন ডির্ভোস নেয়াটাও নিশ্চিত ভালো হবেনা। সম্পর্ক ফুলের মতো পবিত্র হয়, ফুলকে নষ্ট করতে নেই! ‘

পূর্বের কথায় যুক্তি আছে। আমি যে অলরেডি পূর্বের ওয়াইফ তা মাথা থেকে একদমই বেড়িয়ে গিয়েছিলো। ‘ তালাক ‘ নিশ্চয়ই কখনো সমাধান হতে পারেনা আমাদের সম্পর্কের। তাছাড়া একজন তালাক প্রাপ্ত নারীর প্রচুর প্যারা বহন করতে হয়! তার মধ্যে অন্যতম সমাজের কটুক্তিমূলক বাক্য।

খানিক বাদে ফের কর্ণপাত হলো পূর্বের রাশভারী কন্ঠস্বর! তিনি ফের বললেন,

‘ তবে আমার কাছে মনে হয় তোমার এক্সামের পর বিয়ের ফাংশন করাটা ঠিক হবে। এক্সামের মাঝে এসবে মত্ত হলে পরিক্ষা খারাপ হবে নিশ্চিত। আর মেডিকেলে একবার রেজাল্ট খারাপ হলে অনেক প্যারা তার ওপর তোমার একটা বছর লসও হবে। আমি মা কে বলে বিয়ের ডেট ২ মাস পিছিয়ে দিবো। এখন তোমার ডিসিশন কি? ডু ইউ এগ্রি উইথ মি?’

‘ জি! আমারও এটাই বেটার মনে হয়। ‘

‘ ফাইন দ্যান ক্লাসে যাও এখন। ‘

পূর্বের চেম্বার থেকে বের হতে নিলেই তৎক্ষনাৎ এহসানের বলা কথাটি স্বরণ হয়! পিছন ঘুরে নম্র কন্ঠে বলি,

‘ এহসান বলেছিলো আপনি আমার সাথে কথা বলার জন্য অপারেশন এর টাইম পিছিয়ে দিয়েছেন। এর দরকার কি ছিলো? আমরা এ বিষয়ে পরেও কথা বলতে পারতাম। ‘

পূর্ব ভড়কালেন মনে হলো। তবে পরবর্তীতে হাতের ঘড়িটা খুলতে খুলতে ব্যাস্ত কন্ঠে বললেন,

‘ এহসান সবসময়ই অতিরিক্ত বলে এটা তুমি জানো দোল! আমি কখনোই অপারেশন করার টাইম পিছিয়ে দেইনি। যখন ছিলো তখনই! ইকবাল অযথাই এটা বানিয়ে বলেছে।

নিঃশব্দে পূর্বের চেম্বার থেকে বেড়িয়ে আসি। আমার সন্দেহটাই ঠিক ছিলো তাহলে! ধুর! এটা তাকে জিজ্ঞেস যে কেনো করলাম। হু – হুতাশ করতে করতে ক্লাসের দিকে যাবো তখনই ভেসে এলো একজন মধ্য বয়স্ক লোকের উচ্চ কন্ঠস্বর। তিনি ফোনে কারো কাছে বলছিলেন, ‘ হ আপা! তুবার অপারেশন এখনো শুরু হয়নাই। ডাক্তার সাহেব কিল্লেগা জানি অপারেশন এর টাইম পিছায় দিছে।তুই দোয়া দরুর পরতে থাক! দোয়া কর তুবার লেইগ্গা! ‘

বৃদ্ধ লোকের কথাটা শুনে বিমূঢ় হয়ে গেলাম। ইনি তো পূর্বেরই পেশেন্ট! স্পষ্টত খেয়াল আছে আমার। তার মানে ইকবালের বলা কথাটা সত্যি? কিন্তু পূর্ব আমায় মিথ্যা বলল কেনো? এই পূর্ব মানবের মস্তিষ্কে আসলে চলছেটা কি?

___________________

ক্লাসে আজ বেশ হট্টগোল! সব মেয়েরা হুড়োহুড়ি করছে। বেশিরভাগ মেয়েরাই মেকাপ করা শুরু করেছে। কারণ আজ পূর্বের ক্লাস! তিনি আমাদের লেকচারার ছিলেন না। কিন্তু অদ্ভুতুরে ভাবে আমাদের এক লেকচারার এর বদলি হয়ে গিয়েছে হুট করেই! তাই তার পরিবর্তে এখন থেকে আমাদের ক্লাস পূর্ব নিবেন। এর কারণেই মেয়েদের এতো হট্টগোল! এদিকে তারা যার কারণে এতো সাজগোজ করছে। তার বউ যে তাদের সামনেই বসে সেদিকে তাদের কারোরই বিন্দুমাত্র খেয়াল নেই। অদ্ভুত লাগে! বিবাহিত পুরুষের দিকে নজর দেয়? এট দিস মোমেন্ট! আমার ইচ্ছে করছে সবগুলোকে মেকাপের সাগরে ডুবিয়ে মারতে।

রাগে ফোসফাস করা কালীন অরিনের ধাক্কা পড়ে! বিরক্তি চোখে ওর দিকে তাকাতেই সে দাঁত কেলিয়ে বলল,

‘ জেলাস বান্ধবী? ‘

আমি কাঠ কাঠ কন্ঠে বলি, ‘ একদমই না! ‘

অরিন অসন্তোষ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল! হয়তো সে মানতে পারছে না আমার উত্তর!
কিয়ৎক্ষন পরেই পূর্বের আগমন। মেয়েরা খুশিতে গদগদ! আমি এদের সাহস দেখেই কুপোকাত। এরা কি আমায় চোখে দেখছে না? পূর্ব আমি বাদে সবার পরিচয় নিয়ে পড়ানো শুরু করলো। সে আগের লেকচারার থেকে মোটামুটি ক্লাসে কি পড়ানো হচ্ছে তা জেনে এসেছে বোধগম্য হলো! আগের লেকচারার আমাদের বেশ কঠিন এক চাপ্টারের ওপর পড়া দিয়েছিলো। আজ বলেছিলো মুখে ধরবে! সেই অনুসারে পূর্ব এক – এক করে সবাইকে পড়া ধরা শুরু করলো। কেও কেও পেরেছে, আবার কেও কেও না পেরে বকা খেয়েছে!

পুরো ঘটনা দেখে আমি চুপচাপ ভীতি নিয়ে বসে আছি। গত তিনদিন অসুস্থ থাকায় বই ধরা হয়নি। পরিশেষে পূর্বের আগমন ঘটলো আমার কাছে। আমার ধারণ মতে একটা পড়াও হলোনা ঠিক মতো। মাথা নিচু করে করতেই সামনের সিটের মেয়েটা ফিসফিস করে বলল,

‘ স্যারের ওয়াইফ পড়া পারেনি। এখন পূর্ব স্যার তো নিশ্চিত দোলাকে কিছু বলবে না। ইশশ! আফসোস হচ্ছে কেনো পূর্ব স্যারকে বিয়ে করলাম না। তাহলে আজকের ধমকটা খাওয়া লাগতো না। ‘

অতঃপর দ্বিতীয় মেয়েটি বলল,

‘ ঠিক বলছিস! তবে অন্য টিচারকে বিয়ে করিস। তাহলে তখন পড়া না পারলে বকা খাওয়া লাগবে না। ‘

মেয়ে দু’টোর কথা আমার কর্ণপাত হলো ঠিকই। কি প্রতিক্রিয়া দিবো বুঝতে পারছিনা। আগে এমন কখনো হয়নি! সব সময়ই পড়া পারতাম। পূর্বের কানেও যে কথাগুলো গিয়েছে তা নিশ্চিত আমি। পরিশেষে পূর্ব রাশভারী কন্ঠে বললেন,

‘ অরিন স্কেল আছে তোমার কাছে?’

অরিন ভড়কে যায়। অতঃপর কাঁপা কন্ঠে বলে,

‘ জি স্যার আছে। কাঠের নয় স্টিলের! কিন্তু কেনো স্যার?’

‘ স্কেলটা দাও! ‘

পুরো ক্লাসের সকলের দৃষ্টি আমাদের বেঞ্চের দিকে। সবাই উৎসুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আসলে পূর্ব কি করতে চাচ্ছে তা দেখার জন্য। ভয়ে আমার গলা শুকিয়ে কাঠ। অরিন শুকনো হেঁসে ‘ দিচ্ছি ‘ বলে ব্যাগ থেকে স্টিলের স্কেলটা বের করে পূর্বের পানে এগিয়ে দেয়। পূর্ব স্কেল হাতে পাওয়া মাত্রই ভারী কন্ঠে বললেন,

‘ হাত এগিয়ে দাও দোল! ‘

আমার চোখ কোটর থেকে বেড়িয়ে আসার উপক্রম। কাঁপা কন্ঠে বলি, ‘ জ..জি?’

পূর্ব সঙ্গে সঙ্গে বললেন, ‘ হাত দিতে বলেছি তোমায়।’

ধমকে কেঁপে উঠে সঙ্গে সঙ্গে হাত এগিয়ে দেই। পূর্ব দিক – বেদিক না দেখে স্টিলের স্কেল দিয়ে গুনে গুনে প্রায় দুইটা বাড়ি দেয়। কোমল হাতে স্টিলের শক্ত বাড়ির কারণে ফেটে রক্ত গড়িয়ে পড়ছে। সেদিকে ভ্রুক্ষেপ না করে পূর্ব তিন নাম্বার বাড়ি টা দিয়ে শক্ত কন্ঠে বললেন,

‘ নেক্সট টাইম পড়া না শিখে ক্লাসে ঢুকলে আরো কঠিন শাস্তি দিবো। মাইন্ড ইট! ‘

পুরো ক্লাস স্তব্ধ! পূর্ব টিচার হিসেবে বেশ কঠিন এ সম্পর্কে সবাই অবগত। তবে এতোটা? এটা কারো চিন্তাধারায় ছিলো না। সবাই ভীতু চোখে বইয়ের পাতায় অবলোকন করলো। আমি ঠোঁট চেপে কান্না দমন করার তুমুল চেষ্টা করি। অরিন পাশ থেকে উত্তেজিত হয়ে আমার হাত টেনে নিয়ে বলল,

‘ আল্লাহ! রক্ত বের হচ্ছে অনেক। তোর তো রক্ত বের হওয়া শুরু হলে আটকানো খুব মুশকিল। পূর্ব স্যার এমন করলো কেন? ‘

অরিনের কথায় আমার ধ্যান নেই! পূর্বের এরূপ কর্ম হজম হচ্ছেনা। ক্লাস শেষ হতেই রক্ত মাখা নিয়ে হাত নিয়েই হসপিটাল থেকে চলে যাই। বাসায় আসার পর আম্মু আমার হাত দেখে আৎকে উঠে বলল,

‘ কি হয়েছে হাতে? এতো রক্ত পড়ছে কেনো?’

আম্মুর প্রশ্নের পরিপ্রেক্ষিতে আমি রেগে বলি,

‘ আমি পূর্বের সাথে সংসার করবো না আম্মু। আই ওয়ান্ট ডিভোর্স! ‘

আম্মুর প্রতিক্রিয়া না দেখে রুমে এসে ধাম করে দরজা কোনোরকম লাগিয়ে বিছানায় ঘুমিয়ে পড়ি।আপাতত রাগ কমানো প্রয়োজন! নয়তো নিশ্চিত উল্টোপাল্টা কিছু করে বসবো।

_______________________

রাতের আটটার দিকে ঘুম ভাঙে!
হাতের দিকে দৃষ্টি দিতেই খেয়াল হয় হাত শুভ্র রঙের ব্যান্ডেজে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে আছে। ব্যাথাটাও যেনে বিন্দুমাত্র নেই। পরবর্তীতে ডান পাশে তাকাতেই চমকে যাই! পূর্ব শোফায় শুয়ে আছেন! একহাত কপালে দেয়া তার। সকালে যেই হাত দ্বারা তিনি আমায় আঘাত করেছিলেন সেই হাতের অর্ধেকাংশ ব্যান্ডেজে মোড়ানো! এতে ভ্রু কুঁচকে আসে আমার। তার হাতে আবার কি হলো? আর এই মানব আমার রুমেই বা কেনো?

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here