নিষ্কলুষচিত্ত তুমি |৩|
লেখা : মান্নাত মিম
পলক মনে মনে ভাবছে, তার কী বলা উচিত? এমন পরিস্থিতিতে সম্ভবত সকলেই পড়ে, শুধু মেয়ে নয় ছেলেরা-ও বিয়ে নামক জীবনের বড়ো অধ্যায়ে প্রস্তুতি বা প্রস্তুতি ছাড়া জড়াতে হয়। তার কাছে আজ মনে হচ্ছে ভাইবা পরীক্ষার দিন। অথচ সেটা হলেও একটু স্বস্তি কিন্তু এটা তো তারচেয়েও বড়ো ধরনের পরীক্ষা উত্তীর্ণ বা অনুত্তীর্ণের বিষয়ও নয়, এটা নিজের সাথে অন্য আরেকটা অস্তিত্বের মিলনের বিষয়। নিজের একা জীবনে অন্য লিঙ্গের প্রবেশ অথচ বিপরীত পক্ষের ব্যক্তি সম্পূর্ণ অজানা, অচেনা। সেই অজ্ঞাত ব্যক্তির সাথে সারাজীবন কীভাবে চলবে সে? ভাবনার গভীর কাঁচ ভাঙার ন্যায় ভেঙে বাস্তবে ফিরে এলো লায়লা বেগমের ডাকে,
“বল, তোর সম্মতির বিষয়ে।”
“তুমি যা ভালো মনে করো তাই করিও।”
“বউ কি আমি নিয়ে থাকব নাকি? থাকবি তুই।”
বিরক্তি ঝরে পড়ল লায়লা বেগমের কণ্ঠে। এবার নিভে যাওয়া কণ্ঠে পলক বলল,
” আম্মু, জানোই তো মেয়েদের সম্পর্কে আমি কেমন। তাদের’কে ভালোগালা বা ভালোবাসার মতো বিষয়গুলো আমার কাছে জটিল মনে হয়। তাই এ বিষয়ে তুমি-ই ভালো বোঝো।”
লায়লা বেগম জানেন, ছেলে তাঁর মেয়েদের বিষয়ে আনকোরা অভিজ্ঞতা সম্পন্ন। তবুও পলকের কাছ থেকে ফারজানা’কে পছন্দের বিষয়টা জানা উচিত বলে মনে করে জিজ্ঞেস করলেন।
“সেটা তো বোঝলাম। অন্তত বলে তো দে, ফারজানা কেমন লাগে? বা মেয়েটা কি তোর জীবনসঙ্গী হিসেবে উত্তম নাকি?”
মাথা নিচু করে এতক্ষণের কথোপকথনে এখন মাথা উঁচু করে পলক বলল,
“এটা কেমন কথা বলো তো? মেয়েটা অবশ্যই ভালো সঙ্গী। তবে আমার চেয়ে উত্তম কাউকেও পাওয়ার অধিকার রাখে। আমি তো সামান্য লেখাপড়া করে প্রাইভেট চাকুরিজীবী। তার মতো ডাক্তারি করা মেয়ে ডিজার্ভ করি না।”
ছেলে তার এখনো নির্মল হৃদয়ের, সেটা লায়লা বেগম জানেন এবং আজ ফের পরিলক্ষিত হলো। এজন্যই ফারজানার মতো সর্বগুণ সম্পন্না মেয়ে পলকের জন্যই সৃষ্টিকর্তা বরাদ্দ রেখেছেন। পলকের গালে হাত দিয়ে মৃদু চাপড় মেরে বললেন,
“আমার ছেলে হলো স্বর্ণের টুকরো। তার মতো স্বামী পাওয়া ফারজানার মতো মেয়ের জন্য ভাগ্যর কপাল বলা হবে। তুই ডিজার্ভ করিস দেখেই আল্লাহ তোকেই দিচ্ছেন সেই সুযোগটা। তাই হেলাফেলা না করে রাজি হয়ে যা।”
মাথা নেড়ে সায় দিয়ে সম্মতি প্রদান করে পলক। আপাতত বোনের বিয়ের জন্য চিন্তাভাবনা করছে সে। একটিমাত্র বোনের বিয়ে বড়ো অনুষ্ঠান করে দিতে বড়ো বাজেট রাখতে হবে। নিজের বিয়ের সাদামাটা করার ইচ্ছে ছিল সেজন্য। কিন্তু বড়ো পরিবারের মেয়ে বিয়ে করলে, ছোটো আয়োজন করতে গেলে তো সম্মান খোয়া যাবে। চিন্তা এখন দুশ্চিন্তায় পরিণত হলো। সব জিনিসের ছোটো বড়ো থাকে। সেখানে ছোটো খাটো বিষয়ের ভাবনাগুলো চিন্তা আর বড়ো বিষয়গুলোর নাম দুশ্চিন্তা দিয়েছে পলক।
_______
নতুন সমস্যার উদয় হলো; নতুন উদীয়মান সূর্যের সাথে। আজ যেমন রৌদ্রজ্বলে শরীরের চামড়া ঝলসে যাচ্ছে, তেমনি ঝলসে যাচ্ছে তীব্র মেজাজ খারাপে। উপরন্তু অভিমুখী বসা মেয়েটাকে দেখে আরো রাগ চাপছে গায়ে। কিছুক্ষণ আগেই মেয়েটা তাকে দেখেই একচোট চিল্লাফাল্লার তাণ্ডবলীলা চালিয়েছে। ভাগ্যক্রমে আঘাত হানাই বাকি ছিল, যার জন্য বেঁচে গেছে সে। সুস্থতা কেবল শারীরিক দিয়েই হয়েছে কিন্তু মানসিক ঝক্কি এখনো সামলিয়ে উঠতে পারেনি। তাছাড়া এখন আলাদা পরিবেশ হিসেবে হাসপাতাল থেকে বাইরে খোলা হাওয়া আর পরিবারের কাছেই থাকাটা শ্রেয় মনে করেন ডাক্তার আফরোজা বেগম। তাই সিদ্ধান্ত হিসেবে মেয়েটাকে লায়লা বেগমের বাড়িতে অল্প ক’দিনের জন্য রাখতে হবে। অতঃপর মেয়েটার ছবি পত্রিকায় ছাপিয়ে তার প্রকৃত বাবা-মা’কে খোঁজ করা হবে। অধিকন্তু লায়লা বেগমের বাড়িতে বিয়ে উপলক্ষে নতুন পরিবেশ মানুষের অনেক আসা-যাওয়া, সকলের সাথে মিশে মানসিক প্রশান্তি হিসেবে প্লাস পয়েন্ট মেয়েটার জন্য। একনাগাড়ে মেয়েটার ঘুমন্ত মুখপানে চেয়ে থেকে পলক ভাবছিল ডাক্তার আফরোজা বেগমের কথাগুলো। যদি-ও লায়লা বেগম একটু-আধটু না রাখার অভিমত ব্যক্ত করে ছিলেন। তবে আফরোজা বেগম আলাদা নিয়ে বুঝাচ্ছেন,
“জানি তো মা’য়ের মন বলে কথা।”
“তা হলে কেন তুই আমাকে ধাক্কাচ্ছিস মেয়েটাকে বাড়িতে ওঠাতে।”
“আহা! থাম না, আমার কথা শুনে নে পুরো। পলকের সাথে তো ফারজানার বিয়ের কথা হয়েই আছে। আর আমাদের পলক-ও তেমন ছেলে না। তাহলে ভয়টা তোর কোথায় শুনি?”
বিভ্রান্ত কণ্ঠে লায়লা বেগম বললেন,
“অচেনা একটা মেয়ে ঠাঁই দেব, সকলের চক্ষুগোচর হবে না বিষয়টা? তখন আস্তে আস্তে তার ধর্ষিত হওয়ার ঘটনা বেরিয়ে আসবে। অতঃপর আমার পলকের দিকে আঙুল তুলবে সবাই। সেখানে মেয়েটাকে আমাদের বাড়িতে রাখা কতটুকু যুক্তিগত ঠেকে?”
আসলেই বিষয়টা গুরুতর দিক নিচ্ছে। মেয়েটা-ও নিজ সম্পর্কে তাঁদের জানাতে চাইছে না বলতে গেলে কো-ওপারেট করছে না। সামনে গেলেই চিৎকার, চ্যাঁচামেচি জুড়ে দিচ্ছে। কতবার ইনজেকশনের সাহায্য বোধশক্তি রোধ করা যায়? এতে হিতে বিপরীত দিকে সমস্যা গড়াবে। সেজন্যই অন্য পরিবেশে নিয়ে মানসিক পীড়া কমানোর মাধ্যমে মেয়েটাকে আগের মতো সুস্থ স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার প্রচেষ্টায় পলক’দের পরিবারে পাঠানোর ব্যবস্থা।
“এক কাজ কর, তোদের বাড়িতে নিয়ে যা মেয়েটাকে।”
ফোঁস করে নিশ্বাস ফেলে আফরোজা বেগম প্রত্যুক্তি করেন,
“খালি বাড়িতে মেয়েটা করবে কী শুনি কিংবা মেয়েটাকে দেখেই বা রাখবে কে? জানিস না আমি বা ফারজানা বাড়িতে থাকি না, রায়হান’কে সময় দিতে পারি না দেখে সে আবার ব্যবসা নিয়ে পরে থাকে। বোকার মতো কথা বলিস না তো। তুই তোদের বাড়ি নিয়ে যা, যত সমস্যা হবে আমাকে বলবি, আমি দেখে নেব। আর ফারজানা’কে তোদের বাড়িতে এমনিতেও পাঠাতে হবে। সংসার করবে আসা-যাওয়া করা উচিত। সেটা আরো সুবিধা হবে মেয়েটাকে চিকিৎসা দেওয়ার উদ্দেশ্যে গেলে।”
অবশেষে আফরোজা বেগমের যুক্তিতে হার মেনে মেয়েটাকে নিজের বাড়িতে নিতে সমর্থনজ্ঞাপন করেন লায়লা বেগম। তথাপি মেয়েটাকে তো নিয়ে যাচ্ছে, সামনে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য তাঁদের বাড়ি দোরগোড়ায় এসেছে কল্পনা করতেও বুকে ব্যথার সঞ্চালন হচ্ছে। নিভুনিভু চোখে এলোমেলো পা ফেলে চলছেন মেয়েটার কেবিনের দিকে। আর মনে মনে বলছেন, কোন কুলক্ষণে যে মেয়েটাকে বাঁচতে গিয়ে এখন নিজেরা’ই ঝঞ্ঝাটে জড়িয়ে যাচ্ছেন।
________
“নাহ, জ্ঞান ফিরেনি এখনো। তোমাদের আলাপচারিতা শেষ?”
সেই নিভন্ত কণ্ঠে পলক’কে প্রত্যুত্তরে লায়লা বেগম বললেন,
“হুঁ।”
“কী হুঁ হুঁ করছ আম্মু? মেয়েটাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে না?”
“বাপ আমি কিচ্ছু জানি না। সামনে থেকে তুই তোর হবু শাশুড়ির সাথে কথা বলিস। সে নাকি আপাতত পুলিশের কাছে কেস করবে না। কারণ মেয়েটা এখনো আতঙ্কের মধ্যে রয়েছে। আবার জিজ্ঞেস করলে উত্তরের বদলে হাইপার হয়ে চিৎকার জুড়ে দেয়। এরমধ্যে জবানবন্দি নেওয়া সহজ হবে না। তাই এখন এসব ঝামেলায় জড়াতে গেলে উলটো আরো ক্লিনিকের বদনাম রটবে যে, এখানে রোগীদের ভালো চিকিৎসা দেওয়া হয় না। এখন চল মেয়েটাকে বাড়িতে নিয়ে যাই।”
লায়লা বেগমের কথা শোনে পলকের ফোঁসানি শুরু হয়ে গেছে। মেয়েটাকে প্রথম যখন দেখল, তখন ওই নীলাক্ষীতে কিছু পলের জন্য স্তম্ভিত, বিস্ময়ান্বিত হয়ে গিয়েছিল। মনোমুগ্ধকর দৃষ্টি নিক্ষেপণের বদলে পেয়েছিল আত্ম চিৎকার জনিত শব্দের সাথে বেডের সামনে যাবতীয় সরঞ্জামের ছুড়াছুড়ি। পলক জানে একটা মেয়ের সম্ভ্রমে আঘাতের চিহ্নের চেয়ে মানসিক পীড়া বেশ কষ্টদায়ক। তা সত্ত্বেও নিজেকে সেই গভীরাচ্ছন্ন চেতনা থেকে মুক্তিলাভের আশায় একটু স্বাভাবিকে ফিরিয়ে আনতে ডাক্তার’দের সহযোগিতা করা উচিত। কিন্তু নাহ, সেটা না করে নিজেকে আরো কষ্ট দিয়ে মস্তিষ্কে সেইসব স্মৃতি আঁকড়ে ক্রমশেই মৃত্যুর দিকে ধাবিত হয়ে আত্মহত্যা নামক ঘৃণ্য কাজে নিজেকে সমর্পণ করছে মেয়েটা।
_______
হুইলচেয়ারের সাহায্য বাড়িতে প্রবেশপথ ধরে এগিয়ে গেলে দোরগোড়ায় কলিংবেলের শব্দে ভেতর থেকে সায়মা দরজা খোলে দেয়। ঘুমন্ত পরী দেখতে হলেও জাগ্রত অবস্থাতে অসুরী শক্তি ভর করে। খারাপ লাগা কাজ করে যখন শুনেছিল সায়মা মেয়েটার বিষয়ে।
“বিছানা রেডি না?”
মাথা নেড়ে ফারজানা’কে সায় দিয়ে ভেতরের রুম দেখিয়ে দেয় সায়মা। পিছনে লায়লা বেগম এসে ড্রয়িংরুমের সোফায় বসেন আর পলক প্রয়োজনীয় ওষুধসামগ্রী নিয়ে টেবিলে রেখে নিজ রুমে চলে যায়। সায়মা ভাইকে ওভাবে রাগতে দেখে লায়লা বেগমের পানে চোখ ইশারা করে ঘটনা কী জানতে চেয়ে। লায়লা বেগম ধীরে-সুস্থে বিস্তারিত খোলে বললে সায়মা তখন বলে ওঠে,
“আরে আম্মু, টেনশন নিও না। যেহেতু আফরোজা আন্টি দায়িত্ব নিয়েছেন, সেহেতু এত চাপ নেওয়ার প্রয়োজন নেই।”
“তবুও অজানা, অচেনা উপরন্তু যে কি না ধর্ষিত; এমন মেয়েকে বাড়িতে রাখতে আমার মন সায় দিচ্ছে না।”
দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললেন লায়লা বেগম। সায়মা তখন মূক হয়ে বলে,
“এটা কেমন কথা আম্মু? তুমি আমাদের সাহায্য করা শিখিয়ে, আজ এমন ধরনের কথা বলছ? স্বাভাবিক এই বিষয়টা জটিলতর তাই বলে অসহায় মেয়েটাকে সাহায্য না করে রাস্তায় ছেড়ে দেওয়া কি তোমার মনে সায় দেয়?”
আসলেই আজ লায়লা বেগমের মতো বিচক্ষণ, বুদ্ধিমান ব্যক্তিও ধর্ষিত মেয়েকে সাহায্য করতে ভয় পাচ্ছেন। তবে এখানে ভয় বেশিরভাগই সমাজের বাকিসব নির্বোধ অথচ ক্ষমতাবান ব্যক্তিদের জন্য হচ্ছে। কারণ তাঁরা ধর্ষিত মেয়েদের সমাজের অপকৃষ্ট, জঘন্য, নীচ বস্তু ভাবেন। যতোটা আবর্জনা তুল্য করলে হয়, সেটাও ভাবেন তাঁরা। তাই এসব সমাজকে গন্ধ করার আগেই সমূলে উৎক্ষেপ করতে পছন্দ করে থাকেন। আর যারা তাদের মতো ধর্ষিতাদের সাহায্য করে তাদের-ও চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়। অতঃপর নেমে আসে সম্মানহানি নামক বিপর্যয়।
“আচ্ছা আন্টি, আজ আমি চলি।”
ভাবনা থেকে বাস্তবতায় চেতনা ফিরে ফারজানার চলে যাওয়ার কথা শোনে।
“সেকি মা! একটু বসে বিশ্রাম নেও। তারপর কিছু নাস্তা-পানি খাও আমাদের সাথে। আমাদের ক্লান্তের মাধ্যমেই তোমার ক্লান্তিকর অবস্থার টের পাচ্ছি। আমার পাশে বসো একটু, এসো।”
লাজুক লতার ন্যায় মিইয়ে পড়ছে ফারজানা। আগে এমনটা হয়নি। যখন থেকে তার আর পলকের বিয়ের কথা কর্ণগোচর হয়েছে, তখন থেকেই সবকিছুতেই অসাড়ে, নিমীলিত, কুণ্ঠিতবোধ হচ্ছে। হঠাৎ হঠাৎ পলকের সাথে চক্ষু মিলনে গাল গরম হয়ে আসছে। এই তো কিছুক্ষণ আগে গাড়িতে একঝলক দেখেই সেই চক্ষু নিচু অবস্থান থেকে আর উর্ধ্বমুখী হয়নি। কীভাবে যেন স্বপ্ন পুরুষ হাতের মুঠোয় এসে ধরা দিল! ভাবতেও অবাক লাগে। নিজের অবস্থান পেরিয়ে পলক কখনো তাকে চাইবে না। আর না সে পলকের আত্মসম্মান ক্ষুন্ন করে নিজ থেকে ভালোবাসার কথা বলতে পারবে। আজ কেবল আম্মুর কারণে পলক’কে পেল, ধন্যবাদ দেওয়া হয়নি আম্মু’কে। সেজন্যে তাঁকে একটা পছন্দের শাড়ি গিফট করে ধ্যনবাদ দিবে ভেবে রেখেছে। এমন সময় কাচ ভাঙার শব্দে ফারজানা সকল জল্পনা-কল্পনার জলাঞ্জলি দিয়ে সেদিকে ছুটে যায়। গিয়ে দেখে পানির গ্লাস নিচে পড়ে আছে। বোঝাই যাচ্ছে পানি খাওয়ার তাড়নায় গ্লাস নিতে গিয়ে শক্তিহীনতার কারণে সেটা পড়ে ভেঙেছে। সায়মা ও লায়লা বেগম পিছু পিছু আসেন তখন। তাদের দেখে ভয়ে গুটিয়ে যায় মেয়েটা। ফারজানা তখন আশ্বাসবাণীতে শোধায়,
“ভয় পেও না। দেখ আমরা আমরাই তো। আসো ওঠে বসো।”
এগিয়ে গিয়ে আলতোভাবে জড়িয়ে ধরে তাকে বসায় ফারজানা৷ সায়মা কাচ ভাঙা পরিষ্কার করে নতুন গ্লাস এনে দিলে, ফারজানা সেটা দিয়ে পানি পান করায় মেয়েটাকে। অতঃপর আবার শুইয়ে দিয়ে সকল’কে চলে যেতে বলে। এদিকে সকলে চলে গেলে আরেকটা ছায়ামূর্তি সেখান থেকে সরে দাঁড়ায়।
“তুমি আমার ছোটো হবে। তাই তোমাকে তুমি বলে ডাকি কেমন?”
শায়িত মেয়েটা তার ফ্যালফ্যাল দৃষ্টি বজায় রেখেই সায় জানায়। ফারজানা-ও সুযোগ বোঝে তার মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,
“তুমি ঘুমাবে আরো?”
ডানে-বামে মাথা নেড়ে নাবোধক সম্মতি জানালে তখন ফারজানা ফিসফিসিয়ে বলে ওঠে,
“আমি তো জানি তুমি কথা বলতে পারো। এখানে কেউ নেই। তুমি চাইলে আমাকে বন্ধু মনে করে বলতে পারো।”
শেষ বলতে দেরি মেয়েটার ভায়োলেন্ট হতে দেরি না। তা সত্ত্বেও দুয়েকটা নখের আঘাতের দাগ ফারজানার ফর্সা মুখের পাতলা চামড়ায় চিহ্ন হয়ে দগদগে ক্ষত করে দিয়েছে। দ্রুততার সহিত সাথে আনা ইনজেকশন প্রতিবারের ন্যায় এবারও পুস করতে হলো। ফোঁস করে দীর্ঘশ্বাস ফেলে রুমের দরজা ভেজিয়ে দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে যায় সে।
চলবে…