#অগত্যা_তুলকালাম,পর্ব ৩১,৩২
নাফীছাহ ইফফাত
পর্ব ৩১
সকাল থেকে ব্যবসায়ের ঝামেলা নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম। অবশেষে দুপুরের কিছু আগে ঝামেলা মিটলো। এসে নামাজ-দোয়া শেষে ধুমসে ঘুমালাম। ঘুম ভাঙলো আছরের পর। ঘুম থেকে উঠে রাফিনের জন্য খারাপ লাগতে শুরু করলো। আমার এরকম মাঝেমাঝেই হয়। দুপুরে ঘুম ভাঙার পর হঠাৎ কার জন্য যেন মনটা পুড়ে খাঁক হয়ে যায়। কিন্তু কার জন্য এত খারাপ লাগে, এত মন পুড়ে বুঝতে পারি না। তবে আজ খারাপ লাগছে রাফিনের জন্য। যতটুকু পড়েছি ওর ডায়েরি ততটুকুতে অজস্র ভালোবাসা বিদ্যমান। অথচ সেসব আমি কখনোই উপলব্ধি করতে পারিনি। এমনকি ও নিজেই আমাকে কখনো সেসব বুঝতে দেয়নি।
রাফিনের ভাবনা বাদ দিয়ে উঠে বসে ঘুমের দোয়া পড়লাম। “আলহামদুলিল্লাহিল্লাযী আহ্ইয়া-না- বা‘দা মা আমা-তানা- ওয়া ইলাইহিন্ নুশূর।”
“হামদ-প্রশংসা আল্লাহ্র জন্য, যিনি (নিদ্রারূপ) মৃত্যুর পর আমাদেরকে জীবিত করলেন, আর তাঁরই নিকট সকলের পুনরুত্থান।” [১]
আছরের নামাজ পড়ে যিকির-আযকারে মশগুল হলাম। আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে মারফূ‘ হিসেবে বর্ণনা করেছেন,
“কোনো গোষ্ঠী যারা যিক্র করছে, তাদের সাথে ফজরের সালাতের পরে সূর্য উঠা পর্যন্ত সময় বসা আমার কাছে ইসমাঈলের বংশধরদের চার জন দাস মুক্তির থেকেও বেশি প্রিয়।অনুরূপভাবে কোনো গোষ্ঠী যারা যিক্র করছে, তাদের সাথে আসরের সালাতের পরে সূর্য ডুবা পর্যন্ত সময় বসা আমার কাছে চার জন দাস মুক্তির থেকেও বেশি প্রিয়। [২]
রাতে ছাড়া অন্যসময় ডায়েরি পড়ার কোনো সুযোগ নেই আমার৷ আবার রাতে ঘুম না হলে সারাদিন ক্লান্ত লাগে। তাই আজ ডায়েরি পড়া হলো না। রাতেও তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়লাম। মাঝরাতে তাহাজ্জুদ পড়ে এরপর ফজর সালাত ও কুরআন তিলাওয়াত, যিকির-আযকার শেষে অবশেষে ডায়েরি নিয়ে বসলাম আবার।
এবারের শিরোনাম “পুনরায় পথচলা”।
সে তার পরদিনও এলো না কাশবনে। এর পরদিন এলো। আমি প্রতিদিন অপেক্ষা করতাম তার জন্য। কিন্তু সে বুঝতেই পারতো না। তবে কাশবনে সে প্রায়ই ক্রিকেট খেলে আর আমি তার খেলা দেখি আড়ালে দাঁড়িয়ে। খেলা শেষে অতর্কিত সামনে পড়ে যাওয়ার ভান করে তার সামনে চলে যেতাম। কয়েকদিন যাওয়ার পর আর লুকিয়ে থাকতে হয় না। সে নিজেই আসে কথা বলতে। এভাবে প্রতিদিনই তার সাথে কথা হতে লাগলো এবং একপর্যায়ে আমাদের খুব ভাব হয়ে গেল। কিন্তু সম্পর্কের কোনো নাম তখনও হয়নি। সেসময়ও আমি কল্পনা করতে পারিনি যে, এই মেয়েটাই, মিস পিছলাবতীই আমাকে আমার চেয়েও বেশি ভালোবেসে আপন করে নিবে। আমার শুধু মনে হতো, ও না ভালোবাসুক আমার পাশে থাকলেই চলবে। কিন্তু ও আমার ভালেবাসাকেও ছাপিয়ে দিয়ে আমার চেয়েও বেশি ভালোবেসেছে আমাকে।
নামহীন সম্পর্কের পথচলার কোনো একপর্যায়ে মনে হলো তারও হয়তো আমারই মতো কোনো ভাবনা আছে মনে। আমরা স্রেফ একই পথে চলার পথিক নই, আরও বেশি কিছু হতে পারি। বস্তুত, আমি তাকে শুধুমাত্র সঙ্গী হিসেবে চাইনি। শুধুমাত্র কাছে আসতেই বন্ধুত্বের কিংবা বিকেলের সুন্দর সময় কাটানোর সঙ্গী হিসেবে অযুহাত দেখিয়েছি। ভাবলাম, এবার নামহীন সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে সত্যিকারের প্রেমিক হয়ে প্রপোজ করে ফেলি।
বহুবার গিয়েছি ওর সামনে প্রেমিক হয়ে কিন্তু মুখ ফুটে বলতে পারিনি মনের কথা। কত শতবার প্র্যাকটিস করেছি আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে। কিন্তু ওর সামনে গেলেই খেই হারিয়ে ফেলি। মুখ ফুটে বলতে পারিনা কখনোই। মনে হয়েছে যদি রিজেক্ট করে দেয়? বন্ধুত্বটাও হারিয়ে ফেলি? এভাবে কেটে যায় দিনের পর দিন। অবশেষে একদিন সিদ্ধান্ত নিলাম, যা হওয়ার হোক। আজ প্রপোজ করবোই।
সেদিন ও এলো। যথারীতি ক্রিকেট ব্যাট নিয়ে মাঠে হাজির হলো। আমিও সরাসরি ওর সামনে গিয়ে বললাম,
“ব্যাট রাখো, আজ খেলা ছাড়ো।” সে অবাক হলো খানিকটা, বললো, “কোথাও যাবো আমরা?”
আমি উপর-নীচ মাথা নাড়ালাম এবং আর কোনো কথার সুযোগ না দিয়ে কাশবনের গহীনে, শুধুমাত্র আমাদের দুজনের রাজত্ব যেখানে সেখানে ওকে নিয়ে এলাম।হারিয়ে ফেলার প্রচন্ড ভয় সাথে একরাশ আশা নিয়ে দুরুদুরু বুকে একগুচ্ছ কাশফুল হাতে ওর সামনে হাঁটুমুড়ে বসে পড়লাম।
সরাসরি চোখের দিকে তাকিয়ে বললাম,
“আমরা কখনো বন্ধু নই, শত্রুও নই। বেস্টফ্রেন্ড, ক্লোজফ্রেন্ড কিছুই নই আমরা। আমাদের সম্পর্কের আসলে কোনো নামই নেই। আমি এই সম্পর্কের নাম দিতে চাই, আরোহী। আমার চলার পথে, আমার বাইকের পেছনের সিটে, আমার পুরো জীবনে একমাত্র তোমাকে আরোহণ করাতে চাই। তোমাকে আমি আমার আরোহী বানাতে চাই। আমার একান্ত আরোহী। যার ওপর সব অধিকার শুধু আমার থাকবে। যে-ই আরোহীকে আমি অন্যকারো সাথে আরোহন করতে কখনো দেখতে চাই না। যে-ই আরোহী সারাক্ষণ আমার সাথে থাকবে, আমার সাথে আরোহণ করবে। আমার সাথে পুরো পৃথিবী ভ্রমণ করবে আর সারাক্ষণ শুধু আমার মনে বিরাজ করবে। তুমি আমার হৃদয়ের আরোহী হবে, প্লিজ?”
প্রপোজ করা শেষ হতেই চোখ বন্ধ করে ফেললাম। কি বলবো ভেবেছি আর কি বলেছি? এতদিন ধরে খাতায় লিখে, নোটপ্যাডে লিখে যে লিখা মুখস্ত করেছি তার একবিন্দুও আমি বলতে পারিনি। যা বলেছি সবটা মন থেকে বলেছি। মনে যা ছিল তাই মুখ ফুটে বলে দিয়েছি। আরোহীর চেহারার দিকে তাকিয়ে আমার ভয় হতে লাগলো। এক্ষুনি হয়তো বলবে, কিসব বকছো আবোল-তাবোল? কিন্তু আমাকে অবাক করে দিয়ে আরোহী আমার হাত ধরে ফেললো। আমি স্পষ্ট অনুভব করলাম, আরোহীর হাত তিরতির করে কাঁপছে এবং সেই কাঁপা হাতে আমার হাত ধরে কাঁপা কন্ঠে ও বললো,
“আমি শুধু তোমার আরোহী হতে চাই। আর কারো না। কারো আরোহী হওয়ার আগে তোমার হৃদয়ে ঠায় দাও আমায়।”
সেই মুহুর্তটা শুধু আমাদের ছিল। শুধুই আমাদের দুজনের। আমার মনে হয়েছে, তখন আকাশ থমকে গিয়েছিল, পাতা ঝরা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল, পাখিরা ডাকাডাকি থামিয়ে দিয়েছিল, কাশফুলগুলো নড়াচড়া বন্ধ করে দিয়েছিল, বাতাস স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল। এমনকি ঘাসফড়িংগুলোও উড়ন্ত অবস্থায় থেমে গিয়েছিল। আমরা দুজনও ক্ষনিকের জন্য একে-অপরের চোখে হারিয়ে গিয়েছিলাম।
আমি দ্রুত আরোহীর হাত শক্ত করে ধরে ফেললাম। এমন ভাব যেন, আমার ধরতে আর একমুহুর্ত দেরী হলেই অন্যকেউ ধরে ফেলবে। হাত ধরে দাঁড়িয়ে বললাম,
“তুমিই আমার হৃদয়ের আরোহী, হৃদিতা আরোহী!”
তখন থেকে মিস পিছলাবতী হয়ে গেল আমার হৃদয়ের আরোহী।
এতটুকুতেই “পুনরায় পথচলা” শিরোনামের লেখা শেষ। আমার বুকের ভেতর ধুকপুক শব্দ হচ্ছে। হৃদয়টা যেন এক্ষুনি বেরিয়ে যাবে। আমি বুকে হাত চেপে রাখলাম। রাফিনের ভালোবাসার গভীরতা আমি কখনো টের পাইনি। ওর ভালোবাসা যে এতটা গভীর ছিল ও আমাকে কখনো বুঝতেই দেয়নি। আমার এতদিনকার ধারণা ছিল, রাফিন নামকাওয়াস্তে আমাকে ভালোবাসে। একবার হৃদয়ে ঠায় দিয়ে ফেলেছে বলে দায় থেকে ভালোবাসে৷ হয়তো বলতে পারছে না ছেড়ে যাওয়ার কথা, আবার ছেড়ে গেলেও কিছু মনে করবে না এই টাইপ ভালোবাসা। কিন্তু… কিন্তু ও আমাকে শুধু প্রপোজ করবে বলেই না কত কান্ড ঘটিয়েছে। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে প্র্যাকটিস করেছে, নোটপ্যাডে লিখেছে, খাতায় লিখেছে শুধুমাত্র আমায় প্রপোজ করবে বলে? আমায়? এই আমায়?
জানালার কাছে দাঁড়িয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে বললাম, “এত ভালোবাসা ছিলো তোমার মনে? হায় আফসোস! সবটাই ছিল হারাম। যদি সবটা আবার ঘটতো আমার জীবনে, হালাল রূপে! যদি হালাল ও উত্তমরূপে রাফিনকে পেতাম জীবনে। আজ ডায়েরির লিখাগুলো পড়ে আমার একটুও আফসোস হচ্ছে না বা খারাপ লাগাও কাজ করছে না। বরং অনুশোচনার দগ্ধ অনলে জ্বলছি আমি। কেন করেছিলাম এই পাপটুকু? একটা সময় প্রপোজ করার সেই মুহুর্তটা ছিল আমার জীবনের সেরা মুহুর্ত। কিন্তু এখন সেই মুহুর্তটা মনে করে আনার মনে একটুও পুলকিত বোধ হচ্ছে না। ঐ যে বললাম, বুকের ভেতর ধুকপুক শব্দ হচ্ছে সেটা রাফিনকে ভেবে নয়। কঠিন গুনাহ করেছিলাম অথচ পাপবোধ জন্মায়নি মনে এই ভেবে। কতটা নিকৃষ্ট ছিলাম আমি সেটা ভাবতেই বুকের ভেতরটা মোঁচড় দিয়ে উঠছে। রবের কাছে শুকরিয়া জ্ঞাপন করছি তিনি সঠিক সময়ে আমাদেরকে দূরে সরিয়ে দিয়েছেন। সঠিক পথ দেখিয়ে ইসলামের পথে নিয়ে এসেছেন। আরও যদি চলতো, এভাবেই যদি অবিরাম চলতে থাকতো আমাদের সম্পর্কটা আর আমরা কেউ যদি সম্পর্ক চলাকালীন মারা যেতাম! কি পরিণতি হতো আমাদের? ভাবতেই গা শিউরে উঠছে। ইয়া রহমান! আপনি সত্যিই দয়ালু্। এত অবাধ্যতার পরও হেদায়েত দিয়েছেন আমায়। অথচ আপনার কাছে কখনোই আমি তা চাইনি। কৃতজ্ঞতায় পরম প্রিয়, মহান রবের সিজদাহ্য় অবনত হলাম।
রেফারেন্স:
[১] বুখারী ফাতহুল বারী ১১/১১৩, নং ৬৩১৪; মুসলিম ৪/২০৮৩, নং ২৭১১
[২] আবূ দাউদ, নং ৩৬৬৭। আর শাইখ আলবানী, সহীহ আবি দাউদ ২/৬৯৮ তে হাদীসটিকে হাসান বলেছেন। হাদীসটি হাকিম সংকলন করেছেন, ১/৫৬[২] আর শাইখ আলবানী একে সহীহুত তারগীব ওয়াত-তারহীবে সহীহ বলেছেন ১/২৭[৩] আর তিনি একে নাসাঈ, তাবারানীর দিকে সম্পর্কযুক্ত করেছেন এবং বলেছেন, তাবারানীর সনদ ‘জাইয়্যেদ’ বা ভালো।
#Be_Continued__In_Sha_Allah ❣️
#অগত্যা_তুলকালাম
নাফীছাহ ইফফাত
পর্ব ৩২
সকাল গড়িয়ে দুপুর হলো। সচরাচর সকাল ছয়টা বা সাতটার দিকে ইশরাক পড়েই আমি ঘুমিয়ে পড়ি। নয়টায় উঠে তারপর দৈনন্দিন কাজ শুরু করি। রাত তিনটায় উঠে একনাগাড়ে ছয়টা পর্যন্ত ইবাদত করার পর একটু ঘুমিয়ে না নিলে সারাদিন শরীরটা ঝিমঝিম করে। একটা কাজেও ঠিকমতো মন বসে না এমনকি ইবাদতেও না। বারবার মনোযোগ ছুটে যায় অন্যদিকে। হাই তুলতে তুলতে দিন পার হয় আর একগাদা কাজ মাথায় নিয়ে কম্পিউটার টেবিলে মাথা রেখেই ঘুমের দেশে হারিয়ে যেতে বাধ্য হই। কিন্তু রাফিনের ডায়েরিটা পাওয়ার পর থেকে মাথায় শুধু সেসব চিন্তাই ঘুরপাক খেতে থাকে সারাদিন। ঘুমাতে গেলেও ঘুম আসে না। ঘুরেফিরে সেসব দেখি শুধু।
আজ “পুনরায় পথচলা” লেখাটা পড়ার পর অনেক চেষ্টার পর হালকা ঘুমিয়েছিলাম। তখন অদ্ভুত একটা স্বপ্ন দেখলাম ওকে নিয়ে। রাফিনের বিয়ে হয়ে যাচ্ছে কার সাথে যেন। ওখানে বউ সেজে বসে আছি আমি। রাফিনকে ওর বন্ধুরা বারবার বলছে, আমাকে বিয়ে করতে। কিন্তু ও গোঁ ধরে আছে। কিছুতেই নাকি এতদিনকার ভাঙ্গা সম্পর্ক ও জোড়া লাগাতে পারবে না। স্বপ্নটা দেখে সারা শরীর ম্যাজম্যাজ করতে লাগলো আমার। ঘুম ভেঙে গেল সাথে সাথেই। এরপর না কাজে মন দিতে পেরেছি আর না পেরেছি ঘুমাতে।
ঘুম থেকে উঠে শান্তি কুঠিরের সবার জন্য রান্না করলাম। দাদুর হঠাৎ করলা ভাজি খেতে ইচ্ছে করছে। কুলসুমকে সাথে নিয়ে ক্ষেত থেকে করলা তুলতে গেলাম। শান্তি কুঠিরের চারপাশে বাচ্চাদেরকে নিয়ে বিশাল ক্ষেত গড়ে তুলেছে দাদু। এহেন কোনো শাকসবজি নেই যা দাদুর ক্ষেতে নেই। মাহফুজ ও আবির সারা দুনিয়া খুঁজে খুঁজে দাদুকে চারা এনে দেয় আর কুলসুম ঝিলিদের নিয়ে দাদু ক্ষেতে চারা লাগান। আর সেসব রান্নার দায়িত্ব এসে পড়ে আমার কাঁধে। দাদুর হুটহাট এটা-ওটা খেতে ইচ্ছে করে। দাদুর ইচ্ছে করে বললেই হলো, সবগুলো বাচ্চাকাচ্চা এসে আমাকে ধরবে রান্না করার জন্য। দাদুর ইচ্ছে বলে কথা। আমিও অগত্যা রান্না করি তাদের জন্য।
ক্ষেতে গিয়ে দেখলাম রায়হান, আবির ও ফাহিম তিনজনই ক্ষেতে মনোযোগ দিয়ে কাজ করছে। একজন গাছে পানি দিচ্ছে, একজন গাছে স্প্রে করে পোকা সরাচ্ছে। অন্যজন বৃষ্টির পানিতে যে গাছগুলোর মাটি সরে গিয়েছিল সেগুলোতে ঝুরঝুরে মাটি দিয়ে ভরাট করে দিচ্ছে। আমি ঠোঁট উল্টে বললাম,
”বাহ! খুব মনোযোগী কর্মী। ভালো।”
ওরা একসাথে আমার দিকে তাকিয়ে মিষ্টি হাসি উপহার দিলো। আমিও স্মিত হেসে ওদের কাছে গিয়ে দাঁড়ালাম।
“আপনাদের বাগান থেকে তরকারি নিতে এলাম। দাম দিয়ে নিতে হবে না ফ্রীতে পাবো?”
“আপনার জন্য দিল দিতেও রাজি ম্যাডাম। বলুন কি চাই?” বুকে হাত দিয়ে বললো রায়হান।
ওর বলার ধরণে আমি হেসে ফেললাম।
“দিল দিতে হবে না। আপাতত করলা দিলেই চলবে।”
আবির ও ফাহিমের একসাথে চক্ষু চড়কগাছে উঠে গেল। দুজনই নাকমুখ বিকৃতি করে বললো,
“আজকের রেসিপি করলা? ইয়াক!”
“ইয়াক করার কিছু হয়নি। এমনভাবে রাঁধবো যেন একটুও তেঁতো না হয়। হুহুম!”
“আজকে দাদু করলা খেতে চেয়েছে?”
”হুম।” আমিও হতাশ হওয়ার ভঙ্গিতে উপর-নীচ মাথা নাড়লাম।
“অগত্যা…”
আবার হতাশ ভঙ্গিতে মাথা দুলালাম। ওদের মুখে হাসি ফোটাতে বললাম,
“তোদেরকে এই অবস্থায় দেখে আমার হঠাৎ একটা গল্প মনে পড়ে গেল।”
“কি গল্প? কি গল্প?” আবির রীতিমতো ছুটে এলো আমার কাছে। ছেলেটা গল্পের পাগল। সে আমার পুরোনো বাংলা বইয়ের গদ্য-পদ্য সব পড়ে শেষ করে ফেলেছে। এখন ধরেছে নাকীবেরগুলো।
“তোমরা হাতে কোদাল, পানির জার এগুলো নিয়ে আছো না? এজন্য একটা গল্পের কথা মনে পড়লো।”
“কি গল্প বলো না আপু? তাড়াতাড়ি!”
আবিরকে আর ধৈর্যের পরীক্ষায় না ফেলে গল্প বলতে শুরু করলাম।
“একটা বাগানে তিনজন মালী ছিল। একজনের কাজ ছিল গর্ত খোঁড়া, আরেকজনের কাজ গর্তে গাছ পুতে দেওয়া আর অন্যজনের কাজ গর্ত ভরাট করা। তো একদিন দ্বিতীয় ব্যক্তি অসুস্থ হওয়ায় কাজে আসেনি। দ্বিতীয় ব্যক্তি বলতে যে গাছ রোপণ করতো সে আর কি। সে যেহেতু আসেনি তাই বলে কি অন্যরা তাদের কাজ বন্ধ রাখতে পারে? তারা তাদের কাজগুলো করে গেল। যেমন; একজন গর্ত খুঁড়ছে অন্যজন ভরাট করছে। মালিক এসে যখন জানতে চাইলো, আশ্চর্য! তোমরা এসব কি করছো? একজন গর্ত খুঁড়ছো অন্যজন ভরাচ্ছো! তখন তারা সরলতার সাথে বললো, “যে গাছ রোপণ করে সে আসেনি তাই বলে কি আমরা আমাদের কাজ ফেলে রাখতে পারি?”
গল্প শুনে সবাই হাসিতে ফেটে পড়লো। রায়হান তো বলেই ফেললো,
“এটা কিছু হলো? কাজের কাজ তো কিছুই হলো না।”
“হুম কিন্তু এটা থেকে আমাদের কিছু শেখারও আছে। সবসময় শুধু দায়িত্ব পালন করে গেলেই হয় না৷ আশেপাশেও নজর রাখতে হয়। দায়িত্বের মাধ্যমে কারও উপকার বা অপকার হচ্ছে কিনা খেয়াল রাখতে হয় বুঝলে?”
সবাই উপর-নীচ মাথা দোলালো। আমি তড়িঘড়ি এদিক-ওদিক তাকিয়ে বললাম,
“দেখি, করলা গাছ কই? তাড়াতাড়ি করলা দাও তো।”
কুলসুম আমার সামনে করলার ঝুড়ি রাখতে রাখতে বললো,
“তোমরা কথা বলার ফাঁকে আমার করলা তোলা শেষ। চলো এবার রান্না বসাই।”
আমি কুলসুমের কাঁধে হাত চাপড়ে বললাম,
“বাহ! খুবই কর্মঠ। গুড জব!”
কুলসুম আমার রান্নায় সাহায্য করছে। করলা ভাজি প্রায় হয়েই এসেছে। এরমধ্যেই আমার আলুভর্তা করা শেষ। কুলসুম করছে শুকনো মরিচের সাথে শুটকির ভর্তা। খুবই সাধারণ কিছু খাবার। এগুলোই আমরা তৃপ্তি নিয়ে খাই। মনে হয় এরকম মজার খাবার যেন সারা জীবনেও খাইনি। অথচ বাসায় যখন ডাইনিংয়ে বসে পা দোলাতে দোলাতে চিকেন, বিফসহ হাজাররকমের আইটেম খেতাম তখনও খাবারে এত স্বাদ পেতাম না। শান্তি কুঠির আসলেই পরম শান্তির আবাস। এখানে মাটিতে চাটাই পেতে সবাই একসাথে শুকনো মরিচ ভর্তা, আলুভর্তা, ডাল এমনকি করলা ভাজি খেতেও পরম স্বাদ লাগে। আমাদের প্রায় দিনই কাটে ক্ষেত থেকে আনা শাকসবজি খেয়ে। মাছ-গোশত খাই না বললেই চলে। আর সবাই এতেই ভীষণ খুশি। রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজে বলেছেন, আল্লাহর নাম নিয়ে একসাথে খাবার খেতে। তাহলে খাবারে বরকত হয়। [১]
দাদু গুটিগুটি পায়ে এসে রান্নাঘরে ঢুকলেন। চুলার কাছে এসে ঘ্রাণ নিয়ে বললেন,
“আহ! কি মিষ্টি ঘ্রাণ। কতদিন পর করলা ভাজি, আহা!”
“পরশু দিনও তো করলা ভাজি করেছিলাম দাদু। কতদিন পর বলছেন কেন?”
“ওহ! পরশু দিন? মনে হচ্ছে কত যুগ যেন কেটে গেছে।
আমি ও কুলসুম মুখ চাওয়াচাওয়ি করে হাসলাম। আমাদের কাজ যখন একেবারে শেষের দিকে তখন নাকীব ও মাহফুজ এলো বাইরে থেকে। সবার জন্য খাবার দিয়ে নিজেরাও বসে পড়লাম খেতে।
অবশেষে দুপুর হতেই ডায়েরি নিয়ে বসে পড়লাম। ডায়েরিটা শেষ না করা পর্যন্ত আমি শান্তি পাচ্ছি না। এক পৃষ্ঠা পড়লেই মনে হয় আরেক পৃষ্ঠায় যাই। মনে মনে এটা ভেবেও ভয় হচ্ছে যে, না জানি শেষ পাতায় কি লেখা আছে! সেটা পড়ে আবার নতুন কৌতুহল জাগবে না তো মনে? এরপর তো আর কিছুই লেখা থাকবে না। রাফিন তো ডায়েরি লিখে মনের খোরাক জোগায়। আর আমি ওর ডায়েরি পড়ে। শেষ হয়ে গেলে তখন কি পড়ে আমি আমার মনের খোরাক জোগাবো? কাজে মন দিতে পারবো তো ঠিকঠাক? উফ! এতকিছু ভাবা যাবে না। এখন ডায়েরিটা পড়বো, এটাই মিশন। ব্যস!
এবারের শিরোনাম “চলছে প্রেমালাপ, বন্ধ হোক।” ঠোঁট উল্টে খানিকক্ষণ শিরোনামের দিকেই তাকিয়ে রইলাম। এটা কেমন শিরোনাম হলো? চলছে প্রেমালাপ, বন্ধ হোক। এটা কেমন কথা? যাইহোক, গল্পে ফিরি।
“প্রেয়সীর সাথে রোজই ফোনালাপ চলতে থাকলো। আর রোজ বিকেলে দেখা তো হচ্ছেই। মধুর দিন কাটতে লাগলো আমাদের। সে কল করে, আমি কল কেটে ব্যাক করি। তার কল কেটে ব্যাক করতে অদ্ভুত এক ভালোলাগা কাজ করে আমার মনে। আর আমিও যখন ইচ্ছে কল করি। এভাবে চলতে চলতে একটা পর্যায়ে আমার মনে হলো, এভাবে তো চলতে দেওয়া যায় না। আমরা ব্যাপারটায় রীতিমতো অভ্যস্থ হয়ে গিয়েছি। একদিন সে কোনো কারণে আমার ফোন ধরতে পারেনি। আমি তো রেগেমেগে অস্থির। কি এমন কাজে ব্যস্ত সে যে ফোন ধরতে পারবে না? এমনকি সেদিন সারাদিনেও সে আর কলব্যাক করেনি। আমি রেগে অস্থির হয়ে গভীর রাত অব্দি পায়চারি করছি। হঠাৎ মনে হলো, একবার ফোন না ধরায় আমি নিজের সব কাজ বিসর্জন দিয়ে ফোন হাতে নিয়ে পড়ে আছি? আমার সারাটা দিন তো মাটি হলোই। রাতে ঘুম না হওয়ায় পরের দিনটাও প্রায় মাটি হতে চলেছিল। তখনই সিদ্ধান্ত নিলাম, এভাবে আর চলতে দেওয়া যায় না। গভীর প্রেমালাপ এবার বন্ধ হওয়া দরকার। কিন্তু সেটা ধীরে ধীরে করতে হবে যাতে সে বুঝতে না পারে আজকের ব্যাপারটার জন্যই আমার এই পরিবর্তন। তাহলে সে নিজেকে দোষারোপ করতে করতেই মরে যাবে। এরপর আস্তে আস্তে তার সাথে কথা বলা কমাতে থাকলাম। আস্তে আস্তে কমালেও ব্যাপারটা ও নিতে পারছিলো না। আমার নিজেরও কষ্ট হতে লাগলো ওর সাথে যখন ইচ্ছে তখন কথা বলতে না পারায়৷ কিন্তু নিজের কষ্ট বিসর্জন দিয়ে আমি ওকে ইগনোর করতে লাগলাম। নাহলে যে পরে পস্তাতে হবে। কখনো যদি কোনো কারণে একটা দিনও দূরে থাকতে হয় তাহলে যে দমবন্ধ হয়ে মারা যাবো। তাই আগেভাগে অভ্যাস করে নেওয়া।”
পৃষ্ঠা শেষ হলো। পরের পৃষ্ঠায় পাঁচ-ছয়টা স্ক্রিনশটের প্রিন্ট আটকানো। কতদিন পর পর কতবার করে, কত মিনিট, কত সেকেন্ড কলে কথা হয়েছে তার চাক্ষুষ দলিল।
উহ! পাপ তো করেছেই আবার সেটা প্রিন্ট করে সযত্নে ডায়েরিতে লাগিয়েও রেখেছে।
কিছুক্ষণ ছবিগুলো দেখে পরের পৃষ্ঠা উল্টালাম।
“এরপর থেকে সে ফোন করতো আমি কেটে দিতাম কিন্তু ব্যাক করতাম না। কখনো করতাম, কখনো করতাম না। তবে মাঝেমধ্যে আমি নিজেই কল করতাম। তখন ও লুফে নিতো সেই সুযোগ। কখনো দু’বার রিং বাজতো না একবার রিং হতেই তার উত্তেজিত কাঁপা কন্ঠে, “হ্যালো” উচ্চারিত হতো। এরপর ধীরে ধীরে সে নিজেই আমাকে ফোন করা বন্ধ করে দেয়। ব্যাপারটা তখন আমার খুব খারাপ লাগতো। ফোন ধরি বা না ধরি সকালে একবার, রাতে একবার সে ফোন দিবেই। আর আমিও সেই টাইমে ফোনের দিকে তাকিয়ে অপেক্ষা করতাম তার কলের জন্য। একদিন সকালে ফোন আসলো না। আমি অনেকক্ষণ অপেক্ষা করলাম, ফোন আসলো না। কিন্তু রাতে ঠিকই ফোন এলো। আমিও সকালে ফোন না আসার কারণে টেনশনে কল কেটে ব্যাক করে বসলাম। কিছুক্ষণ কথা হলো, কল না আসার কারণটা আর জানতে চাইলাম না। পরদিন সকালেও আর কল এলো না। ভাবলাম, হয়তো রাতে কথা হয়েছে তাই আর কল করেনি। তবুও আমি অপেক্ষায় ছিলাম কাঙ্খিত টিউনটি শোনার। অপেক্ষার ফল বৃথা গেল। তারপর থেকে আর কখনোই সকালের সেই নির্ধারিত সময়ে কল আসেনি। এমনকি একটা পর্যায়ে রাতে কল আসাটাও বন্ধ হয়ে গেল। তারপর বুঝতে পারলাম, কি হারালাম। কতটা যন্ত্রণা বুকে বয়ে বেড়িয়েছি প্রায় সপ্তাহখানেক সেটা শুধু আমিই জানি৷ ওর ফোন আসা একেবারে বন্ধ হয়ে গেল। কাঙ্ক্ষিত রিংটি আর কখনোই শোনা হতো না আমার। ও যে এভাবে থেমে যাবে কখনো ভাবিইনি। খুব দরকার হলে টেক্সটে বলতো, জানতে চাইতো কথা বলা যাবে কিনা। শুরুর দিকে টেক্সট করলেই কল করতাম। পরে সেটাও কমিয়ে দিলাম।
একরাতে সে আমাকে টেক্সট করে। তাকে বারণ করা আছে যেন রাতেবিরেতে অনলাইনে না আসে। তবে আমি কিন্তু ঠিকই অনলাইনে থাকি। আমি দেখতে চেয়েছি সে আমার কথা শোনে কিনা বা আমাকে পাল্টা প্রশ্ন করে কিনা। “তুমি থাকো আমি কেন থাকবো না?” এরকম কিছু। কিন্তু সে সেরকম কিছুই বললো না। বিনাবাক্যে আমার কথা মেনে নিয়ে রাতে অনলাইনে আসা বন্ধ করে দিলো। সারাদিনেও আমি তার সাথে কথা বলতাম না। টেক্সট করলেও এড়িয়ে যেতাম। ঘন্টাখানেক সময় নিয়ে রিপ্লাই দিতাম। কিন্তু সেদিন সে নিয়মের ব্যতিক্রম করে রাত তিনটার সময় আমাকে টেক্সট করলো। আমি তখন অনলাইনেই ছিলাম। কিন্তু ওর টেক্সটেকে পুরোপুরি অগ্রাহ্য করে নিজের মতো কাজ শেষ করে অফলাইনে চলে গেলাম। সারাদিন আর অনলাইনেই আসলাম না। এরমাঝে ও অনেকগুলো টেক্সট করেছে।
দুপুর হতেই ও কল করার জন্য টেক্সট করলো। অনলাইনে গিয়ে মেসেজগুলো পড়ে ওকে কল করলাম। মেজাজটা খুব খারাপ হয়ে গেছে আমার। সে উল্টাপাল্টা স্বপ্ন দেখে আমাকে টেক্সট করেছে। আমিও একগাদা কথা শুনিয়ে দিলাম। সাফ জানিয়ে দিলাম, বাবা-মাকে রাজি করিয়ে তারপর আমার সামনে আসতে। সে খুব কাঁদলো। ওর কান্না শুনে মেজাজ আরও খারাপ হলো আমার। ওকে বললাম, রিলেশন ব্রেক করে দিতে। এরকম ফালতু রিলেশনের আমার কোনো দরকার নেই। একথা শুনে হাউমাউ করে কাঁদতে লাগলো ও। আমি আরও কড়া কিছু কথা শুনিয়ে ফোন রেখে দিলাম। মূলত সেদিন থেকেই ও আমাকে ফোন করা একেবারে বন্ধ করে দিলো। এরপর থেকে ও আর কোনোদিন আমাকে নিজ থেকে ফোন করেনি। টেক্সটও করেছে খুব কম। কেমন যেন গম্ভীর হয়ে গেছে ও। আজকাল কাশবনে আসাও কমিয়ে দিয়েছে। ও জানে যে, আমি প্রতিদিন কাশবনে থাকি, তবুও ও আসে না। ব্যাপারটা আমার খুব খারাপ লাগতো৷ ওকে আগের মতো হাসিখুশি আর পাইনি আমি। হয়তো সেদিন খুব বেশিই খারাপ লেগেছিলো ওর।
তাই অনেকদিন পর হঠাৎ করে ওকে চমকে দিবো বলে ওর বাসার নিচে গিয়ে ফোন দিয়ে ডেকে আনলাম। বাইকে চড়িয়ে সোজা গহীন কাশবনে নিয়ে এলাম। এতদিন যা করিনি আজ তাই করলাম। ওর প্রশংসা করলাম খুব, ও চমকালো। চমকে কাঁপা হাতে আমার কপাল ছুঁয়ে দিলো। আমি নিজেও কিঞ্চিৎ কেঁপে উঠলাম। বুঝতে পারছি আমার আচরণ দেখে শরীর ঠিক আছে কিনা চেক করছে সে।
ইদানিং সে না আসায় কাশবনে বসে গেইমস খেলি আমি। ও যখন আসতো তখনও আমি গেইমস খেলার ভান করে লুকিয়ে ওকে দেখতাম। কিন্তু এখন আসলেই গেইমস খেলি। ওকে কাশবনের গহীনে রেললাইনে নিয়ে গেলাম। পাশে বসিয়ে গান শোনালাম। গানের মাধ্যমে মনের অব্যক্ত সব কথা ওকে জানিয়ে দিলাম। বুঝলো কিনা কে জানে? তবে অনেকদিন পর ওর মুখে আমি হাসি দেখতে পেলাম। উচ্ছ্বাস নিয়ে ও পুরোটা সময় উপভোগ করেছে। আমার মাঝেমাঝে খুব খারাপ লাগে। কত হাসিখুশি মেয়েটা আমার জন্য কেমন গম্ভীর হয়ে গেছে।
সন্ধ্যায় ওকে বাসায় পৌঁছে দিয়ে চলে আসছিলাম। কিন্তু ও বাইকের কাছেই দাঁড়িয়ে রইলো। জানতে চাইলাম কিছু বলবে কিনা। সে মাথা নেড়ে বললো, কাছে আসতে হবে। আমি তাকেই কাছে টেনে এনে বললাম, “বলো।”
বললো, ভালোবাসি। শুনে হৃদয়ে নাড়া দিলো খুব। অনেকদিন পর ওর মুখে কথাটা শুনেছি। আগে প্রায়ই বলতো। তবে আমার হৃদয় নাড়া দেওয়ার ব্যাপারটা আমি ওকে দেখালাম না। ধ্যাৎ! বলে বাইক নিয়ে চলে এলাম। কিছুদূর এসে আবার ফিরে গেলাম। আমার মন বলছে, সে কাঁদছে। খুব মন খারাপ করেছে। গিয়ে দেখি, ঠিকই সে কাঁদছে। কাঁধের কাছে মুখ নিয়ে বললাম, “আমিও ভালোবাসি তো।”
এটুকু একটা কথায় সে কতটা খুশি হয়েছে সেটা হয়তো আমার ধারণারও বাইরে। সে চমকে তাকালো আমার দিকে। আমি কথা না বাড়িয়ে বললাম, বাসায় যাও। সে চলে গেল।”
এটা পড়ে ঠোঁট গোল করে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লাম। কিছুক্ষণ সিলিংয়ের দিকে তাকিয়ে চোখ কচলে পরের অধ্যায়ে চলে গেলাম। বলা বাহুল্য, আল্লাহর অশেষ রহমতে এই দু’বছরে ওর স্মৃতি অনেকখানি ভুলতে বসেছি আমি৷ ডায়েরিটা পড়ে সেগুলো ধীরে ধীরে আবার চাঙ্গা হচ্ছে বটে। তবে এবার আমার নিজের উপর সম্পূর্ণ আস্থা আছে। আমি নিজেকে যথেষ্ট সামলাতে পারি এখন।
পরের কাহিনীর নাম “তুলকালাম (সম্পর্কে ও ব্যবসায়)। ব্যাপারটা বুঝলাম না৷ সম্পর্কে ও ব্যবসায় তুলকালাম মানে? যাইহোক পড়ে দেখি।
#Be_continued_In_Sha_Allah ❣️