#প্রেম_ফাল্গুন
#পর্ব_৩৯
#নিশাত_জাহান_নিশি
মাঝখানে কেটে গেলো ১৫ দিন। আজ দুপুর ১ টা থেকে লিলির ফাইনাল এক্সামের ফার্স্ট এক্সাম শুরু। ববি এবং লিলির ৩ মাসের দত্তক নেওয়া ফুটফুটে বাচ্চা মেয়ে “ইলমা” মনিটা লিলির কোলে শুয়ে সেই সকাল থেকে ফ্যাঁস ফ্যাঁস করে অবিরত কেঁদেই চলছে৷
লিলি পড়াশোনো চুলোয় দিয়ে অতিশয় বিপাকে পড়ে ইলমাকে শান্ত করার জন্য ব্যতিব্যস্ত হয়ে উঠেছে। ইলমা চোখ বুজে হেচকি তুলে কেঁদে শুধু স্তন খুঁজে চলছে। নিরুপায় হয়ে লিলি ইলমাকে কোলে নিয়ে বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো৷ ওয়াশরুমের দরজার কাছটায় দাঁড়িয়ে লিলি ওয়াশরুমের ভেতরে থাকা ববিকে উচ্চস্বরে ডেকে বলল,,
“ববি শুনছেন?”
তন্মধ্যে ববি টাওয়াল হাতে নিয়ে ভেজা শরীরে ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে এলো। ববির দিকে এক পলক চেয়ে লিলি ব্যতিব্যস্ত স্বরে বলল,,
“বাবুকে একটু কোলে নিন। আমি দুধ গরম করে আনছি। ক্ষিদে পেয়েছে ওর।”
ববি চট জলদি টাওয়াল দিয়ে ভেজা চুল গুলো মুছে মৃদ্যু হেসে ইলমাকে কোলে তুলে নিলো। লিলি দ্রুত পায়ে হেঁটে রুম থেকে প্রস্থান নিলো। ইলমা এখনো অব্দি চোখ বুজে ফ্যালফ্যালিয়ে কেঁদে চলছে। ববির বুকে ও সে নাক, মুখ কঁচলে স্তন খুঁজে চলছে। ইলমাকে বুকের মাঝে মিশিয়ে ববি ব্যালকনীর দিকটায় দাঁড়িয়ে ইলমার কানে ফিসফিসিয়ে আহ্লাদি কন্ঠে বলল,,
“আমার মা টা কাঁদছে কেনো, হুম? কেনো কাঁদছে? কি হয়েছে আমার মা টার? খুব ক্ষিদে পেয়েছে?”
ইলমা বিজ্ঞাপন বিরতির মতোন একটু থেমে আবারো নাক, মুখ কঁচলে ফ্যাস ফ্যাস করে কান্না জুড়ে দিলো। ইলমার মুখ ভঙ্গিমা দেখে ববি খিলখিলিয়ে হেসে ইলমার কানে পুনরায় ফিসফিসিয়ে বলল,,
“মা, তুমি কাঁদছ কেনো হুম? ক্ষিদে পেয়েছে তোমার? খুব ক্ষিদে পেয়েছে? একদস সহ্য হচ্ছে না?”
ইলমা পুনরায় থামল৷ তা ও ৫ মিনিটের উর্ধ্বে থামল না। হু হু করে আবারো কেঁদে দিলো। ববি আহ্লাদী স্বরে চেঁচিয়ে বলল,,
“লিলি, তাড়াতাড়ি খাবার নিয়ে এসো। আমার মেয়ের ক্ষিদে পেয়েছে। খুব ক্ষিদে পেয়েছে। আমার মা এখন খাবে, তাই না মা?”
ইলমা চোখ খুলে একবার ববির দিকে চেয়ে পুনরায় ঠোঁট উল্টে কেঁদে দিলো। বিকট আওয়াজে কাঁদছে সে। ইলমার কান্নার এহেন প্রখর শব্দ কিছুতেই ববির সহ্য হচ্ছে না। ববি এবার খানিকটা রেগে ক্ষীণ কন্ঠে ইলমার কানে ফিসফিসিয়ে বলল,,
“তোমার মা খাবার নিয়ে আসছে তো বেবি। খামোখা কাঁদছ কেনো তুমি? বাবার কথা শুনবে না তুমি? বাবাকে রাগাতে তোমার খুব আনন্দ হচ্ছে?”
কান্নার উর্ধ্বগতি হ্রাস করে ইলমা নিম্ন স্বরে মিনমিন করে কাঁদতে আরম্ভ করল। ইলমাকে বুকে নিয়ে ববি হালকা দুলছে, আহ্লাদি স্বরে নানান রঙ্গের কথা বলছে, মাঝে মাঝে পুরো মুখ মন্ডলে চুমোতে ভরিয়ে দিচ্ছে। ক্লান্ত হয়ে ইলমা মিনমিনে কান্না থামিয়ে চুপটি করে ববির বুকের সাথে মিশে ববির প্রতিটা কথা খুব মনযোগ সহকারে শ্রবণ করছে। ববির বুকের উষ্ণ আদ্রতা পেয়ে তার ঘুমের ঘোরে ডুবতে বেশি সময় লাগল না! নির্দ্বিধায় সে তন্দ্রায় গাঁ ভাসালো।
১৫ মিনিটের মধ্যে লিলি দুধ গরম করে ফিডারে সম্পূর্ণ দুধটা ঢেলে হুড়মুড়িয়ে রুমে প্রবেশ করল। ববির পেছনটায় দাঁড়িয়ে লিলি ব্যতিব্যস্ত স্বরে পেছন থেকে ববিকে ডেকে বলল,,
“দিন মেয়েকে। খাবার রেডি, মেয়েটা হয়তো ক্লান্ত হয়ে পড়েছে।”
ববি পিছু ঘুড়ে অস্থির চাহনীতে লিলির দিকে চেয়ে মুখে এক আঙ্গুল ঠেকিয়ে নিচু স্বরে বলল,,
“ডোন্ট শাউট মেয়ে ঘুমুচ্ছে।”
লিলি তেড়ে এসে বলল,,
“ঘুম পাড়ালেন কেনো মেয়েটাকে? ক্ষিদে পেয়েছিলো তো মেয়েটার, তাই তো কাঁদছিলো।”
“আচ্ছা, ঘুম থেকে উঠলে খাইয়ে দিও। মাএ ঘুমিয়েছে। কাঁচা ঘুমটা ভাঙ্গালে হয়তো আজ তোমাকে আর এক্সাম দিতে যেতে হবে না। মেয়েকে নিয়েই পড়ে থাকতে হবে। যা জিদ্দি আমাদের মেয়ে।”
লিলি জেদ দেখিয়ে পিছু ঘুড়ে রুমে প্রবেশ করে পেছন থেকে ববিকে উদ্দেশ্য করে তটস্থ কন্ঠে বলল,,
“কি যে করেন না আপনি! অভুক্ত অবস্থাতেই মেয়েটাকে ঘুমুতে হলো। ক্ষিদের চোটে হয়তো মেয়েটার আঁত, পিত্তি জ্বলে যাচ্ছে। এজন্যই আপনার উপর ভরসা করা আমার মোটে ও উচিত হয় নি।”
“আচ্ছা মেয়েটা যদি কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পড়ে, সেখানে আমার কি ফল্ট বলো? খামোখা কেনো রাগ দেখাচ্ছ আমার সাথে?”
লিলি ফিডারের পট টা সশব্দে ডেস্কের উপর রেখে অভিমানী স্বরে ববিকে বলল,,
“শুইয়ে দিন মেয়েকে। দেখি ঘুম থেকে উঠলেই দুধটা খাওয়াবো। আপনার তো তর সইল না। ঘুম পাড়াতেই হবে মেয়েটাকে!”
ববি দাঁত কিড়মিড়িয়ে রুমে প্রবেশ করে আস্তে ধীরে, কোনো রূপ কোলাহল ছাড়াই ইলামাকে নরম বালিশটায় শুয়ে দিতেই ঘুমের মধ্যে ইলমা পুনরায় চিৎকার করে উঠল। লিলি ব্যতিব্যস্ত হয়ে ফিডারটা হাতে নিয়ে ক্রন্দনরত ইলমার মুখে পুড়ে দিলো। ইলমা চোখ বুজে চিৎকার করে কেঁদে ফিডারটাকে মুখে নিয়ে গড়গড় করে তরল দুধ গুলো টেনে নিচ্ছে। মাঝে মাঝে হালকা কেশে ও উঠছে। ববি চোয়াল শক্ত করে লিলির দিকে চেয়ে বলল,,
“দেখছ না মেয়েটা কাশছে? জোর করে খাওয়াচ্ছ কেনো?”
লিলি চোখ রাঙ্গিয়ে ববির দিকে চেয়ে বলল,,
“চুপ করে বসে থাকুন আপনি। আমার চেয়ে বেশি বুঝেন আপনি? যান, ব্রেকফাস্ট করুন, অফিসে যান।”
ববি তেড়ে এসে লিলির থুতনীটায় জোরে এক বাইট বসিয়ে বলল,,
“চোখ রাঙ্গানোর ফল। আর করবে মুখে মুখে তর্ক?”
লিলি থুতনীতে হাত দিয়ে কটমট চোখে ববির দিকে তাকাতেই ববি বাঁকা হেসে বলল,,
“ভাল্লেগেছে বাইটটা না? আরো লাগবে?”
লিলি রাগে ফুসফুস করে বলল,,
“রুম থেকে বের হোন বলছি। ইডিয়ট একটা।”
ববি এক রোঁখা ভাব নিয়ে একই জায়গায় দাঁড়িয়ে ভাবশূন্য হয়ে বলল,,
“বের হবো না, কি করবে তুমি?”
লিলি কোনো রূপ প্রতিত্তুর না করে নিজের রাগকে শান্ত করে ইলমার দিকে খানিক ঝুঁকে এক হাতে ফিডার ধরে অন্য হাতে ইলমার মাথায় হাত বুলাতে লাগল। ইলমা উহ্ উহ্ শব্দ করে কিছু ক্ষণ পর পর গোঙ্গে উঠছে। ফিডার শেষ পর্যায়ে আসতেই ইলমা মাথাটা কাত করে অন্য পাশ ফিরে গভীর ঘুমে তলিয়ে পড়ল। লিলি স্বস্তির শ্বাস ছেড়ে অর্ধ শেষ করা ফিডারটা ডেস্কের উপর রাখল। ইলমার গাঁয়ে নকশা করা ছোট কাঁথাটা টেনে দিয়ে লিলি থাই মশারিটা ইলমার চারপাশে মেলে দিলো। বিছানা ছেড়ে উঠে লিলি ফ্লোরে পা রাখতেই ববি অফিসের ব্যাগটা গুছিয়ে দ্রুত গতিতে হেঁটে এসে লিলির কোমড় পেঁচিয়ে ধরে লিলির ঘাঁড়ে মুখ ডুবিয়ে বলল,,
“স্যরি বউ।”
লিলি নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করে তটস্থ কন্ঠে বলল,,
“জুতো মেরে গরু দান করতে হবে না, ছাড়ুন বলছি।”
ববি দ্বিগুন জোরালো ভাবে লিলিকে ঝাপটে ধরে বলল,,
“ছাড়ব না। আগে ইট’স ওকে বলো। দেন ছাড়ছি।”
লিলি অপারগ হয়ে বলল,,
“ইট’স ওকে। এবার ছাড়ুন।”
“উহু। আগে বলো, প্রিপারেশান কেমন?”
লিলি রাগী ভাব পাল্টে ম্লান কন্ঠে বলল,,
“আলহামদুলিল্লাহ খুব ভালো। থিউরি এক্সাম আজ। আশা করি খুব ভালো হবে।”
“ভেবে চিন্তে, ঠান্ডা মাথায় পরীক্ষাটা দিও প্লিজ। যখন পরীক্ষার হলে বসবে না? তখন কনসেন্ট্রেট শুধু পরীক্ষার খাতা অব্দিই সীমাবদ্ধ থাকবে, বাইরে অন্য কোথাও না। মানে কোনো মতেই কনসেন্ট্রেশন ব্রেক করা যাবে না। বাকি সব রসাতলে যাক তোমার দেখার বিষয় না!”
ববিকে শক্ত করে আঁকড়ে ধরে লিলি সন্দিহান কন্ঠে বলল,,
“মেয়েটাকে একলা ছেড়ে যেতে একদম মন চাইছে না ববি। মেয়েটা যদি আমার জন্য কান্নাকাটি করে? আমাকে দেখতে চায়?”
“এই বিষয়টা নিয়ে তুমি একদম ভেবোই না লিলি। বাড়িতে আম্মু আছেন, আপু আছে, মামানী আছেন। সবাই আমাদের মেয়েকে ঠিক দেখে শুনে রাখবেন।”
“ক্ষুধা পেলে তো মেয়েটা পাগল পাগল হয়ে যায়। দেখলেন না একটু আগে ক্ষুধায় কি করল? সবাই মেয়েটাকে বুঝে শুনে রাখতে পারবেন তো ববি? ভীষণ টেনশান হচ্ছে আমার।”
“পারবে, খুব পারবে। ইউ জাস্ট ডোন্ট ওরি। তাছাড়া আমি তো কিছুক্ষণ পর পর বাড়িতে কল করবই, মেয়ের খবরাখবর নিবো, খেয়েছে কিনা ঘুমিয়েছে কিনা আই মিন সমস্ত খবর নিবো। মেয়ের কোনো রকম অনীহা আমি হতে দিবো না।”
লিলি মৃদ্যু হাসল। ববি দুষ্টু হেসে লিলির ঠোঁট জোড়া দখল করার পূর্বেই লিলি হালকা ধাক্কা দিয়ে ববিকে সরিয়ে উচ্চ হেসে দৌঁড়ে রুম থেকে প্রস্থান নিলো। ববি রাগী দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ লিলির যাওয়ার পথে চেয়ে থেকে চোখ ঘুড়িয়ে ঘুমন্ত ইলমার দিকে তাকালো। ইলমার শুভ্রতা ভরা নিষ্পাপ মুখটার দিকে চেয়ে ববি মায়ায় কাতর হয়ে চুপিসারে হেঁটে ইলমার পাশে বসে। মশারিটা হাত দিয়ে সরিয়ে ববি ঘুমন্ত ইলমার কপালে চুমো খেয়ে মিনমিনে স্বরে বলল,,
“আমার মেয়ে! তোর কখনো অযত্ন হতে দিবো না আমি, ইভেন তোকে কখনো বুঝতেই দিবো না তুই আমার নিজের সন্তান না!”
মশারিটা টানিয়ে ববি বেডের প্রতিটা কর্ণারে বালিশ এবং কাঁথা ছড়িয়ে দিলো। মেয়েকে সেইফ রাখার জন্য পাকাপোক্ত কয়েকটা বেড়ি দিয়েছে সে। যদি ও ইলমা মাএ তিন মাসের, ঠিক মতোন নড়াচড়া ও করতে পারে না। তাও বাবা হওয়ার উদ্বিগ্নতা থেকে মেয়েকে সেইফ রাখার জন্য ববি এই ব্যবস্থাটা করে গেলো।
মাএ এক সপ্তাহ হলো ছোট্ট একটা উজ্জীবিত প্রাণের সঞ্চার হয়ে ইলমা এই পুরো বাড়িটা অনাবিল হাসি, খুশি, আলো, রোশনাইয়ে ভরিয়ে দিতে এসেছে। ফুটফুটে নিষ্পাপ বাচ্চাটা নতুন করে তার একজন মা পেয়েছে, বাবা পেয়েছে, দাদু পেয়েছে, সর্বোপরি উৎকৃষ্ট একটা পরিবার পেয়েছে। যে পরিবারে সে সম্পূর্ণ নিরাপদ, সবার আদরের নয়ন মনি, পরিবারের সবার মধ্যমনি, তাকে ঘিরেই সেই পরিবারের সমস্ত শখ, আহ্লাদ, স্বপ্ন, আকাঙ্ক্ষা, আশা, ভরসা। পরিবারের প্রতিটা সদস্য সারাক্ষণ ইলমাকে নিয়ে মত্ত থাকে। একজনের কোল থেকে অন্যজনের কোল। অবুঝ বাচ্চাটা ও সবাইকে পেয়ে ভীষণ হাসি, খুশি, আনন্দ, উচ্ছ্বাসে মেতে থাকে। কখনো খিলখিলিয়ে হাসে তো কখনো হু হু করে কেঁদে উঠে। ইলমার কান্নার শব্দ পরিবারের কেউ সহ্য করতে পারে না। বিশেষ করে সাহেরা খাতুন। দিনের পুরোটা অংশ জুড়ে উনি ইলমাকে নিজের কাছে রাখেন, সর্বক্ষণ কোলে কোলে রাখেন, ইলমার সাথে হাসেন, কথা বলেন, দুষ্টুমি করেন, নানা ধরনের রম্য গল্প করেন। ফিডারিংয়ের সময় শুধু উনি বাধ্য হয়ে লিলির কোলে ইলমাকে তুলে দিয়ে আসেন। রাত ১০ টার পর বিশেষ করে লিলির সৌভাগ্য হয় মেয়েটাকে কোলে নেওয়ার, মেয়ের সাথে একান্তে একটু সময় কাটানোর, মেয়েটাকে বুকে নিয়ে ঘুম পাড়ানোর। এতে অবশ্য লিলি একটু ও নারাজ নয়। বরং এতে লিলির সুবিধে হচ্ছে। দিনের পুরোটা অংশ জুড়ে লিলি এক্সামের প্রিপারেশন নিতে পারছে। রাতের অর্ধেক অংশ জেগে মেয়ের সেবা-যত্ন করতে পারছে। প্রতিরাতেই ইলমা হুট হাট করে ঘুমের মাঝেই গলা ছেড়ে কেঁদে উঠে, খাবারের জন্য হাঁসফাঁস করে, লিলির বুকের সাথে মিশে স্তন খুঁজে। মাঝে মাঝে তো চিৎকার করে পুনরায় সেই চিৎকার ফিরিয়ে আনতে পারে না সে। শ্বাস চলাচল বন্ধ হয়ে যায় তখন। চোখ, মুখ লাল হয়ে ঘাঁড়ের রগ গুলো ভেসে উঠে৷ ববি তখন খুব বেশি পেরেশান হয়ে উঠে। আতঙ্কে ববির মুখ শুকনো হয়ে উঠে, গাঁ থেকে ধরধরিয়ে ঘাম ঝড়ে। লিলির কোল থেকে মেয়েকে কেড়ে নিয়ে বুকের পাজরে মেয়েকে পুরোপুরি মিশিয়ে ভোর অব্দি সে ব্যালকনী জুড়ে, পুরো রুম জুড়ে পায়চারী করে। ববির বুকের সাথে কিছুক্ষণ একাত্ন হয়ে মিশে থাকলেই ইলমা শান্ত হয়ে উঠে, কান্না ভুলে অবিরত হেচকি তুলে। মেয়ে পুরোপুরি ভাবে শান্ত হলেই তবে মেয়েকে নিয়ে লিলি নিশ্চিন্তে চোখ বুজে।
দত্তক নেওয়ার ৪ দিনের মাথায় বিশাল মিলাদ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ইলমার নামকরণ করা হয়েছিলো। ববির পছন্দ অনুযায়ী ইলমার পুরো নাম রাখা হয়েছিলো “তাহিয়াত্ বিনতে ইলমা।” ছোট করে পরিবারের সবাই তাকে “ইলমা” বলে ডাকে।
সকালের ব্রেকফাস্ট কমপ্লিট করে ববি এবং লিলি রুমে প্রবেশ করতেই দেখল ইলমা ঘুম ভেঙ্গে উঠে ডান হাতটা মুখে পুড়ে বাম হাত এবং পা দুটো খানিক দুলিয়ে খেলছে। খানিক বাদে আবার মুখ থেকে লালা নিঃসৃত করে মিনমিনে হাসছে। লিলি এবং ববি দুজন দুজনের দিকে চেয়ে ফিক করে হেসে দিলো৷ ববি আহ্লাদে আটখানা হয়ে ইলমার পাশে বসে মশারিটা খুলে ইলমার চোখে, মুখে চুমো খেয়ে বলল,,
“আমার মা টা কি করছে হুম? কি করছে?”
ববির অনবরত চুমোর প্রভাবে ইলমা বিরক্ত হয়ে ঠোঁট ভেঙ্গে ফ্যালফ্যালিয়ে কেঁদে দিলো। লিলি তেড়ে এসে ইলমাকে কোলে নিয়ে ইলমার কান্না থামাতে আহ্লাদি স্বরে বলল,,
“নাহহহ মা, কাঁদে নাহহ। কে মেরেছে আমার মা কে হুম? কে মেরেছে?”
লিলি কটমট চোখে ববির দিকে একবার চেয়ে পুনরায় ইলমার দিকে দৃষ্টি ফিরিয়ে বলল,,
“বাবা মেরেছে তোমাকে মা? হুম বাবা মেরেছ? বাবাকে মেরে দিবো?”
ইলমা এ্যাঁ এ্যাঁ শব্দে ক্রমাগত কেঁদেই চলছে। ইলমাকে কোলে নিয়ে লিলি নিম্ন গতিতে ঝুলাচ্ছে আর আদর মাখা কন্ঠে ইলমাকে শান্ত করার চেষ্টা করছে। মা এবং মেয়ের মাঝখানে ববির নিজেকে অবহেলার পাএ মনে হচ্ছে। গোমড়া মুখে তাদের পাশ থেকে উঠে এসে ববি অফিসের জন্য রেডি হতে লাগল৷ ইলমার চিৎকারের উচ্চ আওয়াজে পাশের রুম থেকে সাহেরা খাতুন দৌঁড়ে এলেন লিলির রুমে। উত্তেজিত হয়ে উনি লিলির কোল থেকে ইলমাকে টেনে নিয়ে নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে নিলেন। লিলিকে উদ্দেশ্য করে উনি ক্ষীণ স্বরে বললেন,,
“পড়তে বসো তুমি। আমার নাতনীকে আমিই শান্ত করছি।”
লিলি ব্যতিব্যস্ত হয়ে ডেস্কের উপর থেকে ফিডারটা হাতে নিয়ে সাহেরা খাতুনের দিকে ফিডারটা এগিয়ে দিয়ে বলল,,
“কান্না থামলে দুধটা খাইয়ে দিবেন আম্মু। সকালে একটুখানি খেয়েছে, আর এখনো অব্দি মুখে কিছু দেয় নি।”
ফিডারটা হাত বাড়িয়ে নিয়ে সাহেরা খাতুন বিরামহীনভাবে কাঁদতে থাকা ইলমাকে নিয়ে রুম থেকে প্রস্থান নিলেন। লিলি নিশ্চিন্ত মনে পড়ায় মনোনিবেশ করলো। ববি অফিসের জন্য রেডি হয়ে রুম থেকে প্রস্থান নেওয়ার পূর্বে লিলির মাথায় দীর্ঘ একটা চুমো খেয়ে উৎসুক কন্ঠে বলল,,
“অল দ্যা বেস্ট লিলি। যেনো তেনো ভাবেই হোক এক্সামটা যেনো ভালো হয়।”
লিলি মৃদ্যু হেসে ববির দিকে চেয়ে বলল,,
“ইনশাআল্লাহ ববি।”
ববি দীর্ঘ একটা শ্বাস ছেড়ে ভীষণ আক্ষেপ সূচক স্বরে বলল,,
“খারাপ লাগছে খুব৷ কোনো সেন্টার এক্সামেই আমি তোমার সাথে যেতে পারি নি। একইভাবে এবার ও যেতে পারছি না। প্রতিবারই অফিসের কাজে আটকে যেতে হচ্ছে। কিছুতেই যেনো অন্তত কয়েক ঘন্টা সময় বের করে তোমার পাশে থাকা হচ্ছে না।”
লিলি বিরক্তিভরা স্বরে বলল,,
“উফফ ববি চিল। এতো ব্যস্ত হচ্ছেন কেনো? আমি জানি, আপনি আমার পাশে না থাকলে ও আপনার ছাঁয়া এবং আপনার সমস্ত বেস্ট উইশেস গুলো বরাবরই আমার পাশে আছে। প্রতি মুহূর্তে আমাকে আত্নবিশ্বাসী করে তুলছে। থেমে গেলে ও পুনরায় আমাকে নতুন উদ্দমে উজ্জীবিত করে তুলছে।”
ববি মৃদ্যু হেসে লিলির ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে দিলো। কিছুক্ষণ পর লিলির ঠোঁট জোড়া ছেড়ে ববি রুম থেকে প্রস্থান নিলো। সাহেরা খাতুনের রুমে উঁকি দিতেই ববি ঠোঁট জোড়া প্রশস্ত করে মৃদ্যু হাসল। ঘুমন্ত ইলমা সাহেরা খাতুনের কোলে বসেই সাহেরা খাতুনের চুলের মুঠি মুষ্টিবদ্ধ করে টেনে ধরে আছে। সাহেরা খাতুন মিষ্টি হেসে ঘুমন্ত ইলমার দিকে চেয়ে আছেন। একবারের জন্য ও চুল গুলো ছাড়ানোর চেষ্টা করছেন না। ববি দ্রুত পায়ে হেঁটে সাহেরা খাতুনের রুমে প্রবেশ করে ঘুমের মধ্যেই ইলমাকে ইচ্ছে মতো আদর করে সাহেরা খাতুনের থেকে বিদায় নিয়ে অফিসের উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে গেলো।
দুপুর ১২ঃ৩০ বাজতেই লিলি এক সাগর কেঁদে কেটে তার মেয়েকে ইচ্ছে মতো আদর করে, চুমো খেয়ে, খাইয়ে দাইয়ে দ্বিধাগ্রস্থ মন নিয়ে এরপর এক্সাম হলের দিকে রওনা হলো। মেয়েকে একা রেখে যেতে তার ভেতরটা পুড়ে যাচ্ছে। কিছুতেই যেনো মেয়েকে ছেড়ে সে এক্সাম হলে যেতে চাইছে না। মেয়ের টেনশানে দুপুরে কিছু না খেয়েই সে অভুক্ত অবস্থাতেই বাড়ি থেকে বের হতে বাধ্য হলো। উপরের দেহ নিয়ে লিলি বাড়ি থেকে বের হলে ও তার মনটা ইলমাতেই পড়ে আছে। তার মেয়ের কাছেই পড়ে আছে!
লিলিকে বিদায় জানিয়ে সাহেরা খাতুন, জিনিয়া আহমেদ, হেমা এবং আদিল মিলে ইলমাকে যথেষ্ট আগলে রেখেছে, খুব হৈ, হুল্লোড়ে রেখেছে, এক ফোঁটা কান্নার সুযোগ ও দেয় নি ইলামকে। সারাক্ষণ কোলে কোলে রেখেছে, কিছুক্ষণ পর পর দুধ গরম করে খাইয়েছে, পুরো বাড়িময় ইলমাকে কোলে নিয়ে পায়চারী করেছে, ইলমার সাথে হেসেছে, কথা বলেছে, খেলেছে। ঐদিকে ববি তো একের পর এক বাড়িতে কল করেই যাচ্ছে, ইলমার সমস্ত খবরাখবর নিচ্ছে, ফোনে কান পেতে ইলমার নিশ্বাসের শব্দ শুনছে, ইলমার নড়াচড়ার আওয়াজ শুনছে, আকস্মিক ফিক করে হেসে দেওয়ার আওয়াজটা ববি কান পেতে শুনছে। মেয়েকে সে চোখে চোখে হারাচ্ছে। কিছুতেই যেনো মেয়েকে বাড়িতে রেখে কাজে মন লাগাতে পারছে না।
,
,
ভালো গ্রেট পয়েন্ট নিয়ে লিলি অনার্স কমপ্লিটের পর, এক বছরের কোর্স ভিত্তিক এম.এ পরীক্ষায় সাফল্যের সাথে উর্ত্তীণ হয়ে তখন জব প্রিপারেশন নিচ্ছিলো তুমুলে। ইলমা এইতো সবেমাএ ২ বছরে পা রেখেছে। পুরো বাড়িতে আলু থালু চরণ ফেলে সে আধো স্বরে ডাকতে শিখেছে তার “মা, বাবাকে।” বাড়ির সবাইকে দাঁপিয়ে রাখে সে, সবাই মাথা নিচু করে কুর্ণিশ হয়ে থাকে পাকা বুড়ি ইলমার সামনে। খায়রুল আহমেদকে ও নাজেহাল করে রাখে এই দুষ্টু, মিষ্টি ইলমা। “দা দা” বলে খায়রুল আহমেদের জামা ধরে খুব জোরে টেনে ধরে। আবেগে আপ্লুত হয়ে তখন খায়রুল আহমেদ ইলমাকে কোলে তুলে নিতে বাধ্য হোন, আদর করতে বাধ্য হোন, কোলে নিয়ে দোকানে যেতে পর্যন্ত বাধ্য হোন। চকলেট, চিপস, ক্যাটবেরি হাবিজাবি যতো খাবার আছে, সব ইলমাকে কিনে দিয়ে এরপর উনি বাড়ি ফিরেন। মাঝখান থেকে মেয়ের সমস্ত হাবিজাবি খাবার লিলি একা খেয়ে সাভার করে। বদলে মেয়েকে মুখ টিপে জোর করে খিঁচুড়ি খেতে বাধ্য করে।
ইলমার পায়ের চেয়ে হাত চলে উর্ধ্বগতিতে। হাতের কাছে কিছু একটা পেলেই হলো ব্যাস! সামনে যাকে পাবে তাকেই সজোরে আঘাত করবে। কারো নিস্তার নেই এই আঘাত থেকে। এই তো সেদিন, হাতের কাছে শলা মোঠা পেতেই ইলমা সাহেরা খাতুনের চোখে, মুখে খুব জোরে আঘাত বসিয়ে দিলো। আর সামান্য একটুর জন্য ধারালো শলাটা সাহেরা খাতুনের চোখের মণিতে প্রবেশ করে মারাত্নক কোনো আঘাত হানতে পারে নি। লিলি অবশ্য ঐদিন খুব বকেছিলো ইলমাকে, দু একটা চড় ও মেরেছিলো। ইলমাকে কোলে নিয়ে সাহেরা খাতুন ইচ্ছে মতো ধমকেছিলেন লিলিকে। ক্ষিপ্ত হয়ে উনি ববির কাছে পর্যন্ত নালিশ জানিয়েছিলেন। ঘটনা শুনে তো ববি ভীষণ রাগান্বতি হয়ে ঐ রাতে লিলির সাথে খুব অশান্তি করেছিলো। আর ঐদিকে তো ইলমা রানী ভীষষষণ রাগ করেছিলো মায়ের উপর। ঐ রাতে লিলির ধারে কাছে একদমই ঘেঁষে নি সে। সারা রাত ববির বুকে মাথা রেখে এ্যাঁ এ্যাঁ করে কেঁদে এরপর ঘুমিয়েছিলো। লিলি তো মেয়ের ব্যবহারে খুব কষ্ট পেয়ে সারা রাত কেঁদে বুক ভাসিয়েছিলো। মেয়েটাকে জোর করে ও সে তার মুখাপেক্ষী করতে পারে নি।
ইলমা না? খুব বাবা পাগলী। দিনের বেশির ভাগ সময়ই সে হাতের কাছে ফোন পেলে ফোন কানে রেখে “বা বা” করে ডাকে, চিৎকার করে, হাসে, আবার কখনো কাঁদেও। শুধু তাই নয়, মিনমিন কি যেনো আবোল তাবোল বকে। বাড়ি ভর্তি সবাই ইলমার কান্ড দেখে হু হা করে হেসে দেয়। ববি রাতে অফিস থেকে ফিরতেই ইলমা লিলিকে ছেড়ে ববির কোলে ঝাঁপিয়ে পড়ে, ববির বুকের সাথে চুপটি করে মিশে থাকে, ববির চোখে, মুখে অজস্র চুমো ও খেয়ে দেয়। ববির তো পুরো রুহ্ মেয়েটার উপর। বাড়িতে ফেরার পর পুরোটা সময় ববি একবারের জন্যে ও তার মেয়েকে হাত ছাড়া করে না, মেয়ের সাথে হাসে, খেলে, কথা বলে এবং দুষ্টুমিতে মজে থাকে।
বাড়ির সবার আদর যত্নে, দেখ-ভালে, প্রতি বেলায় পুষ্টি জাতীয় খাবার পেয়ে ইলমার নেতানো শরীরটা এখন পরিপুষ্ট হয়ে উঠেছে। দিন দিন বলিষ্ঠ হয়ে উঠছে সে, গাল, মুখ পুরো হয়ে উঠছে। শ্যাম বর্ণ রূপটা ও এখন ধবধবে ফর্সা হয়ে উঠছে। বাইরের কেউ ইলমাকে দেখলে আলাদাই করতে পারবে না যে, ইলমা লিলি এবং ববির নিজের মেয়ে নয়। বরং সবাই দেখলে এটাই বলবে যে ইলমাই হলো ববি এবং লিলির নিজের মেয়ে!
,
,
ঘড়িতে রাত ১০ টা বাজতেই লিলি পড়ার টেবিল গুছিয়ে সাহেরা খাতুনের রুম থেকে জোর করে ইলমাকে নিয়ে এলো। খিঁচুড়ি খাওয়ার সময় হয়ে গিয়েছে তার। গরম খিঁচুড়ি ঠান্ডা হতেই লিলি ইলমাকে পায়ের উপর দুলিয়ে খিচুঁড়ির প্রথম চামচটা ইলমার মুখের কাছে ধরতেই ইলমা নাক ছিটকে মুখটা বাম পাশে ফিরিয়ে নিলো। লিলি খড়তড় কন্ঠে বলে উঠল,,
“ইলমামামা, মুখটা এদিকে ফেরাও বলছি।”
ধমকের উচ্চ শব্দ শুনে ইলমা ঠোঁট ভেঙ্গে কেঁদে লিলির দিকে তাকালো। লিলি চোখ রাঙ্গিয়ে ইলমার মুখে খিঁচুড়ি ভর্তি চামচটা পুড়তেই ইলমা তাৎক্ষণিক মুখ থেকে সবটা খিঁচুড়ি উগলে দিলো। লিলি রাগান্বিত হয়ে মুখ চেঁপে ইলমাকে সমস্ত খিঁচুড়িটা শেষ করালো। ইলমা কাঁদতে কাঁদতে পুরো টমেটোর মতোন লাল হয়ে গেছে। তার চিৎকারের শব্দে বাড়ির সবাই টের পেয়ে গেছে পাকনীটাকে জোর করে খাওয়ানো হচ্ছে। প্রতিবার খাওয়ানোর সময়টাতেই ইলমা এভাবে উচ্চ শব্দে চিৎকার করে উঠে। পুরো বাড়িটা একদম মাথায় তুলে রাখে। কোনো বারই তাকে শান্ত এবং সভ্য ভাবে খাবার খাওয়ানো যায় না!
খাবার শেষে ইলমার মুখ মুছাতে লিলি ব্যতিব্যস্ত হয়ে ওয়াশরুমে প্রবেশ করতেই আচমকা কেনো যেনো লিলির মাথাটা ঘুড়ে এলো। বেসিনে বাম হাতটা ঠেকিয়ে লিলি ডান দিয়ে ইলমাকে শক্ত করে ধরল। ইলমা সশব্দে অনবরত কেঁদেই চলছে। আধো আধো বুলিতে সে বাবা এবং দাদুকে ডাকছে। ইলমার কান্নার আওয়াজে যেনো লিলির মাথাটায় দ্বিগুন ভাবে যন্ত্রণার উদ্ভব হলো। ঢুলুঢুলু শরীরে লিলি নাক, মুখ কুঁচকে ইলমার দিকে চেয়ে বলল,,
“কান্না থামাও মা। একটু শান্ত হও।”
লিলির শরীরের দুর্বলতা দেখে ভয় থেকে ইলমা আরো জোরে কাঁদতে আরম্ভ করল। সাহেরা খাতুন টিকতে না পেরে দৌঁড়ে এলেন লিলির রুমে। রাগে গজগজ করে উনি ওয়াশরুমের দিকটায় যেতেই কপাল কুঁচকে লিলির পেছনটায় দাঁড়িয়ে কৌতুহলী স্বরে বললেন,,
“কি হয়েছে লিলি? তুমি এভাবে বেসিনে হাত রেখে দাঁড়িয়ে আছো কেনো?”
লিলি মিনমিনে চোখে সাহেরা খাতুনের দিকে চেয়ে বলল,,
“আমার মাথাটা খুব ঘুড়ছে আম্মু। কেমন বমি বমি ও পাচ্ছে। কষ্ট করে একটু ইলমাকে কোলে নিন না। মেয়েটা ভয় পাচ্ছে।”
সাহেরা খাতুন হম্বিতম্বি হয়ে ইলমাকে কোলে নিয়ে লিলির পাশে দাঁড়িয়ে চিন্তিত স্বরে বললেন,,
“শরীর কি বেশি খারাপ লাগছে লিলি?”
বেসিনে মুখ ডুবিয়ে লিলি গড়গড়িয়ে বমি করতে আরম্ভ করল। সাহেরা খাতুন লিলির পিঠ ঘঁষে জিগ্যাসু স্বরে লিলিকে বললেন,,
“আচ্ছা, এই মাসে কি তোমার পিরিয়ড বন্ধ ছিলো লিলি?”
লিলি কম্পিত স্বরে বলল,,
“হ্যাহ্যাহ্যাঁ মা!”
সাহেরা খাতুন ঠোঁটের কোণে এক চিলতে হাসি ফুটিয়ে লিলির মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,,
“হয়তো ভালো কোনো খবর আসছে লিলি৷ আমার মনে হচ্ছে, এবার প্রেগনেন্সি টেস্ট করাটা ভীষণ জরুরি। ববি বাড়ি ফিরলেই বিষয়টা শেয়ার করো কেমন?”
#চলবে….?