প্রেম_ফাল্গুন #পর্ব_২৫,২৬

#প্রেম_ফাল্গুন
#পর্ব_২৫,২৬
#নিশাত_জাহান_নিশি

“মামু আয়রাকে পাঠিয়েছেন। এক্ষনি হয়তো রওনা দিতে হবে। তোমাকে এই বাড়িতে রেখে যেতে আমার মন সায় দিচ্ছে না লিলি।”

লিলি ম্লান হেসে ববির হস্ত যুগল আঁকড়ে ধরে ছোট স্বরে বলল,,

“ডোন্ট ওরি ববি। এতো ভয় পাচ্ছেন কেনো? বাড়ি ভর্তি এতো মানুষ আছেন। আম্মু আছেন, মামানী আছেন। আমি ঠিক সেইফে থাকব।”

ববি উতলা হয়ে লিলিকে শক্ত করে ঝাপটে ধরে ম্লান স্বরে বলল,,

“তোমাকে ছাড়া আমি একটা মুহূর্ত ও থাকতে পারব না লিলি। ভীষণ কষ্ট হবে আমার, ভীষষষষণ।”

লিলি গলা জড়ানো স্বরে বলল,,

“আমি ও খুব মিস পড়ব ববি। খুব মনে পড়বে আপনাকে।”

তন্মধ্যেই তাদের মাঝখানে অপ্রত্যাশিতভাবে পুনরায় আয়রার আবির্ভাব ঘটল। গলা খাঁকারি দিয়ে আয়রা চোয়াল শক্ত করে বলল,,

“আচ্ছা? তোমাদের মাঝে কি মিনিমাম কমনসেন্স টুকু নেই? যেখানে, সেখানে চিপকে থাকছ, বেশিরভাগ সময়টাতেই অন্তরঙ্গ অবস্থায় দেখা যাচ্ছে! হাউ স্ট্রেন্জ্ঞ! এতোটা বেহায়া কেনো তোমরা?”

লিলিকে ছেড়ে ববি রাগে গজগজ করে আয়রার সম্মুখে দাঁড়িয়ে বলল,,

“আমি যদি উল্টোটা বলি? এখন যদি আমি বলি কমনসেন্স আমাদের না, তোমার নেই। তখন তুমি কি বলবে আয়রা?”

“আমার নেই মানে? আমি আবার কি করলাম?”

“দেখছ এখানে নিউলি এক জোড়া কাপল আছে, নিজের মধ্যে কিছুটা প্রাইভেট টাইম স্পেন্ড করছে, পার্সোনাল কথা বার্তা বলছে। এরপরে ও তুমি কিভাবে পারো এতোটা নির্লজ্জ হয়ে আমাদের মাঝখানে এসে এভাবে দাঁড়াতে? আমাদের অন্তরঙ্গতা দেখতে? আমাদের দিকে আঙ্গুল তুলতে?”

আয়রা খড়তড় স্বরে বলল,,

“আমি বলতে এসেছিলাম, একটু আগে আমি যা বলেছিলাম সম্পূর্ণটাই মজার ছলে বলেছিলাম ববি। তোমার কোথাও যেতে হবে না, তোমার বউকে ছেড়ে কোথাও যেতে হবে না তোমার। শুনেছ তুমি? আর এ ও শুনে রাখো, লিলিরা ও এই বাড়িতে থাকছে না। ডিনারের পরেই সবাই বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হচ্ছ। বাড়ি ফিরে বউকে আরো কাছে পাবে, আরো ঘনিষ্ট হতে পারবে, আরো অন্তরঙ্গ হতে পারবে।”

আয়রা ভীষণভাবে রেগে দ্রুত পায়ে ছাদ থেকে প্রস্থান নিলো। ববি বেকুব হয়ে আয়রার যাওয়ার পথে তাকিয়ে আছে। লিলি পেছন থেকে উচ্চ স্বরে হেসে বলল,,

“আয়রা আপু সত্যিই খুব মজার মানুষ ববি। আপনাকে ও কেমন গম্ভাট বানিয়ে ছাড়ল।”

ববি অল্প সময় মৌণ থেকে দ্রুত পা ফেলে ছাঁদের দরজার দিকে পা বাড়ালো আর পেছন থেকে লিলিকে উদ্দেশ্য করে বলল,,

“নিচে এসো। কুইকলি।”

ববি প্রস্থান নিলো। লিলি চিলিকোঠা থেকে বের হয়ে ছাঁদের রেলিংয়ের দিকে তাকালো। মেহের তেজী দৃষ্টি নিক্ষেপ করে আফনানের দিকে তাকিয়ে ঠাঁয় দাঁড়িয়ে আছে। আফনান ভয়ার্ত দৃষ্টিতে মেহেরের মুখপানে চেয়ে আছে। লিলি বেশ বুঝতে পেরেছে দুজনের মধ্যে পুনরায় ঝগড়া বেঁধেছে। তাদের ঝগড়া ঝাটিতে কোনো রকম বিঘ্ন না ঘটিয়ে লিলি মুখ চেঁপে হেসে ছাঁদ থেকে প্রস্থান নিলো।

ববি এবং লিলিকে ড্রইংরুমে দেখা মাএই হেমা মিষ্টির প্লেইট হাতে নিয়ে দুজনের সামনে দাঁড়ালো। কাটা চামচ দিয়ে ববিকে প্রথম মিষ্টিটা খাইয়ে হেমা দ্বিতীয় মিষ্টিটা লিলির মুখের কাছে ধরে ও হঠাৎ ভাব ভঙ্গি পাল্টে মিষ্টির প্লেইটটা লিলির হাতে ধরিয়ে মুখটা কালো করে বলল,,

“নিজেই খেয়ে নাও। তোমাকে অন্তত আমি নিজ হাতে খাইয়ে দিতে পারব না!”

লিলি ম্লান হেসে মিষ্টির প্লেইট টা নিয়ে মাথা নিচু করে ঠায় দাঁড়িয়ে আছে। লিলির সম্মুখে দাঁড়িয়ে ববি লিলির হাত থেকে মিষ্টির প্লেইটটা কেড়ে নিয়ে লিলির মুখের কাছে মিষ্টিটা ধরে বলল,,

“হা করো।”

হেমার শ্বশুড় বাড়ির সবাই ক্ষিপ্র চোখে ববির দিকে তাকিয়ে আছে। খায়রুল আহমেদ ফোনে স্ক্রলিং করছেন। জিনিয়া আহমেদ মুচকি হাসছেন। সাহেরা খাতুন আড়চোখে ববির দিকে তাকাচ্ছেন। আয়রা তো পারছে না লিলিকে ধাক্কা মেরে লিলির জায়গাটা দখল করে দাঁড়াতে। লিলি টলমল চোখে মুখটা হা করে ববির দিকে তাকালো। ববি আদো হেসে লিলির মুখে মিষ্টি টা পুড়ে দিলো৷

,

সন্ধ্যা ৭টা। ববি এবং আফনান বাড়ির পাশের টং দোকানটায় গেছে ভাড়ে চা খেতে প্লাস সিগারেট কিনতে। দুজনেরই সিগারেট খতম হয়ে এসেছে। ৪/৫ ঘন্টার বেশি তারা ধূমপান না করে একদম থাকতেই পারে না। বিশেষ করে আফনান। সিগারেটের প্রতি ভীষণ এডিকটেড সে। ডেইলি এক প্যাকেট সিগারেট তো তার লাগবেই।

অন্যদিকে, লিলি ওয়াশরুমের দিকটায় যেতে হঠাৎ হেমার রুমের সামনে এসে থমকে গেলো। অনিচ্ছা থাকা সত্ত্বে ও সে কৌতুহলের বসে হেমার রুমের দরজায় আড়ি পাতল। হেমা বজ্রকন্ঠে সাহেরা খাতুনের সাথে খুব চোটপাট করছে আর বলছে,,

“ইট’স নট পসিবল আম্মু। আমি কিছুতেই তোমার এতো ভারী এবং এক্সপেন্সিভ গহনা গুলো ঐ মেয়েটাকে পড়তে দিবো না। কিছুতেই না। বাড়িতে ফিরেই তুমি মেয়েটার কানে, গলা থেকে গহনা গুলো খুলে নিবে। সিন্দুকে যত্ন করে গহনা গুলো রেখে দিবে শুধুমাএ আমার জন্য। তোমার একমাএ মেয়ের জন্য। তোমার সবকিছুর উপর একান্ত আমার অধিকার আম্মু। একান্তই আমার। আর কারো না।”

সাহেরা খাতুন কিছু সময় মৌণ থেকে অকস্মাৎ তেজী স্বরে বললেন,,

“তোমার হিংস্র আচরণ দেখে আমি অবাক না হয়ে পারছি না হেমা। দিন দিন এতো স্বার্থপর হয়ে উঠছ কেনো তুমি? তোমার বুঝা উচিত, তোমার ভাই আপাতত বেকার। পড়নের একটা শাড়ি পর্যন্ত মেয়েটাকে কিনে দিতে পারছে না। সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে আমি যদি আমার শাড়ি, গহনা, আমার সাজ সরন্জ্ঞাম মেয়েটাকে দেই, তবে এতে দোষের কি আছে? তাছাড়া আমার সব জিনিসের প্রতি তোমার যেমন অধিকার আছে, পাশাপাশি ঐ মেয়েটার ও অধিকার আছে। ধরতে গেলে, তোমার চেয়ে বেশি এখন ঐ মেয়েটার অধিকার৷ মায়ের সব জিনিসেই ছেলের বউদের অধিকারটা একটু বেশিই থাকে। তাছাড়া তোমার জন্য এক ভরি ওজনের একটা গহনা আমি আগে থেকেই সিন্দুকে আলাদা করে রেখেছি। আর অন্য গহনাটা মেয়েটাকে দিয়েছি৷ দুজনেই এখন ইকুয়েল ইকুয়েল। তাহলে এতো হিংসে কি আছে?”

“তোমার ছেলেকে কে বলেছিলো? চাকরী না জুটিয়েই বউ জুটিয়ে নিতে? এখন কি সেই বউয়ের ভরণ, পোষন, পড়ালেখার খরচ, সাজ সরঞ্জামের খরচ সব তোমাদের চালাতে হবে? আমার মামুর চালাতে হবে?”

“তোমার ননদকে বিয়ে করলে ও ঐ একই অবস্থা হতো হেমা। তোমার মামুকেই সমস্ত খরচ চালাতে হতো। ভুলে যাও কেনো বলো তো? আয়রার সাথে বিয়ের পরে ও ববি বেকার থাকত।”

“তোমার ধারণা ভুল আম্মু। কোনো চান্স ই ছিলো না। কারণ, আতিক আগে থেকেই ডিসাইড করে রেখছিলো যে, বিয়ের পর পরই ববিকে বাইরে পাঠানোর ব্যবস্থা করবে। সেই অনুযায়ী টাকার বন্দোবস্ত ও করে রেখেছিলো!”

“তুই ভাবলি কি করে হেমা? আমার একমাএ ছেলেকে আমি তোদের পরামর্শ মতোন বাইরে পাঠিয়ে দিবো? বেকারত্ব ঘুঁচানোর জন্য বাইরে পাঠিয়ে দিবো? ববি আমার প্রাণ হেমা। এক দন্ড না দেখলে আমি শান্তি পাই না। আর তোরা কিনা হুট করে ভেবে নিলি টাকার লোভে আমি আমার ছেলেকে বাইরে পাঠিয়ে দিবো?”

হেমা মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে পড়ল। লিলি দরজার আড়াল থেকে সরে মৃদ্যু হেসে ওয়াশরুমের দিকে পা বাড়াচ্ছে আর বলছে,,

“কতোটা ভালোবাসেন আম্মু ববিকে। এক দন্ড চোখের আড়াল করতে চান না। আম্মুর কথাবার্তায় এটাই বোধগম্য হলো যে, আম্মু আস্তে ধীরে আমাকে মন থেকে মেনে নিচ্ছেন, আমার কথা সামান্য হলে ও ভাবছেন, আমার সবদিকে নজর রাখছেন। তার প্রেক্ষিতেই তো আম্মু আমার হয়ে আপুর সাথে তর্ক করলেন। ঠিক, ভুলটা আপুকে সুষ্ঠু সাবলীল ভাষায় বুঝিয়ে দিলেন!”

লিলি ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে ড্রইং রুমের দিকটায় পা বাড়াতেই আয়রা চায়ের মগ হাতে
নিয়ে লিলির মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বাঁকা হেসে বলল,,

“গ্রিন টি। আমি বানিয়েছি, নিজ হাতে। সবাই খেয়েছে। এবার তোমাকে ও টেস্ট করতে হবে।”

লিলি জোরপূর্বক হেসে বলল,,

“কিন্তু আপু। আমি তো গ্রিন টি খাই না।”

আয়রা আহ্লাদি স্বরে বলল,,

“খাও না প্লিজ। খুব শখ করে বানিয়েছি। তুমি না খেলে আমার খুব মন খারাপ করবে লিলি। সত্যি বলছি, খুব মন খারাপ করবে।”

লিলি অপারগ হয়ে চায়ের মগটা হাতে নিয়ে মগটায় চুমুক দিতেই নাক, মুখ কুঁচকে বলল,,

“এতো তেঁতো কেনো?”

“গ্রিন টি তো এমনই হয়। কেনো? খাও নি কখনো?”

লিলি নাক, মুখ কুঁচকে বলল,,

“না।”

“তাহলে আজ খেয়ে নাও। পুরোটা শেষ করবে কেমন?”

লিলি খড়তড়ভাবে নাক, মুখ কুঁচকে পুরোটা গ্রিন টি ভ্যানিশ করে বমির ভাব নিয়ে দৌঁড়ে ওয়াশরুমে ঢুকে পড়ল৷ বেসিনে মুখ ঠেঁকিয়ে সে গড়গড় করে বমি করছে। আয়রা কিছুক্ষণ পাশবিক হেসে তাড়াহুড়ো করে লিলির পেছনটায় দাঁড়িয়ে মুখটা ভাঁড় করে বলল,,

“দেখলে? কুকুরের পেটে ঘি হজম হয় না? এখন তো বলবে, আমি গ্রীণ টি ভালো বানাই নি! ইচ্ছে করে তেঁতো করেছি। দোষ তো আমারই পড়বে তাই না?”

লিলি কোনো প্রতিত্তুর না করে ওয়াক ওয়াক করে সশব্দে বমি করছে। ববি দোকান থেকে বাড়ি ফিরে মাএ ওয়াশরুমের দিকটায় আসছিলো। ববিকে দূর থেকে দেখা মাএই আয়রা খুব সহানুভূতি নিয়ে লিলির পিঠের অংশটা দুহাত দিয়ে ঘঁষছে আর দুঃখি স্বরে বলছে,,

“ইস কি যে করো না লিলি, সামান্য গ্রীণটা ও হজম করতে পারলে না? এভাবে বমি করতে হলো?”

ওয়াশরুমের দরজার সামনে আসতেই ববি আয়রাকে দেখে কৌতুহল নিয়ে ওয়াশরুমের ভেতরে উঁকি দিতেই লিলিকে বমিরত অবস্থায় দেখতে পেলো। আয়রাকে সজোরে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে ববি লিলির পেছনটায় দাঁড়িয়ে ব্যতিব্যস্ত স্বরে বলল,,

“এই লিলি, কি হয়েছে তোমার? বমি করছ কেনো?”

ট্যাব ছেড়ে লিলি মুখ ভর্তি পানি নিয়ে বড় বড় শ্বাস ছেড়ে অনর্গল চোখে, মুখে পানি ছিটিয়ে ববিকে উদ্দেশ্য করে আধো স্বরে বলল,,

“গ্রীন টি খেয়েছিলাম ববি৷ খুব তেঁতো ছিলো। চিরতার রসের মতো লাগছিলো। গাঁ গোলাচ্ছিলো। বমি না করে থাকতে পারছিলাম না আসলে।”

ববি হেচকা টানে লিলিকে তার মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে লিলির ভেজা, রক্তিম মুখটাতে হাত বুলিয়ে উদ্বিগ্ন স্বরে বলল,,

“কেমন লাগছে এখন? বমির ভাব আর আছে?”

মিইয়ে আসা চোখে লিলি আধো স্বরে বলল,,

“কিছুটা বেটার।”

ববি প্রশ্নসিদ্ধ চোখে বলল,,

“গ্রীন টি কে করেছিলো?”

আয়রা সুযোগ বুঝে অনেকক্ষণ আগেই নিজের গাঁ বাঁচিয়ে কেটে পড়েছে। লিলি অস্থির দৃষ্টিতে ববির পেছনটায় তাকিয়ে উদগ্রীব স্বরে বলল,,

“আয়রা আপু কোথায়? আয়রা আপু দিয়েছিলেন!”

ববি চোয়াল শক্ত করে লিলির থুতনী চেঁপে ধরে বলল,,

“রুহ বের হয়ে যাচ্ছিলো না? গ্রীণ টি খাওয়ার জন্য? কি দরকার ছিলো ঐ মেয়ের হাতের গ্রীণ টি খাওয়ার? তুমি বুঝতে পারো না না? ঐ মেয়েটা তোমার ক্ষতি চায় আমার ক্ষতি চায়? এরপরে ও কেনো ঐ মেয়ের হাতের গ্রীণ টি খেলে? আনসার মি ডেম ইট? কেনো খেলে?”

লিলি চোখ, মুখ কুঁচকে অস্পষ্ট স্বরে বলল,,

“প্রথম অবস্থায় তো আমি খেতে চাই নি ববি। প্লিজ বিলিভ মি। উনি ইমোশনালী ব্ল্যাকমেইল করছিলেন আমায়, তাই বাধ্য হয়ে খেয়েছিলাম। আই প্রমিস ইউ ববি, নেক্সট টাইম আর এই ভুল রিপিট হবে না।”

লিলির থুতনীটা ছেড়ে ববি তীক্ষ্ণ স্বরে বলল,,

“মাইন্ড ইট ওকে?”

লিলি হ্যাঁ সূচক মাথা নাঁড়ালো। ভাবশূণ্য হয়ে ববি চোখ জোড়া বুজে লিলির কপালে দীর্ঘ একটা চুমো খেয়ে বলল,,

“তোমাকে আরো কেয়ারফুল হতে হবে লিলি। কজ, আয়রা খুব আক্রমনাত্নক হয়ে আছে। কখন কি ক্ষতি করে বসে ভাবতে ও পারবে না। সো বি কেয়ারফুল ওকে?”

,
,

রাত ১০ টা।
রাতের ডিনার সেরে ববি তার পরিবার নিয়ে এইমাএ বাড়ি ফিরল। বিদায়ের সময় আয়রা কারো সম্মুখে আসে নি। রুমে বসে রাগে, জেদে, দুঃখে ভীষণ কাঁদছিলো। লিলিকে সে ববির পাশে একদম সহ্য করতে পারছে না। সর্বক্ষণ লিলির ক্ষতি করার প্রয়াসে অটল ছিলো। গ্রীণ টি তে এক্সট্রা চাপাতা মিশিয়ে লিলির অবস্থা করুন করেছিলো। সুযোগ পেলে হয়তো আরো বড় কোনো ক্ষতি করার চেষ্টা করত। চূড়ান্ত একটা ক্ষতি করেই সে ক্ষান্ত হতো!

আফনান গম্ভীর মুখে ববিকে বিদায় দিয়েছিলো। ববির সাথে আফনানের সখ্যতা খুব গাঢ়। হেমার বিয়ের বহু বছর আগে থেকেই আফনানেন সাথে ববির পরিচয়। দুজন একই স্কুল, একই কলেজে পড়েছিলো। ভার্সিটিতে উঠে দুজনের পথ আলাদা হয়ে গিয়েছিলো। সেই সুবাদে আফনানের সমস্ত মনের খবর ববি জানে এমনকি ববির টুকটাক কিছু মনের খবর ও আফনান জানে। মোদ্দা কথা, দুজনই দুজনকে খুব ভালোভাবে জানে, বুঝে!

বাড়িতে ফিরেই লিলি শাড়ি পাল্টে, সমস্ত গহনা গাঁ থেকে খুলে সাহেরা খাতুনের রুমে ধীর পায়ে প্রবেশ করল। সাহেরা খাতুন মাএ ফ্রেশ হয়ে বিছানায় গাঁ এলিয়েছেন। লিলিকে দেখা মাএই উনি চোখ ভর্তি বিস্ময় নিয়ে শোয়া থেকে উঠে বসলেন। লিলির হাতে গহনার বক্স এবং শাড়িটা দেখে উনি কপাল কুঁচকে বললেন,,

“এসব কি? নিয়ে এলো কেনো এসব?”

লিলি ম্লান হেসে সাহেরা খাতুনের মুখোমুখি বসে গহনার বক্স এবং শাড়িটা সাহেরা খাতুনের দিকে এগিয়ে ছোট স্বরে বলল,,

“গহনা টা যত্ন করে সিন্দুকে তুলে রাখুন আম্মু। এসব তো আপুর। তাই নিয়ে এলাম, আপনার কাছে গচ্ছিত রাখতে।”

সাহেরা খাতুন ভীষণ রাগান্বিত হয়ে বললেন,,

“বেশি বুঝতে হবে না তোমার। ছোট ছোটর মতো থাকো। এতো পাকনামো করতে কে বলেছে তোমায়?”

লিলি মাথা নিচু করে বসে আছে। সাহেরা খাতুন গুরু গম্ভীর স্বরে বললেন,,

“গহনা গুলো নিয়ে রুমে যাও৷ শাড়িটা ব্যালকনীর গ্রীলে নেড়ে দিও। একটু শুকোলেই ভাঁজ করে কাবার্ডে গুছিয়ে রাখবে। যাও, এখন আসতে পারো।”

লিলি মাথা তুলে প্রশ্নবিদ্ধ চোখে বলল,,

“মেডিসিন নিয়েছেন আম্মু?”

সাহেরা খাতুন আমতা আমতা করে বললেন,,

“না না না। পপরে খাবো।”

“আচ্ছা আম্মু, আপনাকে কি এখনো বাচ্চাদের মতো ট্রিট করতে হবে? মেডিসিন ও জোর করে খাওয়াতে হবে?”

সাহেরা খাতুন নতজানু হয়ে বসে আছেন। লিলি তেজ দেখিয়ে বসা থেকে উঠে মেডিসিন বক্স থেকে প্রেশারের ওষুধটা হাতে নিয়ে জোর করে সাহেরা খাতুনকে খাইয়ে গহনা এবং শাড়িটা হাতে নিয়ে রুম থেকে প্রস্থান নিলো। সাহেরা খাতুন ম্লান হেসে লিলির যাওয়ার পথে তাকিয়ে বললেন,,

“বয়সে ছোট হলে কি হবে? মেয়েটা কিন্তু যথেষ্ট বুদ্ধিমতি!”

সাহেরা খাতুন রুমের লাইট অফ করে কাঁথা টেনে শুয়ে পড়লেন। লিলি রুমে প্রবেশ করে দরজায় খিল আটকে সাহেরা খাতুনের কথা মতো শাড়িটা ব্যালকনীর গ্রীলে ছড়িয়ে গহনা গুলো আলমারিতে তুলে রাখল। ববি উদোম শরীরে বিছানায় উবুড় হয়ে শুয়ে আছে। ফোনে খুব মনযোগ দিয়ে কিছু একটা স্ক্রলিং করছে সে। ফ্রেশ হয়ে লিলি রুমের লাইট অফ করে ববির পাশ ঘেঁষে লম্বা হয়ে শুয়ে পড়ল। ববি ফোনের স্ক্রীণ থেকে চোখ সরিয়ে লিলির দিকে শান্ত দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলল,,

“বলেছিলাম না? আগ বাড়িয়ে গহনা গুলো আম্মুকে না দিতে? এখন কি হলো? ফলাফল তো আগের জায়গাতেই এসে ঠেকল। ব্যাক করতে হলো তো গহনা গুলো নিয়ে?”

লিলি পাশ ফিরে নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে ববির দিকে তাকিয়ে বলল,,

“আমার করণীয় আমি করেছি। আম্মু ফিরিয়ে দিয়েছেন এটা আম্মুর ব্যাপার। ঐ রকম ভাবে বলতে গেলে আম্মু এবং আমি দুজনই দুজনের করণীয় কাজটা করেছি।”

ববি ফোনটা বালিশের তলায় রেখে লিলির পাশ ফিরে শুয়ে বাম হাত দিয়ে লিলির মাথায় হাত বুলিয়ে আধো স্বরে বলল,,

“কিছু কিছু ব্যাপার এমন হয় লিলি, যা তুমি আমার চেয়ে ও ভালো বুঝো। একটা মেয়ে যখন নতুন বিয়ে হয়ে তার স্বামীর সংসারে আবদ্ধ হয়, তখন হয়তো অলৌকিকভাবেই একটা শক্তি মেয়েদের মনে আবির্ভাব হয়। হোক মেয়েটা ম্যাচুয়ের্ড বা ইমম্যাচুয়ের্ড। অদৃশ্য ক্ষমতাটা কিন্তু তার মধ্যে থাকবেই। হয়তো ক্ষমতাটা আল্লাহ্ প্রদত্ত।”

লিলি মৃদ্যু হেসে ববিকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরে চিন্তাগ্রস্থ স্বরে বলল,,

“চার দিন বাদেই রেজাল্ট ববি৷ ভীষষষণ টেনশান হচ্ছে৷ না জানি কি হয়!”

ববি ম্লান হেসে লিলির মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,,

“আল্লাহ্ ভরসা। ভালো কিছুই হবে। অযথা টেনশান করো না তো। তোমার প্রতি ওভার কনফিডেন্স আছে আমার।”

লিলি দীর্ঘ শ্বাস ছাড়ল। অকস্মাৎ বাঁকা হেসে ববি লিলির গাঁয়ের উপর উঠে পড়ল। লিলি কপাল কুঁচকে বলল,,

“কি হচ্ছে কি ববি? গাঁয়ের উপর উঠলেন কেনো?”

লিলির ঠোঁটের দিকে তাকিয়ে ববি দুষ্টু হেসে বলল,,

“আই কান্ট কন্ট্রোল মাই লিপস লিলি। এর বাইরে বিশেষ কিছু চাহিদা নেই কিন্তু আমার। সো ডোন্ট ওরি।”

লিলি হা করে কিছু বলার পূর্বেই ববি ফট করে লিলির ঠোঁট জোড়া দখল করে নিলো। চোখ বুজে লিলি উত্তেজনায় গাঁ ভাসালো৷ খানিক বাদে লিলি ভীষণ উত্তেজিত হয়ে ববির পেছনের চুল আঁকড়ে ধরল।

,
,

পরের দিন। সকাল ৮ টা। লিলি অনেক পূর্বেই ঘুম থেকে উঠে কিচেন রুমে নাশতা তৈরির প্রয়াসে কোঁমড় বেঁধে লেগে পড়ল। জিনিয়া আহমেদ আজ এখনো ঘুমুচ্ছেন। শরীর ঝিমঝিম করছে উনার। শোয়া থেকে যেনো কিছুতেই উঠতে পারছেন না। লিলি উনাকে রেস্ট করতে বলে এলো। কিচেনের দিকটা সে নিজ হাতে সামলে রাখার আশ্বাস দিয়ে এলো। সাহেরা খাতুন তো এই জন্মে সকাল ৯ টার আগে ঘুম ভেঙ্গে উঠতেই পারেন না। ফজরের নামায পড়ে যে উনি ঘুমুবেন, সেই ঘুম ভাঙ্গবে উনার সকাল নয়টা তো দশটায়।

পরোটা ভেঁজে লিলি আলু ভাজি এবং ডিম ভেজে বাড়ির কাজের বুয়াকে দিয়ে ডাইনিং টেবিলে সার্ভ করে দিলো। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে লিলি হন্তদন্ত হয়ে রুমের দিকে এগিয়ে এলো। ববি এখনো একইভাবে নাক টেনে ঘুমুচ্ছে। আজ থেকে যে তার সাইটের কাজ শুরু তা একদদদম ভুলে গেছে সে। লিলি রাগী ভাব নিয়ে তেঁড়ে এসে ববির পাশ ঘেঁষে বসে ঘুমন্ত ববির নাক টেনে রাগে গিজগিজ করে বলল,,

“এই ববি শুনছেন?”

নাক টেনে রাখার ফলে ববির নিশ্বাস নিতে খুব কষ্ট হচ্ছিলো। ঘুমের মধ্যে সে খুক খুক করে কেশে এক ঝটকায় লিলির হাতটা সরিয়ে ফট করে চোখ জোড়া খুলে তেজী দৃষ্টি নিক্ষেপ করে লিলির দিকে তাকালো। লিলি যেনো কিছুতেই ববির এই খড়তড় দৃষ্টি উপেক্ষা করতে পারছে না। পর পর কতগুলো শুকনো ঢোক গিলে লিলি কাঁপা স্বরে বলল,,

“সসস্যরি। বুবুবুঝতে পারি নি।”

ববি আচমকা লিলিকে হেচকা টান দিয়ে তার বুকের উপর ছিটকে ফেলে আষ্টেপৃষ্টে লিলিকে আঁকড়ে ধরে প্রশ্নবিদ্ধ চোখে বলল,,

“ঘুমের ঘোরেই মেরে ফেলতে চাও নাকি আমাকে হুম?”

লিলি নিবার্ক ভঙ্গিতে চেয়ে আছে ববির দিকে। স্তব্ধ অবস্থায় তার চোখের পলক ও নড়ছে না। হঠাৎ করেই যেনো কোথাও একটা হারিয়ে গেছে সে। বোধ হয়, গভীর বিষাদে তলিয়ে আছে সে। ববি ভ্রু যুগল কুঁচকে কৌতুহলী স্বরে বলল,,

“হলো টা কি? হঠাৎ নিশ্চুপ হয়ে গেলে কেনো?”

লিলি প্রচন্ড জেদ দেখিয়ে ববির থেকে নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টায় অটল হয়ে বলল,,

“আর কখনো টাচ করবেন না আমায়। একদদদম না। এমনকি আমার সাথে কোনো রূপ কথা বলার ও চেষ্টা করবেন না। আই টোল্ড ইউ ওকে?”

ববি বাঁকা হেসে লিলির সাথে হাতাহাতি করে বলল,,

“এনার্জি ফল করে লাভ আছে? পারবে, তুমি আমার সাথে?”

লিলি এক রোখা ভাব নিয়ে বলল,,

“অবশ্যই পারব৷ রাগ হলে আমি সব পারি, সব।”

ববি উৎসুক স্বরে বলল,,

“তার মানে আমাকে ও মেরে দিতে পারবে?”

ভয়ঙ্কর ভাবে ক্ষিপ্ত হয়ে লিলি চোয়াল শক্ত করে ববির ডান হাতটায় দাঁতের সমস্ত শক্তি দিয়ে জোরে এক বাইট বসিয়ে বলল,,

“ছাড়ুন বলছি, ছাড়ুন।”

ব্যাথায় কুঁকিয়ে উঠে ববি অনেকটাই নিরুপায় হয়ে লিলিকে ছেড়ে দিলো। লিলি ছাড়া পেয়ে রুম থেকে প্রস্থান নিচ্ছে আর রাগান্বিত স্বরে পেছন থেকে ববিকে উদ্দেশ্য করে বলছে,,

“তাড়াতাড়ি উঠুন। ৯ টায় সাইটে যেতে হবে।”

হাতের যন্ত্রণা উপেক্ষা করে ববি ভীষণ উদগ্রীব হয়ে লিলিকে পেছন থেকে ডেকে বলল,,

“একবার শুনে যাও বউ। ও বউ।”

লিলি পেছনে কর্ণপাত না করেই হম্বিতম্বি হয়ে ড্রইং রুমে চলে এলো। ববি দৃষ্টি ফিরিয়ে বাইটের দাগটায় হাত দিয়ে কাঁদো কাঁদো স্বরে বলল,,

“দাগ বসে গেছে। ৪, ৪ টা দাঁতের দাগ। ভয়ানক হিংস্র এই মেয়ে! ভীষণ ভয়ানক!”

একই মুখভঙ্গি নিয়ে ববি বিছানা ছেড়ে নেমে সোজা ওয়াশরুমে ঢুকে পড়ল। আধ ঘন্টার মধ্যে ফ্রেশ হয়ে ববি ওয়াচটা পুরো ড্রেসিং টেবিল ঘেঁটে ও পেলো না। রগচটা ভাব নিয়ে ববি আলমারি, ওয়াড্রপ, বিছানা সব ওলোট পালট করে দিলো। বারংবারই সে হতাশ হলো। ভীষন ক্ষীপ্ত হয়ে ববি রুম থেকে প্রস্থান নিয়ে কিচেন রুমের কাছটায় দাঁড়িয়ে লিলিকে উদ্দেশ্য করে চেঁচিয়ে বলল,,

“লিলি, আমার ওয়াচটা কোথায়?”

লিলি হম্বতম্বি হয়ে কিচেন রুম থেকে বের হয়ে ববির মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বলল,,

“ড্রেসিং টেবিলেই তো ছিলো।”

“ড্রেসিং টেবিল, আলমারি, ওয়াড্রপ সব খোঁজা হয়ে গেছে। কোথাও ঘড়িটা নেই ওকে?”

ববিকে ক্রস করে লিলি দ্রুত পায়ে হেঁটে রুমে প্রবেশ করল৷ ববি চ্যাল চ্যালিয়ে রুমে ঢুকে হুট করে দরজার খিলটা আটকে লিলিকে পেছন থেকে ঝাপটে ধরে লিলির ঘাড়ে মুখ ডুবিয়ে আহ্লাদি স্বরে বলল,,

“বউ, স্যরি।”

লিলি কপাল কুঁচকে ববির প্রতিবিম্বের দিকে তাকিয়ে প্রশ্নবিদ্ধ চোখে বলল,,

“তার মানে সবটাই নাটক ছিলো? ওয়াচটা আপনি ঠিকি খুঁজে পেয়েছেন?”

ববি সিরিয়াস হয়ে বলল,,

“সত্যি বলছি খুঁজে পাই নি। দেখো, রুমের সব আসবাবপএ এলোমেলো। খুব খুঁজেছি, তবে পাই নি।”

লিলি হাঁসফাঁস করে বলল,,

“তাহলে ছাড়ুন। খুঁজতে দিন ঘড়িটা।”

ঘাঁড়ে নাক দিয়ে স্লাইস করে ববি ঘোর লাগা স্বরে বলল,,

“খুঁজতে হবে না। মনে পড়েছে ঘড়িটা কোথায়!”

লিলি পরম আবেশে চোখ জোড়া বুজে কপাল কুঁচকে বলল,,

“কোথায়?”

“আফনানের রুমে। ভুলবশত ফেলে এসেছি।”

লিলি ফট করে চোখ জোড়া খুলে বলল,,

“কি যে করেন না আপনি!”

ববি আচমকা লিলির ঘাঁড়ে সজোরে একটা বাইট বসিয়ে লিলিকে ছেড়ে আড়চোখে লিলির দিকে তাকালো৷ লিলি ঘাঁড়ে হাত দিয়ে ব্যাথায় কুঁকিয়ে উঠে ববির দিকে তাকিয়ে বলল,,

“এর জন্যই আপনি আমাকে রুমে ডেকেছেন তাই না? রিভেঞ্জ নেওয়ার জন্য।”

ববি বাঁকা হেসে বলল,,

“টিথ ফর টেথ ওকে?”

লিলি রাগে গজগজ করে রুম থেকে প্রস্থান নিলো। লিলির যাওয়ার পথে তাকিয়ে ববি হু হা করে হেসে বলল,,

“রাগ ভাঙ্গাবো না এখন৷ কিছুতেই না।”

প্রফুল্ল মোড নিয়ে ববি চুলটা সেট করে ড্রইং রুমে চলে এলো। তন্মধ্যেই বাড়ির সবাই ডাইনিং টেবিলে ব্রেকফাস্ট করতে বসে পড়ল। ববি গোমড়া মুখে নাশতা সেরে কোনো কারণে রুমের দিকে পা বাড়াতেই খায়রুল আহমেদ পেছন থেকে ববিকে ডেকে উচ্চ স্বরে বললেন,,

“সময় নেই আর ববি, রুমে যাওয়ার। সাইটে যাওয়ার সময় হয়ে গেছে। ইন্জিনিয়াররা সেই কখন থেকে বসে আছেন। ননস্টট কল করেই চলছেন। সো স্যরি ববি, তোমাকে এক্ষনি যেতে হবে।”

ববি ডানে বায়ে মাথা নাঁড়িয়ে হ্যাঁ বুঝালো। ড্রইং রুম থেকে প্রস্থান নেওয়ার পূর্বে ববি ডাইনিং টেবিলে মুখ ফুলিয়ে বসে থাকা লিলির দিকে একবার দৃষ্টি নিক্ষেপ করে দ্রুত পায়ে হেঁটে বাড়ি থেকে প্রস্থান নিলো।

,
,

রাত ১০ টা। ববি ভীষণ ক্লান্ত হয়ে সাইট থেকে ফিরেছ মাএ। লিলি অগোছালো হয়ে বেডের এক পাশে উবুড় হয়ে ঘুমিয়ে আছে। প্রচন্ড ক্ষিপ্ত হয়ে ববি শার্টের বাটন গুলো এক এক করে খুলে রুমের দরজাটা আটকে লিলির পাশে বসে লিলিকে খুব জোরে ঝাঁকিয়ে বলল,,

“লিলি। এই লিলি?”

পিটপিটে চোখে লিলি ববির দিকে তাকিয়ে ঘুম জড়ানো স্বরে বলল,,

“কি হলো? এতো জোরে চেঁচাচ্ছেন কেনো?”

“বুঝলাম না। পড়াশোনা থেকে তোমার মনযোগ এতো জঘন্যভাবে উঠে গেলো কেনো? রাত জেগে না পড়ে তুমি নাক টেনে ঘুমুচ্ছ?”

লিলি আধো স্বরে বলল,,

“ম্যাথ করেছি তো। থিউরি গুলো ও পড়ে রেখেছি। আপনার সমস্ত পড়ন কমপ্লিট ববি। একটু আগেই ডিনার করে শুলাম মাএ। এর মধ্যেই আপনি চলে এলেন।”

ববি ভ্রু যুগল উঁচিয়ে বলল,,

“সিউর?”

“বিশ্বাস না হলে, নিজেই চেইক করে দেখে নিন না।”

“ফ্রেশ হয়ে এসেই পড়া ধরছি। তখন বুঝা যাবে তুমি কতোটা সত্যি বলছ।”

লিলি দীর্ঘ একটা হামি তুলে ডানে বায়ে মাথা নাঁড়িয়ে হ্যাঁ বুঝালো। হন্তদন্ত হয়ে ববি লিলির পাশ থেকে উঠে সোজা ওয়াশরুমে ঢুকে পড়ল। শোয়া থেকে উঠে লিলি কাপড়টা ঠিক করে ঘুম জড়ানো চোখে পড়ার টেবিলে বসল। কিছু সময়ের মধ্যে ববি ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে ভেজা আদলেই পড়ার টেবিলে বসল। লিলি হাত বাড়িয়ে ম্যাথ খাতাটা ববির দিকে এগিয়ে দিলো। ববি খুব সূক্ষ্ম ভাবে ম্যাথটাকে যাচাই বাছাই করে বড় একটা রাইট এঁকে দিলো ম্যাথটায়। লিলি প্রফুল্লিত হাসিতে ববির দিকে তাকালো। পর পর সবকটা থিউরি ববি মুখস্ত রূপে লিলির মুখ থেকে আদায় করল। মোস্ট ইম্পর্ট্যান্ট একটা ম্যাথ লিলিকে ভালোভাবে বুঝিয়ে ববি পড়ার পর্ব এখানেই শেষ করল।

রাত ১১ঃ৩০। ববি লিলিকে আষ্টেপিষ্টে জড়িয়ে ধরে ঘুমানোর চেষ্টা করছে। কিছুতেই যেনো তার চোখে ঘুমেরা ধরা দিচ্ছে না। অথচ অন্যদিকে লিলি গভীর ঘুমে লিপ্ত। লিলির ঘুমন্ত মুখটার দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে থাকতে ববি নিজে ও এক পর্যায়ে ঘুমের দেশে তলিয়ে গেলো। দুজনেই আপাতত গভীর ঘুমে মগ্ন।

_______________________________________

৪ দিন পর।
মে মাসের ৩১ তারিখ আজ। লিলির রেজাল্ট পাবলিশ হবে বেলা ১১ টায়। দুঃশ্চিন্তায়, উদ্বিগ্নতায়, আতঙ্ককতায় গত একদিন পূর্ব থেকেই লিলির ঘুম, নিদ্রা, খাওয়া, দাওয়া, বাড়ির সব কাজ একেবারে উচ্ছন্নে গেছে।

#চলবে….?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here