#কিছু_ভালোবাসার_রং_এমনও_হয়🌹
#Part—6 (Last Part)
#Susmita_Jana
— কি শুনলি বল?
— বিশ.. শ্বাস করুন.. আমি.. আমি কিছু শুনিনি।
— ও গুড।
— আপ.. আপনি.. এখনো জেগে আছেন!
— কেনো তোমার সমস্যা হচ্ছে?
— না না আমি তো এমনি বলছিলাম। বলছি যে আমাকে কিছু খেতে দিবেন? আমার ভীষণ ক্ষুধা লাগছে।
— খেতে দিবো আমি! আমাকে কি তোর কাজের লোক মনে হয়?
— আমি…
— কিচেন রুমে গিয়ে বানিয়ে খেয়ে নে।
উনি কথাগুলো বলে বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়লেন। আমি উনাকে কিছুক্ষণ দেখলাম তারপর আবার মাটিতেই শুয়ে পড়লাম।
🥀
🥀
🥀
🥀
ভোর পাঁচটার সময় আমার ঘুম ভাঙ্গে। উঠে বসি, শরীরটা আমার ঘামছে, বোধহয় জ্বরটা কেটে গেছে। মাথা তুলে বসতেও খুব একটা কষ্ট হচ্ছে না। আমি দ্রুত ওয়াশরুমে চলে আসি। গোসলটা করতে বেশ আরাম লাগছে। আমি আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুলটা মুছে নিলাম। উনার মুখটা দেখে ইচ্ছা করছে খুন করে ফেলি।
আমি আলমারি থেকে আমার মোবাইলটা বের করলাম। ফোনটা অন করতেই দেখি এম্পটি সিম দেখাচ্ছে। আজীব! সিম ছাড়া ভাবী আমাকে ফোন দিবে কেন!! কিছুই বুঝতে পারছি না!
— কি হল জান সিম নেই বুঝি!
আমি আচমকা এমন কথা শোনাতে ঘুরে তাকিয়ে দেখি তানভীর আমার দিকে এগিয়ে আসছে। আমি পিছনে পিছোতে থাকি দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যায়।
— মোবাইলে সিম নেই, সিমটা আমার কাছে আছে।
— আপনি.. আপনি কি করে জানলেন আমার কাছে মোবাইল আছে! আমি তো,,
— তুমি আমাকে বোকা মনে করো না কি? আমি তোমার ভাবীকে মোবাইলটা দিতে যাওয়ার সময় দেখে নিয়েছিলাম। আসলে কি বলতো আমার চোখকে ফাঁকি দেওয়া এতো সহজ নয়।
— আপনি কেন এমন করছেন আমার সাথে? এতো অত্যাচার আমি সহ্য করতে পারছি না যে।
— অত্যাচার কোথায় করেছি বলো? আমি তো তোমাকে একটু জ্বালাতন করেছি।
— আপনি কি পাগল এই দেখুন আমার শরীরের ক্ষত গুলো। এগুলো অত্যাচার নয়!
— আমার কাছে নয়। তার কারণ হল তুমি আমাকে যে কষ্ট গুলো দিয়েছো এগুলো তার কিছুই না।
— আমি কষ্ট দিয়েছি আপনাকে? আপনি কি পাগল হয়ে গেছেন না কি? আমি তো আপনাকে জীবনেও দেখিনি তাহলে কষ্ট কিভাবে দিলাম!
— তারা কে চিনো?
উনার মুখে তারা নামটা শুনে আমি চমকে উঠলাম। তারা তো আমার ক্লাসমেট ছিলো। ক্লাস নাইনে সুইসাইড করেছিলো। কিন্তু উনি কেনো তারার নাম নিলেন! কি সম্পর্ক!
— তারা তোমার ক্লাসমেট ছিলো তাই তো ? আচ্ছা সাগরকে চিনো ? তুমি তো চিনবেই তোমার প্রেমিক হয় তো?
— আপনি এইগুলো কি বলছেন? আমি কিছুই বুঝতে পারছি না। সাগরের কথা আপনি কি করে জানলেন! আর তারার সাথেই বা আপনার সম্পর্ক কি?
— আসলে তুমি যতোটা নিষ্পাপ দেখতে ততোটাও তুমি না।
— আপনি কি বলছেন? হ্যা সাগর আমার প্রেমিক। চার বছরের সম্পর্ক আমাদের ভালোবাসি আমি তাকে। বাবাকে ভয়ে বলতে পারি নি তাই আপনাকে নিজের ইচ্ছের বিরুদ্ধে গিয়ে বিয়ে করেছি। আর সাগর দুইটা মাস ধরে আমার সাথে যোগাযোগ রাখে নাই। তা না হলে পালিয়ে যেতাম।
— তাই পালিয়ে যেতে! হা হা হা কি করে পালাতে আমি যে তোমার সব রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছি। তোমার থেকে প্রতিশোধ নিতে চাইছি?
— কি.. সের,, প্রতিশোধ!
— তারা আমার বোন ছিলো।
— আপনার বোন তারা!
— হুম আমার আদরের বোন। আমার বোনটা সুইসাইড করে। আর সেটা তোমার জন্যই।
— তারা আমার জন্য সুইসাইড করেছে?
— তারা সাগরকে ভালোবাসতো। সাগরকে তার মনের কথাও জানিয়েছিলো। কিন্তু সাগর ওকে অনেক অপমান করে। সাগর ও কে বলে তোমার নখের যোগ্য হতে পারবে না। আমার ছোট বোন টা সহ্য করতে পারে নি। ডিপ্রেসড হয়ে গিয়েছিলো ,চুপচাপ থাকতো কারুর সাথে কথা বলতো না। একদিন ও তোমার কাছে গিয়ে সাগরকে ভিক্ষা চেয়েছিলো। কিন্তু তুমিও ওকে অপমান করে তাড়িয়ে দিয়েছিলে। ও আর সহ্য করতে পারেনি,, আমার ছোট বোনটা নিজেকে শেষ করে ফেলে।
তানভীর কাঁদছে, আমি এই মুহুর্তে ঠিক কি করবো বুঝতে পারছি না। আমি কখনো ভাবিনি তারা সত্যিই সাগরকে ভালোবাসে। হ্যা আমিও সেদিন তাকে অপমান করেছিলাম বলেছিলাম সাগরের লাইফ পার্টনার হবে,, নিজেকে আয়নায় কখনো দেখেছো। আমি জানি না তখন আবেগের বশে কি করেছিলাম!!
আমি তানভীর এর হাতটা ধরে ফেলি।
— আমি অনেক বড়ো ভুল করেছি। আমি দোষী আমাকে শাস্তি দিন।
— হুম তুমি তো শাস্তি পেতেই। কিন্তু সব কিছু জানার পর তোমাকে শাস্তি দিলে আমি নিজেই অপরাধী হয়ে যাবো।
— মানে??
— আমি চেয়েছিলাম তোমাকে সাগরের সাথে আলাদা করে দিতে। তোমাকে বিয়ে করে কষ্ট দিতে। কিন্তু আমি সাগরের সব খোঁজ খবর নিয়েছি। ও তোমার সাথে চারবছর রিলেশন কন্টিনিউ করেছে ঠিকই কিন্তু এর মধ্যেই ও অনেক মেয়ের সাথে রিলেশনে জড়িয়েছে। তোমাকে অনেকবার ফিজিক্যালি রিলেশন করতে চেয়েছিল কিন্তু তুমি সায় দাওনি। তারপর থেকে তুমি ফোন করতে বিজি থাকতো। ঝগড়া শুরু হতো, একমাস কথাও বন্ধ যেতো।
আমি শুধু তানভীর কে দেখছি আমার চোখের কোণ বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে। সাগরকে আমি তাহলে ভুল চিনলাম। আমাকে ধোঁকা দিলো, আর তানভীর তো সব ঠিক বলছে। আমি তানভীর কে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেলি।
— এই জান কাঁদছো কেন তুমি? আমি তোমাকে অনেক কষ্ট দিয়েছি। তুমি আমার কাছে খেতে চেয়েছিলে আমি তোমাকে খেতে দিইনি।
— আপনি তো ঠিকি করেছেন। আমার মতো মেয়ের শাস্তি পাওয়াই দরকার। আমি এতোদিন সাগরের প্রতি অন্ধবিশ্বাস করে এসেছি। ও র ইগনোর গুলোকে ভেবে এসেছি অভিমান। হ্যা আপনি ঠিকি বলেছেন, সাগর সবসময় আমাকে কাছে চাইতো কিন্তু আমি ও কে বলতাম বিয়ের আগে এসব ঠিক না।
আমি জোরে জোরে কান্না করছি তানভীর আমার চোখের পানি মুছিয়ে দিয়ে জড়িয়ে ধরলো।
— আর কেঁদো না, আমি আর তোমার চোখে পানি আসতে দিবো না জান। আমি তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছি।
— আমিও,,,।
— আমিও কি?
— ওই তো যেটা বললেন।
— কি বললাম?
— মজা করছেন আমার সাথে?
— জান তুমি বলো না, তোমার মুখ থেকে শুনতে চাইছি তো।
— ভালোবাসি।
আমি কথাটা বলেই উনার বুকে মুখ লুকালাম আর উনি আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলেন।
………সমাপ্ত…..
(জানি না গল্পটা আপনাদের মনের মতো হলো কি না। তানভীর তনুজাকে তার বোনের মৃত্যুর শাস্তি দিতে চেয়েছিলো। কিন্তু সে যখন সাগরের আসল সত্যিটা জানলো তখন তনুজার অপরাধ ক্ষমা করে দিলো। তাকে ভালোবেসে ফেললো। কিছু ভালোবাসার রং এমনি হয়।। আপনাদের অসংখ্য ধন্যবাদ আমাকে সাপোর্ট করার জন্য।)