#কিছু_ভালোবাসার_রং_এমনও_হয়🌹
Part—1
#Susmita_Jana
লাল গোলাপ ফুলে সজ্জিত বিছানার মাঝখানে বসে আছি। পরণে আছে ডিজাইন করা ভারী লেহেঙ্গা। তার সাথে গলায়, হাতে, কানে, কপালে, কোমড়ে তার থেকেও বেশী ভারী গহনা । যার জন্য আমার ভীষণ অস্বস্তি হচ্ছে , কষ্ট হচ্ছে ভীষণ। ইচ্ছে করছে টান মেরে সব কিছু ছিঁড়ে ফেলি কিন্তু চাইলেও আমি তা করতে পারবো না। যেমন এই বিয়েটা আমি না চাইতেও করতে হল।
এতোক্ষণ চুপচাপ বসে থাকলেও খট করে একটা আওয়াজ আমার কানে আসতেই আমি নার্ভাস হয়ে যাই। হাত পা ঘামতে শুরু করে দেয়। কেউ আমার কাছে এসে দাঁড়ায় আমি বুঝতে পারি। মনের ভেতর আরও বেশী ভয় চেপে বসে। জানি না এই লোকটা আমার সাথে কি করবে! পা দুটো গুটিয়ে নিতে থাকি।
বেশ কিছুক্ষণ নিরবতা কাটিয়ে উঠে লোকটি গলা খাঁকরানি দিলো। গম্ভীর গলায় বললো,,,
— কি ব্যাপার জানো না বাসর রাতে স্বামীর পা ছুঁয়ে সালাম করতে হয়?
আমি মনের ভিতর অনেকটা সাহস জমিয়ে মাথার ওপর থেকে ঘোমটা তুলে উনার দিকে তাকালাম। উনাকে দেখে আমি ভয় পেলেও মুখ খুললাম।
— হুম জানি সালাম করতে হয়। কিন্তু সালাম তো স্বামীকে করতে হয়! আর আমি আপনাকে স্বামী হিসাবে মানি না।
কথাটা বলাও শেষ আর গালে থাপ্পড় পড়ে গেলো। আমি গালে হাত দিতে যাবো তার আগেই উনি আমার হাত দুটো বিছানায় চেপে ধরে আমাকে শুইয়ে দেয়। যার ফলে আমি বিছানায় শুয়ে পড়ি উনিও আমার শরীরের ওপর পড়ে যান। আমার দিকে অগ্নিদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। আমি একঝলক উনাকে দেখেই মুখটা অন্যপাশে ঘুরিয়ে নিই।
— আমি তোমাকে বিয়ে করেছি সমস্ত নিয়ম মেনে। আমি তোমার স্বামী একথা তুমি মানো বা না মানো আই ডোন্ট কেয়ার। মৃত্যুর আগে পর্যন্ত তুমি আমার। তুমি কি ভাবছো! তুমি যদি আমাকে বলো তুমি আমাকে স্বামী হিসাবে মেনে নাওনি বলে আমি তোমাকে ছেড়ে চলে যেতে বলবো?সবাই জানে এমনকি ভার্সিটির সকলেই জানে তুমি আমার। তার প্রমাণ তো আমি দিয়েইছি।
আমি উনাকে এবার ধাক্কা মারতে থাকি। উনি আমাকে শক্ত করে আরও বেশী চেপে ধরেন।
— উহু কি হল ছটপট করছো কেন?
— আমার ভীষণ অস্বস্তি হচ্ছে আমাকে প্লিজ ছাড়ুন।
— অস্বস্তি লাগার মতো কোন কাজ তো আমি এখনো পর্যন্ত করলাম না? তবে শুরু করতে যাচ্ছি।
— প্লিজ না আমাকে ছেড়ে দিন।
উনি আমার শরীর থেকে ওড়নাটা একটানে খুলে ফেলে দেয়। গলার হার , কানের ঝুমকো খুলে ফ্লোরে ছুঁড়ে ফেলে। আমার ব্লাউজের হুক খুলতে গেলেই আমি উনার হাত দুটো ধরে ফুঁপিয়ে কেঁদে ফেলি।
— প্লিজ না, আমি আপনার দুটি পায়ে পড়ি। আমাকে একটু সময় দিন।
উনি আমার হাত দুটো পুনরায় শক্ত করে বিছানায় চিপে ধরলো। শুধু চেপেই ধরলো না, বিছানার পাশে পড়ে থাকা আমার ওড়নাটা দিয়ে আমার হাত দুটো শক্ত করে বেঁধে দিলো।
— সময়! সময় তো স্বামীরা দেয়। আর তুমি তো আমাকে স্বামী হিসাবে মানোই না! তাহলে সময় কিসের সুইট হার্ট? তুমিও মজা নাও আর আমাকেও মজা নিতে দাও।
উনি আমার গলায় মুখ ডোবালেন। আমি বুঝতে পারছি আমার কথা উনি শুনবেন না। তবুও আর একবার উনার কাছে ছাড় পেতে চাইলাম। কিন্তু কোন লাভ হলো না।
🥀
🥀
🥀
🥀
আমি তনুজা, আজ আমার বিয়ে হয়েছে তানভীর আহমেদ এর সাথে। বিয়েটা আমার অমতেই হয়েছে। তানভীর আহমেদের বাবা আর আমার বাবা দুজন বিজনেস পার্টনার এবং প্রিয় বন্ধু। তানভীর আহমেদের বাবা আর আমার বাবা দুজনে ঠিক করেন আমাদের বিয়ে দিবেন। আমি বিয়েটা করতে চাই না। আমি যে একজনকে ভালোবাসি। কিন্তু বাবাকে ভীষণ ভয় করি তাই মুখ ফুটে কিছু বলতেও পারি নি। আমার মা মারা যাওয়ার পর থেকে বাবা ভীষণ গম্ভীর প্রকৃতির মানুষ হয়ে যান। বাবা ছাড়াও বড়ো ভাইয়া আছেন আর ভাবী আছেন। কিন্তু ভাইয়াকেও ভীষণ ভয় পাই। আর ভাবীকে যে কথা গুলো বলবো তারও উপায় নেই। কারণ ভাবীকে বললেও লাভ হবে না। ভাবী না পারবে ভাইয়াকে রাজী করাতে আর না পারবে বাবাকে।
এক দিন আগে ভার্সিটিতে কারুর সাথে জোর ধাক্কা খেয়ে পড়ে যাই। যার সাথে ধাক্কা লাগে তিনি নিজেই আমার দিকে তার হাত বাড়িয়ে দেন। আমি উঠে দাঁড়িয়ে তাকে থ্যাংকস বলে তার মুখের দিকে তাকাতেই চমকে যাই। হ্যা এই সেই তানভীর আহমেদ বাবার বন্ধুর ছেলে। আমি ভাবলাম এই সুযোগ এনার সাথে আমি খারাপ ব্যবহার করলে আমাকে হয়তো আর বিয়ে করবে না। তাই আমি সুযোগটা কাজে লাগালাম।
— আপনি কি চোখে দেখতে পারেন না? না কি মেয়ে দেখলেই ধাক্কা দিয়ে ফেলতে ইচ্ছা করে।
কথাগুলো আমি রাগে চিৎকার করে বলাতে ভার্সিটির সবাই আমাদের দিকে তাকিয়ে থাকে। উনার মুখ দেখে বুঝতে পারছি উনি বেশ লজ্জিত হচ্ছেন।
— তনুজা কি বলছো। সরি আমি তোমাকে ইচ্ছা করে ধাক্কা দিই নি এক্সিডেন্টলি হয়ে গেছে।
— ও আচ্ছা এখন তো তাই বলবেন। আমি আপনাদের মতো ছেলেদেরকে ভালো করেই চিনি।
— হোয়াটস রং উইথ ইউ! তুমি পাব্লিক প্লেসে এমন সিঙ্কক্রিয়েট করছো কেন? ওকে ফাইন তোমার কথামতে আমি যদি ইচ্ছা করেই তোমাকে ধাক্কাটা দিয়ে থাকি তাহলে অসুবিধাটা কোথায়? আমার সাথেই তো ধাক্কাটা লেগেছে তোমার! আমি তোমার হবু স্বামী।
— শাট আপ,,, বিয়েটা এখনো আমাদের হয়নি বুঝেছেন। আর আমি আপনাকে বিয়েটা করবো কি না সেটা এখনো পর্যন্ত ঠিক হয়নি। সো আপনি আমার থেকে ডিসট্যন্স বজায় রাখুন।
আমাদের কথা শুনে ভার্সিটির সকলের মধ্যে গুঞ্জন শুরু হয়ে গেছে। আমি আর তানভীর আহমেদ দুজনেই ঢাকা ভার্সিটির স্টুডেন্ট। আমি বি. বি. এ ফার্স্ট ইয়ার আর উনি লাস্ট ইয়ার। শুধু তাই নয় ভার্সিটির সব মেয়েদের ক্রাস।
— তোমাকে আমি বিয়ে করছি মানে বিয়েটা হচ্ছেই। তুমি এখানে না বলার কে?
— ও তাই না। আমি কি কোন পুতুল না কি! যে আপনি যখন কিনেছেন আমাকে আপনার বাসাতেই নিয়ে যাবেন? না কি আমার গায়ে আপনার নাম লেখা আছে যে আমি আপনারই হবো।
আমার এমন কথা শুনে কিছু ছেলেরা হেসে উঠলো। আমি তাদের দিকে তাকিয়ে উনাকে দেখতে গেলেই উনি আচমকা আমাকে ভার্সিটির সকলের সামনেই আমার ঠোঁটে ঠোঁট বসিয়ে দেন। পাচ মিনিট পরে ছেড়ে আমার একটা হাতের বাহু শক্ত করে ধরে। লজ্জায় চোখে দিয়ে টপটপ করে পানি পড়তে থাকে। আমি জীবনেও ভাবিনি যে আমাকে এমন একটা দিনের সম্মুখে পড়তে হবে।
— কান খুলে সবাই শুনে রাখো। এটা আমার জিনিস, এর গায়ে আমার স্ট্যাম্প দেওয়া আছে। নিশ্চয়ই কেউ ভুল করবে না।
তানভীর আহমেদ মাথা উঁচু করে চলে যেতে পারলেও আমি আর মাথা উঁচু করতে পারি না। উনি আমাকে সকলের সামনে ছোটো করে দিয়েছেন।
আর আজ সকাল হতে না হতেই জানিয়ে দেওয়া হলো আমার বিয়ে হবে। প্রিয় মানুষটার সাথে সময় পর্যন্ত পেলাম না তাকে জানানোর। আমি জানি সে আমাকে এখন অনেক ঘৃণা করবে। কিন্তু আমি কি করতাম যে হাত পা বাঁধা।
.
.
চলবে….
(ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন)