#সন্ধা_তারা
প্রথম পর্ব
লেখাঃরাইসার আব্বু
ছাত্রীর বইয়ের ভাঁজে রক্তে লেখা চিরকুট দেখে কিঞ্চিৎ বিস্মিত হলাম! রক্ত দিয়ে লাভ আর্ট করে সেখানে লিখেছে ‘তোমাকে ছাড়া বাঁচবো না রাজ।’ এসির মাঝেও শরীরটা ঘামছে। কথা মাথা নিচু করে আড় চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
– আমি মুচকি হেসে চিঠিসহ বইটা সরিয়ে রাখলাম।
-” স্যার পুরোটা পড়েন।”
– “তোমার না ২৭ তারিখ পরীক্ষা পড়ায় মন দাও। এবারেও কিন্তু টপার হতে হবে।”
– ” স্যার, আমাকে গতকাল দেখতে আসছিলো।আর হাতে আন্টি পরিয়ে দিয়ে গেছে। কথাটা বলেই কেঁদে দিল।”
”তা বেশ ভালো তো। বিয়ে কবে? অনেকদিন পর মনে হয় একটা দাওয়াত পাবো।”
” স্যার আমি বিয়েটা করবো না। আমি আপনাকে ভালোবাসি। বিয়ে যদি করতেই হয় আপনাকে করব। আর কি করলে বুঝবেন আপনাকে ভালোবাসি? শুনেন আপনাকে যদি না পাই তাহলে মৃত্যুই হবে আমার শেষ গন্তব্য ”
” আশ্চর্য কি সব বলছো তুমি? শুনো হাত কেটে রক্ত দেখিয়ে ভালোবাসা প্রকাশ পায় না। ভালোবাসা শুধু পেতে নয় দিতেও শেখায়। আর তোমাকে ভালোবাসা কোনদিনই সম্ভব না। কারণ আমি তোমার শিক্ষক। এই শিক্ষক নামটার সাথে বিশ্বাস-ভরসা, আত্মসম্মান লেগে আছে!
– স্যার আমি সত্যি আপনাকে ভালোবাসি। আর আমি যে কোন মূল্যে আপনাকে চায়!
– কথার মুখের দিকে তাকালাম! কালো পাড়ের সবুজ একটা শাড়ি পরেছে সে । ললাটের ঠিক মাঝখানটায় বৃত্তস্বরূপ কালো টিপটা মুখের সৌন্দর্যটা শতগুণ বৃদ্ধি করেছে। আর হরিণীর মতো আঁখি জোড়ায় সুরু করে কাজলের রেখা টেনে দিয়েছে। মুখের উপর এলোমেলো চুলগুলো মৃদু বাতাসে উড়ছে। কেউ প্রথম দেখায় প্রেমে পড়ে যাবে। কথা তার অাঁখি জোড়ায় কাজল রাখার ব্যর্থ চেষ্টা করছে। চোখের কার্ণিশ বেয়ে গাল গড়িয়ে মুক্তোর দানার মতো জল গড়িয়ে পড়ছে।
” খুব করে ইচ্ছে করছে চোখের পানি মুছে দিতে। কাঁদলে যে কথাকে বিশ্রী দেখায় তা না। বরং কথাকে প্রত্যেকটা রূপেই সুন্দর লাগে!
– কি হলো স্যার ভালোবাসতে পারবেন না আমায়? আপনি তো ডুয়েটে পড়তেছেন । বাবাও প্রথমে রাগ করলে পড়ে ঠিকই মেনে নিবেন। কারণ ডুয়েট থেকে বের হলে ভালো সেক্টরে জব হবে!’
– কথা আমি তোমাকে ভালোবাসতে পারবো না। আর তুমি যা বলছো সব আবেগ! তোমার জায়গাটা থেকে পৃথিবীটা রঙিন। সবকিছুই সিনেমার মতো সহজ মনে হয়। আর তোমার তিন ফুট দূরত্বে আমি যে জায়গাটাই বসে আছি এখান থেকে বুঝা যায় বাস্তবতা কতটা কঠিন! ভালোবাসা সব সময় একরকম থাকে না। ভালোবাসারও রং পাল্টায়। তুমি যে বয়সে টেবিল ভর্তি খাবার রেখে উঠে পড়। আমি সে বয়সে একটা ডিমকে তিনভাগ করে তিনবেলা খেয়ে ডুয়েটের প্রস্তুতি নিয়েছি। জীবনটা বড্ড কঠিন। এসে রুম থেকে যখন বের হবা তখন বুঝতে পারবা।
আর তোমার বাবার একটা বিশ্বাস আছে। আমার প্রতি নয়। শিক্ষকতা একটা মহান পেশার প্রতি। তাই পেশাটাকে কলঙ্কিত করতে পারবো না।
– শিক্ষকরা কি বিয়ে করে না? তাদের কি মন নেই? তাদের শরীরে কি অন্য রক্ত? স্যার আমি ঘুমাতে পারি না। সারাক্ষণ আপনার মুখটায় স্মৃতিপটে ভেসে উঠে!
– এমন সময় তানিশা নাস্তা নিয়ে আসলো।
– কথা তানিশাকে দেখেই বললো,’ তানিশা, স্যার আজ নাস্তা খাবে না। তুমি চলে যাও। ”
– আমি কিছু বললাম না। শুধু রাগি মুখটা দেখলাম।
– তানিশা চলে গেলে, ‘ কথা বললো, স্যার আপনার হাতটা ধরতে পারি?”
– কথা, শুনো এমন বিহেভিয়ার করলে কাল থেকে আসবো না। আমি চাই না তোমার জন্য আঙ্কেল কষ্ট পাক। ”
– স্যার আপনি যদি আমাকে না ভালোবাসেন তাহলে, ‘ বাবাকে বলবো আপনি আমার সাথে অসভ্যতামি করেছেন। এখন ভাবেন কী করবেন?
– আমি মুচকি হেসে বের হয়ে গেলাম!
– রাস্তা দিয়ে হাঁটছি গরমে শরীর পুড়ে যাচ্ছে। পকেটে থাকা ফোনটা ক্রিং ক্রিং করে বেজে উঠছে।
– ফোনটা রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে কান্নার শব্দ শুনতে পারলাম! বুঝতে পারলাম কথা ফোন করেছে। ফোনটা কেটে সুইচটপ করে দিলাম।
– আরেকটা টিউশনি করে মেসে ফিরতে ফিরতে রাত হয়ে গেলো। মেসে আসতেই রুমমেট রুহান বললো,’ রাজ ভাইয়া অভ্র ফোন করেছিল বাসা থেকে। আপনার ফোন নাকি বন্ধ। একটু বাসায় ফোন দেন। ”
– আমি ফোনটা অন করেই বাসায় ফোন দিতেই অভ্র ফোনটা রিসিভ করে বললো,’ ভাইয়া কেমন আছো?’
– হ্যাঁ ভাইয়া ভালো। ভাইয়া জান্নাতের টাকার কোন ব্যবস্থা করেছ? বিয়ের সময় যে পাঁচলাখ টাকা পণ দেওয়ার কথা ছিল। সেটার জন্য আপুকে পাঠিয়ে দিয়েছে। দুলাভাই বলেছে টাকা না পেলে এ মাসে আপুকে ডির্ভোস দিবে। ”
– আপুকে ফোনটা দে তো।
– রাজ কেমন আছিস?
”আপু আমি ভালো আছি। তুমি কেমন আছো?”
”আমার ভাইটা ভালো থাকলেই আমি ভালো। খেয়েছিস? হ্যাঁ আপু তুমি?
” হ্যাঁ।”
” আপু তুমি চিন্তা করো না। সামনে মাসেই তোমার টাকা পাঠিয়ে দিবো।”
” ভাই এতটাকা তুই কোথায় পাবি?”
” টাকার কি অভাব ঢাকা শহরে।” আচ্ছা মা -বাবাকে সালাম জানাস।
– শোন না কভে আসবি?
” আপু যেতে তো খুব ইচ্ছে করছে। কিন্তু দেখি যেতে পারি কি না।”
” সুমু তো এবারো ফার্স্ট হয়েছে। ওর জন্য নতুন জামা নিয়ে আছিস যখন আসবি। আমাকে বললো বললো।”
– ওহ্ আচ্ছা! সামনে তো ইদ তাই না? সুমুকে বল ইদে ওর জন্য দু’সিট জামা নিয়ে যাবো। ”
– ফোনটা কেটে দিয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিলাম।
– দেখতে দেখতে কয়েকটা দিন পার হয়ে গেলে। যতই দিন যাচ্ছে কথার পাগলামী ততই বাড়ছে। মেয়েটা সত্যিই অনেক বেশি ভালোবাসে আমায়। কিন্তু আমাদের মত মধ্যবিত্তদের সব স্বপ্ন দেখতে মানা।
– এদিকে দুপুর তিনটায় কথাদের বাসায় যেতেই আঙ্কেল একটা বিয়ের কার্ড দিয়ে বললো,’ বাবা রাজ তোমাকে আমাদের পরিবারের একজন মনে করি। সামনে মাসের পাঁচ তারিখ কথার বিয়ে। তুমি অবশ্যই কিন্তু থাকবে। জানই তো আমাদের কোন ছেলে নেই।
– আমি মুচকি হেসে বললাম,’ জি আঙ্কেল অবশ্যই থাকবো।”
– কেন জানি কথার বিয়ের কথা শুনে বুকের ভেতরটা চিনচিনে ব্যথা করছে। কথার রুমে গিয়ে দেখি টেবিলে বসে অন্যদিক ফিরে বসে আছে।
– আমি গিয়ে বসতেই বললো,’ আপনার কি মনে হয় বিয়েটা আমি করবো?
– কখনোই না। শুক্রবারে আপনার মেসে যাবো। সেখান থেকে কাজি অফিস। বিকেলে রেডি হয়ে থাকবেন। আর হ্যাঁ আমার ভালোবাসা এতো সস্তা নয় যে হেরে যাবে। আর আপনি আজ আসেন। বাবাকে বলে দিবো আমার শরীর ভালো না।
– কথা তুমি যেটা চাইছো সেটা কোনদিনই সম্ভব না! চুপ ভীতুর ডিম! আপনি যান এখান থেকে কি সম্ভব আর কি সম্ভব না সেটা আমি দেখবো।
– কথাকে আর কিছু না বলে বাসা থেকে বেরিয়ে আসলাম।
– শুক্রবারে কথা ফেন্ডের বাসা যাওয়ার কথা বলে, পালার্র থেকে বউ সাজে রাজের মেসে এসে নক দেয়। দরজা খুলে দেয়, ‘ রোদেলা। রাজ কথাকে মেসে বউ সাজে দেখেই চমকে যায়।
– রোদেলা রাজকে বলে,’ রাজ এই মেয়েটা কে?”
” রোদেলা এই মেয়েটার কথায় তোমাকে বলছিলাম। যাই হোক কথা এটা তোমাদের ম্যাডাম। আমরা কালকেই বিয়ে করেছি। তিনবছরের রিলেশন শেষে!
– কথা কি বলবে বুঝতে পারছে না। কথার চোখ থেকে টুপটাপ করে পানি পড়ছে।
– চলবে”””