সন্ধ্যা_তারা পর্বঃ০২

#সন্ধ্যা_তারা
পর্বঃ০২
লেখাঃরাইসার_আব্বু

– রোদেলা রাজকে বলে,’ রাজ এই মেয়েটা কে?”

” রোদেলা এই মেয়েটার কথায় তোমাকে বলছিলাম। যাই হোক কথা এটা তোমাদের ম্যাডাম। আমরা কালকেই বিয়ে করেছি। তিনবছরের রিলেশন শেষে!

– কথা কি বলবে বুঝতে পারছে না। কথার চোখ থেকে টুপটাপ করে পানি পড়ছে। কাজল লেপ্টে যাচ্ছে! রাজ এমনটা করতে পারলো তার সাথে? তার ভালোবাসা তো মিথ্যা ছিলো না।

– কথা কান্না করছো কেন?
– আমি কান্না করলে আপনার কি? আপনি তো চানই আমি কান্না করি। আচ্ছা কেন আমাকে এভাবে কষ্ট দিলেন? ভালোই তো বাসতাম আপনাকে। ভালোবাসাটা কী পাপ? খুব ইচ্ছা ছিল আমি নীল শাড়ি পরে বউ সাজবো। আর আপনি নীল পাঞ্জাবিতে বর সাজবেন। কিন্তু সবার সব স্বপ্ন পূরণ হয় না। জানেন কত রাত জেগে আপনাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখেছি। আপনার আড়ালেই একটা ছবি নিজের ফোনে তুলে রেখেছিলাম। সে ছবির দিকে তাকিয়ে কত রাত পার করে দিয়েছি। আমার হৃদয়ের প্রথম পুরুষটি আপনিই ছিলেন। আমার ভালোবাসার বাগানে প্রথম ফুলটি আপনিই ফুটিয়েছিলেন। আচ্ছা বলেন তো একটা মেয়ে একটা ছেলেকে কতটা ভালোবাসলে ছেলেটার জন্য কোটিপতি ঘরের ছেলেকে রিজেক্ট করে এক টিউশনি মাস্টারকে আঁকড়ে ধরে বাঁচতে চায়?

– কথা প্লিজ আমি তোমাকে ভালোবাসি না। এটা কেন বুঝো না। আর হ্যাঁ কান্না করো না। আমি তোমাকে রোদেলার কথা বলতে চেয়েছিলাম। কিন্তু পারিনি কেন জানি বলতে।

– অনেক হয়েছে! আপনি সত্যিই অনেক খারাপ। আপনাকে আমি ঘৃণা করি। আমি মুগ্ধকেই বিয়ে করবো। আর বিয়ের দাওয়াত খেতে চেয়েছিলেন না? আপনি শুধু একা নয় সাথে ম্যাডামকেও নিয়ে আসবেন। আর এই পাঞ্জাবিটা আপনার জন্য নিয়ে আসছিলাম। ভালো না বাসতে পারলেন বিয়ের দিন একবার অন্তত পরে আমার সামনে আইসেন। একনজর আপনাকে দেখবো। ” কথাগুলো বলে কথা চোখের পানি মুছতে মুছতে বের হয়ে গেল।

– কথা বের হতেই রোদেলা বললো,’ মেয়েটাতো আচ্ছা খতরনাক! আমার স্বামীটার সাথে কেমন ব্যবহার করে গেলে।
– আচ্ছা তুমি মন খারাপ করো না। বিকেলে ঘুরতে যাবো কেমন?

– আচ্ছা জানেমন।

– এদিকে কথা বাসায় এসেই শাওয়ার নিতে চলে গেল। বার্থরুমে শাওয়ারের নিচে বসে চিৎকার করে কান্না করলো। সে কিছুতেই রাজকে ভুলতে পারছে না। প্রায় ঘন্টাখানেক শাওয়ারের নিচে বসে থেকে কান্না করে বের হলো।

– সেদিন রাতে আর তার ঘুম হলো না। বুকের ভেতরটা কেমন যেন করছে। বাঁচতে ইচ্ছে করছে না আর। মনে হচ্ছে জীবনটাকে মুক্তি দিয়ে দিতে। কিন্তু না মৃত্যু যন্ত্রণা সহ্য করেও যে তাকে বাঁচতে হবে। সে ছাড়া মা -বাবার যে আর কেউ নেই।

– এদিকে রাজ তার ৫ বছরের সঞ্চয় নিজের বোনের যৌতুকের জন্য পাঁচলাখ টাকা সাথে সুমু আর বাবার জন্য পাঞ্জাবী সব কেনাকাটা করে বাসায় চলে গেল। বোনের টাকা দিয়ে বোনকে বোনের সংসারে পাঠালো অভ্রকে বললো,’ ঠিকমতো পড়াশোনা করিস। আমি আবার আসবো। শহরে জরুরি কাজ আছে। আমার যেতে হবে। রাজ তার বাবা -মায়ের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে ঢাকায় এসে পড়ে।

– দেখতে দেখতে কথার গায়ে হলুদের দিন এসে যায় । রাজ কথার দেওয়া নীল পাঞ্জাবিটা পরে রোদেলাকে নিয়ে গায়ে হলুদ দিয়ে আসে । কথা রাজের দিকে তাকিয়ে অন্য জগতে হারিয়ে যায়। রাজকে আজ খুব সুন্দর লাগছে! যখন কথার গালে হলুদ লাগাবে তখন কথা চোখ বন্ধ করে ফেলে! চোখ খুলে আর রাজকে দেখতে পারে না। নিজের অজান্তেই টুপ করে কয়েক ফোটা জল গড়িয়ে পড়ে।

– রাজ গায়ে হলুদ শেষ করে রোদেলাকে নিয়ে বাসায় এসে পড়ে।

-এদিকে মুগ্ধর সাথে কথার বিয়ে হয়ে যায়। কথার বিয়ের দিন রাজ আসেনি। আসছিল রোদেলা। কথার বাবা রাজের কথা জিজ্ঞেস করলেও, ‘ রোদেলা বলে রাজের বাবা অসুস্থ তাই গ্রামে গিয়েছে। আমাকে বিয়েটা শেষ করে কাল যেতে বলছে। কথার খুব করে ইচ্ছে করছে রাজকে একনজর দেখতে। আর হয়তো কোনদিন দেখা হবে না। কারণ মুগ্ধ বিয়ের পর তাকে আমেরিকা নিয়ে চলে যাবে। কথার কিচ্ছু ভালো লাগছে না। বুকের ভেতরটা ছ্যাঁত ছ্যাঁত করে ওঠছে!

রোদেলা কথাকে র্যাপিং পেপারে মোড়ানো একটা বক্স গিফট করে বিয়ে বাসায় থেকে চলে আসে।

– বাসায় এসে শুনতে পারে কথা একসিডেন্ট করেছে। রাত্রে বরযাত্রী সহ যাবার সময় মাইক্রোবাসকে একটা ট্রাক ধাক্কা দিয়ে যায়। এতে কথা মাথায় আঘাত পায়। রোদেলা কথার ব্যাপারে রাজকে সব জানালে রাজ একটা মুচকি হাসি দেয় আর কিছু বলে না।

– দেখতে দেখতে মাঝখানে একটি বছর চলে যায়। কথা এক ‘বছর পর স্বামীসহ বিদেশ থেকে ফিরছে। মুগ্ধকে পেয়ে সে অনেক খুশি। সত্যিই সে যা চেয়েছে তারচেয়ে বেশী পেয়েছে!

-মুগ্ধকে নিয়ে এয়ারপোর্টে যখন বসে আছে ঠিক তখনি একজোড়া কাপলকে দেখে কথার চোখ আকটে যায়।
– কথাকে দেখে রোদেলায় এগিয়ে এসে বলে,কেমন আছো তুমি?”

– হ্যাঁ ম্যাডাম ভালো। ম্যাডাম স্যার কোথায়? আর এই লোকটা কে?
– ওহ্ তোমার সাথে রুহানকে পরিচয় করিয়ে দেয়। এই হচ্ছে রোহান, আমার স্বামী!

– কি বলছেন এসব? আপনি না স্যারকে বিয়ে করেছেন? স্যার কোথায়? আপনি স্যারকে এভাবে কষ্ট দিতে পারেন না।

– কথা রাজ আমার ভালো ফেন্ড ছিল। আর তোমার বিয়ের পরের দিনই সে মারা যায়। সত্যি বলতে ওর দুটি কিডনীই ড্যামেজ হয়ে গিয়েছিল। তাই তোমাকে তার লাইফে জড়াতে চায়নি। আমাকে ক্ষমা করে দিয়ো। আর ওর লেখা একটা ডাইরি আছে। সেটা আমিও পড়িনি, শুধু তোমার জন্য লিখেছে,,,

চলবে””””’

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here