সন্ধ্যা_তারা পর্বঃ ০৩ ( অন্তিম)

#সন্ধ্যা_তারা
পর্বঃ ০৩ ( অন্তিম)
লেখাঃরাইসার_আব্বু

বলছেন এসব? আপনি না স্যারকে বিয়ে করেছেন? স্যার কোথায়? আপনি স্যারকে এভাবে কষ্ট দিতে পারেন না।

– কথা রাজ আমার ভালো ফেন্ড ছিল। আর তোমার বিয়ের পরের দিনই সে মারা যায়। সত্যি বলতে ওর দুটি কিডনীই ড্যামেজ হয়ে গিয়েছিল। তাই তোমাকে তার লাইফে জড়াতে চায়নি। আমাকে ক্ষমা করে দিয়ো। আর ওর লেখা একটা ডাইরি আছে। সেটা আমিও পড়িনি, শুধু তোমার জন্য লিখেছে।

– কি বলছেন এসব? রাজের কি হয়েছে?

– আপু প্লিজ শান্ত হও। বাসায় চলো যেতে যেতে বলি।

– রোদেলা গাড়িতে উঠেই বললো,’ জানো কথা রাজের কাছে তোমার ব্যাপারে সব শুনেছি। আর তোমার যেদিন বিয়ে ঠিক হয়ে যায়। সেদিনই রাজ আমাকে বলে তার বউ সেজে অভিনয় করতে। সবটা জেনে আমি আর না করতে পারিনি।

– রাজ এখন কোথায় আপু?

– আপু তোমার বিয়ের পরের দিন ও না ফেরার দেশে চলে গেছে।
– রোদেলার মুখে কথাটা শুনে কথা বাকরুদ্ধ হয়ে গেলে। কি বলবে কিছু বুঝতে পারছে না। রোদেলার বাসায় আসতেই রোদেলা একটা ডাইরি বের করে দেয়।

– কথা ডাইরিটা অনেক দিন ধরে নিজের যত্নে রেখেছিলাম। আজ থেকে ডাইরিটা তোমার।

– কথা বাসায় এসে ডাইরিটা পড়তে লাগলো। ডাইরির প্রথম পাতা উল্টাতেই খানিকটা বিস্মিত হলো ।

– খুব সুন্দর করে ছোট্ট ছোট্ট অক্ষরে লেখা!
আজ একটা মায়াবতীকে দেখেছি। যার দিকে চেয়ে যুগ পার করে দেওয়া যায়।

কয়েক পাতা উল্টাতেই চোখে পড়ল,’ আজ মায়াবতীটা আমার জন্য চিরকুট লেখেছে। তাও রক্ত দিয়ে। তার রক্তে লেখা চিঠিটা আমার হৃদয়ে আঘাত করেছে। আমার মতো ছেলেকে একটা মেয়ে এতটা ভালোবাসবে কল্পনাও করতে পারিনি। আজ প্রথম তাকে শাড়ি পরা দেখলাম। বিধাতা তাকে নিপুণ হাতে সুন্দর করে সৃষ্টি করেছে। যার মুখের মুচকি হাসির প্রেমে শতবার পড়া যায় মনে হয়। মায়াবতীকে দেখে বলতে ইচ্ছে করে

, ‘ তোমার অনিমেষ কালো
চুলের খোঁপায় নেমে আসা সন্ধ্যায়
আমি মেঘ হয়ে জানালায় উঁকি দিয়ে,
জানতে চাইবো ভালোবাসো? কিন্তু সব ভালোবাসা যে পূর্ণতা পায় না। তুমি আমার আকাশের চাঁদের মতো। যাকে দেখা যায় ছুঁয়া যায় না।

– আজ ডাক্তারের কাছে থেকে ফিরলাম। ডাক্তার বললো,’ আমি নাকি অল্প কিছুদিনের মেহমান পৃথিবীর।

আচ্ছা মায়াবতী বলো আমি তোমাকে কিভাবে কষ্ট দেয়? জানো তোমাকে নীল শাড়িতে বউ করার খুব ইচ্ছা ছিল। তুমি নীল শাড়ি পরবে। আমি নীল রঙা পাঞ্জাবী বর্ষার কিছু কদমফুল নিয়ে বৃষ্টিভেজা সাজে বলবো, ‘ ভালোবাসি তোমায়।'”

– কিন্তু না আমার স্বপ্নগুলো যে বড্ডবেশী দামি।

কথা চোখের পানি মুছে কয়েক পাতা উল্টাতেই দেখতে পেল, ‘ জীবনে কারো জন্য কিছু করতে পারলাম না। নিজের জীবনের আর কয়েকটা দিন হয়তো বেশি বাঁচতে পারতাম জমানো টাকাগুলো দিয়ে। কিন্তু আমার কয়েকদিন বেশি বেঁচে থাকার চেয়ে বোনের হাসি মুখটাই যে বেশি প্রিয়। তাই চিকিৎসার টাকাটা বোনের পণ হিসেবে পাঠিয়ে দিলাম। জীবন সত্যিই অদ্ভূত। যে ডুয়েটে চান্স স্বপ্নের মতো থাকে আজ সে ডুয়েটের স্টুডেন্ট হয়েও মা বাবার স্বপ্ন পূরণ করতে পারলাম না।

– কথার চোখ থেকে টপটপ করে পানি পড়ছে। তবুও ডাইয়ির পাতা উল্টিয়েই যাচ্ছে!

– আজ নিজেকে বড্ডবেশি স্বার্থপর মনে হচ্ছে।কথার ভালোর জন্য জীবনে সবচেয়ে বড় অভিনয় করতে হলো। হয়তো কথা আমাকে খারাপ ভাববে। আমি এটাই চাই মেয়েটা যতই খারাপ ভাববে আমাকে ততই দূরে সরে যাবে। ওর হাসি মুখটা যে আমার মেঘলা গোমট আকাশের একছটা আলোর পরশ!

– আজ কথার গায়ে হলুদ। হয়তো জীবনের শেষ দেখা। হসপিটাল থেকে যেতে দিচ্ছে না। ডাক্তার রহমানকে কত রিকুয়েস্ট করলাম। শেষ পর্যন্ত রাজি হয়েছে। রোদেলাকে নিয়ে কথার জন্য নীল রঙের একটা শাড়ি, একগুছা কাঁচের লাল রঙা চুড়ি! সাথে কালো একপাতা টিপ কিনে র্যাপিং কাগজে মুড়িয়ে নিলাম। রোদেলাকে বললাম বিয়ের দিন যেন কথাকে এটি দেয়।

-রোদেলার বাসায় গিফটা রেখে যাচ্ছি মায়াবতীকে শেষ দেখা দেখতে। হলুদ শাড়িতে পরীর মতো লাগছে। খুব করে ইচ্ছে করছে কথার দিকে পলকহীন ভাবে তাকিয়ে থাকতে কিন্তু পারলাম না। হলুদের ছোঁয়া লাগিয়ে আবারো হসপিটালে।

– আজ মায়াবতীর বিয়ে, আমি হসপিটালে আর লিখতে পারছি না। বাড়িতে খবর দেওয়া হয়েছে আমি একটু অসুস্থ! সবাই কান্না থামাতে পারলেও মা ফোনেই কান্না করে দিলো। রাত পার হচ্ছে না। সকালে রোদেলা এসে বললো, ‘ কথা নাকি একসিডেন্ট করছে। আর একসিডেন্টে দু’টি চোখই নষ্ট হয়ে গিয়েছে। কথাকে নাকি এই হসপিটালেই এডমিট করা হয়েছে!

– রোদেলার কথা শুনে বিশ্বাস করতে পারছি না। ডাক্তার রহমানকে সবকিছু বুঝিয়ে বললাম আমি তো আর বাঁচবো না। তাই চোখ দু’টি কথাকে দিয়ে যেতে চাই।

– অপারেশন থিয়েটারের যাওয়ার আগে কথাকে একনজর দেখে গেলাম। আর লিখতে পারছি না।

মায়াবতী যদি কখনো সত্যিটা জানতে পারো তাহলে সন্ধ্যার আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখো। দেখবে সন্ধ্যার আকাশের একটি উজ্জল তারা তোমার দিকে পলকহীন ভাবে তাকিয়ে আছে। মনে করে নিবে সে সন্ধ্যা তারাটাই আমি।

ভালো থেকো, ‘ ভালোবাসলেই এক জীবনে সবাইকে পাওয়া যায় না। তবুও বলবো না বলা সে কথাটা, ‘ মায়াবতী ভালোবাসি তোমায়। ”

– কথা ডাইয়িটা পড়া শেষ করে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরলো। চোখের কার্ণিশ বেয়ে কয়েক ফোঁটা জল মাটিতে আছড়ে পড়ল।

সমাপ্ত!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here