হাইওয়ে-৮,৯,১০

হাইওয়ে-৮,৯,১০
শানজানা আলম
পর্ব:৮

তন্বী নিশ্চিন্তে বসে আছে দেখে আকাশের রাগ হচ্ছে। রাস্তায় ট্রাক চলছে কিন্তু বাস একেবারেই নেই। বাগেরহাট গ্যারেজের জসীমকে পাওয়া গেল অবশেষে। এখানকার গ্যারেজ পরিচিত না জসীমের৷ তবে সে বলল, খুলনা মোটরস থেকে এই লাইনের সবাই মাল আনে। সেখানে যোগাযোগ করে ফোন নম্বর জোগাড় করে দেবে।
অবশেষে আকাশের একটু হালকা লাগছে, মেয়েটা এত অদ্ভুত কেন! কোনো চিন্তা নেই।

তন্বী রাস্তার দিকে পেছন দিয়ে বসে আছে।

-আকাশ, আপনি কী রেগে আছেন?

না তাকিয়ে বলল তন্বী।

-না, কেন মনে হলো আমি রেগে আছি?

-আপনি আমার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকাচ্ছেন। তাই।

-আমি একটু টেনশন বোধ করছি। টেনশনে থাকাই তো স্বাভাবিক।

-হুম, এর মধ্যে আমি হইচই করলে ভালো লাগত আপনার?

মোক্ষম যুক্তি। আকাশ ভেবে দেখল, আসলেই ঘটনা সত্য, এর মধ্যে তন্বী প্যানিক করলে আকাশ আরো দিশেহারা হয়ে যেত।

-বসুন এখানে। একটা ধুমায়িত শলাকা ধরান, চেইন স্মোকারদের টেনশনে ধোঁয়া ভালো কাজ দেয়! টেনশন রিলিফ হয়!
জসীম সাহেব কিছু একটা জানাক, তারপরে না হয় দেখা যাবে। না না জানালে আমি একটা অটো ধরে গ্যারেজে চলে যাব, মেকানিক নিয়ে আসব।

আকাশ একটু ইতস্তত করে বসে পড়ল। তারপর সত্যিই সিগারেট ধরালো।

-প্রথম দেখলাম কোনো মেয়ে সিগারেট খেতে বলছে!!

-আগে কয়টা মেয়ে দেখেছেন?

আকাশ ভেবে বলল, এত কাছ থেকে কাউকে দেখিনি। তবে সিগারেট পছন্দ করা মেয়ে খুব
কম।

-আমি পছন্দ করি বলিনি, আমার সমস্যা হয় না। আর আপনি ভোরবেলায় ফেরীতেই সিগারেট ধরালেন বলে ভেবে নিয়েছি আপনি রেগুলার স্মোক করেন। তাই বলেছি।

আকাশের একটু নিশ্চিন্ত লাগছে৷ তন্বী একেবারে অযৌক্তিক কথা বলেনি।

-তন্বী আপনি কিছু খেয়ে নিন! খিদে পেয়েছে বলেছিলেন।

-ড্রিংকস দিতে পারেন। আর কিছু না।

-পানি খান, কোক গরম হয়ে গেছে।

একটা ছেলে কাঠের বাক্সে আইসক্রিম নিয়ে হেঁটে যাচ্ছিল। তন্বী ডাকল, এই যে, এদিকে এসো।

ছেলেটি এসে দাঁড়াল।

-কী আছে এতে?

-আইসক্রিম।

-কই দেখি?

ছেলেটি বাক্স থেকে আইসক্রিম বের করে দিলো।

-তন্বী, এটা খাবেন না। এখনো বেশ কিছুটা পথ বাকি। পানি ভালো হয় না এগুলোর। টাইফয়েড হবে।

-আপনি মুরব্বিদের মত কথা বলছেন।

এই ছেলে, এই জায়গার নাম কি?

-চন্দ্র দিঘলিয়া।

-স্ট্যান্ড কতদূর?

-দুই কিলো হবে।

তন্বী আকাশের কথা শুনলো না, একটা কিনলো, এক কামড় দিয়ে ফেলে দিলো।

আকাশ অন্যদিকে তাকিয়ে হাসল। এই সময়ে জসীম ফোন করল। মেকানিকের সাথে কথা হয়েছে, আকাশের ফোন নম্বর দিয়েছে। আধঘন্টার মধ্যে আসবে।মেকানিকের নাম কয়েস। জসীম কয়েসের ফোন নম্বর দিয়ে দিলো।

চলবে

শানজানা আলম

হাইওয়ে-৯

কয়েস এলো আধঘন্টার মধ্যে। ফ্যান ঠিক করতে আরো আধঘণ্টা। প্রায় চারটা বেজে গেল এখানেই। সময় যেন দৌড়ে যাচ্ছে।
কয়েস বলল, বস, ভেজাল আছে আরো কিছু, এই গাড়ি নিয়া নামছেন, পথে বসে গেলে কী করবেন! কোনো মতে মাওয়া পার করে যান, গাড়ি বেশি সময় রান করান ঠিক হবে না।

রওনা হয়ে আকাশ বলল, লাঞ্চ করা হয়নি আমাদের। এখন আর থামতে চাই না। একবারে ঘাটে পৌঁছে কিছু খেয়ে নিব।

তন্বী বলল, এখানে কিছু পাওয়াও যাবে না এখন।

তন্বীর কথা শুনে আকাশ বলল, পাওয়া যাবে কিন্তু ভালো কিছু হবে না।

-তাহলে খেয়েই যাই, দেরী তো হলোই।

অগত্যা একটা রাস্তার পাশের হাইওয়ে রেস্টুরেন্টে থামল আকাশ।
-কী খাবেন অর্ডার করে দিন, আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।

-আশ্চর্য তো, আমিও ওয়াশরুমে যাব, তারপরে অর্ডার করি।

আকাশের মধ্যে একটু অস্থিরতা কাজ করছে। গাড়ির কন্ডিশন ভালো না শুনে আরো বেশি টেনশন লাগছে। কেন যেন মনে হচ্ছে কিছুই ঠিকঠাক হবে না। কোনো একটা সমস্যা হবে। তন্বী বিষয়টা আঁচ করতে পারছে না মনে হয়!!

আসুন- তন্বীকে বলল আকাশ।

তন্বী হাঁটতে হাঁটতে বলল, আপনি আমাকে বোঝা মনে করছেন, আমি আপনার উপর ভরশা করেছি বলেই আপনার বোঝা হয়ে যাইনি, রাস্তায় কোনো সমস্যা হলে, আমি কাঁদতে বসব না। একটু রিলাক্স হোন। প্রিয় কারো সাথে একটু কথা বলে নিন দরকার হলে।

আকাশ একটু হাসল তবে তন্বী অস্থিরতা বুঝতে পারছে দেখে ভালো লাগল। মেয়েটা সব বুঝে কিন্তু চুপচাপ শান্ত আছে। অন্য কোনো মেয়ে হলে এতক্ষণে হায় হায় করে মাথা খারাপ করে দিতো।

ফ্রেশ হয়ে এসে তন্বী দেখল, আকাশ আসেনি৷ নিজেই এডভান্স পে করে অর্ডার করে দিলো৷

আকাশ ফিরে এসে দেখল খাবার চলে এসেছে। দ্রুত খেয়ে বের হতেও চল্লিশ মিনিট কেটে গেল এখানেই। সন্ধ্যা হবে ছয়টায়। এখন বাজে প্রায় পোণে পাঁচটা। তার আগে ঘাটে পৌঁছালেই হয়৷ স্পিড বাড়ানো যাবে না। ধর্মঘট বোধহয় উঠে গেছে বেশ কিছু বাস চলছে রাস্তায়৷

আকাশ চলতে শুরু করল। তন্বী আর কোনো কথা বাড়ালো না। একটু ক্লান্ত লাগছিল। তাই কখন চোখ বুজে এসেছিল, নিজেই টের পায়নি৷

আকাশ আঁড়চোখে দেখল তন্বী ঘুমুচ্ছে। হাইওয়ে দিয়ে শেষ বিকেলের মিষ্টি আলো এসে পড়েছে তন্বীর মুখে। কি একটা অপার্থিব সৌন্দর্য মায়াময় মুখে ছড়িয়ে পড়েছে।
আকাশ চোখ ফিরিয়ে নিতে গিয়েও নিলো না। বারবার তাকিয়ে দেখে নিতে লাগল।

শানজানা আলম

রেগুলার চলবে না। মাঝে মাঝে পোস্ট দিব। এটা ডিলিট হবে না, শেষ হলে পড়ে নিয়েন।

হাইওয়ে-১০

হুট করেই সম্ভবত ধর্মঘট তুলে দিয়েছে৷ বাসগুলো তীব্র গতিতে ছুটে যাচ্ছে। আকাশ গতি বাড়াতে পারছে না৷ যতই তাড়া থাকুক, ড্রাইভিংয়ের সময় মাথা থাকতে হবে ঠান্ডা। বেশ খানিকটা দেরী হয়ে গেছে। কোথাও রওনা হলে সরাসরি সেখানে না গিয়ে পথে দেরী হলে অনেক সময় নষ্ট হয়। আকাশের মধ্যে একটা অস্বস্তি কাজ করছে।

ফেরীঘাটে পৌছাতে পৌছাতে সাড়ে ছয়টা বেজে গেল। সহসা ধর্মঘট তুলে দেওয়ায় গাড়ির চাপ আছে। ফেরী কম। কোনো কারনে তিনটা ফেরী চলাচল করছে। আকাশ তন্বীকে ডাকল।

-তন্বী, উঠুন।

তন্বী চোখ মেলল৷ চারপাশে তাকিয়ে হাই তুলে বলল, ঘাটে এসে গেলাম! এত অল্প সময়ে!

আকাশ হেসে বলল, অল্প না, দেড় ঘন্টা লেগেছে।

-বলেন কী! আচ্ছা চোখে মুখে একটু পানি দিতে হবে।

-আপনি বসুন। আমি সিরিয়াল দিয়ে আসি।
তারপর দেখছি।

-ঘাটে তো অনেক ভীড়!

-হুম।

আকাশ টিকিট কাটতে গিয়ে একটা খারাপ খবর শুনল। ফেরী নাকি বন্ধ করে দেওয়া হতে পারে। নাব্যতা সংকট চলছে। জোয়ার আসার আগে আর ছাড়বে না। এর আগে গাড়ি নিয়ে উঠতে না পারলে পুরো সাত আট ঘন্টা বেকার বসে থাকতে হবে।

আকাশ একটু সামনের দিকে এগিয়ে গেল, যদি কোনো ব্যবস্থা করা যায় বা অনেক সময় দালাল থাকে, সিরিয়াল সেল করে। তাদের কাউকে পেলেও হতো।
চারপাশে খুঁজে কাউকে পেলো না তবে একজনকে ঠিক করল যে কোনো সিরিয়ালের ব্যবস্থা করে দিতে পারলে দিবে। আরো দুয়েকজনের সাথে কথা বলল যদি কোনো ব্যবস্থা হয়। কিন্তু খুব সুবিধা কিছু হলো না।
তাই গাড়িতে ফিরে এসে বসল, ।
তন্বী চোখে মুখে পানি দিতে চেয়েছিল, সেটা মাথা থেকে বের হয়ে গেছে।

এতক্ষণ লাগল?
তন্বী জানতে চাইল।

হুম, দেখছিলাম সামনে কোনো সিরিয়াল পাই কিনা।

তারপর? পেলেন?

নাহ, কোনো সুবিধা হলো না।

আচ্ছা। একটু ওয়াশরুমে যেতে পারলে ভালো হতো।

ফেরীতে উঠে গেলে চলবে না? এখানে তো ভয়ংকর অবস্থা। আপনি যেতে পারবেন না।

ওহ, আচ্ছা ঠিক আছে।

কিছু খাবেন?

না। এখন ইচ্ছে করছে না।

ঠান্ডা কিছু?

নাহ।

তন্বীকে ফেরী বন্ধ হওয়ার খবর দিলো না আকাশ। পাশে বসে জানালার গ্লাস নামিয়ে দিলো পুরোপুরি৷

ওয়াশরুমে যাব বলেছিলাম, আককাশকে উদ্দেশ্য করে তন্বী বলল।

ওহ, সরি। একটু দাঁড়ান, দেখি কি ব্যবস্থা এখানে।

আকাশ বের হয়ে চারপাশে দেখতে লাগল। তন্বী এসে পাশে দাঁড়িয়ে বলল, কারা যেন বলছিল, ফেরী বন্ধ করে দেবে। কিছু জানেন?

আকাশ তন্বীর দিকে তাকিয়ে বলল, শুনলাম। একটা লোক ঠিক করে এসেছি। সিরিয়াল ভেঙে আগে পারলে উঠিয়ে দেবে।

-কিন্তু তাহলে মার খাওয়ার সম্ভবনা আছে। যে অবস্থা দেখছি।

-হুম।

আকাশ চারপাশে তাকিয়ে ওয়াশরুমের কোনো বন্দোবস্ত দেখতে পেল না। ঘাট কিছুটা সরে গিয়েছে। পদ্মাসেতুর কাজ চলার কারনে চারপাশে অস্থায়ী দোকানগুলো ভ্যানে করে কেনা বেচা চালাচ্ছে কিন্তু ওয়াশরুম চোখে পড়ল না৷

একটু বসুন, আমি খোঁজ নিয়ে আসি।

আকাশ সামনে পা বাড়াতেই শুনতে পেল, মাইকিং শুরু হয়েছে।
নাব্যতা সংকটের কারনে ফেরী চলাচল বন্ধ করা হয়েছে জোয়ার আসার আগে ফেরী ছাড়বে না। অপেক্ষমান গাড়িগুলোকে বিকল্প ঘাট হিসেবে আরিচা ব্যবহার করতে বলা হচ্ছে।
আকাশ থমকে গেল। গাড়ির যা কন্ডিশন, এটা নিয়ে আরিচা অবধি যাওয়া যাবে না। অপেক্ষা করা ছাড়া কোনো উপায় নেই।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here