ভালোবাসা_ফিরে_আসে,পর্বঃ ১০ শেষ

#ভালোবাসা_ফিরে_আসে,পর্বঃ ১০ শেষ
লেখা : মান্নাত মিম

মৃত্যু সেটা তো মানবজীবনে পূর্ব নির্ধারিত একটা সময়। প্রত্যেক প্রাণীকে’ই এর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে। যা স্বয়ং আল্লাহ তাঁর প্রেরিত কোনআন শরীফে বর্ণিত করেছেন। তবে মৃত্যু কিন্তু আত্মহত্যা করাকে বলে না। মৃত্যু আসে আল্লাহর তরফ থেকে আজরাইল আ: এর রুহ্ কবজের মাধ্যমে। সেটাকে মৃত্যু বলা যায়। আর আত্মহত্যা মানে স্বেচ্ছায় নিজের জান’কে কবজ করা মৃত্যু নয়, সেটা নিন্দনীয়, ঘৃণিত কাজ বলে আখ্যায়িত হয়। আত্মহনন কারীকে আল্লাহ তা’আলা কোন হিসেবের পর্যায়ে রাখেন না। সোজা জাহান্নাম অবধারিত তার জন্য। বিচারকার্য দিবসে তার কোন স্থান নেই বিবেচনার বা সমঝোতার মাঝে।

এমনই একটা কাজ লিলির দ্বারা সংঘটিত হয়। তবে, ‘রাখে আল্লাহ মারে কে’এমন অবস্থা তার। একটুর জন্য বেঁচে গেছে। জন্মদাত্রী জননী’ই তাকে এমন জঘন্য কাজ করা থেকে ফিরিয়ে আনেন। লিলিকে তখন দরজা লাগাতে দেখেই মিসেস সালেহা দৌড়ে আসেন, মা’য়ের মন বুঝতে পেরেছে হয়তো সম্মুখীয় দূর্যোগের আভাস। যখন তিনি দেখেন কিছু সময় অতিবাহিত হওয়ার পরও লিলির সাড়াশব্দ নেই, আর না মেয়ে দরজা খুলছে, তখন পাশের বাড়ির খালাম্মার ছেলেকে এনে দরজা ভাঙান। ভাগ্য ভালো খাল্লাম্মা ও তার ছেলে বউ তখন বাড়িতে ছিল না, এসব দেখলে ঘটনাটা দ্রুত গতিতে ছড়াত সারা গাঁয়ে। ঝুলন্ত লিলিকে নিচে নামানো হয়। ফর্সা মুখ রক্তাভায় ছেয়ে গেছে। অন্যদিকে যে ছেলেটিকে সাহায্যের জন্য এনেছিলেন, তাকে বুঝিয়ে শুনিয়ে পাঠিয়ে দিলেন। সে যেন এ-কথা পাঁচকান না করে। লিলিকে জড়িয়ে ডুকরে মুখ চেপে কাঁদতে থাকেন, যেন কান্নার শব্দ বাহিরে না বের হয়, মানুষ তখন মরা কান্নাকে রসকষ মিলিয়ে দুর্নামগ্রস্ত করে তুলতে পিছুপা হবে না। তখন লিলির নিভু নিভু মুখের দিকে তাকিয়ে তিনি কথা দেন, লিলির অনুমতি ছাড়া বিয়ের বিষয়ে আগাবেন না। তবুও একটু লিলি’কে বোঝানোর চেষ্টা করেন। তিনি যদি মারা যান, তাহলে লিলি একা সমাজে কীভাবে চলবে? সমাজে একা বাস করা সম্ভব নয়। তাও আবার যদি মেয়ে মানুষ হয়। তখন তো খোলা হাঁটে ভোগের জিনিস হয় তারা। কিন্তু অনড় লিলি তা বুঝতে অপারগ। তিনি-ও তাই আপাতত দমে গেলেন পরিস্থিতি সাপেক্ষে।
______

ভালোবাসা কখনো জোর দিয়ে হয় না। আবার কখনো ভালোবাসা’কে বলতে হয় না, মনের দুয়ারে পদধূলি ছড়াতে। বসন্তের আগমনে নিজেও আমন্ত্রিত হয় পার্থিব জগতের প্রাণীকুলের শ্রেষ্ঠ জীব মানুষের হৃদয়ে। এ-জগৎ সংসারে প্রতিটি মানুষ প্রেমে পড়ে। কেউ একবার তো কেউ হাজারবার।

হাজারো চেষ্টা করে লিলির মনে নিজের জায়গা তৈরি করতে পারছে না মেজবাহ। তবে লিলির একটু মনযোগ হাসিল করতে পেরেছে সে। কারণ তার যাতায়াত যে লিলির বাড়িতে শুরু হয়েছে। সেদিন তার’ই হয়ে ঘটক বিয়ের প্রস্তাব পাঠায় লিলির মা’য়ের কাছে। তবে সেটা নাকোচ হয়ে যায়, লিলির কর্মকাণ্ডে। লিলির আত্মহননের চেষ্টা সম্পর্কেও অবগত হয় মেজবাহ। সাথে কষ্টের শাণিত আঘাতে বিখণ্ডিত হয়ে ব্যথিত হয় তার হৃদয়। প্রিয়তমার এমন দশা কোন প্রেমিক হৃদয় চাইবে? একসময় আস্তে আস্তে মিসেস সালেহার মনে জায়গা করে নেয় সে। এতেই তাদের বাড়িতে যাতায়াতের গ্রীণ কার্ড পায়। অবশ্য লিলির চোখে পড়ে তার মা’য়ের সাথে মেজবাহর ঘনিষ্ঠতা। মাঝে মাঝেই এ নিয়ে সে মিসেস সালেহার সাথে তর্কাতর্কি করে। তবুও তিনি বলেন, বিয়ে না করল সে। ছেলে হিসেবে উনার দায়িত্ব পালন করতে চায় মেজবাহ। বাবা-মা বিহীন ছেলেটা একটু আদরযত্ন পাবে, সাথে তিনি-ও একটা ছেলে পেলেন। ছেলে না থাকার কষ্টটা এই শেষ বয়সে ঘুচে যাবে, তাতে তিনি খুশি হয়ে গেলেন৷ তাঁর এই ছেলের চাহিদা থেকেই তিনি অনুমতি দিয়ে দিলেন মেজবাহকে, বাড়িতে আসা-যাওয়ার। মা’কে বুঝাতে বুঝাতে অতিষ্ঠ হয়ে বুঝানের আশা ছেড়ে দেয় লিলি। অন্যদিকে মেজবাহকে-ও সে কিছু বলতে পারে না। সে ভাবে, বদ লোকটার সাথে কথা বলতে যাওয়া মানে তাকে সুযোগ করে দেওয়া নিজের কাছে আসার। তাই চেয়েও কিছু বলতে পারে না শুধু ক্রোধপূর্ণ দৃষ্টি ছাড়া।

পরিশিষ্টঃ চেষ্টা করিলে সফলতা মিলে। তা যে কোনো ক্ষেত্রেই হোক না কেন। হয়তো মেজবাহর সেই চেষ্টার ফল হিসেবে আজ সে তার ভালোবাসা’কে পেল জয় করে। অতি ধৈর্যের সহিত নিজের পবিত্র ভালোবাসা দিয়ে লিলির মনে জায়গা করে নিলো সে। লিলি-ও না চেয়ে পারল না একটা মানুষের এত পরিশ্রম বৃথা যেতে দিতে। লিলির কিডনি নষ্ট হয়ে যাওয়ায় অপারেশন করাতে হবে। কিন্তু এত টাকার খরচ সে কোথায় পাবে? বা তার মা’ই কোত্থেকে এনে দেবে? বড়ো বোন মিলি-ও অল্পস্বল্প খরচ ছাড়া বেশিকিছু করতে পারবে না। তখন দেবদূতের মতো মেজবাহ এসে হাজির হয়। যাবতীয় খরচাদি সে বহন করে তার অপারেশন করায়। সাথে এদিক-সেদিক দৌড়াদৌড়ি করে প্রয়োজনীয় ফরম থেকে শুরু করে চিকিৎসার জিনিসপত্র নিয়ে আসে। না খেয়ে-দেয়ে, না ঘুমিয়ে ক্লান্ত শরীর নিয়ে অটির সামনে বসে ছিল অপারেশনের সময়। লিলি পারেনি এমন মানুষের ভালোবাসাকে পায়ে ঠেলে দিতে। তাই তো হাত বাড়িয়ে দিয়েছে, সাড়া দিয়েছে মেজবাহর ভালোবাসার ডাকে। শুধু অপেক্ষা তাদের বিয়ে নামক বন্ধনে আবদ্ধ হতে।

সমাপ্ত।

আরেকটা বাস্তব জীবন কাহিনি দিয়ে শেষ করলাম। আসলে আমাদের আশেপাশেই এত জীবনোপন্যাস রয়েছে, তাই বানিয়ে লিখতে মন চায় না। তাই বেশিরভাগ সেই ঘটনাগুলো আপনাদের সামনে পেশ করি গল্পাকারে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here